#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#৩_পর্ব
,
ইয়ানার অনেকক্ষণ ধরে মনে হচ্ছে ওর পিছন পিছন কেউ ওকে ফলো করতে করতে আসছে, ভূতে ওতোটাও ভয় না পেলে মানুষ এ ভয় লাগে কেননা ভূত প্রেত আসলে দোয়া বা সূরা পড়লে তারা চলে যাই কিন্তু কোনো খারাপ মানুষ এই রাতের বেলায় আসলে কি করবে সেটা ভেবেই ভয় লাগে,, ইয়ানা একটু থেমে পিছনে তাকিয়ে দেখল নাহ কেউ নেই তারপর আবার পথ চলতে লাগল কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলো আবারও মনে হচ্ছে পিছনে কেউ আছে আর তার ছায়া স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এবার ইয়ানা শিওর হয়ে গেলো ওর পিছন পিছন কেউ তো আসছে তাই আস্তে করে স্কুটিটা থামিয়ে হাতে রাখা খুরটা শক্ত করে ধরে ইয়া আল্লাহ বলে চোখ বন্ধ করে পিছন ফিরে দিলো এক টান।
ওহ শিট,, এই মেয়ে রাস্তা ঘাটে মানুষ মারার প্ল্যান করেছো নাকি এটা যদি আমার হাতে না লেগে যদি আমার গলায় কিংবা মুখে লাগত তখন কি হতো,হাত ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল আর্দ্র।
কারো গলার স্বর শুনে ইয়ানা আস্তে করে চোখ খুলল দেখল ওর সামনে সকালের সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে আর হাত দিয়ে রক্ত বার হচ্ছে, পিছনে আর্দ্র কে দেখে ইয়ানার মাথা গরম হয়ে গেলো, এই আপনি কি পাগল?? যখন দেখলেন আমি তখন কথা বলা যায় না?? এভাবে বাজে ছেলের মতো পিছু পিছু আসছিলেন কেনো?
তাতে তোমার কি আর এটা সরকারী রাস্তা আমার যেমন ইচ্ছে তেমন ভাবে যাবো তোমার কি তাতে।
আপনি না একটা যাচ্ছে তাই আপনার সাথে কথা বলাই বেকার,, এটা বলে ইয়ানা নিজের স্কুটি নিয়ে যেতে গিয়ে আবার পিছনে তাকিয়ে দেখলো আর্দ্রর হাত থেকে রক্ত পড়ছে তাই আবার ফিরে এসে স্কুটিতে থাকা একটু কাপড়ের টুকরো দিয়ে আর্দ্রর হাতটা বেঁধে দিলো,, কী ভেবেছিলেন নিজের উড়না ছিড়ে আপনার হাত বাঁধবো?? মোটেও নাহ, নিহাত ভুল করে আপনার হাতে লেগে গেছে তাই মানবতার খাতিরে কাজটা করলাম ওকে গুডবাই।
দেখো আবার ভয় পেও না যেনো, বলা তো যাই না সব সময় তো আবার আমার মতো ভালো ছেলে রাস্তায় থাকবে না।
ও মিস্টার আমি ওতো টাও ভিতু নই ওকে আর নিজের রক্ষা নিজেই করতে পারি আপনাকে এতো ঙ্গান দিতে হবে না।
ইয়ানা স্কুটি নিয়ে ঠেলতে ঠেলতে সামনের দিকে চলে গেলো কিছুদূর যাওয়ার পর সামনে দেখলো তিন চারটা ছেলে একসাথে বসে সিগারেট খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে যদি একজন হতো তাও কথা ছিলো কিন্তু এখানে তো চারজন আর এরা ভালো না খারাপ তাও জানিনা এর থেকে তো ওই মিস্টার ঝগড়ুটেই ভালো ছিলো,, ইয়ানা স্কুটি ঘুরিয়ে নিয়ে আবার আর্দ্রর দিকে গেলো, আর্দ্র ওখানে দাঁড়িয়েই নিজের কাঁটা হাতটা দেখতেছিলো তখনি ইয়ানা ওর সামনে এসে বলল ,, মনে হয় ক্ষতটা বেশি গভীর নয় তিন চার দিন ওখানে ঔষুধ দিলেই সেরে যাবে।
কারো গলার স্বর শুনে আর্দ্র সামনে তাকিয়ে দেখলো ইয়ানা দাঁড়িয়ে আছে, কি হলো আপনি না চলে গেলেন তাহলে আবার ফিরে আসলেন কেনো?? কি চাই??
কেনো এমনি আসতে পারিনা নাকি, শুনুন কাটা স্থানে না ওই একটা মলম আছে কি যেনো নামটা ঠিক মনে পড়ছে না, ওটা লাগাবেন তাহলে দেখবেন অল্প কয়দিনের মধ্যেই সেরে যাবে।
এতো না পেঁচিয়ে সোজা আসল কথা বলুন।
আসলো ওদিকে না তিন চারটা ছেলে বসে আছে তাই বলছিলাম কি আপনি যদি আমায় একটু এগিয়ে দিয়ে আসতেন তাহলে অনেক উপকার হতো, আর মানুষ তো মানুষের জন্য তাই না?? ওই গানটা শোনেন নাই মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য একটু মহানুভবতা কি মানুষ পেতে পারে নাহ৷
ওহ তাই তো বলি ধানি লংকা হঠাৎ করে এতো মিষ্টি হয়ে গেলো কীভাবে তাহলে এই ব্যাপার,, তো ওদিকে যদি ছেলে থাকে তাহলে আমি কি আমিও তো ছেলে নাকি আমাকে দেখে আপনার মেয়ে মনে হচ্ছে ।
না সেটা নাহ আমি বলতে চাইছি ওই ছেলেরা খারাপ তবে আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি ওদের মতো নয় আপনি ভালো তাই বলছি একটু এগিয়ে দিননা, বাড়িয়ে আমার মা টেনশন করছে।
তখন কে যেনো বলছিলো যে কেউ নাকি অনেক সাহসী কাউকে ভয় পাই না সে একাই একশো তা কোথায় গেলো এতো সাহস সব ফুঁস??
বলছিতো আমার ভুল হয়ে গেছে এতো ভাব নেওয়ার কি আছে একটু এগিয়ে দিয়ে আসলে কি হয়,,।
আর্দ্র কিছুক্ষণ ইয়ানার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ওকে চলুন। তারপর আর্দ্র ইয়ানাকে সাথে নিয়ে একবারে ওর বাড়ির সামনে পৌঁছে দিয়ে তারপর নিজের বাসার দিকে রওনা হলো।
,,,,,,,,,,,
এই মেহরাব আর কতো ঘুমাবি এবার উঠ অনেক বেলা হয়ে গেছে এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস কেনো, কোনো কাজ নেই আর সেই কখন থেকে তোর ফোনটা বেজে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল আছে??
ওফ আম্মু এতো সকালে ডাকছো কেনো ঘুমাতে দাও তো ভালো লাগছে না অনেক ঘুম পাচ্ছে,, কথাটা বলে মেহরাব আড়মোড়া ভেঙ্গে আবার ঘুমিয়ে পড়ল কিন্তু ঘুম আসার আগেই ওর ফোনটা বিকট শব্দে বেজে উঠল,, এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা কানে ধরল মেহরাব,, বিশ মিনিট সময় দিচ্ছি ঠিক বিশ মিনিটের মধ্যে আপনি আমার বাসার সামনে আসবেন তারপর আমাকে এখান থেকে নিয়ে ভার্সিটিতে দিয়ে আসবেন।
মাহির কন্ঠ শুনে মেহরাব ফোনটা কান থেকে সামনে এনে দেখল যে সত্যিই মাহি ফোন দিয়েছে,, ততক্ষণে মেহরাব এর মা ওখান থেকে চলে গিয়েছে,, সকাল সকাল ফোন দিয়ে আমার কাঁচা ঘুম নষ্ট করে কি সব ভুলভাল কথা বলছিস।
একদম রাগ দেখাবেন না আমায় বলে দিলাম, আর আমি আমাদের বাসার সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি যলদি আসুন নয়ত কিন্তু আমিই চলে আসবো আপনার বাসায় আর সেটা যদি দাদু জানতে পারে তাহলে কি হবে জানেন তো? আমি তো বলবো যে আপনি আমায় যেতে বলেছিলেন।
খুব সাহস বেড়েছে তোর আমাকে যদি এখন সত্যি আসা লাগে তখন দেখাবো মজা,, আর চুপচাপ ফোনটা কেটে আর্দ্র কে কল দে তারপর ওকে বল তোকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসতে, আর যদি তাও না পারিস তাহলে ওখান থেকে একটা রিক্সা নিয়ে সোজা আর্দ্রর বাসায় চলে যাবি ওকে কথাগুলো ভালো করে মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে নে, আর আমাকে ফোন দিবি না এখন আমি ঘুমাবো মোটেও বিরক্ত করবি না।
রিক্সা তো আমি নিবোই তবে আর্দ্র ভাইয়া দের বাসায় যাওয়ার জন্য নয় আপনার বাসায় আমি আসছি, ঠিক বিশ মিনিট অপেক্ষা করবো তারপর আমি আসছি ,, কথাগুলো বলে মাহি ফোন কেটে দিয়ে নিজের বুকে ফুঁ দিলো আজকে অনেক সাহস সঞ্চয় করে কথাগুলো বলেছে মেহরাব কে আমি ঠিক জানি ওনি আমায় নিতে ঠিক আসবে৷
ফোনের দিকে তাকিয়ে মেহরাব একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে রেগে ফোনটা আছাড় মেরে পায়ের কাছে ফেলে দিয়ে উঠে বসে পড়ল,, এরা দুজনে আমায় পাগল করে দেবে এদের দেখে কে বলবে যে আর কয়দিন পর এদের বিয়ে মাঝে মাঝে মনে হয় আর্দ্র নয় মাহির বিয়ে আমার সাথেই হবে,, না না আমি এসব কি ভাবছি এসব কথা যদি দাদু জানতে পারে তাহলে ওনি অনেক কষ্ট পাবে আর আমি কিছুতেই দাদুকে কষ্ট পেতে দেবো না, মাহি আর আর্দ্রর বিয়ে যে করেই হোক দিতেই হবে কেননা এটা দাদুর ইচ্ছে আর আমার যত কষ্টই হোক দাদুর ইচ্ছে পূরণ করেই ছাড়বো,। কথা গুলো ভেবে মেহরাব উঠে চলে গেলো এখন আবার ফ্রেশ হয়ে মাহিকে দিয়ে আসতে হবে কি জ্বালা ।
চলবে,,,??