মিস্টার সিনিয়র পর্ব -২৪ ও শেষ

#মিস্টার__সিনিয়র
#অন্তিম_পর্ব
®ফিহা আহমেদ

এরই মধ্যে পাঁচ মাস হলো পরশি কিছুটা সুস্থ হলো।জোভান অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হলো। পড়ার পাশাপাশি বাবার কোম্পানির দেখে।রিফাত চৌধুরী এখন অবসর নিয়েছেন। ছেলেকে কোম্পানির দেখাশোনা করতে বললেন।মিসেস স্বর্ণা পরশিকে এখন নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে। পরশি অসুস্থ থাকা অবস্থায় মিসেস স্বর্ণা কাউকে থাকতে দেয়নি।নিজেই পরশির সেবা করে যাচ্ছে। নিজের ভুলের জন্য পরশির কাছে অনেকবার মাপ ও চেয়েছেন তিনি। পরশি সুস্থ হলে জোভান বলেছে পড়াশোনা কন্টিনিউ করতে। পরশি বললো সে আর পড়াশোনা করবে না।তার ভালো লাগছে না। অনেকদিন গ্যাপ হয়ে যাওয়াতে তার আর ভালো লাগছে না। জোভান আর কিছু বললো না সেদিন।পরশি যেভাবে ভালো থাকতে চাইছে সেভাবেই থাক।

মিসেস লিমা ইয়ানার শশুর বাড়িতে থাকে।ওনি অবশ্য মানা করেছেন মেয়ের শশুর বাড়ি থাকবে না। কিন্তু তাদের সবার জোরাজোরিতে ওনি মানা করতে পারলেন না। একা মানুষ কিভাবে থাকবে তাই ইয়ানা নিজের মাকে রেখে দিল নিজের কাছে।

আদালত থেকে আহাদ সিকদারকে ফাঁসির হুকুম দেওয়া হয়েছে। আহাদ সিকদার বর্তমানে পাগল হয়ে গেছে। এতগুলো মানুষকে খুন করার কারনে আদালত মৃত্যুর আগে আলাদা শাস্তির ও হুকুম দিয়েছে।

_____

“পরশি স্যুপটা খেয়ে নেও ঠান্ডা হয়ে যাবে বলে”৷ (মিসেস স্বর্ণা)

“খেতে ইচ্ছে করছে না মা”৷ (পরশি)

“ঔষুধ খেতে হবে। খেয়ে নেও”। (মিসেস স্বর্ণা)

“এখন ইচ্ছে করছে না”। (পরশি)

“জোভান জানতে পারলে বকাঝকা করবে তখন”। (মিসেস স্বর্ণা চিন্তিত হয়ে বললো)

পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো ,,,,,

“করল্লার জুস খাওয়াবো শাস্তিস্বরূপ”।

পরশি আর মিসেস স্বর্ণা চমকে ওঠলো। মিসেস স্বর্ণা পিছনে তাকালো।

“জোভান বাবা তুই এসেছিস। মেয়েটা কথা শুনছে না।কতক্ষণ ধরে বলছি খেতে খাচ্ছে না।তোর বউটা একটু সামলা তুই আমি তোর দাদার কাছে যাচ্ছি।তোর দাদার ঔষুধ খাওয়ার সময় চলে যাচ্ছে।” (মিসেস স্বর্ণা)

জোভান গম্ভীর কণ্ঠে বললো ,,,,

“যাও মম আমি দেখছি তোমার মেয়েকে”৷

জোভানকে কাছে আসতে দেখে পরশি ঢোক গিললো।

“সমস্যা কি তুমি খাচ্ছ না কেন? (জোভান গম্ভীর হয়ে বললো)

“আ ,,,,, আসলে ,,,, (পরশি)

“আসলে কি খাবার খাচ্ছ না কেন? (জোভান ধমক দিয়ে বললো)

“আসলে খাবার দেখলে বমি আসে”। (পরশি আমতাআমতা করে বললো)

“খাবার দেখলে বমি আসে কেন? (জোভান সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো)

জোভান স্যুপের বাটি হাতে নিয়ে চামচে স্যুপ নিয়ে পরশির মুখের সামনে ধরতেই পরশি দৌঁড়ে ওয়াশরুমে এসে গড়গড় করে বমি করে দিল।এটা দেখে জোভানের সন্দেহ আরো বেড়ে গেল। জোভান পরশির পিছনে পিছনে ওয়াশরুমে আসলো।পরশি বমি করে হাঁপিয়ে গেছে। জোভানকে দেখে পরশি বলে উঠলো ,,,,

“আপনাকে কতবার বললাম আমার খেতে ভালো লাগছে না তা ও মুখের সামনে খাবার দিলেন।আমার এখন আচার খেতে ইচ্ছে করছে আমায় আচার এনে দেন”।

পরশির কথা শুনে জোভানের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। জোভান পরশিকে কোলে তুলে নিয়ে বললো ,,,,,

“এইমাএ তুমি কি বললে ,,,,

“আচার খেতে ইচ্ছে করছে আচার এনে দেন”৷ (পরশি)

জোভান পরশিকে খাটে বসিয়ে দিয়ে বললো ,,,,

“কতদিন ধরে তোমার এমন হচ্ছে?

“এই চার-পাচঁ দিন”। (পরশি)

“তুমি আমায় এখন বলছো এই কথা স্টুপিড”। (জোভান রেগে বললো)

“আরে এটা কি এমন কথা যে বলতে হবে”৷ (পরশি)

“না বলে ভুল করে আবার মুখে মুখে তর্ক করছো।দেখি ওঠো তোমায় রেডি করিয়ে দেই”। (জোভান)

“কেন কোথায় যাব? (পরশি)

“নাচতে যাব”৷ (জোভান রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো)

“আমার না পেটটা ভারী ভারী লাগছে। এখন এই ভারী পেট নিয়ে নাচতে পারব না।পরে পেট হালকা হয়ে গেল নাচব ঠিক আছে”। (পরশি অসহায় ভাবে বললো)

পরশির কথায় জোভান কি বলবে বুঝতে পারছে না।জোভান ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো।জোভান পরশিকে রেডি করিয়ে মিসেস স্বর্ণার কাছে বলে ডাক্তারের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

_____

“একমাস হয়েছে প্রেগন্যান্ট”। (ডাক্তার আয়ান)

ডাক্তার আয়ানের কথা শুনে জোভান আর পরশি যেন আকাশ থেকে পড়লো।

“এক মাস হয়ে গেল আমি বুঝতে পারিনি।আমি এতোটা কেয়ারলেস হলাম কিভাবে।পরশিকে আরো খেয়াল রাখা উচিত ছিল আমার”। (জোভান মন খারাপ করে বললো)

আর পরশির মুখ হা হয়ে রয়েছে। পরশির মনে হচ্ছে পরশি ভুল শুনলো।পরশি বড় বড় চোখ করে ডাক্তার আয়ানকে বললো ,,,,,

“ডাক্তার ডাক্তার একটু আগে আপনি কি বলেছেন?

পরশির কথা শুনে ডাক্তার আয়ান মুচকি হেসে বললো ,,,,,

“আপনি মা হতে চলেছেন।”

কথাটা শুনে পরশি কান্না করে দিল। হঠাৎ পরশিকে কান্না করতে দেখে জোভান থতমত খেয়ে গেল। জোভান পরশিকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো ,,,,,

“কি হলো আমার মিষ্টি পরী কান্না করছো কেন?আমাদের ছোট্ট মিষ্টি পরী আসতে চলেছে তুমি খুশি না হয়ে কান্না করছো।

“আমি তো খুশি হয়েই কান্না করছি মিস্টার সিনিয়র।আর মিষ্টি পরী আসবে না।আপনার মতো ছোট্ট মিস্টার সিনিয়র আমার চাই”। (পরশি জোভানের বুকে মুখ লুকিয়ে বললো)

“আমার তো তোমার মতো ছোট্ট মিস জুনিয়র চাই”। (জোভান)

পরশি জোভানের বুকে কিল দিয়ে বলে ,,,,,

“একদম না।আমার ছোট্ট মিস্টার সিনিয়র ই চাই”। (পরশি)

_____

নয়ন আর নিহানের বিয়ে হলো একমাস হবে।তারা দু’জনেই অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হলো।জোভানের বাবার কোম্পানিতে দু’জন চাকরি করে। ভালোই চলছে দু’জনের বিবাহিত জীবন।

_____

অরিন রিহানকে মেনে নিয়েছে। জোভানের জায়গায় রিহানকে বসাতে পেরেছে। রিহান নিজের সবটা দিয়ে অরিনকে ভালো রাখার চেষ্টা করছে। অরিন রিহানের ভালোবাসায় মুগ্ধ। রিহানের ভালোবাসা জোভানকে ভুলে যেতে সাহায্য করেছে। এখন আর জোভানের জন্য অরিনের কষ্ট হয় না।রিহানের বুকে মাথা রেখে শান্তি পায় অরিন।সবমিলিয়ে তাদের বিবাহিত জীবন ভালোই কাটছে।

_____

“জিহা হলো তোমার আর কতক্ষণ ,,,,, (তিয়াস)

“আর একটু তিয়াস”। (জিহা চেঁচিয়ে বললো)

তিয়াস জিহাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলে ,,,,,

“এত সাজার কি দরকার হুম।সবসময় আমায় পাগল করার ধান্দায় থাকো”।

তিয়াসের স্পর্শে জিহার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো।জিহা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো ,,,,

“ছাড় তিয়াস। অনুষ্ঠানের দেরি হয়ে যাচ্ছে”।

“দেখো তোমার ভাই এক বাচ্চার বাপ হয়ে গেল।আর আমি এখনো ,,,,, (তিয়াস)

তিয়াসকে আর কিছু বলতে না দিয়ে জিহা তিয়াসের হাতে কামড় বসিয়ে দিল। তিয়াস সাথে সাথে জিহাকে ছেড়ে দিল। ছাড় পেতেই জিহা দৌঁড়ে গাড়িতে এসে বসলো।গাড়িতে আগে থেকেই জিহার শশুর-শাশুড়ী বসে আছে।জিহা হাতের যে স্থানে কামড় দিয়েছে তিয়াস হেসে সে স্থানে পরপর দু’টো চুমু খেল।তারপর মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে পিছনে সরিয়ে দিতে দিতে গাড়িতে এসে বসলো।গাড়ি ড্রাইভ করার ফাঁকে ফাঁকে জিহাকে চোখ টিপ দিচ্ছে তিয়াস।জিহা লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে।

_____

জোভান পরশিকে নিজ হাতে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে। ঘরে নতুন অতিথি আসছে শুনে মিসেস স্বর্ণা ছোটখাটো অনুষ্ঠান করছেন।ফ্যামিলির সবাই থাকবে আর বাহিরের দুই-একজন থাকবে।

“এত নড়ছো কেন শাড়ি পড়াতে সমস্যা হচ্ছে”৷ (জোভান শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিতে দিতে বললো)

“শাড়ি কতক্ষণ পড়ে থাকতে হবে? (পরশি অসহায় ভাবে বললো)

“কিছুক্ষণ বউপাখি। তারপর খুলে পেল।মম বলেছে সবাই আসবে তাই তোমায় শাড়ি পড়াতে।আমার ও ইচ্ছে ছিল না শাড়ি পড়ানোর।যদি শাড়ি পেচিঁয়ে পড়ে যাও খুব ভয় লাগছে”। (জোভান)

“ভয় কিসের আমার আঁচল ধরে ধরে হাঁটবেন তাহলে আর পড়ার ভয় থাকবে না”। (পরশি দুষ্ট হেসে বললো)

“তাই বুঝি। পরে কিছু বলো তাহলে দেখ কি করি”। (জোভান)

_____

অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল।সবাই উপস্থিত রয়েছে। পরশি যেদিকে যাচ্ছে জোভান ও পরশির পিছন পিছন যাচ্ছে। এতে পরশি ভীষণ বিরক্ত। সে তো মজা করে বলেছে আঁচল ধরে হাঁটতে। কিন্তু এই ব্যাটা যে সত্যি সত্যি আঁচল ধরে হাঁটবে সে কি আর সেটা জানতো।সবাই তাদের দেখে মিটমিট করে হাসছে। সবাইকে হাসতে দেখে লজ্জায় পরশির অবস্থা খারাপ।পরশি জোভানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। জোভান পরশির দিকে হেসে তাকিয়ে আছে।

“আমি বলেছি তাই হাঁটবেন”৷ (পরশি কোমরে হাত দিয়ে রেগে বললো)

“রিস্ক নিতে চাচ্ছি না বউপাখি।শাড়ি যতক্ষণ পড়ে থাকবে আমি তোমার পিছু ছাড়ছি না”। (জোভান একগাল হেসে বললো)

দুই ঘন্টা পর অনুষ্ঠান শেষ হলো।অনুষ্ঠান শেষ হতেই জোভান সবার সামনে দিয়ে পরশিকে কোলে তুলে নিলো।লজ্জায় পরশি জোভানের বুকে মুখ লুকালো।জোভান পরশিকে ছাঁদে নিয়ে আসলো।

“রাতের আকাশ অনেক সুন্দর তাই না মিস্টার সিনিয়র”। (পরশি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো)

“হুম একদম তোমার মতো বউপাখি।ডান দিকটায় দেখ তিনটে তাঁরা। মাঝের ছোট্ট তাঁরাটা আমার ছোট্ট মিস জুনিয়র”। (জোভান)

“একদম না। মাঝের ছোট্ট তাঁরাটা আমার ছোট্ট মিস্টার সিনিয়র”। (পরশি)

এইভাবে দু’জন কতক্ষণ তর্ক করে চুপ হয়ে গেল। কয়েক মিনিট চুপ থেকে জোভান পরশির মুখ নিজের দিকে ফিরিয়ে কপালে চুমু খেল। পরশি ও জোভানের কপালে চুমু খেল।তারপর দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে গল্প করা শুরু করলো তাদের অনাগত সন্তানকে নিয়ে।

________ সমাপ্ত ________

(গল্পটি আপনাদের কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাবেন।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।যারা আমার পাশে ছিলেন তাদের অবিরাম ভালোবাসা(❤️)।ধন্যবাদ সবাইকে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here