#শত্রু_শত্রু_খেলা
#পর্ব_২১ (রোমান্টিক পর্ব)
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)
সৌরভ তড়িৎ গিয়ে চৈতন্যহীন প্রিয়াকে তার বলিষ্ঠ বাহুবন্ধনে জড়িয়ে ধরে। অপলক প্রিয়ার মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে। এই প্রথম সে মেয়েটাকে এতটা কাছ থেকে দেখছে। তার কাছে অচেতন প্রিয়াকে রূপকথার এক মোহনীয় অপ্সরীর মতই লাগছিলো। প্রিয়ার এহেন রূপে তার অন্তঃকরণে এক অজ্ঞাত অনূভুতির প্রয়াস হয়। সে জানে না এই অনূভুতির নাম কি? তার সমস্ত কায়া জুড়ে অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে মেয়েটার মধ্যে জাদু আছে। তাকে ছোঁয়ার পর থেকে সে বড্ড বেসামাল হয়ে যাচ্ছে।
দ্রুত চৈতন্যহীন প্রিয়াকে দুই হাত দিয়ে পাজাকোলে করে তার বুকে চেপে ধরে। তারপর প্রিয়ার বাসায় নিয়ে যাই। মারিয়াকে ডাক দেয় সে। মারিয়া দৌড়ে এসে প্রিয়াকে সৌরভের বাহুবন্ধনীতে দেখে তার চক্ষু চড়কগাছ। সে কি বলবে যেনো বাকশূন্য হয়ে আছে। কম্পিত কণ্ঠনালি তার সৌরভকে বলে প্রিয়াকে তার রুমে নিয়ে যেতে।
সৌরভ আর দাঁড়ায় না দ্রুতই প্রিয়াকে তার বিছানায় শুইয়ে দেয়। মারিয়া তার শিয়রে দাঁড়ানো। সৌরভকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে প্রিয়ার? সৌরভ মারিয়াকে সব কিছু খুলে বলে। তবে সৌরভ নিজেও চিন্তিত প্রিয়া বেহুঁশ কেনো হলো? মারিয়া পানি ছিটিয়ে দেয় প্রিয়ার মুখে।
প্রিয়া পিট পিট করে তাকায় মায়ের দিকে। ততক্ষণে সৌরভ রুম ছেড়ে বের হয়ে গেছে। মারিয়া কিছু বলার আগে প্রিয়াই বলে উঠে,
আম্মু আমাদের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ এর ভূত আছে। আমি নিজের চোখে দেখছি।
মারিয়া হতবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মেয়ের আচমকা হলো টা’কি?
_______________________
ভারাক্রান্ত মন নিয়ে সৌরভ তার রুমে আসে। এখনো অজানা তার, প্রিয়া আচম্বিত তাকে দেখে অজ্ঞান কেনো হয়ে গেলো? বিছানায় গা এলিয়ে বসে সে। হঠাৎ তার পাশ থেকে কাপড় খোঁচাখুঁচির শব্দ হয়। শব্দ শুনে সে চকিতে মুখ ঘুরে তাকায়।
গৌরব আলমিরার কাপড়ের ভাজে কিছু একটা খুঁজে যাচ্ছে। সৌরভ ভাইকে এত হন্যে হয়ে কিছু খুঁজতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
ভাই আলমিরায় কি খুঁজো?
গৌরব চিন্তিত হয়ে গম্ভীর গলায় বললো,
“সৌরভ তোর আন্ডারওয়্যার কোথায় রেখেছিস?”
“আমার আন্ডারওয়্যার দিয়ে তুমি কি করবে?”
“আমি তোর থেকে গুনে গুনে ৯ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের বড়। তাই একটু সম্মান দিয়ে কথা বল। তোর বড় ভাই হই। এত প্রশ্ন না করে উত্তর দেয়।
আমি কখন অসম্মান করলাম?
আন্ডারওয়্যার নিশ্চয়ই খাওয়ার জিনিস না পরার জিনিস তাই খুঁজতেছি। এখন বলবি কোথায় রেখেছিস? ”
“তুমি আমার আন্ডারওয়্যার পরবে?”
“কেনো পরলে কি আমার ছোঁয়ায় তোর ইয়ে’টা খসে পড়ে যাবে?”
“ভাই! এসব কি কথাবার্তা? আমি কি নিষেধ করেছি তোমাকে? কিন্তু তোমার জামা কাপড় নিয়ে আসো নি কেনো?”
“দেখ, মানুষ শখ করে দেশ-বিদেশে, পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায় নিজের কার্বন কপিকে খোঁজার জন্য। সেখানে স্বয়ং আমার কার্বন কপি আমার ঘরেই আছে। তাই কষ্ট করে জামা-কাপড় নিয়ে আসার দরকার তো নাই। একটা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ঘুরার কি দরকার বল? শুধু শুধু নিজের কাঁধকে এত কষ্ট দিতে চাই না। বুঝলি!”
“ভাই বিদেশে এতদিন থেকেও তুমি একটুও পরিবর্তন হওনি। কেম্নে সম্ভব?”
“যেভাবে তুইও পরিবর্তন হোস নি সেভাবেই।”
খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে গৌরব তার কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি পেয়ে গেলো। সৌরভের জামা-কাপড় পরে সে বারান্দায় গিয়ে বসে। আচমকা তার চোখ পড়লো পাশের বারান্দার দিকে। সেখানে মেয়ের জামা কাপড় শুকাতে দেয়া আছে। তা দেখে গৌরব ভাইকে ডাকলো। ব্যগ্র কন্ঠে বলল,
“সৌরভ পাশের বারান্দায় কি মেয়ে থাকে?”
সৌরভ ছোট্ট করে জবাব দেয় হুমম, প্রিয়া থাকে।
গৌরব বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে সৌরভের দিকে। ভাবুক হয়ে বলল,
মেয়েটার নাম প্রিয়া। বাহ! দারুণ তো! এটা কাকতালীয় হোক আর ইচ্ছেকৃত ব্যাপার’টা বেশ মজার! একটা মেয়ের বারান্দা তোর বারান্দার সাথে, তা মেয়েটার সাথে ইন্টমিন্টু কিছু চলে।
সৌরভ কোনো প্রতিত্তোর করলো না। তার ভাই ভীষণ ঠোঁটকাটা। কখন কি বেফাঁস বলে দেয় তাই আর দাঁড়ালো না।
সেই সময় প্রিয়া আসলো তোয়ালে দিয়ে মুখ মোছার জন্য। মাত্রই মুখ মুছে সে দাঁড়িয়েছে। আচম্বিত কারো কন্ঠস্বর শুনে থমকালো।
হ্যাই, কিউটিপাই।
প্রিয়া যারপরনাই অবাক। তাকে আবারও এভাবে কথা বলছে। সৌরবিদ্যুত এর মাথার তার কি ছিঁড়ে গেছে নয়তো নির্ঘাত এ লোক পাগল হয়ে গেছে। সে চলে যাওয়ার জন্য উদ্বত হতেই গৌরব বলে উঠল,
এই কিউটিপাই কথা না বলে কই যাও?
প্রিয়া হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার তো চক্ষু কোটর থেকে বের হবার উপক্রম। দাঁত কেলিয়ে হেসে সেও জবাব দেয়,
সৌরবিদ্যুত তো দেখি আজকাল রসিকতাও করে। তা আজকাল গা*জার দাম কি কমে গেছে না’কি ফ্রিতে পাওয়া যায়?
গৌরব হো হো করে হেসে উঠে। বাপ্রে! এ তো দেখি সৌরভের সাথে প্রিয়ার দা-কুমড়া সম্পর্ক। সে হাসি বন্ধই করতে পারছে না। কোনোরকম হাসি চেপে বললো,
আচ্ছা, আমাকে কি সত্যিই গা*জাখোরের মত লাগে। তাহলে একবার জোরে বলো তো।
প্রিয়া কপাল কুঁচকালো। না এখানে থাকা যাবে না। এর মাথা গেছে।
গৌরব হাসতে হাসতে রুমে প্রবেশ করলো। সৌরভ ভাইকে এভাবে হাসতে দেখে বিস্মিত হলো। এভাবে হাসার কি আছে সে বুঝলো না। সে তৈরি হয়ে নিলো কোচিং এর উদ্দেশ্য।
গৌরবও উঠে দাঁড়ালো সেও যাবে ভাইয়ের সাথে। সৌরভ মুচকি হাসলো। ঠিক আছে চলো।
__________________
কলেজ মাঠে বসে চিন্তিত প্রিয়া। রাঢ়ী, লুবনা, নীল, শ্রাবণ তার সম্মুখে বসে আছে। শ্রাবণ ব্যাপক টেনশনে আছে। ফাইনাল পরীক্ষার মাত্র ২০ দিন বাকি আর। সে তো অনেক বইয়ের পাতা এখনো ঠিক করে উল্টাই নাই, দেবে কি পরীক্ষায়? কিন্তু প্রিয়া আছে অন্য চিন্তায় সৌরবিদ্যুত এর আচমকা হয়ছে টা’কি? এত কিউট করে কথা বলছে। কিছু একটা এই ছেলের মাথায় চলছে। তাকে খতিয়ে দেখতে হবে এই ব্যাপার।
রাঢ়ী আজ অন্যমনস্ক। নীল সবাই কে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে ফোঁস করে বলে উঠল,
এই তোদের কি মনোব্রত পালন চলের। কথা কস না কিল্লাই বা*?
রাঢ়ী ভারাক্রান্ত মনে বলল এবার বোধহয় আমি আর বিয়েটা আটকাতে পারবো না আর। এবার এই বিয়ে হয়েই যাবে। ভাইয়ারা পাত্রের কথা শুনেই খুশি হয়ে গেছে। ছেলে না’কি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরিরত। দেশে ছেলে জব করে। স্যালারিও ভালো। মা আর এক ছোট ভাই আছে শুধু। ভাইয়া ছোট পরিবার শুনেই রাজি হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে হয়তো বিয়ের ডেইট পরবে।
প্রিয়াসহ বাকিরা আকাশ থেকে পড়লো। রাঢ়ীর সত্যিই বিয়ে হয়ে যাবে। এই বিয়ে আর আটকানো যাবে না। প্রিয়ার খুব কান্না পেলো। তার বান্ধবীর বিয়ে হয়ে যাবে। সে থাকবে কি করে?
______________________
প্রিয়া কলেজ শেষে দিঘির পাড় ধরে হেটে বাসায় ফিরছিলো। হঠাৎ তার চোখ পড়লো হাস্যরসে মজে থাকা দুই মানব-মানবীর দিকে। সে বিস্মিত হলো শোভাকে একটা ছেলের সাথে এভাবে কথা বলতে দেখে। সে জোরে ডাক দিলো,
শোভা আপু তুমি এখানে কি করছো?
শোভা পুরাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো প্রিয়াকে দেখে। শুকনো ঢোক গিলল সে। তারপরও মুখে লাজুক হাসি। আতংকিত হয়ে প্রিয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ক্ষীণস্বরে বললো,
প্লিজ ভাইয়াকে বলিস না।
___________________
সচরাচর বিকেলে প্রিয়া ছাদে আসে না। কিন্তু আজ কেনো তার যেতে খুব ইচ্ছে করছিলো। তাই নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে ছাদে উঠে আসে।
বাগানের ফুলে সে আলতো হাত ভুলিয়ে দেয়। খুশিতে ঠোঁটের কোণে একটা গান বিড়বিড় করে,
“মনেরই রঙে রাঙাবো, বনেরই ঘুম ভাঙাবো।”
তাই না’কি কিউটিপাই?
প্রিয়া সামনে থাকা গৌরবকে দেখে আতংকিত হয়ে পড়লো। সৌরবিদ্যুৎ এত জলদি কোচিং থেকে চলে এসেছে? সে তো সময় দেখে তারপর ছাদে এসেছে। এই সৌরবিদ্যুত আজকাল হুটহাট কোত্থেকে চলে আসে। অস্থিরতায় তার কপালে ঘাম জমলো। ঘন ঘন নিশ্বাস টানলো সে।
প্রিয়ার এমন অস্থিরতা দেখে গৌরব ভীষণ অবাক হলো। এই মেয়ে তাকে ভয় পাচ্ছে কেনো? সে ব্যগ্রকন্ঠে বলল,
কি হয়েছে কিউটিপাই? তুমি কি ভয় পাচ্ছো আমাকে? কিন্তু কেনো?
প্রিয়া কোনো উত্তর দিলো না। তার মস্তিষ্ক পুরো ফাঁকা হয়ে আছে। এই সৌরবিদ্যুত তাকে ভীষণ জ্বালাচ্ছে। সে কোনো বাক্য বিনিময় না করেই সোজা হাটা ধরলো নিচে নামার জন্য। সেই মূহুর্তে সৌরভও ওপরে উঠছিলো।
দুজনে চোখাচোখি। প্রিয়ার অবস্থা আবারও সকালের মত হয়ে গেলো। সে পুনরায় এক চিৎকার দিয়ে ঢলে পড়লো।
সৌরভ তড়িৎ গিয়ে প্রিয়াকে বুকে জড়িয়ে নেয়। সে ভেবে পায় না তাকে দেখে এই মেয়ে আজকাল জ্ঞানশূন্য হয়ে যাচ্ছে কেনো?
চিৎকার শুনে গৌরবও দৌড়ে আসে। এসেই দেখতে পায় সৌরভের বুকের মধ্যে প্রিয়া লেপ্টে আছে। গৌরব আচমকা বলে উঠল,
ভাই চুমুটুমু খাওয়ার হলে খেয়ে নাও। আমি ছাদের কর্ণারে চলে যাচ্ছি। একদমই তাকাবো না।
সৌরভ ভাইয়ের কথা শুনে ‘থ’ হয়ে গেলো। ছিঃ ভাই কি বলছো এসব? আমি এসব করতে যাবো কেনো? তুমি পানি নিয়ে এসো।
গৌরব দীর্ঘ এক নিশ্বাস ছাড়লো। মনে মনে বিড়বিড় করলো,
তার ভাই ভীষণ আনরোমান্টিক। সে হলে এতক্ষণে শ’খানেক চুমু খেয়ে নিত।
চলবে,,,,,,,,,,,
আপনাদের সবাইকে রাঢ়ীর বিয়েতে দাওয়াত রইল।
“ব্যাই দ্যা ওয়ে গৌরব ভীষণ পঁচা। আমাদের সৌরভকে খালি জ্বালায়!”#শত্রু_শত্রু_খেলা
#পর্ব_২২
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)
পানি ছিটানোর আগেই পিট পিট করে চোখ খুলে তাকালো প্রিয়া। আচমকা চোখ খুলতে তার বোধগম্য হলো না তার চোখ কি আজকাল ঝাপসা দেখতে শুরু করেছে? সৌরবিদ্যুৎ ডাবল দেখায় কেনো? কিন্তু তার বোধশক্তি পুরোপুরি আসতে সে নিজেকে সৌরভের বাহুবন্ধনীতে আবিষ্কার করে। আর কিছু ভাবার সুযোগ সে আর পেলো না। ঝটকা মেরে সৌরভকে নিজের থেকে সরিয়ে ফেললো। কড়া করে সৌরভকে কিছু বলার জন্য উদ্বত হতেই গৌরব পাশ থেকে মিট মিট করে হেসে বলল,
আরে কিউটিপাই, আজকাল সৌরভের কোল তোমার বেশ ভালোই লাগে দেখছি। তাই বুঝি আমার ভাইকে দেখে হুটহাট করে বেহুঁশ হওয়ার ভান ধরো।
প্রিয়া চোখ বড়ো বড়ো করে বিস্মিত নয়নে সৌরভ গৌরব দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার কাছে কেমন অবিশ্বাস্য লাগছে! এরা দুজন টুইন ভাই। তার ছোটো থেকেই টুইন পছন্দ। তবে বাস্তবে তেমন একটা দেখেনি। সিনেমায় দেখেছিল সে টুইন হয়। একদম একরকম দেখতে, চাল-চলন, কথা-বার্তা। সত্যিই কি হবুহু একরকম দেখতে হয়? সে এটা নিয়ে সবসময় ভাবতো। কিন্তু এখন তার মর মর অবস্থা! কোনটা সৌরবিদ্যুত আর কোনটা তার ভাই সে পুরাই কনফিউজ। কিন্তু পাশ থেকে গৌরভের এহেন বাক্য শুনে তার হুঁশ উড়ে গেলো। সে কেনো সৌরবিদ্যুৎ কে দেখে বেহুঁশ হবে। আর তার কোলে কেনো উঠতে যাবে? অসম্ভব! কিন্তু তবুও সে লজ্জায় কাচুমাচু করছে। কারণ চোখ খুলেই তো সৌরভের কোলে নিজেকে পেয়েছে। তার কম্পিত কন্ঠস্বর। আমতা আমতা করে বললো,
মা,,নে! মাথা খারাপ নাকি? ছিঃ! আমি কেনো সার্কাসের কোলে উঠতে যাবো?
সৌরভ কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। গৌরব বলে উঠল,
কিন্তু কিউটিপাই জানো, আজকে আমি ছিলাম বলেই সৌরভ তোমাকে শ’খানেক চুমু খেয়েছে নয়তো হাজার খানেক চুমু খেতো। ভাগ্যিস! আমি ছিলাম।
প্রিয়া তো মুখে হাত দিয়ে বসে আছে। ছিঃ কি নির্লজ্জ সৌরবিদ্যুত।
গৌরব আবারো রগড় গলায় বললো কিন্তু জানো কোথায় দিয়েছে চুমু। ব্যস বাকিটা বলার আগেই সৌরভ তার মুখ চেপে ধরেছে। দুই ভাই তখন ধ*স্তাধস্তি শুরু করে দিয়েছে। সৌরভ গৌরবের মুখ চে*পেই প্রিয়াকে বলে উঠল,
দেখো প্রিয়া আমি এসব কিছুই করিনি। আমার ভাই তোমার সাথে মজা করতেছে। ও আসলে ভীষণ ফাজিল।
গৌরব মুখ থেকে সৌরভের হাত ছাড়িয়ে নেয়। তারপর সৌরভকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
আমি তোর থেকে গুণে গুণে দশ মিনিটের বড় হয়। কোথায় বড় ভাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলবি তা’ না’ আমার নামে অন্যের কাছে বদনাম করিস। এভাবে বড় ভাইকে কেউ অসম্মান করে।
“দশ মিনিট থেকে দুই সেকেন্ড কম ৯ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের বড়ো তুমি। মায়ের পেটের মধ্যেও তুমি আমার সাথে ধ*স্তাধস্তি করেছো দুনিয়ায় আগে আসার জন্য। নয়তো আমি এখন তোমার থেকে বড়ো হতাম।”
প্রিয়া বিস্মিত নয়নে দুই ভাইয়ের খুঁনসুটিময় ঝ*গড়া দেখছে। কি অসাধারণ এক দৃশ্য লাগছে তার কাছে। তার বড্ড আফসোস হচ্ছে। ইশ! তারও যদি এরকম টুইন একটা বোন থাকতো। তাহলে সেও সারাদিন ঝ*গড়া করতো। প্রিয়ার আচমকা কি হলো কে জানে। সে দুই ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল আমি কি আপনাদের একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি?
প্রিয়ার এহেন বাক্য শুনে সৌরভ গৌরব দুইজনে ‘থ’ হয়ে যাই। সৌরভ সবচেয়ে বেশি বিস্মিত হয়েছে। গৌরব মিট মিট করে হাসছে। সৌরভ কি বলবে বুঝতেই পারছেনা। হ্যাঁ’ না কোনো বাক্য তার মুখ উচ্চারিত হলো না।
গৌরব স্ব গর্ভে উঠে দাঁড়ালো। তারপর প্রিয়ার কাছাকাছি এসে বললো,
হুম একটু কেনো পুরোই ছুঁতে পারো। আফটার অল আমি তোমার ভা,,, বড়ো ভাই হয়।
প্রিয়া ব্যগ্র কন্ঠে বলল,
আপনারা সত্যিই টুইন ব্রাদার!
গৌরব কপাল কুঁচকালো। মুখ ভোতা করে বলল,
কিউটিপাই, তুমি কি আমার আম্মাকে সন্দেহ করছো?
প্রিয়া গৌরবের কানের কাছে মুখ রেখে ক্ষীণ স্বরে বলল,
আচ্ছা, আপনি কি সৌরবিদ্যুত এর বড়ো ভাই?
গৌরব মুচকি হাসলো প্রিয়ার কথা শুনে। মাথা দুলিয়ে বললো হ্যাঁ, আমিই তার বড়ো ভাই। এই যে দেখলে না একটুও পাত্তা দেয় না বড়োভাই বলে।
প্রিয়াও মুচকি হাসলো। সে গৌরবের মুখে তার শাহাদাৎ আঙ্গুল দিয়ে আলতো হাতে ছুয়ে দিলো। পুনরায় বিস্মিত হয়ে বলল,
ও আল্লাহ, আপনি সত্যিই মানুষ। আমি তো আরও আপনাকে ভূত ভাবছিলাম।
গৌরব বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ়। তবুও সে মিট মিট করে হাসছে।
সৌরভ ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। এদের কান্ড দেখে হাসির বদলে ওর প্রচুর রাগ হচ্ছে। এই মেয়েটা ওকে তো কখনো ছুঁয়ে দেখে না। তার ভাইকে কেনো সে ছুঁবে? সে গর্জে উঠলো,
এই বেয়া*দব মেয়ে, যাও টেবিলে গিয়ে বসো। আমি আসছি পড়াতে। আর যখন তখন ছাদে কি তোমার? যাও নিচে যাও।
প্রিয়ার হাসি উবে গেলো সৌরভের ধমকানিতে। গৌরভের সন্দিগ্ধ দৃষ্টি। সেও মনে মনে বেশ মজা পাচ্ছে। তার ভাই জেলাস তার উপর!
___________________________
টেবিলে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে প্রিয়া। সৌরবিদ্যুত তার উপর আচমকা ক্ষেপলো কেনো? সে কি করেছে এমন? ছাদে যখন তখন সে কবে গেলো? তার মনে বিষাদের ছায়া। সে একমনে লিখছে। সৌরভের দিকে চোখ তুলে একবারও চাইলো না।
সৌরভ মনে মনে বড্ড আফসোস করলো এভাবে ধমকানো উচিৎ হয়নি। এমনিতেই মেয়েটা তাকে একটুও পাত্তা দেয় না। এখন যদি তার ভাইকে দেখে আরো দূরে সরে যায়। তার ভাইকে পছন্দ করে বসলে। তার সাথে যদি প্রেমালাপ করে। তখন সে কি করে থাকবে? কিভাবে সহ্য করবে? তার মনে উত্থাল পাতাল ঝড় বইছে। সে কেনো তার ভাইয়ের মত মনের কথা অকপটে বলতে পারে না। নিজেকে এজন্য মাঝে মাঝে অপদার্থ মনে হয়। তার ভাইয়ের মত সে অনেক কিছুই করতে পারে না। সে বড্ড হাঁসফাঁস করছিলো প্রিয়ার সাথে কথা বলার জন্য। নিজেকে শাসালো সৌরভ একটু তো সাহসী হ’। পরপর শুকনো ঢোক গিলল সে। তারপর প্রিয়াকে ছোট্ট করে বলল,
“সর্যিই”
প্রিয়া বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকালো সৌরভের দিকে। তার মাথা ঘুরছে। এই সার্কাস তাকে সর্যিই বলেছে। সে আগের মতই নিশ্চুপ বসে আছে। তার ভাবাবেগের বিশেষ পরিবর্তন হলো না।
সৌরভ ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়লো না। সে আবার আগের মতই বলে উঠল,
আসলে ছাদে তোমাকে এভাবে বলা উচিৎ হয়নি। তার জন্য সত্যিই আমি অনুতপ্ত। তখন আমার মাথায় কি চলছিলো আমি নিজেই জানি না। কি বলতে কি বলেছি? সত্যিই দুঃখিত প্রিয়া।
প্রিয়া আবারও আগের মতই নিঃশ্চুপ বসে আছে। সে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে সৌরভকে দেখছে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছে না। প্রতিত্তোরে কি বলবে সে নিজেই জানে না।
সৌরভের এবার চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। এই মেয়ে তাকে কোনো উত্তরই দিলো না। সে কি এতটাই সস্তা হয়ে গেলো তার কাছে। রাগে মাথা দপ দপ করতে লাগলো। তবুও সে প্রিয়ার থেকে জবাব আজকে নিয়েই ছাড়বে। সে কোমল গলায় বলল,
তুমি কি আমার সর্যি একসেপ্ট করো নাই।
প্রিয়া এবার চকিতে মুখ তুলে তাকালো। কাচুমাচু করতে লাগলো সৌরভের প্রশ্নবাণে নিজেকে জর্জরিত হতে দেখে। মাথা নিচু করে নিশব্দে লম্বা এক শ্বাস নিলো। তারপর ছোট্ট করে বললো,
”হু”
“ব্যস এইটুকুই। আর কিছু বলার নেই। আমার প্রতি তোমার আর রাগ নেই তো।
প্রিয়া মাথা নিচু করেই না বলে মাথা নাড়ালো।
সৌরভ ফুঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এই মেয়ে কবে তাকে বুঝবে? না’কি বুঝেও না বুঝার ভান ধরে। কে জানে?
____________________________
ঘড়ির কাটায় রাত ৯ টা।
ড্রাইনিং এ সবাই বসেছে এক সাথে রাতের খাবার খেতে। সৌরভ, গৌরভ পাশাপাশি। মাসুদ, নাজমা আর শোভা টেবিলের অন্যপাশে। আজকে তাদের আলোচনার বিষয় শোভার পরীক্ষা নিয়ে। শোভার এইচ এস সি পরীক্ষা শুরু হবে পনেরো দিন পর। কিন্তু ইদানীং শোভা পড়াশোনায় বড্ড বেখেয়ালি হয়ে যাচ্ছে। তাই ওর পড়াশোনার প্রতি নজর দেয়ার জন্য সৌরভকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
শোভা আৎকে উঠলো মায়ের কথা শুনে। তার আজকাল সত্যিই পড়তে ইচ্ছে করে না। কিন্তু তার মা তাকে জমের দুয়ারে কেনো পাঠাচ্ছে। তার ভাই তাকে আস্ত রাখবে। ঠুকে দেবে একদম। মনে মনে ইয়া নফসি পড়লো।
সৌরভ বক্র হাসলো। আজকে সেও তার ভাইয়ের ক্লাস নিবে। গৌরবের উদ্দেশ্য বললো,
ভাই তুমি শোভাকে কাল থেকে পড়াবে।
গৌরব ভাইয়ের কথা শুনে যেনো অথৈজলে পড়লো। সে আর পড়াশোনা। তার তো কোনে কালেই পড়াশোনা ভালোই লাগত না। সেজন্যই তো কানাডা পাড়ি দিয়েছিল পড়াশোনা না করতে। আসল সত্যি তো শুধু তার ভাই জানে। এখন সে কি করবে? কিন্তু মেকি হেসে বললো,
দেখ ভাই, মাত্রই বিদেশ থেকে আসলাম। কোথায় ঘুরবো, নিজের শহরটাকে দেখবো। শুভিকে কেমনে পড়াবো বল তো? আমার অত সময় আছে বল?
সৌরভ মিট মিট করে হেসে উঠল। রগড় গলায় বলল,
তুমি না বড়ো ভাই। আমার থেকে গুণে গুণে দশ মিনিটের বড়ো। বড়ো ভাই হিসেবে তোমারও তো দায়িত্ব আছে বোনের প্রতি। তাই না ভাই?
“দেখ দুই সেকেন্ড কম দশ মিনিট। এ আর এমন কি বড়ো? তুই যদি আগে আসতি এখন তুই আমার বড়ো হতি।”
সৌরভ হো হো করে হেসে উঠলো ভাইয়ের কথা শুনে।
মাসুদ আর নাজমা যারপরনাই অবাক দুই ছেলের খুঁনসুটি দেখে। মনে মনে দোয়া করলেন দুই ভাই সবসময় যেনো এমন থাকে।
নাজমা আচমকা বলে উঠলেন গৌরবকে। তুই অনেক ঘুরেছিস গত পাঁচবছরে। এবার তোর সংসার সামলানোর সময় এসে গেছে। আমি তোর জন্য মেয়ে দেখে রেখেছি বাপ। মেয়েটার সামনে একাদশ শ্রেণীর ফার্স্ট সেমিষ্টার ফাইনাল। ভাবছি ওর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলেই তোদের দুজনকে এক করে দেবো।
সৌরভ তড়িৎ বলে উঠল,
মেয়েটা কে মা’?
নাজমা মুচকি হাসলেন। তোরা সবাই মেয়েটাকে চিনিস। আমাদের প্রিয়া।
গৌরব খুক খুক করে কেঁশে উঠলো মায়ের কথা শুনে। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে তার চক্ষু চড়কগাছ। সৌরভ তার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সৌরভ গর্জে উঠলো,
দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব পড়ছে মা’? আধা খাওয়া খাবার রেখেই সে উঠে পড়লো। তার ভাই সত্যিই কি তার সবকিছুতে ভাগ বসাতে এসেছে। কিন্তু সে তা হতে দেবে না।
নাজমা হতভম্ব হয়ে গেলো ছেলের আচরণে। মাসুদ দাঁত কিড়মিড়িয়ে উঠে গেলো। এই মহিলা সব ঘেঁটে দিলো। সেদিনও সে নিষেধ করেছিলো এই প্রসঙ্গে কথা না বলতে। কিন্তু সে শুনলেই তো?
শোভা বিমূর্ত বসে আছে। সে তো জানে সৌরভ কতটা ভালোবাসে প্রিয়াকে। শুধুমাত্র তার ভাই বিকেল পাঁচটার পর সময় না থাকা সত্ত্বেও প্রিয়াকে পড়াতে যাই। অথচো তার ভাই তখন কতটা ক্লান্ত থাকে। এখন কি হবে? তার বড়ো ভাই কি মায়ের কথায় রাজি হয়ে যাবে?
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,
গৌরবের সাথে কি প্রিয়ার বিয়ে হয়ে যাবে? আমি ভীষণ চিন্তিত?
“ব্যাই দ্যা ওয়ে প্রিয়া কি গৌরবের প্রেমে পড়বে?”