রৌদ্র কুয়াশা পর্ব ১

#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ১

-আমি একজন বার ড্যান্সার।আপনার মতো এতো নামকরা বিজনেসম্যান এটা জেনেও কেন আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন?
-সেটা জেনে তুমি কি করবে?তোমার প্রয়োজন টাকার।আর আমার প্রয়োজন অন্য কিছুর।
-কি সেই প্রয়োজন?

সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সেটাকে দু ঠোটের মাঝখান থেকে নামিয়ে টাইলসের ফ্লোরে ফেলে নিজের জুতো দিয়ে পিষে দিল লোকটা।তারপর মাথা তুলে তাকালো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লেহেঙ্গা পরিহিত মেয়েটির দিকে।

-আপনার নাম কি?
-নুসাইবা নুর ইলা।
-ইলা নামের অর্থ জানেন?
-পানি।পানির সমার্থক শব্দ।
-পানির কাজ কি জানেন?তৃষ্ণা মেটানো।আমার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য আমার আপনাকে প্রয়োজন।তার জন্য যতো টাকা দরকার আমি দেব আপনাকে।টাকার চাদরে মুড়িয়ে রাখব।
-আপনি এতো টা নিশ্চিত কিভাবে হচ্ছেন যে আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজী হব!
-টাকার কাছে সবাই হেরে যায়।আর হ্যাঁ শুনেছি আপনার পরিবারে আপনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বারে বারে ড্যান্স করে টাকা রোজগার করেন।
-আপনি কিভাবে জানলেন?
-বারের মালিক বলেছে।আর হ্যাঁ আপনার পরিবার তো এটাও জানেনা আপনি কোথ থেকে টাকা রোজগার করেন।আর তারা জানুক এটাও নিশ্চয়ই আপনি চাইবেন না।

লোকটার ঠান্ডা গলার এই কথাতে ইলা আরো ভয় পেয়ে গেল।এ যেন ঝড়ের পূর্বাভাস।সরারসরি থ্রেট যেটাকে বলে।

-শুনুন,আমি এক কথার মানুষ।বেশি কথা পেচাতে পছন্দ করিনা।মাহির আশহাব সোজা আঙুলে ঘি ওঠানোর থেকে আঙুল বেকিয়ে কাজ করতে বেশি পছন্দ করে।

মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে কোর্ট টা কাঁধের ওপর নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো মাহির।

ইলা এখনো নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।

পরিবারের ছোট মেয়ে ইলা।বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে পুরো পরিবারের দায়িত্ব না চাইতেও কাধে তুলে নিতে হয়েছে তাকে।তারপর আবার কাটা গায়ে নুনের ছিটে।ইলার বড় বোন মিলা হঠাৎ করেই এক্সিডেন্ট করে।তার শরীরের ডান সাইড প্যারালাইজড।বোনের স্বামী ও তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে।বোনের পাঁচ বছরের মেয়ে,অসুস্থ বোন তার ওপর অসুস্থ মা তিনজনের দায়ভার কাঁধে তার।

এতোদিন বারে বারে ড্যান্স করে রোজগার করে সংসার চালাতো।কিন্তু হুট করে আজ নামকরা শিল্পপতির এমন প্রস্তাবে যথেষ্ট চমকে গেছে ইলা।

-দাদীমা আমি কোনো ভুল করছি নাতো?

বৃদ্ধা আদীবা বেগমের কোলে মাথা রেখে তার হুইলচেয়ারের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে মাহির।

-দাদীমা আমি সুখ খুঁজতে বেরিয়ে পড়েছি।আমি আর পারছি না দাদীমা।আমি যে বড্ড অসহায় হয়ে পড়েছি।
-আমার প্রিন্স এসব বললে কি আমার ভালো লাগে।তুমি কোনো ভুল করোনি সোনা।আর কে বলেছে তুমি অসহায়!আমি আছি তো ।
-বাবার জেদে সব শেষ হয়ে গেল আমার।আজ আমার মা ও আমার কাছে নেই।তার সংসারে সে এতোটাই ব্যস্ত একবার ও তার মনে পড়ে না আমার কথা।
-দোষ তার নয় মাহির।তালাক তোমার বাবা ওকে দিয়েছিল।ও তো নিরুপায় ছিল।তোর মায়ের মতো মেয়ের সাথেই বনিয়ে খেতে পারলো না আলফাজ।এসব কথা বাদ দেও।ঘরে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে এসো।আমি আফরিনকে খাবার দিতে বলছি।
-মাইশা কি এখনো জেগে আছে?
-আছে হয়তো।দেখ আবার এই রাত বিরেতে কোথায় যায়।কবে যে ও যাবে বাড়ি থেকে!
-তুমি টেবিলে বসো।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
-আচ্ছা সোনা।

হুইলচেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে গেলেন আদীবা বেগম।

-আজকাল তুমি বড্ড বেশি সাজগোজ করো।ফোন নিয়েই পড়ে থাকো।আমাকে তো তোমার চোখেই পড়ে না।

ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে মাহিরকে দেখে মুচকি হাসি দিল মাইশা।কানের দুলটা রেখে টুল ছেড়ে উঠে দাড়ালো।

-ওহ মাই ডিয়ার হাসবেন্ড।তুমি চলে এসেছো!আচ্ছা দেখোতো আমাকে কেমন লাগছে?
-তুমি যেমন সুন্দর তার থেকে আরো বেশী সুন্দর লাগছে।
-থ্যাংক ইউ।
-এতো কার জন্য সেজেছো?

মাহিরের কথা শুনে মাহিরের দিকে এগিয়ে গিয়ে মাহিরের গলাতে নিজের দু হাত রাখলো মাইশা।

-আজ এতো রোম্যান্টিক মুডে আছো যে?
-থাকবো না।আমার একমাত্র হাসবেন্ড এর জন্য তো আর সাজিনি।হাহ।পুরুষত্ব হীন লোক কোথাকার।নিজের স্ত্রী কে বাচ্চা দেওয়ার ক্ষমতা নেই তার জন্য আবার সাজতে যাব!এসব আলগা পিরিত আমার দেখাবার সময় নেই।

মাহির কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে নিজের মতো বেরিয়ে গেল মাইশা।

এদিকে মাহিরের চোখের কোনে পানি টলমল করছে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here