#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_০৭(১)
®ফিহা আহমেদ
পরশির ভাবনার মাঝে মিসেস শিখার ডাক পড়লো।
“নবাবজাদী রুম থেকে বের হ্। (মিসেস শিখা দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো)
পরশি দ্রুত চোখের পানি মুছে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলতেই মিসেস শিখা পরশিকে ঝাড়ু দিয়ে মারতে শুরু করে। পরশি এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা।
ইয়ানা গরম তেল এনে পরশির বাম হাতে ঢেলে দিল।পরশি জোরে চিৎকার করে দৌঁড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে হাতে ঠান্ডা পানি দেওয়া শুরু করলো।
“পরশি ওয়াশরুমের দরজা খোল বলছি আজকে তোকে মেরেই ফেলবো।বাহিরে অন্য ছেলের সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে গিয়েছিস।বের হ্ বলছি। (ইয়ানা)
“আজ আহাদ আর লিমা নেই। লারা-রিশাকে ও বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। আজ তোকে কে বাঁচাতে আসবে দরজা খোল বলছি”। (মিসেস শিখা)
তখনি পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো,,,,,
“কি হয়েছে মা?
মিসেস শিখা পিছনে তাকালেন।
“কিছু হয়নি বাবা চল নিচে চল”। (মিসেস শিখা)
“কিন্তু আমি স্পষ্ট শুনলাম তোমরা বলছিলে আজ আহাদ আর লিমা নেই এখন তোকে কে বাঁচাবে”। (আহাদ বিষন্ন হয়ে বললো)
“আব্বু তুমি ও না চল তো এখান থেকে। কিছু হয়নি ওর সাথে আমাদের”। (ইয়ানা)
ইয়ানা – মিসেস শিখা আহাদ সিকদারকে জোর করে পরশির রুম থেকে নিয়ে গেল।
বাহিরে থেকে সবকিছু নিরব দেখে পরশি ভয়ে ভয়ে ওয়াশরুমের দরজা খুললো।দরজা খুলে পরশি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।পরশি সাদা রঙের একটা রুমাল হাতে বেঁধে নিল।মেডিসিন বাক্স ইয়ানা লুকিয়ে রেখেছে ইচ্ছে করে। পরশি যেন তার ক্ষতস্থান গুলোতে ঔষুধ না দিতে পারে। পরশি সারাদিন না খেয়ে আছে। ফুচকার দোকানে পরশি ফুচকা খায়নি। খালি পেটে ফুচকা খেলে পেট খারাপ হবে এইজন্য। পরশির প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে। পরশি কান্না করতে করতে বললো,,,,,
“দাদী বলেছে দু’দিন না খেয়ে থাকতে। আমি তো এখনই যেন ঘুরে পড়ে যাব এমন অবস্থা। প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে। শুয়ে পড়লে ক্ষুধা যে আছে তা আর মনে পড়বে না”।
পরশি তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লো যেন ক্ষুধার যন্ত্রণা অনুভব না হয়।
_____
~ “চৌধুরী ভিলা”
“ভাই পরশির দাদীটা একটা ডাইনি”। (জিহা)
“হুম মেয়েটা ওই বাড়িতে অনেক কষ্টে আছে।তাছাড়া মা-বাবা ও নেই। সবদিক থেকে মেয়েটা ভীষণ দুঃখী”। (জোভান মন খারাপ করে বললো)
“আচ্ছা ভাই আমরা পরশির জন্য কিছু করলে কেমন হবে? (জিহা)
“মানে আমরা কি করব পরশির জন্য? (জোভান)
“ওই নরক থেকে পরশিকে বের করে নিয়ে আসতে হবে আমাদের”। (জিহা)
“এত তাড়াতাড়ি কিছু করা ঠিক হবে না।আগে মেয়েটার মন জয় করতে হবে আমাদের। এত তাড়াতাড়ি সে আমাদের বিশ্বাস করবে না।যেখানে নিজের আপনজন দিনের পর দিন কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে সেখানে আমরা তো বাহিরের মানুষ আমাদের এত সহজে সে বিশ্বাস করবে না”।(জোভান)
“ঠিক বলেছিস ভাই”। (জিহা)
জিহার ফোন আসতেই জিহা জোভানের রুম থেকে চলে গেল।
_____
“ফোন দিচ্ছ কেন বারবার তিয়াস ভাইয়া সাথে ছিল”। (জিহা রেগে বললো)
“সরি সরি সরি জিহু।আসলে তোমায় অনেক মিস করছিলাম তাই বারবার ফোন দিচ্ছিলাম।আমি তোমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছে বেলকনিতে আসো”। (তিয়াস)
“কিহ্ তুমি বাড়ির ভিতর চলে এসেছ কিন্তু কিভাবে? দারোয়ান কাকু দেখেনি? (জিহা আশ্চর্য হয়ে বললো)
“দেয়াল টপকে এসেছি জিহু প্লিজ বেলকনিতে আসো তোমায় একবার দেখে চলে যাব”। (তিয়াস)
“আচ্ছা ঠিক আছে আসছি”। (জিহা)
জিহা বেলকনিতে আসতেই তিয়াস হাত দিয়ে হায় দিচ্ছে। এইদিকে ভয়ে জিহার অবস্থা খারাপ কেউ যদি এসে যায় সর্বনাশ হয়ে যাবে।
“আমাকে দেখা হয়েছে তোমার প্লিজ এবার চলে যাও।ভাই আর মা দেখলে সমস্যা হয়ে যাবে।প্লিজ যাও তিয়াস”। (জিহা ভীতু কন্ঠে বললো)
ঠিক তখনই পিছন থেকে জোভান বলে উঠলো,,,,,
“ফোনে কার সাথে ফুসুরফুসুর করছিস জিহা?
জোভানের কন্ঠস্বর শুনে জিহা ভয় পেয়ে গেল। জিহা তাড়াতাড়ি ফোন কানের থেকে সরিয়ে ফেললো।জিহা আমতাআমতা করে বলে,,,,
“ভাইয়া পিকু ফোন দিয়েছে । ও আগামীকাল শপিংয়ে যাবে তো তাই আমায় রিকোয়েস্ট করছে ওর সাথে আগামীকাল শপিংয়ে যেতে”।
“আচ্ছা ঠিক আছে। খেতে চল মম ডাকছে”। (জোভান)
জোভানের জিহার কথায় সন্দেহ হলো কিন্তু কিছু বললো না। জোভান জিহাকে নিয়ে নিচে চলে আসলো খাবার খেত।
খাবার টেবিলে সবাই খাবার খাচ্ছে। খাবারের মাঝে সিফাত চৌধুরী (জোভানের দাদা) বলে উঠলো,,,,,
“স্বর্ণা মা আমি তো বেশিদিন বাঁচব না।আমার অনেক ইচ্ছে মৃত্যুর আগে আমার দুই নাতি-নাতনির বিয়ে দেখে যেতে”।
“বাবা জোভানের এই বছর অনার্স শেষ হয়ে যাবে তারপর না হয়,,,,, (মিসেস স্বর্ণা)
“আমি আমার ইচ্ছের কথা তোমায় জানিয়েছি বউমা বাকিটা তোমাদের ইচ্ছে”৷ (সিফাত চৌধুরী)
জোভান-জিহা চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে আর তাদের কথা শুনছে।খাবার শেষে জোভান – জিহা যার যার রুমে চলে গেল ঘুমাতে।
_____
জোভানের ঘুম আসছে না বার বার ওই জঘন্য সময়টার কথা মনে পড়ছে জোভানের।
“আর একটু দেরি হলে সব শেষ হয়ে যেত মিস জুনিয়রের।ইচ্ছে করছে ওই কুলাঙ্গারের হাত কেটে ফেলে দিতে।আমার এত জেলাস হচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না।আমার এতগুলো গার্লফ্রেন্ড আছে অথচ কারোর জন্য এত টেনশন হয়নি কিন্তু মিস জুনিয়রের জন্য টেনশন হচ্ছে কেন। মিস জুনিয়রের মায়াবী মুখটি বারবার আমায় ডিস্টার্ব করছে।আচ্ছা মিস জুনিয়র কি খেয়েছে নাকি না খেয়েই শুয়ে পড়েছে। ওই ডাইনি বুড়িকে আমি উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়ব”।(জোভান)
ভাবনার মাঝে জেভানের মোবাইল বেজে উঠলো।
জোভান ফোন রিসিভ করতেই ওইপাশ থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো,,,,,
“কতদিন ধরে আমায় ইগনোর করে যাচ্ছ জোভান বেবি। কি হয়েছে তোমার এমন করছো কেন?
জোভান কানের থেকে মেবাইল সামনে এনে দেখলো,,,,
“তেরো নম্বর গার্লফ্রেন্ড”
“ব্রেকআপ” (জোভান)
“ব্রেকআপ কেন বেবি আমি কি করেছি বলো। যদি কোনো ভুল করে থাকি তাহলে সরি।প্লিজ,,,,
মেয়েটি আর কিছু বলার আগেই জোভান ফোন কেটে দিল।
“অসহ্য লাগছে এখন এদেরকে”। (জোভান রেগে বললো)
‘
#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_০৭(২)
®ফিহা আহমেদ
ফজরের আজানের ধ্বনিতে পরশির ঘুম ভেঙ্গে গেল। পরশি শোয়া থেকে ওঠে বসলো। কিছুক্ষণ পোড়া হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওজু করে নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করলো এমন অভিশপ্ত জীবনের জন্য। নামাজ শেষে দশ মিনিট কোরআন শরিফ পড়লো পরশি।জায়নামাজ গুছিয়ে পরশি কিচেন রুমে আসলো। নাস্তা বানানো শুরু করলো । এক ঘন্টার মধ্যে সকালে নাস্তা বানিয়ে ফেললো পরশি। নাস্তা বানিয়ে পরশি নাস্তা খাবার টেবিলে রেখে নিজের রুমে চলে আসলো। পড়ার টেবিলে বসলো পরশি।
দুই ঘন্টা পড়া শেষ করে পরশি আলমারি থেকে বোরখা বের করলো।বোরখা পড়ে নিচে নামতেই আহাদ সিকদার বলে উঠলো,,,,,
“পরশি মা আজ হঠাৎ বোরখা পড়লি যে”।
“এখন থেকে প্রতিদিন বোরখা পড়ে ভার্সিটি যাব জেঠু”। (পরশি)
“এটা তো ভালো। খেয়ে যা না খেয়ে যাবি না”। (আহাদ সিকদার)
“আমি কেন্টিন থেকে খেয়ে নিব জেঠু এখন যাই”। (পরশি)
পরশি যেতে নিবে তখনই ইয়ানা পরশির হাত ধরে ফেললো।
“কাহিনী কি পরশি আজ বোরখা পড়ে ভার্সিটি যাচ্ছিস ? (ইয়ানা)
“আমার হাত পুড়িয়ে দিয়েছ। এখন যদি আমায় কেউ জিজ্ঞেস করে এসব হলো কিভাবে বা কোনো পুলিশ এর সামনে পোড়া হাত নিয়ে পড়লাম তখন কি হবে একবার ভেবে দেখছ। (পরশি সাহস করে বলে ফেললো)
পরশি হাত ঝাড়া দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।
_____
“মেয়েটার আজ কি হলো আমার মুখের ওপর কথা বললো”। (ইয়ানা)
“খুব বেড়ে গেছে। পরশিকে শেষ করে দিতে হবে ইয়ানা। পরশি আমাদের পথের কাটা”। (মিসেস শিখা)
“ঠিক বলেছ দাদী”। (ইয়ানা)
“কি কথা হচ্ছে দুজনের মাঝে?
আহাদ সিকদার খাবার টেবিলে বসতে বসতে কথাটি বললো।
“ক,,,,কিছু না বাবা”। (ইয়ানা থতমত খেয়ে বললো)
“পরশির পিছ ছেড়ে দিয়ে বিয়ের প্রস্তুতি নেও।আজ বিকালে ছেলেপক্ষ তোমায় দেখতে আসবে”। (আহাদ সিকদার)
বিয়ের কথা শুনে ইয়ানা মুচকি হাসল।
“ঠিক আছে বাবা”। (ইয়ানা)
_____
~ “ভার্সিটিতে”
পরশি ভার্সিটিতে ঢুকতেই পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো,,,,
“সুন্দরী দেখি আজ বোরখা পড়ে এসেছে”।
পরশি পিছনে তাকিয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে বললো,,,,
“আপনাদের রেগিং করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। ভার্সিটিতে এসব ছেঁচড়ামি করতে আসেন ভাই”।
পরশির কথায় ছেলেটা রেগে পরশির কাছে এসে বললো,,,,,
“সাহস তো কম নয় তোর। আমার গুরু কে প্রথমদিন থাপ্পড় মারলি এখন আমাকে অপমান করছিস”। (ছেলেটি)
বলে পরশির হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। ভার্সিটির সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে কেউ কিছু বলছে না ভয়ে।
পরশি ও ভয় পেয়ে গেছে ছেলেটার কাজে। পরশি ছাড় পাওয়ার জন্য চটপট করতে লাগলো। পরশি ছেলেটার হাতে কামড় দিতেই ছেলেটা পরশিকে ছেড়ে দিল।পরশি দৌঁড়ে চলে যেতে নিবে সামনে কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেলো। পরশি মুখ তুলে ওপরে তাকাতেই ভীতু কন্ঠে বললো,,,,,
“মিস্টার সিনিয়র”
জোভান রাগী দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে কাঁচা গিলে খাবে। জোভান পরশিকে বললো,,,,
“তুমি ক্লাসে যাও মিস জুনিয়র”।
“হুম”। (পরশি)
পরশি যেতেই জোভান ছেলেটাকে মারতে শুরু করলো। রকি এসে জোভানকে থামাতে চাইলো৷ জোভান রকিকে ও ধোলাই দিতে লাগলো।রকি ছেলেটাকে পাঠিয়েছে পরশিকে বিরক্ত করার জন্য। নয়ন আর নিহান এসে জোভানকে থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু জোভান কিছুতেই থামছে না।ওদের মুখে ঘুসি দিচ্ছে।ঘুসি মারতে মারতে রকির নাক বোচা করে ফেলেছে।এইসব দেখে কিছু মেয়ে হাসাহাসি শুরু করলো। দু’টোর অবস্থা খারাপ মরে যাবে এমন অবস্থা। যে ছেলে পরশির হাত ধরেছিল জোভান সে ছেলের হাত ভেঙ্গে দিল।ছেলেটা জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো।সবাই ভয় পেয়ে গেল জোভানের কাজে।
“জীবনে এই হাত দিয়ে আর কোনো মেয়ের সাথে ফাজলামো করতে পারবি না”। (জোভান)
“জোভান ছাড় মরে যাবে”। (নয়ন)
জোভান রকি আর রকির চেলাকে লাথি মেরে গেটের বাহিরে ফেলে দিল। জোভানের চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে আছে। এদের পুরোপুরি মেরে ফেলতে পারলে জোভানের শান্তি লাগতো।
_____
পরশি ক্লাসে বসে কান্না করছে আর ক্লাসের সবাই পরশিকে দেখছে।সিমি সবাইকে পরশির কাছ থেকে সরিয়ে দিল।
“আর কান্না করো না পরশি। জোভান ভাইয়া অনেক মেরেছে ছেলে দু’টোকে।প্লিজ কান্না থামাও কিউটি পরশি”। (সিমি মন খারাপ করে বললো)
তখনি ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসে জোভান আসলো।জোভানকে দেখে ক্লাসের সবাই দাঁড়িয়ে পড়লো। জোভান এতদিকে খেয়াল না করে সোজা পরশির কাছে আসলো।
জোভান পরশির বাম হাত ধরে ক্লাস থেকে নিয়ে গেল।
“প্লিজ হাত ছাড়ুন আমার লাগছে”। (পরশি কান্নারত কন্ঠে বললো)
হঠাৎ জোভান হাঁটা থামিয়ে পরশির দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকালো।
“আমি তো তোমায় নরমাল ভাবে ধরেছি তাহলে তুমি ব্যথা পাচ্ছ কেন? (জোভান)
“এ,,,,এমনি” (পরশি)
জোভানের কালকের কথা মনে পড়লো।
“কাল আমি পরশিকে কোলে করে তার বাড়িতে দিয়ে এসেছিলাম তার জন্য আবার ওই কুটনী বুড়ি পরশিকে কোনো ব্যথা দেয়নি তো। আর পরশি আজ বোরখা পড়ে কেন আসলো ব্যাপারটা সন্দেহ লাগছে”। (জোভান মনে মনে বললো)
জোভান বাম হাতের দিকে তাকাতেই পরশি হাত লুকানোর চেষ্টা করতে লাগলো।জোভান জোর করে পরশির বাম হাত থেকে বোরখার হাতা সরিয়ে দিল। বোরখার হাত সরাতেই রাগে জোভানের মাথার রগ ফুলে গেল।
“নিশ্চয়ই ওই কুটনী বুড়ি এই জগন্য কাজ করেছে তোমার সাথে”। (জোভান)
জোভানের রাগী মুখের দিকে পরশি টলমল চোখে তাকালো।
“আপনি আপনার মিষ্টি পরীর কথা কিভাবে ভুলে গেলেন জোভান ভাইয়া।আর আঙ্কেল – আন্টি ও আমাকে ভুলে গেল।আমার তো খোঁজ খবর নিতে পারতেন আপনারা। আচ্ছা সেদিন এক্সিডেন্ট এর পর কি হয়েছিল,,,,, (পরশি জোভানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে)
_____
জোভান পরশিকে লাইব্রেরীতে নিয়ে আসলো। পরশিকে বেঞ্চে বসিয়ে দিয়ে খুব যত্ন সহকারে পরশির হাতে Ointment লাগিয়ে দিচ্ছে আর পরশি জোভানের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। জোভান পরশির দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়লো। পরশি চোখ নিচে নামালো না জোভানের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। জোভান পরশির চোখের ভাষা বুঝতে সক্ষম হলো না।
Ointment লাগানো শেষ হইতে জোভান পরশিকে বললো,,,,
“খেয়ে এসেছ নাকি ওই কুটনী বুড়ি তোমায় খেতে দেয়নি?
জোভানের কথায় পরশি হেসে দিলো। পরশিকে হাসতে দেখে জোভান বললো,,,,,
“হাসির মতো কিছু বলছি আমি। আচ্ছা তুমি এই রাক্ষসী মহিলার সাথে এক বাড়িতে কিভাবে থাকো তোমার ভয় লাগে না”।
পরশি আবার ও হেসে দিলো। পরশির হাসি মুখ দেখে জোভানের সব রাগ উধাও হয়ে গেল।
“আসব জোভান”
লাইব্রেরীর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথাটি বললো নয়ন।
“হুম” (জোভান)
জোভান লাইব্রেরীতে আসার সময় নয়নকে বলেছিল পরশির জন্য খাবার নিয়ে আসতে।
“খেয়ে নেও মিস জুনিয়র” । (জোভান)
“আমি বাড়ি থেকে খেয়ে এসেছি আমার ক্ষুধা নেই”। (পরশি)
“তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তুমি খেয়ে আছো নাকি না খেয়ে আছো। কথা না শুনলে শাস্তি পাবে।খাও”। (জোভান)
পরশি কিছু বললো না। আসলেই তার অনেক ক্ষুধা লেগেছে। তাই আর কিছু না ভেবে খাওয়া শুরু করলো পরশি।
“আমি যাচ্ছি তুমি খেয়ে ক্লাসে চলে যাবে”। (জোভান)
পরশি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।জোভান লাইব্রেরীর দরজার কাছে এসে থামলো। পিছনে ফিরে তাকালো তারপর পরশিকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,,
“তোমার গালের টোল পড়া হাসিটা মারাত্মক কিউট” !
পরশি খাওয়া ছেড়ে দিয়ে সামনে তাকালো জোভানের কথায়। মারাত্মক লজ্জা পেল পরশি। পরশিকে লজ্জা পেতে দেখে জোভান মুচকি হেসে হাত দিয়ে নিজের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে লাইব্রেরী থেকে চলে গেল।আর নয়ন লাইব্রেরীতে বসে গল্পের বই পড়ছে। জোভান নয়নকে বলে গেছে পরশিকে দেখে রাখতে। লাইব্রেরীতে পরশিকে একা রাখলে রকির চেলাপুলা এসে পরশিকে আবার বিরক্ত করবে এইজন্য ।
_____
জোভান লাইব্রেরী থেকে নিচে আসতেই দশ-বারোটা বাইক জোভানের চারপাশে ঘুরতে শুরু করলো। জোভান ভালো করেই জানে এটা রকির বাবার কাজ। এই শহরের বড় মাস্তান রকির বাবা।
“আজ তোর সব লোকদের মাস্তানী বের করে দেব আমি” । (জোভান মনে মনে বললো)
বাইক থেকে সবগুলো লোক হকিস্টিক নিয়ে নামলো। সবগুলো লোক জোভানের কাছে আসতে লাগলো জোভানকে মারার জন্য। আশেপাশে সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে কিন্তু ভয়ে কেউ আসছে৷ না। সবগুলো লোক কাছে আসতেই জোভান মারপিট শুরু করলো। হিরোদের মতো সবাইকে সাইজ করতে লাগলো।
তখন পিছন থেকে কেউ একজন জোভানের পিঠে হকিস্টিক দিয়ে জোরে আঘাত করলো। জোভান বেশ ব্যথা পেল। ব্যথা পেয়ে জোভান কয়েক পা পিছনে চলে গেল। আরেকটা লোক জোভানকে আঘাত করতে আসবে তার আগেই কেউ লোকটার হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করলো।
জোভান ব্যথা নিয়ে পাশে তাকাতেই দেখে নয়ন,নিহান আর পরশি হাতে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবগুলো তেড়ে আসতেই তারা তিনজন লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করলো। মারতে মারতে সবগুলোর হাড়গোড় ভেঙ্গে দিচ্ছে আর বলছে,,,,
“শালারা খুব তো ব্যাঙ এর মতো লাফালাফি করছিলি এখন লাফালাফি কোথায় গেল তোদের” । (নিহান)
“নিহান এমন জায়গায় মার যেন জীবনে আর মাস্তানী করতে না আসে”। (নয়ন)
ওদের দুজনের কথোপকথন শুনে পরশি হেসে দিলো। মার খেয়ে লোকগুলো বাইক নিয়ে কোনোরকমে পালিয়ে গেল।
‘
চলবে…..
_____
(