#শত_ ডানার_ প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট : ২৫
(ছোট পার্ট দেওয়ার জন্য স্যরি । আমি ভার্সিটির অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত। তাই পাঁচ তারিখ পর্যন্ত ছোট পার্ট দিবো )
ফ্লোরে বসে আছি।ঝর্নার পানিতে আমার পুরো শরীর ভিজে যাচ্ছে । কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই । মন বিষন্নতায় তিক্ত হয়ে আছে । চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি ঝোড়ছে । জীবনের প্রত্যেকটা হিসাব এলোমেলো । যতবারই জীবনকে গুছিয়ে নিতে যাই ততবারই সবকিছু আরো এলোমেলো হয়ে যায় । আচ্ছা এমন কেন হয় না ! মানুষ যা চায় তা কেন পায় না ? আমি খুব বেশি কিছু তো চাইনি শুধুই একমুঠো ভালোবাসা চেয়েছিলাম । কাউকে নিজের বলে দাবী করতে চেয়েছি । যার উপর শুধু আমার অধিকার থাকবে । যার চোখে আমার জন্য মুগ্ধতা থাকবে । কিন্তু আমার সাথেই এমন কেন হলো ?
যখন পাগলের মত অরন্যকে চেয়েছিলেন তখন তার থেকে জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাত পেয়েছি । আর এখন যখন অগ্নিকে ভালোবেসেছি তার জীবনের সাথে জুড়ে গিয়েছি এখনও অগ্নির ভালোবাসা আমার নসিবে নেই । তার সবটা জুড়ে সুপ্তি । জীবন এমন কনফিউজিং কেন ?
যখন অরন্যকে চাইতাম সে সময় আমি তার কাছে বিনোদনের বস্তু ছিলাম । আর এখন যখন আমি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি এখন আমার জীবনে আবার ফিরে এসেছে । আমি একভুল দ্বিতীয় বার করবো না । প্রথম বার ভুল করলে তা বোকামি । কিন্তু একই ভুল দ্বিতীয়বার করলে তা মুর্খামি হবে । যা আমি কোনো ভাবেই করবো না । আর অন্যদিকে , অগ্নির চোখ একটা বলে আর মুখ আরেক । তার চোখের মাঝে আমার জন্য স্পষ্ট ভালোবাসা দেখতে পাই । কিন্তু তার মুখে সুপ্তির নাম । সে কি চায় আদো ও কি সে জানে ?
আচমকাই আমার ভাবনায় টোকা পরে । অপর পাশ থেকে অগ্নি দরজায় কড়া নাড়া দিয়েছে ।আমি কোনো উত্তর না দিয়ে ভিজা কাপড় চেঞ্জ করে নিলাম ।
দরজা খুলতেই দেখি অগ্নি দরজার সামনে দাড়িয়ে । আমি পাশ কেটে সোফায় গা এলিয়ে দেই । মাথাটা প্রচন্ড রকম ব্যথা করছে । আজ সারাদিনের তোড়জোড় মাথার তালুতে চড়ে নাচচ্ছে । আর অন্যদিকে অরন্যের বলা কথা গুলো কানে বাজছে সব মিলিয়ে আমি ক্লান্ত । প্রচন্ড রকম ক্লান্ত । হ্ঠাৎ মনে হলো কেউ আমার দিকে গভীর করে তাকিয়ে । মেয়েদের এক প্রকার অদ্ভুত শক্তি আছে।যেমন কেউ যদি তার দিকে তাকিয়ে থাকে তাহলে তা আঁচ করতে পারে । শুনতে খুবই অদ্ভুত মনে হলেও আশি ভাগ মেয়েদের ক্ষেত্রে এমনটা হয় । আমিও আঁচ করতে পেরে চোখ খুলে তাকাই ।অগ্নি আমার দিকে তাকিয়ে । উনি এক অদ্ভুত দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে ।যেন কিছু ভেবে যাচ্ছে ।
আমি ঠিক হয়ে বসে আড়চোখে উনার দিকে তাকাই । উনি এখনো লাগামহীন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । হ্ঠাৎ আমার চোখ উনার হাতের দিকে যায় । হাত কেটে সেখানে রক্ত শুকিয়ে আছে । আমার বুক ছেদ করে উঠে । আমি তাড়াতাড়ি করে মেডিসিনের বক্স এনে । হাতে মেডিসিন লাগিয়ে দিতে লাগি। নিশ্চিত রেগে কোথাও হাতে আঘাত করেছিলো । যার ফলে এমন কেটেছে । আশ্চর্য হচ্ছি এটা দেখে যে উনি এতো কেয়ারলেস কেন ? এই যে হাত কেটে রক্ত শুকিয়ে আছে উনার কোনো ধ্যানই নেই !
আমি এসব ভেবে অভিযোগকারী দৃষ্টি তে উনার দিকে তাকাই । উনি তখনো আমার দিকে আগের মত একই দৃষ্টি তে তাকিয়ে । আমি ছোট ছোট চোখে সুক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলি ,
– “আজ কি আমাকে প্রথম দেখছেন ?”
উনি গভীর দৃষ্টি তে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন ,
– “হুম ,নতুন নামে চিনেছি নতুন রুপে পেয়েছি তোমায় । ”
– “মানে ?”
আমি উনার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জিগ্যেস করি । উনি থতমত গলায় উত্তর দেয় ,
– “মানে এই যে তোমার মাঝে কতটা ম্যাচুউরিটি এসে গেছে। জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলো জ্ঞানী দের মত আচরণ করো । ”
উনার উত্তর আমার খুব একটা বিশ্বাস হলোনা। কিছুক্ষণ সন্দিহান দৃষ্টি তে তাকিয়ে । শান্ত স্বরে বলি ,
– “ম্যাচুউরিটি কারো মাঝে এমনি এমনি আসেনা । জীবনের তিক্ত বাস্তবতা তা এনে দেয় । ”
উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশস্ততর চাহনী মেলে বললেন ,
– “বিশ্বাস রাখো তোমার জীবনের সব তিক্ততা মুছে । মধুরতায় ভরিয়ে দিবো। ”
আমি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে জবাব দিলাম ,
– “এই বিশ্বাসই তো আর কাউকে করতে পারবো না।বিশ্বাস কাচের মত সচ্ছ হয়, একবার ভাঙলে আর জোড়া দেওয়া যায়না । যতই প্রচেষ্টা করুক দাগ থেকেই যায় । ”
উনাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি উনার সামনের থেকে উঠে যাই । এই লোক মায়া নগরের বাদশাহ । উনার সব কিছুতে মায়া রয়েছে । উনার চোখে মায়া ,চাহনীতে মায়া ,কথায় মায়া সবকিছু তে মায়া । উনার আশেপাশে বেশিক্ষণ থাকলে আমি সেই প্রথম বারের মত উনার মায়ায় পড়ে যাবো । যা আমার জন্য সর্বনাশা হবে ।
____________________________
সকালে ঘুম ভাঙতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করি । পাশেই অগ্নি আমার দিকে ফিরে ঘুমাচ্ছে । অগ্নির বাহুডোরে আমি । আমি তো সোফায় ঘুমেছিলাম । এখানে কি করে আসলাম ? একা একা এসেছি ? নাকি অগ্নি নিয়ে এসেছে? অগ্নি নিয়ে আসার তো কথা না । দুনিয়া উল্টালে ও এটা সম্ভব না। নিশ্চিত আমিই এসেছি । নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় জড়সড় হয়ে যাই।গায়ে উড়না নেই । জামার গলা বড় হওয়ার কাঁধের দিকে হেলে পড়েছে । খুবই বাজে অবস্থায় আছি ।অগ্নি কি এসব দেখেছে ? ও মাই গড এমন হলে আমি লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবো না । আমি সাথে সাথে অগ্নির দিকে তাকাই এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে । নিষ্পাপ চেহারা । চুলগুলো কপাল ছুঁইছে ।এই মুহূর্তে আমার জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দৃশ্য । যা সারাজীবনের জন্য নিজের চোখের মাঝে বন্ধী করে রাখতে চাই ।
আমি তাড়াতাড়ি বেড থেকে উঠে পরি ।অগ্নির ঘুম ভেঙে আমাকে এখানে দেখলে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করবে । আবার সুপ্তি সুপ্তি বলে গীত গাইতে লাগবে । যা শুনার জন্য আমি একদম প্রস্তুত নই ।
আমি ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যাই।শাওয়ার নিয়ে আয়নার সামনে দাড়াতেই দেখি ঘাড়ের কাছে দাগ হয়ে আছে । অনেকটা কালচে দাগ পরে গেছে । এটা কি করে হলো ? অগ্নি করেছে কি ?
সাথে সাথে চুল দিয়ে লুকিয়ে ফেলি । রাগ হচ্ছে নিজের উপর । প্রচন্ড রকম রাগ হচ্ছে।আমি কেন বেডে আসতে গেলাম ? আবার একই কাহিনী ঘটলো । আবার আমরা কাছাকাছি এসেছি। আবার কেন একই ভুল করলাম । যেখানে সম্পর্কেটাই চুক্তি সেখানে এসব আমার জন্য পাপ । অসয্য হয়ে গেছি । বিরক্ত লাগছে সব । আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । আমি এতো চাপ আর নিতে পারছিনা । আমার শান্তি দরকার । কিছুদিনের জন্য সবকিছু থেকে ব্রেক চাই । কাল শেফা বলছিলো তার বাবা মা গ্রামে গিয়েছে । বাড়িতে একা । কিছুদিনের জন্য কি শেফার বাড়িতে চলে যাবো ? এতে মাইন্ড রিফ্রেশ হয়ে যাবে । এসব যন্ত্রণা থেকে কিছুদিনের জন্য মুক্তি পাবো । অগ্নি থেকে কিছুদিন দূরে থাকলে মাথা থেকে উনার ভূত নামবে । কিন্তু বাড়ি থেকে অনুমতি দিবে? আদো কি তা সম্ভব ?
এসব ভেবেই বুক চিড়ে দীর্ঘ বেরিয়ে আসে ।
নিচে চলে যাই । মায়ের সাথে দেখা হতেই মা কে শেফার বাড়িতে যাওয়ার কথা জানাই । মা ও যাওয়ার অনুমতি দেয় । মা আমাদের সম্পর্ক নিয়ে অগ্নির খামখেয়ালিপনা লক্ষ করেছে । মা নিজের থেকেই চাইছে আমি অগ্নি থেকে কিছুদিন দূরে থাকি । মায়ের ভাষ্যমতে আমি অগ্নি থেকে কিছুদিন দূরে থাকলে অগ্নি আমার ইম্পরট্যান্টস বুঝবে । আমাদের সম্পর্কের মর্ম বুঝবে ।
মায়ের কথায় মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি দেই । মাকে কি করে বুঝাই অগ্নির জীবনে আমার কোনো মূল্য নেই । তার মন প্রাণ জুড়ে অন্যকারো বসবাস । আমি হাজার হাজার মাইল দূরে গেলেও উনার কোনো কিছু যায় আসেনা । মা স্ট্রেটলি মানা করে আমি যেন অগ্নিকে কোনো প্রকার ক্লু না দেই যে আমি কোথায় আছি আর নিজের ফোন ও বন্ধ করে রাখি । আমি মায়ের কথা মত কাজ করি ।
অগ্নি বাহিরে বের হলে সে সুযোগে আমিও শেফার বাড়িতে চলে আসি । আপুকেও কিছু জানাই না।আপু আবার তার দেবরের প্রতি খুব দুর্বল । অগ্নি আপুকে জিগ্যেস করলে ঠিক বলে দিবে । তাই আপুকে না জানানোই ভালো ।
_________________________________
সারাদিন শেফার সাথে আড্ডা দেই । দুজন একসাথে খুব আনন্দ করি।সারাদিন মুভি দেখে গেম খেলে কাটিয়ে দেই । শেফাই একমাত্র মানুষ যে আমাকে সবচেয়ে বেশি বুঝে।আমার ভালোমন্দ আমার থেকে বেশি জানে । সব সময় সবকিছুতে আমাকে সাপোর্ট করে । বোনের মত খেয়াল রাখে।হিয়া আপুর পর শেফাই আমার ঢাল।
বিকেল দিকে দুজন একসাথে বাটি ভরে চটপটি ফুসকা খাই । আজ অনেক দিন পর মন খুলে হাসছি । নিজের মন খুলে সবটা অনুভব করছি । সবকিছুর মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে ! অগ্নি কি আমাকে মিস করছে ? আমার খোঁজ নিয়েছে কি ?
পরক্ষনেই মনে পড়ে সে কেন আমার খোঁজ নিতে যাবে? আমি তো উনার কিছু হই না। না মনে রাখবার মত কেউ ।
রাত সাড়ে বারটা বাজতে চলছে আমি আর শেফা পপকর্ন আর চিপস নিয়ে ঘর অন্ধকার করে সোফায় বসে আছি । সামনে the conjuring হরর মুভি চলছে ।দুজন ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছি কিন্তু তার পরও মুভি বন্ধ করবো না । দুজন আজ অটল প্রতিজ্ঞা করেছি যেই ভাবেই হোক মুভি শেষ করেই ছাড়বো । টিভিতে খুবই হরর সিন চলছে ।
রাতে বাচ্চাটা যখন ঘুম থেকে জেগে উঠে বেডে নিচ চেক করছে । পুরো রুম অন্ধকার । পাশের বেডের তার বোনকে ডাকে । বোন যখন রুম চেক করছিলো আর তার ঠিক পিছনে ভূতটা দাড়িয়ে।খুব টানটান এক উত্তেজনাজনক এক মুহুর্ত । এমন সময় ডোর বেল বেজে উঠে । আমি আর শেফা ভয়ে কেঁপে উঠি । হাতের পপকর্ন আর চিপস ভয়ে হাত থেকে পরে যায় । দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি।চোরটোর আসলো কি ? দুজন ভয়ে ঢোক গিলি ।
আমি আর শেফা ভয়ে ভয়ে দরজার দিকে পা বাড়াই । শেফা আগে আর আমি শেফার পিছনে পিছনে । আমি হাতে ফুলদানি নিয়ে নেই । যদি চোর তোর হয় মাথায় দিবো এক বারি ।
দরজা খুলতেই দুজন হা হয়ে তাকিয়ে থাকি । দুজনের চোখই কপালে । দুজন একসাথে চিৎকার করে বলে উঠি ,
– “অগ্নি ভাইয়া আপনি?? ”
অগ্নি কোনো উত্তর না দিয়ে হুট করে আমাকে জড়িয়ে ধরে । কপালে একের পর এক চুমু দিচ্ছে ।আর কি জানো বিরবির করছে । শেফা এবার আরো বেশি অবাক হয় । বেচারি হয়তো কিছুক্ষণ পর অজ্ঞান হয়ে যাবে। অগ্নি পাগলের বেশে আছে।শার্টের বোতাম খুলা । চুলগুলো অগোছালো । মুখে ভয় আতঙ্ক । এসব কি আমার জন্য ? আমার তের ঘন্টার নিখোঁজ উনাকে এতোটা অগোছালো করে দিয়েছে ? এতোটা পাগল পাগল করে দিয়েছে ? আমি তার জীবনে এতোটা ইম্পরট্যান্ট কি??
#শত_ ডানার_ প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট : ২৬
অগ্নি এখনো আমাকে নিজের বুকে চেপে ধরে রেখেছে । আমি ছাড়াতে চাইলে আরো শক্ত করে চেপে ধরে ।আমি হাল্কা মাথা তুলে শেফার দিকে তাকিয়ে দেখি ।শেফা আমাদের দিকে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে । বেচারি এখনো শকের মাঝে আছে । আমি ফিসফিসিয়ে বলি ,
– “অগ্নি কি করছেন ? শেফা দেখছে ! ”
অগ্নি আমার কোনো কথা নিজের কানে তুলল না । সে আগের মত আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছে ।
বেশ কিছুক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে। আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে ঝাঁঝালো গলায় জিগ্যেস করেন ,
– “কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে কেন চলে এসেছো?
ফোন বন্ধ কেন? ”
আমি চুপ করে আড়চোখে অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছি । অগ্নির চোখগুলো টলটল করছে ।আমার কোনো উত্তর না পেয়ে হাতের ফোনটা মাটিতে সজোরে আছাড় মারে। আমি ছিটকে উঠি । উনি আবার রেগে চিৎকার করে বললেন,
– “কি আমাকে তোমার মানুষ মনে হয় না? কোনো কিছু জিগ্যেস করলে উত্তর দেও না কেন ? সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারাটা দিন আমার কিভাবে কেটেছে তোমার আইডিয়া আছে ? কতটা টেনশনে ছিলাম কতটা ভয়ে ছিলাম । তুমি জানো ? শহরের প্রতিটা জায়গা তন্যতন্য করে খুঁজেছি । কি চাও আমি মরে যাই? আমাকে মেরে তোমার শান্তি হবে ? ”
উনার রাগ আর টলটল চোখ দেখে আমার আর কিছু বলার মত সাহস হয় না । উনার চোখ মুখ বলছে উনি কতটা ক্লান্ত । কতটা তোড়জোড় করেছে ।
আমি মাথা নত করে অপরাধীর ভঙ্গিতে দাড়িয়ে চুপ করে সব শুনছি । উনার ধমকে চোখে পানি চলে আসে । ডুকরে কেঁদে উঠি । আমার কান্না দেখে হুট করে উনি আবার নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় । আমি কোনো ভাবেই নিজের কান্না থামাতে পারছি না । অগ্নি নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । মাথায় চুমু দিয়ে বার বার স্যরি বলছে । কান্না থামানোর চেষ্টা করছে । কিছুটা কান্না থামতেই আমি উনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে শেফার রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে বসে থাকি । উনি বাহির থেকে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে আর ডাকছে । উনার সাথে শেফাও যোগ হয়েছে ।
আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি দরজা খুলবো না । না মানে না । একদম না । কেন শুধু শুধু আমার সাথে এমন ঝাড়াঝাড়ি করলো ? সুন্দর ভাবে কি কথা বলা যায় না? আর আমি বাড়ি না বলে আসলে উনার কি ? উনি তো আমাকে ভালোই বাসেনা !
কিছুক্ষণ পর বাহির থেকে কোনো প্রকার সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না । উনি চলে গেলো কি? এতটুকুতেই ধম শেষ ? হুহ ,আমি জানতাম এমনি হবে ।কেন একটু রাগ ভাঙালে কি এমন হতো?
আমি ছোট ছোট পা ফেলে দরজা খুলে বাহিরে উঁকি দেওয়ার জন্য মাথা বের করতেই অগ্নি তড়িৎ গতিতে রুমে ডুকে পরে । সব কিছু এমন আচমকা হলো যে আমি কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না ।
অগ্নি দরজা লক করে আমার দিকে শয়তানী হাসি দিকে একপা একপা করে এগোতে লাগে । আমি ভয়ে একপা একপা করে পিছনের দিকে যাচ্ছি । একসময় দেয়ালের সাথে আমার পিঠ ঠেকে যায় । অগ্নির বেড়াজালে আটকে যাই । অগ্নি বাঁকা হেসে বললেন,
– “এবার কই পালাবে সুন্দরী ? ”
আমি নিজের ভয় কে সংযত রেখে । অনেক সাহস জুটিয়ে উত্তর দেই ,
– “ক…কই আমি পালাচ্ছিলাম না তো । আমি জা… জাস্ট
একা থাকতে চেয়েছি । আ…আর আপনি এখানে কি করেন ? কেন এসেছেন ? ”
উনি আমার চোখে চোখ রেখে বললেন ,
– “কেন তুমি জানো না ? আমি আমার বউকে বাড়ি তে ফিরিয়ে নিতে এসেছি । ”
– “কে আপনার বউ ? আমি আপনার কোনো বউ টউ না । আমার সাথে আপনার চুক্তির…
আর বলতে পারলাম না তার আগেই অগ্নি আমার ঠোঁটে আঙুল রেখে চুপ করিয়ে দেয় । আমি ডাগর ডাগর চোখ করে উনার দিকে তাকাই । উনি আমার ঠোঁটে উনার বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললেন,
– “যা বলতে চেয়েছিলে তা নিজের ভিতরেই রাখো । মুখে প্রকাশ করার ভুল করোনা । এর ফল খুব খারাপ হবে সুন্দরী । অনেক রাত হয়েছে বাড়িতে চলো । ”
আমি মুখ ফিরিয়ে উত্তর দিলাম ,
– “আমি যাবো না । কিছুদিন শেফার সাথে থাকবো । ”
উনি অতি শান্ত গলায় বললেন ,
– “সুন্দরী জেদ করে না বাড়িতে চলো । আমাকে রাগালে ফল খুব খারাপ হবে ! ”
আমি উনার কথায় উনার দিকে সুক্ষ্ম দৃষ্টি তে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম,
– “কি করবেন আপনি ? কি করবে….”
আমি আর কিছু বলার সুযোগ পেলাম না । তার আগেই উনি আমার ওষ্ঠ জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছেন । আমি শুধু বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি । কি হচ্ছে সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে । উনি নিজের থেকে সজ্ঞানে আমার এতোটা কাছে ?
আমি থম মেরে দাড়িয়ে আছি । উনি আমার ওষ্ঠ ছেড়ে বড়বড় শ্বাস নিচ্ছে । অগ্নির মাতাল চোখজোড়া আমার দিকে । আমি মাথা নিচু করে আছি।উনি বড়বড় শ্বাস নিতে নিতে বললেন,
– “আমি ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি শুনোনি । ”
বলেই আমাকে নিজের কোলে তুলে নেয় । আমি আর টু শব্দ ও করিনা। কিছুক্ষণ আগে যা হয়েছে সেই অনুভূতির থেকে এখনো বের হতে পারিনি । এখনো শকে আছি ।
অগ্নি আমাকে নিয়ে ড্রইং রুমে আসে। শেফার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– “শালি সাহেবা অনেক ধন্যবাদ আমার বউয়ের খেয়াল রাখার জন্য ।আর একা ভয়ের কোনো কারন নেই । কোনো প্রব্লেম হলে হেল্পের জন্য কাউকে ডাকবেন । নিচে আমার বন্ধুরা আছে। ”
শেফা ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে । অগ্নি আমাকে কোলে নিয়েই নিচে চলে আসে ।
_________________________
গাড়ি অনেকটা সময় নীরব নিঝুম জায়গায় থামানো । চারদিকে অন্ধকার কুয়াশায় ঘেরা ।আকাশে বড় চাঁদ । চাঁদের এক ফালি আলো অন্ধকার কুয়াশা মাঝেও আলো ছড়াচ্ছে । আমি অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছি । অগ্নি চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুঝে আছে । আমি চুপ করে বসে আছি । উনার কোনো সাড়াশব্দ নেই । ঘুমিয়ে গেলো কি? আমি ছোট ছোট চোখ করে উনাকে পরখ করছি । কুয়াশা শিশির গুলো জানালার কাচ বেয়ে পড়ছে । আমি উনার চেহারা ভালো করে দেখার জন্য একটু নিচু হতেই খপ করে আমার হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে । সব কিছু এতো দ্রুত হওয়ার আমি অনবরত নিজের চোখের পাতা বন্ধ করছি আর খুলছি । বুকে ধকধক শব্দ হচ্ছে । মনে হচ্ছে এই তো হার্ট বের হয়ে আসবে। অগ্নি এবার আমার দিকে ফিরে বসে । উনার লাগামহীন চাহনি আমার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করছে।এটা কোনো স্বাভাবিক চাহনি না । মাতাল ঘোর লাগানো চাহনি । এই দৃষ্টি তে প্রখর নেশা আছে ।এই দুদিন উনার কি হয়েছে ?
কখনো তো এমন করেনি ? উনার এই লাগামহীন মাতাল চাহনি যে আমার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে তা কি এই লোকটা বুঝে ?
এই উনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকায় আমার প্রতি শিরা উপশিরা পর্যন্ত শীতল বাতাস বইছে । শরিরে কাঁপুনি উঠে গেছে তা কি উনি বুঝচ্ছে ?
আগে উনার চাহনি তে এক অদৃশ্য আবরণ ছিলো কিন্তু এখন ? এখন ভয়ংকর হয়ে গেছে । এই চাইনিতে নেশা আছে যা আমাকে প্রতিমুহূর্ত টানছে । এলোমেলো করে দিচ্ছে ।
আপাদত্ত উনার চোখ আমার হাটুর দিকে ।
আমি আমার টপস টানা টানি করে হাটু ডাকার প্রানপন চেষ্টা করছি । কিন্তু আমি টানলেই তো আর তা বাড়বে না ?
আমি কখনো এসব ড্রেস পড়ি না । এই ড্রেসটা শেফার সাথে কেনা হয়েছিলো । একপ্রকার ওর জোরাজোরি তে কিনতে বাধ্য হয়েছি । হাটুর উপর পর্যন্ত হাতা কাটা শর্ট টপস আর হাটু দু ইঞ্চি নিচ পর্যন্ত টাইস । ড্রেসটা হোয়াইট আর বেবি পিংক কম্বিনেশনের । কেনার পর কখনো পড়া হয়নি । শেফা খুব করে বলতো একদিন দুজন এক সাথে এই ড্রেস পড়ে ছবি তুলবো ।আজ সুযোগ ছিলো কারন ওর বাড়িতে কেউ নেই । কেউ দেখবে না । তাই ওর মন রাখার জন্য আজ সাথে করে নিয়ে এসেছিলাম । কিন্তু এমন পরিস্থীতি তে পরতে হবে আমার জানা ছিলো না ।
আমার ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে । আমি শুকনো ঢোক গিলে বলি ,
– “আ..পনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন ? হুম ?
বাড়ি যাবো প্লিজ বাড়িতে চলেন । ”
উনি আমার কোনো কথা নিজে কানে নিলেন না । আমার কাছে এসে হুট করে আমার চুলের ক্লিপটা খুলে দেয় । ঝড়ঝড় করে সব চুল আমার পিঠ ছেড়ে কমোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে । আমি ফ্যালফ্যাল চোখে উনার দিকে তাকিয়ে । উনি সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে । আমার কাধে চুল সরিয়ে সেখানে নিজে ঠোঁট ছোঁয়াল । আমি থম মেরে হাত পা শক্ত মুঠ করে বসে আছি । আমার গলায় হাত বুলাতে বুলাতে অগ্নি মাতাল কন্ঠে বললেন ,
– “ইশ ,কালচে দাগ পড়ে গিয়েছে ! এখন থেকে নো লাভ বাইট অনলি আদর । কেমন ? ”
উনার এসব কথায় আমার হার্ট দ্রুত গতিতে চলছে । আমার নিশ্বাস থেমে থেমে আসছে । বুকটা ভারী হয়ে আসছে । আমি বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছি । উনি আমার কমোড় চেপে নিজের আরো কাছে এনে ।গলায় নিজের মুখ ডুবিয়ে খুব আদুরে গলায় বললেন,
– “সুন্দরীইইই কেন এমন করো ? কেন বার বার ছেড়ে চলে যাও? আমার যে তোমাকে প্রয়োজন । খুব করে প্রয়োজন । বেঁচে থাকার জন্য তোমাকে যে আমার খুব প্রয়োজন ।
প্রত্যেক নিশ্বাসে তোমাকে প্রয়োজন । ”
আমি কোনো উত্তর দিলাম না । আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে । নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে । ডুবে যাচ্ছি অগ্নির মাঝে ।চোখ বন্ধ করে উনার প্রত্যেকটা কথা অনুভব করছি । কোনো মাদকতা আমাকে ঘিরে ধরেছে । আমি নিজের মধ্যে নেই । উনাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার মত শক্তি নেই । পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে । #শত_ ডানার_ প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট : ২৭
অগ্নি অনেকটা সময় আমার গলায় মুখ লুকিয়ে আছে । আমি চোখ বন্ধ করে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললাম ,
– “আমি বাড়িতে যাবো । ”
আমার কথায় অগ্নি মাথা তুলে আমার মুখের দিকে তাকালেন । আমি সাথে সাথে জানালার দিকে ফিরে তাকাই । অগ্নি আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে ঠিক হয়ে বসে । আমার চুল গুলো কানের নিচে গুছিয়ে দিয়ে । সামনের দিকে ফিরে গাড়ি স্টার্ড দেয় । আমি তখনো বাহিরে তাকিয়ে । হঠাৎ আমার হাতের উপর অগ্নি হাত রাখে । শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয় । আমিও আর ছাড়ানোর চেষ্টা করি না ।আর কেনই বা ছাড়ানোর চেষ্টা করবো ? এই স্পর্শের জন্য যে আমি উতলা । এই স্পর্শ ই আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর স্পর্শ । জীবন যেহেতু নিজের থেকে যেচে সুযোগ দিচ্ছে আমি কেন হাত ছাড়া করবো ? আমার যে উনার স্পর্শের উনার ভালোবাসার লোভ পেয়েছে !
বাড়ি পৌছাতে পৌছাতে রাত আড়াইটা । অগ্নি গাড়ির দরজা ধরে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকিয়ে দাড়িয়ে আছে । আমি ছোট কাঁদো কাঁদো দ্বিধান্বিত চোখে অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছি । মনে সংকোচবোধ কাজ করছে । এই ড্রেসে বাড়িতে ডুকবো ? যদি আবির ভাইয়া বা মা দেখে দেখে ফেলে ? কি ভাববে ?
মাথায় হাজার প্রশ্ন আলাপন করছে ।অগ্নি আগের মত ভ্রু কুঁচকিয়ে প্রশ্ন করলো ,
– “কি হলো নামবে না? ”
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
– “আমাকে শেফার বাড়িতে দিয়ে আসেন প্লিজ । আমি কাল সকালে বাড়িতে ফিরবো । পাক্কা ! ”
উনি আমার কথায় চোয়াল শক্ত করে নেয় । নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললেন ,
– “তা কেন ? মেহেরবানি করে বলবেন কি? ”
আমি কাঁদো কাঁদো গলায় উত্তর দেই ,
– “আমি এই ড্রেস পরে বাড়িতে যাবো না । যদি ভাইয়া আর মা দেখে ? আমাকে কি ভাববে? ”
অগ্নি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে উত্তর দেয়,
– “হুর এতো রাতে কেউ জেগে নেই । সবাই ঘুমে আছে । কেউ দেখবে না । ”
আমি কিছু একটা ভেবে ঠোঁট কামড়িয়ে ধরে উত্তর দেই ,
– “যদি জেগে যায় । তো ?
না না বাবা আমি ভিতরে যাবোনা । একদম যাবো না । ”
আমি সামনের দিকে তাকিয়ে নখ কামড়াচ্ছি । আর ভেবে যাচ্ছি কি করে বাড়িতে ডুকা যায় । এমন সময়ই আচমকা অগ্নি আমাকে নিজের কোলে তুলে নেয় । আমাকে নিয়ে সামনের দিকে পা হাঁটতে হাঁটতে বললেন ,
– “এতো দ্বিধাদ্বন্দ্ধের কি আছে ? বলেছি তো সবাই ঘুমাচ্ছে ।আজ এমন ড্রেস পড়েছো ঠিক আছে । এর পর যেন না দেখি । আর যদি এই ড্রেসে শুধু আমার সামনে আসো তাহলে ঠিক আছে। আমি তোমাকে সব ভাবে দেখতে পারি সেই রাইট আমার আছে ! ”
আমি উনার কথায় হা করে আছি । উনি সব ভাবে বলতে কি বুঝালেন ?
আমি এখনো বাকশক্তি হারিয়ে বসে আছি । কি বলবো ? উনার কথায় উত্তর দেওয়ার মত ভাষা আমার নেই । এমন এমন কথা বলে লজ্জায় ফেলে যে কিছু বলার মত থাকেই না !
___________________________
আমি ড্রেস চেঞ্জ করে সোফায় বিছানা পেতে শুতে যাবো এমন সময়ই অগ্নি আমার হাত টেনে নিজের দিকে ঘুরায় । আমি পিছনে ফিরে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টি তে উনার দিকে তাকাই । উনি গম্ভির গলায় বললেন,
– “যাও বিছানায় ঘুমাও । ”
আমি উনার থেকে নিজের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম ,
– “আমি এখনেই ঠিক আছি ”
উনি আমার দিকে রাগী দৃষ্টি তে কিছুক্ষণ তাকিয়ে টেবিলের উপর থেকে পানির জগটা নিয়ে সব পানি সোফার উপর ঢেলে দেয় ।মুখে বাঁকা হাসি টেনে বললেন ,
– “এবার ঘুমাও ”
বলেই বিছানায় হেলান দিয়ে বেশ আয়েশ করে বসে । আমি ছোট ছোট চোখ করে সবটা দেখছি । উনার এমন কান্ডে প্রচন্ড রাগ হলো । আমি উনার দিকে প্রচন্ড রেগে তেড়ে যাই । চিৎকার করে বলি,
– “আপনি এটা কি করলেন ? এই নিশি রাতে আপনি কি শুরু করেছেন ?
আমাকে নিয়ে যদি আপনার এতই সমস্যা থাকে । তাহলে কেন আনতে গিয়েছেন ? আমি তো বেশ ভালোই ছিলাম ।
আমি এখন কোথায় ঘুমাবো ? ফ্লোরে ? ”
উনি আমার হাত টান দেয় । আমি উনার বুকের উপর পড়ি । উনি আমার দিকে আদুরে চোখে তাকাচ্ছে । আর আমি উনার দিকে ভস্ম করা দৃষ্টি নিক্ষেপ করছি । এই মুহূর্তে উনার চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে । আমি উনার বুকের উপর থেকে উঠতে গেলে উনি আমার কমোড়ে এক হাত রাখে । অন্যহাতে আলতো করে আমার কানের নিচে চুল গুছিয়ে দিতে দিতে বললেন,
– “আমি কি একবার ও বলেছি আমার তোমাকে নিয়ে কোনো সমস্যা ! আর ফ্লোরে ঘুমাবে কেন ? আমি তো চাই তুমি আমার সাথে বেডে ঘুমাও । কিন্তু তুমিই তো জিদ ধরে আছো । তাই তো এমনটা করতে হলো ! ”
আমি ঝাঁঝালো গলায় বললাম ,
– “আপনি একটা ইতর ! একটা খাটাশ ! নিজের কথা মানানোর জন্য আপনি সব ধরনের ইতরামি করতে পারেন ।জঘন্য লোক একটা ”
উনি শয়তানির হাসি দিয়ে আমার থুতনি তে হাত রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন ,
– “তোমার সব নামের সাথে এই নামটাগুলো ও গ্রহণ করলাম । তোমার আইডিয়া নেই আমি তোমার জন্য কতটা ইতর ,খাটাশ আর জঘন্য হতে পারি !
চুপ চাপ এখানে শুয়ে পড়ো না হয় আমি আমার ঔসব অবতার নিবো । তা কি ভালো হবে সুন্দরি ? তুমিই বলো? ”
আমি আর কোনো উত্তর দিলাম না । এই লোক সব পারবে । সব । আমার রাগে কান্না আসছে । প্রচুর কান্না আসছে । এই লোক এভাবে আমাকে জ্বালায় কেন ?
কেন ? ভাল্লাগেনা একদম ভাল্লাগেনা । আমি অগ্নির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দু পা বিছানায় তুলে পুরো কম্বল নিজের শরীরে জড়িয়ে নেই। একটুখানি ফাঁক ও অবশিষ্ট রাখিনা । কম্বলের ভিতর থেকে চিৎকার করে বলি ,
– “আমি থাকবো না এই বাড়িতে । একদম থাকবো না । কালই মামার কাছে চলে যাবো । ”
কিছুক্ষণ অগ্নির ঝাঁজালো আওয়াজ পেলাম ,
– “যাওয়ার জন্য পা তো বাড়াও ! পা ভেঙে বিছানায় বসিয়ে দিবো । ”
আমি কোনো কথা বললাম না চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ঘুমানোর অপ্রাণ চেষ্টা চালালাম । কিছুসময়ের মাঝেই আমি সফল হলাম ।
ঘুমের মাঝে আঁচ করতে পারলাম কেউ আমার খুব কাছে । কখনো কপাল ছুঁয়ে দিচ্ছে আবার কখনো গাল । কারো বরফ শীতল হাত আমার গলা ছুঁইছে । আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলবে কি ? মারলে মারুর তাতে কি ? জীবনে তো এমন কোনো উদ্দেশ্য নেই যার জন্য আমাকে বাঁচতে হবে । কিন্তু এই মুহূর্তে ঘুম ভেঙে চোখ মেলে তাকালে । নিশ্চিত মাথা ব্যথায় পাগল হয়ে যাবো । তাই এই মুহূর্তে চোখ বন্ধ থাকাই শ্রেয় ।
আবাশ পেলাম কেউ আমার গলায় ঠান্ডা কিছু পড়িয়ে দিচ্ছে । কিন্তু তা কি ! চোখ মেলে দেখবো কি একবার ? না থাক এই মুহূর্তে ঘুম ভাঙলে বড্ড লস হয়ে যাবে । আমি পাশ ফিরে অন্যদিকে ঘুরে ঘুমালাম ।
_________________________
সকালে রৌদ্রের মিষ্টি আলো আমার মুখের উপর পড়ছে । খুব বিরক্ত লাগছে । আমি পাশ ফিরে শুয়ে আবার ঘুমে তলিয়ে যাবার চেষ্টা করি । কিন্তু আমার প্রচেষ্টা বেশিদূর আগায় না । এর পরই কানে খটখট আওয়াজ আসে । আমি চরম বিরক্তির সাথে কম্বলের ভিতর থেকে মুখ বের করে চোখ কচলাতে কচলাতে সামনে তাকাই । অগ্নি আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে । মাত্রই শাওয়ার নিয়েছে মনে হচ্ছে । একদম ঝকঝকে চকচকে স্নিগ্ধ লাগছে ।
আমি হাই তুলে উঠে বসি । অগ্নি আয়নায় আমাকে দেখে আমার দিকে ফিরে মুচকি হেসে বললেন ,
– “শুভ সকাল সুন্দরী ! ”
উনার হাসিতে আমার চোখ ঝলঝল করে উঠে খুশিতে । সকাল সকাল এতো সুন্দর মর্নিং উইশ ! আর না মন ভালো হবে ? হায় ! এই লোক এতো সুন্দর কেন ? হোয়াই ???
কিছু মনে পড়তেই নিজের মুখের ভাবভঙ্গী গম্ভির করে ফেললাম ।মনের অনুভূতি গুলো মনের ভিতরেই সিন্ধুক বন্ধী করলাম । গম্ভির কন্ঠে বললাম ,
– “গুড মর্নিং ”
– “ঘুম হয়েছে ?”
আমি ভেংচি কেটে বললাম ,
– “না তো এখনো ঘুমিয়ে আছি ”
অগ্নি আমার কথায় কোনো তেক্কার করে না । সামনে মুচকি হেসে সামনে তাকায় । আমি চুল গুলো হাত খোপা করতে করতে সামনে আয়নার দিকে তাকাতেই বড়সড় একটা ঝটকা খাই । আমার গলায় চেইন আর তার মাঝে পেন্ডেন । এটা কোনো সামান্য পেন্ডেন না । চিটাগাং এ আমার পছন্দ করা সেই পেন্ডেন । এটা কি করে আসলো ? অগ্নি দিয়েছে কি ? তবে কি অগ্নি সেদিন আমার পছন্দ লক্ষ করেছিলো ! আমি সাথে অগ্নির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করি ,
– “এটা আপনি দিয়েছেন ! তাই না? ”
অগ্নি আমার দিকে ফিরে মুচকি হেসে বললেন ,
– “না তো । একদম না ! ”
– “তাহলে আমার গলায় কি করে আসলো ? ”
– “কি জানি ? হয়তো কোনো রাক্ষসরাজ বা কোনো দৈত্য দিয়েছে । আজ কাল তো তোমার আবার ভূত প্রেতের সাথে ভালো সম্পর্ক । তাদেরই কেউ গিফট করেছে । ”
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় । আমি উনার যাওয়ার দিকে কুশন ছুড়ে মারি । বদ ,অসভ্য লোক একটা । উনি দিয়েছে তা স্বীকার করলে কি হয় ? মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় ?
এতো ভালো মুডটাই নষ্ট করে দিলো !
এসব বিরবির করে বলে মাথা উঁচু করে তাকাতেই দেখি । অগ্নি কুশন হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে । আমার দিকে ঝুঁকে চোখ টিপে শয়তানী হাসি দিয়ে বললেন ,
– “কুশন ছুড়ে মারলে তো ব্যথা পাবো না সুন্দরী !
হ্যা ,যদি এখানে কামড়ে দেও ঠিক ব্যথা পাবো । ”
কথাটা উনি উনার ওষ্ঠের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন । আমি উনার কথায় ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি । কতবড় অসভ্য লোক । লাজলজ্জা সব বিসর্জন দিয়ে দিয়েছে কি ? এখনো হা করে আছি !
চলবে…❤️❤️❤️