মেঘের আড়ালে পর্ব ৪

#মেঘের আড়ালে চাঁদ ❤
#writer:মহসিনা মুক্তি
#পর্বঃ চার

–বাবা টাকা দাও আমি কলেজে যাবো। তুলতুল বললো

–বাবা আপু একা কেনো পাবে আমাকেও দিবে। আমি মজা কিনবো দাও।

তুলতুল আর তাওহী ওর বাবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তুলতুল ফুচকা খাবে তাই কলেজে যাবার সময় বাবার কাছ থেকে টাকা নিতে এসেছে সাথে তাওহী ও ছিল। তুলতুল কে দেখে এখন তাওহীর ও লাগবে। তুলতুলের বাবা পকেট থেকে টাকা বের করে দুইজনকে দিলেন।

–টাকা দিয়ে কোনো আজেবাজে জিনিস কিনবে না। আমি যদি দেখি আজেবাজে জিনিস কিনেছ তাহলে কিন্তু আর টাকা পাবে না। মনে থাকবে?

দুই ভাই-বোনই দ্রুত মাথা নাড়লো যে মনে থাকবে। তুলতুল তাাওহীকে নিয়ে কলেজের দিকে রওনা দিল। তাওহীকে স্কুলে দিয়ে সে ক্লাসে যাবে। স্কুলের সামনে এসে তুলতুল তাওহীকে বললো-

–তাওহী একদম দুষ্টুমি করবে না। স্কুল ছুটি হলে সোজা বাসায় যাবে। ঠিকাছে? তাওহী মাথা নাড়লো। কিন্তু তার কিছুই সে মানবে না। দুষ্টুমি না করলে করবে কি সে? তুলতুল তাকে স্কুলের সামনে ছেড়ে যাবার পর সে ব্যাগ কাধে ভালো করে নিয়ে লাফাতে লাফাতে চললো ক্লাসের দিকে। সাথে কবিতা বলছে-

“আতা গাছের নিচে আমি দাঁড়িয়ে
ডালিম গাছের নিচে তুমি।
আমি এতো ডাকি
তবু কথা কও না কেনো তুমিইইই”

আর তখনই কারো সাথে ধাক্কা খেলো। তাকিয়ে দেখে একটা বাচ্চা মেয়ে নিচে বসে আছে। চোখ ছলছল করছে। মাথার উপরে চুল দুটো ঝুটি কারা। দেখতে গলুমলু। তাওহী চোখ বড় করে বললো

–এই পিচ্চি আমাকে ধাক্কা দিয়ে এখন নিজেই পড়ে গেছ? ভালো হয়েছে। এ কথা শুনে এতক্ষণের আটকে রাখা কান্না যেনো বেড়িয়ে আসলো ছোট মেয়েটির। সে বড় হা করে কান্না করতে লাগলো। তাওহী নিজেই ছয় বছরের পিচ্চি। কিন্তু সে এখানে আরেকজনকে পিচ্চি বলছে। সে কান্নারত মেয়েটির সামনে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো-

–থাক থাক বাবু কান্না করে না। ব্যাথা পেয়েছ? তোমার কাছে চকলেট থাকলে আমাকে দাও তাহলে ব্যাথা সেড়ে যাবে। এতে মেয়েটির কান্না আরো বেড়ে গেলো।

তাওহী চোখ ছোট ছোট করে মেয়েটির হা দেখছে। মেয়েটি যখন কান্নার জন্য হা করে তার মুখের ভেতর কি যেনো দেখা যায়, লম্বা আবার নড়াচড়া করে। ওটাকে আলজিব বলে। তাওহী কখনো সেটা খেয়াল করে নি। তাই কেমন করে তাকিয়ে আছে। আচ্ছা তারও কি এমন কোনো কিছু আছে। সে হাত দিয়ে একবার দেখবে। তাই মেয়েটির মুখ হা কারলে হাত দিয়ে ধরতে যায় আর মেয়েটি তাওহীর হাত জোরে কামড়ে ধরে। তাওহী ব্যাথা পেয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে পারে না তাই চিৎকার দেয়

–আম্মুউউউউউ
.
.
.
.
তুলতুলের কলেজ ছুটির পর দিয়ার সাথে ফুচকা খেয়ে বাড়ি ফিরছিলো। এমন সময় দিয়া বলে- তুলু তুই যা আমি একটু পরে যাবো। দিয়া চলে গেলে সে বাড়ির দিকের রাস্তায় হাটতে থাকে। মাঝখানে অনেক গুলো দিন পেরিয়ে গিয়েছে সে আর রাফসানের মুখোমুখি হয়নি। সব সময় ভয়ের ভিতর থেকেছে এই বুঝি ঐ গ্যাংস্টারের সামনে পড়তে হয়। তুলতুল রাস্তা দিয়ে হাটছে আর গান গাইছে। মাঝে মাঝে রাস্তায় পড়ে থাকা পাথর পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে অনেক দূর নিয়ে যাচ্ছে। তুলতুলের পাশদিয়ে যে অনেক গুলো গাড়ি যাচ্ছে সে খেয়াল তার নেই। সে রাস্তায় পড়ে থাকা একটা মাঝারি সাইজের ইটের টুকরো উঠায়। এটাকে সে আরো দূরে ছুড়ে মারবে। ইঁটটি ছুড়ে মাড়তে গিয়ে হাত পিছলে অন্য দিকে গিয়ে পড়ে আর ঝনঝন শব্দ হয়। তুলতুল তাকিয়ে দেখে তার ছোঁড়া ইটের টুকরটি একটি কালো গাড়ির পেছনের কাচ ভেঙেছে। আর তুলতুল হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িটি থেমে গিয়ে আবার পিছিয়ে তুলতুলের পাশে আসে। তুলতুল কিছু বোঝার আগেই তাকে কেউ টান দিয়ে গাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে নেয়।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here