#মুখোশের_আড়ালে
#পর্ব_১২
#Saji_Afroz
.
.
.
আরো দুদিন পার হলো । ফাহাদের অফিসের ছুটিও শেষের দিকে । কাল থেকে অফিস যেতে হবে ।
পৌষী মনোযোগ সহকারে টিভিতে সিনেমা দেখছিলো । ফাহাদ তার পাশে বসে বললো-
পৌষী তুমি কবিতা কেনো লিখছো না?
.
টিভির সাইন্ড কমিয়ে পৌষী বললো-
সেদিন না লিখলাম! আমার কবিতা? এতোই ভালো লেগেছে যে আরো চায়?
-উহু মজা করোনা পৌষী! তোমার পান্ডুলিপি জমা দিতে হবে ।
.
ভ্রু কুচকে পৌষী বললো-
পান্ডুলিপি কি?
-ঘি । যাও লেখা শুরু করো । পরে আমাকেই দোষারোপ করবে ।
-আপনি এসব কি বলছেন আমি কিছুই বুঝছিনা ।
-না বোঝার কি আছে পৌষী! মিয়াজ শেখকে পান্ডুলিপি জমা দিতে হবে তোমার । আর তুমি কিনা অবহেলা করছো!
-মিয়াজ শেখ কে?
-অনেক হয়েছে মজা । থামো তো ।
.
আচমকা কর্কশ কন্ঠে পৌষী বলে উঠলো-
তখন থেকে কি শুরু করেছেন! কিসের পান্ডুলিপি আর কেইবা মিয়াজ শেখ! আমি কিছু বুঝছিনা । আমি কোনো কবিতা লিখতে পারবোনা । আর কি করেই বা লিখবো! এসব আমি পারি নাকি?
.
হনহনিয়ে পৌষী নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো । ফাহাদ তার কথার কোনো মানেই বুঝতে পারলোনা । এই মেয়ে পান্ডুলিপি কি এটাই নাকি জানেনা । বলছে টা কি!
তার পিছুপিছু ফাহাদও রুমে এলো ।
পৌষী বিছানার উপরে বসে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকলো । ফাহাদ তার পাশে বসতেই সে বললো-
আপনি জানেন আমি এসব পারিনা । আমাকে ছোট করতেই এসব বলছেন তাইনা আপনি? আমাকে ভালো না লাগলে বলে দিন । কাজের মেয়ের মতো থাকবো । তবুও এসবের কি দরকার?
.
পৌষীকে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ফাহাদ বললো-
শান্ত হও । তোমার কিছুই করতে হবেনা। আমি সরি ।
.
পৌষী কেঁদেই চলেছে । তাকে এভাবে কাঁদতে দেখতে ফাহাদের একদমই ভালো লাগছেনা ।
তার মুখটা উঠিয়ে নিজের কান ধরে ফাহাদ বললো-
আমি সরি তো ।
.
এখনো ফোপাঁতে লাগলো পৌষী । আচমকা ফাহাদ তার রসালো ঠোঁট জোড়ায় নিজের ঠোঁট বসিয়ে দিলো । কিছুক্ষণ এভাবে কাটার পর হাসতে হাসতে ফাহাদ বললো-
এটা চায় এমনে বললেই পারতে, কান্নাকাটি করার কি প্রয়োজন?
.
মুখটা বাঁকিয়ে পৌষী বললো-
চাইনা । আমি রেগে আছি ।
-আরো গভীর কিছু দিলে কি রাগটা কমবে?
.
মুচকি হাসলো পৌষী । পৌষীর ঘাড়ের উপরে পড়া চুলগুলো সরিয়ে, আলতো করে ঠোঁটের ছোঁয়া বসিয়ে ফাহাদ বললো-
বুঝলাম কমবে!
.
.
ফাহাদ অফিসে গিয়েছে বেশকিছুক্ষণ হয়েছে । রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলো পৌষী । এমন সময় কলিং বেল এর শব্দ শুনতে পেলো সে ।
ফাহাদ বলেছে, বেল এর শব্দ শুনলে দরজায় লাগানো দূরবীন দিয়ে দেখার জন্য কে এসেছে ।
ফাহাদের কথামতো দেখলো পৌষী ।
ধবধবে সাদা রঙের শাড়ি পরিহিতা একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে । পৌষী এপাশ থেকে বললো-
কে?
.
মেয়েটি জবাব দিলো-
আমি আপনাদের এলাকার মেয়ে ।
.
দরজা খুলতেই মেয়েটিকে ভালোভাবে দেখে চমকালো পৌষী । দুধে আলতা গায়ের রঙ, ঘন কালো চুল, গোলাপি ঠোঁট তার । সবমিলিয়ে মেয়েটিকে সুন্দরী নয় অনেক বেশিই সুন্দরী বলা যায় । কোনো সাজগোছ ছাড়াই মেয়েটিকে অসাধারণ লাগছে দেখতে । পৌষী মেয়ে হয়ে কোনো মেয়েকে দেখে এতোটা মুগ্ধ হলো!
মেয়েটি বললো-
ভেতরে আসতে বলবেন না?
.
মেয়েটির কথা শুনে ঘোর কাটলো পৌষীর ৷ মুখে হাসি এনে বললো-
জ্বী আসুন ।
.
ভেতরে এসে সোফাতে বসলো দুজনে । পৌষী বললো-
আপনার পরিচয়?
-এই এলাকায় আমার বাসা । বলেছি!
-তা বলেছেন । নামটা জানতে চাইছি ।
-ওহ! তিশানী ।
-আপনি যেমন সুন্দরী, নামটাও আপনার মতো সুন্দর ।
.
মেয়েটি বিড়বিড়িয়ে বললো-
এই সৌন্দ্যর্যই আমার কাল হয়েছিলো ।
.
পৌষী বললো-
কিছু বললেন?
-বললাম আপনিও অনেক সুন্দরী ।
-আপনার চেয়ে কম, এটা মানতেই হবে ।
-আমি আপনাকে তুমি করেই বলি? ছোট হবে তুমি আমার ।
-বলতে পারেন ৷ কিন্তু কি করে বুঝলেন ছোট হবো?
.
মৃদু হেসে তিশানী বললো-
অভিজ্ঞতা ।
-আপনি কি কোনো দরকারে এসেছেন?
-হুম ।
-বলুন?
.
শুনলে আমার উপর রাগ করবে নাতো?
.
তিশানীর মুখের ভঙ্গি দেখে পৌষী জবাব দিলো-
আগে শুনি ।
-তোমার হাতের এক কাপ চা খেতে এসেছি ।
.
কথাটি শুনে ফিক করে হেসে ফেললো পৌষী । হাসতে হাসতেই বললো-
এই ব্যাপার! আমি ভেবেছি কি না কি ৷ আপনি বসুন । আমি চা বানিয়ে আনছি ।
.
পৌষী চা বানিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে দেখলো তিশানী নেই । পৌষী ডাকতে থাকলো তাকে । কোনো সাড়া পেলোনা । তবে কি চলে গেলো সে? কিন্তু পৌষী দেখলো দরজা বন্ধ । সে বেরিয়ে গেলে নিশ্চয় দরজা বন্ধ থাকতো না! পৌষী খুঁজতে লাগলো তাকে । খুঁজতে খুঁজতে নিজের রুমে আসতেই থমকে গেলো পৌষী । দেখলো, তিশানীর শরীর ফ্যানের সাথে ঝুলছে । এমন একটি দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলাতে পারলোনা সে । চিৎকার করে বলে উঠলো-
তিশানী!
.
সাথে সাথেই ঘুম ভেঙে গেলো পৌষীর । বিছানার উপরে বসে পড়লো সে । ডিম লাইটের আলোতে ঘুমন্ত ফাহাদের মুখটা দেখতে পেলো । তার মানে এতোক্ষণ সে স্বপ্ন দেখছিলো!
এই শীতের মাঝেও ঘামছে পৌষী । গলাটা শুকিয়ে কাট হয়ে গিয়েছে । পানির জগটা ফাঁকা দেখে ফাহাদকে ডাকতে চায়লো । ফাহাদের মুখের দিকে তাকাতেই তার ঘুম নষ্ট করতে ইচ্ছে হলোনা পৌষীর ।
বিবস্ত্র অবস্থায় কম্বলটা গায়ে তার । বিছানার পাশে পড়ে থাকা শাড়িটা শরীরের সাথে প্যাঁচিয়ে উঠে পড়লো পৌষী । পানি খাওয়া প্রয়োজন ।
ড্রয়িংরুমে এসে পুরো এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে শেষ করে ফেললো সে ।
রুমের দিকে এগুনোর সময় কোনো মেয়ের কান্নার শব্দ কানে এলো তার ।
আরেকটু মনোযোগ দিতেই শব্দ যেনো স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সে । শব্দটি তাদের রুমের পাশের রুমটি থেকেই ভেসে আসছে ।
ধীরেধীরে পৌষী এগিয়ে গেলো সেদিকে । খাটের উপরে সাদা শাড়ি পরিহিতা তিশানীকে কাঁদতে দেখলো সে ।
কান্নায় ভেঙে পড়া তিশানী কে দেখে কেনো যেনো মায়া হলো পৌষীর । কোনো ভয় কাজ করছেনা তার । সে তিশানীর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো । পেছনে কিছু পড়ার শব্দ হতেই ফিরে তাকালো সে । কিন্তু কিছু দেখতে পেলোনা । খাটের উপরে তাকাতেই দেখলো, তিশানী নেই । খাটটি সম্পূর্ণ ফাঁকা । নিচু হয়ে খাটের নিচেও দেখে নিলো । তিশানী সেখানেও নেই । হঠাৎ চোখ পড়লো তার আলমারির আয়নাটির দিকে । যেখানে লিপস্টিক দিয়ে লেখা আছে-
সাহায্য চাই!
.
আলমারির লেখাগুলো ছুঁতে যাচ্ছিলো পৌষী । তখনি রুমের লাইটটা জ্বলে উঠলে ঘুরে তাকালো সে । ফাহাদকে দেখে বললো-
আপনি?
-এই প্রশ্ন আমার করার কথা । তুমি এতো রাতে এখানে কি করছো?
.
ফাহাদকে সবটা খুলে বলতে ইচ্ছে হলেও বললোনা পৌষী । ইচ্ছেটা দমিয়ে রেখে বললো-
ইঁদুর দেখেছি মনেহলো ।
-মারতে এসেছো?
-আমাদের গ্রামের মুরুব্বিরা বলতো, মেয়েরা ইঁদুর মারলে হাতের রান্না মজা হয়না । তাই আমি মারতাম না । এখন পেলে আপনাকে ডাকতাম মারার জন্য ।
-ঘুমোতে আসো তো! বাদ দাও এসব ইঁদুর ফিদুর ।
.
ফাহাদের কথামতো পৌষী বেরিয়ে যাচ্ছে । পেছনে ফিরে দেখলো লেখাটি আছে কিনা । লেখাটি নেই । এই লেখাও গায়েব হলো কি করে!
.
ফাহাদ ঘুমিয়ে পড়লেও পৌষীর চোখে ঘুম নেই । প্রথমে এমন একটি স্বপ্ন দেখলো তারপরেই এই ঘটনা । সবটা যেনো চোখের সামনেই ঘটেছে । কে এই তিশানী? যে কিনা স্বপ্নে, বাস্তবে তাকেই দেখা দিয়েছে! পৌষী কিভাবে সাহায্য করতে পারে তাকে?
.
চলবে