মায়াবতী পর্ব ২৫+২৬+২৭+২৮

#মায়াবতী
#পর্ব_২৫+২৬+২৭+২৮
#সুলতানা_পারভীন
মিহানের বিয়েটা মায়াদের এলাকারই একটা কমিউনিটি সেন্টারে হচ্ছে। রাহাত সেখানে এসেই জাস্ট হা হয়ে গেল। স্টেজে মায়াকে দেখা যাচ্ছে। মিহানের শালিকা সম্বন্ধীয় কয়েকটা মেয়ে অনেক আবদার করে মায়াকে স্টেজে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ফরমায়েশ হয়েছে একটা গান শোনাতে হবে। মায়া লাজুক হেসে মানা করলেও কেউ সেটাকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না। বারবার সবাই মিলে মায়াকে রিকুয়েষ্ট করছে একটা গান শোনানোর৷ সবার এতো চাপাচাপিতে মায়া হালকা গলায় গান ধরলো।।
-“Tu Hi Re, Tu Hi Re Tere Bina Main Kaise Jiyu
Aajaa Re, Aajaa Re, Yu He Tadpa Na Tu Mujhko
Jaan Re, Jaan Re, In Saanso Mein Bas Jaa Tu
Chaand Re, Chaand Re, Aajaa Dil Ki Zameen Pe Tu
Chahat Hai Agar Aake Mujhase Mil Jaa Tu
Yaa Phir Aaisa Kar, Dharti Se Mila De Mujhko
Tu He Re, Tu He Re Tere Bina Main Kaise Jiyu
Aajaa Re, Aajaa Re, Yu He Tadpa Na Tu Mujhko
In Saanso Ka Dekho Tum Paagalpan Ke
Aaye Nahi Inhe Chain
Mujhase Ye Boli Main Raahon Mein Teri
Apne Bichhaa Du Ye Nain
In Uunche Pahaadon Se Jaan De Dunga Main
Gar Tum Naa Aai Kahi
Tum Udhar Jaan Ummeed Meri Jo Todo
Idhar Ye Jahaan Chhodu Main
Maut Aur, Zindagi, Tere Haathon Mein De Diya Re
Aayi Re, Aayi Re, Le Main Aayi Hu Tere Liye
Toda Re, Toda Re, Har Bandhan Ko Pyar Ke Liye
Jaan Re, Jaan Re, Aajaa Tujhamein Sama Jaau Main
Dil Re Dil Re, Teri Saanson Mein Bas Jaau Main
Chaahat Hai Agar Aake Mujhase Mil Jaa Tu
Yaa Phir Aisaa Kar, Dharati Se Milaa De Mujhko
Tu Hi Re, Tu Hi Re Tere Bina Main Kaise Jiyu
Aajaa Re, Aajaa Re, Yu He Tadpa Na Tu Mujhko
Aa
Sau Baar Bulaaye Main Sau Baar Aaun
Ik Baar Jo Dil Diya
Ik Aankh Roye To Duji Bolo
Soyegi Kaise Bhala
In Pyaar Ki Raahon Mein Patthar Hain Kitane
Un Sab Ko He Paar Kiya
Ek Nadi Hoon Main Chaahat Bhari Aaj Milne
Saagar Ko Aayi Yahaan
Sajnaa, Sajnaa, Aaj Aansu Bhi Meethe Lage
Tu Hi Re, Tu Hi Re Tere Bina Main Kaise Jiyu
Aajaa Re, Aajaa Re, Yu He Tadpa Na Tu Mujhko
Jaan Re, Jaan Re, In Saanso Mein Bas Jaa Tu
Chaand Re, Chaand Re, Aajaa Dil Ki Zameen Pe Tu
Pal Pal Pal Pal Waqt To Bitaa Jaaye Re
Zaraa Bol Zaraa Bol Waqt Se Ke Vo Tham Jaaye Re
Aayi Re, Aayi Re, Le Main Aayi Hu Tere Liye
Jaan Re, Jaan Re, Aajaa Tujhamein Samaa Jaau Main…”
সবার হাততালির শব্দে রাহাতের হুঁশ ফিরলো। মায়াবতীটা এতো সুন্দর গান করতে পারে রাহাতের জানা ছিল না। মেয়েটাকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে গুনগুন করতে শুনেছে প্রায়ই। তবে ওর গানের গলাটা যে এতো মিষ্টি সেটা রাহাতের ভাবনারও অতীত ছিল। কিন্তু সেটার চেয়েও রাহাত বেশি অবাক হয়েছে মায়াকে দেখে। মিহানের বিয়ে বলে আজ বেশ সুন্দর করে সেজেছে মায়া। একটা ভারি শাড়ি পড়নে। গাঢ় খয়েরী রঙের শাড়িটায় সোনালী ফুলের কাজ করা। শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে দু হাত ভর্তি করে সোনালী রঙা চুড়ি। কানে গলায় মায়ার মায়ের স্বর্ণের গয়না। রাহাতের মনে হচ্ছে মাথায় একটা কনে ওড়না পড়লে মায়াকে একেবারে নতুন বউ লাগতো। ব্যাপারটা মনে হতেই হেসে ফেললো রাহাত৷ কাউকে একটা কল করে কিছু একটা বলে আবার মায়ার দিকে তাকালো রাহাত।
মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ রাহাতের খেয়াল হলো মায়াবতীটাকে একটা সারপ্রাইজ দেওয়া যায় এখন। তার মায়াবতীটা জানে না সে কাজ শেষ করে আজই ফিরেছে। মায়ার দিকে ধীরে ধীরে পা বাড়াচ্ছে রাহাত। কাছাকাছি আসতেই খেয়াল করলো মায়ার মুখটা হঠাৎ রঙ বদলেছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে চোখ নিচু করে চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করছে। কি হলো ব্যাপারটা রাহাতের মাথায় ঢুকলো না। মায়া ওকে তখনো দেখতে পায় নি। অন্য দিকে তাকিয়ে চোখের পানি আটকাতে ব্যস্ত মেয়েটা। মায়ার চোখে পানি দেখেই রাহাতের বুকের ভিতরে ধ্বক করে উঠলো৷ মায়ার আরো কাছাকাছি যেতেই কারো গলার স্বর শুনে একটু থমকে গেল রাহাত।
-ছেলের বোনের নাকি বিয়ে থা হয়েছে?? এতো সাজগোজ!! তা জামাই কই? তার সাথে তো জামাইকে দেখলাম না?
-দেখো গা ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে–। শুনলাম তো ইয়া বড় ঘরের ছেলে পটিয়ে বিয়ে করেছিল—। তাদের আফিসে চাকরি করতো—-। সেখানেই থেকেই-। ওই টিপটাপ আর কি–। বুঝো না?? নইলে এতো বড় ঘরের ছেলে?? ধরে রাখতে পারলি না হতভাগী???
-তা আর বলো কেন!!? মেয়ে তো গত ১০-১৫ দিন বাপের বাড়িতে পড়ে আছে–। কই জামাই তো একবারও এলো নি?? তার উপরে আজকে মেয়ের একটা মাত্র ভাইর বিয়ে—। জল চল থাকলে সে আসতো নি কও দেখি??—- আরে তাইড়ে দিসে দেখো গা——।।
-তাড়াবে নে?? যে নাকি চরিত্রির মেয়ে!! মা গো মা!!দেখতিসো না সবার সাথে কেমন ঢলাঢলি করে গান টান করতেসে–। একেবারে স্টেজে উইট্ঠে?? তা বাপু করবি কর– একটু রেখে ঢেকে কর না!! সবার সামনে কেন পরিবারের মুখে চুন কালি মাখবি!!
-কেন গো ভাবি!! কি করসে??
-আরে–। সেদিন—। সপ্তাহ খানেক আগে আমার ছেলে তিয়াশ তো দেখলো—। একটা লোক নাকি মাঝরাত্তিরে মায়ার ঘরের বারান্দা দিয়ে মায়ার ঘরে গেল–। তারপরেই দরজা লাগিয়ে দিল—। এই বউ কি আর সোয়ামী নেয় বলো!!
-হুম—। নতুন বউটার কপালই খারাপ বুঝলে?? এমন ননদ নিয়ে ঘর করতি হবে–যার চরিত্রিরই ঠিক নেই——-।
-ঠিকই বলসো গো—। প্রথমে টাকার লোভে বড় ঘরের ছেলেকে ফাঁসাও—। আর পরে টাকার ঝামেলা চুকে গেলে আলাদা হয়ে যাও—-। আর এসব করেই তো আজে বাজে রাস্তায় চলে যায় মেয়েগুলো—। এসব করে করে পাড়ার ছেলে ছোকরাগুলোকেও খারাপ করবে এরা—।।
-বিয়েটা মিটে গেলেই এই কুচরিত্রা মেয়েকে ওর শ্বশুরবাড়িতে তাড়াতে হবে–। নইলে এলাকার বউ মেয়েদের কি যে হবে!!??
-এই মেয়েকে কি আর নিবে তারা!!? জামাইটা তো ছেড়ে দিলোই বলে দেখো গা—। আর কতো জায়গায় মুখ কালো করেছে কে জানে!!?—–
কথাগুলো শুনতে শুনতে একপা একপা করেই রাহাত পিছিয়ে গেল। কথাগুলো মায়াকে শোনাচ্ছে এলাকার বউ ঝিয়েরা। তার মায়াকে!! রাগ হলেও নিজেকে সামলে নিল রাহাত। মায়া ঠিকই বলেছিল- লোকে মন্দ বললে মায়াকেই বলবে। কিন্তু সেটা রাহাত কিছুতেই মানতে পারবে না। স্টেজের কাছাকাছি এসে একজনকে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে মাইক হাতে স্টেজে উঠলো রাহাত।
-হ্যালো?? মিহান ভাইয়া আর নতুন ভাবিকে নতুন জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। আমাকে আপনারা প্রায় কেউই হয়তো চিনেন না–। আমি মায়ার হাসবেন্ড। খুব ইচ্ছে ছিল মিহান ভাইয়ার হলুদে-বিয়েতে সবাই মিলে অনেক মজা করবো– কিন্তু ব্যবসার কাজে আমাকে বাইরে যেতে হয়েছে–৷ তাই আর হয়ে উঠে নি—। আমার না আসা নিয়ে নিয়ে মায়াকে হয়তো অনেক অপ্রস্তুত হতে হয়েছে–তার জন্য সরি মায়াবতী–। এর জন্য রাগ করে যদি ঘরে ঢুকতে না দাও–। তাহলে সেদিনের মতো আবার একবার বারান্দা টপকে রুমে আসবো–। কোন চিন্তা নেই–। —অনেক কথা হলো–। এখন আমি আমার মায়াবতীর জন্য একটা স্পেশাল গান করবো।। আশা করি মায়াবতীর রাগটা পড়ে যাবে—।
কথাগুলো শুনে সবাই হা করে একবার রাহাতকে আর একবার মায়াকে দেখছে। মায়াও স্টেজের উপরে রাহাতকে দেখে ভ্যাঁবাচ্যাঁকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো। রাহাত হঠাৎ কোথা থেকে এলো। আর এসবই বা বলছে কেন কিছুই বুঝতে না পেরে অবাক চোখে রাহাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।।
চলবে
,
#মায়াবতী♥♥♥♥♥
#পর্ব_২৬
#সুলতানা_পারভীন
-“Bekhayali mein bhi tera hi khayaal aaye
Kyun bichhadna hai zaroori ye sawaal aaye
Teri nazdeekiyon ki khushi behisaab thi
Hisse mein faasle bhi tere bemisaal aaye
Main jo tumhse door hoon
Kyun door main rahoon
Tera guroor hoon
Aa tu faasla mita
Tu khwaab sa mila
Kyun khwaab tod doon oo…
Bekhayali mein bhi tera hi khayaal aaye
Kyun judai de gya tu ye sawal aaye
Thoda sa main khafa ho gaya apne aap se
Thoda sa tujhpe bhi bewajah hi malaal aaye
Hai ye tadpan, hai ye uljhan
Kaise jee loon bina tere
Meri ab sab se hai annban
Bante kyun ye Khuda mere hmm…
Ye jo log-baag hain
Jungle ki aag hain
Kyun aag mein jalun…
Ye nakaam pyaar mein
Khush hain ye haar mein
Inn jaisa kyun banun oo…
Raatein dengi bata
Neendo me teri hi baat hain
Bhoolun kaise tujhe
Tu toh khayalo me saath hai
Bekhayali mein bhi tera hi khayaal aaye
Kyun bichhadna hai zaroori ye sawaal aaye
Nazron ke aage har ek manzar
Ret ki tarah bikhar raha hai
Dard tumhara badan me mere
Zeher ki tarah utar raha hai
Nazron ke aage har ek manzar
Ret ki tarah bikhar raha hai
Dard tumhara badan me mere
Zeher ki tarah utar raha hai
Aa zamane aazmaale rooth ta nahi
Faaslon se hausla ye toot’ta nahi
Naa hai woh bewafa aur naa main hoon bewafaa
Woh meri aadaton ki tarah chhoot ta nahi………”
রাহাত গানটা শেষ করে স্টেজ থেকে নেমে মায়ার সামনে এসে আলতো করে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। তারপর আলতো হাতে মায়ার চোখের পানি মুছে দিলো।
-আই লাভ ইউ মায়াবতী।
মায়া আলতো করে হেসে রাহাতকে নিয়ে মিহানের কাছে নিয়ে গেল। নতুন বউটার সাথেও পরিচয় করিয়ে দিলো। মেয়েটার নাম দিয়া। ভিষণ মিষ্টি লাগছে মিহান আর দিয়াকে একসাথে। রাহাত একে একে সবার সাথে কথা বলছে। আর এতোক্ষণ যারা মায়াকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলছিল তাদেরকে দেখছে। মহিলাগুলো এক জায়গায় থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাহাত এদেরকে আর পাত্তা না দিয়ে মায়াকে দেখায় মন দিলো। অযথা এসব বাজে চিন্তায় মন দিয়ে আজকের দিনটাকে সে নষ্ট করতে চাচ্ছে না। মায়ার চোখে মুখে আবার সেই আগের উজ্জ্বলতা আর চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সেটাই অবাক মুগ্ধতা নিয়ে দেখছে রাহাত। মায়াও একটু পর পর রাহাতের দিকে তাকাচ্ছে। তাই বারবার চোখাচোখি হচ্ছে দুজনের। আর চোখাচোখি হলেই রাহাতের ঠোঁটের কোণে তার বিখ্যাত বাঁকা হাসিটা ফুটে উঠে মায়ার আত্মা কাঁপিয়ে দিচ্ছে বারবার।
দশটার দিকে নতুন বউকে নিয়ে বাড়ি ফিরছে ওরা। মায়ার মা আর রহিমা খালা বাড়িতেই অপেক্ষা করছেন। রাহাত আসার সময় কমিউনিটি সেন্টারের পাশে ফুলের দোকান দেখে গাড়িটা সাজানোর জন্য দিয়ে এসেছিল। সেই ফুলে ফুলে সাজানো গাড়িটাতে করেই ওরা চারজন ফিরছে। মিহান আর দিয়া নতুন বর কনে পিছনে বসা। আর রাহাতের পাশে বসা মায়া। মায়া জানালার বাইরে মুখ ঘুরিয়ে বাইরের অন্ধকার দেখছে। রাহাতও সেটা বুঝতে পেরে মায়ার একটা হাত ধীরে টেনে নিয়ে ড্রাইভিং করছে। মায়া রাহাতের দিকে ফিরতেই রাহাত ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। মায়া একটু হেসে মাথা নাড়লো।
বাসায় আসার পর আয়নায় মুখ দেখাদেখি পর্ব শেষ হলে মায়ার কাজিনরা নতুন বউকে বাসর ঘরে দিয়ে আসার জন্য নিয়ে যায়। মায়া একটু পিছনে ছিল। হঠাৎ কেউ কোমড় পেঁচিয়ে ধরে একেবারে একটা রুমের দেয়ালে হালকা করে চেপে ধরায় প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেল মায়া। কিন্তু চেঁচিয়ে উঠতে গিয়েও কিছু বললো না। স্পর্শটা ওর চেনা। মায়ার সমস্ত সত্তা জুড়ে আছে মানুষটা। মায়া মুখ তুলে তাকাতেই দেখলো রাহাত মিটিমিটি হাসছে ওর দিকে তাকিয়ে। মায়া একটু সরে আসতে চেষ্টা করতেই রাহাত আরো গভীরভাবে মায়াকে চেপে ধরলো।
-ছাড়ো?? কি করছ?? কেউ চলে আসবে তো??
-কোথায় যাচ্ছিলে??
-ভাইয়ার রুমে—। ভাবিকে রুমে–।
-ভাবিকে রুমে দিয়ে আসতে এতো জন যেতে হয়?? আর আজকে ভাইয়ার রুমে ভিড় করে কাজ নেই—। সবাই যে যার মতো ঘুমিয়ে যাবে–। তুমি চলো??
-আরে??
-কি??
-এখন রুমে যাব না—। কাজিনরা আছে না? ওরা কে কোথায় থাকবে–।
-ধুর–। কথা কম। বললাম না–? আর ওদের ব্যবস্থা মা আর রহিমা খালা করে দিয়েছে—। তুমি এখন আমার সাথে যাবা—।
-তবুও আমি একবার—-।
-চুপ——–।
-আরে? কি করছো??
রাহাত হুট করে মায়াকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে একেবারে রুমে নিয়ে গিয়ে খাটে বসিয়ে দিলো। মায়া ভ্রু কুঁচকে রাহাতকে দেখছে। রাহাত দরজা বন্ধ করে এগিয়ে এসে মায়ার সামনে ফ্লোরে বসে মায়ার কোলে মাথা রাখলো।।
-মায়া??
-হুম??
-আমার মায়াবতীটাকে নিজের করে চাই–। একেবারে নিজের করে–।
———–মানে!?
-পরীটাকে একেবারে বুকের ভিতরে আঁকড়ে ধরতে চাই–। আমার লাজুক পরীটা তো এতোদিনেও লজ্জায় আমার কাছে ধরা দিতে এলো না? হয়তো ওই ড্রেসটা পড়ে আসতে লজ্জা হবে ভিষণ—-। তাই পরীটা যেমন তেমনই চাই আমি–। আর কিচ্ছু না–। পরীটা কি ধরা দিবে আজ??
————————
-না চাইলে জোর করবো না মায়াবতী—। আই উইল ওয়েট ফর ইউ—।।
রাহাত উঠে চলে যাওয়ার আগেই মায়া রাহাতের হাতটা ধরে ফেললো। রাহাত মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো মায়া মুখটা নিচু করে ওর হাতটা ধরে রেখেছে৷ রাহাত এগিয়ে গিয়ে মায়ার মুখটা তুলে দিতে চাইলেও মায়া মুখ মুখ না তুলেই রাহাতের বুকে মুখ লুকালো।
-আমি তো ধরা দিতেই চাই—।
-তাই? তাকাও তো তাহলে মায়াবতী?
-উহু—।
রাহাত মায়ার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে সরে এসে একটা প্যাকেট এনে মায়াকে ধরিয়ে দিলো। মায়া মুখ তুলে তাকাতেই রাহাতের দিকে চোখাচোখি হলো।
-চেইঞ্জ করে এসো পাগলিটা?? যাও?
-এটা কি??!
-আমার মায়াবতীকে মানায় এমন কিছু—।
-হুম??
-আমার মায়াবতীর জন্য গিফট–।
মায়ার লজ্জায় লাল মুখটা দেখে রাহাত আলতো করে মায়ার কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। মায়ার কানে কিছু বলার জন্য মুখ বাড়ালো।
-শাড়িটায় আমার মায়াবতীকে মায়াপরী লাগবে। কোন সাজ লাগবে না। প্যাকেটে কাজল আর টিপ আছে। জাস্ট ওগুলো দিয়েই শাড়িতে মায়াপরীকে দেখবো–। ওকে??
মায়া লাজুক হেসে মাথা নাড়লো। প্যাকেটটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে একেবারে বুকে জাপটে ধরলো প্যাকেট। আর এদিকে মায়া ওয়াশরুমে চেইঞ্জ করতে যেতেই রাহাত নিজের কাজে লেগে গেল। পরীটার জন্য রুমটা সাজাতে হবে। সময় কম। পরীটার বের হওয়ার আগেই রুমটা সাজানোর কাজ শেষ করতে হবে। তাই ব্যস্ত হয়ে কাজে লেগে পড়লো রাহাত। মায়াও আস্তে আস্তে শাড়ি পড়ে বেরিয়েই জাস্ট হা হয়ে গেল। পুরো রুমটা এতোটা অন্ধকার। এই নিস্তব্ধতায় ভয় ভয় করছে মায়ার। কয়েকবার রাহাতকে ডাকলেও কোন জবাব নেই। মায়া ঢোক গিলে চিন্তা করতে লাগলো মানুষটা গেল কোথায় আর রুমটাই বা এতো অন্ধকার কেন!!
চলবে
,
#মায়াবতী♥♥♥♥♥
#পর্ব_২৭
#সুলতানা_পারভীন
-রাহাত? কোথায় তুমি?? ভয় করছে আমার—–।।
-মায়া?? এক মিনিট দাঁড়াও–। প্লিজ?? আর একটু—-।।
-হুম—-।
নিকষ কালো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই হাতে আলতো একটা হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো মায়া। আলতো করে হাতটা মায়াকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো। তারপর এগিয়ে এসে কানের কাছে মুখ নিলো।
-মায়াবতী? একটা জাদু দেখবে??
-হুম—–?? দেখবো—-।
-আমার হাত ধরে থাকো–। বারান্দায় যাই একটু— চলো।। কেমন?
-আচ্ছা—–।।
বারান্দার দরজাটা খোলার পর মায়া একেবারে হা হয়ে গেল। এতোক্ষণও মায়া রাহাতের হাতটা ধরা ছিল। অবাক বিস্ময়ে রাহাতের হাতটা আরো একবার জাপটে ধরে সামনে দেখতে লাগলো মায়া। খোলা বারান্দাটার দেয়ালের কার্নিশ ঘেষে জ্বলছে ছোট্ট ছোট্ট অসংখ্য প্রদীপ। মিটিমিটি প্রদীপের আলোয় মায়ার শখের গাছগুলোয় ঝুলে থাকা ছোট্ট ছোট্ট কিছু নোট, কার্ড আর বেলুন ঝুলতে দেখা যাচ্ছে–। মায়া একটু ছুটে এসে নোটে কি লিখা আছে পড়ার চেষ্টা করলো। আর কার্ডগুলো ধরে ধরে দেখতে লাগলো যেতে যেতে। কার্ড আর নোট সবগুলোতেই রঙ বেরঙের কালিতে লেখা শুধু একটা কথা–।
” I Love You”
মায়া হেসে ফেললো লেখাগুলো পড়েই। পিছন ফিরে দেখলো রাহাত বারান্দার দরজায় হেলান দিয়ে মায়ার দিকেই তাকিয়ে আছে। মায়াকে দেখে রাহাতেরও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠেছে। মায়াকে লাল রঙের শাড়ি, লাল টিপ আর কালো কাজলে আরো বেশি মায়াবতী লাগছে। তার উপরে এই মৃদু প্রদীপের আলোয় আরো মোহনীয় লাগছে মেয়েটাকে। মনে হচ্ছে স্বর্গ থেকে কোন অপ্সরা নেমে রাহাতের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। মায়ার ঠোঁটে হাসি ফুটতে দেখে ভালো লাগছে রাহাতের। রাহাত একটু একটু করে এগিয়ে এলো মায়ার দিকে। মায়ার লাজুক লাল টুকটুকে মুখটা দেখে একেবারে নেশা ধরে যাচ্ছে রাহাতের। এগিয়ে এসে মায়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মায়ার চুলের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে একেবারে ঘাড়ে মুখ গুঁজলো রাহাত।
-মায়াবতী?? ও মায়াবতী?? আই লাভ ইউ—–।।
-হুম—। আই লাভ ইউ টু—।
-মায়াপরী?? একটা গান শুনবা??
-হুম—।। শোনাও—–।
মায়ার কানের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে ফিসফিস করে গান ধরলো রাহাত। গানের প্রত্যেকটা শব্দের সাথে রাহাতের নিশ্বাসগুলো মায়ার কানে এসে লাগছে। আর মায়ার ভিতরটা কাঁপিয়ে দিচ্ছে বারবার।
-“Main toh bas teri chahat mein
Chahoon rehna sada
Main toh bas teri qurbat mein
Chahoon rehna sada
Saaya bhi tera main, hone na doon juda.
Maine tay kar liya
Tere ishq pe, tere waqt pe.
Bas haq hai ik mera
Teri rooh pe, tere jism pe
Bas haq hai ik mera
Bas haq hai ik mera
Bas haq hai ik mera
Main toh bas teri chahat mein
Chahoon rehna sada
Main toh bas teri qurbat mein
Chahoon rehna sada
Yaadon mein tujhko rakhun
Baatein bhi teri karoon
Itna deewana hoon tera
Ho ho raaton mein jaaga karoon
Din bhar bhatakta rahoon
Main toh yahaan se bas wahaan
Tere ishq pe, tere waqt pe.
Bas haq hai ik mera
Teri rooh pe, tere jism pe
Bas haq hai ik mera
Bas haq hai ik mera
Bas haq hai ik mera
Main toh bas teri chahat mein
Chahoon rehna sada
Main toh bas teri qurbat mein
Chahoon rehna sada
Baahon mein tujhko rakhun
Dhadkan mein teri sunoon
Aa itna nazdeek aa zara
Hoo jisme duaayein rahe
Har dum wafaayein rahe
Doon tujhko aisa ik jahan
Tere ishq pe, tere waqt pe.
Bas haq hai ik mera
Teri rooh pe, tere jism pe
Bas haq hai ik mera
Bas haq hai ik mera
Bas haq hai ik mera
Main toh bas teri chahat mein
Chahoon rehna sada
Main toh bas teri qurbat mein
Chahoon rehna sada
Saaya bhi tera main, hone na doon juda.
Maine tay kar liya…….”
গানটা শেষ হতেই রাহাত মায়াকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো। মায়া রাহাতের গলায় হাত ঝুলিয়ে রাহাতের চোখের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে গেল। মানুষটার চোখে মুখে অনেক রকমের দুষ্টুমির জাদু খেলা করছে।
-রুমে চলো পরী??
-হুম—–।।
রাহাত মায়াকে নিয়ে রুমে আসতে মায়া আরেকবার অবাক হলো। রুমটা তো একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা ছিল তখন। এখন রুমে অনেক রঙের মোমবাতি জ্বলছে। খাটটার স্ট্যান্ড বেয়ে কাঠবেলি, বেলি আর গোলাপ দিয়ে বানানো ফুলের শিকল ঝুলছে। বিছানার মাঝামাঝিতে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লাভ শেইপ করা। একেবারে ওদের বাসর রাতের আদলে রুমটা সাজানো।। মায়া অবাক হয়ে কিছু বলতে রাহাতের দিকে তাকাতেই রাহাত একটা হাসি দিয়ে মায়াকে একেবারে বিছানায় নিয়ে গিয়ে নামালো। মায়ার পাশে বসে মায়ার একটা হাত টেনে নিলো রাহাত।
-এসব কখন করলে??
-তুমি যখন চেইঞ্জ করছিলে তখন রুমের ডেকোরেশন করেছি–। কিন্তু মোমগুলো জ্বালানোর সময় পাই নি–। তাই যখন বারান্দার ডেকোরেশন দেখছিলে তখন মোম সাজিয়ে জ্বালিয়েছি—-।।
-আর?? বা–বারান্দার? ডেকোরেশন?
-উম—। সেটা—-। তোমার কাজিনদেরকে বলে করিয়েছি—-। কার্ড আর নোট নিজেই নিয়ে এসেছিলাম চট্টগ্রাম থেকে আসার সময়—। কিভাবে দিবো বুঝতে পারছিলাম না—। তোমাকে লাল টুকটুকে বউয়ের সাজে স্টেজে দেখে প্ল্যানটা মাথায় এলো তখন—-।।
-তুমি ওদেরকে বলে—–??
-হুম–। তো কি হয়েছে?? একটু রোমান্স করা শিখে নিলে ওদেরই ভালো——।।
-অসভ্য লোক——।
-জি—। আমি অসভ্য–। তবে সেটা শুধু আপনার কাছে ম্যাডাম–।
-সরো—–।।
-বাহ!! আজকে ছাড়ছি না–। আজকে আমার মায়াবতীকে চাই মানে চাই—-।। কোন আপত্তি শুনছি না আজকে—–।। তবে ম্যাডাম আপনার কি কোন আপত্তি আছে? নিজেকে আমার রঙে রাঙাতে? আমার ভালোবাসার রাজ্যে হারিয়ে যেতে—–।।
-উহু—–।।
মায়া লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলে রাহাত দু হাতে মায়ার মুখটা তুলে ধরে চোখে চোখ রাখলো।
-মায়াবতী?
-হুম———–।।
-ভালোবাসি—–।।
-তোমাকেও ভিষণ ভালোবাসি–। তোমাকে ভিষণ করে চাই–। তোমার রঙে নিজেকে রাঙাতে চাই–।। তোমার মতো করে নিজেকে সাজাতে চাই—-।।
-আচ্ছা?? তাই নাকি?? তো কি করা যায়—??
-জানি না–। যাও—–।।
-আহা!! লজ্জাবতী?? আসো আজকে লজ্জাবতীর লজ্জাটা ভাঙাই—–।।
-ধ্যাত——-।।
মায়া আরো লজ্জা পেয়ে রাহাতের বুকে মুখ ডুবিয়ে নিলো। ধীরে ধীরে রাহাতের ভালোবাসার উষ্ণতায় হারিয়ে যেতে লাগলো। মনের কোণের সমস্ত খচখচানিটা সরিয়ে রেখে রাহাতের মাতাল করা ভালোবাসায় গা এলিয়ে দিয়ে সেটা উপভোগ করার চেষ্টা করলো মায়া। আর রাহাতও নিজের সব ভালোবাসা উজাড় করে তার মায়াবতীকে ভরিয়ে দিতে লাগলো এক অজানা সুখে।।
চলবে
,
#মায়াবতী♥♥♥♥♥
#পর্ব_২৮
#সুলতানা_পারভীন
সকালে ঘুম ভাঙতেই এক চিলতে আলো এসে চোখে পড়ায় মায়ার তাকাতে প্রথমে একটু কষ্ট হলো। একটু পরেই টের পেল আলোটা আর চোখে এসে লাগছে না৷ আলোর বদলে মিষ্টি একটা ছায়া এসে পড়েছে কোত্থেকে যেন। আবার চোখ খুলেই ছায়ার রহস্যটা দেখতে পেল মায়া। রাহাত মায়ার দিকে একটু ঝুঁকে হাত দিয়ে আড়াল করে রোদটাকে মায়ার চোখে মুখে পড়া থেকে আটকাচ্ছে। মায়া নিজের ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেললো রাহাতের কাজ দেখে।। রাহাতও আরেকটু ঝুঁকে মায়ার গালে চুমো খেল।
-এভাবে হেসে আবার কেন আমার নেশা জাগাচ্ছে মায়াবতীটা?? হুম? হুম??
-কি??
-এভাবে হেসো না গো–। পাগল হয়ে যাবো—-।
-ধ্যাত–। সরো–। কত বেলা হলো??
-আরে??
মায়া গায়ে চাদরটা ধরে উঠে যাওয়ার আগেই রাহাত মায়াকে টেনে একেবারে বুকের ভিতরে নিয়ে শুয়ে গেল।
-আরে?? কি করছ?? কত বেলা হলো??
-এ আর এমন কি বেলা হলো বউ? আটটা বাজে–। পাশের রুমে দুজন সুখী মানুষ হয়তো একটু আগেই ঘুমিয়েছে–। আর তুমি এখনই উঠার জন্য লাফালাফি করছো—?
-এই এই?? লজ্জা শরম কিছু নেই তোমার?? মুখে কিছু আটকায় না?
-না আটকায় না–। আর তোমার লজ্জাটাও তো ভেঙে দিলাম রাতেই–।।
-অসভ্য লোক একটা–। সরো??
-উহু—–। সারারাত আমি মায়াপরীটাকে আদর করেছি–। এখন মায়াবতীটা——।।
-সরো????? ছাড়ো।
-আহা!! সেটি বললে তো হচ্ছে না গো মায়াবতী—।
-ছাড়ো না?? কাজ আছে তো–। মা আর রহিমা খালা সবকিছু সামলাতে পারবে না তো—–??
-যতই বাহানা দিন না কেন, আপনার এতো তাড়াতাড়ি আমাকে ছেড়ে যাওয়া চলবে না।
-হুহ—।
-নিজে তো পড়ে পড়ে এতোক্ষণ ঘুমাচ্ছিলে—। কি মায়াভরা মুখ–। আসলে ঠিকই বলে জানো? প্রথম বাসরের পর বউয়ের মুখ দেখে–।।
মায়া লজ্জা পেয়ে চাদরটা গায়ে পেঁচিয়ে অন্য দিকে ফিরে গেল। রাহাত হেসে একটু সামনে এসে এক হাতে ভর দিয়ে শুয়ে অন্য হাতে মায়ার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে পিঠে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। মায়াও কেঁপে উঠে রাহাতের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। রাহাত মায়ার ঘাড়ে, কানে, চুলে মুখ গুঁজে দুষ্টুমিতে মাতলো।
-আহারে!! এতো আদরেও লজ্জাবতীর লজ্জা ভাঙে নি??
-সরো?? কি শুরু করেছ সকাল সকাল–?
-মায়া?? একটা কথা জিজ্ঞেস করি?? রাগ করো না প্লিজ?
-নাহ রাগ করবো না।। বলো?
-আম—। গতকাল তোমার মাঝে ডুব দেওয়ার সময় অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিল। বারবার মনে হচ্ছিল এভাবে আগেও তোমাকে কাছে টেনেছি-। মনে হচ্ছিল তোমার শরীরের প্রত্যেকটা ভাঁজে আমার স্পর্শ এভাবে আগেও করেছি—। কিন্তু আসলে তো তা না বলো? তোমাকে এর আগে তো এতোটা আপন করে কাছে টানি নি—।
——— কাল যখন বললে আমাকে নিজের করে চাও–। তখন শুধু প্রে করছিলাম যেন সেদিনের মতো এতোটা কাছে এসে ফিরিয়ে না দাও—-।
-মানে?? কবের কথা বলছো? আমি বুঝতে পারছি না কিছু—–।
-কিছু না—–।। সরো? একটু ঘুমিয়ে নাও–। আজ কিন্তু অনেক কাজ আছে—।
-মায়াবতী?? কি লুকাচ্ছ আমার কাছে??
-আরে?? কিছুই না–। সরো না? ছাড়ো—-। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি-।
-হুম—?? আচ্ছা—-।। যাও–।
মায়াকে ছেড়ে দিতেই মায়া রাতের লাল শাড়িটা পেঁচিয়ে পড়ে আলমারি থেকে আরেকটা শাড়ি বের করে ওয়াশরুমে চলে গেল। রাহাত রাতের ছড়ানো ফুলের শিকল আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে চিন্তা করতে লাগলো মায়া কি বলে গেল৷ কিছু মনেও আসছে না। ভাবতে ভাবতেই বেচারা একসময় ঘুমিয়েও গেল।
মায়া শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে দেখলো রাহাত ঘুমিয়ে গেছে। শাড়িটা ঠিক করে চুল মুছছে এমন সময় টুং করে একটা মেসেজের শব্দ হলো কোথাও। মায়া নিজের মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো কোন নোটিফিকেশন আসে নি। পাশে রাহাতের মোবাইলে আলো জ্বলছে দেখে হাতে নিতেই দেখলো একটা মেসেজ এসেছে। লিজা নামে সেইভ নামটা। মায়া ভ্রু কুঁচকে একটু চিন্তা করে মেসেজটা ওপেন করলো।
” স্যার প্রজেক্টের কাজটা আগামী সপ্তাহ থেকেই শুরু করতে হবে। অফিসে এসে আমাদের কাজটা বুঝিয়ে দিলে ভালো হতো।”
কয়েকবার মেসেজটা পড়েও ঠিক কি বুঝিয়েছে বুঝলো না মায়া। মোবাইল রেখে মায়া চিন্তা করলো একটু। হয়তো রাহাতের ড্রিম প্রজেক্টটার কাজ শুরু হবে। কিন্তু অফিসে কাকে কি বুঝাতে হবে!! যাক গে!! এমনিতেও লোকটা বহুদিন অফিসে যায় না। জোর করে না পাঠালে যাবেও না। এসব ভেবে মায়া নিজেই হেসে ফেললো রাহাতের ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে। রাহাতের কাছে একটু এগিয়ে গিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো মায়া। কিন্তু একটা কথা মায়ার মনে খচখচ করতেই থাকলো। এই লিজা টা কে?? মায়ার ইচ্ছে করছে এখনই ঘুম থেকে ডেকে দিয়ে রাহাতকে জিজ্ঞেস করতে কে এই লিজা। ও কেন মেসেজ করবে রাহাতকে!!? কিন্তু কাজটা করা ঠিক হবে না। তাই আর জাগালো না। রাহাতেট মুখটা আরেকবার দেখে চাদরটা গায়ে ভালো করে জড়িয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হলো মায়া। ভালো করে দরজাটা আটকে দিয়ে রান্নাঘরে মায়ের সাথে কাজ করায় মন দিলো।

নাস্তা বানানো শেষ হলে আবার রুমে এলো মায়া। রাহাত এখনো ঘুমাচ্ছে। মানুষটাকে জাগাতেও ইচ্ছে করছে না মায়ার। কয়টা দিন কত পরিশ্রম যাচ্ছে ওর উপর দিয়ে। প্রজেক্টের কাজ শেষ করে চট্টগ্রাম থেকে জার্নি করে ফিরেছে। আর রাতে!! রাতের কথা মনে পড়তেই একা একাই লজ্জায় লাল হয়ে গেল মায়া। নিজেকে সামলে নিতেই একটা দুষ্ট বুদ্ধি মাথায় এলো মায়ার। নিজের এক গাছি ভিজা চুল নিয়ে রাহাতের কানে সুড়সুড়ি দিলো। প্রথমবারে রাহাতের নড়ন চড়ন নেই। আরেকবার সুড়সুড়ি দিতেই রাহাতের ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল। মায়া হেসে একটু পরে আবারও রাহাতের কানের কাছে চুল নিতেই রাহাত দু হাতে মায়াকে টেনে বিছানায় ফেলে বুকে জড়িয়ে নিলো। মায়া ছোটার জন্য লাফালাফি করছে প্রচন্ডভাবে। রাহাতও মায়াকে আরো নিবিড় করে বুকে চেপে ধরলো।
-আরেকবার ঘুমের ডিস্টার্ব করবা খবর আছে মায়াবতী—। চুপ করে বুকের মধ্যে শুয়ে থাকো—। নড়াচড়া না একদম—।
-ছাড়ো—-। আচ্ছা আর করবো না তো??
-বললাম না?? নড়াচড়া না–। আর কথাও বলবা না–। চোখ মেলতে পারছি না–। প্রচন্ড ঘুমে চোখ টানছে–। সো ডোন্ট টক–। ওকে??
-এই?? ছাড়ো না গো??
মায়া কিছু বুঝে উঠার আগেই রাহাত মায়ার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটের মাঝে চেপে ধরলো। একটু পরে ছেড়ে দিয়ে মায়াকে আলগা করে ছেড়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো রাহাত।
-যাও—-। এখন ছেড়ে দিলাম–।
মায়া রাহাতের বুক থেকে সরে না এসে মুখ ডুবিয়ে একটু লাজুক হাসলো। লোকটা এতো আজব কেন মাঝেমাঝে সেটা মায়া বুঝে ওঠে না৷ তবে এই আজব, অদ্ভুত মানুষটাকেই মায়া পাগলের মতো ভালোবাসে। এই মানুষটার থেকে দূরে গিয়ে কি করে থাকবে সেটাই মায়া বুঝে ওঠে না। তবু কেন জানি মনে হয় জীবন নামের রঙ্গমঞ্চে ওদের এইটুকুই একসাথে পথচলা ছিল। বাকি পথটুকু চলতে হবে আলাদা। আর যতই কষ্টের হোক না কেন পথটা ওদের আলাদাই চলতে হবে।।
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here