শুকনো বকুলের মালা গাঁথিব পর্ব -১০

#শুকনো_বকুলের_মালা_গাঁথিব
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_১০

নুর চিতকার দিতেই ইরহাম এসে মুখ চেপে ধরল।

– এই মেয়ে এই সমস্যা কি? চেঁচাচ্ছ কেন?

– উম উম

– উম উম কি

নুর হাত দিয়ে মুখ দেখিয়ে দিলে ইরহাম বুঝতে পারে তারপর মুখ ছেড়ে দেয়।

– এবার বলো চিতকার দিলা কেন

– আপনি এমন অর্ধনগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাই

– সো হোয়াট?

– নির্লজ্জ ( বিড়বিড় করে)

– কিছু বললা শুনতে পাইনি।

– না কি আর বলব।

– এই ওয়েট ওয়েট তুমি এই বাষায় কি কর? নাকি আবার এই হ্যান্ডসাম বয়কে দেখে ক্রাশ খেয়ে পিছু পিছু বাসায় এমনকি রুম অবধি চলে আসছ? হুম হুম বলো বলো।

– আমি মোটেই ক্রাশ খাইনি। এরকম নির্লজ্জ লোকের উপর আমি ক্রাশ খাই না হুহ।আমি তো মাহফুজ আঙ্কেল এর বাসায় এসেছি।

– দেখছ মেয়ে সেই তো এক বাসাতেই আসলে শুধু শুধু ঢং করে একা একা রিক্সায় আসলা।

– আমি মোটেই ঢং করিনি। আমি কি জানতাম নাকি আপনিও এ বাসাতেই আসবেন।

– আচ্ছা বুজলাম তা এই রুমে কেন?

– আন্টি তো বলল দোতলার কর্নারের রুমে আসতে।

– বোকা মেয়ে জিজ্ঞেস করে আসবে না কোন কর্নারের রুমে আসতে বলেছে। বাম দিকে যাও।

– আচ্ছা।

নুর বাম দিকের রুমে গিয়ে দেখে বেশ গোছানো একটা রুম সেখানে। ব্যাগটা রেখে নুর গিয়ে ধপ করে খাটের উপর বসে পড়ে। স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। অবশেষে একটু বসার জো হলো। নুর মনে মনে খুশি হয় এটা ভেবে যে এখানে এরিম এর মতো একটা মিশুক মেয়ে আছে। যাক তাহলে কষ্ট হবে না।

এরপর কে’টে যায় বেশ কয়েকদিন। এরিম আর নুরের ফ্রেন্ডশিপটা আরো গভীর হয়ে ওঠে। ইরহাম এর সাথে মাঝে মাঝে খুনশুটি তো আছেই।

ইরহাম নিজের অনুভুতি নিয়ে দিধা দন্দের মধ্যে আছে। নুর মেয়েটাকে ওর কেমন যেন আপন আপন লাগে। তবে এটা ঠিক ভালোবাসা কিনা সেটা বুজতে পারছে না ইরহাম। তাই সামনেও আগাতে পারতেছে না।

নুরের পড়াশোনা আপাতত স্টপ হয়ে আছে। তবে নুরের বড় চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ আছে। তিনি বলছেন এক ইয়ার গ্যাপ দেয়ার জন্য। কি আর করার নুর ও চাচ্চুর কথা রাখতে বাধ্য। তবে এরিমকে তো ঢাকায় যেতে হবে। তাই যাওয়ার আগে ভাইয়ের কাছে আবদার করল ফুচকা খেতে যাবে তার সাথে। ইরহাম প্রথম যেতে চায় নি। তখন এরিম বলে ভাইয়া কালই তো চলে যাব আজ আমাকে আর নুরকে নিয়ে চল না। যেই শুনছে নুর যাবে ওমনি রাজি হয়ে গেছে যাওয়ার জন্য।

ফুচকা খাওয়ার সময় কোত্থেকে ইরহাম এর বন্ধু মহল এসে হাজির। এরিমকে তো সবাই চিনে তাই ওর ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করল না। তবে নুর এর ব্যাপারে জানতে চাইল যে মেয়েটা কে। ইরহাম নুরকে কাজিন বলে পরিচয় করিয়ে দিল। তখন সাদাদ নামের এক ছেলে হেসে বলল

– সমস্যা নেই বন্ধু কাজিন থেকে তোর ভাবি বানানোর ব্যাবস্থা আমি করবনে।

ইরহাম নুর এর দিকে তাকিয়ে দেখে কথাটা শুনে নুর মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। এটা দেখে রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ইরহাম এর। তখন কিছু না বলে বিল মিটিয়ে নুর আর এরিমকে নিয়ে চলে আসে। তবে নুরকে তোর ভাবি বানাবো কথাটা যেন কোন মতেই ভুলতে না ইরহাম। রাগে মাথায় মনে হচ্ছে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ঠিক এই মুহুর্তে কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছে না ইরহাম। সাদাদকে ইচ্ছে মতো পেটাতে পারলে শান্তি লাগত। যেই ভাবা সেই কাজ। বেরিয়ে পড়ল রাতের অন্ধকারে। সাথে নিল একটা নতুন সিম। যেই সিমটার নাম্বার কেউ জানে না। সাদাদ দের বাড়ি থেকে একটু দূরে এসে সেই সিম থেকে সাদাদকে ফোন করল। ফোন দিয়ে বলল আসিফ এক্সিডেন্ট করেছে। আসিফ হচ্ছে ইরহাম এর সবচেয়ে কাছের বন্ধু।

যা প্লান করেছিল তাই হল। আসিফ এর এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে সাদাদ ঠিক বেরিয়ে আসল বাসা থেকে। ইরহাম এর দেয়া ঠিকানায় চলেও আসল। কিন্তু এসে কাউকে দেখতে না পেয়ে চমকাল সাদাদ। তবে ভয় পেল না। আশপাশে দেখতে লাগল। ফোনে আননোন নাম্বার থেকে পাঠানো ঠিকানো মেলাল। সবই তো ঠিক আছে। এমন সময় কেউ মনে হল মাথায় বাড়ি দিল। সাথে সাথে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ল সাদাদ। মাথা ফেটে গেল। রক্ত বেরুল। ইরহামই এম্বুলেন্স এ ফোন দিল। এম্বুলেন্স এসে সাদাদকে নিয়ে গেল। অন্ধকারে ইরহাম এর চেহারা আবছা দেখা গেলেও সাদাদ বুজতে পারল না এটা কে ছিল। হসপিটাল এ রেখে আসিফদের সবাইকে ইরহামই ফোন দিল। তবে কে মা’রছে সেটা বলল না। ফোন পেয়ে সবাই ছুটে আসছে দেখতে।

সাদাদকে মা’রাটা অন্যায় হয়েছে তা বুজতে পারছে ইরহাম। তবে অনুতাপ হচ্ছে না এজন্য। কিন্তু কেন মা’রল সাদাদকে তার কোন হিসেব মেটাতে পারল না ইরহাম। নিজের চুল নিজেই টেনে ধরল। আর কেউ বুঝতে না পারলেও আসিফ ঠিকই বুজতে পারল এর মধ্যে একটা কিন্তু আছে। সেই কিন্তু টা কি তাও অনুমান করতে পারল আসিফ। তাই ইরহাম কে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসল। আসিফের বাসায় নিয়ে আসল ইরহামকে। ভনিতা না করে সরাসরি জানতে চাইল

– ইরহাম তুই সাদাদকে মে’রেছিস তাই না।

– কি বলছিস তুই।

– তুই যাই করিস না কেন আমাকে জানাস। তোর মনে হয় এবার তুই আমার থেকে লুকাতে পারবি।

-………..

– কেন মে’রেছিস বল। কি সমস্যা তা তো জানি।

ইরহাম বুজল আর লুকিয়ে লাভ নেই। আসিফ নাছোড়বান্দা এটা বের করেই ছাড়বে। তাই সিদ্ধান্ত নিল বলে দেওয়ার।বললও সবটা। সব শুনে আসিফ বলল

– তুমি তো প্রেমে পড়ছ মামা।

– জানিনা।

– বুজলাম প্রেমে পড়ছোস তাই বলে বন্ধুকে মা’রবি সালা এত জেলাসি।

– জানিনা মাথা কাজ করছিল না।

– সাদাদ এর জায়গায় আমি থাকলে আমাকেও মা’রতি।

– হয়ত।

– সালা সেলফিস। সর এখান থেকে। আমরা ম’রি বন্ধু বন্ধু কইরা আর বন্ধু ম’রে তার না হওয়া গার্লফ্রেন্ড এর জন্য।

– না হওয়া গার্লফ্রেন্ড মানে?

– না হওয়াই তো। এখনো কি তোর গফ হইছে?

– কিন্তু আমি ওকে বলব কীভাবে। আমি পারব না।

– জেলাসির জন্য বন্ধুরে পেটাতে পার আর তার সামনে বলতে পারবা না ফাইজালমি কর।

– কি করব এখন।

– কি আর করবা বলবা তারে।

– যদি রিজেক্ট করে।

– তাইলে আর কি ঘুরবা পিছে পিছে।

– ছি: কি বল। আমার একটা মান সম্মান আছে না।

– তুমি যে বন্ধুর মাথা ফাটাইছ মামা এটা জানলে মান সম্মান থাকবে।

– জানবে কীভাবে। তুই না বললে জানবে না। আর যদি জানে তাইলে নেক্সট সিট বুকিং হবে তোর জন্য।

-আরে ভাই আমার রক্তের দাম আছে। আমি রক্ত ঝড়াব না হুহ। সে যাই হোক যদি সাহসী মানুষ হও তাইলে আজকে রাতেই প্রোপোজ করবা নয়ত কাল বন্ধু মহলে তুমি ভাইরাল মামা।

– তোরে তো।

আসিফ তো উসকানি দিয়া দৌড় তবে দোটানায় ফেলে দিয়ে গেল ইরহামকে। ইরহাম কি করবে না করবে মাথা কাজ করছে না। তবে এখন হসপিটাল যাওয়া দরকার। সাদাদ এর কি অবস্থা জানা দরকার।



রাতে ছাদে যাওয়া একটা অভ্যাস হয়ে গেছে নুরের। রাত যেন তার নিঃসঙ্গতার সাথী। রাতের আকাশ যেন খুব করে টানে নুরকে তাই রাতে ছাদে আসে। নিচে লাগানো বকুল গাছটা ছাদ ছুয়েছে। বকুলের ফুলগুলো ছাদের উপর ঝড়ে পরে। রাতে ছাদে এসে সেগুলো এক জায়গায় জড়ো করে। এগুলোর পেছনে কোন কারন নেই ভালো লাগে তাই করে। আজ ও প্রতি দিন এর মতো ছাদে এল। এসে কতক্ষণ চন্দ্রবিলাস করল। আকাশটায় পূর্ন একটা থালার মতো চাঁদ উঠেছে। আজকের চাঁদটা দেখে মনটা খুশি হওয়ার বদলে খারাপ হল। ছোট বেলা থেকে এমন পূর্ন চাঁদ উঠলে সেটা দেখতে চাইত নুর। এর জন্য মা কত বকাঝকা করত। আর এখন কেউ কিছু বলে না। তবুও এই চাঁদ দেখে ততটা আনন্দ হয় না যতটা না মায়ের চাঁদ মুখখানা দেখে হতো।

নিয়ম মতো শুকনো বকুল ফুল গুলো এক জায়গায় করতে ভুলল না নুর। কেবল মাত্র এক মুঠো ফুল হাতে তুলে নিয়েছে এর মধ্যে কর্নকুহরে কারো কারো গলার স্বর পৌছাল নুরের

– এত রাতে ছাদে কি করছ নুর।

একা একা ছাদে তার মধ্যে কারো গলার স্বর পেয়ে ভয় পায় নুর। ইরহামকে সামনে আসতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়।

– কি ব্যাপার নুর এত রাতে ছাদে শুকনো বকুল গুলো জড়ো করছ কেন।

– শুকনো বকুল গুলো ভালো লাগে আমার।

– প্রতিদিন ই ভোরে এসে দেখি ফুলগুলো। তুমি এগুলো এক জায়গায় করো কেন?

– জীবনের হিসেব মিলাই

– মানে

– হ্যা। আমার জীবনটা তো এদের মতোই। এই যে শুকনো বকুল ফুল গুলো। এগুলো যখন সতেজ ছিল তখন এদের কত কদর ছিল। এদের দিয়ে মালা গাঁথা যেত। এখন কেমন অবহেলায় পড়ে আছে। মা বাবা চলে যাওয়ার পর তো আমিও এদের মতোই পড়ে আছি। শুকনো বকুলে যেমন কেউ মালা গাঁথে না তেমন আমার জীবনেও এখননআর কোনো…..

নুরকে তার কথা শেষ করতে না দিয়েই ইরহাম বলল

– এই শুকনো বকুলেই মালা গাঁথিতে চাই আমি

– এ্যা

– এ্যা নয় হ্যা। #শুকনো_বকুলের_মালা_গাঁথিব আমি। তার জীবনটাকে সুন্দর মতো সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব নিতে চাই আমি। সারাজীবন তার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখতে চাই আমি। দিবে কি সেই সুযোগ

– আপনি..

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here