মুখোশের আড়ালে পর্ব ১৭

#মুখোশের_আড়ালে
#পর্ব_১৭
#Saji_Afroz
.
.
.
কাক ডাকা ভোরে ঘুম ভাঙলো ফাহাদের । আড়মোড়া ভেঙে সে উঠে বসলো । পৌষীর ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো সে । কি মায়াবীই না লাগছে ঘুমন্ত পৌষীকে । এভাবে আগে কেনো খেয়াল করেনি সে!
হঠাৎ কাল রাতের ঘটনা মনে পড়ে গেলো ফাহাদের । চটজলদি বসা থেকে উঠে পড়লো সে । আজ অনেক কাজ আছে!
.
.
ঘুম থেকে উঠে ফাহাদকে দেখলোনা পৌষী । সচারাচর তার আগে ফাহাদ ঘুম থেকে উঠেনা । আজ এতো তাড়াতাড়ি উঠার কারণ কি হতে পারে? নিশ্চয় কাল রাতের মতো ওয়াশরুমে গিয়েছে । ভাবতে ভাবতেই কিছু শব্দ পৌষীর কানে ভেসে এলো । ধীরেধীরে শোয়া থেকে উঠলো সে ।
ড্রয়িংরুমে আসতেই পৌষীর চোখ কপালে উঠে গেলো ।
ফাহাদ লাগেজ গোছাচ্ছে । পৌষী বললো-
কি করছেন?
-ওহ তুমি! তোমার ঘুম নষ্ট হবে বলে এখানে এসব করছি ।
-কিন্তু কেনো?
-আমরা আজই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো ।
-এতো তাড়াতাড়ি নতুন বাসা কোথায় পাবো?
-কিছুদিন কোনো হোটেলে থাকবো । হোটেলে থেকেই বাসা খুঁজবো । পেয়ে গেলে অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে যাবো । এখন আপাতত কিছু কাপড়চোপড় নেয়া যাক । ছোটখাটো হানিমুনও হবে যাবে । কি বলো?
.
ফাহাদ হাসতে থাকলো ।
পৌষীকে চুপ চাপ দেখে সে থেমে বললো-
তুমিও কাপড় গুছিয়ে নাও ।
-না ।
-না মানে?
-না মানে না । আমি কোথাও যাচ্ছিনা ।
-কিন্তু কেনো?
-যাবোই বা কেনো?
-এখানে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটছে পৌষী ।
-কেনো ঘটছে?
-আমি কি করে বলবো!
-তাহলে ভয় পাচ্ছেন কেনো?
-ভয় পাবোনা? ভুতুড়ে কান্ডকারখানা ঘটছে আর ভয় পাবোনা!
-আপনি কিছু না করলে ভয় পাবার কথা নয় ।
-মানে?
-মানে এসব ঘটার পেছনে আপনার হাত আছে ।
-হাবিজাবি কথা বলোনা পৌষী । আমরা আজ এই বাসা ছেড়ে যাবোই ।
-আমরা না, আপনি । আপনি যেতে পারেন ।
.
ফাহাদ দাঁড়িয়ে বললো-
তোমার হয়েছে টা কি! এমন আজব ব্যবহার কেনো করছো তুমি?
-আপনি জানেন না?
-আমি জানলে নিশ্চয় জিজ্ঞাসা করতাম না ।
-এতো কিছু বলতে পারবোনা । আমি এই বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছিনা । এটাই ফাইনাল ।
-তুমি কি চায়ছো তোমার মা বাবাকে এসব বলতে বাধ্য হই আমি?
-ঝামেলা করতে চায়লে করতে পারুন । এসবের মাধ্যমে অন্তত আপনার মতো মানুষের কাছ থেকে তো মুক্তি পাবো!
-পৌষী!
.
কোনো কথা না বলে রুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলো পৌষী ।
এদিকে ফাহাদ পড়ে গেলো মহা ভাবনায় । আর কতো রুপ দেখবে সে পৌষীর!
.
.
বেশ কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে বের হয়ে এলো পৌষী । আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সে, ফাহাদ নেই । ডাইনিং টেবিলের উপরে একটা চিরকুট পেলো পৌষী ।
পড়তে থাকলো সে-
তুমি যখন যাবেই না আমি অফিসে গেলাম । মাথা ঠান্ডা হলে ফোন দিও । আর সাবধানে থেকো । কোনো ছেলে ভুত বাসায় ঘুরছে, এমনটা আমার সন্দেহ ।
.
শেষের লাইনটা পড়ে হেসে ফেললো পৌষী । ছেলে ভুত! ফাহাদ কি বোঝাতে চায়ছে? সে ছেলে ভুতকে হিংসে করে এই বাড়ি থেকে চলে যেতে চায়ছে?
.
.
মুহিতের বাসায় আছেন আমেনা বেগম । তাই এই বাড়িটায় একা আছেন মিয়াজ শেখ ।
চা বানানোর জন্য রান্নাঘরে এলেন তিনি । দিনে কয়েকবার চা না খেলে চলেনা তার ।
এমন সময় পৌষীর কণ্ঠ শুনতে পেলেন তিনি-
আমি বানিয়ে দিই?
.
সামনে তাকিয়ে পৌষীকে দেখে মিয়াজ শেখ বললেন-
ওহ পৌষী! তোমার কি অবস্থা?
-ভালো । আপনি আমায় ভুলে গিয়েছেন আঙ্কেল ।
-মোটেও না । তুমি অসুস্থ ছিলে তাই বিরক্ত করছিলাম না ।
-আন্টি কোথায়? আপনি রান্নাঘরে?
-সে মুহিতের বাসায় ।
-ওহ! আচ্ছা আমি বানিয়ে দিই?
-কাজের ছেলে আছে । তাকে ডাকতে ইচ্ছে করেনি । আমি বানাতে পারবো । সমস্যা নেই ।
-আমি কিন্তু ভালো চা বানাতে পারি ।
-তাই! তা বলো দেখি, চা বানাতে কি কি প্রয়োজন হয়?
-চা পাতা, দুধ ও চিনি ।
-শেষ?
-মজা হবার জন্য আরো কিছু মেশানো যায় ।
.
পৌষীর কথা শুনে হাসলেন মিয়াজ শেখ । পৌষী বললো-
কি হলো?
-যেটা ভীষণ জরুরি সেটায় তুমি বলোনি । এটা ছাড়া চা বানানো অসম্ভব । দুধ ছাড়াও বানাতে পারবে, চিনি ছাড়াও পারবে ।
-ওহ! পানি ।
-হ্যাঁ এখন হয়েছে ।
-তবে এখন বানাতে পারি?
-অবশ্যই । চিনি কম দিও আমারটায় ।
-আচ্ছা ।
.
দুকাপ চা বানিয়ে ড্রয়িংরুমে এলো পৌষী ।
মিয়াজ শেখ চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন-
বাহ! অসাধারণ ।
-ধন্যবাদ ।
মিয়াজ শেখ খেয়াল করলেন মুহুর্তের মধ্যেই পৌষীর মুখটা মলিন হয়ে গেলো । মনেহচ্ছে রাজ্যের সব অন্ধকার এসে ভর করলো তার মুখের উপর ।
তিনি বললেন-
সব ঠিক আছে পৌষী?
-হু ।
-সিউর? আমাকে বলতে পারো । সাহায্য করতে পারি কোনো ।
-আসলে ফাহাদকে অনেক ভালো মনে করেছিলাম । সে আমার জন্য সঠিক মানুষ নয় । ছোট থেকে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছি আমি । সংগ্রাম করেছি সৎমায়ের সংসারে । ভেবেছি বিয়ের পরে স্বামীর সংসারে সুখ মিলবে । যেখানে স্বামীই ঠিক নেই সুখের দেখা পাই কি করে? আমাকে এতোটা সস্তা মনে করলো ফাহাদ!
.
কথাটি বলেই ছলছল করে উঠলো পৌষীর দুচোখ । মিয়াজ শেখ বললেন-
কি করেছে ফাহাদ?
-আমি বলতে পারবোনা আঙ্কেল । আমার নিজেকে ভীষণ অসহায় মনেহচ্ছে । আমার ভাগ্যটা এতো খারাপ কেনো!
-দেখো পৌষী আমি যদিও জানিনা কিছু, তবুও বলছি তুমি ভেঙে পড়োনা । আমি আছি তোমার পাশে । একবার তোমার বইটা বের হোক । দেখবা তোমার কদর । তুমি সস্তা নও পৌষী!
-আমি সত্যি ভাগ্যবতী আপনার মতো একজন মানুষকে পাশে পেয়েছি ।
.
.
তিশানী যে বাসায় থাকতো তা এখন ফাঁকা থাকে, এমনটায় জানে উষ্ণ । আজ সেই বাসাটা দেখতে বড্ড ইচ্ছে করছিলো । ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখা কষ্টকর । উষ্ণও নিজের ইচ্ছে দমিয়ে রাখতে পারলোনা । ছুটে আসলো সে । বাড়িটা দূর থেকে দেখে হলেও যেনো শান্তি পাবে মনে । কিন্তু বাড়ির সামনে এসে সে চমকে গেলো । লাইট জ্বলছে উঠোনে ও বারান্দায় । জানালার ফাঁক দিয়েও আলো দেখা যাচ্ছে । তার মানে বাসাটায় কেউ থাকে! কে থাকে?
.
রাতের খাবার খেয়ে টিভির সামনে বসে আছে ফাহাদ । পৌষী ডাইনিং টেবিলটা পরিষ্কার করছিলো । তখনি কলিংবেলের শব্দ শুনে ফাহাদ এগিয়ে যায় দরজা খুলতে । দরজা খুলে উষ্ণকে দেখে অবাক হয়ে বললো সে –
এতো রাতে আপনি?
.
ভেতর থেকে উষ্ণকে দেখে নিজের রুমে ছুটে এলো পৌষী । নিজের চুলগুলো ঠিক করে চোখে হালকা কাজল লাগাতে থাকলো ।
এদিকে উষ্ণ বললো-
আপনি?
-এটা আমার বাসা ।
-ওহ!
-আপনি এই জায়গায় পৌষীকে আশা করেছিলেন নিশ্চয়?
.
উষ্ণের জানা ছিলোনা পৌষী ও ফাহাদ এই বাড়িতে থাকে । বাড়িটা তিশানীর মামার বাড়ি । তারা তিশানীর মৃত্যুর পরে বিদেশে গমন করে । সেই থেকে বাড়িটা ফাঁকা জানে উষ্ণ ।
পৌষী এসে বললো-
ভেতরে আসো প্লিজ?
.
উষ্ণ ভেতরে এসে বসতেই পৌষী বললো-
তুমি হঠাৎ?
-এদিকে এসেছিলাম । ভাবলাম দেখা করে যাই ।
.
ফাহাদ খেয়াল করলো পৌষী সেজে এসেছে । পরপুরুষের জন্য পৌষীর এতো আগ্রহ, এই যেনো হজম করতে কষ্টকর হচ্ছে তার জন্য ।
ফাহাদ বললো-
তোমরা গল্প করো । আমি চা বানিয়ে আনছি ।
.
উষ্ণ বললো-
এ কি আপনি কেনো বানাবেন!
-আপনাদের গল্প করতে সুযোগ দেয়া আরকি । সমস্যা নেই ।
.
পৌষী বাধা দিলোনা ফাহাদকে । সে যেতেই উষ্ণের উদ্দেশ্যে পৌষী বললো-
আমি এখানে থাকি তুমি কিভাবে জানো? আমি কখনো বলিনি ।
.
পৌষীর প্রশ্ন শুনে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো উষ্ণ । আমতাআমতা করে বললো সে-
জেনেছি আর কি ।
-কিভাবে?
-মিয়াজ আঙ্কেলের কাছে ।
.
পৌষী হেসে বললো-
তিনিও জানেন না আমার বাসার ঠিকানা । কি লুকোচ্ছো তুমি?
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here