শর্ত পর্ব -১৪+১৫

#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৪

-“হ্যা মিতালি আমাদের থেকেও দ্বিগুন চালাক। তাই ও আমাদের পরিকল্পনা কিছুটা বুঝতে পেরেছিল।তাই কিছু করার আগেই ও কেয়ার বাথরুমে ক্যামেরা ফিট করে।”

বলেই চৈতী বেগম আবারো কাঁদতে লাগলেন। রাত মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে।একটা মানুষ নিজেকে বাঁচাতে এতটা নিচে নামতে পারলো? তাও সেই ভিডিওটা নিয়ে ব্লেকমেইল করছে এখনো!চৈতী বেগম হাত জোর করে বলছেন,

-“আমার অবিবাহিত মেয়েটার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে রাত। দয়া কর আমার আর আমার মেয়ের উপর!আর মাত্র ৪-৫ টা দিনই তো। ও যা করার করে চলে যাক।”

রাত উঠে দাঁড়ালো। শক্ত গলায় বললো,

-” চার-পাঁচদিন? এই বাসায় আর ওকে এক দন্ডও আমি থাকতে দিবো না আন্টি। ওকে ওর মত করেই আমি তাড়াবো।”

-“রাত!ওর কাছে পুরো ভিডিওটা আছে।শিশির জানতে পারলেও নিজের বোনের বিরুদ্ধে এসব মানতে পারবে না। পুরো সমাজে মুখ দেখাতে পারবো?”

-“ভিডিওটা ভাইরাল হলে তো আন্টি!কার ফোনে ওটা?”

-“মিতালির। রাত দেখ,পাকনামো করে কিছু করতে যাস না।”

-“শোনো!সাতদিন পর চলে গেলে যে ভিডিওটা ডিলিট করে দিবে তার কি গ্যারান্টি আছে?”

-“ও আমায় কথা দিয়েছে!”

-“এখনো বিশ্বাস করো ওকে? শোনো!যেই মানুষ একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের ক্ষতি করতে পারে তার থেকে খারাপ আর কি হতে পারে?”

-“কিন্তু ও বলেছে যে ও সাতদিন পর ভিডিওটা ডিলিট করবে।”

-“সেই আশায় তুমি থাকতে পারো আন্টি। আমি না। কেয়া আমারো ছোট বোন। আর আমি কেয়ার এত বড় ক্ষতি হতে দিবো না।”

বলেই রাত রুম থেকে বের হয়ে গেলো।চৈতী বেগমও পিছন পিছন আসতে লাগলেন।রাত ড্রয়িংরুমে গিয়ে মিতালিকে পেলো। মিতালি ওদের এভাবে ছুটে আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,

-” কি সমস্যা?”

রাত রাগে গজগজ করছে।সে কোনোমতে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,

-“সায়ানকে এখন দাও,আমি গোসল করাব।”

মিতালি সায়ানকে বুকে চেপে ধরে বললো,

-” না না,আমি গোসল করাতে পারব।”

রাত চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,

-“আমি করিয়ে দিই ওকে।”

-” না।”

রাত কি করবে করবে ভেবে হঠাৎ বলে উঠলো,

-“তাহলে তো তোমার ওয়াশরুমে গরম পানি ঢালতে হবে।”

-“হ্যা যাও।”

রাত গরম পানি গ্যাসের চুলা হতে নামাচ্ছে আর ভাবছে কিভাবে মিতালির মত করেই মিতালিকে শাস্তি দেয়া যায়।চৈতী বেগম রাতের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,

-“রাত? কিছু ভেবেছিস?”

-“হুম ভাবছি। আজই ওকে তাড়াবো।”

-“কিন্তু কীভাবে? ”

-“আন্টি? একটু দোকানে যেতে পারবেন?”

-“কেন?”(অবাক হয়ে)

-“ওইযে একটা ঔষধ থাকে না যেটা দিলে চুলকায়?ওগুলো এক শিশি আনবেন আর একটা ছোট্ট ক্যামেরা।”(বাঁকা হেসে)

চৈতী বেগম মাথা নাড়ালেন।দোকান বেশি দূরে না। বিল্ডিং এর নিচেই। রাত মিতালির রুমে গিয়ে ওয়াশরুমে গরম পানি ঢাললো। পাশেই দেখতে পেলো মিতালির একটা শাড়ি। মানে মিতালিও গোসল করবে।রাত গরম পানি ঢেলেই মিতালির কাছে গিয়ে বললো,

-“পানি ঢেলে দিয়েছি। আচ্ছা নুশান কই?”

-“কেন?”(ভ্রু কুঁচকে)

-” না মানে এমনি আরকি!”

-“বাহিরে গেছে একটু।”

-“ভালোই হলো।”(মনে মনে)

মিতালি রাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে। রাত দেখতে পেলো মিতালির ফোনটা সোফায় পড়ে আছে।এটাই তো সুযোগ। রাত মিতালির ফোন ঘেটে দেখলো লক করা। কি পাসওয়ার্ড হতে পারে ভাবতে ভাবতে রাত নুশানের নাম দিলো।নাহ খুললো না!কি ভেবে শিশির টাইপ করতেই খুলে গেলো।রাত তো রেগে ফায়ার। রাগে বলছে,

-“কত বড় বেয়াদব হলে আমার বরের নাম দেয়!”

রাত গ্যালারি ঘেটে ভিডিওটা ডিলিট করে দিলো।এমনকি মেসেঞ্জার,হোয়াটসঅ্যাপ সবকিছু থেকে ভিডিওটা ডিলিট করে দিলো যেন আর কোথাও না পায়।তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে মিতালির রুমে গিয়ে দেখলো মিতালি সায়ানকে গোসল করাচ্ছে। রাত দরজার কাছে আসতেই পিছন থেকে চৈতী বেগম বলে উঠলেন,

-“রাত? যা আনতে বলেছিলি সব এনেছি।”

-“হুশশ!আস্তে!”

-“হুমম।”

-“ভিডিও ডিলিট করে দিয়েছি আন্টি!”(মুখ ভর্তি হেসে)

-“সত্যি?”(খুশি হয়ে)

-” হ্যা।”

-“কিন্তু তবুও তো ওকে বিশ্বাস নাই।”

-“তাই তো ওনার মত করে ওনাকে তাড়াবো।”

-“কিভাবে?”

-“আসুন।”

বলেই রাতও গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।চৈতী বেগমও ঢুকে দেখলেন মিতালি সায়ানকে গোসল করাচ্ছে। রাত আস্তে করে পিছিয়ে গিয়ে মিতালির শাড়িতে পাউডারটা মিশিয়ে দিলো।তারপর মিতালিকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো,

-“আর কতক্ষণ লাগবে?”

-” দুই মিনিট।”

রাত সুন্দর করে উঠে পাশে থাকা শ্যাম্পুর বোতলের পিছনে ক্যামেরা সেট করে দিলো। চৈতী বেগম রাতকে আড়াল করে দাড়িয়ে রইলেন। তাই মিতালি তেমন টের পায়নি। তবুও এতক্ষণ এমন চুপচাপ থাকতে দেখে তার একটু সন্দেহ হলো। তাই বললো,

-“আপনি এখানে?”

চৈতী বেগম কেঁপে উঠলেন।তুতলিয়ে বললেন,

-” না দেখছিলাম,কিভাবে গোসল করাও।”

-“কেন?কোনোদিন দেখেননি নাকি!”(ভ্রু কুঁচকে)

চৈতী বেগম জোরপূর্বক হাসলেন। রাত হেসে বললো,

-“আমাকে দিন সায়ানকে,আমি কাপড় পড়িয়ে নিবো।”

মিতালিও দিয়ে দিলো।কারণ তারও গোসল করতে হবে। রাত সায়ানকে গিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।চৈতী বেগমও রাতের সাথেই থাকেন। রুমে এসে রাত সায়ানকে কাপড় পড়াতে পড়াতে বলতে লাগে,

-“একটু পরেই দেখবেন নাটক শুরু হবে।”

-“আজকেই যেন আপদটা বিদায় হয়।”

-” হবে হবে।অনেকদিন ধরে জ্বালাচ্ছে।”

রাত চৈতী বেগমের সাথে এসব নিয়েই আলোচনা করছিল। তারপর সায়ানকে ফিডার দিয়ে শুইয়ে দিলো। সায়ানও কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লো। বেশকিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর চৈতী বেগম বললেন,

-“এখনো কাজ হচ্ছে না কেন রাত?”

রাত কিছু বলবে এমন সময় মিতালির চিৎকার ভেসে এলো। রাত হেসে বললো,

-“এইযে শুরু হয়ে গেলো। ”

রাত সায়ানের উপর মশারি দিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। চৈতী বেগমও গেলেন। গিয়ে দেখতে পেলো মিতালির শরীর চুলকাচ্ছে আর নুশান তাকে থামানোর চেষ্টায় মত্ত। এ তো যেসে চুলকানি না। একপ্রকার শাড়ি খুলে ফেলছে চুলকাতে চুলকাতে। বিছানায় উঠে লাফাচ্ছে। রাত হো হো করে হাসতে লাগলো।মিতালি রেগে বললো,

-“এসব তোমার কারসাজি রাত!আমি বুঝি না নাকি!”

-“আমি?আমি আবার কি করলাম!”(হাসতে হাসতে)

-“কি করেছো রাত তুমি? আমার শরীর চুলকাচ্ছে কেন?”

-“আমি কিছুই করিনি। পাপের ফল আপনার।”

-“কিসের পাপ হ্যা?”

-“অনেক পাপই করেছেন।”

-“রাত প্লিজ আমায় বাঁচাও। আমি আর চুলকাতে পারছি না।”

নুশানও অস্থির হয়ে বললো,

-” রাত প্লিজ!ওর কষ্ট হচ্ছে।”

-“আরে তো আমি কি করব?”

রাত ওয়াশরুমে গিয়ে ক্যামেরাটা লুকিয়ে নিলো। তারপর মিতালিকে ডেকে বললো,

-” এসে গোসল করে নিন।”

মিতালি ওয়াশরুমে দিকে ছুট লাগালো। এদিকে রাত আর চৈতী বেগম তো হাসতে হাসতে কাহিল। নুশান রেগে বললো,

-” এখানে হাসার মত কিছু হয়েছে? ”

রাত তাচ্ছিল্য হেসে বললো,

-” তাহলে কি কাঁদবো? ”

-“তোমাদের তো কাদারই সময়।”

রাত আবারো হো হো করে হাসতে লাগলো। নুশান ভ্রু কুঁচকে বললো,

-” হাসছো কেন! ”

-” কারণ কাঁদার সময় আমাদের না। আপনাদের।”

-” মানেহ!”

-“কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেই দেখতে পাবেন মানেটা কি!”(বাঁকা হেসে)

মিতালি কিছুক্ষণ পর হাঁপাতে হাঁপাতে বের হলো। রাত মিতালির হাত ধরে বললো,

-” ভালো লাগছে এখন?”

-” আগের থেকে বেটার।”(জোর জোরে শ্বাস নিয়ে)

-” তাহলে চলুন!যাওয়া যাক!”

-” কই?”

-“বাড়ি থেকে বাইরে।”

বলেই রাত মিতালির হাত টেনে দরজার কাছে নিতে লাগলো। আর চৈতী বেগম মিতাকির ব্যাগপত্র নিয়ে আসছে। মিতালিকে বাড়ির বাইরে বের করে দিয়ে রাত ব্যাগটা ছুড়ে মারলো। নুশান রেগে বললো,

-” এসব কি ধরণের ব্যবহার?”

রাত আঙুল উঁচিয়ে বললো,

-“এই চুপ!একদম গলা নামিয়ে।”

মিতালি চৈতী বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“আমি কিন্তু সব ভাইরাল করে দিবো।আপনি কেন কিছু বলছেন না।”

চৈতী বেগম চুপ করে রইলেন।মিতালি ফোন থেকে ভিডিওটা খুঁজতে লাগলো। নুশানও বলছে,

-“আপনি কি ভুলে গেছেন আমাদের কাছে কি আছে?”

রাত বাঁকা হেসে বললো,

-“আমাদের কাছেও আছে।”

মিতালি ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“কই গেলো ভিডিওটা!”

রাত নিজের ফোন থেকে মিতালির ভিডিওটা বের করে মিতালির সামনে দিয়ে বললো,

-” ইশ এটা বেশি সুন্দর! ”

মিতালির চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।নিজের চোখে নগ্ন নিজেকে দেখে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। কাপা কাপা গলায় বললো,

-“এটা..”

-” জ্বী এটা।”

-“এটা কখন করলে রাত?”

-“যখনই করি!আপনি কেয়ার জীবনটা নষ্ট করতে চেয়েছিলেন। আপনার মত করেই আপনাকে শাস্তি দিলাম। ”

-” না!এটা তুমি করতে পারো না রাত।দেখো,আমি একটা মেয়ে।তুমি আরেকটা মেয়ে হয়ে কিভাবে..”

-“তুমি করলে দোষ নাই?আর আমি করলেই দোষ?আমি চাইলে আপনাকে পুলিশে দিতে পারি।কিন্তু দিলাম না!নিজের জীবনটাকে নুশানের সাথে ভালো করে গুছিয়ে নিন।কেন অন্যের সংসার ভাঙতে আসছেন?”

-“রাত!!”

-“আপনি যাই করেন না কেন শিশিরের কোনো ক্ষতিই করতে পারবেন না যতদিন আমি এখানে আছি। আর এখন এখান থেকে না গেলে আমি ভিডিওটা ভাইরাল করবো।”

মিতালি রাগে কটমট করছে।নুশান মিতালিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“অনেক নাটক করেছো। চলো!”

বলেই সে মিতালির হাত ধরে টেনে নিতে লাগলো।মিতালি পিছনে ফিরে বললো,

-“তোমাকে আমি ছাড়ব না রাত।”

-” এখনই দেখে নিন না!”(হেসে)

মিতালি চলে গেলো। কিন্তু মনে পুষে রাখলো হাজারো জেদ। সে রাতকে কিছুতেই ছাড়বে না। এদিকে রাত তো মিতালিকে তাড়াতে পেরে ভীষণ খুশি!আজ সে শিশিরকে সারপ্রাইজ দিবে।
#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৫

শিশির বাসায় এসে রুমের দরজা নক করতেই চৈতী বেগম দরজা খুলে দিলেন। শিশির মুচকি হেসে বললো,

-“মা তুমি আমাদের ফ্ল্যাটে?রাত কি বোর ফিল করছিলো?”

-“হ্যা কিছুটা।”

শিশির মাকে দেখে হাতে থাকা গেলাপটা লুকিয়ে ফেললো।চৈতী বেগম হেসে বললেন,

-“রাতের জন্যে? ”

শিশির হেসে মাথা চুলকায়।চৈতী বেগম শিশিরের মাথায় হাত দিয়ে বললেন,

-“যা। আজই সব মিটমাট করে নিবি।”

শিশির ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

-“হুম মা”

চৈতী বেগম নিঃশব্দে হাসলেন।শিশির আবারো বললো,

-“মা,আমাকে তো আবার যেতে হবে হাসিব স্যারের এঙ্গেজমেন্টে।”

-“তাহলে গিয়ে রেডি হয়ে নে।”

-“হুম।”

-“আমি আমার ফ্ল্যাটে যাচ্ছি, ”

বলেই চৈতী বেগম প্রস্থান করলেন।দুজনকে একা ছেড়ে দিতে চান তিনি।শিশির সিড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো।নিজের রুমে ঢুকতেই সে থমকে গেলো। এটা কি দেখছে সে!
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে রাত!পড়নে মিষ্টি কালারের শাড়ি,হাত-গলা সব খালি!কিন্তু মুখে থাকা হাসির মাধুর্যে শিশির ঘায়েল হয়ে যাচ্ছে।রাত চোখে কাজল দিতে ব্যস্ত।শিশির এগিয়ে গেলো।রাতের পিছনে দাঁড়াতেই রাত উঠে দাঁড়ায়।আয়নায় তাকিয়ে বলে উঠে,

-“আপনি চলে এসেছেন? ”

-“হুম!”

গম্ভীর গলায় বলে শিশির।তারপর মায়ের কাছ থেকে এনে রাখা নিজের কেনা ঝুমকা আর চুড়িগুলো নিয়ে এলো।রাত তো নিজের মতই সাজছে। শিশির রাতের সামনে এসে রাতকে বসিয়ে দিলো। রাত অবাক হয়ে বললো,

-“কি করছেন!”

-“হুশশ!”

শিশির আস্তে আস্তে রাতের কানে ঝুমকা,হাতে চুড়ি পড়িয়ে দিলো। রাতের তো এগুলো দেখে ভীষণ খুশি লাগছে। সে খুশিতে বলতে লাগে,

-“এগুলো আমার জন্যে আপনি এনেছেন?”

-“হুমম!”(মুচকি হেসে)

রাত দুহাত একসাথে করে চুড়িগুলো নাড়তে লাগলো। আর বলতে লাগলো,

-“চুড়ি আমার খুব ভাল্লাগে।”

শিশির গালে হাত দিয়ে রাতকে দেখছে!এই প্রথম হয়ত সে রাতকে এতটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। রাত কানের ঝুমকাগুলো নাড়িয়ে বললো,

-“এগুলোই তো সেদিন আমি দেখেছিলাম দোকানে।”

-“তাই এনেছি।”

রাত অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো শিশিরের মুখ পানে। শিশির তার জন্যে এতটা ভাবে?রাতের চোখে খুশিতে পানি এসে গেলো। শিশির সেটা মুছে নিয়ে বললো,

-“একদম না রাত!”

-“হু।”

-“আরেকটা জিনিস তো বাকি!”

-“কি?”(অবাক হয়ে)

শিশির নিজের কিনে আনা গোলাপটা রাতের কানে গুঁজে দিয়ে বললো,

-“এটা!”

রাত লাজুক হাসলো। শিশির রাতের চুলে ফুলটা গুঁজে দিয়ে বললো,

-“রেডি হয়ে আসি।”(হালকা হেসে)

রাত সম্মতি দিলো। শিশির রেডি হতে চলে গেলো। রাত সায়ানকেও রেডি করে নিলো।কিন্তু এত গানবাজনার মধ্যে ওকে নেওয়াটা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছে না। শিশির এসে বললো,

-“আরে সায়ানকে কেন রেডি করাচ্ছ?”

-“ছেলেকে রেখে যাব?”

-“আরে এত গান-বাজনা,কোলাহলের মধ্যে ও অসুস্থ হয়ে যাবে।ভয় পাবে!”

-“হুমম!”(মন খারাপ করে)

-“আর তুমিও এনজয় করতে পারবা না। ওকে মায়ের কাছে দিয়ে এসো। আর বলিও যেন মিতালিকে না দেয়।”

রাত মুখ বাঁকিয়ে বললো,

-“মিতালি থাকলে তো মিতালির কাছে দেবে।”

-“মানে?”(অবাক হয়ে)

রাত মুচকি হেসে বলতে লাগে,

-“বলেছিলাম না?এসে দেখবেন মিতালি নেই?”

-“কিন্তু সেটা তো মজা করে..”

-“না। মজা করে না।সত্যিই নেই।”

-“কিভাবে কি?”

রাত শিশিরকে আস্তে আস্তে সবটা খুলে বললো। শিশির রাতের হাত ধরে বললো,

-“কেয়ার কথাটা শুনে মনে হচ্ছিল ওকে জ্যান্ত পুঁতে দি। কিন্তু ভিডিওটা যে ডিলিট হইছে এটা শুনে রিলিফ লাগছে।”

-“হ্যা। আর ডিলিট না হলেই বা কি? আমার কাছে ওরটা আছে!”

বলেই হাত হাসতে লাগলো।শিশির রাতের গাল টেনে বললো,

-“তুমি পারোও রাত!”

-“আরেকটা মজার ভিডিও আছে।দেখবেন?”

-“কই দেখি?”

রাত মিতালির ওই বাদরের মত লাফানোর ভিডিওটা শিশিরকে দেখালো।শিশির হো হো করে হাসতে লাগলো। রাতও হাসছে।কিছুক্ষণ পর রাত হাসি থামিয়ে শিশিরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। শিশিরকে এভাবে হাসতে দেখেনি বেশি। তাই উপভোগ করছে। তাছাড়া শিশির হাসলে তাঁর গালের পাশে একটা গর্ত হয় যেটাকে আমরা টোল বলি। এটাই রাতের বেশ লাগে।রাতকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শিশির বলে উঠে,

-“কি পিচ্চি?”

-” না কিছু না।”(চাপা হেসে)

শিশির মজা করে বলে উঠে,

-“একদম তোমার মত লাফাচ্ছে।”

রাত চোখ বড় বড় করে বললো,

-“মানে?”

-“মানে তুমিও কিছু না বুঝেই এমনে লাফাও।”

রাত রাগে দুঃখে শিশিরের হাতে চিমটি দিয়ে বললো,

-“একদম বাজে কথা বলবেন না।”

-বাজে কই! সত্যিই তো।”

-“সত্যি তাই না?”

-হুম!”(হেসে)

-“দেখাচ্ছি!”

বলেই রাত পাশ থেকে বালিশ নিয়ে শিশিরকে মারতে লাগলো।শিশির হাসছে।রাত আরো রেগে গেলো। শিশির একসময় রাতের কোমড় ধরে বিছানায় ফেলে বললো,

-“এবার?”

-“ছেড়েই দেখুন না!”

-“পাগল নাকি!”

এদিকে মা-বাবার এমন কান্ড দেখে সায়ান তো হাসছে। রাত সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

-“এই তুই হাসছিস!”

শিশির রাতের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।রাতের কপালে থাকা চুলগুলো সরিয়ে বললো,

-“রাত?”

রাত চোখ ছোট ছোট করে বললো,

-“কি?”

-“তোমার চোখগুলো বেশি সুন্দর! ”

রাতের হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। গালগুলো আস্তে আস্তে লাল হচ্ছে। সে তুতলিয়ে বললো,

-“কি..”

-“হুম”

রাত শিশিরের চোখের দিকে তাকালো।শিশির রাতকে মন ভরে দেখছে।আর রাত ভাবছে,

-“শিশির চৌধুরী কি রাতের প্রেমে পড়েই গেলো?”

____

রাত আর শিশির একত্রে ঢুকলো এঙ্গেজমেন্টের অনুষ্ঠানে। রিসাবদের নিজস্ব বাড়ি!বেশ বড়ই। রাত এসেছিলও বেশ কয়েকবার। যেহেতু ওরা ভালো বন্ধু আসাটাই স্বাভাবিক।রাত শাড়ির কুঁচি ধরে আস্তে আস্তে এগুচ্ছে। আর শিশির রাতের পিছনে।রাত আরেকটু এগুতেই দেখতে পেলো তার বন্ধুরা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।রাতকে দেখে এগিয়ে আসতেই রাত শিশিরের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।কারোর চোখে পড়েনি ব্যাপারটা। শিশির মুচকি হেসে বললো,

-“যাও।আমি এদিকটায় আছি।”

রাত মুচকি হেসে বন্ধুদের দিকে এগিয়ে গেলো।শিশির ব্যস্ত হয়ে গেলো কথা বলায়।এদিকে রাতকে দেখে নিপা বলতে লাগলো,

-“রাত!তোকে তো একদম পরীর মত লাগছে।তাই না শিহাব?”

শিহাবও সায় দিয়ে বললো,

-“একদম!রাত, তুই অনেকদিন পর শাড়ি পড়লি।”

রাত হেসে মনে মনে ভাবলো,

-“বাসায় তো রোজই পড়ি।”

তারপর চোখ গেলো রিসাবের দিকে।রিসাব অনেকক্ষণ যাবত তাকে দেখছে।রাতের কেমন অস্বস্তি হচ্ছে!সে জোরপূর্বক হেসে বললো,

-“রিসাব!কিছু না বলে তাকিয়ে আছিস যে!

নিপা আর শিহাব মিটিমিটি হাসছে। রাত সেদিকে তাকিয়ে বললো,

-“তোরা আবার হাসছিস কেন?”

-“না কিছু না।”

এদিকে রিসাব এখনো রাতের দিকে তাকিয়ে। রাত শিশিরের দিকে যাবে এমন সময় রিসাব রাতের হাত ধরে ফেললো। রাত অবাক হয়ে বললো,

-“এসব কি রিসাব!”

-“বলছি!”

বলেই সে রাতকে টেনে নিয়ে গেলো স্টেজের সামনে।সব আলো নিভে গেলো।আলো পড়লো রিসাব আর রাতের উপর। রাত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। রিসাব হাঁটু গেড়ে বসে নিজের কেনা সেই ডায়মন্ডের রিং টা বের করে বললো,

-“রাত?আই লাভ ইউ। উইল ইউ মেরি মি?”

রাত থমকে গেলো!চারিদিক থেকে সবাই বলছে, রাত সে ইয়েস!না!রাত সবার মাঝে শিশিরকে খুঁজে চলেছে।পেয়েও গেলো। একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে শিশির রাতের দিকে অনুভূতিহীন চোখে তাকিয়ে। রাত অসহায় চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।শিশির কিছু বলছে না কেন?শিশির নিজের চোখে জমে থাকা পানিটা মুছে ভীরের মধ্যে হারিয়ে গেলো। এদিকে রাতকে কিছু বলতে না দেখে রিসাব বলে উঠলো,

-“কি হলো রাত?চুপ কেনো?”

রাত অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকায়।রিসাব এই তাকানোর মানে বুঝতে পারছে না!তার খুব ভয় হচ্ছে!শেষ অবধি রাত তার হবে তো!

চলবে…

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here