#রংধনুর_রঙ_কালো
৪.
এপার্টমেন্টটা আগের বাড়ি থেকে অবশ্যই অনেক ছোট। কিন্তু খুবই বিলাসপূর্ণ ও চমৎকার। ড্রয়িংরুমের দক্ষিণ দিক সম্পূর্ণটা স্বচ্ছ কাঁচের দেয়ালে আবৃত। কাঁচের চারপাশে কালো রঙের বর্ডার বেশ মানানসই লাগছে। সোফার রঙগুলোও কালো। এভাবে ম্যাচিং করে ড্রয়িংরুমের প্রত্যেকটা ফার্ণিচার কালো রঙের দেওয়া হয়েছে। মাঝ বরাবর একটা বিরাট টিভি আর একটা পেইন্টিং ঝুলানো। আরও বিভিন্ন সৌন্দর্য্য দিয়ে ঘরটা ভরপুর। বেডরুমের সবকিছু আবার সাদা রঙের। বারান্দাটা অনেক ধরণের গাছ-গাছালিতে পরিপূর্ণ। ঘন, সবুজ, সুন্দর গাছগুলো দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। বারান্দাটা এতো সুন্দর আর বড় যে বেডরুমের চেয়ে এই জায়গায় ঘুমিয়ে থাকাই বেশি আরামদায়ক মনে হলো অরিনের। একটা ছোট বিছানাও পাতা আছে এখানে। বিছানার কুশন বেগুনি রঙের। বেশ আরাম করে এই জায়গায় শুয়ে আকাশ দেখা যাবে। সাথে গাছ-পালার মনোরম দৃশ্য ও প্রাকৃতিক বাতাস। আর যদি সাথে থাকে এক কাপ কফি। আহ! শান্তি।এটা যেহেতু রেডিমেট এপার্টমেন্ট তাই সবকিছু আগে থেকেই সাজানো-গুছানো আছে। মাস শেষে শুধু মূল্য পরিশোধ করতে হবে। অনেকটা হোটেল সিস্টেমের মতো। ড্রয়িংরুমের কাঁচের দরজার কার্ণিশে এসে অরিনের বুক কেঁপে উঠলো। তাদের এপার্টমেন্টটা অষ্টম তলায়। নিচে তাকালেই যেনো মৃত্যুর হাতছানি। পরিষ্কার রাস্তায় গাড়ি চলছে হাইস্পিডে। এইখান থেকে কেউ পড়ে গেলে তার শরীরটা কয়ভাগ হবে বলা যায় না। কিন্তু সবকয়টি ভাগই যে গাড়ির নিচে পিষে যাবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। অরিন ঠিক করে ফেললো, কখনও যদি প্রয়োজন হয় সে ইলহানকে এই জায়গা থেকে ফেলে দিবে। রান্নাঘরটা দেখে অরিনের আরও ভালো লাগলো। ড্রয়িংরুমের মতো রান্নাঘরটাও অনেক বড়। সম্পূর্ণ কালো রঙের একটা ডাইনিং টেবিল আছে রান্নাঘরে। এছাড়া প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু আছে। এ জায়গাটাও খুব সুন্দরভাবে সজ্জিত। সবকিছু দেখে অরিনের মুখ দিয়ে আপনা-আপনিই বেরিয়ে এলো,” এলিগেন্ট! এতো সুন্দর এপার্টমেন্ট রেখে তুমি অন্যের বাড়িতে গিয়ে কিভাবে থাকো? আমি হলে কখনোই যেতাম না।”
ইলহান মৃদু হেসে বললো,” বিষয়টা সৌন্দর্য্যের না। বিষয়টা হলো সঙ্গের, একাকিত্বের। আমি নিঃসঙ্গতা কাটাতে ক্লিফোর্ডদের সাথে থাকি অরিন। এইখানে আমার কে আছে?”
অরিন অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
” না জানি নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য আর কি কি করো তুমি।”
ইলহান অরিনের কথাটা শুনতেই পায়নি এমন ভাব করে বললো,” ডিনারে কি খাবে বলো?”
” ডিনারেরটা ডিনারে দেখা যাবে। এখন মাত্র বিকাল।”
” আসলে আমি সুপারশপে যাচ্ছিলাম। তুমি যদি ভাত খেতে চাও তাহলে আমি ফ্রোজেন মাছ,মাংস নিয়ে আসবো। আর যদি আমার মতো ফাস্ট ফুড খেয়ে থাকতে পারো তাহলেও ভালোই। ইটস ইজি ফোর আস।”
ইলহান বাসা থেকে বের হবে শুনে অরিন মনে মনে খুশি হলো। এই ফাঁকে অন্বয়ের সাথে একটু কথা বলা যাবে। অরিন বললো,
” ঠিকাছে যাও। তুমি যা আনবে আমি তাই খাবো। হেলদি যে-কোনো কিছু হলেই আমার চলবে।”
” তাহলে তোমার জন্য ওটস নিয়ে আসবো? ফ্রুটসের সাথে খেতে ভালো লাগবে।”
” ঠিকাছে, এনো।”
” ওকে।”
ইলহান মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল। তার গালের টোল দু’টো গাঢ় হয়ে উঠেছিল কয়েক সেকেন্ডের জন্য। ইশশ! ওই টোল দেখলে অরিনের বুকে ব্যথা উঠে। গলায় কিছু একটা বিঁধে যায়। অসম্ভব কষ্ট অনুভূত হয়। ইলহানের ঘাড় পর্যন্ত ব্রাউনিশ চুলগুলো আগের চেয়েও সুন্দর হয়ে গেছে। ওই চুলে হাত বুলানোর জন্য অরিনের মনটা আঁকুপাঁকু করে। ইলহানের লাল টুকটুকে ঠোঁটে আর ফরসা গোলাপি গালে অরিন চুমু দেয় না কতকাল। আর কখনও দেওয়া হবে বলেও মনে হয় না। তার মনের সকল তৃষ্ণা এখন বিতৃষ্ণায় রূপান্তর হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় এসে ইলহান থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়া শিখেছে। ওর ফরসা, লোমেশ,লম্বা পা অর্ধেক বেরিয়ে থাকে। অরিনের ইচ্ছে করে লোমগুলো ছুঁয়ে দিতে। ছ’ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতার ইলহানকে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টে আরও বেশি লম্বা মনে হয়। এ পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষটিই অরিনের স্বামী। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তার চরিত্র কেনো তার মতো সুন্দর নয়? সে অরিনের কাছে পৃথিবী ছিল।সেই পৃথিবীটা রঙধনুর সাত রঙের মতো রঙিন ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সেই রঙধনুর রঙ কালো হয়ে যাচ্ছে কেনো? অরিনের সাজানো পৃথিবীটা বিষাক্ত ধোঁয়ায় দূষিত হয়ে যাচ্ছে কেনো? কেনো এমন হচ্ছে কেনো? বুক ভর্তি দলা পাকানো কষ্ট নিয়ে অরিন গোসলে ঢুকলো। শাওয়ার ছেড়ে অনেকক্ষণ বসে কাঁদলো। শরীর ঠান্ডা হতে হতে বরফের মতো জমে গেছে তার। গোসল শেষ করার পর সে মোবাইল হাতে নিল অন্বয়কে ফোন দিতে। অন্বয় বেশ কয়েকবার ম্যাসেজ করেছে তাকে। লোকটা এতোক্ষণে পাগল হয়ে গেছে নিশ্চয়ই।
” হ্যালো অন্বয় সাহেব।”
” মিসেস অরিন, আপনার কি সমস্যা? ফোন কেনো ধরছিলেন না?”
অন্বয় খুব জোরে জোরে হাঁপাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেনো মাত্র শ্বাস নিতে সক্ষম হয়েছে সে। এতোক্ষণ তার নিঃশ্বাসটা বোধ হয় গলার কাছেই আটকে ছিল। অরিন বললো,
” আমার আশেপাশে সর্বক্ষণ আমার হাসব্যান্ড ঘুরলে আমি আপনার ফোন কিভাবে ফোন ধরবো বলুন? তার সামনে নিশ্চয়ই আমি আপনার সাথে খোশগল্প করতে পারি না।”
” আপনার হাসব্যান্ড কি সারাক্ষণ আপনার সাথেই লেগে থাকে? একটু আড়ালে গিয়ে ম্যাসেজের রিপ্লাই দেওয়া যাচ্ছিলো না? সকাল থেকে কত টেনশনে ছিলাম আমি জানেন? আমার বুক এখনও ধড়ফড় করছে। আরেকটু হলে ব্রেইন স্ট্রোক করতাম।”
” আপনি কেনো ব্রেইন স্ট্রোক করবেন আমার জন্য? অদ্ভুত!”
অন্বয় অপ্রস্তুত হয়ে গেল। আসলেই তো, এই প্রশ্নের কি জবাব দেওয়া যায়? কিছু খুঁজে না পেয়ে অন্বয় প্রসঙ্গ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল।
” আচ্ছা আপনার ইনভেস্টিগেশনের কি অবস্থা সেটা বলুন। কিছু কি জানতে পেরেছেন?”
অরিন সবঘটনা অন্বয়কে জানালো। তারপর জিজ্ঞেস করলো,
” আপনি কি নিশ্চিত অন্বয় সাহেব? ওই বাড়িটা কি আসলেই ইলহানের বাড়ি?”
” আমি অবশ্যই নিশ্চিত। দেখলেন তো আপনার হাসব্যান্ড কিভাবে চাল ঘুরিয়ে দিল? তিনি আপনাকে কত ভয়ানকভাবে ঠকাচ্ছে এখনও কি বুঝতে পারেননি?”
” আমি সব বুঝতে পেরেছি। কিন্তু কোনো প্রমাণ পাচ্ছি না দেখে ওকে কিছু বলতে পারছি না। গলায় সেই জোর আসছে না। ”
” এটা ভুলেও করতে যাবেন না অরিন। আপনি ইলহান মাহদীকে এখন কিচ্ছু বলবেন না। উনার সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করবেন। কোনোভাবেই যেনো তিনি বুঝতে না পারেন যে আপনি তাকে সন্দেহ করছেন।”
” বুঝলেও কি আর না বুঝলেও কি? আমার আর কিচ্ছু যায়-আসে না অন্বয় সাহেব৷ আমি পাথর হয়ে গেছি। আমার দুনিয়া ভেঙে গেছে।”
অরিনের কণ্ঠ ভিজে আসতে লাগলো। সে কি কাঁদছে? অন্বয় কি বলে সান্ত্বনা দিবে তাকে?
” দেখুন অরিন, এতো দূর্বল হলে চলবে না। আপনাকে স্ট্রং থাকতে হবে। জানি কাজটা খুব কঠিন। কিন্তু আপনাকে এই কঠিন কাজটাই করতে হবে। আপনি না সাহসী? আমি তো এটাই চেয়েছিলাম। যেনো আপনি নিজে থেকে সব জানুন, দেখুন আর বিশ্বাস করুন। সামনে আরও অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে। এটুকুতেই ভেঙে পড়ার সময় না এখন। অরিন আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা?”
” জ্বী, বলুন।”
” আমার মনে হয় ইলহান মাহদী বুঝে গেছেন যে আপনি সারপ্রাইজ দেওয়ার উদ্দেশ্যে আসেননি। তাকে সন্দেহ করেই অস্ট্রেলিয়া এসেছেন। নয়তো আপনাকে আলাদা এপার্টমেন্টে কেনো নিয়ে আসলেন? আমার প্রচুর টেনশন হচ্ছে অরিন।আপনি আমাকে নতুন এপার্টমেন্টের এড্রেসটা ইমিডিয়েটলি টেক্সট করুন তো।”
” আপনি এতো ভয় পাচ্ছেন কেনো অন্বয়? আমি তো একটুও ভয় পাচ্ছি না। ওর মতো নরকীটকে ভয় কিসের?”
” ভয় না পেলেও সতর্ক থাকা উচিৎ। শত্রুপক্ষ যেমনই হোক তাকে দূর্বল ভাবাটা নেহায়েত বোকামি। তাছাড়া ইলহান মাহদী যখন বুঝে ফেলবেন যে আপনি তার সব জেনে গেছেন এমনকি তার উপর প্রতিশোধ নিতে চাইছেন তখন কি সে আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে? এমনিই তো মেরে ফেলতে চাইছে।”
” অন্বয় সাহেব, আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে ইলহান আমাকে মেরে ফেলতে চায়।”
” হুহ! প্রথমে তো এটাও বিশ্বাস করতে চাননি যে আপনার স্বামী চরিত্রহীন। কিন্তু এখন আপনি নিজেই তার কলুষিত চরিত্রের বর্ণনা করলেন। এইটা যেমন সত্যি প্রমাণ হয়েছে, খুনের বিষয়টাও প্রমাণ হবে।”
অরিনের হু হু করে কান্না পেল। কিন্তু অন্বয়ের সামনে কাঁদতে লজ্জা লাগবে বলে ফোন কেটে দিল। অন্বয় আবার ফোন করলো। অরিন এবার ফোন সাইলেন্ট করে দিল। একটু পর অন্বয় ম্যাসেজ করলো,
” নিজের খেয়াল রাখবেন। একদম ভেঙে পড়বেন না। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করবেন না। আপনাকে সুস্থ থাকতে হবে। আর এপার্টমেন্টের এড্রেসটা আমাকে দ্রুত সেন্ড করবেন। কোনো সমস্যা হলে জানাবেন।”
ভাঙা ফোনটা বার-বার বেজে যাচ্ছে। ইলহানের মনোযোগ ড্রাইভিংএ। সে ফোনের দিকে তাকাচ্ছেও না। কিন্তু সোফিয়া অনবরত ফোন করছে। মেয়েটার ধৈর্য্য আছে বলতে হয়। ইলহান ফোন ধরবে না কারণ সোফিয়ার সাথে তার এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ফোনটা ধরলেই মেয়েটা ফালতু বকবক শুরু করবে। তার সমস্যা অরিনকে নিয়ে। কেনো ইলহান অরিনের সাথে আলাদা এপার্টমেন্টে উঠলো? অরিন এইখানে কয়দিন থাকবে? যতদিন অরিন থাকবে ততদিন কি সে ইলহানের সাথে দেখা করতে পারবে না? আরও নানান প্রশ্ন। ইলহান এক কথায় উত্তর দিয়েছিল, ” জানি না।” এই কথা বলেই ফোন রেখে দেয়। তারপর থেকে সোফিয়া ফোন দিয়েই যাচ্ছে। ইলহান পার্কিং লটে গাড়ি থামিয়ে সুপার শপে ঢুকতে যাবে তখনি দেখলো সোফিয়া দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। ইলহান ভ্যাবাচেকা খেল। এই মেয়েটা কি ওর নাম্বার ট্র্যাক করে এইখানে চলে এসেছে? দিন দিন সোফিয়া অসহ্য হয়ে উঠছে। ইলহানের ইচ্ছে করলো এখনি সোফিয়ার সাথে ব্রেকাপ করে ফেলতে। সোফিয়া কাছে এসে ইলহানের টি শার্ট খামচে ধরে বললো,
” বেইবি, তুমি আমার ফোন ধরো না কেনো? বউকে পেয়ে সব ভুলে গেছো? আমাকেও ভুলে গেছো? তোমার বউ এখানে কয়দিন থাকবে বলো না? ততদিন কি আমাদের দেখা হবে না? তুমি পারবে আমাকে ছাড়া থাকতে? আমি তো পারবো না। এক মুহুর্তও পারবো না।”
” এখানে কাঁদার কি হলো সোফি? তুমি কি বাচ্চা? দেখো, আমি বাধ্য হয়ে এটা করছি। তুমি কি চাও আমার মা-বাবা সব জেনে যাক? তারপর আমাকে ত্যায্য করে দিক? অরিন আমার ফ্যামিলির সাথে জড়িত। চাইলেই ওকে আমি ঝেড়ে ফেলতে পারি না।”
” আর আমাকে ঝেড়ে ফেলতে পারো চাইলেই?”
” তুমি বোঝার চেষ্টা করো সোফি। অরিন অলরেডি আমাকে সন্দেহ শুরু করেছে। এজন্যই ও অস্ট্রেলিয়া এসেছে। আমাকে আবার ওর বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। সেজন্য কিছুদিন আমাদের আলাদা থাকা জরুরী। ”
” অরিন তোমাকে অনেক বদলে দিয়েছে ইলহান। আগে তুমি আমার সাথে থাকার একটা মুহুর্তও ওয়েস্ট করতে চাইতে না। আর এখন নিজেই আমার থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইছো।”
” ওহ গড! আমি পালিয়ে বাঁচতে চাইছি না বিশ্বাস করো। আমি তোমাকেই ভালোবাসি। কিন্তু অরিন আমার দায়িত্ব।”
” আমি এতোকিছু বুঝি না। আমাকে তোমার সময় দিতেই হবে। নাহলে আমি কিন্তু তোমার এপার্টমেন্টে চলে যাবো। তারপর অরিনকে…”
” চুপ, একদম চুপ।”
সোফিয়ার ঠোঁটে আঙুল ঠেকালো ইলহান। নিষ্ঠুর কণ্ঠে হুমকি দিয়ে বললো,
” এই কাজ করার চিন্তাও করো না। যদি কখনও তোমার জন্য অরিনের সাথে আমার ঝামেলা হয় তাহলে সেদিনই হবে আমাদের ব্রেকাপ ডে। মাইন্ড ইট।”
ইলহান চলে যেতে লাগলো। সোফিয়া রাস্তার মাঝখানেই চেঁচানো শুরু করলো। ইলহান পাত্তা দিল না একদম। রাস্তার মানুষজন অবাক হয়ে ওদের দেখতে লাগলো।
ডিনারের পর অরিন চুপচাপ বালিশ নিয়ে বারান্দায় চলে আসলো। বেগুনি কুশন জড়িয়ে ধরে আরামদায়ক বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। ইলহান এসে বললো,
” তুমি কি এখানেই থাকবে?”
” দেখতেই পাচ্ছো এখানে শুয়েছি। এর মানে এখানেই থাকবো।”
” এইটা কেমন কথা অরিন? আমি ভেতরে থাকব আর তুমি বাহিরে থাকবে? এটা কিভাবে হয়?”
” কেনো হবে না? আমার এসি’র বাতাস ভালো লাগে না। শরীর গুলায়। এখানেই আমি বেটার ফীল করছি।”
” এটা বললেই তো হয়। এসি বন্ধ করে দিচ্ছি। প্রয়োজনে এসি খুলে ফেলবো। তবুও তুমি রুমে চলো প্লিজ।”
অরিন জবাব দিল না। বরং ইলহানকে পিঠ দেখিয়ে অন্যদিকে ঘুরে শুয়ে পড়লো। ইলহান অরিনের কাঁধে হাত রেখে ডাকলো,
” অরিন!”
” তুমি এখনও যাওনি? ডিস্টার্ব কেনো করছো? শরীর ভালো লাগছে না আমার। প্লিজ একটু শান্তিতে ঘুমাতে দাও।”
” ছয়মাস পর আমরা একসাথে হয়েছি। আর তুমি ঘুমাতে চাইছো? আমার সাথে সময় কাটাতে ইচ্ছে করছে না তোমার?”
” না।”
” সত্যি?”
” হুম।”
ইলহান তাও কিছুক্ষণ বসে তাকিয়ে রইল অরিনের মুখের দিকে। আর অরিন চোখ বন্ধ করে রাখলো জোর করে। ইলহান একটু পর বারান্দা থেকে চলে গেল। আর অরিন চোখের পানি ছেড়ে কাঁদতে লাগলো। তার জীবনটা মাঝনদীর হয়ে গেছে। ক্রমাগত উত্তাল স্রোতে ভেসে যাচ্ছে সবকিছু। অরিন না পারছে একূলে ফিরতে আর না পারছে ওই কূলে পৌঁছাতে। অবাধ্য স্রোতের সাথে লড়াই করে সে কয়দিন টিকে থাকবে? অরিন ভেবেছিল ইলহান হয়তো হার মেনে চলে গেছে। কিন্তু না, একটু পর সে আবার এলো। এখন তার গা সম্পূর্ণ খালি। অরিনের শরীর শিরশির করে উঠলো ওকে এই অবস্থায় দেখে। ইলহান বালিশ নিয়ে অরিনের পাশেই শুয়ে পড়লো। অরিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওকে জড়িয়ে ধরে পেছনে অরিনের দুইহাত চেপে এলোপাথাড়ি তার ঠোঁটে, গলায়, নাকে, গালে চুমু দিতে শুরু করলো। অরিন সর্বস্ব শক্তি দিয়েও ইলহানকে থামানোর চেষ্টায় ব্যর্থ। কিন্তু সে হার মানলো না। মনের মধ্যে অরিনের যে কঠিন অবরোধ চলছে তার ধ্বংসাবস্থা সামান্য আদর দিয়ে মেটানো সম্ভব না। অরিন শারিরীক চাহিদার কাঙালী না। ভালোবাসার কাঙালী সে। যে স্পর্শ ভালোবাসাহীন সেই স্পর্শ তার জন্য মৃত্যু সমতুল্য। অরিন কোনোভাবেই ইলহানকে থামাতে পারলো না। তার হাত দুটো পেছন দিকে ইলহান শক্ত করে চেপে রেখেছে। অরিন হাত নাড়াতে পারছে না। নয়তো এতোক্ষণে অনেকগুলো চড়, খামচি, ঘুষি দিয়ে ফেলতো। ইলহান একহাতে অরিনের দুই হাত চেপে রেখে অন্য হাত দিয়ে যখন কামিজের বোতাম খুলতে যাচ্ছিল তখনি অরিন হাঁটু দিয়ে ইলহানের বিশেষ জায়গায় সজোরে আঘাত করলো। ইলহান ‘আউচ’ এর মতো শব্দ করে চোখমুখ খিচে অরিনকে ছেড়ে দিল। ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলো। অরিন বিছানা থেকে নেমে চিৎকার দিয়ে বললো,
” নিষেধ করলে বুঝো না? নো মিনস নো! যে ব্যাপারে আমি একবার না করে দিয়েছি সেই ব্যাপারে আমার সাথে জোর খাটাতে আসলে তার পরিণতি এমনি হবে।”
চলবে
-Sidratul Muntaz