#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১১
মিতালির এভাবে ঢুকে পড়ায় ভ্রুজোড়া কুঁচকে গেলো রাতের। সে গম্ভীর গলায় প্রশ্ন ছুড়লো,
-“তুমি এখানে?”
শিশিরও ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। মিতালি জোরপূর্বক হেসে বললো,
-“হ্যা আসলে একটা কথা বলার ছিল।”
পিছন পিছন নুশানকেও আসতে দেখা গেলো।নুশান এসেই ফিসফিস করে মিতালি র কানের কাছে বলতে লাগলো,
-“এতরাতে তুমি এখানে কেন এলে?”
মিতালি কোনো উত্তর দিলো না। চোখ এড়ায় না রাতের। শিশির রেগে বলে উঠে,
-“কারোর রুমে ঢুকতে হলে নক করে ঢুকতে হয় জানো না?”
মিতালি ঠোটের উপরে জমে থাকা ঘামটা মুছে বললো,
-“আ’ম সো সরি। আসলে..”
রাত হাত দিয়ে থামিয়ে বললো,
-“আসলে-নকলে বুঝি না। কেন এসেছো সেটা বলো।”
মিতালি বিছানায় শুয়ে থাকা সায়ানের দিকে চোখ রেখে বললো,
-“সায়ানকে নিতে।”
রাত চোখ বড় করে বললো,
-“হোয়াট!!”
মিতালি এবার আবারো আগের মত বলতে লাগলো,
-“প্লিজ প্লিজ রাত। আজকের রাতটা ওকে রাখতে দাও আমার সাথে।প্লিজ রাত।”
রাত তো কিছুতেই মানবার পাত্রী নয়।সে সুন্দর করে মিতালিকে টেনে দরজার বাহিরে বের করে দিয়ে বললো,
-“আর কখনো যেন এদিকে আসতে না দেখি। আর আগামীকাল সকাল সকাল এখান থেকে চলে যাবেন।”
নুশান এবার মুখ খুললো।রাতকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“কিন্তু আমাদের তো সাতদিন থাকার কথা ছিল।”
রাত নুশানের দিকে তাকিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বললো,
-“থাকার কথা ছিল। কারণ আপনারা নিজেরাই বলেছিলেন যে দূর থেকে সায়ানকে দেখবেন।বাট আপনার স্ত্রী তো সায়ানকে নিজের কাছে রাখতে চাচ্ছে।”
নুশান হাত জোড় করে বললো,
-“ও অসুস্থ তো।তাই আরকি। প্লিজ সাতটা দিন।”
রাত এবার নিজে নুশানের সামনে হাতজোড় করে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
-“প্লিজ!আর না।একদিনেই বুঝে গেছি।তাছাড়া সাতদিনেই উনি ভালো হয়ে যাবেন? এটা কোনো কথা?বিশ্বাস করার মত?”
মিতালি কি বলবে বুঝতে পারছে না।কারণ তার মেইন ইচ্ছাটা হলো এই বাসায় থাকা। কিন্তু তার নিজেরি ওভারএক্টিং এর জন্যে এটা হাতছাড়া হচ্ছে। সে মনে মনে ভাবছে,
-” না না।আমাকে এবার রাতের সামনে এমন একটা ভাব করতে হবে যে আমি অসুস্থ। সায়ানকে লাগবে না ধূর।ওর জন্যে আমার প্ল্যান ভেস্তাবো নাকি।”
কথাগুলো ভেবেই মিতালি কোনোরকম টিপে টিপে চোখ থেকে পানি বের করে বললো,
-“সরি রাত। আসলে ছেলেটার কথা খুব মনে পড়ছিলো তো। ভেবেছিলাম বুকে নিয়ে ঘুমাবো।”
রাত ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“ওহ রিয়ালি!এতদিন মনে পড়েনি বুঝি?”,
ওমনি রুম থেকে শিশিরের হাঁক এলো,
-“রাত!!এত কিসের কথা তোমার?দরজাটা লাগিয়ে এদিকে এসো তো।”
রাত পিছনে ফিরে বললো,
-“আসছি।”
মিতালি দাঁত কটমট করতে শুরু করলো।শিশিরের এসব আদিক্ষেতা তার মোটেও সহ্য হচ্ছে না।রাত মুচকি হেসে বললো,
-“তাহলে আপনারা আসুন। টাটা।”
মিতালি কাঁদতে কাঁদতে নুশানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“আমার ছেলেকে দিতে বলো না!”
নুশান চুপ করে আছে।নুশানের মিতালির এসব নাটক মোটেও সহ্য হচ্ছে না।তবুও সে মিতালির কথা ভেবে রাতকে বললো,
-“প্লিজ! যদি একটু!”
-“নেভার!”
বলেই রাত দরজাটা মুখের উপরে লাগিয়ে দিলো।মিতালি এতে রেগে গেলো।নুশানের কলার ধরে বলতে লাগলো,
-” তুই বললি না কেন ওকে?”
-“বলিনি আমি?”
-“না বলিস নি। এত ইগো কেন তোর?”
-“তুমি মানুষের সংসার ভাঙলো উঠে পড়ে লেগেছো মিতালি। পতন হবে তোমার।”
বলেই নুশান সেখান থেকে চলে যায়। মিতালি দরজায় জোরে একটা আঘাত করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।
___
সকাল সকাল নুশানের চিৎকারে ঘুম ভাঙে রাত আর শিশিরের। সায়ান পাশে নেই। রাত ভয় পেয়ে গেলো।তাড়াহুড়া করে উঠেই ছুট লাগালো মিতালিদের রুমে। গিয়ে দেখলো নুশান মিতালির পাশে বসে কাঁদছে আর মিতালি বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।রাত গিয়ে আতংকিত গলায় বলে উঠলো,
-“কি হয়েছে? ”
নুশান কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-“সেন্সলেস হয়ে গেছে। পানি দিচ্ছি চোখ খুলছে না।”
ওমনি সায়ানকে কোলে নিয়ে শিশিরও রুমে প্রবেশ করলো। সায়ানকে দেখতে পেয়ে রাতের কলিজা ঠান্ডা হলো। সায়ানের কপালে চুমু দিয়ে শিশিরকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“কই পেলেন ওরে?”
-“মায়ের কাছে ছিল।”
রাত আর কিছু বললো না। কোমড়ে আঁচল গুঁজে মিতালির দিকে এগিয়ে গেলো।মিতালির পাশে বসে পানি নিয়ে মুখে ছুড়লো।মিতালির কোনো হুশ নেই। নুশান বললো,
-“দেখলে?আমি বলেছিলাম।”
রাত জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
-“দেখতে দিন।”
বলেই ও হাত দিয়ে মিতালির গালের দুইপাশে হালকা চড় মারতে মারতে ডাকলো,
-“মিতালি? এই মিতালি?”
সুযোগে রাত একটু জোরেই মারছে।শিশির তা বুঝতে পেরে হাসছে।মিতালি কিছুক্ষণ পরেই চোখ খুললো। মাথায় হাত দিয়ে বললো,
-“রাত তুমি এখানে?”
রাত বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বললো,
-“সেন্সলেস হলো কেমনে?”
নুশান মিতালির হাত ধরে বললো,
-“গতকাল রাতে খুব কাঁদছিলো। পরে সকালে উঠে দেখি চোখ খুলছে না।”
মিতালিও মাথায় হাত দিয়ে ন্যাকা ন্যাকা গলায় বললো,
-“হ্যা আসলে মাথাটা এত ব্যাথা করছিলো।”
রাত শিশিরের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তো ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিন।”
নুশান অবাক হয়ে বললো,
-“কেন?”
-“ওমা!গতকাল রাতে না বললাম চলে যেতে?”
-“কিন্তু মিতালি তো অসুস্থ। দেখতেই পারছেন!”
মিতালি এবার কাঁদতে শুরু করলো। শিশির রাগী গলায় বললো,
-“অনেকক্ষণ যাবত ন্যাকামিগুলো সহ্য করছি।”
মিতালি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
-“আমি আমার ছেলেকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।”
শিশির দরজার পাশে থাকা টেবিলের উপর রাখা ফুল দানিটা ছুড়ে ফেলে বললো,
-“রিডিকিউলাস।”
বলেই সে রাতের কাছে সায়ানকে দিয়ে চলে গেলো।রাত দাঁড়িয়ে রইলো।এদিলে মিতালি তো অঝোরে কাঁদছে। আর নুশানের বুকে কিল দিয়ে বলছে,
-“একটু সায়ানকে দিতে বলো না।”
নুশান বেশ ব্যাথা পাচ্ছে। নিজেকে সামলে বলছে,
-“একটু বোঝার ট্রাই করো মিতালি।’
মিতালি মানতে নারাজ। সে জোরে জোরে নুশানের বুকে মারছে। রাত এবার বিরক্ত হয়ে বললো,
-“আচ্ছা নিতে পারেন ওকে।তবে কিছুক্ষণের জন্যে। ”
মিতালি রাজি হয়ে গেলো। রাত সায়ানকে মিতালির কোলে দিয়ে বললো,
-“আমি কলেজে যাবো। তুমি ওকে কিছুক্ষণ রেখে মায়ের কাছে দেবে।”
মিতালি কিছু না বলে খুশি মনে বারান্দার দিকে চলে গেলো। রাতের বুকটা কাঁপছে। তার কলিজার ধনকে মিতালির হাতে দিলো। তবুও নিজেকে সামলে মনে মনে বলছে,
-“আচ্ছা থাক না!কিছুক্ষণের জন্যেই তো।”
নুশান রাতকে ধন্যবাদ জানালো। রাত সেখান থেকে চলে আসলো। আর মনে মনে ভাবছে,
-“মিতালি আর কি কি করতে পারে আমাদের মাঝে আগুন লাগাতে? না আমাকে সতর্ক থাকতে হবে।”
রুমে এসেই শিশিরকে রেডি হতে দেখতে পায় রাত। শিশির বুঝতে পারে যে রাত আপসেট। তাই রাতের হাত ধরে নিজের কাছে টেনে বলতে লাগে,
-“আপসেট তুমি?”
-“হুমমম!”
-“চিন্তা করো না রাত। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
-“উনি তো অসুস্থ না স্যার।নাটক করছেন।”
-“জানি আমি।”
-“কি করলে উনি নিজ থেকে চলে যাবেন।”
-“আমি চাইলেই ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারি।”
-“কিন্তু তাহলে কি সব সমস্যার সমাধান হবে? গেটের সামনে বসে বসে কান্নাকাটি করবে। সেন্সলেস হবে!লোক জরো হবে।”
-“আই ডোন্ট কেয়ার।”
-“বাট আই কেয়ার। কারণ সনাই মিলে কোটে সাক্ষী দিলে আমার সায়ানকে হারাবো। তারচেয়ে ওনার মতই নাটক করে ওনাকে সরাতে হবে।কাটা দিয়ে কাটা তোলা যাকে বলে।”
রাতের কথায় শিশির ভরসা পাচ্ছে। সেও যে টেনশনে মরছে। এই মিতালির নামক ঝামেলা থেকে সেও যে মুক্তি চায়। আর কত?এভাবে আর কত চলা যায়?
রাত শিশিরের মনের অবস্থা বুঝতে পারে।শিশির এসময়ও নিজেকে শক্ত করে রেখেছে। রাত শিশিরের শার্টের বোতাম লাগাতে লাতে বলে উঠে,
-“আমাকেও তো কলেজে যেতে হবে।”
শিশিরের ধ্যান ভাঙে। রাতের কোমড় জড়িয়ে বলে উঠে,
-“রেডি হয়ে নাও।”
রাত হাসলো। শিশির রাতের কপলালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। রাত চোখ বন্ধ করে তা অনুভব করলো।মুহুর্তেই মাথায় থাকা হাজার বাজে চিন্তাগুলো ঘুচে গেলো। অন্যরকম অনুভূতি হলো রাতের মনে।
_____
কলেজে আসার পর থেকে রাতের মনে শান্তি নেই।সে বসে আছে এখানে অথচ মনটা পড়ে আছে তার সায়ানের কাছে। না জানি মিতালি কেমন করে রেখেছে বাচ্চাটাকে। রাত বারবার চৈতী বেগমকে কল করতে চাইছে।কিন্তু করতে গিয়ে করতে পারছে না বন্ধুদের সামনে।রাতকে অস্থির দেখে রিসাব বলতে লাগে,
-“কি হলো রাত? এত অস্থির যে?”
-” না রে কিছু না।”
-“বল না। কি হয়েছে? ”
-“কিছু না বললাম তো।”
রিসাব রাতের পাশে গিয়ে বসলো।নিপা আর শিহাব উঠে চলে গেছে তাদের মধ্যকার কথা বলতে।যেহেতু নিপা আর শিহাব কাপল সেহেতু তারা এখানে নেই। রিসাব মুচকি হেসে বললো,
-“তোকে ইনভাইট করলাম গতকাল দেখেছিলি?”
-“কিসের?”(ভ্রু কুঁচকে)
-” আরে ইমেইল না সেন্ড করলাম?”
-“ওহ!চেক করা হয়নি রে। আসলে অনেক ব্যস্ত ছিলাম তো।”
-“ইটস ওকে।”(হালকা হেসে)
-“কিসের ইনভিটিশন?”
-“আমার ভাইয়ের বিয়ে। মানে হাসিব স্যার। আসবি কিন্তু।”
-“ওহ হ্যা!হাসিব স্যার তো তোর বড় ভাই।”
-“হ্যা। আগামীকাল বিয়ে। আসবি কিন্তু সপরিবারে।”
-“চেষ্টা করবো।”
বলেই রাত উঠে দাঁড়ালো।রিসাব পিছন থেকে বলে উঠলো,
-” রাত?”
-“কি?”
-“শাড়ি পড়িস।”
রাত আর কিছু বললো না। এমনিতেও তাকে যেতেই হবে শিশিরের সাথে। আর যেহেতু কাপল তাহলে তাকে শাড়িই পড়তে হবে।পুরোটাই ডিপেন্ড করে শিশিরের উপর।বাকিটা আগামীকালই দেখা যাবে।
চলবে….
(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।একটা সুন্দর মন্তব্য উপহার দিয়েন🙂🖤)
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/