#মেঘ_পরশে_বর্ষণ
মোর্শেদা হোসেন রুবি
—————————–
৯||
পরদিন থেকেই স্কুলে নিয়মিত হল মেঘা। এখন আবার আগের মত সকাল হলেই নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে পড়ে। যদিও রুটিনে খুব একটা রদবদল হয়নি। আগে যেমন সাড়ে আটটার দিকে বেরোত। এখন সেই সময়টা বদলে ভোর ছয়টার মধ্যে সব গুছিয়ে সাড়ে ছয়টায় মধ্যে বেরোতে হয়। কারণ পৌণে সাতটায় রিপোর্টিং আর ঠিক সাতটায় এসেম্বলি।
মেঘা ইচ্ছে করেই মর্ণিং শিফট বেছে নিয়েছে। কারণ আরশের সারা সকাল ঘুমিয়েই কাটে। ওর যখন ঘুম ভাঙার সময় হয় মেঘার তখন ছুটির সময় হয়ে যায়। তাছাড়া দিনের বাকি সময়টাও পাওয়া যায়। এ সময় অনায়াসে কয়েকটা ছাত্রী পড়ানোর সুবিধাটা নিতে পারবে।
স্কুলের পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক বদলেছে। আগে একতলা ভবন ছিল সেটা বেড়ে এখন তিনতলা হয়েছে। তখন ক্লাস ছিল পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। এ বছরই অষ্টম শ্রেণীর পার্মিশান পেয়েছে স্কুল। আবার আগে কম্বাইন্ড ছিল, এখন ছেলেমেয়ে আলাদা করা হয়েছে। অনেকটাই চেঞ্জ। সবচে বড় কথা, এখন ছোট্ট বাচ্চার মায়েদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। আলাদা চাইল্ড কেয়ার হোম বানানো হয়েছে স্কুল গ্রাউন্ডেই। দুজন বুয়া সার্বক্ষণিক বাচ্চাদের টেক কেয়ার করছে। যদিও সেসব মায়েদের যৎসামান্য কিছু পেমেন্ট করতে হয় এখানে তবু এটাকে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কমই মনে হয়েছে মেঘার। কারণ সারাটা দিন বাচ্চাটা চোখের সামনে থাকছে। এরচেয়ে বড় স্বস্তি আর কী হতে পারে। মেঘার নিজেরও তো এই একটা ব্যপারেই চিন্তা ছিল। এখন সেটাও দুর হল। কারণ বাবার বাড়ীতে চলে আসার পর আরশকে রেখে আসার মত লোক পাবেনা মেঘা। এখন যেমন শ্বাশুড়ীর কাছে রেখে আসতে পারছে । সামনের দিনগুলোতে তো আর তাকে পাওয়া যাবেনা। ফলে এই ব্যবস্থাটা হওয়াতে দারুণ সুবিধাই হল মেঘার। ঐ বাড়ীতে ওঠার পর থেকে আরশকে সাথে নিয়েই স্কুল করতে পারবে সে। কথাটা মনে আসতেই এক অপার স্বস্তিতে ছেয়ে গেল অন্তরটা। আহ্, সব কিছু গোছানো হয়ে গেলে এবার থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাবেনা সে। ভুলে যাবে ক্ষণিকের সমস্ত ভাবলুতাকে। যে মেঘ থেকে একদিন আরশের পরশে বর্ষণ ঝরেছিল। সেই মেঘ আজ মিলিয়ে গেছে বাস্তবতার লিলুয়া বাতাসে। মেঘার মনের আকাশে আর কোনোদিন বর্ষণের মত মেঘ জমবেনা। মেঘা জমতে দেবেনা।
====
প্রথম দিনের ক্লাস শেষে বাড়ী ফিরতেই কোহিনুর বেগমের মুখোমুখি হল মেঘা।
তিনি কিছুটা কড়া সুরেই বললেন, ” কী ব্যপার বৌমা ? তুমি নাকী তোমার বাপের বাড়ী চইলা যাইবা ? ”
ঘরে ঢুকেই শ্বাশুড়ীর অমন মারমুখী আক্রমনের জন্য তৈরী ছিলো না মেঘা। তাৎক্ষণিকভাবে কোন জবাব দিতে পারলো না সে। প্রথমটায় একটু থমকে গেলেও পরক্ষণে মাথা নাড়ল ধীরে।
-” জি, আম্মা। ভাইয়ার সাথে সেরকমই কথা হয়েছে। আপনাকে বলা হয়নি। ”
-” বলবা কেন। ভাইরে পাইসো না অখন?”
-” ব্যপারটা এমন না আম্মা।” মেঘা বিপন্ন বোধ করল।
-” এমুনই। আমি জিগাই ভাইয়া কে ? আইজকা যে বড় ভাইয়া ভাইয়া করতাসো ? এতোদিন এই ভাইয়া কই আছিলো যহন তুমি বাচ্চাটা নিয়া একলা পেরেশান অইতাছিলা ? আজকা পায়ের নিজে মাটি শক্ত হইছে আর অমনেই উড়াল দিবার চাইতাসো ? আমার বুকের থিকা তুমি আমার নাতিরে সরায়া লইয়া যাইবা ? পরশ মরণের পর থিকা তোমারে আর আরশরে বুক দিয়া আগলায়া রাখছিলাম এই দিন দেখনের লিগা ? আসলেই তুমি বড় স্বার্থপর বৌমা।” কোহিনুর বেগম কান্না করে দিলেন। মেঘা বাস্তবিকই দিশেহারা বোধ করল এবার। দ্রুত কোহিনুর বেগমের হাত আঁকড়ে ধরল সে।
-” আমাকে ভুল বুঝবেন না আম্মা। বড় নিরুপায় হয়ে এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি আমি। আপনি নিজেই তো সব দেখছেন। সুরমা ভাবি আমাকে এখানে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছেনা। পরেও দেবেনা। তার উপর বর্ষণের ঝামেলাটা না হলে তবু একটা কথা ছিল। এখন তো সব যেমন তেমন। বর্ষণের সমস্যাটাই এখন আসল সমস্যা।”
-” মানলাম বর্ষণ সমস্যা। তো ঐখানে গিয়া যে একলা থাকবা তহন যেইসব নতুন বর্ষণরা ভিড় করবো তাগোরে থামাইবা কী দিয়া? ”
মেঘা বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। কোন জবাব দিলো না। কোহিনুর বলে চললেন, ” -” এইটা তোমার স্বামীর ভিটা। সুরমা চোটপাট যা’ই করুক এইহানে তুমি মায়ের পেটের ভিতরে আছ। ঐ বাড়িতে তোমার কোন গার্জেন নাই। যার মনচায় আইব। যার মনচায় যাইব। কয়দিন কয়জনরে ঠেকাইবা ? এইখানে অনেকেই ভয়ে আইতে পারেনা কারণ এইটা তোমার শ্বশুরবাড়ী। আর ঐখানে তো তুমি ছাড়া গরু। আর ছাড়া গরুর আইল টপকাইতে সময় লাগেনা। তাছাড়া ঐখানে কেমনে কী করবা তুমি ? আরশ কার কাছে থাকব ? নাকি ঐ ব্যবস্থাও কইরা ফালাইছো ? ”
চোখের কোণে এসে পড়া জলটুকু মুছে পরবর্তী পরিকল্পনাটা খুলে বলল মেঘা। জানালো স্কুলেই ব্যবস্থা আছে আরশকে দেখাশোনা করার। কোহিনুর বেগম নিরবে সব শুনলেন। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাতিকে ছুঁয়ে বললেন, “ওহ্। তা অইলে তো নিজের সব ব্যবস্থা পাকা কইরা নিছো। তাইলে তো আর অহন আমারে লাগবো না।” বলে আঁচলে চোখ মুছলেন কোহিনুর। তার চোখ থেকে সমানে পানি পড়তে দেখে খারাপই লাগল মেঘার। সে দ্রুত শ্বাশুড়ীর হাত ধরে বলল, ” প্লিজ আম্মা। এভাবে বলবেন না। আপনার দোয়া না নিয়ে আমি এ বাড়ী থেকে বেরোব না। ”
-” আমি তোমারে কুনুদিন বরদোয়া করি নাই বৌমা। তাছাড়া তুমি জুয়ান মানুষ। সারাজীবন যে এমনে থাকবা না এইটা আমিও বুজি। আসলে তুমি গেলে আমার আরশও আমারে ছাইড়া চইলা যাইব। এইটাই সহ্য করতে পারতাসিনা।” কোহিনুর বেগম দ্রুত চোখে আঁচল চাপা দিলেন। মেঘা নির্বাক বসে রইল তার হাত ধরে। কোহিনুর বেগমের শরীর থেকে থেকেই কেঁপে উঠতে লাগল।
রাতে শুতে যাবার আগে রেহানা ভাবির ফোন এল, ” হ্যালো মেঘা ? ”
-” জি, ভাবি।”
-” তোকে একটা কথা বলতে ফোন দিলাম। মন দিয়ে শুনবি। আগেই হা হা না না করবি না। ”
-” ওরে বাবা। এই মাঝরাতে তোমার হঠাৎ কী এমন কথা মনে হলো যে এত সতর্কবার্তা ? “মেঘা হাসল। তবে রেহানা হাসলেন না। তিনি সিরিয়াসলিই বললেন,
-” কথাটা আসলেই সিরিয়াস। তোর ভাইয়াও এটাকে সিরিয়াসলিই নিয়েছে। সব শোনার পর আমি নিজেও মানা করতে পারলাম না। তোর ভাইয়া তোকে জানাতে বলেছে কথাটা।”
-” কী কথা ? ” মেঘা নিজেও এবার সিরিয়াস না হয়ে পারলো না।
রেহানা বললেন, ” তোর ভাইয়া আজ ওর অফিসে গিয়েছিল। সেখান থেকে চলে আসার আগ দিয়ে ওর সাথে হামিদ ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছে, বুঝলি?হামিদ ভাইকে মনে আছে তোর ? ”
” হ্যাঁ, মনে থাকবেনা কেন। ভাইয়ার পুরোনো কলিগ। আগে তো প্রায়ই বউ বাচ্চা নিয়ে আসতেন।”
-” হ্যাঁ। তো হামিদ ভাইয়ের বউটা গত সপ্তাহে মারা গেছেন। শুনে এত খারাপ লাগছে। বাচ্চাটাকে ওর নানীরা নিয়ে গেছে, জানিস ? নানীরা বলছে, বাচ্চাটাকে আমেরিকা খালার কাছে পাঠিয়ে দেবে। বেচারা হামিদ ভাই এখন পুরো একা। বলতে পারিস ঝাড়া হাত পা। তবে হামিদ ভাই আজ নিজেই আগ্রহ করে তোর কথা জানতে চাইল তোর ভাইয়ার কাছে। সে তো আগে থেকেই জানে যে পরশ ভাই মারা গেছে। আসলে, তুই বিয়ে শাদী করেছিস কিনা এটাই খোঁজ নিল। কিছু বুঝেছিস? ”
-” হম, বুঝবো না কেন। বউ মরেছে এক মাসও হয়নি। এখনই উনি আমার খোঁজ করছেন? হায়রে, এরেই বলে পুরুষ মানুষ।”
-” এটাই বাস্তবতা মেঘা। পুরুষ মানুষ বৌ ছাড়া অচল। মেয়েরা পারলেও ছেলেরা পারেনা রে। আর ওরা পারেনা বলেই অনেক মেয়ের গতি হয়ে যায়। আমার কথা শোন, এসব ফালতু ইমোশন ছাড় আর হামিদ ভাইয়ের প্রস্তাবে রাজী হয়ে যা। হামিদ ভাইয়ের তো এবার প্রমোশনও হয়েছে শুনলাম। তাছাড়া তিনি আরশকে সহ তোকে চাচ্ছেন। এই সুবিধা কোথায় পাবি তুই ? ”
-” অসম্ভব। আমি বিয়ে করব না। আর এটা তুমি ভাল করেই জানো। কাজেই ভাইয়াকে বলে দাও না করে দিতে ।”
-” এখন বলছিস, বিয়ে করবি না। একটা সময় আসবে যখন দেখবি কোন প্রস্তাবও আসবেনা। তখন কিন্তু খুব ইচ্ছে করবে ঘরকন্না করতে। তখন বসে বসে হাত কামড়াইস।”
মেঘার খুব রাগ হয়ে গেল তবে এবার আর উগরে দিলো না রাগটা। ঠান্ডা গলায় বলল, ” হাত কামড়াতে হলে কামড়াবো। তবু ঐ ব্যটাকে বিয়ে করবো না। ”
-” তাহলে কাকে করবি, বর্ষণকে ? ”
রেহানার এমন কথায় থমকে গেল মেঘা। কয়েক সেকেন্ড কোন কথা বলল না। তারপর মৃদু স্বরে জানতে চাইল, ” হঠাৎ বর্ষণের কথা আসছে কেন এখানে ? ”
-” এজন্য আসছে কারণ সে তোকে বিয়ে করতে চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছে তোর ভাইয়ার কাছে।”
মেঘা স্তম্ভিত। বাকরুদ্ধ। ধাতস্থ হয়ে অস্ফুটে বলল, ” কবে বলেছে এসব? ”
-” এটাও আজই। তোর ভাইয়া ওনাকে ফোন করে আজ কোথাও দেখা করতে বলেছিল টাকাটা দেবার জন্য। সে তোর ভাইয়ার সাথে দেখা করে আজ অফিসিয়ালি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে গেছে। ছোকরার সাহস আছে। ওর মতে, তুই নাকি সমাজের ভয়ে ওকে ফিরিয়ে দিচ্ছিস। কিন্তু সে নিজে বিরাট সমাজ সংস্কারক। তাই প্রচলিত রীতিনীতির মূলে কুঠারাঘাত করতেই তিনি তোকে বিয়ে করবেন। এটাই নাকি তার মিশন।”
-” এতো কথা বলেছে সে ভাইয়াকে ? ” মেঘার বুকে সেই পুরোনো আদিম রণঢাক বাজতে লাগল দ্রিম দ্রিম করে।
রেহানা হেসে বললেন, ” সে এভাবে বলেনি।এটা আমি বললাম তোকে। কারণ তার কথাগুলো অর্থ করলে এমনই দাঁড়ায়। তা সে যাই বলুক। তোর ভাই ওকে সাফ মানা করে দিয়েছে। বলেছে, আপনি সুরমা ভাবির ভাই। আমরা কোন ঝামেলায় যাবোনা। পারলে তাকে আগে ঠিক করে আসুন। কুঠার তো আপনার হাতে। আঘাতটা আপনাকেই হানতে হবে। আমার বোন এসব ঝামেলায় যাবে কেন। ”
-” অহ্…তা উনি শুনে কি বললেন ? ”
-” সে খবরে তোর দরকার কী। তুই হামিদ ভাইয়ের ব্যপারে চিন্তা ভাবনা কর। আর ভেবেচিন্তে আমাকে জানা। এ সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে না হলে আর হবে না। আমার পক্ষে বারবার খুলনা থেকে আসা সম্ভব না। এটা যে কত কষ্ট সে আমিই জানি।”
-” তোমার বারবার খুলনা থেকে আসতে হবেনা। তুমি ভাইয়াকে বলে হামিদ ভাইকে জানিয়ে দাও, যে আমি রাজী না। আর হ্যাঁ, আরেকটা কথা। আমি ও বাড়ীতে উঠছিনা। আমি এখানেই থাকব। আরশের দাদীর সাথে।”
-” কী আশ্চর্য ! সুরমা তোর সাথে এমন করার পরেও তুই ও বাড়ী থাকবি ? ”
-” আপাতত উপায় নেই ভাবি। এসব নিয়েই বাঁচতে হবে। একেবারে ফ্রেশ জীবন কই পাব বলো ? আজ সুরমা কাল রেহানা…!”
-” আমার নাম নিলি কেন ? আমি কী সুরমার মত ? ”
-” না, তুমি সুরমার মত নও। বরং আমিই মেঘের মত। জমাটবাধা কালো অন্ধকার । যেখানেই যাই অালো সরে গিয়ে আঁধার ভর করে।” বলে ফোন কেটে দিল মেঘা। চিন্তিত ভঙ্গিতে দাঁতে ঠোট কামড়ে ধরল। কথাটা হুট করে ভাবিকে বলেছে ঠিকই। কিন্তু এ ব্যপারে আসলেই কিছু ভাবেনি। এই বাড়ী না ছাড়ার সিদ্ধান্তটা ওর হুট করে নেয়া। কথাটা এখনও কোহিনুর বেগমকে জানায়নি মেঘা। রাগের মাথায় যদিও রেহানা ভাবিকে মানা করে দিয়েছে তারপরেও এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি যে কী করবে বা করা উচিত । লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বালিশে মাথা ঠেকাল মেঘা। আনমনেই ভাবলো, দেখা যাক ভাগ্য আমাকে কোথায় নিয়ে যায়।
গত কয়েকটা দিন যাবৎ নির্বিঘ্নেই স্কুল করছে মেঘা। তবে সুরমা ভাবির অনাচার থেমে থাকেনি। প্রায় প্রতিদিনই তিনি একটা না একটা নিয়ে খিটির মিটির করেই যাচ্ছেন। তবে মেঘা ঠিক করেছে এখন থেকে আর ভিজে বেড়াল হয়ে থাকবেনা। পাল্টা জবাব দেবে। নইলে একতরফা পেষণে পিষ্ট হতেই থাকবে সে। নরম পেলে সবারই খড়ম ভাঙতে ইচ্ছে করে। এরপর থেকে আর সে সুযোগ দেবেনা। তাছাড়া ওর ভাইকে বিয়ে করতে যাচ্ছে না যে তার এত মন রেখে চলতে হবে।
এদিকে ভাইয়াও চলে যাচ্ছে কাল পরশু। ইচ্ছে আছে ভাইয়া থাকতে থাকতেই বদরুল আলমের কেসটা ডিসমিস করবে সে। স্কুলের নতুন চাকরীতে ছুটি নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই বেরুলে কাল বিকালে বের হতে হবে। মেঘা স্থির করল পরদিন বিকালেই বেরুবে।
আজ স্কুল থেকে একটু তাড়াতাড়িই বেরোলো মেঘা। আকাশে মেঘের ঘনঘটা। প্রকৃতিতে কেমন একটা গুমোট ভাব। ওর অবস্থাও অনেকটা মেঘার মনের মতোই। একেবারে মুখ ভার করে রেখেছে। চারিদিকে রিক্সার আশায় তাকাল মেঘা। একটা রিক্সাও নেই। রাস্তায় ছোট ছোট ধুলোর ঝড় বড় ঝড়ের আগমনী বার্তা শোনাচ্ছে। শঙ্কিত হলো মেঘা। আরেকবার আকাশের দিকে তাকিয়ে ঠাহর করার চেষ্টা করল আকাশের মতিগতি। হেঁটেই এগোবে কি না ভাবছে। দ্বিধাদ্বন্দে দুলতে দুলতে কিছুদুর পা বাড়াতেই বড় বড় ফোঁটার বৃষ্টি পড়তে শুরু করে দিল হঠাৎ। দেখতে দেখতে মুষলধারে বৃষ্টিতে ভরে গেল চারপাশ। মেঘা খুঁজে পেতে একটা দৌড়ে রোয়াকে উঠল ঠিকই কিন্তু ততক্ষণে সে ভিজে একসা। হাত থেকে রিষ্ট ওয়াচ খুলে দ্রুত ব্যাগে পুরে নিল। হাতের ব্যাগটা ভাল করে মুড়িয়ে নিল যেন ভেতরের খাতাগুলো ভিজে না যায়। এদিকে চারিদিক আঁধার করে বৃষ্টি ঝরতে শুরু করে দিয়েছে। অসহায় চোখে সেদিকে তাকিয়ে বৃষ্টির ঝরে পড়া দেখতে লাগল মেঘা।
প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট চলল এই অবস্থা। এরপর বৃষ্টি সামান্য ধরে এলেও কোন রিক্সার নেই। এদিকে রাস্তায় এক হাঁটু পানি জমে গেছে। বেশ ভালো বিপদেই পড়ল মেঘা। ব্যাগের ভেতর বিজবিজ শব্দে চেইন টেনে উঁকি দিতেই দেখল ফোন বাজছে। হাতের জিনিসগুলো সামলে রিসিভ করতেই শুনল কোহিনুর বেগমের উদ্বিগ্ন কণ্ঠস্বর, ” অ বৌমা, কই তুমি ? বেলা দেখি পইড়া আইল। অহনও আসো না…?”
-” আম্মা, আমি এখনো রাস্তায়। এদিকে প্রচন্ড বৃষ্টি। আমি বৃষ্টিতে আটকা পড়েছি। রাস্তায় পানি জমে গেছে। একটা রিক্সাও পাচ্ছিনা আম্মা। কী করব বুঝতে পারছিনা।”
-” তোমার বড় ভাইরে নাহয় ফুন….!” সমস্ত শব্দ থেমে গেল হঠাৎ। কান থেকে মোবাইল সরিয়ে সেটার দিকে তাকাল মেঘা। যা ভেবেছিলো তাই। কোমায় চলে গেছে ওর ফোন। এই মোবাইলটায় এমনিতেও চার্জ থাকেনা। ফোনটা ব্যাগে ফেলে দিয়ে হতাশ চোখে রাস্তার দিকে তাকাল মেঘা। মনে মনে একটা খালি রিক্সার অপেক্ষায় ক্ষণ গুনতে লাগল কায়মনোবাক্যে।।
বিচলিত পায়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন কোহিনুর। মেঘার নম্বরে বেশ কয়েকবার ট্রাই করার পরেও লাইন না পেয়ে সেজ বৌ’র ঘরে এলেন। সেজ বৌ মা কাপড় ভাঁজ করছিল। শ্বাশুড়ীকে দেখে তাকাল কিন্তু কোন প্রশ্ন করল না। প্রয়োজন ছাড়া শ্বাশুড়ীর সাথে এমনিতেও তেমন কথা বলেনা সে। বিশেষ করে মেঘার উপর তার নেক নজরের কারণে আজকাল শ্বাশুড়ীকে সহ্যই হয়না তার।
-” অ, জামালের বউ। এট্টু ফোন লাগায়া দেও না।” বলে ফোনটা এগিয়ে দিলেন কোহিনুর। সেজ বৌ মুখ গোমড়া করেই বলল, ” কাকে ফোন দেবেন? ”
-” আরশের মায়রে ফোন দিসিলাম। কথা কইতে কইতেই কাইটা গেল। একটু অর বড় ভাইরে ফোন লাগায়া দেও তো। মাইয়াটা বিষ্টির লাইগা আটকা পড়সে। অর ভাইরে ফোন দিয়া জানাই। হেয় যদি পারে বইনটারে লইয়া আসুক।”
সেজজা ফোন হাতে নিয়ে হাসিবের নাম খুঁজতে লেগে গেল। স্ক্রল করতে গিয়েই বর্ষণের নামটা পেয়ে কয়েক সেকেন্ড ভেবে সেটাতেই প্রেস করে শ্বাশুড়ীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজে কাপড় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কোহিনুর বেগম ফোন কানে ঠেকিয়ে রিসিভ হবার অপেক্ষা করতে করতেই হেঁটে নিজের ঘরে চলে এলেন। ওপাশে ফোন রিসিভ হল। সালাম শোনার পর উত্তরটুকু দেবার মত ধৈর্য কুলোল না কোহিনুরের। প্রায় চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন, ” ও বাবা। মেঘায় স্কুল থিকা অহনও ফিরে নাই। বিষ্টিতেই আটকা পড়সে। এট্টু অরে গিয়া বাসায় আননের ব্যবস্থা করো না বাবা। আমার তো এদিকে আর কেউ নাই যে তারে পাঠামু।”
ওপাশে থেকে কী জবাব এল তার অপেক্ষা না করেই কেটে দিলেন কোহিনুর। এটা তার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। প্রয়োজনীয় কথা শেষ হলেই কেটে দেয়া।।
=====
আরো প্রায় মিনিট বিশেক পর মেঘা সিদ্ধান্ত নিলো একটা ঝুঁকি নেবে। কোনো রিক্সায় সিঙ্গেল মহিলা দেখলে অনুরোধ করবে ওকে শেয়ারে ভাড়া করে নিতে। অন্তত বড় রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেও চলবে। এদিকটায় রাস্তা ঢালু। নইলে এত পানি কোত্থেকে এল। একরকম দ্বিধা নিয়েই রিক্সা গুলোর দিকে নজর রাখতে শুরু করল মেঘা। বেশীর ভাগই পুরুষ নয়ত দুজন মানুষ। সিঙ্গেল মহিলা এখনও পায়নি । এমন সময় একটা সিএনজি এসে থামলে সেদিকে তাকাল মেঘা। ডাকবে কিনা ভাবছে। কারণ সিএনজির ভাড়াটা ওর নাগালের বাইরে। এটাকে ডাকলে অনেকগুলো টাকা খসে যাবে নিশ্চিত ।
আচমকা সিএনজি থেকে বর্ষণকে উঁকি দিতে দেখে মেঘা রীতিমত হতভম্ব হয়ে গেল। বর্ষণ ওকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, ” -” কই আসুন।”
হতবিহ্বল মেঘা কী বলবে ভেবে পেলনা। বর্ষণ এখানে কেন তাও জানতে চাইলো না। চুপচাপ তাকিয়ে রইল যেন জানত বর্ষণ এখন আসবে। আজ কেন যেন যতটা ভয় হওয়া উচিত ততটা ভয় হলো না ওর। বরং এক অন্যরকম স্বস্তি লাগছে মনে। আর….আর বোধহয় ভালোলাগাও। হ্যাঁ, পরম স্বস্তি কাজ করছে মনে। পরক্ষণেই নিজেকে কষে ধমক দিল। সচেতন মনটা বলল বর্ষণকে ফিরিয়ে দেয়া উচিত। আবার ভাবল, তাহলে আরো অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকা লাগবে।
বর্ষণ দ্বিতীয়বার উঁকি দিয়ে বললো, ” কী হলো আমাকে আসতে হবে ? ওখান থেকেই সোজা এখানটায় পা রাখুন। ”
-” না, না। প…পরে যাই যদি ? ” বলে মেঘা ইতস্তত করতে লাগল। রোয়াক আর রাস্তার ব্যবধান প্রায় এক ফিটের। সিএনজি ওয়ালা যতটা সম্ভব রোয়াক ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। তারপরেও মেঘার ভয় কাটছেনা। তাকিয়ে দেখল পানি সিএনজির ভেতরেও ঢুকছে কিছু কিছু। মেঘাকে দ্বিধা করতে দেখে বর্ষণ হাত বাড়াল, ” হাতের সব জিনিস আমাকে দিন তারপর আপনি উঠে আসুন। আরে , দাঁড়িয়ে কেন ? বৃষ্টি আসছে তো। ”
অগত্যা মেঘা দ্রুত হাতের জিনিসগুলো বর্ষণের দিকে এগিয়ে দিল। তারপর সাবধানে পা রাখলো সিএনজির ভেতরে। এক পা রোয়াকে আরেক পা সিএনজিতে রেখে ভারসম্যহীতায় টালমাটাল অবস্থা দাঁড়াল মেঘার। অবশেষে একরকম বাধ্য হয়েই ওর হাত ধরে টেনে ওকে ভেতরে নিল বর্ষন। তারপর মেঘার কোলের ওপর দিয়েই ঝুঁকে গেট টেনে আটকে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলল, ” টান দাও তো ভাই। আবার বৃষ্টি আসছে। তুমি বরং এদিক দিয়ে না গিয়ে একটু ঘুরপথে যাও। পেছনের রোডের অবস্থা তো দেখলে।”
মেঘার অস্বস্তি তখনও কাটেনি। সে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। এদিকে বর্ষণ সিএনজি অলার সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছে। হয়ত মেঘাকে অস্বস্তি থেকে রেহাই দিতেই সে স্বাভাবিক আচরণ করছে। মেঘা বাইরে তাকাল। আবারও ঝমঝম করে বৃষ্টি নেমেছে। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলে আজ আর কোন যানবাহনের আশা করতে পারতো না।
প্রবল ঝড়ো হাওয়া বইছে। সাথে বাতাসের এলোপাতাড়ী ঝাপটা। বর্ষণের দিকে চোখ পড়তেই দেখল বৃষ্টির ঝাপটায় ওর হাঁটু ভিজে যাচ্ছে। তবু সে মেঘার দিকে সরে বসেনি। গেটের সাথে চেপেই বসেছে। বরং মেঘাই মাঝামাঝি চলে এসেছে। ব্যপারটা লক্ষ্য করে কিছুটা সরে বসল মেঘা। মনে মনে স্বীকার করতে বাধ্য হলো, আ রিয়েল ভদ্রলোক।
সিএনজি চালক চেঁচিয়ে বলল, ” পর্দাটা ফেইলা দেন ভাই। গাড়ী ভিজা যাইতাসে।”
-” ভিজুক। পর্দা ফেলা যাবেনা ভাই ।” বর্ষণও সমান তালে চেঁচাল। মেঘা কিছু বলার আগেই বর্ষণ মেঘার দিকে তাকিয়ে বলল।
-” একটা জিনিস খেয়াল করেছেন, যখনই আপনার সাথে আমার দেখা হচ্ছে তখনই আপনি ভেজা থাকছেন। প্রথম দিন যেদিন….!” বলেই জিভে কামড় দিয়ে দুই ভ্রু নাচিয়ে বেশ দুষ্ট একটা ভঙ্গিমা করে থেমে গেল বর্ষণ।
মেঘা মুখে যতই ভাবগাম্ভীর্য ধরে রাখুক মনে মনে সেও হেসে ফেলল এবং স্বীকার করতে বাধ্য হল বর্ষণের কথাটা ঠিক। দুজনের যতবারই দেখা হচ্ছে ভিজে থাকার একটা ব্যপার ঘটছে। মেঘা কোন কথা না বলে মুখ নামাল। বর্ষণ নিজেও এবার কিছুটা গম্ভীর হলো। হালকা কেশে বলল,
-” জানতে চাইলেন না, আমি এখানে কীভাবে ? ”
-” হ্যাঁ, তাই তো। আপনি এখানে কীভাবে?”
-” মনের টানে।”
-” ঠাট্টা না প্লিজ। সত্যিটা বলুন না।”
-” আপনার শ্বাশুড়ী ফোন করে বললেন যে আপনি আটকা পড়েছেন।”
-” আ..ম্…মা….?” মেঘা যারপরনাই বিস্মিত। বর্ষণ মাথা নাড়ল।
-” হম, অবাক আমিও হয়েছি। পরে ভাবলাম উনি হয়ত ভুল করেই ফোনটা দিয়েছেন। আরশের হাসপাতালে থাকাকালীন ওনার সাথে দুই তিনবার ফোনে কথা হয়েছিল আমার। তখন আমি নিজেই আমার নাম্বারটা ওনাকে সেইভ করে দিয়েছিলাম। হয়ত সেভাবেই…!”
-” তবু, কেমন যেন একটা খটকা লাগছে। আম্মা লেখাপড়া জানেন না বলে সবসময় ফোন করার জন্য আমাদের কাছে আসেন। কখনো আমি, কখনো অন্য ভাবিরা বা নেহাল তার ফোন লাগিয়ে দেই। কেবল আমার নাম্বারটাই উনি একা লাগাতে পারেন। আমি স্পিড ডায়ালে ওনাকে কল করতে শিখিয়ে দিয়েছিলাম। বুঝতে পারছিনা , কেউ কী ইচ্ছে করে কাজটা করল ! ” মেঘা চিন্তিত স্বরে বললে বর্ষণ সদর্পে বলল,
-” যদি তাই হয় তাহলে আমার জন্য ভাল হয়েছে। আমি এমনিতেও প্রসঙ্গটা তুলতে পারছিলাম না। আপনার ভাইয়া আপনাকে বলেছে কী না জানিনা। আমি কিন্তু গতকাল ওনাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। একথা আপনাকে বলেছেন উনি ? ” নির্দ্বিথায় কথাটা বলে সরাসরি তাকাল বর্ষণ। আর লজ্জায় সংকুচিত হয়ে গেল মেঘা। বর্ষণ সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
-” দেখুন, মেঘা। এসব পাগলামির কোন মানে হয়না। আমি জানি না আপনি এরকম কেন করছেন। আপনার সমস্যা যদি একা সুরমা আপা হয় তাহলে এটা খুবই সামান্য একটা ব্যপার। তার জন্য আমি আমার লাইফ স্যক্রিফাইস করব না। তাছাড়া আপনি তো আর সুরমা আপার সাথে থাকতে যাচ্ছেন না। আপনি থাকবেন আমার বাসায়। আমার আম্মার সাথে ৷ আমি আমার আম্মাকে সোজা বলে দিয়েছি। এসব লোক দেখানো নামাজ রোজা এবার ছাড়। যেদিন আল্লাহর আইন মন থেকে মানতে পারবা সেদিন এসব করো। আল্লাহর বিধানকে লজ্জা আর অনুচিত ভাবলে তোমার ঈমান নিয়ে এমনিতেই টানাটানি পড়ে যাচ্ছে। মোটকথা, আম্মাকে বুঝিয়ে বলায় সে নিমরাজী। শুধু মেয়ের ভয়েই চুপচাপ আছে। তবে আমি কারো ধার ধারি না। এটা আপাও জানে। আপনি শুধু একবার হ্যাঁ বলুন তারপর দেখুন কী করি।”
-” কিন্তু আপনিই বা কেন…? মানে আমার মত বয়স্ক বিবাহিত…!”
-” উফ্, এসব প্রশ্নের উত্তর আগে অনেকবার দিয়েছি। আর বয়স্ক বলতে কী বোঝাচ্ছেন ? কত বয়স আপনার ? পঞ্চাশ না ষাট ? ডিসগাস্টিং। আপনার বয়স হার্ডলি ছাব্বিশ সাতাশ হবে। আমার পঁচিশ। আপনার এক বছর কম হয়ত। তাতে কী। বিয়ে হারাম ?”
-” না, তা না ? ” মেঘা ভেবে পেলনা কী জবাব দেবে। বর্ষণ অসহিষ্ণু স্বরে বলল,
-” হামিদ সাহেবকে পছন্দ হয়ে থাকলে আলাদা কথা। তাহলে সরাসরি বলে দিন, আমি সরে দাঁড়াবো।”
-” হামিদ সাহেব ?” বর্ষণের এ কথায় দারুণ চমকে উঠে তাকাল মেঘা। বর্ষণ মাথা নাড়ল,
–” কেন, আপনার ভাইয়া কিছু বলেনি ? গতকাল আমি যখন আপনার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাই তখন তো ঐ লোক ছিল সামনে। আমার সামনেই তার সাথে কথা হয় হাসিব ভাইয়ের। ব্যাটা আমার সামনেই আপনাকে বিয়ে করতে চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। আমি তো পুরা স্টাক হয়ে গিয়েছিলাম টাকলু টারে দেখে। মেজাজটা যা খারাপ হয়েছিল বলার নয়। মনে মনে ভাবছিলাম কুঁজোরও মন চায় চিৎ হয়ে শুইতে।”
মেঘা দ্রুত মুখে হাত চাপা দিলে বর্ষণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” হাসছেন, তাই না ? হাসুন। তবে মনে রাখবেন । মানুষের দুর্দশা দেখে হাসলে তাকে কিন্তু সেই ফাঁদেই পড়তে হয়।”
-” আপনার দুর্দশায় হাসব কী। আমার নিজের দুর্দশা কী কম?” মেঘার কণ্ঠ ম্লান হল।
-” তাহলে এভাবে নিজেকে আটকে রেখেছেন কেন ? আমার আকুলতা কী আপনাকে স্পর্শ করছে না? কী করলে বিশ্বাস হবে আপনার যে আমি প্রায় মারা যাচ্ছি আপনাকে না পেয়ে? ”
-” কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকেনা বর্ষণ। আমার জন্যেও আপনার জীবন থেমে থাকবেনা।”
বর্ষণ শান্ত মুখে শুনল কথাটা। ওর চেহারা লালচে দেখাচ্ছে। চোয়াল শক্ত করে বলল,
-” বুঝেছি। আপনার আসলে এভাবেই থাকতে ভাল লাগে। একেকবার একেকজন। বেশ রুচি বদল করা যায়। আজ আমার জায়গায় আপনার ঐ হামিদ ভাই হলেও তার সাথে ঠিক এভাবেই সিএনজিতে উঠতেন। গল্প করতেন। ব্যাটার বৈরাগ্য উপোভোগ করতেন। ঠিক বলেছি না? ”
মেঘার মুখ লাল হয়ে গেল মুহূর্তেই। কটমটিয়ে তাকিয়ে বলল, ” আপনার কপাল ভাল এটা রাস্তা। নয়ত চড় মেরে এর জবাবটা দিতাম আমি।”
-” আপনার চড় আপনার হামিদ মিয়ার জন্য তুলে রাখুন। আমার অভ্যাস নাই মেয়ে মানুষের হাতে ঘন ঘন চড় খাবার। পরশ হয়ত আপনার হাতে চড় খেয়ে খেয়ে আপনার অভ্যাসটা খারাপ করে দিয়েছে। আর নিজেকে বড় আপা ভাবা বন্ধ করুন। আপনাদের মত ভূয়া দ্বীনদার দেখলে গা জ্বলে যায় আমার। বুঝেছেন? এই সিএনজি থামাও।” প্রায় ধমক দিয়ে সিএনজি থামাল বর্ষণ।
পকেট থেকে টাকা বের করে লোকটার হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, ” ম্যাডাম কোথায় নামবে নামিয়ে দিও।” বলেই বৃষ্টির মধ্যেই নেমে ভিজতে ভিজতে চলে গেল বর্ষন। আর মেঘা অসহায়ের মত সেদিকে তাকিয়ে অন্তরব্যাপী বর্ষণে ভিজতে লাগল।
চলবে….