শিমুল ফুল পর্ব- ৪৯

#শিমুল_ফুল
#৪৯
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

পুষ্পর পেটে বাবু আসার পর থেকেই যে বমি শুরু হয়েছে এই নয় মাসের ভরা পেট নিয়েও গড়গড়িয়ে বমি করে দেয়।রোকসানা আর রাবেয়া গ্রামে নিয়ে যেতে চাইলেও পুষ্প যেতে চায় না।তার মনে হয় গ্রামে গেলে শান্তির পরিবর্তে অ/শান্তি বেশী হবে।শিমুলকে ছাড়া তার এক দন্ড শান্তি লাগবে না।আর শান্তি লাগবেনা বলেই তো সে যেতে চায় না।পুষ্প মাঝে মাঝে ভাবে কোন পূন্যের মূল্যে আল্লাহ শিমুলের মতো হাজবেন্ড তার ছোট জীবনে দিলো!যে কিনা নিজের সুখের আগে পুষ্পর ভালোটার খেয়াল রাখে।হ্যাঁ শিমুল কথা রেখেছে শত ক/ষ্টের পরেও সে তার পুষ্পকে তার রাজ্যের রানী করেই রেখেছে।ছোট ছোট আবদার,রাগ,অভিমান সব ভালোবাসায় ভুলিয়ে দিয়েছে।এইতো!এতেই পুষ্প খুশী।শিমুলের প্রশস্ত বুকে যখন মাথাটা রাখে তখন তার মনে হয় এটা তার সিংহাসন।এই সিংহাসনে বসলেই সে তার রাজ্যের সুখ উপভোগ করতে পারে।পুষ্পর মনে হয় শিমুলের লোমশ বুকে যাদু আছে যা তাকে শান্তি দেয়,শুধু শান্তি বললে ভুল হবে তার মনে হয় এটা সুখের পাহাড় যেখানে নিজের সব অশান্তি নিয়ে হাজির হলেও একবার জড়িয়ে ধরলেই সব অশান্তি মুহূর্তেই শান্তিতে পরিনত হয়।আচ্ছা কেউ কি বলতে পারবেন প্রিয় মানুষের বুকে কি থাকে?এটা কি আল্লাহর নিয়ামত?কেনো এতো সুখের হাতছানি এই বুকে!শিমুলকে ছেড়ে গ্রামে গেলে পুষ্প ভালো থাকতে পারবেনা।শিমুল তার অভ্যাস।শিমুলের আদরে পুষ্পর ঘুম ভাঙে আর আদর নিয়েই ঘুমায়।গ্রামে গেলে এতো ভালোবাসবে কে?না না শিমুলকে ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার কথা পুষ্প কল্পনাও করতে পারে না।তাছাড়া এখানে তো তার কোনো কষ্ট হচ্ছে না শিমুল তার যে যত্ন নিচ্ছে অন্য কেউ এতো যত্ন নিতে পারবে কিনা জানা নেই।এতো ভালোবাসে কেনো ছেলেটা?এতো ভালোবাসা এতো যত্ন পুষ্পর কপালে সইবে তো?আগে সবাই বলতো তার বরের বয়স বেশী দুজনের অনেক ব্যবধান সংসার সামলে নিতে কষ্ট হবে।কিন্তু পুষ্পর মনে হয় ভালোবাসা থাকলে বয়স কোনো ব্যাপার না।বয়স মাত্র একটা সংখ্যা।তার শিমুল বুঝধার,বিচক্ষন,যত্নশীল।এক কথায় শিমুলকে একজন আদর্শ স্বামী বলা যায়।তখন রাত কয়টা পুষ্পর জানা নেই পিঠের ব্যা/থায় ক্ষীণ আর্তনাদ করে উঠে।পুষ্পর প্রেগ্ন্যাসির পর থেকেই শিমুলের ঘুম অনেক পাতলা হয়ে গেছে।হয়তো পুষ্পর সুবিধা অসুবিধার কথা ভেবেই চোখ ঘুমালেও কান সর্বদা সজাগ থাকে।শিমুল বেডসুইচ চেপে লাইট জ্বালিয়ে উঠে বসে।পুষ্পকে বসে থাকতে দেখে বললো,
“কি হয়েছে?ব্যা/থা হচ্ছে?পুষ্প!”

পুষ্প ব্যাথায় ফুপিয়ে উঠে।বসা অবস্থায় একহাতে পিঠ আর আরেক হাত বুকে ধরে কাঁ/দছে।শিমুলের প্রশ্নে মাথা ঝাকায়।শিমুল বিছানা থেকে নেমে ড্রেসিংটেবিলের সামনে যায় ভুলিজেল নামের অয়েনমেন্টটা হাতে নিয়ে আবার বিছানার দিকে আসে।পুষ্পর প্রেগ্ন্যাসির যখন ছয় মাস তখন থেকেই তার বুকে পিঠে ব্যা/থা হয়।ব্যা/থাটা বেশীরভাগ রাতে হয়।ডাক্তারের শরনাপন্ন হলে ডাক্তার কিছু ওষুধ আর এই জেলটা দেয়।জেলটা দিলে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়।পুষ্পর অসুস্থতা শিমুলকে ব্যর্থিত করে।এই যে প্রথম মাস থেকে অসুস্থ এই ব্যাপারটা শিমুলকে অ/পরাধী করে তুলে তার বারবার মনে হয় মেয়েটা আরেকটু বড়ো হয়ে নিতো অথবা শিমুল আরেকটু সাবধান থাকতো তাহলেই তো কুট্টুস আরেকটু দেরীতে আসতো।পুষ্প সারাদিন বমি করে,ভরা পেট নিয়ে বমি করতে যে খুব কষ্ট হয় এটা সে মুখে না বললেও শিমুল বুঝে।কিভাবে যেনো পাখির মনের খবর শিমুল বুঝে যায়।মেয়েটা আজকাল বেশ ঘনঘন রাগ অভিমান করে।উনিশ বিশ হলেই গাল ফুলিয়ে বারান্দায় চলে যায়।আদরে,ভালোবাসায়,মিষ্টি কথায় ফুসলিয়ে সেই অভিমান ভাঙাতে হয়।শিমুল বিরক্ত হয় না বরং প্রিয়তমার রাগে নিজেকে জলের মতো ছিটিয়ে দেয়।পুষ্প বেশীক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না।শিমুল পুষ্পর পা/গলামি দেখে হাসে।বাবু পেটে আসার পর থেকেই পুষ্প টমেটোর মতো গুলগাল হয়ে গেছে,চেহারায় আলাদা একটা স্নিগ্ধতা,কেমন মা মা মায়াময় চেহারা।শিমুল ইদানীং আরো বেশী মুগ্ধ হয়,টুপটাপ করে তার নিজস্ব টমেটোর প্রেমে পড়ে যায়।আচ্ছা একজনের প্রেমে কয়বার পড়া যায়?শিমুল মাঝেমাঝে ভাবে অন্য ছেলেরা কিভাবে ঘরে বউ রেখে আরেক নারীতে আ/সক্ত হয়?সে তো এসব ভাবতেই পারে না।সারাক্ষণ তার চোখে পুষ্পর মিষ্টি মুখ,ভরসায় বাড়িয়ে রাখা হাত,আর আদুরে বিশুদ্ধ ভালোবাসার ছোঁয়া চোখে ভেসে উঠে।এই নারী ফেলে কি অন্য নারীতে ডুব দেয়া সম্ভব?না শিমুল একজনাতেই আসক্ত থাকতে চায়,এই নারীতে মজেই বাকী জীবনটা কাটাতে চায়।কয়েক নারীর প্রেমে পড়া তো খুব সহজ কিন্তু এক নারীতে আ/সক্ত থাকতে পারে কয়জন?এই নারীর গায়ের ঘ্রানে সর্বস্ব উজার করে নিজেকে মুক্ত পাখির মতো খোলা আকাশে উড়াতে চায়।সে আস্তে করে পুষ্পর পিঠে মালিশ করে দেয়।পুষ্প শিমুলের পায়ের উপর শুয়ে পড়েছে।হঠাৎ পুষ্প শিমুলের হাত টেনে তার ফুলে উঠা পেটের উপর রাখে।কিছুক্ষণ পরে শিমুল বলে,
“এটা হাত নাকি পা?”

পুষ্পর মুখে রাজ্য জয়ের হাসি।আহ্লাদী গলায় বললো,
“জানিনা।”

শিমুল পেটে হাত ভুলিয়ে দেয়।
“পা বোধহয়।দেখোনা কিভাবে ধাক্কা দিয়ে উঁচু করে ফেলেছে।”

“বাবু যখন নড়ে আমার কি শান্তি লাগে।”

শিমুল পুষ্পর হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।সে শুনেছিলো প্রত্যেক মায়ের জন্যই মাতৃত্বের সময়টা আনন্দদায়ক এই কথাটা পুষ্পকে দেখে স্বচোক্ষে প্রমান পেলো।মেয়েটা এই কাঁদে তো এই হাসে।আবার বাবুর সাথেও কথা বলে।পেটে লাথি দেয়া জায়গায় আলতো হাত ভুলিয়ে বললো,
“ব্যা/থা করে না?এভাবে লাথি দিচ্ছে!”

মূহুর্তেই পুষ্প কাঁ/দো/কাঁ/দো গলায় বললো,
“করে।”

শিমুলের অপ/রাধবোধ আবার গাঢ় হয়।মন খা/রাপ করেই বলে,
“তোমার ক/ষ্টটা আর ভালো লাগে না।আর যেনো কয়দিন?”

“নয়মাসের পর থেকে যেকোনো সময় ডেলিভারি হতে পারে।”

শিমুলকে চিন্তিত্ব দেখায়।
“আমিতো বাসায় থাকিনা তখন কিছু হলে?”

“ফোন করে জানিয়ে নিবো।”

“ধরো তারও সুযোগ পেলে না।”

“আরে পাবো।”

শিমুল পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে বলে,
“আম্মার কাছে দিয়ে আসি।কোন সময় কোন বি/পদ হয় বলা যায় না।একা বাসায় রাখার ভরসা পাচ্ছি না।তোমাকে বাসায় একা রেখে আমিও শান্তি পাই না।”

পুষ্প শিমুলকে আঁকড়ে ধরে।কাঁ/দো কাঁ/দো গলায় বলে,
“আমি যাবো না।”

পুষ্পর কাঁ/দো/কাঁ/দো গলা শুনে শিমুল হতবাক।
“আরে কাঁ/দো কেনো?তোমার ভালোর জন্যই তো বলছি।”

“আমার সব ভালো হচ্ছো তুমি।তোমাকে ছেড়ে যাবো না।”

শিমুল ফিক করে হেসে দেয়।পুষ্পর মাথায় হাত ভুলিয়ে বলে,
“আচ্ছা।আমাকে ছেড়ে যেতে হবে না।”

“আচ্ছা।”

“ঘুমাও।”

পুষ্প খানিক ভেবে বললো,
“আমাকে নতুন বই এনে দিও তো।”

শিমুল অবাক হয়ে বললো,
“সবগুলো পড়ে শেষ করে ফেলেছো?”

পুষ্প মুচকি হাসে।
“হ্যাঁ।”

“আচ্ছা।”
গ্রাম থেকে আসার পর থেকে পুষ্প লেখাপড়ায় বেশ মনোযোগী। ভার্সিটির পড়া শেষ করেও অন্যান্য বইয়ের প্রতিও বেশ ঝোক।অ/সুস্থ শরীর নিয়েও সারাক্ষণ পড়ে।শিমুল কয়েকবার বারণ করেছে এতো চাপ নেয়ার জন্য কিন্তু প্রতিউত্তরে পুষ্প হেসে হেসে বলেছে,’শিমুলের মান রাখতে হবে।’সেদিন পেশকারার কথা যে পুষ্পর মনে এভাবে গেথে যাবে সেটা কে জানতো?থাক পড়ুক শিমুল বই এনে দেয় আর পুষ্প পড়ে।তার মনে যে হাজারো স্বপ্নের রেশ।যেকোনো মূল্যেই হোক পূরণ করা চাই।শিমুল চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে।

কয়েকদিন পরে পুষ্পকে গ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।সিদ্ধান্ত নেয়া হয় মিজান শেখ আর রোকসানা এসে পুষ্পকে গ্রামে নিয়ে যাবে।রোকসানার এক কথা প্রথম বাবু হওয়ার সময় মেয়েরা মায়ের বাড়িতেই থাকে।সেই হিসাবে পুষ্পকে তাদের কাছে রাখা উচিত।পুষ্প চোখের পানি মুছতে মুছতে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তার ছোট ব্যাগে নেয়।শিমুল বসে বসে সবটাই পর্যবেক্ষণ করছে।হঠাৎ পুষ্প ফুসে উঠে বললো,
“আমাকে তা/ড়ানোর এতো তা/ড়া?হ্যাঁ!ম/রে গেলে বুঝবা আমি কি ছিলাম।”

শিমুলেরও খারাপ লাগে।তার ভার্সিটিতে ফাইনার ইয়ারের পরিক্ষা চলছে।কোনো কোনো দিন বাসায় আসতে রাত হয়ে যায়।পুষ্পর সাথে থাকার মতোও কেউ নেই।এই অবস্থায় কোনো দূর্ঘটনা ঘটে গেলে!শিমুল সা/হস পায় না তাইতো তার শাশুড়ির সাথে কথা বলে পুষ্পকে নিতে উনাদের ঢাকায় এনেছেন।পুষ্পর কথায় বুকটা কেঁ/পে উঠে।বলে কি এই মেয়ে!সে উঠে এসে পুষ্পর হাতটা ধরে নিজের দিকে করে।
“তোমাকে তা/ড়াবো কেনো?তুমি আমার কলিজা না!কলিজা কেউ তাড়ায়?”

শিমুলের কথায় পুষ্পর মনটা কেঁদে ওঠে।অন্তর হয় বিবস।এই আদুরে মানুষ তার আদুরে আহ্লাদী কথা ছেড়ে পুষ্প কি করে থাকবে?শিমুলের আদুরে কথায় তার মনটাও আদুরে হয়ে উঠে।ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বলে,
“তাহলে গ্রামে যেতে দিও না।তোমাকে ছাড়া আমি ম/রে যাবো।”

শিমুল পুষ্পর ঠোঁটের ভাজে নিজের ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দেয়।পুষ্পর নাকের সাথে নিজের নাক হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো,
“ম/রার কথা বলো কেনো?তুমি ম/রলে তোমার শিমুলকে ভালোবাসবে কে?”

পুষ্প শিমুলের গলা আঁকড়ে ধরে।ফুসফুস করে শ্বাস ফেলে বললো,
“আমার ব্যা/থা শুরু হলেই তুমি চলে যাবে।মনে থাকবে?”

“থাকবে।”

“ঠিক মতো খাবার খাবে।আমাকে মেসেজ করে আদুরে কথা বলবে এইসব আদুরে কথা শুনলে আমার মন ভালো থাকে।”

পুষ্প নিজের ভালোলাগা খারাপ লাগা খুব সহযে প্রকাশ করতে পারে।শিমুলের থেকে আদায় করে নিতে যানে।তার কথা শুনে শিমুল গাল ভরে হাসে।
“আচ্ছা।”

পুষ্প মুগ্ধ চোখে শিমুলকে দেখে।ছেলেটা দিনদিন সুন্দর হয়ে যাচ্ছে না?এতো সুন্দর করে হাসতে হবে কেনো?শিমুল কি তাকে ছাড়াও ভার্সিটির সবার সাথেই এমন করে হাসে?পুষ্পর মুখটা ছোট হয়ে যায়।
“আমি না থাকলে অন্য কোনো মেয়েকে আবার পছন্দ করে ফেলবে না তো?”

শিমুল ভ্রুকুঁচকে পুষ্পর দিকে তাকায়।বলে কি এই মেয়ে?শিমুল কি এতো সস্তা?বউ না থাকলে অন্য দিকে চোখ দেবার মতো ছেলে সে না।তারপরেও এতো সন্দেহ?অবাক হওয়া গলায় বললো,
“এতো সন্দেহ!আল্লাহ!”

শিমুলের কুঁচকানো ভ্রুর দিকে তাকিয়ে পুষ্প নিভে যায়।শিমুলের গা ঘেষে দাঁড়িয়ে বললো,
“সন্দেহ না এটা ভ/য়।তোমাকে নিয়ে আমার খুব ভ/য় হয়।”

“কেনো?”

“যদি অন্য কেউ তোমাকে আমার থেকে সরিয়ে নেয়।আমি ভাবলেই ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে।”

শিমুল তৃপ্তিভরা গলায় হাসে।প্রিয়তমার চোখে হারানোর ভ/য় দেখার মজাই আলাদা।এই ভ/য়টা দেখলে সব প্রেমিক পুরুষ নিজেকে সুখী ভাবে।
“আমি তোমার।আমার সবটাই তোমার।অন্যকেউ চাইলেই কি তাকে ভালোবাসা যাবে?আমার একটা পুষ্প আছে।সুতরাং এসব ভেবে আর চিন্তা বাড়িও না।”

পুষ্প কিছু বলেনা।শূন্য চোখে শিমুলের দিকে তাকিয়ে থাকে।শিমুল পুষ্পর কপালে চুমু খায়।পুষ্পর মন খারাপের তাপ তার গায়েও লাগছে তাইতো মন ভালো করতেই আহ্লাদী গলায় বললো,
“খুব ভালোবাসি সোনা।তোমাকে অনেক মিস করবো।যেদিন ফিরে আসবে সেদিন সব জমানো ভালোবাসা উজার করে দেবো।প্রমিস।”

আহ্লাদী গলা শুনে পুষ্পও গলে যায়।শিমুলের খোচাখোচা দাড়িতে নিজের মোলায়েম গাল ঘষে বললো,
“আমিও খুব মিস করবো।”

সুইটির সংসারটা টিকেনি।মায়ের আর নানীর কু’তালে সংসার ভে/ঙে গেছে।প্রথমে হাজবেন্ড ভালো থাকলেও পরে আস্তে আস্তে সে তার মা বাবার পক্ষে কথা বলতে শুরু করে।আসলে ছেলেটা শিক্ষিত তো একটু দেরী হলেও স্ত্রীর অ/পরাধ ধরেছে,প্রথমে নারীতে ডুবলেও পরবর্তীতে বাবা মায়ের সাথে করা অন্যা/য়টা চোখে পড়েছে।সুইটিকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে ভালো হওয়ার সময় দিয়েছে কিন্তু সুইটি তার মা আর নানীর তালে নেচেছে।স্বামী শশুড়,শাশুড়ী কারো কথা শুনেনি।নিজের মর্জিমাফিক চলে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে এই বাড়ির বউ সে তাই সে যা বলবে তাই হবে।মা নানীর কথামতো সবার সাথে উ/গ্র ব্যবহার করে সবার ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করে দিয়েছে।সুইটি হয়তো ভুলে গিয়েছিলো স্বামীর বাড়ির কথা বাপের বাড়ির কানে আর বাপের বাড়ির কথা স্বামীর বাড়িতে বললে মঙ্গলের পরিবর্তে অ/মঙ্গল হয় বেশী।মায়ের কথামতো স্বামীর বাড়িতে চলে কতো মেয়ের সংসার যে ভা/ঙে তার ইয়োত্তা নেই।সে এখন বাবার বাড়িতেই থাকে।ইদানীং আসমাও তার সাথে কেমন ব্যবহার করে।সুইটি তর্ক করলে মা মেয়ের মাঝে ঝ/গড়া হয়।আসমা কথায় কথায় সুইটিকে অ/পয়া,ডি/বোর্সী,ন/ষ্ট মেয়ে ইত্যাদি বলে গা/লি দেয়।সুইটি তার মায়ের কথায় অবাক হয় এই মায়ের কথামতো চলেই তো তার সংসার ভা/ঙলো আর এখন আসমাই আবার এসব বলছে।দুঃ/খে ক/ষ্টে তার ইচ্ছা করে কোথাও চলে যেতে।

পুষ্প আজকে পনেরো দিন হতে চললো গ্রামে এসেছে।আজকে তার মনটা বেশ খা/রাপ।শিমুলকে কয়েকবার ফোন করেছে কিন্তু শিমুল ব্যস্ত।পুষ্প শিমুলকে শেষ একটা মেসেজ পাঠায়।
‘আমি তোমাকে এতো মিস করছি আমার অন্তর না ছুঁয়ে দেখলে তা টের পাবেনা।তুমি কি আমার অন্তর ছুঁয়ে দেখতে চাও?’

শিমুল রাতে ফ্রী হয়।রিকশায় বসে মোবাইল হাতে নেয়।সারাদিন পুষ্পকে সময় দেয়া হয়নি।মেসেজটা পড়ে মুচকি হাসে।পাখির মন খারাপের ভার নিতে ইচ্ছে হয়।পুষ্পর নাম্বারে ডায়াল করে কিন্তু ফোন রিসিভ হয় না।শিমুল ভাবে সারাদিন ব্যস্ততা দেখানোতে হয়তোবা রা/গ করেছে।কিন্তু তখনি মিজান শেখের কাছ থেকে ফোনটা পেয়ে শিমুলের সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়।শিমুল ফোন কানে নিয়েই হাউ/মাউ করে কা/ন্না শুনে।উনার কা/ন্না শুনে শিমুলের প্রথম যে কথাটা মনে পড়ে তা হলো,পুষ্প ঠিক আছেতো?সে ব্যস্ত গলায় বললো,
“আব্বা!পুষ্প ঠিক আছে?”

মিজান শেখ আ/হা/জা/রি করে বললো,
“পুষ্পকে পাওয়া যাচ্ছে না শিমুল।চার ঘন্টা ধরে খুঁজে পাচ্ছি না।”

শিমুলের বুকটা শূন্য মনে হয়।ধরা গলায় জোড়ে জোড়ে বলে,
“আমাকে এতোক্ষণে জানাচ্ছেন?আগে জানানোর দরকার ছিলো না?”

“আমরা ভেবেছিলাম আশেপাশে কোথাও আছে।কিন্তু মাগরিবের আজান দিয়েছে দুই ঘন্টা হয়ে গেছে,আশেপাশে কোথাও নেই।”

“আমি আসছি।”

শিমুল ফোনটা কান থেকে সরিয়ে হাতের মুঠোতে গুজে।রিকশা ওয়ালাকে বাস ট্রেশনের দিকে যেতে বলে।তার বুকের ভেতর উত্তালপাত্তাল হচ্ছে।অ/সহনীয় য/ন্ত্রণায় নিঃশ্বাস ব/ন্ধ হয়ে আসছে।চোখ ভরে পানি আসতে চাইছে।পুষ্পর মায়াবী মুখটা চোখে ভেসে মনে করিয়ে দিচ্ছে পুষ্পর বলা কথাগুলো,
“আমাকে তা/ড়ানোর এতো তা/ড়া?হ্যাঁ!ম/রে গেলে বুঝবা আমি কি ছিলাম।”
রিকশায় বসেই শিমুল নিঃশব্দে কেঁ/দে দেয়।পুষ্পকে হা/রালে শিমুল নিজেও ম/রে যাবে।মেয়েটা যে তার কলিজা!
চলবে…..

আরমাত্র কয়েক পর্ব বাকি।সাইলেন্ট পাঠকরাও মন্তব্য করবেন।আপনাদের মন্তব্য আমার প্রেরণা।ভালোবাসা আমার সব পাখিদেরকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here