মিস্টার সিনিয়র পর্ব -১২

#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_১২
®ফিহা আহমেদ

জোভান পা টিপে টিপে বাড়িতে প্রবেশ করলো। পুরো বাড়ি অন্ধকার দেখে জোভান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।জোভান ওপরে যেতে নিবে তখনই আলো জ্বলে উঠলো।জোভান একটা ঢোক গিলে পিছনে তাকালো। পিছনে তাকাতেই জোভান শকড হয়ে গেল।

মিসেস শিখা ঝাঁটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জোভানের সামনে।

“আজ তুই শেষ জোভান। আজ আব্বুর বউ তোকে মেরে গাছের সাথে উল্টো করে ঝুলিয়ে দিবে”। (জোভান মনে মনে বললো)

জোভান ঢোক গিলে এদিক ওদিক তাকিয়ে পালানোর পথ খুঁজছে।জোভান এদিক ওদিক তাকাতে দেখে মিসেস স্বর্ণা রেগে বলে,,,,

“এই শিক্ষা দিয়েছি তোকে আমি।বল।চুপ করে আছিস কেন এখন।তুই যে মেয়েদের সাথে দুষ্টামি করে বেড়াস এইসব তোর বাবার কানে গেলে কি হবে তুই জানিস। লন্ডন থেকে আসুক তোর বাবা তারপর তোর হবে উড়া”।

মিসেস স্বর্ণা ঝাঁটা নিয়ে তেড়ে আসলো জোভানের কাছে। জোভান দৌঁড়ানো শুরু করলো। মিসেস স্বর্ণা ঝাঁটা নিয়ে জোভানের পিছনে পিছনে দৌঁড়াচ্ছে।জোভান দৌঁড় দিতে দিতে বললো,,,,,

“আব্বুর বউ আমায় বিয়ে দিয়ে দেও তাহলে আর কোনো মেয়ের সাথে দুষ্টুমি করবো না”।

“তোর লজ্জা করলো না বিয়ের কথা বলতে”। (মিসেস স্বর্ণা রেগে বললো)

“না লজ্জা লাগেনি আব্বুর বউ।এত বড় একটা দামড়া ছেলেকে বউ ছাড়া রেখেছো। তুৃমি কতো নিষ্ঠুর আব্বুর বউ”। (জোভান মিসেস স্বর্ণাকে রাগানোর জন্য বললো)

“আজ তোকে মেরে ই ফেলবো আমি”। (মিসেস স্বর্ণা ঝাঁটা নিয়ে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বললো)

জোভান আর উপায় না পেয়ে গেস্ট রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিল।দরজা বন্ধ করে জোভান জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো।

“আব্বুর বউ দেখছি আজ ভীষণ রেগে আছে। একটুর জন্য ঝাঁটার বাড়ি থেকে বেঁচে গেলি তুই জোভান”।

_____

“পরশি ইদানীং তুই দরজা বন্ধ করে রাখিস কেন? দরজা খুল বলছি”। (লিসা)

“এখন কি হবে দাদী? (পরশি ভয় পেয়ে বললো)

“ভয় পাস না আমি আর দাদী ওয়াশরুমে যাচ্ছি তুই দরজা খুলে দে”। (ইয়ানা)

“ঠিক আছে আপু তাড়াতাড়ি করো”। (পরশি)

দু’জন লুকাতে ই পরশি দরজা খুলে দিল। দরজা খুলতেই লিসা রুমের এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।

“সমস্যা কি তোর দরজা বন্ধ করে কি করিস তুই”। (লিসা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো)

“আসলে ইয়ানা আপুর বিয়ে তো তাই সারপ্রাইজ এর ব্যবস্থা করছি আপুর জন্য”। (পরশি আমতাআমতা করে বললো)

“তো সারপ্রাইজ দিতে দরজা বন্ধ করতে হয় নাকি”। (লিসা)

লিসার ওয়াশরুমের দিকে চোখ পড়লো।লিসার মনে হলো ওয়াশরুমে কেউ আছে। লিসাকে ওয়াশরুমের দিকে তাকাতে দেখে পরশি ভয় পেয়ে গেল।লিসা ওয়াশরুমের কাছে যাবে তার আগেই পিছন থেকে কিছু পড়ার শব্দে লিসা পিছনে তাকালো। কাঁচের গ্লাস ভেঙ্গে পড়ে আছে নিচে।লিসা পরশির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।তারপর কিছু না বলে পরশির রুম থেকে বেরিয়ে গেল।লিসাকে যেতে দেখে পরশি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।ইয়ানা – মিসেস শিখা দ্রুত পরশির রুম থেকে চলে গেল।

পরশির খুব খারাপ লাগছে আর কান্না পাচ্ছে।

“আমার মা-বাবাকে মেরে অপরাধী সামনে ঘুরঘুর করছে অথচ আমি কিছু ই করতে পারছি না”। (পরশি কান্না করতে করতে বললো)

তখন আহাদ সিকদার পরশির রুমে আসলো।আহাদ সিকিদারকে দেখে পরশি চোখের পানি দ্রুত মুছে ফেললো।তারপর মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,,,,

“জেঠু তুমি”

“পরশি মা আগামীকাল ভার্সিটির যেতে হবে না তোর।আগামীকাল ইয়ানার গায়ে হলুদ”। (আহাদ সিকদার পরশির পাশে বসে পরশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো)

“ঠিক আছে জেঠু”। (পরশি)

“তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন কেউ কিছু বলেছে? (আহাদ সিকদার)

“না জেঠু কেউ কিছু বলেনি”। (পরশি)

“তোর কোনো বান্ধবী থাকলে তাকে আসতে বলিস গায়ে হলুদে”। (আহাদ সিকদার)

“ঠিক আছে জেঠু” । (পরশি)

_____

“নয়ন ঠিকমতো বাড়ি গিয়েছিস ?

“হ্যাঁ নিহান ঠিকঠাক মতো চলে এসেছি। আসার সময় কি হয়েছে জানিস,,,,, (নয়ন)

“কিহ্” (নিহান)

“আসার সময় এত এত এত সুন্দর একটা ছেলে আমার পাশে বসেছিল।আমি তো ফিদা হয়ে গেলাম ছেলেটাকে দেখে। একদম চকলেট বয়।ছেলেটা ও আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমায় যাওয়ার সময় তার মোবাইল নম্বর দিয়ে গেল। আর বলে গেল তুমি অনেক কিউটি।আহ্ কি যে ভালো লাগছে তোকে বলে বুঝাতে পারবো না”। (নয়ন)

“তুই অপরিচিত কারোর মোবাইল নম্বর কেন নিলি। একটা ছেলের সম্পর্কে না জেনে তুই মোবাইল নম্বর নিয়ে নিলি। কাজটা ঠিক করলি না তুই”। (নিহান মন খারাপ করে বললো)

“তো কি হয়েছে। ছেলেটাকে দেখে ভালোই মনে হয়েছে”। (নয়ন)

“নয়ন তুই বুঝার চেষ্টা কর৷ এসব ছেলেরা ভালো হয় না”। (নিহান)

“আমি এখন আর পিচ্চি মেয়ে নই যে ভালো – খারাপ বুঝি না।তোর আমায় এত বুঝাতে হবে না”। (নয়ন)

বলে নয়ন ফোন কেটে দিল।আর নিহান দাঁড়ানো থেকে ধপাস করে বিচানায় বসে পড়লো।দু’হাত মাথায় চেপে ধরলো। নয়নের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে নিহানের।না জেনে একটা ছেলের সাথে যোগাযোগ শুরু করে দিল।

রাগে নিহানের মাথা ফেটে যাবে এমন অবস্থা। ইচ্ছে করছে নয়নকে গিয়ে ঠাস ঠাস করে গালে কয়টা দিয়ে আসতে।জেনেশুনে বিপদে পা দেয়।

“মামা কি হলো তোমাল। মাথা ব্যতা করছে”।

সিফার কথা শুনে নিহান মাথা থেকে হাত সরিয়ে সিফাকে নিজের কোলে বসিয়ে দিল।

“কিছু হয়নি সিফু। খাবার খেয়েছ? (নিহান)

“খেয়েতি” (সিফা হেসে বললো)

সিফার কথায় নিহান হালকা হাসলো।সিফা নিহানের গলা জড়িয়ে বললো,,,,

“মামা আইতক্রিম খাব”।

“আগামীকাল এনে দিব সিফু”। (নিহান)

“ঠিত আছে মামা”। (সিফা)

_____

বাহিরে থেকে কোনো শব্দ না পেয়ে জোভান গেস্ট রুমের দরজা ধীরে ধীরে খুললো।কাউকে আশেপাশে না দেখে জোভান এদিক ওদিক তাকিয়ে ধীরে ধীরে নিজের রুমে চলে আসলো সাথে দরজা বন্ধ করে দিল।

জোভান মোবাইল হাতে নিয়ে ফেইসবুকে প্রবেশ করে দেখে তার সব গার্লফ্রেন্ড এসএমএস দিয়ে রেখেছে। জোভান সবগুলোকে ব্রেকআপ লিখে ব্লক করে দিল।আর সব মেয়েদের আনফ্রেন্ড করে দিল ফেইসবুক আইডি থেকে। সবগুলোকে ব্লক মেরে জোভানের মনে ভিতর শান্তি লাগছে।সে কেন এসব করেছে নিজে ও জানে না।শুধু তার মনে হয় কেউ একজন এইসব জানলে কষ্ট পাবে।তাই সে সব মেয়েদের কাছ থেকে সরে এসেছে।কার জন্য এমনটা করেছে জোভান নিজে ও জানে না।

জোভান মোবাইল রেখে বালিশে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।চোখ বন্ধ করতেই পরশির মায়াবী চেহারাখানা ভেসে উঠলো। জোভান মুচকি হেসে বললো,,,,,

“মিস জুনিয়র” !! আমার কেন জানি সবসময় মনে হয় তোমায় আমি অনেক আগে থেকেই জানি।কিন্তু কেন এমনটা মনে হয় আমার আমি জানি না” ।

জোভান পরশির কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো।

“রাত তিনটা বাজে কেউ একজন বেলকনি দিয়ে জোভানের রুমে প্রবেশ করলো। লোকটি জোভানের ঘুমন্ত চেহারার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে জোভানের পাশ থেকে বালিশ হাতে নিয়ে জোভানের মুখে চেপে ধরলো।জোভান ঘুমের মধ্যে ই হাত-পা নড়াচড়া করতে লাগলো।কিছুক্ষনের মধ্যে জোভানের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেল। লোকটি শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,,,,,

“তুই আমার সবথেকে বড় বিপদ তাই তোকে আমার পথ থেকে সরিয়ে দিলাম। ঝামেলা শেষ।”

বলে লোকটি আবার বেলকনি দিয়ে বের হয়ে গেল।

চলবে…..
_____

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here