শিমুল ফুল পর্ব -২৫+২৬

#শিমুল_ফুল
#২৫
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

সুইটি রুমে গিয়ে হাত পা ছুড়ে নাচে ।পেশকারা আর আসমা বলে,
“কাজ হয়েছে?”

সুইটি চুল বাধতে বাধতে বলে,
“হবে না আবার!সবাই হা করে তাকিয়েছিলো।”

পেশকারা বিগলিত হয়ে হাসে।মজিব হাওলাদার ভোরেই বলেছিলো গ্রামের গণ্যমান্য লোক আর মেম্বাররা আসবে।দুই জামাই বউ মিলে এই বুদ্ধি করে যে উনাদের সামনে এমন কাজ করবে যে উনারা খারাপ বলবে আর কোন একটা উপায় বের করে শিমুলের সাথে সুইটিকে বেধে দেবে।পেশকারা সুইটির মাথায় হাত ভুলিয়ে বলে,
“তুই চিন্তা করবি না।শিমুলের রুমে তোকে পার্মানেন্ট থাকার ব্যবস্থা আমি করবো।”

সুইটি মাথা নেড়ে বললো,
“আচ্ছা।”

তারপর তিনজন বাহিরের দিকে কানপাতে কে কি বললো এটা শুনার জন্য।

শওকত চেয়ারম্যান তার আব্বার দিকে তাকায়।মজিব হাওলাদারের মুখে চোরা হাসি কিন্তু অবাক হওয়ার বান ধরে আছে।গ্রামের এক প্রবীণ মাতব্বর বলেন,
“চেয়ারম্যান সাহেব আপনি গ্রামের গণ্যমান্য মানুষ হয়ে যদি এমন দৃশ্য আপনার ঘরেই থাকে তাহলে কিভাবে হয়?”

শওকত এমন পরিস্থিতি আশা করেনি।তিনি আমতা-আমতা করে।
আরেকজন বলে,
“আপনি থাকতে এসব অনৈতিক কাজ কিভাবে হয়?”

রাবেয়া চা নিয়ে আসে।আলতো করে হেসে বললো,
“ভাইসাব তেমন কিছুনা।আসলে ও আমার ননদের মেয়ে আমিই শিমুলকে ডাকতে পাঠিয়েছি।আপনারা এসেছেন শিমুলের আসা উচিত তাই ডাকলাম।আপনারা কি বলেন এসব?সুইটি তো শিমুলের বোন।আর আমার শিমুলের তো মিজান ভাইয়ের মেয়ের সাথে সাপ্তাহ খানেক আগে বিয়ে হয়েছে।জানেন হয়তো আপনারা।”

শওকত আর মজিব হাওলাদার হা করে রাবেয়ার কথা গিলে।মহিলার কতো বড়ো সাহস পুরুষের মজলিসে এসে গলা বাড়ায়।উপস্থিত সবাই রাবেয়ার কথা বুঝে।তখনি শিমুল বেরিয়ে আসে।সবার সাথে হালকা পাতলা কথা বলে।সবাই প্রয়োজনীয় কথা বলে চলে যায়।শওকত হাওলাদার ফুসে রাবেয়ার কাছে যায়।
“বাহিরের মানুষের সামনে কথা বলার সাহস কই থেকে আসে?”

রাবেয়া শওকত হাওলাদারের দিকে তাকায়।সবসময় ভয় পেয়েছে কিন্তু যখন ছেলের চরিত্র নিয়ে কথা হয় তার বাবার সামনে যেখানে কিনা বাবাই চুপ।তখন রাবেয়া চুপ থাকতে পারেনা।
“আমার ছেলের চরিত্র নিয়ে কথা হচ্ছে আর আমি চুপ থাকবো?”

“তুমি বেশী বেড়ে গেছো।”

“ছেলের ভালোর জন্য না হয় এতোটুকু বাড়লাম।”

শওকত হাওলাদার আর কিছু বলার আগে শিমুল কাছে আসে।গম্ভীর গলায় বললো,
“আব্বা।পুষ্পকে আজকের মধ্যে বাড়ি আনবো।ব্যবস্থা করেন।”

শিমুলের কথা শুনে শওকত হাওলাদার চোখ পাকিয়ে তাকায়।
“এখন সম্ভব না।”

“আপনার ভাগনী যে এসব অসভ্যতামি করছে দেখেন না?আমার বউ এনে দেন।”

পলাশ রুম থেকে বেরিয়ে নাস্তা খেতে যাচ্ছিলো ভাইয়ের কথা শুনে বললো,
“আব্বা,যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের মানুষ অন্য জায়গায় রেখে কি লাভ?মিজান চাচারে বলে দেন আজকে সন্ধ্যায় অমরা যাবো।”

পলাশের কথা শুনে শওকত হাওলাদার পলাশের দিকে তাকায়।
“এখন এসব সম্ভব না।”

শিমুল ত্যাড়া গলায় বললো,
“কেন?আজকের মধ্যে পুষ্পকে ঘরে আনবো আর এটাই ফাইনাল।ভাইয়া বুঝাও।”

পেশকারা এসে বলে,
“শিমুল ঠিকই তো বলেছে।তুই রাজি হয়ে যা।”

তারপর শিমুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভাই তুই টেনশন করিসনা আজকেই বউ আনা হবে।”

মজিব হাওলাদারও মত দেয়।সবাই যখন মত দিচ্ছে তখন শওকত হাওলাদার আর কিছু বলার রাস্তা পেলেন না।ছেলের পাগলামি ইতোমধ্যে দেখেছে,ওই এক পয়সার মেয়ের জন্য তো আর ছেলের ক্ষতি কামনা করা যায় না।শিমুল তার যত্নে গড়া সৈনিক পুষ্পর জন্য তো শিমুলকে হাতছাড়া করা যাবে না।পুষ্পকে না হয় এই বাসায় এনে শায়েস্তা করবে।শিমুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
“যা তোর আম্মাকে নিয়ে শপিং করে আন।নতুন বউ তো আর এমনি এমনি আনা যাবে না।”

সবাই শওকতের কথা শুনে অবাক হয়।শিমুল হঠাৎ করে তার আব্বাকে জড়িয়ে ধরে,
“ধন্যবাদ আব্বা।”

শওকত মনে মনে পুষ্পকে নিয়ে ছক কষে।এমনভাবে খেলতে হবে যেন সাপও মরে লাঠিও না ভাঙ্গে।তখনি ফোন করে মিজান শেখকে জানিয়ে দিলেন আজকে বউ নিতে আসবে।

সুইটি ডাইনিংয়ে বসে আছে শিমুল গিয়ে বললো,
“তোকে এক বদনা ধন্যবাদ।তুই সকালে এই কাজটা না করলে আমার বউ আনা আরো দেরী হতো।তুই সহজ করে দিলি।আয় আজকে আমার বিয়ে উপলক্ষে তোরে একজোড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেল কিনে দেই,বাথরুমে ব্যবহার করিস।আয় আয়।”

শিমুল এটা বলে তার আম্মাকে নিয়ে শপিংয়ে যায়।সুইটি নাক ফুলিয়ে তার নানুর দিকে তাকায়।পেশকারা চোখের ইশারায় সুইটিকে আশ্বস্ত করে।

পলাশ আজকে একটু তাড়াতাড়িই কলেজে যাচ্ছে।সারারাত ঘুম হয়নি চোখ ভিষণ জ্বলছে।আজকে কলেজে তাড়াতাড়ি যাওয়ার কারন হচ্ছে নিধি।কালকে নিধিকেই প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে দেখেছিলো,নিধি বাংলা শিক্ষক হিসেবে জয়েন করেছে।নিধির আসার ব্যাপারটায় পলাশ বেশ অবাক হয়েছে,সাথে প্রিয় কাজলচোখ দেখতে পেয়ে খুশীও হয়েছে।পলাশ এগিয়ে এসে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু নিধি সবার সাথে কথা বলে বাসায় চলে গেছে।নিধিকে আবার দেখতে পেয়েই পলাশের হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে।বুকের আগুনে তুশ পড়ে জ্বলেছে দাউদাউ করে।পলাশ সারারাত ঘুমাতে পারেনি।কলেজে গিয়ে দেখে নিধি অফিস-রুমে বসে আছে।নিধির সামনে যেতে পলাশের লজ্জা লাগছে।তারপরেও পলাশ সামনে এগিয়ে যায়।নিধির কাছে বসে বললো,
“কেমন আছো নিধি?”

নিধি কোন কথা না বলে উঠে চলে যায়।পলাশ সেদিকে তাকিয়ে তার চোখ ছলছল করে উঠে।সে কখনো কাউকে নিজের ব্যাথাটা বুঝাতে পারলো না।বুকের চাপা কষ্ট কেউ দেখলো না।

শিমুল পুষ্পর জন্য লাল টুকটুকে একটা শাড়ি কিনে।তার ফুলকে আজকে লাল রঙে দেখবে যদিও কালকে দেখেছে কিন্তু আজকে তো নিজের কাছে নিয়ে আসবে।শিমুলের বুকটা খুশীতে কেমন কেঁপে কেঁপে উঠে।তার আম্মা আর তিয়াসকে নিয়ে শপিং শেষ করে।

মিজান শেখের কাছে চেয়ারম্যান যখন মেয়ে নেয়ার কথা বলে তখন উনার বুকটা কেঁপে ওঠে।ঘরের অবস্থা এখন এমন যে রোকসানা ,মুন্নী,পুষ্প সবাই কাঁদছে।মিজান মেয়ের কাছে এসে বসে।মেয়েটা লেখাপড়ায় খুব ভালো,পুষ্পরও ইচ্ছা ছিলো অনেক পড়বে মিজান শেখও মানা করেনি মেয়ের ইচ্ছামতো পড়াবে বলে কতো বিয়ের সমন্ধ নাকোচ করেছে তার ইয়োত্তা নেই।কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো?যেই বাবা মেয়ের মাঝে নিজের মাকে খুঁজে পেতো সেই মেয়েকেই মে//রেছে।এখন পুষ্পকে চেয়ারম্যান বাড়িতে নিয়ে যাবে বলাতে মিজান শেখের কলিজা কাঁমড়ে উঠে,মেয়েটাকে যে খুব ভালোবাসে।পুষ্পর দিকে তাকিয়ে পুষ্পর মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয়,কিন্তু কিছু বলতে পারে না,কান্নায় গলা আটকে আসে।বাবার স্পর্শ পেয়ে পুষ্প ঠোঁট উল্টে কেঁদে দেয়।এটা ঠিক তার মন শিমুলের কাছে যেতে চায়,সবসময় শিমুলের সানিধ্যে থাকতে চায় কিন্তু এখন যখন বাবা মাকে ছেড়ে যাবার কথা এসেছে পুষ্পর বুকটা পুড়ছে।মিজান শেখ উঠে চলে যায়।বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে আর অভিমান রেখে কি হবে?মেয়ে তো শশুড় বাড়ি পাঠাতেই হবে।উনারা সন্ধ্যায় আসবে।মিজান শেখ আয়োজনে লেগে পড়ে।

সন্ধ্যার দিকে শিমুল গাড়ি নিয়ে আসে।আসার আগে অবশ্যই বাসর সাজিয়ে এসেছে।তিয়াসের এই নিয়ে কি হাসাহাসি।
“সালা কেউ কি নিজের বাসর নিজে সাজায়?”

শিমুল তখন সাজাতে ব্যস্ত।হেসে হেসে বললো,
“বিয়ে একবার,বাসরও একবার।নিজের মতো না সাজালে দেখে তৃপ্তি আসবে না।”

“সবাই কি ভাবছে বল তো?”

“সবাই কি ভাববে এটা ভাবতে গেলে তো হবে না।আমার ফুলকে আমি ফুলের রাজ্যে এনে বসাবো।”

সাজানো শেষ হলে তিয়াশ শিমুলের হাসিখুশী মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।ভালোবাসার পূর্নতা আসলেই সুন্দর।

রাত নয়টার দিকে পুষ্পকে নিয়ে আসা হয়।রোকসানা কেঁদে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে আহা মেয়েটাকে কতো মে/রেছে কতো মন্দ কথা বলেছে এখন তো চলে যাচ্ছে।পুষ্পরও অবস্থা খারাপ।গাড়িতে শিমুল পুষ্পর মাথাটা টেনে তার কাধে নেয়।শিমুল হাসে ফিসফিস করে বলে,
“আমার কাছে যাওয়ার জন্য যে তুমি এতো কান্না করবে আমি জানতামই না।”

পুষ্প কিছু বলেনা।বাবা মাকে ছেড়ে এসেছে মন খারাপ লাগছে।পুষ্পর চুপ থাকা দেখে শিমুল বললো,
“আচ্ছা কেঁদো না।তুমি কাঁদলে ভালো লাগে না।”

পুষ্প চারদিকে তাকায়।সবসময় বাহির থেকেই চেয়ারম্যান বাড়ি দেখেছে কখনো ভেতরে আসেনি,আজকেই প্রথম ভেতরে আসলো,পুষ্পর মনে হলো সে যতটা ভেবেছে শিমুলরা তার থেকেও বেশী ধনী।কেন জানি চারিদিকে এতো দামী জিনিসপত্র দেখে পুষ্পর হাফসাফ লাগে।সেদিনতো ভেবেছিলো মরেই যাবে সব শেষ কিন্তু আজকে সে এই বাড়ির বউ।বাহিরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে।পুষ্পর মনে পড়ে তার মা বলতো বিয়ের দিন রাতে বৃষ্টি হলে নাকি বউ ভাগ্যবতী হয়।পুষ্পও কি ভাগ্যবতী?সে তার ছোট এই জীবনে শিমুলকে পেয়েছে এর চেয়ে বড়ো ভাগ্য আর কি হতে পারে! পুষ্প একা ড্রয়িংরুমে বসে আছে আশেপাশে কেউ নেই,কেউ নেই বললে ভুল হবে একটা পনেরো বছরের মেয়ে ঘুরঘুর করছে,পুষ্প আগে রাস্তায় এই মেয়েকে একবার দেখেছিলো কিন্তু পরিচয় জানে না।পুষ্পর মনটা শুধু শিমুলকে খুঁজে একবার এসে মুচকি হেসে ফিসফিস করে বলে গেছে একটা মিটিং আছে,যেতে হবে।জরুরী নয়তো আজকে শিমুলকে কেউ নড়াতে পারতো না।এই মানুষটাকে দেখলেই শান্তি লাগে।

রাবেয়া এগিয়ে আসে।পুষ্পর কাছে বসে পুষ্পর হাত ধরে।মেয়েটাকে তার ভিষন পছন্দ হয়েছে।প্রথম বউ বলেই কিনা পুষ্পকে খুব আপন লাগছে।
“পুষ্প আমি শিমুলের মা।”

পুষ্প রাবেয়াকে চিনে।তারপরেও পরিচয় দেওয়াতে সালাম করে।রাবেয়া আলতো হেসে গলার হার খুলে পুষ্পকে পড়িয়ে দেয়।
“তুমিও আমাকে মা বলে ডাকবে পুষ্প।আমার মেয়ে নেই তো মেয়ের মুখে মা ডাক শুনার খুব ইচ্ছে।তুমি কথায় কথায় আমাকে মা বলবে।ঠিক আছে?”

উনার কথার ধরনে পুষ্পর চোখ ভিজে উঠে।আসলেই উনার থেকে স্নেহের ঘ্রান পাওয়া যাচ্ছে।উনার চাহনিতে কেমন আপন আপন ছোঁয়া।কথায় ছেয়ে আছে সরলতা।
“ঠিক আছে মা।”

“শিমুল আর তোমার কি অবস্থায় বিয়ে হয়েছে তা তো জানোই।পরিবারের বাকি সবার মেনে নিতে একটু সময় লাগবে।তাদের কোন কথায় তুমি কষ্ট পেও না।কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবে।”

“জ্বী আচ্ছা।”

ফুলি তখন আসে।রাবেয়া পরিচয় করিয়ে দেয়।
“পুষ্প এ হলো ফুলি।আমার আরেক মেয়ে।আমাকে সব কাজে খুব সাহায্য করে।তোমাকেও সাহায্য করবে।”

ফুলি গদগদ হয়ে বললো,
“ভাবী আপনের কতা কতো হুনছি।ভাইজানে ঠিক কইছে আপনে হেছাই পরীর মতো।”

পুষ্প হাসে।এই মেয়েটা সেই কখন থেকে ঘুরঘুর করছে এতোক্ষণে কথা বললো।

রাত বারোটায় পুষ্পকে শিমুলের রুমে পাঠানো হয়।পুষ্প রুমে ঢুকার পরে শিমুল দরজা বন্ধ করে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।পুষ্প অবাক হয়ে পুরো রুম দেখছে।ফুল দিয়ে এতো সুন্দর করে সাজানো যে মুগ্ধ না হয়ে থাকা যায় না।সে শিমুলের দিকে ফিরে।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে,তারপর ফিক করেই দুজনে হেসে ফেলে।শিমুল এগিয়ে আসে।পুষ্পর হাত ধরে বললো,
“আমার ফুলকে ফুলের রাজ্যে না আনলে তো ভিষণ বাজে লাগতো।”

পুষ্প হাসে।তার এতো সুখ সুখ লাগছে।সুখে বুকটা চিনচিন করে উঠছে।

“পছন্দ হয়েছে?”

পুষ্প মাথা দুলিয়ে বললো,
“হয়েছে।”

“এই রুমটা তোমার।এই রুমে এখন থেকে তোমার রাজত্ব চলবে।”
তারপর পুষ্পর দিকে কিছুটা ঝুঁকে নিজের বুকে হাত রেখে বললো,
“এই মানুষটাও তোমার,মানুষটার উপরেও তোমার রাজত্ব বহাল থাকবে।”

পুষ্প শিমুলের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।শিমুলের দিকে তাকালেই পুষ্পর বুকটা সুখে ব্যাথা করে।এই যে এখন পুষ্পর দম বন্ধ হয়ে আসছে।শিমুলের ঠোঁট টিপে হাসিটাও খুব শান্তি দিচ্ছে।আজকে সে পুরোপুরি শিমুলের।বদ্ধ রুমে একা শিমুলের কাছে এসে পুষ্পর সারা শরীর শিরশির করে কেঁপে ওঠে।

শিমুলের কেমন অনুভূতি হচ্ছে এটা বুঝানো সম্ভব না।সে ফুলকে জয় করে তার ঘরে নিয়ে এসেছে।পুষ্পর হাতের কাঁপন টের পেয়ে শিমুল হাসে।আচ্ছা তার ফুলবউ তাহলে বরকে ভয় পাচ্ছে?শিমুল আরেকটু ভয় দেখাতে পুষ্পকে খাটে বসিয়ে বললো,
“আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।একটু অপেক্ষা করো।”

তারপর বাথরুমে ঢুকার আগে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে,
“আজকে তো তুমি শেষ ফুলরানী।”

শিমুলের কথা শুনে পুষ্পর হাত পা অসাড় হয়ে আসে।এতোদিন যদিও শিমুল কাছাকাছি এসেছে কিন্তু পুষ্পর এই বিশ্বাস ছিলো যে শিমুল কিছু করবেনা।কিন্তু আজকে পুষ্প শিমুলকে মোটেই বিশ্বাস করতে পারছেনা।দুষ্টু দুষ্টু চোখের চাহনি আর এখন এই কথাটা শোনার পরে তো আরো ভয় লাগছে।

শিমুল ফ্রেস হয়ে ট্রাউজার পরে বের হয়।তাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় গিয়ে দাঁড়ায়।

পুষ্প শিমুলের আদুল গা দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে।ফর্সা বুকে কালো পশম যেনো সৌন্দর্য দ্বিগুণ করে দিয়েছে।পুষ্পর ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দিতে।শিমুলের মুচকি হাসি সমেত দুষ্টু দুষ্টু চাহনি দেখে আবার মনের ভয় মাথা নেড়ে উঠে।

শিমুল গায়ে বডিস্প্রে করে আয়না দিয়েই পুষ্পকে দেখে।পুষ্পর লজ্জামাখা ভীতু চাহনী দেখে বললো,
“সুন্দরী কি আমাকে ভয় পাচ্ছে?”

পুষ্প কিছু বলেনা।এই এতো এতো চেনা শিমুলকে এতো ভয় লাগছে কেন?পুষ্পর লজ্জাও যেন আজকে প্রতিযোগিতা দিয়ে বাড়ছে।শিমুল আলমারি খুলে হেংগার থেকে গেঞ্জি নেয়।গায়ে দিয়ে বিছানায় বসে।পুষ্প মাথাটা নিচু করে ফেলে।তার যে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

শিমুল তাকিয়ে থাকে।পুষ্পর লজ্জামাখা চাহনি দেখতে ভালো লাগছে।বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হাতের নাগালে প্রিয় রমনী শিমুলের নিষিদ্ধ ইচ্ছারা তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে বারবার ফুসলিয়ে দেয়,শিমুলের সারা শরীরে কেমন কাঁপন ধরে।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে পুষ্পর হাত ধরে মুখোমুখি বসে।মোলায়েম গলায় বললো,
“বৃষ্টির রাত,একা ঘর,সাথে শিমুল ফুল,আজকে হয়ে যাক কিছু ভুল।”

পুষ্প তো এই ভুলের ভয়ই পাচ্ছিলো।পুষ্পর পেট কেমন ব্যাথা করে উঠে।আজকে কি তার মরন হবে?
#শিমুল_ফুল
#২৬
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

পলাশ বিছানায় শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।শিমুল তার চার বছরের ছোট।বড়ো ভাই আগে বিয়ে করার কথা থাকলেও পলাশ বিয়েতে কখনো রাজি হয়নি তার তো নিধিকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে ইচ্ছা করেনি।শিমুলের বিয়েতে আজকে কেন জানি খুব লজ্জা লাগছিলো।শিমুল কতো খুশী মনে শপিং করেছে,ফুল কিনে নিজ হাতে বাসর সাজিয়েছে।এসব দেখে নিজের অজান্তেই পলাশের বুকটা পুড়েছে,সে মোটেই শিমুলকে হিংসা করেনি বরং এসব দেখে বারবার নিজের প্রতি ঘৃণার পরিমানটা বেড়েছে,সে যে কাপুরুষ ছিলো এটা বারবার মনে পড়ে।নিধির সাথে বিয়ে হলেও কি পলাশ এমন খুশী হতো?খুশী তো হতোই কিন্তু শিমুলের মতো তা প্রকাশ করতে পারতো না।এই শান্ত স্বভাব,লাজুকতা এগুলোর সুযোগ নিয়েই শওকত হাওলাদার নিধিকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।নিধি এখন পলাশকে দেখেও কথা বলেনা।আচ্ছা নিধি কেন এই কলেজেই জয়েন করেছে?পলাশের থেকে বদলা নিতে?নিধিকে দেখলে যে কি পাগল পাগল তা পলাশ আর তার আল্লাহ জানে।মেয়েটা তার সাথে কথাও বলেনা।আজকে পলাশের ইচ্ছা করছে ম/রে যেতে।এতো কষ্ট আর কতোদিন সয়ে যাবে?পুরুষ বলে কাউকে কখনো পলাশের বুকের পাহার-সম কষ্টের কথা বলা হয়নি।তেতিশ বছরের এই ছেলেটাও যে মাঝরাতে ফুপিয়ে কাঁদে এটা কেউ দেখেনি।নিধিকে দেখে পলাশের মনে হয়েছে ঠিক আগের নিধি,একবারো মনে হয়না বিয়ে হয়েছে।কিন্তু তার আব্বা তাকে বলেছিলো নিধির বিয়ে উনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দিয়েছে।নিধির বিয়ের দিন রাতে পলাশ যেভাবে কেঁদেছিলো কেউ দেখলে ভাবতো ছেলেটা বুঝি পাগল।সে নিধিকে পায়নি এই পুতুলটা আর কখনো তার হবার না পুতুল এখন অন্যকারোর কিন্তু নিধি এখন তার সামনে কলেজে চাকরি করবে।কথা বলা যাবে না,ভালো করে দেখাও যাবে না,তার কি কষ্ট হবেনা না?পলাশের নাকের পাটাতন ফুলে ঠোঁট মৃদু কেঁপে ওঠে,বোবা কান্নায় চোখ দিয়ে পানি পড়ে বালিশ ভিজে যায়।মোবাইল হাতে নিয়ে নিধির কলেজ ড্রেস পড়া ছবিটা দেখে,কিছুক্ষণ দেখার পরে মোবাইল স্কিনেই ভেজা ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দেয়,গালের সাথে ছবিটা মিশিয়ে ফিসফিস করে বললো,”আমি কেন একজীবনে আমার ভালোবাসাকে পেলাম না?এই একলা ঘরে কেন নিধি নেই?আমার বুকে কেন নিধি ঘুমায় না?”
এই প্রেমিকের এমন সব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?পলাশ উত্তরের আশা করে না।হাত দিয়ে বালিশ খামচে চুপচাপ চোখের পানি ফেলে।যাকে পাওয়া যাবেনা তার প্রতি কেন এতো ভালোবাসা?বিধাতা কেন তার সাথে প্রণয়ের সুতো বেধে দেয়?এতো কষ্ট পাওয়ার জন্য?

সুইটি তার নানীর থেকে ঘুমের ট্যাবলেট এনেছে।শিমুলের রুমে দেওয়ার জন্য দুধ রেডী করে।দুধের গ্লাসে ট্যাবলেট মিশিয়ে দেয়।কিছুতেই দুজনের বাসর করতে দেবে না।ধীর পায়ে রুমের দিকে এগিয়ে যায়।শিমুল তো রুমে ঢুকে গেছে,দরজায় টোকা দিবে এমন সময় রাবেয়া আসে।পুষ্পর হাতের ট্রে নিজের হাতে নিয়ে বলে,
“কি করছো?”

রাবেয়াকে দেখে সুইটি আমতা-আমতা করে বললো,
“নানু বলেছিলো এগুলো দিতে।”

সুইটির ক্ষোভের কথা রাবেয়ার অজানা না।এই মেয়েকে কোনভাবেই বিশ্বাস করা যাচ্ছে না।উনি তো নিজ হাতে যা যা প্রয়োজন সব শিমুলের রুমে রেখে এসেছে তাহলে আবার কেন?
“সব দেয়া হয়েছে।”

সুইটি ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললো,
“অহ জানতাম না।”

রাবেয়ার হাত থেকে দুধের গ্লাস নিতে নিতে বলে,
“তাহলে এটা ফেলে দেই?”

রাবেয়া মনে মনে হাসে।এই পুচকি তাকে ঘোল খাওয়াবে?
“ফালাবে কেন?তুমি খাও।”

সুইটি চমকে বললো,
“না না মামি আমি খাব না।”

কিন্তু রাবেয়াও ছাড়ার পাত্রী না।জোড় করে সুইটিকে দুধটা খাইয়ে মাথায় হাত ভুলিয়ে বলে,
“রুমে যাও অনেক রাত হয়েছে।”

সুইটি মাথা নিচু করে চলে যায়।মনে মনে ভাবে,কাকে ঘুম পাড়াতে আসলাম আর এখন কিনা নিজেই ঘুমাবো?একবার না পারিলে দেখে নিবো শতবার,তাও এই মেয়েকে বাড়ি ছাড়া করবই।শিমুল পুষ্পর সাথে কি করছে এটা ভেবে সুইটি দিশেহারা।

পুষ্প মাথা নিচু করে রাখে।শিমুলের গায়ের পারফিউমের ঘ্রানে কেমন মাথা ঘুরে যাচ্ছে।তার মনে হচ্ছে এই রাত না আসলেই ভালো হতো।শিমুল মাথা নিচু করে পুষ্পর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“সত্যি করে বলবে তুমি কি ভয় পাচ্ছো?”

পুষ্প কথা বলেনা।শিমুলের হাসি,গলার স্বর সবকিছুই যেন লজ্জা মাখানো।শিমুল পুষ্পর ডান হাতের উল্টো পিঠে চুমু খায়।শিমুলের ছোঁয়া তো এই প্রথম না তারপরেও পুষ্প যেন নতুন করে শিমুলের উষ্ণ আদরের পরশ পেয়ে মৃদু কাঁপে।
“আমার দিকে তাকাও না।বউ সাজে মন ভরে দেখি।”

আচ্ছা এমন করে বললে কি তাকানো যায়?যায় না।পুষ্পও তাকাতে পারে না।শিমুল মুচকি হাসে।পুষ্প ভয় পাচ্ছে এটা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে।শিমুলও ছাড়ার মানুষ না।হাত দিয়ে মুখ উঁচু করে বললো,
“আমাকে দেখো।”

পুষ্প বললো,
“দেখছি।”

“মন ভরে দেখো।”

“হুম।”

শিমুল পুষ্পর কোলে শুয়ে পড়ে।
“আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না ফুলরানী আমার ঘরে।”

পুষ্প শিমুলের চুলে হাত রেখে বললো,
“আমারো বিশ্বাস হচ্ছে না।”

“এখন থেকে যখন তখন তোমাকে দেখতে পারবো।”

“হুম।”
পুষ্প মুগ্ধ নয়নে শিমুলের খুশীভরা মুখ দেখে।তার মতো সামান্য পুষ্পকে পেয়ে শিমুল এতো খুশী এটা ভাবলেই সুখে পুষ্পর চোখ ভিজে উঠে।শিমুল হাত দিয়ে পুষ্পর গাল ধরে বললো,
“আমি জানি তুমি আমার ভালো বউ হবে।হবে না?”

“জ্বী।”

“ভালোবাসি বউ।”

“আমিও।”

“তাহলে এতো ভয় আর লজ্জা পাচ্ছো কেন?”

পুষ্প শিমুলের চোখে চোখ রাখে।সত্যিটাই বলে,
“জানিনা।কিন্তু আজকে কেন জানি ভয় লাগছে।”

শিমুল হাসে।
“আমি এমন কিছুই করবোনা যেটা ভয়ের মতো হবে।আমাকে ভরসা হয় না?”

“হয়।”

শিমুল উঠে বসে বললো,
“ফ্রেস হবেনা?চলো।”

পুষ্প ধীরপায়ে গিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়ায়।আস্তে আস্তে সব গহনা খুলতে থাকে।আয়নায় আড়চোখে শিমুলকে দেখে।শিমুল বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে পূর্ণদৃষ্টি পুষ্পর দিকে।পুষ্প তাকিয়ে হাসলে শিমুল এগিয়ে আসে।পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে মুখ ঠেকিয়ে বললো,
“আমি হেল্প করি?”

পুষ্প শিমুলের দিকে ফিরে বললো,
“আচ্ছা।”

পুষ্প হাতগুলো শিমুলের সামনে এগিয়ে দেয়।শিমুল চুপচাপ চুড়ি খুলে দেয়।শাড়িতে লাগানো সেফটিপিন খুলে দিলে পুষ্প ড্রেস পাল্টে একটা হলুদ সুতির শাড়ি পড়ে।পুষ্প বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে শিমুল বিছানায় একটা বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।পুষ্প ধীর পায়ে বিছানার কাছে এসে দাঁড়ায়।শিমুল মুগ্ধ নয়নে পুষ্পকে দেখে,মেয়েটাকে আজকে বেশিই সুন্দর লাগছে,তার হয়েছে বলেই হয়তো।হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকলে পুষ্প বিছানায় বসে।শিমুল পুষ্পর হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে বুকে মিশিয়ে নেয়।শিমুল এখন চাইলেই পুষ্পর সাথে ইন্টিমেন্ট হতে পারে।পুষ্পর দেহের প্রতি ভাজে ভাজে ছুঁয়ে দিতে পারে।কিন্তু শিমুল এমন করবেনা।প্রথম রাত নিয়ে মেয়েদের অনেক ভয় থাকে।পুষ্প কি আতংকে আছে এটা শিমুল খুব বুঝতে পারছে।পরিবার ছেড়ে এসে পুষ্প মানসিকভাবে বিধস্ত।শিমুল এখন ঘনিষ্ঠ হলে হয়তো পুষ্প মুখে কিছু বলবেনা কিন্তু মনে মনে হয়তো ভাববে শিমুলের ঘনিষ্ঠ হতে এতো তাড়া!এটাই কি শিমুলের প্রধান চাহিদা?পুষ্পর সুপ্ত মনে কষ্ট জমা হবে।পুষ্পর বাহুডোরে শিমুল কোন ভয়ের কারণ হয়ে যেতে চায় না বরং কোন ভয় ছাড়া ভালোবাসার চাদরে জড়াতে চায়।আজকের রাতটা এভাবে বুকে নিয়েই কাটুক সারাজীবন তো পড়েই আছে।এতোবছর অপেক্ষা করতে পেরেছে এই দু-তিন দিনও পারবে।শিমুল নিজেকে একটু মিষ্টি শাস্তি দিতে চায়,পুষ্পল
কে একটু একটু করে নিজের দিকে ধাবিত করে পাগল বানাতে চায়।শিমুল শুয়ে পুষ্পকে বুকে নেয়।শিমুলের মনে হলো প্রিয় মানুষকে বুকে জড়িয়ে ধরার মতো শান্তির আর কিছু নেই।বরাবরের মতো পুষ্পকে মনে হলো তুলোর বস্তা।আর এই তুলোর বস্তা বুকে নেয়াতে শিমুলের মনে হলো,তার বুকটা সুখে সুখে কানায় কানায় পূর্ন হয়ে গেছে।মাথা নিচু করে পুষ্পর কপালে চুমু দিয়ে বললো,
“আজকে সারারাত তোমাকে দেখবো।মন ভরে দেখবো।এতো কষ্ট করে যে পাখিকে পুষ মানাতে পেরেছি তাকে আজকে দেখেই মন ভরাবো।”

পুষ্প অবাক হয়ে বললো,
“সত্যি?”

শিমুল পুষ্পর নাকের সাথে নাক ঘষে বললো,
“সত্যি।”

পুষ্পর কাছে শিমুল এক পাগল প্রেমিক।সে ভাবতেও পারেনি শিমুল তাকে বুঝে কিছুটা সময় দিয়ে দিবে।এই ব্যাপারটায় পুষ্পর মনে শিমুলের জন্য শ্রদ্ধা আরো বেড়ে যায়।সেও শক্ত করে শিমুলকে জড়িয়ে নেয়।বুকে নাক ঘষে ফিসফিস করে বললো,
“তুমি এতো ভালো কেন?”

শিমুল পুষ্পর নরম ঠোঁটে আলতো করে একটা কাঁমড় দিয়ে বললো,
“তোমার বর যে তাই।”

পুষ্প শিমুলের দিকে তাকিয়ে শিমুলের হালকা কালচে ঠোঁটে স্ব-ইচ্ছায় ডুব দেয়।শিমুল হাসে, প্রেয়সীর প্রেম ডুবে সামিল হতে নিজেও সাড়া দেয়।পুষ্পর নরম শরীরটা হাত দিয়ে নিজের বুকের উপর তুলে নেয়।পুষ্প শিমুলের দিকে তাকিয়ে হাসে।শিমুল হাসে না,তার চোখে মুখে এখন রাজ্যের তৃষ্ণা,এ তৃষ্ণা মিটবে কিভাবে?

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here