রৌদ্র কুয়াশা পর্ব ৩৮

#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৩৮

১০৫

চোখ খুলেই অনু নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো।পাশে তাকিয়ে দেখে তুলি বাবু কোলে নিয়ে বসে আছে।অনু নড়েচড়ে উঠে বসতে গেলে তুলি বাধা দিল।

-থাক অনু।শুয়ে থাকো।
-আপু আমি ঠিকাছি। একটু উঠে বসি।
-আচ্ছা।একা পারবে?
-হুম।

অনু একটা মাথার বালিশ খাটের সাথে লাগিয়ে পেছনে হেলান দিয়ে বসলো।

-আমাকে কে এনেছে আপু?
-ভাইয়া এনেছে।আচ্ছা অনু কি হয়েছিল হঠাৎ বলোতো।ডাক্তার বললো তুমি হয়তো ভয় পেয়েছো কোনো কিছুতে।

ভয়ের কথা শুনে অনুর গলা শুকিয়ে আসছে।বিছানার চাদর হাত দিয়ে খামচে ধরলো অনু।আবার কাঁপতে শুরু করলো।এর মধ্যে আরিয়ান ঘরে এলো।

-তুলি আসব?
-আয় ভাইয়া।

আরিয়ান ঘরে ঢুকে বিছানায় এক নজর চোখ বুলিয়ে নিল।অনু কে বসে থাকতে দেখে আরিয়ানের ভেতর থেকে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বেড়িয়ে আসলো।আরিয়ান এগিয়ে গিয়ে চেয়ার টেনে খাটের সাথে বসলো।

-অনু।
-হুম।
-কি হয়েছিল আপনার?শরীর খারাপ লাগছিল?
-উহুম।
-তাহলে?

আরিয়ানের কথা শুনে অনু ছলছল চোখে আরিয়ানের দিকে তাকালো।অনু ছলছল চোখ গুলো আরিয়ানের ভেতর টাতে যেন আগুন জ্বালিয়ে দিল।

-আরিয়ান সাহেব আপনি আমাকে একটু আশ্রয় দিন।আমাকে বের করে দেবেন না।আমি ওখানে যাব না।

অনু কথা বলতে বলতে কেঁদেই দিল।অনুর আচরণ অবাক করে দিল তুলি আর আরিয়ান কে।

-অনু কি হয়েছে?বলুন আমাকে?আমি কেন আপনাকে বের করে দিতে যাব?কি হয়েছে বলুন?
-আরিয়ান সাহেব উনি এখানে ও চলে এসেছেন।আমার খোঁজ ও পেয়ে গেছেন।আমাকে আবার নিয়ে যাবেন ওনার কাছে।আমি যাব না।আমি যাব না আরিয়ান সাহেব।
-আপনি কার কথা বলছেন অনু?
-নিবিড়।

অনুর কথা শুনে আরিয়ান চমকে গেল।তুলির ও চোখ বড় বড় হয়ে গেল।

-কিহ!কি বলছেন আপনি?আপনার স্বামী এখানে!
-হ্যা।আজ দোকানে আপনারা তখন যাওয়ার পর যেই লোকটা এসেছিল বয়স্কদের কালেকশন দেখতে উনি নিবিড় ছিল আরিয়ান সাহেব।
-অনু আপনার হয়তো ভুল হয়েছে।
-না আরিয়ান সাহেব।কখনো না।এই মানুষটাকে দেখতে আমি ভুল করব?এর গলা চিনতে পারব না!আরিয়ান সাহেব ওনার প্রত্যেকটি মারের দাগ আজ ও কালশিটে হয়ে আছে।আমাকে মনে করিয়ে দিতে তার দেওয়া কষ্ট গুলো।আরিয়ান সাহেব উনি নিয়ে যাবে আমাকে।আমি যাব না।
-অনু শান্ত হোন।আমি দেখছি।আপনি এতো চিন্তা করবেন না।আমি আছি তো?কি আমাকে ভরসা করেন না?

অনু চোখ মুছে আরিয়ানের দিকে তাকালো।কিন্তু মুখে কিছু বললো না।অনুর চোখের ভাষায় আরিয়ানের কাছে যথেষ্ট ছিল।অনুর চোখে ভরসার আরেক নাম আরিয়ান এটা আরিয়ান এতদিনে বুঝে গেছে।তবে এই ভরসা তে কোনো আকাঙ্ক্ষা, ভালোবাসা নেই।আছে বিশ্বাস,সম্মান।

-তুলি আমি টেবিলে খাবার রেডি করছি।তোরা দুজন খেতে আয়।
-আরে তুই কেন রেডি করবি?আমি করছি।
-না।এ কদিন করলে আহামরি কিছু হবে না।
-ভাইয়া আমি তো ভাত বসাতে ভুলে গেছি।
-আমি বসিয়েছিলাম।চল।
-হুম।তুই যা আমরা আসছি।

আরিয়ান উঠে দাড়িয়ে দরজার কাছে গিয়ে থেমে গেল।

-অনু।আপনাকে যেতে দেওয়ার হলে কবেই দিতাম,মিছি মিছি একটা বিশেষ খাঁচায় বন্দী করতাম না।এই খাচাটা এই চারটা দেওয়াল না।অদৃশ্য দেওয়াল।অদৃশ্য খাচা।সেটাকে চোখ দিয়ে দেখা যায়না।মন থেকে অনুভব করতে হয়।আপনি চেষ্টা করলেও এখান থেকে মুক্তি পাবেন না।

আরিয়ান দরজা লাগিয়ে চলে গেল।অনু আরিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।এ কেমন খাচা যার থেকে অনু মুক্তি পাবে না?অনু ভেবেই পারছে না।

তুলি আরিয়ানের কথা শুনে অনুর দিকে এক পলক তাকালো।

-আমার ধারনা তাহলে ঠিক।ভাইয়ার আচরণ সুবিধার না।কিন্ত ভাইয়া অনুর ইচ্ছে থাকলেও ওকে মুক্ত হতে দেবেনা এমন কেন বললো?ভাইয়া বেশি গভীরে ভেবে ফেলছে।এমন না হয় ভাইয়ার এই গভীর চিন্তার অপূর্ণতা ওকেই শেষ করে দেয়।

তুলি মনে মনে কথা গুলো ভেবে গেলো।কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তুলির।

১০৬

মাহির সোফায় বসে আছে।দু হাঁটুর পর দু হাতের কনুই ভর করে মুখে হাত রেখে ইলার দিকে তাকিয়ে আছে। ইলা মাহিরের সামনে অপরাধীর মতো দাড়িয়ে আছে।মাথা নিচু করে দাড়িয়ে কখনো শাড়ির আঁচল নিয়ে খেলছে।কখনো নখ কাটছে।আবার মাহিরের এতো বকাবকির মাঝে পিটপিট করে একটু তাকিয়ে নিচ্ছে।

-কি হলো?উওর দেও?
-,,,,,,।
-ইলা!

মাহির বেশ জোরেই ইলার নাম ধরে ডাকলো। ইলা একটু কেঁপে উঠলো।

-কি হয়েছে?
-আমি কিছু জিজ্ঞাসা করছি?
-শুনছি তো।
-শুনছো তো উওর দেও?
-ভুল হয়ে গেছে।সরি।
-ইলা সব সময় তোমার এই ছেলেমানুষি গুলো ভালো লাগেনা।কি শুরু করেছো তুমি?তোমাকে বার বার বলেছি কেউ কলিংবেল বাজালেই দরজা খুলবে না।দরজায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে।আমি আসলে তো নিজেই না হয় ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ভেতরে আসতাম।আর ওটা কি আমার আসার সময়?কতো করে বলেছি তোমাকে না হয় একটু কষ্ট করে ঘরে গিয়ে সিসি টিভির ফুটেজ দেখবে কে এসেছে।তুমি এতোটা কেয়ারলেস কি করে হও ইলা?
-সরি।
-আবার সরি?কিসের সরি হ্যাঁ?আজ যদি তোমার কোনো ক্ষতি হয়ে যেত?তুমি একা একটা লোককে কতক্ষণ ট্যাকেল করতে।ইশতিয়াক না আসলে?
-পারতাম ও না আসলেও।
-পারতে?কিভাবে?রুটির বেলন নিয়ে?তুমি আনতে যেতে যেতে ঐ লোকটা যদি তোমাকেই ধরে ফেলতো?
-আর এমন হবে না।
-তুমি কখনোই আমাকে বোঝার চেষ্টা করোনা ইলা।কখনো না।এত করে বোঝাই তোমাকে।না পড়াশোনা ঠিক মতো করছো না সংসার!
-করছি তো।একটা বাচ্চা এনে দিলে মন দিয়ে সংসার করতাম।
-কি করছো?এই রকম ছেলে মানুষি?আর কি বাচ্চা বাচ্চা করো সব সময়?

মাহির রেগে দাঁড়িয়েই গেল।তেড়ে গিয়ে ইলার দুই বাহু ধরলো।

-মাহির লাগছে আমার।ছাড়ুন।
-কেন এই এক কথা বার বার কানের কাছে বলিস তুই?এই আমি থাক লে তোর হচ্ছে না।সব সময় বাচ্চা বাচ্চা করিস।
-মাহির আপনি এভাবে কেন ব্যবহার করছেন আমার সাথে?
-তাহলে কি করব?ছেলে মানুষির সীমা থাকা দরকার ইলা।তুমি মেরেছো ঐ লোকটাকে।ভালো কথা।সেটা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই আমার।তুমি নিজেই উচিত শিক্ষা দিয়েছো।কিন্তু আমি যে বার বার তোমাকে সাবধানে থাকতে বলি কানে যায়না কথা?
-মাহির বললাম তো ভুল হয়ে গেছে।
-আবার সেই এক কথা।ভুল হয়ে গেছে।আরে আজ যদি তোর কিছু হয়ে যেত না আমার ই যেত সব।ঐ লোকটার কিছুই হতো না।সর্বোচ্চ গেলে জেল খাটতো।আমি কি করতাম?তোকে পেতাম?তোকে যদি মেরে দিত ও?তোর কিছু হলে না তোর মায়ের কিছু যায় আসবে না তোর ঐ স্বার্থপর বোনের।কি না করছিস তুই ওদের জন্য। দেখেছিস একটা খোঁজ নিতে?আজ তোর কিছু হয়ে গেলে আমি শেষ হয়ে যেতাম।আমি মরে যেতাম।আর কারোর কিছু হতো না।বুঝিস না তুই?সব সময় ছেলে মানুষী!

মাহির বেশ শক্ত করে ইলার হাত চেপে ধরেছে।ইলা ব্যথায় কেঁদেই দিয়েছে।ইলা চোখ তুলে তাকালো মাহিরের দিকে।ফর্সা মানুষটা রেগে পুরো লাল হয়ে গেছে।কথা বলতে বলতে কেঁদেই দিয়েছে মাহির।ইলা নিজেও বুঝতে পারছে আজ সত্যি কিছু হলে মাহির ই কষ্ট পেত।সে নিজের দোষে সব সময় মাহিরকে কষ্ট দিয়ে যায়।

-মাহির আর কখনো এমন ভুল করব না।আপনি কাদবেন না।আমাকে এবারের মতো ক্ষমা করে দিন।

ইলা মাহিরকে জড়িয়ে ধরলো।মাহির ও নিজের হাত বাড়িয়ে আকড়ে ধরলো ইলাকে।

-সরি।
-আপনি কেন সরি বলছেন?ভুল আমি করেছি।
-তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি।ক্ষমা করে দেও।রাগ করোনা।
-উহুম।কথায় আছেনা শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।আপনি কিছু ভুল করেন নি।
-ইলা আমার খুব ভয় হয়।খুব।আমার শুধু মনে হচ্ছে তোমাকে হারিয়ে ফেলব আমি।ইলা আমাকে ছেড়ে যেওনা। অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে।তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না ঠিক কতটা সাধনা করতে হয় একটা মানুষ কে শুধু ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়ার জন্য।ইলা যাই হয়ে যাক কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না।
-কি বলছেন আপনি?আমি কেন ছেড়ে যাব?কোথাও যাব না আমার লাল টুকটুকে বরকে ছেড়ে।
-যদি কখনো যাও না দেখতে পাবে তোমাকে ছাড়া দুটো মিনিট আমাকে কোথায় নিয়ে গেছে।দেখবে তুমি আমাকে দেখতে পাবে ঠিকই কিন্ত আমার মাঝে প্রাণ থাকবে না।

মাহিরের কথা শুনে বুকটা ধক করে কেঁপে উঠলো ইলার।মাহিরের বুক থেকে মাথা উঠালো সে।

-মাহির!কি সব কথা বলছেন আপনি?আপনাকে কতবার বলেছি না এসব বলবেন না আমাকে?
-পানিজল একটু তুমি করে বলোনা।খুব কাছের লাগে।আপনি টা যেন দূরে ঠেলে দেয়।
-আজ না।আমার সময় লাগবে।অভ্যাস হয়ে গেছে তো।অন্য এ কদিন বলে বলে চেষ্টা করব।
-এমন না হয় তুমি তুমি করে বলার আগেই আমার থেকে আমি টা ফুরিয়ে যায় চিরতরে।

ইলার বুকের ভেতর যেন ছ্যাত করে উঠলো।ইলা সাথে সাথে জড়িয়ে ধরলো মাহির কে।

-কি হলো?
-মাহির কেন এসব বলেন আপনি?কেন একা হওয়ার কথা বলেন?কষ্ট হয় আমার।
-ইলা।একা থাকার অভ্যেস করে নাও।দেখবে কষ্ট হবেনা।হলেও কম।কাদবে কিন্তু পাথর হবে না।

১০৭

আলমারি থেকে একটার পর একটা শার্ট বের করে আয়নার সামনে নিজেকে দেখছে নিবিড়।

-না এটাও না।এটাও না।এমন একটা শার্ট পড়ে যাব না অনু আমার থেকে চোখ ফেরাতে পারবে না।

সবশেষে সব কিছু ওলট পালট করে নিবিড় ক্রিম কালারের একটা শার্ট ধরলো।

-হ্যাঁ এটাই।গত ঈদে অনু এই শার্ট টা কেনার সময় পছন্দ করেছিল।এটাই পড়ে যাব আমি কাল আমার অনুর কাছে।

“প্রিয়তমা,
এবার মানিব্যাগ থেকে উঠিয়ে বুক পকেটে রাখব তোমায়।প্রস্তুতি নেও।”

চলবে———–

কি একটা লাইক কমেন্টস করা যায়না😒

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here