#মেঘের_আড়ালে_বৃষ্টি
#ষোলো
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা
রোদ বাসায় এসেছে অনেকক্ষণ তার মনে পড়ছে শুধু প্রয়াসের কথা। কেমন একটা অস্থির লাগছে তার। প্রয়াসের মত এমন একজন ছেলে তাকে ভালবাসতে পারে ভেবেই কেমন যেন লাগছে।
উচ্চতায় ছয় ফিট, জিম করা ফিট বলিষ্ঠ দেহ। হলুদ আর দুধের মিশ্রণে গায়ের রঙ। সাদা মুখে কুচকুচে কালো খোঁচা খোঁচা দাড়ি যেন মুখের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পড়াশোনায় ও তার চেয়ে উপরে।এমন একজন তাকে ভালবাসে ভাবতেই কেমন লাগছে।
এই ছেলেটাকে নিয়ে এত কেন ভাবছি আমি!
আমি প্রতিজ্ঞা করেছি জীবনে প্রেম করব না। এখন যদি আমি প্রেমে পড়ে যাই। সবসময় বান্ধবীদের যেভাবে জ্বালিয়েছি প্রেম করে বলে। এখন তারা আমাকে মানুষের কাবাব বানিয়ে খাবে।
“কিরে আপু, ওই কী তোর প্রয়াস?”
“কী বলছিস মেঘা?”
“যা শুনছিস ঠিক তাই বলছি।”
“শুনেছি, কিন্তু তুই কার কথা বলতেছিস আমি বুঝতেছি না।”
“ও রে, রে, এই তুই এত ভান ধরতেছিস কেন? আমি দেখছি তুই যে ওই প্রয়াস নামের ছেলেটার সাথে ইটিশপিটিশ করছিলি।”
“ছি! মেঘা এসব কেমন কথা? কিসের ইটিশপিটিশ? উনি প্রয়াস না উনি আমার কলেজের বড় ভাই। দেখা হয়ে গেল তাই কথা বলেছি। বড্ড বাজে বকিস বেশি তুই মেঘা।”
“আহারে বড় ভাই। ছিঃ আপু তুই তোর ভবিষ্যত স্বামীকে বড় ভাই বলছিস?”
“তুই যাবি এখান থেকে?” বলেই রোদ মারতে হাত উঠালে মেঘা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। যাওয়ার পর আবার দরজায় উঁকি দিয়ে বলে, “বাই দ্যা রাস্তা আমার দুলাভাই কিন্তু খুবই স্মার্ট আর সুদর্শন ও বটে।”
কথা শেষ করেই আবার দেয় দৌঁড়।
রোদের মনে এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে মেঘলার শেষের কথাটা শুনে। নিজের মানুষদের প্রশংসা শুনতে সবারই ভালো লাগে। আর সদ্য প্রেমে পড়া মেয়েরা ভালো লাগার মানুষটার প্রশংসা শুনলেতো আরও বেশি প্রেমে পড়ে।
রাতে খেয়ে শুয়ে আছে রোদ তার দৃষ্টি ফোনের স্কিনের দিকে। কেন যেন মন চাচ্ছে প্রয়াসের সাথে কথা বলতে। অথচ প্রয়াসের কোন কল নাই। কোন খবর নাই, এই নাকি তার ছটপটানি আমার জন্য ! কই রাত ১১ টা বাজে এখনো একটা কল দিলো না। আমি মেয়ে হয়ে কিভাবে আগে কল দেই। অভিমানে গাল ফুলিয়ে বসে রইল।
ওইদিকে প্রয়াস ফোন হাতে নিয়ে কতবার যে রোদের নাম্বারে কল দিয়ে আবার কেটে দিচ্ছে কে জানে? বসে বসে ভাবে এভাবে হয় নাকি ধুর। আমি প্রয়াস যাকে কিনা কত মেয়েরা কল দেয় কথা বলার জন্য।আজ সেই আমি একটা মেয়েকে কল দিতে এত ভয় কেন পাচ্ছি! এমন করতে করতে ১২টায় কল দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে প্রয়াস। রোদ যেন এই কলটার জন্য অপেক্ষায় আছে। একবার রিং হতেই ধরে ফেলে সে।
“কেমন আছো, পিচ্ছি?”
“এই আপনি আবার শুরু করলেন? পিচ্চি কী?আমাকে আপনার কোন এঙ্গেল থেকে পিচ্চি মনে হয়?”
“সেটা না হয় পরে বুঝিয়ে দেবো, যদি তুমি সুযোগ দাও। ”
কথাটার মাঝে কেমন অদ্ভুত একটা দুষ্টুমির গন্ধ পাচ্ছে রোদ। তাই আর কোন কথা না বাড়িয়ে। চুপ হয়ে যায়।
“ডিনার করেছো?”
“জি, আপনি? ”
“হুম। আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পাইনি রোদেলা?আমি জানি না তুমি ওইদিন আমাকে কী ভেবেছো।আসলে আমি আমার কৃত কাজের জন্য লজ্জিত। তুমি প্লিজ আমাকে ভুল বোঝো না। আমি আসলে এমন ছেলেই না।”
”
জি আমার জানা হয়ে গেছে, আপনি কেমন ছেলে।” বলেই মুখ টিপে হাসছে রোদ।
প্রয়াস একটু নিভলো।
“আপনি যদি চান কাল আমাদের দেখা হতে পারে।”
“কালতো কলেজ বন্ধ। কিভাবে সম্ভব?”
“চাইলেই সম্ভব। ”
“বাইরে দেখা করবে?”
“ইয়েস, আপনি আসলেই বুদ্ধিমান। বুঝে গেলেন।”
প্রয়াস আনন্দ চেপে রেখে বলল, ” কখন আর কোথায়?”
“কাল বিকেল ৪টায়, পতেঙ্গায় মানে সি বিচে চলে আসবেন যদি আপনি চান।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। তবে সকালে হলে ভালো হতো। ”
“জি না। আমি বের হতে পারব না। আর এই দুইদিন যেহেতু অপেক্ষা করেছেন। কাল বিকেল পর্যন্ত ও পারবেন।”
প্রয়াস লজ্জা পেয়ে গেলো, নিজের বোকামীর জন্য। প্রেমে পড়লে ছেলেরা গাধা হয়ে যায়।
“অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়েন।”
আর একটু কথা বলতে মন চাইলে ও, মুখে সেটা বলতে পারল না প্রয়াস। আগের বারের বোকামির জন্য এমনিতেই লজ্জা পেয়েছে সে।
“আচ্ছা, রাখছি।” বলে কল কেটে দেয় রোদ।
প্রয়াসের আর রাতে ঘুম হয়নি। কালকে দেখা হবে। ভাবতেই মনটা আনন্দে ভরে উঠে। জীবন কী অদ্ভুত খুব ধৈর্য্যশীল, যুক্তিবাদি মানুষ ও কেমন অযোক্তিক কাজ করে। যেমন করছে প্রয়াস। চাইলে ও সে এখন যুক্তি দিয়ে ভাবতে পারছে না। জীবনে সব ক্ষেত্রে যুক্তি চলে না। সব ক্ষেত্রে ধৈর্য্য ধরে রাখা ও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেটা যদি হয় ভালবাসার মানুষের জন্য অপেক্ষা, তাহলেতো কোনো কথাই নেই। সেখানে এক মুহূর্ত এক হাজার বছর মনে হয়। যেখানে কবি, সাহিত্যিক,দার্শনিক, বিজ্ঞানী, সবাই হেরে গেছে। প্রেম আর ভালবাসাই একমাত্র মানুষকে পাল্টে দিতে পারে।
আরও একটি নির্ঘুম রাত যোগ হলো প্রয়াসের হিসাবের খাতায়। তাও আবার রোদেলা নামের মেয়েটার জন্য।
রোদের ঘুম ভেঙে দেখে সকাল ১০টা। এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে সে ভাবতেই পারছে না। কলেজ বন্ধ বলে হয়ত আম্মু ডাকেনি। ফোন হাতে নিতেই একটা টেক্সট আসে প্রয়াসের।
আমার খুব ইচ্ছে করছিল আমি যেন গতকাল রাতে তোমার সাথে কথা বলার পর ঘুমিয়ে পড়ি। আর ঠিক চারটায় আমার ঘুম ভাঙে। তাও কোন বাসে গাড়িতে না, আমি যেন সোজা সি বিচ এ থাকতে পারি। কিন্তু এসব কিছুই সম্ভব নয় আমি জানি। কিন্তু আমার মত যুক্তিবাদি মানুষ এমন একটা ভাবনা ভাবতে পারে দেখে আমার অবাকই লাগছে। আচ্ছা রোদেলা এটাকেই কী……বলে?
রোদ টেক্সট পড়ে বুঝতে পারে এই অস্পষ্ট কথায় কী বোঝানো হয়েছে। কতটা ব্যাকুলতা আছে এই কথায়।আর এই শূন্যস্থানে কী লেখা হয়নি।
রোদ অস্ফুটে বলল, “হ্যাঁ, মিঃ প্রয়াস এটাকেই হয়তো।ভালোবাসা বলে।”
চলবে