#মায়াবতী
#পর্ব_১৬
#সুলতানা_পারভীন
কানে মায়ার চুলের সুড়সুড়িতে ঘুমটা ভেঙে গেছে রাহাতের। চোখ না খুলে, আর মায়াকে না দেখেও রাহাত মায়ার দুষ্ট হাসিমাখা মুখটা অনুভব করছে। কল্পনা করতে পারছে রাহাত ব্যাপারটা। সকাল সকাল গোসল সেরে চুলে টাওয়াল পেঁচিয়ে রুমে এসে প্রতিদিন এই কাজটা যেন মায়ার করা চাই ই চাই। ভেজা চুলের টাওয়াল ফেলে সেই ভেজা চুলের ডগা রাহাতের কানের কাছে নিয়ে সুড়সুড়ি দিয়ে কি মজাটা পায় মেয়েটা কে জানে! রাহাতও মায়ার এই দুষ্টুমিগুলো হাসি মুখে মেনে নেয়। মায়া না হয়ে অন্য কেউ এতো সকালে ঘুম ভাঙাতে আসলেই হয়তো দু-চার ডজন ঝাড়ি খেয়ে ফেলতো এতোক্ষণে। কিন্তু মায়াকে রাহাত কিছুই বলে না। মেয়েটার পাগলামিগুলো উপভোগ করে।
চোখ না খুলেই মায়ার হাত ধরে টেনে একেবারে বুকে জাপটে ধরলো রাহাত। মায়া ছোটার জন্য যত ছটফট করছে রাহাতও তত নিবিড় করে আঁকড়ে ধরছে।
-মায়াবতী?
-হুম?
-এভাবে পালানোর জন্য ছটফট করছ কেন? আমি কি অন্যায় কিছু করছি?
-উহু—–।
-তাহলে আমার মায়াবতীটা আমার থেকে এতো পালাতে চায় কেন?
-না তো——-।
-না? সত্যি?
-না মানে—। নাস্তা বানাতে হবে–। ছাড়ো।
-প্রতিদিন এই সেই ভাজি-ভুজি তেলে পোড়া খেতে ভালো লাগে না–। আজ অন্য কিছু খাবো—–।
-কি খাবে বলো? বানিয়ে দিব এক্ষুনি—। বলো না?
-বানাতে হবে না—-।
-না না—। আমি পারব–। বলো না?
-মিষ্টি খাবো পরী—।
-কি মিষ্টি খাবে? নাম বলো–। আমি এক্ষুনি–।
-তোমার মিষ্টি ঠোঁটের মিষ্টি——।
-কি!
মায়াকে ঘুরিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে মায়ার মুখের দিকে তাকালো রাহাত।
-বুঝো নি? বুঝিয়ে দেই দাঁড়াও—।
রাহাতের মুখের দিকে তাকিয়েই মায়া কেঁপে উঠে চোখ বুজে নেয়। রাহাতও মায়ার মুখের রঙ বদলানো দেখছে অপলকে। লজ্জায় লাল টুকটুকে মুখটা দেখতে রাহাতের বেশ লাগছে। আজও শাওয়ার নিয়ে শাড়ি পড়েছে মায়া। কালো পাড়ের কমলা রঙের শাড়িটায় কালো সুতোর কাজ করা। দেখতে কমলা পরী লাগছে মায়াকে। রাহাত সব ভুলে মায়ার লাজুক মুখটা দেখায় ব্যস্ত। বেশ অনেকটা সময় পর মায়া একটু একটু করে চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো রাহাত এক মনে ওকেই দেখছে। মায়া রাহাতকে কিছু বলার আগেই রাহাত মায়ার হাত দুটো চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর মুখটা তুলে আবার মায়াকে দেখায় ব্যস্ত হলো রাহাত। লাল মুখটায় গোলাপী আভা খেলা করছে মায়ার। শুয়ে মায়াকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে মায়ার চুলে মুখ গুঁজল রাহাত।
-মায়াবতী?
-হুম?
-মিষ্টি তো খাওয়া হলো–। আজকে আরেকটা জিনিস খেতে ইচ্ছে হচ্ছে।
-কি?
-খিচুড়ি——-।
-মানে!
-হা হা—। খিচুড়ি বুঝো নি? বৃষ্টি পড়ছে না রাত থেকে? দুপুরে খিচুড়ি খেতে মন্দ লাগবে না—।
-আচ্ছা—। এখনই করছি—–।
-এখনই না গো মায়াবতী–। এখন তুমি চুপ করে আমার বুকে শুয়ে থাকো—-।
-নাস্তা বানাতে হবে——।
-লাগবে না–। কাজের লোকেরা করে নিবে–। আর আমার মিষ্টি খাওয়া তো হয়েই গেল—-।
-ধ্যাত—-। ছাড়ো—। আর চুলের পানিতে পুরো বিছানা ভিজছে——।
-ভিজুক–। আমার সমস্ত চুলের পানিতে আমাকে একেবারে ভিজিয়ে দাও—। ভালো লাগছে—-।
-সরো—–। কি করছো?
-তোমার চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছি–। এতো মাদকতা ভরা কেন এই গন্ধটা? কি মাখো হ্যাঁ?
-শ্যাম্পু—। সরো—-।
-বাহ! শ্যাম্পুর গন্ধ এতো —–। আরে তুমি এতো লাফালাফি করো কেন বাবা সারাদিন? আমি না ছাড়লে ছুটতে পারবে? নাকি তোমাকে কোথাও পালাতে দিব আমি?
-আমি পালাতে চাইলে ধরে রাখতে পারবে?
-মিসেস রাহাত মাহবুব চৌধুরী–। আপনি জানেন না যে, আপনার স্বামী হয়তো আপনার পালানো আটকাতে পারবে না–। তবে যতবার যেখানেই পালান না কেন ঠিক ততবারই নিজের বুকে এনে জাপটে ধরতে পারবে—। সো পালান আর যাই করুন–। দিন শেষে আমার বুকেই ফিরতে হবে-আর ফিরেও আসবেন। সেটা যেন মাথায় থাকে—।
-বারে!! এতোই সোজা! কেউ যদি নিজে থেকে হারিয়ে যেতে চায়–তুমি তাকে কি করে খুঁজে পাবে!
রাহাত হুট করে মায়ার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। বেশ অনেকক্ষণ পর মায়ার মুখটা দু হাতে তুলে ধরলো রাহাত। একেবারে মায়ার চোখে চোখ রাখলো।
-মায়া! এতো পালানোর কথা বলো কেন? তুমি হারিয়ে যাবে- চলে যাবে–এসব শুনে বুকটা কেঁপে ওঠে আমার–। প্লিজ এসব বলো না কখনো—। তোমাকে এক মিনিটের জন্য হারাতে হলেও আমি পাগল হয়ে যাব–। বুঝো না কেন তুমি সেটা?
-রাহাত! আমি আসলে—–।
-চুপ—। কথা না কোন—। চুপ করে আমার বুকে শুয়ে থাকো–। বাজে কথা বললে সত্যি সত্যি হাত পা ভেঙে বাসায় বসিয়ে রাখবো–। হুহ।
-আরে?
-কথা বললেই শাস্তি এখন —-।
মায়াকে শক্ত করে এক হাতে বুকে জড়িয়ে আরেক হাত দিয়ে আলতো করে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে রাহাত। যেন ছাড়লেই কোথাও হারিয়ে যাবে ওর মায়াবতীটা।
মোবাইলটা খুব জোরেই শব্দ করে বেজে চলেছে। কোনমতে চোখ খুলে কলটার সাউন্ড ওফ করে দিলো রাহাত। মায়াবতীটা সবে একটু চোখ বুজেছে। কলের সাউন্ডে ঘুমটা ছুটে গেলেই মেয়েটা পড়ি মরি করে ছুটবে। ভাবতেই ঠোঁটের কোণে একটা হাসি ফুটতে ফুটতেই আবার মিলিয়ে গেল রাহাতের। মায়া নেই রুমে। কয়েকবার মায়ার নাম ধরে ডাকলো রাহাত। কেউ এলো না। অন্য সময় হলে মায়া ছুটে রুমে আসতো। সে রান্নাঘরে যত কাজই পড়ে থাকুক না কেন। রাহাতের ডাকে মায়া ছুটে আসে নি-এমন কখনো হয় নি আগে। মায়াকে ডাকতে রান্নাঘরে যাবে এমন সময় মায়ার লেখা চিঠিটায় নজর পড়লো রাহাতের। বিছানার পাশেই রাখা। রাহাতও বুঝতে পারলো। মায়া প্রতিদিনের মতো দুষ্টুমি করে ওর ঘুম ভাঙায় নি। সে স্বপ্ন দেখেছে।
নিজের মাথা চেপে ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো রাহাত। মেয়েটার স্মৃতিগুলো বড্ড বেশি করে চেপে ধরছে রাহাতকে। ভালো থাকতে হলে মায়াকে তার চাই। কিন্তু পাবে কোথায়! রাহাত ঠিক করলো মায়ার ফ্ল্যাটে গিয়েই মায়ার কাছে সরি বলবে। প্রয়োজনে হাতে পায়ে ধরবে। তবু মেয়েটা ওর বুকে একবার ফিরে আসুক। আর জ্বালাবে না একদম। একটুও কষ্ট পেতে দিবে না তার মায়াবতীকে। আর কোন ভুল করবে না। একেবারে বুকের ভিতরে জাপটে আগলে রাখবে। এসব ভাবতে ভাবতেই আবার মোবাইলটা সশব্দে বেজে উঠলো রাহাতের। মোবাইলটা হাতে নিয়েই ভ্রু কুঁচকে গেল রাহাতের। স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে লিজার নাম। এই মেয়েটা এখন আবার কেন কল করছে!
চলবে