মান অভিমান পর্ব -১৯

#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#১৯_পর্ব
,
জানালার পর্দা ভেদ করে ভোরের আলো চোখে পড়তেই আর্দ্র চোখ মুখ কুঁচকে উপুড় হয়ে মুখের সামনে বালিশ দিয়ে আবার ঘুমিয়ে গেলো। ইয়ানা টাওয়াল দিয়ে নিজের চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চুল মুছতেছিলো তখনি রুমের দরজায় কেউ নক করল, ইয়ানার তো ভয়ে জান যায় যায় অবস্থা না জানি এখন আবার কে এসেছে যদি বাড়ির কেউ হয় আর ওকে এখানে দেখে ফেলে তাহলে তো কেলেংকারী হয়ে যাবে। ইয়ানা আয়নার সামনে থেকে সরে দ্রুত বিছানার কাছে গিয়ে আর্দ্র কে ডাকতে লাগল কিন্তু আর্দ্রর কোনো হুশ নেই সে তো এখন ঘুমের রাজ্যে বিচরণ করছে,, কোনো উপায় না পেয়ে ইয়ানা আর্দ্রর পিঠে হাত রেখে ধাক্কা দিতে লাগল,, এই আর্দ্র উঠুন আরে উঠুন না কুম্ভকর্ণের নাতিছেলে।

উমমম কি হয়েছে এভাবে ডাকছো কেনো, রাতে আদর কম হয়েছে? এখন আদর লাগবে? আসো আদর করে দিই এই বলে আর্দ্র ইয়ানাকে টান দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ইয়ানার গলায় নিজের মুখ গুজল।

আরে কি করছেন ছাড়ুন আমায় আমি এনাকে ডাকলাম কি জন্য আর ওনি করছে টা কি,, আরে উঠুন আমার উপর থেকে দেখুন কে যেনো দরজায় নক করছে।

করুক গা তাতে আমার কি আমি তো এখন ব্যাস্ত আছি,, ইয়ানার গলায় মুখ রেখেই বলল আর্দ্র।

আর্দ্র প্লিজ দেখুন গিয়ে কে এসেছ যদি আপনার মা অথবা বাড়ি অন্য কেউ আসে তাহলে কি হবে এখানে তো মাহিও নেই মনে হয় এখনো ঘুমাচ্ছে আপনি গিয়ে দরজাটা খুলে দেন আমি ততক্ষণে এখানে চাদর মুড়ি দিয়ে চুপ করে শুয়ে থাকবো।

ধ্যাত ভালো লাগে না, সকাল সকাল যে কোন গাধাটা বিরক্ত করতে এসেছে কে জানে,, হাজারও বিরক্তি নিয়ে আর্দ্র উঠে দরজা খুলতে গেলো, দরজা খুলতেই মাহি হুরমুর করে রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলল,, আরে এতোক্ষণ ধরে তোমরা কি করছিলে দরজা খুলতে এতো সময় লাগে? যদি কেউ আমায় দেখে নিত তাহলে কি হতো।

কি আর হতো যা হওয়ার তাই হতো, আমাদের ধরে আবার বিয়ে দিয়ে দিতো, কথাটা বলে আর্দ্র গিয়ে সটান করে বেডে শুয়ে পড়ল,, আর ইয়ানা মুখ থেকে চাদরটা সরিয়ে বেড থেকে নেমে মাহির কাছে এসে বলল,, কি হয়েছে মাহি তুমি এতো সকালে কিছু বলবে??

আরে আপু আমি কেবলি ঘুম থেকে উঠে একটু বাইরে বেরিয়েছি তখনি শুনলাম মামীমণি উপরে আসছে আমাকে ডাকতে সেই জন্যই তো তড়িঘড়ি করে এখানে ছুটে আসলাম ভাগ্যিস মামী মণি এখনো আসিনি,, মাহি কথাটা বলতে বলতেই ওপাশ থেকে অনুর মা দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে মাহিকে ডাকতে লাগল।

এইরে এবার কি হবে, আপু তুমি বরং কোথাও একটা লুকিয়ে পড়ো আর আমি গিয়ে দরজাটা খুলে দিই।

হ্যাঁ কিন্তু কোথায় লুকাবো??

হুমম সেটাও তো কথা কোথায় লুকাবে??

এই জন্যই তো বলে মেয়ে মানুষের মাথায় বুদ্ধি কম, এতোবড় একটা রুমে তোরা লুকানোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছিস নাহ।

তো আপনি বলুন আমি কোথায় লুকাবো??

এদিকে আসো বলছি,, আর্দ্রর ডাকে ইয়ানা আর্দ্রর কাছে যেতেই আর্দ্র ইয়ানাকে টেনে বিছানায় শুইয়ে দিলো তারপর নিজে আর্ধেক ইয়ানার উপর উঠে ইয়ানার গলায় মুখ গুজে ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে চাদর দিয়ে দুজনকেই ঢেকে নিলো,, আরে কি করছেন টা কি সরুন আমার উপর থেকে কুমড়ো পটাস ওফ্ফ উঠুন তো।

হুসস চুপ করে থাকো নইলে ধরা পড়ে যাবা, আর মাহি তুই এখন দরজা খুলে দে।

বাহ কি ভালোবাসা আর ভাই একটু তো লজ্জা করেন যতোই হোক আমি তো আপনার বোন লাগি,, মাহি হেসে তারপর নিজেকে একটু ঠিক করে দরজা খুলে দিলো,, কিরে এতো সময় কি করলি সেই কখন থেকে নক করছি।

আসলে ছোট মামী আমি ঘুমিয়ে ছিলাম তো তাই ঠিক পাইনি।

ওহ আচ্ছা ঠিক আছে, আর্দ্র মনে হয় এখনো ঘুম থেকে উঠি নাই শোন তুই আর্দ্র কে ঘুম থেকে তুলে নিজে ফ্রেশ হয়ে নিচে আায় মেহরাব আসছে।

মেহরাব এর কথা শুনতেই মাহির রাগ হলো, রাগ কম অভিমান টাই বেশি হলো তবুও নিজেকে সংযত রেখে বলল, আচ্ছা তুমি যাও আমি একটু পড়েই আসছি।

আচ্ছা ঠিক আছে, আব বলছি যে ওই ইয়ানা মেয়েটা কোথায় রে?

ও ওই আপু তো অনুর সাথে অনুর রুমেই ঘুমাইছে তুমি যাও আমি ওকেও ডেকে নিয়ে যাবো।

আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাই তাহলে তোরা যলদি রেডি হয়ে নিচে আায়, আমি গেলাম আমার আবার ফেসপ্যাকটা লাগানো লাগবে বিয়ের চক্করে তো কালকে দিতেই পারিনি এখন যদি আবার দিলে র্যাশ উঠে তাহলে যে কি হবে,, এসব বলতে বলতে অনুর মা চলে গেলো। অনুর মা চলে যেতেই মাহি দরজা বন্ধ করে দিলো আর ইয়ানা আর্দ্র কে ধাক্কা দিয়ে চাদর সরিয়ে উঠে বসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,, আপনি কি খান বলেন তো এতো ওজন একেবারে পাহাড় আর একটু থাকলে আমি মনে হয় চিরে চেপ্টা হয়ে যেতাম।

আমি পাহাড় নাকি পর্বত সেটা রাতে মনে হয়নি এখন যত দোষ নন্দ ঘোষ তাই না??

একদম বাজে কথা বলবেন না।

আরে তোমরা তোমাদের ঝগড়া টা একটু থামিয়ে নিচে চলো, ছোট মামী সবাইকে নিচে যেতে বলেছে নিচে নাকি আর্দ্র ভাই এর বন্ধু এসেছে ওনি নাকি নতুন বউকে দেখবেন।

ওহ তাই বল এই জন্যই বুঝি আপনার নিচে যাওয়ার এতো তাড়া হুমম।

মোটেও না আর্দ্র ভাই আপনার বন্ধু আসলেই কি আর না আসলেই বা আমার কি, আমি তো এমনি যাচ্ছি সবাই তো জানে আমি নতুন বউ তাই আমাকেই যলদি করে নিচে যেতে হবে,, আর আপু তুমি বরং এই শাড়িটা চেঞ্জ করে তোমার জামা পড়ে নাও আর হ্যাঁ আমার ভাইয়ের দেওয়া ভালোবাসা গুলো একটু সামলে রাখো নয়ত কেউ দেখলে বিপদে পড়বে, ইয়ানার গলার দিকে ইঙ্গিত করে বলল মাহি।

মাহির কথায় ইয়ানা লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলো আর ওদিকে আর্দ্র ডোন্ট কেয়ার লুক নিয়ে টাওয়ালটা গলায় জড়িয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো।
,,,,,,,,
মেহরাব এর সামনের সোফায় মাহি আর আর্দ্র বসে আছে, মেহরাব এর পাশে ইশান তারপাশে অনু আর অনুর পাশে ইয়ানা বসে আছে, মেহরাব মাহির দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টিতে কাঁমড় দিলো, এমন ভাবে কাঁমড়টা দিলো যেনো সে মিষ্টিতে নয় বরং মাহিকে কাঁমড় দিচ্ছে।

কিরে ওমন করে আমার বউয়ের দিকে তাকিয়ে কি দেখছিস হুমম মজা করে দুষ্ট হেসে বলল আর্দ্র ।

কি আর করবো বলল তোর বউটা যে এতো মিষ্টি আই মিন এতো সুন্দরী তাই না দেখে থাকতে পারছি নাহ, মেহরাব এর কথায় সবাই হেসে দিলো আর মাহি তো ভুলেও মেহরাব এর দিকে তাকাচ্ছে না। বাড়ির বাকিরা যে যার মতো কাজ করছে তাই এদিকে কেউ কান দিচ্ছে না, তাই সবাই মিলে সবে আড্ডা দিচ্ছে তখনি ওখানে আর্দ্রর দাদু আসলো, এসেই মেহরাব এর দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে ওকে পর্যবেক্ষন করছে কিন্তু মেহরাব সেতো নরমালি ভাবে মিষ্টি খাচ্ছে যেনো কোনো সম্যসাই নাই।

মেহরাব এতো স্বাভাবিক আছে কীভাবে ওর তো এতোক্ষণে নিজের রুমে দরজা আটকে বসে থাকার কথা, তারমানে কি আমার সন্দেহ ভুল ওরা এমনিতেই ভাইবোনের মতোই ফুসকা খাচ্ছিলো, হবে হয়ত আমারি ভুল হয়েছে তবে যাই হোক এতে করে তো আর্দ্র মাহির বিয়েটা দিতে পেরেছি,, মনে মন বলল আলতাফ চৌধুরী।

আরে দাদু আপনি ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো বসুন এখানে?? ইয়ানা নিজে সোফা থেকে উঠে বলল।

আরে না না তোমরা ইয়াং লেডি আর বয়দের মাঝে আমি বুড়ো মানুষ কি আর করবো তোমরা বরং আড্ডা দেও আমি আসি ওকে।

আর হ্যাঁ মেহরাব যদিও বিয়েটা আমার ছিলো তোর কর্তব্য আমায় গিফট দেওয়া তবুও তুই এতোকষ্ট করে বউ থেকে এতোদিন দূরে থেকে কাজটা সফল ভাবে কম্পিলিট করে আসলি তাই আমার পক্ষ থেকে তোর জন্য একটা গিভট আছে, নিশ্চয়ই বুঝেছিস আমি কোন গিফট এর কথা বলছি।

ইয়েস বন্ধু আমি না বুঝলে হবে নাকি আর কাল তো তোর এতো ভালো একটা বাসর রাত গিয়েছে আর কপাল ভালো থাকলে আমার ও আজকে বাসর দিন যাবে এই না বন্ধু।

আর্দ্র ভাই আপনি আপনার বন্ধু কে বলে দেন আমি কারো সাথে কোথাও যাবে নাহ।

আরে আমি তোকে নিয়ে আবার কোথায় যাবো পাগল না মাথা খারাপ অন্যের বউকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার আমার কোনো শক নেই, কিছু বললেই খালি ভাবে আমরা ওর কথা বলছি, কথাটা বলেই মেহরাব আর আর্দ্র গাঁ হেঁসে উঠল।

আচ্ছা তাই নাকি ভালো তো আমাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে আমিও দেখি মিস্টার মেহরাব আপনি বাসর দিনটা কার সাথে করেন আমিতো যাবো না জীবনেও যাবো খারপ লোক একটা,, মনে মনে বলল মাহি।

চলবে,,,,,??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here