#রঙ_বেরঙের_খেলা
#আলিশা
#বোনাস_পার্ট
— কত টাকা লাগবে বাপ?
ফারজানা বেগম ব্যাগ হাতড়াতে হাতড়াতে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বললেন। সভ্য তার মোটা নয় পুরু নয় এমন সুন্দর ওষ্ঠাধর উল্টিয়ে ক্ষণিক ভেবে বলল
— চল্লিশ দিয়েই পার করা যাবে।
ফারজানা বেগম ব্যাগ থেকে একটা চাবি বের করে ছেলের হাতে দিতে দিতে বললেন
— আমার ঘরের ড্রেসিন টেবিলের ছোট ড্রয়ারে আছে। ওখান থেকে নিয়ে নিস। আর হ্যা, ফোন ভাঙলো কিভাবে?
সভ্য নিরদ্বিধায় বলে দিলো
— সাবিহা দেওয়ালে ছুঁড়ে মেরেছিল।
ফারজানা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। হুট করে ব্যাস্ত মুখ ভঙ্গিতে নেমে এলো চিন্তার গাঢ় ছায়া।
— তুই কি চাস সাবিহার সাথে সংসার করতে?
সভ্য মায়ের কথায় প্রচন্ড গম্ভীর হয়ে গেলো। হাতের চাবিটা এহাত হতে ওহাতে মনোযোগ সহকারে স্থানান্তর করতে করতে বলল
— জানি না মা।
কথাটা বলে সভ্য মায়ের সম্মুখ হতে চলে এলো। ফারজানা বেগমকে আর এ বিষয় এগিয়ে নিয়ে যেতে দিলেন না। সে চায় সাবিহাকে জ্বালাতে। হৃদয় পুড়িয়ে খাঁক করে দিতে। সাবিহার মুখ থেকে শুনতে চায়
” আমার আপনাকে চাই সভ্য ভাই”
ভাবতে গিয়ে সভ্যর বুক চিঁড়ে এক দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। গত রাতের অমানবিক আচরের জন্য সে কখনো নুইয়ে পরছে তো কখনো জেগে উঠছে। ক’বার মেজাজ ঠিক রাখা যায়? সভ্যর রাগ বরাবরই উঁচু। এক চিপা, দুই চিপা, তিন চিপায় তো লেবুও তিতা হয়। আর সে তো মানুষ। অহরহ বার নিজের মাকে নিয়ে অপমান বাণী শুনতে কষ্ট হয় সভ্যর। সাবিহা তো পারতো রূপের অহংকার না করে সভ্যকে মেনে নিতে। সুখী একটা দম্পত্য জীবন তারাও পেতো। কিন্তু সাবিহা তা করলো না। উল্টো অপমান করতে লাগলো সীমা ছেড়ে। হয়তোবা সভ্য এবারও রাগে ভুল কিছুই করেছে। তবে তার মন বলে করা উচিত ছিল। সে যোগ্য হবে ঠিকই। অন্য ভাবেও হয়তো সাবিহাকে অপমানের পাল্টা জবাবা দিতে পারতো। কিন্তু সাবিহাকে জ্বালাতে পারতো না। সাবিহাকে নিজের মায়ায় বাঁধতে পারতো না। সেসময় সাবিহা এসে কখনো বলবে না তার সভ্যকে চাই। সে অন্য কাউকে জীবন সাজাতে ব্যাস্ত হতো। ভাবনা এখানেই সমাপ্তি করলো সভ্য। তবে নিয়তি হয়তো এখানে সমাপ্ত করেনি। হয়তো সে সভ্যর ভুলকে ভুল করে দেবে। নয়তো এই ভুলকে টেনে এনে কাল করে দাঁড় করিয়ে দেবে সামনের দিনগুলোতে।
.
রাত অনেক হয়ে এলো। শহর জুড়ে তবুও ব্যাস্ততা। মোবারক হোসেন মেয়ের বিশাল বড় বেলকনিতে দাড়িয়ে আছেন। চোখ ঘুরিয়ে দেখছেন মেয়ের রুমটা। এখানে ওখানে শুধু সবুজ রঙের সমাহার। টবের মেলা মেয়ের ঘরে। এমনকি তার মেয়ের বিছানার পেছনের দেয়ালটা পর্যন্ত সবুজ কার্পেট দিয়ে মোড়ানো। হাসলেন মোবারক হোসেন। মেয়ে যেন অতি দ্রুতই বড় হয়ে গেছে। এখন তার জন্য শাহজাদা খুঁজতে হবে। ভাবতেই ঠোঁটে হাসি আর বুকে বয়াথা এসে হানা দেয়। মা মরা মেয়েটা বাবার ব্যাস্ততা দেখতে দেখতে বড় হলো। কখনো অভিযোগ পর্যন্ত করলো না। বলল না
” বাবা তুমি আমায় একটুও আদর করো না। আমার জন্য তোমার সময়ই হয় না”
— বাবা, তুমি আমায় এতো আদর কেন করো? এতো ব্যাস্ত থেকেও আমার জন্য তুমি সময় ঠিকই বের করো।
সুস্মিতার হাসি মুখের কন্ঠ। ভাবনার মাঝে এমন কথা শুনে একটুও চমকালেন না মোবারক হোসেন। বরং হেসে উঠলেন। বেলকনি হতে ঘরে প্রবেশ করতে করতে বললেন
— কিভাবে বুঝিস তুই? আমার ভাবনা গুলো খুব বুঝিস।
সুষ্মিতা ভেজা মুখে তোয়ালে চেপে বলল
— তুমি তো আমার ঘরে আসলে এটাই চিন্তা করো। তুমি আমায় সময় দিতে পারো না, আমি অনেক ভালো, অভিযোগ করি না।
— আমার মার্জিয়া যে আসলেই ভালো।
সুষ্মিতা হাসলো। হাতের তোয়ালে বিছানার এক কোণে রাখতে গিয়ে নজরে এলো তার ফেন। উৎফুল্ল মনে সে বাবাকে বলল
— বাবা তুমি ফোন এনেছো? তাহলে তো সারপ্রাইজ দিতেই হয় তোমাকে।
— হুম কি সারপ্রাইজ?
— তার আগে একটা কথা বাবা। তুমি আমাকে সুষ্মিতা বলে ডাকো না কেন?
— এ কথা তো তুমি জানো। সুষ্মিতা নামটা তোমার মা রেখেছিল। সুষ্মিতা ডাকতে গেলে তোমার মায়ের কথা মনে পরে।
— আচ্ছা। তাহলে আমি শুধুই মার্জিয়া। সুষ্মিতা নয়। এবার শোন, তোমার সুন্দর চোখের হিরো পেয়ে গেছি বাবা। আজ রাজশাহীতে গিয়েছিলাম ছোট খালা মণির কাছে। তনু আবার কলেজে ছিল। ওকে রিসিভ করতে গিয়ে হিরোর সাথে দেখা হয়ে গেছে।
মোবারক হোসেন মেয়ের কথায় বিস্মিত ও আনন্দিত। আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলেন
— হাইট কেমন? পাঁচ ফুট সাতের বেশি হবে তো? কি করে ছেলে?
— কি করে তা জানি না বাবা। তবে অনেক বেশি স্মার্ট। চোখ গুলো সত্যিই দারুণ বাবা। অশোকের পুত্র কুনালের মতো হবে মনে হয়। আর হাইট পাঁচ ফুট নয়ের মতো হবে। এরচেয়ে বেশিও হতে পারে কিন্তু কম হবে না। কিন্তু গায়ের রংটা মলিন বাবা।
মোবারক হোসেন মেয়ের কথার পিঠে বললেন
— গায়ের রং কোনো ফ্যাক্ট নয়। স্মার্ট হলে সবাইকে সুন্দর লাগে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাই আসল। আর মিডিয়া জগতে আসলে কালো মানুষ সামা হয়ে যায় আর সামা মানুষ ফর্সা হয়ে যায় মা।
মার্জিয়া হাসলো। ভাবলো কিছু একটু সময় নিয়ে। তারপর বলল
— সে কোনো মডেল নয় মনে হয়। মডেল না হলে, অভিজ্ঞতা না থাকলে তো হুট করে তাকে সিনেমায় তোলা যাবে না তাই না বাবা?
— হুম।
— আমি তো তাকে চিনিও না বাবা। তুমি না হয় তার আশা ছেড়ে দাও। অন্য কাউকে খোঁজো। সে নিজেও মিডিয়া জগৎ পছন্দ করে কিনা সেটাও একটা ব্যাপার।
মোবারক হোসেন সায় জানালেন মেয়ের কথায়। এক কথা দু কথা বলতে বলতে তারা প্রসঙ্গ পাল্টে নিলো। মেতে উঠলো খোশগল্পে।
.
বড্ড বেশিই ব্যাস্ত সভ্য। জিম করা, রুটিন মাফিক খাওয়া, বড় বড় মডেলদের সম্পর্কে স্টাডি করতে গিয়ে তার দম ফেলবার সময় হচ্ছে না। সারাক্ষণ মাথার মধ্যে জেদ চেপে থাকে লক্ষ্যে পৌঁছানোর। আজ পনেরো হয়ে যাচ্ছে। ছোটাছুটি, দৌড় ঝাপের উপর আছে সে। এক বন্ধুর সাহায্যে বহু কষ্টে সাক্ষাৎ করা হয়েছিলো এক কোম্পানির সাথে। পত্রিকায় ছবি ছাপাবে তারা ছেলেদের পোষাক নিয়ে। সভ্য যোগাযোগ করলো। বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে ঠাঁই হয়েছে তার। দশ দিন হলো প্রচেষ্টা করে, পরিশ্রম করে সিলেক্ট হয়েছে। কাল তার যথাসময়ে যেতে হবে তাদের কাছে। ভালোয় ভালোয় সব হলেই হয়। এরমাঝে সাবিহার সাথে আর কোনো প্রকার যোগাযোগ হয়নি তার। সাবিহার মা বাবা সভ্যর মায়ের সাথে অবশ্য মেয়ে আর মেয়ের জামাইয়ের বিষয়ে কথা চালিয়ে যাচ্ছে। ভাঙা ভাঙা দু’জনের অবস্থা। কেউ কারো ধার ধারছে না। তারা চিন্তিত।
#রঙ_বেরঙের_খেলা
#আলিশা
#পর্ব_৬
ভাগ্য বুঝি সৌভাগ্য হতে যাচ্ছে সভ্যর। ফটোশুটটা দারুণ ভাবে পার হলো। সভ্যর মনোযোগ ছিল একেবারে ষোল আনাই। বেশ খুশি সকলে। ফ্যাশন মডেলটা যেহেতু প্রথম পদক্ষেপেই চমৎকার হলো। সুন্দর ভাবে ক্যামেরায় ফুটে উঠলো তার তীক্ষ্ণ, আকর্ষণীয় চোখ মুখ। তখন আর দর কমবে কি ধেই ধেই করে বেড়ে গেলো। বরং ভয়ংকর আনন্দের বিষয় অফার পাচ্ছে সভ্য এই মুহূর্তে এক ডিরেক্টর থেকে। ব্যাস্ত মাঝ বয়সী লোকটা এক খোলা মাঠেই কাজের ফাঁকে এসেছেন সভ্যর সাথে কথা বলতে। সভ্যও মাত্র ফটোশুট সমাপ্ত করেছে তিনিও মাত্র লান্সের জন্য বিরতি নিয়েছেন।
— তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। হাইট পারফেক্ট। দেহের গড়ন সুন্দর। শেষ মুহূর্তে যে ক্যামেরার সামনে হাসিটা দিলা ওটা ভুবন ভুলানো ছিল। তোমায় নিয়ে টিসিভি মডেল করতে চাই আমি।
সভ্যর বুকটা ধুকপুক করছে। সম্মুখের ব্যাস্ত মানুষটার ব্যাস্ত ভঙ্গির কথায় সে হঠাৎ দিশেহারা। যেন সবই স্বপ্ন স্বপ্ন। বেশ নাম যশের ডিরেক্টর আজগর আলী। গত পনেরো দিনে মিডিয়া জগৎ নিয়ে করা স্টাডি গুলো থেকে এটাই জানা হয়েছে। সভ্যর গলা শুকিয়ে আসছে হঠাৎ। আশ্চর্য? মাত্র তো সফলতার পথ খুঁজে পেলো। হাঁটতে হবে এখনো অনেক। এতো অপ্রস্তুত ভাব তো কিছুতেই কাম্য নয়!
— জ্বি স্যার আমি আগ্রহী।
ভেতরে চাপা উচ্ছাসের হাত পা বেঁধে রেখে সহজ গলায় বলল সভ্য। কোথাও কেউ বলেছে, সফল হওয়ার আগে একজন সফল মানুষের মতো আচরণ করা জরুরি।
— ওকে তুমি আমার এই কার্ড টা রাখো। হ্যা তোমার সাথে খুব শীঘ্রি আমার আবার যোগাযোগ হবে। ততদিনে তুমি চেঞ্জ করো নিজেকে। ফটোশুট চালিয়ে যাও।
কথাটা বলেই অস্থায়ী গড়া ছাউনির নিচ হতে উঠে পরলেন আজগর আলী। চেয়ার ছেড়ে দুপা এগিয়েই কাউকে হাঁক ছেড়ে বললেন
— রায়হান, আমাদের নিউ মডেল হতে যাচ্ছে সে। তাকে তোমার মূল্যবান জ্ঞান গুলো দান করে যাও।
সামান্য মশকরা মিশ্রিত কথা ছিল ডিরেক্টরের। সভ্য লাল, সাদা কাপড়ের বিড়াট ছাতার নিচেই বসে রইলো। একটু পর দেখা পেলো সে কাঙ্ক্ষিত রায়হানের। বয়সে সভ্যর সমবয়সী। ছেলেটা এগিয়ে এসেই মুচকি হাসি দিয়ে হ্যান্ডশেক করে বসে পরলো সভ্যর বিপরীতের একটা চেয়ারে। সুদর্শন যুবকটা প্রথমেই কথা আরম্ভ করলো প্রশ্ন দিয়ে।
— নাম কি আপনার?
সভ্য ঠোঁটে চমৎকার একটা হাসি ঝুলিয়ে বলল
— সাজিদ আহমেদ সভ্য।
— একদিনে ফটোশুট করতে এসেই সবার নজরে পরে গেছেন। অনেক বেশি সেনসিটিভ হয়ে কাজ করছেন?
সভ্য অপ্রস্তুত হাসলো এবার। বলে উঠলো
— ট্রাই করছি।
— ভালো ডিরেক্টরের নজরে পরেছেন। একবার যাকে ধরে তার কপাল খুলে যায়।
সভ্য কিছু বলল না। তার অস্বস্তি হচ্ছে। ছেলেটা অনিমেষ ওভাবে তাকিয়ে কি দেখছে? মাঝে মাঝে পায়ের দিকেও তাকাচ্ছে। আবার কখনো মাথায়, চোখে, হাতে, গলায়, বুকে। উফ! সভ্য দরদর করে ঘেমে উঠলো। তবে এটা নিশ্চিত সে, রায়হান নামের ছেলেটা তার খুঁত ধরতে পারবে না। সভ্যর মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সে ফিটফাট করেছে। জানা আছে, মডেলিং অর্থ, সবকিছু ঝকঝকে, ফিটফাট।
.
পরদিন দুপুর বেলা। সভ্য নিজের ছবি নিজে দেখলো পত্রিকায়। মনটা তার ততটা খুশি হতে পারলো না। ফটো নিয়ে মনে জরো হলো খুঁত খুঁত ভাব। মন বলে, চোখের দৃষ্টি আরো গাঢ় করা উচিত ছিল। হ্যা ঠোঁটের হাসিটা মনে হয় আরো একটু প্রশস্ত করলে চমৎকার হতো। নিজের স্বভাব বশত সে অযথাই ডুবে গেলো ডিপ্রেশনে। মুখটা শুকিয়ে গেলো। এখন একটু মা পাশে থাকলে ভালো হতো। কিন্তু তা তো হবার নয়। সে যে মাকে ছেড়ে ঢাকায় এসেছে। ভাবনার মাঝে পত্রিকা ছেড়ে সভ্য ফোন হাতে নিলো। মা’কে ফোন করার ইচ্ছে হলো। বলতে মন চাইলো মাকে
” পত্রিকায় আমি মডেল হিসেবে উঠেছি মা। দেখো তো কেমন লাগছে? আমার কাছে ভালো দেখাচ্ছে না। মনে হয় আরো সেনসেটিভ থাকা উচিত ছিল আমার। এরকম হাবভাব দিয়ে মনে হয় হিরো হওয়া যাবে না।”
কিন্তু সভ্য বলতে পারবে না। আড়ষ্টতা কাজ করবে তার মাঝে। সভ্য ফোন রেখে দিলো। এগিয়ে গেলো সে আয়নার নিকট। গতকাল রায়হান নামের ছেলেটা বলল সভ্যর মেদ বাড়ার আশঙ্কা আছে। সাবধান খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে। সফট ড্রিংকস নাকি একেবারেই খাওয়া যাবে না। সকালে শুধু ফলমূল খেয়ে নিতে হবে। সভ্যর চুলের কাটিং পাল্টাতে হবে। ফেস প্যাক লাগাতে হবে সপ্তাহে দু’বার। স্ক্রাব করতে হবে সাতদিনে একদিন। আরো অনেক অনেক কথা বলেছে ছেলেটা। মোটামুটি ধাঁচে র একটা রুটিন পড়িয়ে দিয়েছে সভ্যকে। সভ্যর দশা ওসময় ছিল রফাদফা। শুনে তার মাথা ঘুরে যায় যায় অবস্থা। তখন তার সম্মুখে যেন সাদা বড় পর্দায় ভেসে উঠেছিল এমন এক সভ্য যার মুখ ভর্তি সাদা ক্রিমে, চোখ বন্ধ শশার ছোয়ায়, গলার উপর দিয়ে তোয়ালে দেওয়া। ইশ! কি বেহাল দশা তার। মেয়েদের মতো কি অবশেষে চোখ বন্ধ করে রূপ চর্চার ধ্যানে বসতে হবে? ভাবতেই সভ্যর মুখ কুঁচকে এলো। মনে জায়গা নিলো ঝাঁক ঝাঁক অসহায়ত্ব।
এই অসহায়ত্ব যখন গাঢ় হতে যাচ্ছিলো ঠিক তখন বাঁধা দিলো সভ্যর মুঠো ফোন। আওয়াজ ছেড়ে বেজে উঠলো সে। সভ্য পায়ের পাতা অব্দি লম্বাটে ড্রেসিন হতে চলে এলো ফোনের নিকট। বিছানায় রাখা ছিল ফোন। উবু হয়ে দেখতে চাইলো সে কোন ব্যাক্তি হঠাৎ তাকে আহ্বান করলো। কিন্তু বোঝা গেলো না। আননোন নাম্বার। কুঁচকানো কপালে ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করা হলো কল। কানের সান্নিধ্যে পোঁছানোর আগেই অনাকাঙ্ক্ষিত বাঁক চমকে দিলো সভ্যকে।
— মডেল হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করার আগে একবার অমাবস্যার মতো চেহারার দিকে তাকানো উচিত ছিল।
বড্ড বেশিই ভারী, বড্ড বেশিই অবজ্ঞার বাক সাবিহার। সভ্য ঝট করে স্তব্ধ হয়ে গেলো। কর্ণকুহরে সাবিহার কথা পৌঁছানো মাত্র মনে হলো দুনিয়া ওলট-পালট হয়ে গেলো। আবারও অপমান? গলা ধরে এলো সভ্যর। সাবিহা বলেই যাচ্ছে
— কালো শরীরে সাদা শার্ট লাগিয়েছেন। বিশ্বাস করেন সভ্য ভাই আস্ত ভুতের মতো লাগছে। আমি তো প্রথমে দেখে ভয়ই পেয়েছি। পেপার পড়াও যাবে না আজকাল দেখছি।
— সাবিহা…
শক্ত হতে গিয়ে ভেঙে গেলো গলা। সভ্য ঠোঁট কামড়ে ধরলো। আজ সহ্য হচ্ছে না। চোখ নামিয়ে দিয়েছে জল। বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। হুট করে ফোন কেটে দিলো সভ্য। সাবিহা আজ এই কথাগুলো কিভাবে বলল? বিবেকে বাঁধলো না? সে কি জানে না, কানাকে কানা বলতে নেই। কষ্ট হয়। সভ্যরও অকুলান কষ্ট হচ্ছে। অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে। আজ মনে হচ্ছে পৃথিবীতে এসে বড্ড বেশি ভুল হয়ে গেছে। বিদায়ের জন্য সভ্য যেন এখন প্রহর গোণা শুরু করলো। চোখ বেয়ে কতই না জল পরছে। বুকে কি যেন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে শেষ করে দিচ্ছে। কানে সাবিহার কথার রেশ গেঁথে আছে। সভ্য পাথর হয়ে গেলো। কাল একটা ফটোশুট আছে। মুখে ফসপ্যাক লাগানোর কথা ছিল। আরো কত কি যেন করার কথা ভেবেছিল সভ্য? সেসবের কিছুই হবে না আজ। শুধু অভিযোগ উঠবে গায়ের রং নিয়ে।
চলবে…
(