শর্ত পর্ব -১২+১৩

#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১২(বোনাস)+১৩

[১২]

রাত বাসায় এসেই সায়ানের খোঁজ করা শুরু করলো। কিন্তু কোথাও তাকে না দেখে সে এক প্রকার দৌড়েই মিতালির রুমে চলে গেলো।গিয়ে দেখতে পেলো সায়ান মিতালির বিছানায় শুয়ে আছে আর মিতালি পাশে ঘুম। রাত এগিয়ে গেলো। রাতের পায়ের শব্দে নুশান সোফা থেকে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,

-“তুমি!”

-“আসলাম!”

নুশান মাথা নাড়ায়। রাত ভিতরে ঢুকে পড়লো।দেখতে পেলো মিতালি সায়ানের উপর এক হাত তুলে রেখেছে। রাত সায়ানের পাশে গিয়ে বসলো।নুশান বলতে লাগলো,

-“মিতালি মাত্রই ঘুমালো।”

-“তো?”(ভ্রু কুঁচকে)

-” না মানে উঠে সায়ানকে না পেলে..”

-“আই ডোন্ট কেয়ার।”

বলেই রাত সায়ানকে কোলে তুলে নিলো। অমনি মিতালি লাফ দিয়ে উঠলো।ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সায়ানও কেঁদে উঠলো। মিতালি সায়ানকে কেড়ে নিয়ে বলতে লাগলো,

-“তুমি যাও আমি দেখছি।”

রাত তো বিরক্তির শীর্ষে। এমনিতেই সে মিতালির এ বাসায় থাকাটা মানতে পারছে না।তারমধ্যে মিতালির এসব তো তাকে আরো বিরক্ত করছে।মিতালি সায়ানকে নিজের কোলে নিয়ে দুলাচ্ছে আর নানান কথা বলছে।রাত সেখানেই বসে আছে।মিতালি ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“কি হলো যাও?”

-“কোথায়?”

-“আমরা স্বামী-স্ত্রী এখানে টাইম স্পেন্ড করব। তুমি এখানে এভাবে বসে থাকলে..”

রাত হাতে হাত ভাজ করে হালকা হেসে বললো,

-“ওহ রিয়ালি!তাহলে আমার সায়ানকে দিয়ে দাও।”

-“না!সায়ান আমার ছেলে।ওকে আমি দিবো না।”

রাত বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

-“মিতালি এবার বেশি হচ্ছে! ”

-“আমি দিবো না।”

রাত জোর করেই সায়ানকে নিজের কোলে নিয়ে নিলো।সায়ানের কান্নাও থেমে গেলো।সে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।পিছন পিছন মিতালিও অসহ্যকর এক চিৎকারের সহিত দৌড়ে আসছে।রাত সায়ানকে শিশিরের কোলে দিয়ে বললো,

-“অনেক হয়েছে।আর না।”

শিশির সায়ানকে দুলিয়ে দুলিয়ে বললো,

-“আবার কি করলো?”

-“আমি গিয়ে সায়ানকে চাইলাম। ও দিলো না। এসব কি স্যার?”

শিশির সায়ানকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে বললো,

-“আমার রুমে কারোর ঢোকার সাহস নাই।”

হলোও তাই!মিতালি শিশিরের রুমের দরজার সামনে এসে থেমে গেলো।মনে পড়ে গেলো গতকালকের রাতের বের করে দেয়ার দৃশ্যটা।তাই আর না ঢুকে এবার বেশ জোরেই কান্না আরম্ভ করে দিলো। নুশান এসেও সামলাতে পারছে না। মিতালি নুশানকে বারবার আঘাত করছে।রাত আর না পেরে নুশানকে সরিয়ে মিতালির গালে চড় বসিয়ে দিলো। তারপর মিতালির হাত ধরে দরজার সামনে নিয়ে যেয়ে ধাক্কা দিয়ে বললো,

-“গেট আউট ফ্রম মাই হাউজ রাইট নাউ।”

নুশান কিছু বলতে যাওয়ার আগেই রাত হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললো,

-“আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। আপনারা যাবেন নাকি আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য হব? অনেক হয়েছে! আমরা আপনাদেরকে আমাদের বাসায় এলাউ করছি না। সাতদিন তো নেভার।”

শিশিরও পিছন পিছন সায়ানকে কোলে নিয়ে আসতে আসতে বলছে,

-“হ্যা! আমি তো এসব চরিত্রহীনদের চেহারাই দেখতে চাই না। সাহস কিভাবে হলো আমাদের বাসায় পা রাখারও?”

মিতালি দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,

-“বেশি বলে ফেলছো!”

রাত চোখ রাঙিয়ে বললো,

-“এখনো যাননি!”

-“আমি যাবো না!”

মিতালির এমন কথায় রাত রেগে গেলো। কিছু বলতে যাবে তার আগেই চৈতী বেগম এসে গেলেন। উনি রাতকে থামিয়ে বলতে লাগলেন,

-“কি সমস্যা রাত?ওদেরকে চলে যেতে বলছো কেন?”

-“মানেটা কি আন্টি!আমি এদেরকে আমার বাসায় এলাউ করব না।”(মুখ ঘুরিয়ে)

-“আমার কথাই শেষ কথা।শিশির আমার কথাট বিরুদ্ধে যায় না।জানো না তুমি এটা?”(শক্ত গলায়)

রাত চুপ করে রইলো।শিশির এবার মুখ খুললো,

-“কিন্তু মা!তাই বলে তুমি কিনা মিতালিকে এলাউ করছো!কেন?”

চৈতী বেগম মিতালিকে ঘরে আনতে আনতে বললেন,

-“আমি যা বলেছি তাই হবে।ওদের সাতদিন থাকার,থাকবে।”

রাত চৈতী বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“কিন্তু মা..”

-“আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না।”

রাত ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো চৈতী বেগমের দিকে। মিতালির মুখের হাসিটা তার চোখ এড়ালো না। সে দৌড়ে রুমে চলে গেলো।শিশির তার মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“মা!তোমার এই ডিসিশন টা আমার মানতে ইচ্ছে করছে না।”

বলেই শিশির সেখান থেকে চলে গেলো। চৈতী বেগম সেদিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলেন।মিতালি হেসে বললো,

-“থ্যাংক ইউ সো মাচ শ্বাশুড়ি মা।”

চৈতী বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন মিতালির দিকে। মিতালি বাঁকা হেসে বললো,

-“উপস আন্টি!”

চৈতী বেগম সেখান থেকে রাতের রুমে পা বাড়ালেন।

এদিকে রুমে এসে অঝোরে কাঁদছে রাত। চৈতী বেগমের থেকে এমন বিহেভিয়ার সে আশা করেনি।
শিশির রাতকে নানাভাবো কথায় ভুলানোর চেষ্টা করছে।সায়ানকে কোলে নিয়ে বলছে,

-“রাত কেঁদো না। দেখো না সায়ান কিভাবে তোমায় ড্যাবড্যাব করে দেখছে।”

রাত নাক টানছে আর কেঁদে চলেছে।শিশির রাতকে চিমটি দিয়ে বললো,

-“দেখো না রাত!লুক!”

রাত উঠে দাঁড়ালো।শিশিরও দাড়িয়ে বললো,

-“আর কত কাঁদবে। ”

রাত কাঁদতে কাঁদতে বললো,

-“আন্টি আমার সাথে এভাবে কথা বললো!”

-“আমারো ভীষণ খারাপ লেগেছে রাত। আমি বুঝতে পারছি।”

রাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই চৈতী বেগম রুমে ঢুকে বললেন,

-“আসব?”

রাত বসে পড়লো। মুখ ঘুরিয়ে চোখ মুছে নিলো। শিশির মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“তোমারো পারমিশন নিতে হয় মা?”

চৈতী বেগম ঢুকে পড়লেন। রাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে কাঁধে হাত রেখে বললেন,

-“রাত তুমি কি রাগ করেছো মা?”

রাত উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

-“না আন্টি। আমার রাগ নেই।”

-“রাগ করো না।আমি এমনটা করেছি,নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। সাতটা দিন কোনোভাবে চলে যাক।”

-“মানেহ!”(ভ্রু কুঁচকে)

শিশিরও মায়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,

-“কারণ আছে মানে?কি কারণ মা? দেখো আমি আর রাত কিন্তু কখনোই মিতালিকে এলাউ করিনি। একমাত্র তোমার কথায় ওকে এখনো পুলিশে দিইনি। ওর সাহস কিভাবে হয় এত বড় কান্ড ঘটানোর পর আমার বাসায় পা রাখারও।”

বলতে বলতে শিশির রাগে রিরি করতে লাগলো।রাতও উত্তরের আশায় চৈতী বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে।এদিকে চৈতী বেগম মনে মনে ভাবছেন,

-“কারণ তো অবশ্যই আছে রে।কিন্তু আপাতত তোদের বললে তোরা রেগে কিছু একটা করে বসবি মিতালির সাথে।এতে মিতালি ক্ষেপে পুলিশি ঝামেলা করবে। যা আমি মোটপও চাই না।”

চৈতী বেগমকে চুপ থাকতে দেখে রাত বলে উঠলো,

-“বলো আন্টি!মিতালিকে রাখার কারণটা কি?”

-“কিছু না। আমি চাইছি তাই।সাতদিন থেকে চলে যাবে।”

শিশির রেগে বললো,

-“মা,তাহলে আমি আর রাতও এখানে থাকব না। আমরা সায়ানকে নিয়ে দূরে চলে যাব।”

-“মিতালি এসেছে আজ ২ দিন। আর পাঁচটা দিনই তো।দেখতে দেখতে চলে যাবে। ওর কাছে একটু সায়ানকে কিছুক্ষণের জন্য দিস। ব্যস। পরেই তো ঝামেলাটা চলে যাবে।”

রাত ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কাঁদছে। শিশির বড্ড বেশিই রেগে আছে। আর একবারও যদি সে মিতালির মুখ দেখে তাহলে হয়ত খুনই করে ফেলবে। একমাত্র তার মায়ের জন্য তাকে এমনটা করতে হচ্ছে। তবুও সে দমেনি। আবারো ক্ষুব্ধ হয়ে বললো,

-” মা প্লিজ!আমি আর এক মুহুর্তও ওকে দেখতে চাই না। আমি ওকে এখনই বের করছি।”

বলেই শিশির সায়ানকে রাতের কোলে দিয় দরজার দিকে যেতে লাগলো। চৈতী বেগম পিছন থেকে বলে উঠলেন,

-“যাস না শিশির। তোকে আমার কসম দিলাম।”

শিশিরের পা থেমে গেলো। রাত কাঁপা গলায় বললো,

-“এটা কি বললে আন্টি।তুমি মিতালির জন্য কসম দিলে?”

চৈতী বেগম মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,

-“আমাকে যদি একটুও ভালোবেসে থাকিস তাহলে আর পাঁচটা দিন একটু মানিয়ে নিস।তোদের ভালোর জন্যেই করছি।”

বলেই উনি একপ্রকার দৌড়ে বেরিয়ে গেলেন। শিশির ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে বললো,

-“দেখলে তুমি? মিতালির জন্যে মা কসম দিলো।”

-“কিছু তো আছেই। আমাকে মায়ের পেট থেকে কথা বের করতে হবে।”(মনে মনে)

-“রাত?”

-“হুম?”

-“কি ভাবছো?”

-“না কিছু না। থাক পাঁচটা দিন। কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমিও ছাড় দিবো না।”

-“আমার সামনে যেন না আসে। আমি এসব চরিত্রহীনদের মুখ দেখতে চাই না।”

বলেই সে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। রাত সায়ানের জন্য ফিডার বানাতে বানাতে ভাবতে লাগলো,

-“আমাকে আগে জানতে হবে যে মা কোন কারণে মিতালিকে রাখতে চাইছে।কারণ সাতদিন চলে গেলেও মিতালি সেই কারণটা নিয়ে মাকে আবারো ব্লেকমেইল করতে পারে।অবশ্য আমিও অবাক হয়েছিলাম মায়ের মিতালিকে আমাদের বাসায় রাখার।কিন্তু বড়দের বিরুদ্ধে আর কি বলব!কিন্তু এখন তো কেসটা সিরিয়াস মনে হচ্ছে। আর মিতালি থেকে আমাকে সতর্ক থাকতে হবে।ওর মনেও প্যাচ আছে।”

কথাগুলো ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো রাত। সায়ানের পাশে শুয়ে ফিডার খাওয়াতে লাগলো।মনে তার হাজারো চিন্তা!এভাবে তার বরের ডিভোর্সি বউকে তার স্বামীসহ থাতে দিতে হচ্ছে। সে কিছুই করতে পারছে না। তাকে কি হাত গুটিয়ে বসে থাকাটা মানায়?আর কত?

চলবে….

(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।একটা সুন্দর মন্তব্য উপহার দিয়েন🖤)

(গতকাল একটা জায়গায়, “আগামীকাল বিয়ে” লিখেছিলাম। ওটা এঙ্গেজমেন্ট হবে।ইডিট করতে ভুলে গেছিলাম।দুঃখিত🥲)

(মিতালিকে রাখার ব্যাপারটা বেমানান লাগলেও এর কারণ রয়েছে। অনুসা রাত রহস্য ছাড়া গল্প লিখে না🙃।যাদের অবাস্তব লাগবে তাদের উদ্দেশ্যে বলব যে কাল্পনিক গল্পে বাস্তবতা খুঁজতে আসবেন না😌।এটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক গল্প।)

#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৩

সকাল থেকেই রাত বেশ নানাভাবে চেষ্টা করছে শ্বাশুড়ির মুখ থেকে কথা বের করবার। কিন্তু চৈতী বেগম চুপ করেই আছেন। উনি আজ মুখ খুলবেননা বলেই ঠিক করেছেন। রাত টেবিলে থাকা নাস্তা নিয়ে সিড়ির দিকে পা বাড়াতেই মিতালি আবার বলতে লাগলো,

-“রাত? সায়ানকে একটু দিয়ে যেয়ো তো।ছেলেটাকে সকাল থেকে দেখিনা।”

রাত কিছু বললো না। কারণ শিশিরের মত সেও এইসব চরিত্রহীনদের সাথে কথা বলতে চায় না। সে রুমে এসে দেখতে পেলো শিশির বেশ ভালো করেই হাঁটছে। রাত তা দেখে খাবারের ট্রে টা রেখে বললো,

-” বাহ!পা তো ঠিক হয়ে গেছে। ”

-“হ্যা।”(হেসে)

-“তাহলে কালকে ডাক্তার দেখিয়ে আসবেন?”

-“দেখি। টাইম হলে।”

রাত খাবারের ট্রে টা নিতে নিতে বললো,

-“এবার চলুন নাস্তা করবেন।”

শিশির সায়ানকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,

-“সায়ানের আড়াই মাস চলে।”

-“হুহ।”

-“ও দেখতে একদম আমার মত।”

-“উহু।আমার মত।”

শিশির চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো। রাত মুখ টিপে হেসে বললো,

-“আপনি কি খাবেন না? ”

-“না করলাম কখন!তুমিই তো খাইয়ে দিচ্ছো না।”

-“আপনি এখন পুরোপুরি সুস্থ। সো নিজেরটা নিজে খান।”

-“একদম না। আমি এখনো অসুস্থ। ”

-“খান তো৷ দুনিয়ার কাজ পড়ে আছে।”

-“তুমি খাইয়ে দিবে না?”

রাত মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। শিশির রাতের গাল টেনে দিলো। সায়ান কেঁদে উঠায় রাত সায়ানকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো।শিশির হেসে খেতে বসবে এমন সময় মনে পড়লো রাতও তো খায়নি। তাই সে নিজের মত করে রাতের মুখে রুটির টুকরো ধরতেই রাত অবাক হয়ে তাকায়। শিশির মুচকি হেসে বললো,

-“খাও?”

রাত খাবারটা মুখে নিয়ে বললো,

-“থ্যাংক ইউ। ”

-“কেন?”

-“এইযে কষ্ট করে খাইয়ে দিচ্ছেন।”

-“কষ্টের কি হলো! তারচেয়ে তুমি যে এই এক দুই মাসে আমাকে এত সেবা করলে সেটা আরো বেশি কষ্টের।”

-“আমার তো কষ্ট হয়নি। তখন আমার সবচেয়ে বড় চাওয়া ছিলো আপনার সুস্থ হওয়া।”

-“হুম জানি।”

শিশির রাতকে খাইয়ে দিচ্ছে। আর রাতও খেয়ে নিচ্ছে। অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে রাতের!শিশির তাকে খাইয়ে দিচ্ছে!এই প্রথম বার।রাত শিশিরকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“এবার আপনি খেয়ে নিন।”

-“হুম আগে তুমি।”

রাত কিছু বলতে যাবে তার আগে আবারো মিতালি হুড়মুড়িয়ে ঢুকলো। শিশির এবার বিরক্ত হয়ে বললো,

-“না বলে আসাটা যে কেমন নিয়ম সেটা আমি বুঝতেই পারি না।”

মিতালি রাতকে এভাবে খাওয়াতে দেখে রেগে গেল। তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো,

-“আসলে আমি সায়ানকে দিয়ে যেতে বলেছিলাম।”

শিশির উঠে দাঁড়ালো। মিতালির দিকে এগোতে লাগলো। মিতালি পেছাচ্ছে।আর জোরপূর্বক হেসে বলছে,

-“কি করছো!”

শিশির মিতালিকে দরজার বাহিরে অবধি নিয়ে গিয়ে বললো,

-“ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন,আমার বউ তোমার কাজের মহিলা না যে সে নিজের বাচ্চাকে তোমার কাছে গিয়ে দিয়ে আসবে।খেলতে ইচ্ছে করলে নক করে এসে ওর পারমিশন সহিত সায়ানকে কিছুক্ষণের জন্যে নিতে পারবে। নয়ত আমার রুমের কাছেও আসবা না।”

বলেই শিশির দরজাটা লাগিয়ে দিলো।মিতালি সেখানে দাঁড়িয়েই কটমট করতে করতে বললো,

-“দেখাচ্ছি মজা।”

বলেই সে চৈতী বেগমের কাছে গিয়ে রেগে বলতে লাগলো,

-“আপনি কি সায়ানকে এনে দিবেন নাকি আমি সব ফাঁস করে দিবো?”

-“দেখো মিতালি!এবার বেশি হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর সায়ানকে লাগে তোমার? শিশির কিন্তু চাইলে তোমাকে পুলিশে দিতে পারে।”

-“আমিও ওটা ভাইরাল করে দিবো।”

চৈতী বেগম রেগে তাকিয়ে রইলেন। মিতালি এবার ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“যাবেন নাকি আমি ভাইরাল করবো।”

চৈতী বেগম কোনোমতে কান্না আঁটকে রাতের রুমের দিকে পা বাড়ালেন। রুমে গিয়ে দেখতে পেলেন শিশির বের হচ্ছে আর রাতকে বলছে,

-“সায়ানকে দেখে রেখো। আজ তোমার কলেজ যেতে হবে না। আর এসে আমরা দুজন মিলে হাসিব স্যারের এঙ্গেজমেন্টের অনুষ্ঠানে যাব।”

রাত সায় জানালো। তারপর শিশিরের পিছন পিছন দরজার কাছে যেতেই চৈতী বেগমকে দেখতে পেলো।চৈতী বেগমকে দেখে শিশিরই সবার প্রথম প্রশ্নটা করলো,

-“মা তুমি এখানে!কিছু বলবে?”

চৈতী বেগম কিভাবে বলবেন বুঝতে পারছেন না। তবুও নিজেকে সামলে বলে উঠলেন,

-“মিতালি সায়ানকে চাচ্ছে। দিলে না কেন রাত!”

রাত কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

-“আন্টি,সায়ানকে এভাবে ঘন ঘন ওনার কাছে দেয়াটা..”

-“খেয়ে ফেলবে না। তাছাড়া সায়ানের মা মিতালি।”

বলেই চৈতী বেগম সায়ানকে নিয়ে চলে গেলেন। রাত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখজোড়া ছলছল করছে।চোখ থেকে পানি পড়ার আগেই শিশির সেটা হাতে নিয়ে বললো,

-“এগুলো মায়ের মুখের কথা হতেই পারে না রাত। মা তোমায় এনেছে আমার বউ করে। মা তোমাকে এসব বলতেই পারে না।”

-“জানি।কিন্তু কষ্ট হচ্ছে।”(নাক টেনে)

-“আমাদের মায়ের সাথে কথা বলতে হবে।”

-“হুম।”

-“এভাবে মন খারাপ করে থাকলে আমি নিশ্চিন্তে যেতে পারব?”(অসহায় গলায়)

রাত নিজেকে সামলে নিলো।কারণ শিশিরকে যাওয়ার আগে টেনশনে ফেলে দেয়াটা উচিত হবে না।তাই রাত কোনোমতে হেসে বললো,

-“আপনি নিশ্চিন্তে যান। বাসায় এসে দেখবেন মিতালি নেই।”

শিশির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“এমনটা হলে আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হত না রাত।”

-“হবে হবে।”

শিশির রাতের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বিদায় নিলো।রাত কোমড় বেঁধে নেমে পড়লো মিতালিকে বের করার কাজে।

((অনেকে না বুঝেই মন্তব্য করছে। আমি বলছি,এখানে মিতালিকে রাখার জন্যে রাত-শিশির রাজি না।চৈতী বেগম কসম দেয়ায় শিশির স্টেপ নিতে পারছে না।কিন্তু তারা ঠিকই মিতালির থেকে দূরে।আর মিতালি শিশিরের ফ্ল্যাটে না বরং চৈতী বেগমের ফ্ল্যাটে থাকে।তাই এটা নিয়ে অযথা ঝামেলার তো দরকার নেই যে ডিভোর্সের পরেও শিশিরের বাসায় থাকে আর এটা হিন্দি সিরিয়াল।মিতালি চৈতী বেগমকে কিছু করেছে যার জন্য উনি বাধ্য হয়ে মিতালিকে থাকতে দিচ্ছেন।মিতালি চৈতী বেগমের ফ্ল্যাটে থাকে শিশিরের না।শিশির রাতকে নিয়ে আলাদা ফ্ল্যাটে থাকে।মিতালি একটা ঝামেলার চক্করে এখানে এসেছে ক্ষতি করতে।তারও কারণ রয়েছে যা পরে জানবেন। তবুও এত কথা কেন যে হচ্ছে!)

সর্বপ্রথম সে চৈতী বেগমের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখতে পেল মিতালি সায়ানকে নিয়ে সোফায় বসে আছে। পাশেই নুশান লেপটপ নিয়ে বসে। চৈতী বেগমকে দেখতে না পেয়ে রাত মিতালিকে জিজ্ঞাসা করলো,

-“আন্টি কই?”

মিতালি একটা ভ্রু উঁচু করে বললো,

-“কোন আন্টি?”

-“আমার শ্বাশুড়ি মা।”(দাঁতে দাঁত চেপে)

-“ওহ!উনি তো রুমে।”

রাত একনজর সায়ানকে দেখলো।মিতালি তা দেখতে পেরে সায়ানকে লুকিয়ে নিলো।রাত রাগ কন্ট্রোল করে চৈতী বেগমের রুমের দিকে পা বাড়ায়।রাত চৈতী বেগমের রুমে গিয়ে ওনাকে ডাকতে শুরু করে। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বারান্দার দিকে চলো যায়।গিয়ে দেখতে পায় চৈতী বেগম বেশ অন্যমনষ্ক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাত ওনার কাঁধে হাত রেখে বলতে লাগে,

-“আন্টি?”

চৈতী বেগমের ধ্যান ভাঙে।রাতের উপস্থিতি টের পেয়ে চটজলদি নিজের চোখে থাকা পানিটুকু মুছে বলতে শুরু করে,

-“হ্যা বলো।”

-“তোমার সাথে আমার দরকারি কিছু কথা রয়েছে।”

চৈতী বেগম পিছনে ঘুরে বলে উঠেন,

-“তখন সায়ানকে তোর থেকে নিয়ে এলাম!আমি অনেক অনেক দুঃখিত রাত। আমার সাথে রাগ করিস না।”

-“না রাগ করিনি। আর তুমি যা যা বলেছো সেগুলো তোমার মনের কথা না। এটাও জানি আমি।”(মুচকি হেসে)

-“রাত আমি বাধ্য হচ্ছি এসব করতে। নয়ত মিতালিকে আমি সবার থেকে বেশি ঘৃণা করি।”

-” আন্টি?”

-“হুম।”

-“আমার সাথে কি সবটা শেয়ার করা যায় না? তোমার ছেলের সাথে নাহয় তুমি সবটা শেয়ার করতে পারবে না।কিন্তু আমার সাথে তো করায় যায়। তাই না আন্টি?”

-“না রাত। এটা কিভাবে বলি।লজ্জার কথা।”

বলেই চৈতী বেগম ঘরে গিয়ে বিছানায় বসে পড়লেন। রাতও এগিয়ে গেলো।রাত আজ সবটা জেনেই ছাড়বে। তাই ও চৈতী বেগমের পাশে বসে বলতে লাগে,

-“আন্টি আমি সবটা ঠিক করে দিবো।পাক্কা!তুমি শুধু বলো যে মিতালি তোমাকে কি নিয়ে ব্লেকমেইল করেছে। এই মেয়েটা যতক্ষন আছে,আমাদের শান্তি নেই। ওকে আমি পুলিশে দিবো।”

চৈতী বেগম ভরসা পেলেন।দরজাটা লাগাতে লাগাতে বললেন,

-“এইসব কথা যেন আমাদের মধ্যেই থাকে রাত।বাহিরের কেউ যেন জানতে না পারে। এটাতে আমাদের সম্মান মিশে আছে।

রাত মাথা নাড়ায়।চৈতী বেগম বিছানায় বসে রাতের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-“মিতালিকে তো আমি কোনোদিনই মেনে নিতে পারিনি শিশিরের বউ হিসেবে।কিন্তু তবুও মেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছি।কিন্তু প্রথম প্রথম ও আমার মনের মত ছিল না। এটা তো হবেই তাই না?প্রথম কয়েকদিন এমন হওয়ারই কথা।যেহেতু ওকে আমি শিশিরের বান্ধবী হিসেবেই পছন্দ করতাম না। একে তো ছোটখাটো ড্রেস পড়ত তার উপর সবসময় শিশিরের গলায় ঝুলে থাকত। তো বিয়ের পর ওর প্রধান কাজ ছিল দুদিন পর পর আমার গ্রামের বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া।যেহেতু আমার ওকে পছন্দ ছিল না তাই ওর সাথে কথা বলতে চাইতাম না।কিন্তু পরে সব ঠিক হয়ে যায়। প্রথম ২ বছর ঠিকই যায়। সমস্যা শুরু হয় যখন সায়ান পেটে আসে। ও সবসময় আমাকে ফ্ল্যাট থেকে বাইরে রাখতে চাইত। আমাকে বারবার গ্রামের বাড়ি পাঠাত,একটু পর পর ছাদে কাপড় নাড়তে পাঠাত,যত কাজ ছিল সব করাত যেন আমি এসব ছেড়ে গ্রামে চলে যাই।এগুলোর কারণ আমি বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু একদিন আমি নুশানকে ওদের ফ্ল্যাট থেকে দীর্ঘক্ষণ পর বের হতে দেখি। পরেই বুঝতে পারি যে এসব করেছে যেনো..”

বলেই চৈতী বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।রাত ঠোঁটে ঠোঁট চিপে বললো,

-“আর যেন ও নুশানের সাথে সময় কাটাতে পারে।”

-“হ্যা। কিন্তু আমি এই পুরো বিষয়টা কিছু কিছু বুঝতে পেরেছিলাম কিন্তু শিশির তো কখনোই আমার কথা শুনবে না।এতটা অন্ধ ছিলো ও মিতালির প্রেমে।কিন্তু ছেলের এমন পরিণতি তো আমার দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল না রে মা।কারণ আমি নুশানকে বারবার ফ্ল্যাটে আসতে দেখেছি।তারপর আমি এই পুরো বিষয়টা কেয়ার সাথে শেয়ার করি।
কেয়া আমাকে এ বিষয়টায় সাহায্য করতে চেয়েছিল।কারণ ও চাইছিল না যেন ওর ভাইয়ের জীবনটা নষ্ট হয়।

বলেই থেমে গেলেন চৈতী বেগম। রাত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চৈতী বেগম কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,

-“কিন্তু সাহায্য করতে গিয়ে আমার মেয়েটা বিপদে পড়ে গেছে। মিতালি ওকে নিয়েই ব্লেকমেইল করছে আমায়।”

বলেই উনি মুখ চেপে কাঁদতে লাগলেন।রাত অবাক হয়ে বললো,

-“তারমানে মিতালি কেয়ার সাথে কিছু একটা করেছে আর সেটা নিয়ে ব্লেকমেইল করছে তোমায়।”

অর্থাৎ এখানে এতদিন পুলিশি ঝামেলার বিষয়টা সম্পূর্ণ চৈতী বেগমের বানোয়াট ধারণা ছিলো এবং ভয় পাওয়াটা এক প্রকার নাটকের মতই ছিল।ওনার মূল ভয়টা হলো কেয়ার সম্মান নিয়ে!পুলিশি ঝামেলাটাকে উনি নিজেও কেয়ার করেননি তেমন।উনি শিশিরকে দিয়ে মিতালিকে পুলিশে ধরাতে পারতেন ঠিকই কিন্তু ততক্ষণে মিতালি যা করার করে ফেলত।তাই চৈতী বেগম এই ভয়ে শিশিরকে কসম দিয়েছিল।বাকিটা নাহয় পরের পর্বে…

চলবে…..
(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। একটা সুন্দর মন্তব্য উপহার দিয়েন☺️💌)

(আগামীকাল মিতালিকে তাড়ানো হবে😮‍💨)

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here