মায়াবতী পর্ব -০২

#মায়াবতী
#পর্ব:২
তানিশা সুলতানা

“অথৈ শোন না
বলছি কি আমি না খাবো না। আমার খাবারটা প্যাক করে দিবি প্লিজ?

তন্নি মাথা নিচু করে বলে। অথৈ ছোট ছোট চোখ করে তাকায় তন্নির দিকে।

” কেনো প্যাক করে নিতে চাইছিস? তোর ওই মা আর ভাইকে খাওয়ানোর জন্য? তোর লজ্জা হবে কবে? তারা কতো রুড বিহেভ করে তোর সাথে তবুও তাদের জন্য এতো দরদ কেনে তোর?

অথৈ রেগে বলে। তন্নি মুচকি হাসে।

“মায়ের জন্য না। ভাইকে ছাড়া আমার গলা দিয়ে এতো ভালো ভালো খাবার নামবে না রে। ভাই আমাকে কতো ভালোবাসে জানিস? সাথে আনতে চেয়েছিলাম কিন্তু মা আনতে দিলো না। সাথে আনতে পারলে দুজন মিলে পেট পুরে খেয়ে যেতে পারতাম।

মন খারাপ করে বলে তন্নি। অথৈ তন্নিকে জড়িয়ে ধরে।

” মন খারাপ করিস না জান। তোর ভাইয়ের জন্য খাবার দিয়ে দিবো। তুই আমার সাথে খেয়ে নে।

“আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি। আমাকে খেতে বলিস না প্লিজ। ভাইয়ের সাথেই খাবো আমি।

” তোর মা তোকে খেতে দিবে না। ওই ডাইনি মহিলা নিজেই খেয়ে নেবে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অথৈ।

“এভাবে বলিস না। আমার কষ্ট হয়। মা তো মাই হয়। মা কখনো খারাপ হয় না। হয়ত আমি খারাপ তাই মা আমাকে দেখতে পারে না।
তবে আজকে ভালোবাসছে না কিন্তু একদিন ঠিকই ভালোবাসবে।

হেসে বলে তন্নি। অথৈ আর কিছু বলতে পারে না। এই রকম একটা মিষ্টি মেয়েকে কিভাবে কষ্ট দিতে পারে? মন নেই কি তার?
তন্নি হাত ধুয়ে খাইয়ে দিতে থাকে অথৈকে। অথৈ তন্নির হাসি মুখটা দেখতে থাকে আর খেতে থাকে।

” অথৈ আমি কিন্তু এখনই বাসায় যাবো।

“কি বলছিস তুই? এখনো বর আসলে না।

” মা বলে দিয়েছে সন্ধার আগে বাড়িতে ফিরতে। বেশি দেরি করলে আমাকে মে*রে*ই ফেলবে।

“ঠিক আছে। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে তোর মা টাকে উস্টা মেরে উগান্ডা পাঠিয়ে দিতে।

তন্নি অথৈয়ের মুখ মুছিয়ে দেয় নিজের ওড়না দিয়ে।
____
কালো রংয়ের একটা পাঞ্জাবি পড়ে হাতা গুটাতে গুটাতে বের হয় অর্ণব।

” হেই ব্রো কি অবস্থা তোমার? কতোদিন পরে দেখা।

অর্নবের বন্ধু আকাশ পিঠ চাপকে বলে অর্ণবের। অর্ণব মুচকি হেসে কোলাকুলি করে। তখনই অর্ণবের বাকি বন্ধুরা চলে আসে।

“আমরা তো ভেবেছিলাম বিদেশ থেকে একদম মায়াবতীকে সাথে করেই নিয়ে আসবি। কিন্তু একা আসলি যে?

সাফিন মজার ছলে বলে।

” বিদেশে মায়াবতী আছে না কি?

“বলিস কি? বিদেশেই তো মায়ার খনী। উফ চারপাশে মায়া ছড়িয়ে রাখে তারা।

সাগর বলে ওঠে। অর্ণব মুচকি হাসে।

“মায়াবতী তো আমার মাতৃভূমিতে আছে। বিদেশি মেয়েরা হ*ট কিন্তু মায়াবতী না।
ওদের আমার একটুও পছন্দ না। গায়ে পড়া টাইপের।

” তাহলে তোমার মায়াবতী কেমন হবে ব্রো?

আকাশ পিঠে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করে।

“আমার মায়াবতীর চোখে গাড়ো করে কাজল দেওয়া থাকবে। যেই কাজল কালো চোখে আমি হারিয়ে যাবো। তার কোমর ছাড়িয়ে হাঁটু ওবদি লম্বা চুল থাকবে। বাতাসের তালে যেই চুল গুলো তার চোখে মুখে আঁচড়ে পড়বে। সে বিরক্ত হয়ে চুল গুলো হাত খোপা করে নেবে। সে সুতি শাড়ি পড়বে। পেটে হালকা চর্বি থাকবে। শাড়ির আঁচল যখন কোমরে গুঁজে সে ঢং করে হাঁটবে, আমি জাস্ট দিশেহারা হয়ে যাবো।

গালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে অর্ণব।

” তাহলে আর এ জীবনে তোর প্রেম বিয়ে কিছুই হচ্ছে না।

সাফিন আফসোস করে বলে।

“হবে হবে। খুব তাড়াতাড়ি আমারও প্রেম হবে।

অর্ণব বুকে হাত দিয়ে বলে।
তন্নিকে এক পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে অথৈ ড্রাইভারকে খুঁজতে যায়। কিন্তু কোথাও তাকে পায় না। রাত হয়ে গেছে। তন্নিকে একা ছাড়বে না অথৈ। অর্ণবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর কাছে এগিয়ে যায়।

” ভাইয়া তন্নিকে একটু ড্রপ করে দিতে পারবি?

তন্নি খানিকটা দুরে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা টিফিনবক্স। অথৈ অর্ণবের সামনে দাঁড়িয়ে বলে।

“কিহহহ আমি ওই মেয়েটাকে ড্রপ করতে যাবো? এটা মনে হলো তোর? আজাইরা সর সামনে থেকে।

বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে অর্ণব। অথৈ রেগে গাল ফুলায়।

” ওই মেয়েটা আবার কি? ওর নাম তন্নি।

অর্ণব তন্নির দিকে খেয়াল করে। মাথার ঘোমটা আরও একটু টেনে টিফিনবক্স শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

“এইটা আবার কে ব্রো? যা গিফট দিয়েছে তার টাকা উসুল করার জন্য আবার নিয়েও যাচ্ছে? দারুণ তো।

সাফিন বলে। সাফিনের কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে।

” এখানে হাসির কি হলো?

অথৈ রেগে চিৎকার করে বলে।

“তুই রেগে যাচ্ছিস কেনো? ওরা খারাপ কি বলেছে? বিয়ে বাড়িতে থেকে কেউ খাবার নিয়ে যায় এটা তো কখনো দেখে নি ওরা।
কেমন ছোট লোক? খেয়েছে আবার নিয়েও যাচ্ছে।

অর্ণব বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে।

সব কথাই তন্নির কানে যাচ্ছে। কান দুটো শা শা করছে। লজ্জায় অপমানে হাত পা কাঁপছে। দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।

” তোদের বাড়ির কাজের লোক?
আকাশ বলে।
অর্ণব হ্যাঁ বলতে যাবে তখনই অথৈ চিৎকার করে বলে ওঠে।

“তন্নি আমার বোন হয়। আমার বোন ও। কোনো কাজের লোক নয়। ওকে নিয়ে কমেন্ট করার সাহস হয় কি করে?
আই হেইট ইউ ভাইয়া। জাস্ট হেইট ইউ।
তোর থেকে এমনটা এক্সেপ্ট করি নি আমি।

অথৈ কাঁদতে কাঁদতে তন্নির কাছে চলে যায়। তন্নির হাত ধরে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।
অর্ণব তাকিয়ে থাকে ওদের যাওয়ার দিকে।

” কেচটা কি বল তো?

সাফিন বলে।

“আমার বোন কোথা থেকে একটা ছোটলোক বন্ধু জুটিয়েছে কে জানে? মানসম্মান একদম ডুবিয়ে ছাড়বে। বিয়ে বাড়িতে এসেছে অথচ ড্রেসের কি ছিড়ি। আবার খাবার নিয়ে যাচ্ছে।
জাস্ট ডিসগ্যাস্টিং।

অর্ণব চুল ঠিক করতে করতে চলে যায়।

__
ড্রাইভিং সিটে বসে আছে অথৈ আর তার পাশে তন্নি। দুজনই কাঁদছে।

“এই এম সরি তন্নি। ভেরি সরি। আমি বুঝতে পারি নি।

অথৈ কান্না করতে করতে বলে।
তন্নি হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয়।

” ইটস ওকে। তোর ভাইয়ের মুখে তো মধু দেয় নি তাই কথার মধ্যে রসকষ নেই। আমি পাগল ভেবে সবটা ভূলে গেছি।

তন্নি হাসার চেষ্টা করে বলে। অথৈ তন্নিকে জড়িয়ে ধরে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here