#শত ডানার প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট : ৬
আমি এখনো কাল্পনিক দৈত্যর কোলে আছি । পুরো রুম অন্ধকার । কথা বলার চেষ্টা করছি কিন্তু দৈত্যর ভয়ে মুখ খুলার সাহস পাচ্ছি না। যদি আবার কাঁচাই খেয়ে ফেলে ? না বাবা না !! আমি এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না ।
কিন্তু একবার চেষ্টা করতে দোষ কোথায় ? হয়তো আমার কথা শুনে আমার প্রাণ ভিক্ষা দিতে পারে । তার মাঝেও তো দৈত্যবতা থাকতে পারে ।
আরে যেমন মানুষের মাঝে মানবতা আছে তেমনি দৈত্যর মাঝেও তো দৈত্যবতা আছে । তাইনা ?
আমি কাদো কাদো গলায় বললাম,
– “দৈত্য ভাইয়া আমাকে প্লিজ পাতালদেশে নিয়ে যাবেন না । দেখুন আপনার তো একটা মন আছে সেখানে দৈত্যবতা আছে । আমি এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না। আপনি আমাকে ছেড়ে দিলে আমি আপনার জন্য দোয়া করবো যেন আপনি সুন্দর বউ পান ।
ও না না সুন্দর না কুৎসিত বউ পান । আপনাদের তো আবার উল্টো নিয়ম তাইনা ? আমি একটা ইংলিশ মুভি তে দেখেছি পাতাল দেশে উল্টো নিয়ম যে যত কুৎসিত দেখতে তাকে তত বেশি সুন্দর বলে ।আপনাদের বিয়ের পর কুৎসিত ছোট ছোট বাচ্চা হবে তাদের নাম হবে দৈত্যচি আহা ! আহা ! । ”
হ্ঠাৎই দৈত্য হুংকার দিয়ে রাগী গলায় বললেন,
– “তোমার মনে হচ্ছেনা তুমি খুব বেশি আজেবাজে বলছো ? ”
– “না না দৈত্যভাই আমি একদম আজেবাজে বলছি না । আমি তো আপনার ফিউচার বলে দিচ্ছি । জানেন তো ? আমার কথা আবার খাপেখাপে মিলে যায় ।
বাই দ্যা ওয়ে আপনার কন্ঠ অনেকটা আমার স্বামী রাক্ষসরাজ কাবির সিং অগ্নির মত । তার সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক আছে কি ? থাকতেও পারে রাক্ষসকুল আর দৈত্যকুলের মাঝে খুব একটা ভিন্নতা নেই ! ”
সামনের থেকে বড় বড় নিশ্বাসের শব্দ আসছে । মনে হচ্ছে দৈত্য ভাই খুব বেশি রেগে গেছে । ঝাঝালো কন্ঠে বললেন ,
– “কারণ আমি তোমার স্বামী অগ্নিই । ”
কথাটা আমার কানে তড়িৎ বেগে আসে । আমার মাথায় যেন পাহাড় ভেঙে পড়ে । আর ঠিক এমন সময়ই ইলেক্ট্রিসিটি চলে আসে । আমি এখনো উনার কোলে । অগ্নির চোখে স্পর্শ রাগ দেখতে পাই। নাকের ঢগাটা ও লাল হয়ে আছে । আমার চোখ মুখ ভয়ে কালো হয়ে যায় । হে আল্লাহ্ যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয় । এখন না জানি আমার কি করবে এই লোক ? হে আল্লাহ্ এবারের মত বাঁচিয়ে দেও । আমি কথা দিচ্ছি আর জীবনে এমন বকবক করবো না আর আর পাশে বাড়ির মতিন আংকেলের বাড়ির ফুল তো একদম চুরি করবো না । আমি ছোট ছোট চোখে অগ্নি ভাইয়ার দিকে তাকালাম উনি চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে । রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেস্টা করছে ? নাকি আমাকে কি ভাবে খুন করবে তা ভাবছে ? হায় আল্লাহ যদি বারান্ধায় নিয়ে কোল থেকে নিচে ছেড়ে দেয় ? আমি তো মরে ভূত হয়ে যাবো !
কিন্তু উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয় ।আমার কপালে হাত রেখে বললেন ,
– “এখন কেমন লাগছে ? ”
আমি আমতাআমতা করে বলি ,
– “ইয়ে মানে এখন ভালো আছি । ”
আমি সঙে সঙে চোখ নিচের দিকে নামিয়ে ফেলি ।দুজনের মাঝে নিরবতা বিরাজ করছে । আড় চোখে উনার দিকে তাকাই। উনি কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু বলতে পারছে না । দ্বিধা বোধ করছে । তাই আমিই নিচু স্বরে বলি ,
– “কিছু বলবেন কি ? ”
আমার কথায় উনি যেন কিছুটা সাহস পেল । জড়তা কাটিয়ে উনি গলা ঝেড়ে বলতে শুরু করলেন ,
– “হুর আমি কাল রাতে মামী আর টিয়ার কথা শুনেছি । আমার মা তোমার সাথে যা করেছে তা অন্যায় । নিজের মানসম্মান আর ছেলের খুশির কথা ভেবে তোমার উপর প্রেসার দিয়ে তোমাকে বিয়েটা করতে বাধ্য করেছে ।তোমার জীবন নষ্ট করেছে । এখানে কোথাও হয়তো আমিও দায়ী । তুমি চাইলে এখনই আমার থেকে আলাদা হতে পারো ।”
উনার কথা গুলো আমার কেন জানো খুব বেশি খারাপ লাগছে । আচ্ছা আমি তো উনাকে পছন্দ করিনা । তাহলে কেন এমন খারাপ লাগছে ? কেন দু দিনের বিয়ের জন্য এত কষ্ট হচ্ছে ? তবে শুধু কি উনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ বলে এমন হচ্ছে? না কি অন্য কিছু । আমি ছোট্ট একটা নিশ্বাস নিয়ে বললাম ,
– “আমি এখন আলাদা হতে চাই না । আমি যদি এখন আলাদা হই তাহতে আমার মামা মামীর উপর সবাই আঙুল তুলবে ।তাদের জিগাসা করবে কেন আমর বিয়ে ভেঙেছে? নিশ্চিত আমার চরিত্রের কোন দোষ আছে তাই ! ঠি ক একই ভাবে আপনার পরিবারের উপরও আঙুল তুলবে । তাই এখন যে ভাবে চলছে চলতে দিন একবছর পর কন্ট্রাক্ট অনুযায়ী দুজন আলাদা হয়ে যাবো । আর কারণ বলবো দুজন দুজনার সাথে মানিয়ে নিতে পারিনি । ”
উনি বিছানা থেকে উঠে টেবিলের উপর থেকে একটা বক্স নিয়ে আসে । আমার সামনে বসে । আমি কপাল কুঁচকে উনার দিকে তাকিয়ে।উনি কি করতে চাইছে ? আর এই ব্যাগে এমন কি আছে ?
আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি বক্স থেকে অসম্ভব সুন্দর চকলেট কেক বের করে । যেখানে খুব সুন্দর করে হোয়াইট ক্রিমে লিখা “স্যরি সুন্দরী ” নিচে খুব কিউট করে সেড ইমোজি ড্র করা । আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকাতেই উনি কিউট করে হেসে বললেন,
– “স্যরি সুন্দরী । বিনা দোষে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি যা তুমি একদম ডিজার্ভ করোনা।স্যরি ফর এভরিথিংক । আমাকে কি ক্ষমা করা যায় সুন্দরী ? ”
আমার চোখ গুলো খুশির জলে চিকচিক করছে । আজ মন থেকে একটা বড় বোঝা হাল্কা হলো । উনি অনন্ততো আমাকে ঘৃণা করেন না । আমি ফিক করে হেসে বলি ,
– “হ্যা হ্যা এখন আপনি এত করে বলছেন তো ক্ষমা করাই যায় ।
বায় দ্যা ওয়ে আপনি কি করে জানলেন যে আমার চকলেট কেক পছন্দ ? ”
উনি ভাব নিয়ে বললেন ,
– “বুঝলে সুন্দরীইইই আতেফ খাঁন অগ্নি সব জানে ”
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বলি ,
– “তাই বুঝি ??”
আমি ছুড়ি দিয়ে কেক কেটে খেতে লাগলাম । উনি আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে । আমি উনার দিকে এক পিস কেক নিয়ে তার সামনে ধরে বললাম ,
– “আপনি এক পিস খাবেন ? যে ভাবে তাকিয়ে আছেন আমার আবার পেট খারাপ হবে । ”
আমার কথায় উনি কিছুটা রেগে যায় ।আমি উনার দিকে তেক্কার না দিয়ে কেক খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম । কেকের সাথে নো কম্পোমাইজ ।
কিছুক্ষণ পর দরজায় নক পড়ে । আমি আর অগ্নি ভাইয়া দুজনই দরজার দিকে তাকাই । দেখি উৎস ভাইয়া দাড়িয়ে । আমি মুচকি হেসে বলি ,
– “ভাইয়া ভিতরে আসেন । ”
উৎস ভাইয়া মলিন হেসে ভিতরে প্রবেশ করে । আমার সামনে বসে মুচকি হেসে বললেন,
– “এখন কেমন আছো পুতুল ”
– “জি ভাইয়া ভালো । আপনি কেমন আছেন । ”
– “এই আছি মোটামুটি । ”
তিনজনের মাঝে নিরবতা । অগ্নি ভাইয়া সুক্ষ নজরে উৎস ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে।উৎস ভাইয়াই নিরবতা ভেঙে অগ্নি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন ,
– “মি .অগ্নি আপনাকে কি বলে সম্মধন করবো জানি না ।আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস আপনার কাছে । সত্য বলতে আপনার উপর খুব রাগ । খুব বেশি হিংসা হয় । মুনাজাতে কত চেয়েছি কত রাত কান্না করে তাকে চেয়েছি । কিন্তু আপনি না চাইতেই পেয়ে গেছেন । আপনি সত্য অনেক ভাগ্যবান ।এই পুতুলটার সবসময় খেয়াল রাখবেন । খুব ইনোসেন্ট স্ফট হার্টেটে একটা মেয়ে সবসময় ওর খেয়াল রাখবেন । ”
বলেই উৎস ভাইয়া দ্রুত পায়ে রুম থেকে চলে যায় । যাওয়ার সময় উনার চোখে স্পষ্ট জল চিকচিক করছে । হয়তো তার ভয় ছিলো যে যদি উনার দুর্বলটা আমাদের চোখে পাড়ে ।
উনি চলে যেতেই আমি বড় নিশ্বাস ছাড়ি । অগ্নি ভাইয়া গম্ভীর গলায় বললেন,
– “উনি তোমাকে খুব চায় তাই না হুর ? ”
আমি কোনো উত্তর দেই না । উনি আবার বললেন,
– “এত চায় তোমাকে তবে কেন ফিরিয়ে দিয়েছিলে উনাকে ? অন্যকেউ কি তোমার জীবনে ছিলো ? ”
আমি উনার কথায় মলিন হাসি দিয়ে বলি ,
– ” ইনডায়রেক্টলি জানতে চাইছেন আমি কাউকে ভালোবাসি কি না ?
নট ব্যট অগ্নি ভাইয়া !
এখন যেহেতু জানতে চাইছেন তো শুনুন ছোট থেকে উনার প্রতি ভাই ছাড়া অন্যকোন ফিলিংস আসে নি । খুব ভয় করতো উনাকে।
তার উপর উৎস ভাইয়া কে টিয়া আপু ভালোবাসতো তাই উনাকে ভাই বলেই মানি । আস্তে আস্তে সময় কাটতে লাগে একসময় টিয়া আপু ভাইয়া কে প্রপোজ করে কিন্তু ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে বলে ফিরিয়ে দেয় ।আপু জিদের বসে আসিফ ভাইয়াকে বিয়ে করে নেয় ।
আর সবচেয়ে বড় সত্যি তো এটাই যে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি । যার নাম ছাড়া বাকী সব আমার অজানা । যার কন্ঠ শুনে তাকে ভালোবেসেছি । তার প্রেমে পড়েছি ! ”
অগ্নি ভাইয়া গম্ভির গলায় বললেন,
– “তার নাম কি ?”
আমি ঠোঁট কামড়ে হাসি চেপে বলি,
– “আপনি কি জেলাস?? ”
উনি চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললেন ,
– “নো ওয়ে ! আ আ আমি কেন জেলাস হবো ? আমার এসব নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই ।
অকে ? ”
.উনি কথা গুলো এমন ভাবে বলল যেন তার চুরি ধরা পড়ে গেছে।অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আছে নাকে ঢকা সব সময়ের মত লাল হয়ে আছে । আচ্ছা উনি কি রেগে গেল? নাকি সত্যি তার কিছুতেই আসে যায় না ?
আমার কেন মনে হয় উনি আমার খুব কাছের কেউ ? উনার কন্ঠ ,কথা বলার স্টাইল ,কথায় কথায় তার মত নো ওয়ে বলা সবকিছু কেন এত মিল ? তাদের নামের মাঝেও বেশ সিমিলারিটি !
তবে কি অগ্নি ভাইয়াই উনি ? না না এমন কি করে হতে পারে? উনি তো সুপ্তিকে ভালোবাসে আর সুপ্তির আমানত । আমি তো উনার শুধু এক বছরের নাম মাত্র বউ ।
হুর নিজের মনকে সামলা অন্যর জিনিসে নজর দিতে নেই !!!!
#শত ডানার প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট : ৭
বিছানার দিকে সুক্ষ দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছি । অগ্নি ভাইয়া বেশ আরাম আয়েশ করে গাঁ এলিয়ে ফোন টিপাচ্ছেন । বেশ কিছুক্ষণ পর রাক্ষসরাজ অগ্নির আমার দিকে চোখ পড়তেই ভ্রু নাচিয়ে জিগাসা করেন “কি হয়েছে ? ”
আমি তীক্ষ্ণত্ব দৃষ্টি তে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলি ,
– “আমি কোথায় ঘুমাবো ?? ”
উনি ফোনের দিকে মন দিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দেয় ,
– “কেন এত বড় বেড কি তোমার চোখে পড়ছেনা ? ”
– “পড়ছে তো ! অবশ্যই চোখে পড়ছে । কিন্তু সেই সাথে এই বেডের উপর যে রাক্ষসরাজ নিজের রাজত্ব করছে তাও চোখে পড়ছে । ”
উনি আমার কথা রেগে ফোনটা সাইডে রেখে বললেন,
– “হোয়ার্ট ডু ইউ মিন ? আমি রাক্ষসরাজ ? ”
আমি শুকনো ঢোক গিলে বলি ,
– “এখন আপনি যা আপনাকে তো তাই বলবো । তাই না ? ”
উনি বিছানা ছেড়ে এক পা এক পা করে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগেন। আমি ছোট ছোট চোখ করে উনার কান্ড দেখছি আর পিছুপা হচ্ছি । এক সময় পিছনের দেয়ালের সাথে ঠেকে যাই । আমার কমোড় জরিয়ে আমাকে একদ্ম নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে । আমি চোখ বন্ধ করে নেই ।মন বড়ই অস্থির । উনি আমার বেশ কাছে। দুজনের মাঝে খুব একটা দূরত্ব নেই । উনি আমার কাছে এসে কানের কাছে মুখ এনে রেগে ফিসফিসিয়ে বললেন,
– “এখন রাক্ষসরাজ নাম দিয়েছো তো রাক্ষুসের মত কিছু একটা করতে হয় তাই না ? ”
আমার হার্ট খুব দূত চলাচল করছে । বুকের ধুকধুকানি ক্রমাগত বেড়েই চলছে । কি চলছে এই লোকের মাথায় ? আমাকে কি কাঁচা চিবিয়ে খাবে ? নাকি চকলেটের সাথে ইঁদুরের বিষ মিশিয়ে আমাকে মেরে ফেলবে ?
না ,না আমি এখন মরতে চাইনা। আমি বাঁচতে চাই ।
আমার ভাবনায় ছেদ ফেলে হুট করে উনি আমার ঘাড়ে মুখ ডুবায় । কিছু ভাবার আগেই সজোরে সেখানে কামড় বসিয়ে দেয় । কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে যায় । আমি চোখ বন্ধ করে ঘাড়ে হাত দিয়ে আছি । উফফফ কি ব্যথা ! কি ব্যথা !
লোকটার কি একটু মায়া দয়া নেই নাকি ? এই ভাবে কেউ কামড় দেয় ? মনে হচ্ছে মাংস উঠিয়ে ফেলেছে ।লাল দাগ পড়ে গেছে । আহ আমার ঘাঁড় !
আমি উনার দিকে রাগি দৃষ্টি তে তাকাতেই উনি বাঁকা হেসে বললেন,
– “রাক্ষসরাজ নাম দিয়েছো তো একটু ডেমো তো দেখাতেই হয় । তাইনা ? ”
বলেই দূরে সরে যায় আবার বিছানায় পায়ের উপর পা তুলে গাঁ এলিয়ে শুয়ে পরে।ফোনটা হাতে নিয়ে ফোন গুতাতে শুরু করে দেয় । আমি ঝাঝালো গলায় বললাম,
– “আমি আপনার সাথে বিছানায় থাকতে পারবো না । ”
– “ওকে ফাইন ! তোমার সমস্যা তুমি আলাদা রুমে থাকো আমি তো বিছানা থেকে একপা নড়ছি না। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো ।
আর শুনো যাওয়া সময় লাইট অফ করে দরজা বন্ধ করে যেও কেমন ? ”
বলেই আমার ফোনে মনযোগী হয় আমার রাগে শরীর কিটকিট করছে । ইচ্ছে করছে নিজের চুল ছিড়ি । উফফ এখন উনার সাথে এক বিছানায় থাকবো ? উনি কেন আমার কথা বুঝচ্ছে না ? উনি কেন বুঝে না আমার ঘুম খুব বাজে। ঘুমে নিজের হুশ হারাই । কোথা থেকে কোথায় যাই নিজেও জানিনা। এখন তো অন্যরুমে ও ঘুমাতে পারবো না । মামা মামী সন্দেহ করবে । অনেকক্ষন ভেবে লাইট অফ করে উনার পাশে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পরি । মনে মনে শ’খানেক বকা দেই ।
সকাল সকাল ছাদে হিয়া আপুর সাথে দেখা । আপু আমাকে দেখে মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছে । কারণ আমার জানা নেই । আমি আপুর দিকে ভ্রু কুচঁকে তাকিয়ে । কারণ খোঁজার চেষ্টা করছি । কি হয়েছে ?
কিন্তু বিশেষ কোন লাভ হলো না । কারণ খুঁজে পেলাম না । তাই নিজেই জিগ্যেস করে ফেললাম,
– “আপু তোমার কি হয়েছে? এভাবে হাসছো কেন ? ”
আপু আমার কথা উত্তর না দিয়ে উল্টো আমাকে প্রশ্ন করেন,
– “কাল রাতে ভালো ঘুম হয়নি তাই না রে হুর ? ”
আমি বড় হাই তুলতে উত্তর দেই ,
– “হুম আপু ঠিক বলেছো একদম ঘুম হয়নি । তোমার দেবরের জন্য ঘুমাতে পেড়েছি কি ?
উফফ মাথাটা এখনো ধরে আছে । ”
– “শরীর ব্যথা করছে কি? ”
– “না আপু কিন্তু ম্যাচম্যাচ করছে ! বায় দ্যা ওয়ে আপু তুমি কি ভাবে বুঝলে ? ”
আপু ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,
– “ওমা আমি বুঝবোনা?? যে ভাবে ঘাড়ে দাগ করে ঘুরে বেড়েচ্ছিস । আমি কেন যে কেউ বুঝবে ! ”
ঘাড়ের দাগের সাথে শরীর ব্যথার বা ঘুমের কি সম্পর্ক ? আপু কি বুঝাতে চাইছে ? আর এসব কেন বলছে ?
হুট করে কিছু মনে পড়তেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে যায় । ও মাই গড ! আপু কি তবে ঐ সব কিছু মিন করছে ? ছিঃ
আমি আপুর দিকে সঙে সঙে তাকাই আপু দুষ্টু হাসছে । আমি কাদো কাদো গলায় বলি ,
– “ইয়ায়ায়ায়া ছিঃ আপু ! তুমি যা ভাবছো তা নয় গো । আমি তো অন্য কথা বলছিলাম । ”
আপু আমার মাথায় চাপড় মেরে বললেন ,
– “হয়েছে হয়েছে আর নেকা সাজতে হবে না । বুঝি বুঝি আমি খাইনা সুজি । আমার দেবরের সাথে প্রেম ট্রেম করে এখন ইনোসেন্ট সাজা হচ্ছে ? এত লজ্জা পেতে হবে না তো । আর শুন চুল গুলো ছেড়ে দে তাহলে আর কেঊ তোর সিক্রেট দেখবে না । বুঝলি ! ”
বলেই আপু আগের মত দুষ্টু হেসে চলে গেল । আমি হ্যবলার মত ঠাই দাড়িয়ে। এখন আপুকে কি করে বলি উনার দেবরের সাথে প্রেম তো দূর ভালো করে কথাই বলা হয় না । যা হয় শুধুই ঝগড়া !
আর আমার বোনটাও না বিয়ের পর পুরোপুরি লাগামহীন হয়ে গেছে। আজ কাল কি সব ভাষা বলে ছিঃ । ইয়াক । লজ্জায় পানি পানি হয়ে যাচ্ছি । এই সব ঐ রাক্ষসরাজ কাবির সিং অগ্নির কাজ । কে বলেছিলো এখানে কামড় দিতে ? উফফফ কি লজ্জা! কি লজ্জা !
আমি আপুর কথা মত চুল থেকে কাটা খুলে ফেলি । চুল দিয়ে দাগটা ডেকে ফেলি । যেন কারো চোখে না পরে ।
মাত্রই বাড়ির উদ্দেশ্য গাড়িতে উঠেছি । পাশেই অগ্নি ভাইয়া বসে ড্রাইভ করছে ।আমি বাহিরে দিকে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত । পড়ন্ত বিকেলের সোনালি আলো চারদিকে ছড়িয়ে । অসম্ভব সুন্দর এক দৃশ্য । সঙে মৃদু হাওয়া বইছে । আহ! কি সুন্দর আবহাওয়া । আমি জানালা খুলে বাহিরের এই মৃদু হাওয়ার পরশ নিচ্ছি । পড়ন্ত বিকেলের প্রকৃতিক বাতাসে যে অনুভূতি সতেজতা লুকিয়ে আছে তা এসির কৃত্রিম বাতাসে কোথায় ?
এই হাওয়া মন প্রাণ ছুঁয়ে দিচ্ছে ।মনে শীতল ছোঁয়া দিচ্ছে । আসে পাশে গাড়ি বাড়ি সব চোখের পলকে পিছনে চলে যাচ্ছে । আমি প্রত্যেকটা দৃশ্য খুব মন দিয়ে দেখছি । আমার খোলাচুল গুলো হাওয়ায় দুলছে । চোখ বন্ধ করে সবটা উপভোগ করছি ।এক পরম শান্তি !
এমন সময় মনে প্রচন্ড এক ইচ্ছে জাগলো পাশের মানুষটাকে দেখার । দেখবো কি একবার ? উমমম দেখতে দোষ কোথায় ? শুধু একটু দেখবোই তো !
যেই ভাবা সেই কাজ আমি তাড়াতাড়ি করে পাশে তাকালাম । অগ্নি ভাইয়া ড্রাইভ করছে । সামনের থেকে তার মুখে পড়ন্ত বিকেলের সূর্যি মামার সোনালি আলো পড়ছে । ফর্সা চেহারাটা মায়ার ভরপুর ।উনার চাপদাড়ি সোনালি রোদে চকচক করছে ।গোলাপি ঠোঁট জোড়ায় হাল্কা হাসি জুলানো ।অসম্ভব সুন্দর চোখজোড়া লক্ষের দিকে ।গায়ে কালো রং এর শার্ট হাতা গুলো ফোল্ড করা । হাতে ব্রেন্ডড ঘড়ি । সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর । আচ্ছা এত সুন্দর কেন উনি ?
একটু কম সুন্দর হলে কি হতো ? উনার দিক থেকে নজর সড়ানো যে বড্ড দায় হয়ে যায় ।
এসব ভাবনায় ডুবে যাই । হুট করে আমার ভাবনায় ছেদ পরে উনার সেই অসম্ভব সুন্দর চোখের গাঢ় দৃষ্টি তে। এই চাহনী যেন আমার বুকে যেয়ে তীরের মত লাগে । এই চাহনী যেই কাউকে ঘায়েল করতে যথেষ্ট । হয়তো এই চাহনিকেই নেশাযুক্ত মাতাল করা চাহনী বলে । চোখাচোখি হতেই উনি নিজের নজর সড়িয়ে নেয় । সাথে সাথে চেহারায় রাগ ফুটে উঠে । আচ্ছা উনি কি আমাকে আড়চোখে দেখছিলো ? হয়তো ? আবার হয়তো না !
উনার এসব ভাবতে ভাবতেই চুল হাত খোপা করছিলাম । বড্ড জ্বালাচ্ছে বার বার মুখের উপর এসে পড়ছে ।
এমন সময়ই উনার গম্ভির আওয়াজ ,
– “যেমন আছে তেমনই থাকতে দেও ! ”
আমি পাশফিরে উনার দিকে তাকালাম । উনার মুখে বিশেষ কোন অনুভূতির ছাপ নেই চোখজোড়া তখনো সামনের দিকে । উনি কি কথাটা আমাকে বলেছেন ? হুম, মনে হচ্ছে তো তাই ।আমিও আর খোপা করলাম না ।খোলা থাকতে দিলাম । হোক না একটু অবাধ্য ! তাতে ক্ষতি কি ?
সন্ধ্যা হচ্ছে । চারদিকে আধাঁর নেমছে । আমি ব্যলকোনিতে দাড়িয়ে । সন্ধ্যা নামার দৃশ্যটা উপভোগ করছি । এমন সময় চুমকি এসে জানিয়ে যায় মা ডাকছে । আমি মাথায় ঘুমটা তুলে মায়ের রুমের দিকে রওনা দেই । হ্ঠাৎ এসময় ডাক পড়াটা বেশ অস্বাভাবিক লাগছে । খুব গুরুতর কিছু কি ?
এসব ভাবতে ভাবতেই মায়ের রুমের সামনে এসে দাড়াই । নক করতেই ভিতর থেকে মায়ের আওয়াজ আসে,
– “ভিতরে এসো হুর ! ”
আমি ভিতরে প্রবেশ করি। মা আমাকে উনার পাশের চেয়ারটায় বসতে বলে । আমি বাধ্য মেয়ের মত বসে পড়ি।মায়ের সামনে চায়ের ট্রে । মায়ের রুমটা বেশ বড় আর শৌখিন জিনিসে ভরপুর । রুমের সব কিছু সাদা ডেকোরেশন করা । একসাইডে সাদা সোফা যার মধ্যে স্টোন লাগানো । বিকেলে চা খাবার জন্য একসাইডে ছোটো দু চেয়ারের একটা ডাইনিং সেট । সব কিছুই বেশ অসাধারণ ।কামড়াটা দেখতে অনেকটা রয়েল হোটেলের কামড়া গুলোর মত ।
আমি চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছি । এমন সময়ই মায়ের ডাক কানে আসে ,
– “চিনি কয় চামচ ? ”
আমি বুঝতে না পেরে নিচু স্বরে জিগাসা করি ,
– “জি মা ? ”
মা মুচকি হেসে বললেন,
– “চায়ে চিনি কয় চামচ দিবো ? ”
আমি মুচকি হেসে বলি ,
-“আড়াই চামচ ”
মা চা বানাতে মন দেয় । আমি চুপ করে বসে । মা চায়ের কাপটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে দিতে দিতে বললেন,
– “আমি খুব খারাপ মা তাই না হুর ? ”
মায়ের হ্ঠাৎ এমন কথায় আমি থতমত খেয়ে যাই।ধীর গলায় বলি ,
– “একদম না মা । মা কখনো খারাপ হতে পারে না। মা সবসময়ই সব রুপেই ভালো আর সত্যের প্রতীক । ”
মা আমার আমার দিকে তাকিয়ে আহত গলায় বললেন,
– “তুমি মানো আর না মানো আমি জানি আমি তোমার কাছে অনেক বড় অপরাধি ,নিষ্ঠুর এক মহিলা । কিন্তু আমার এই নিষ্ঠুরতা পিছনে শুধু আমার মান সম্মান হারানোর ভয় ছিলো না । মায়ের মমতাও ছিলো । শুধু আমার ছেলের কথা চিন্তা করে তোমাকে এ বাড়ির বউ করিনি হুর ! আমার তোমার চিন্তা ছিলো । আর থাকবে নাই বা কেন ? তোমার সাথে যে তোমার জন্মের পূর্ব থেকে আমাদের সাথে সম্পর্ক । তোমার বাবা কাছে যে ওয়াদা করেছিলাম তোমার আর তোমার মায়ের খেয়াল রাখবো ! ”
মায়ের কথা শুনে যেন আমি আসমান থেকে পড়ি । এ সব কি বলছে ? কিসের সম্পর্ক ? আর আমার বাবা মাকেই বা কি করে চিনে মা (শ্বাশুড়ি ) ?
চলবে ……..❤️