শুকনো বকুলের মালা গাঁথিব পর্ব -০৮ ও এক্সট্রা

#শুকনো_বকুলের_মালা_গাঁথিব
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_৮

নুর অনেক দিন পরে আজ একটু ভার্সিটি মুখো হয়েছিল। কিন্তু কলেজ থেকে বাসায় আসার পর বাসার পরিবেশ দেখে চোখ কপালে নুরের। বাসায় মেহমান ভর্তি হয়ে গেছে। সবাই এদিক থেকে সেদিক ছোটাছুটি করছে। বাচ্চারাও আছে বেশ কয়েকজন। তারা চিল্লাপাল্লা করে বাসা পুরো মাথায় উঠিয়ে ফেলেছে। আশপাশে যারা আছে সবাই অপরিচিত। পরিচিত মুখ তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। কাকে জিজ্ঞেস করবে বাসায় কি হচ্ছে। তাই আস্তে আস্তে নিজের রুমের দিকে যায়। সেখানে গিয়ে তো আরো অবাক। রুম যেরকম রেখে গিয়েছিল তার কিছুই নেই। এখানে বসে কয়েকজন মধ্যবয়স্ক মহিলা গল্প করছে। তাদের বাচ্চারা রুমের মধ্যে ছোটাছুটি করছে। এই কড়া রোধের মধ্যে ভার্সিটি থেকে এসে যে বিশ্রাম নিবে তার জো নেই। কাকে কি বলবে ও নিজেই আছে অন্যের বাসায় তাদের মেহমান রা এলোমেলো করছে কিছু করার ও নেই। তাই ব্যাগটা কাধে চেপেই নবনীর রুমের দিকে। এমন সময় এক মহিলা বলে উঠে

– এইত সেই মেয়ে। আজ তার বিয়ে আর সে আজকেই ভার্সিটি গেছে। কান্ড জ্ঞান বলে কিছু আছে তা তো মনে হয় না।

– হ্যা ভাবি তা ঠিক বলছেন। আর কেমন ড্যাং ড্যাং কইরা ঘুইরা বেড়াইতেছে। একটু লজ্জা শরম ও নাই মাইয়ার।

নুর কিছুই বুজল না৷ এ বাসায় আবার কার বিয়ে। কে নির্লজ্জের মতো ঘুরে৷ তাই চোখ গোল গোল করে মহিলা গুলোর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন বোঝার চেষ্টা করল যে কি বলছে ওনারা। বাট নুরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মহিলা গুলো চুপ হয়ে গেল।

নুরের বড্ড অসস্থি হচ্ছে। ফ্রেশ হওয়া দরকার তাই আর না দাড়িয়ে নবনীর রুমের দিকে গেল। গিয়ে দেখে দরজা ভেতর থেকে লক করা৷ এই মেয়েটা এমনই। কেমন যেন স্বভাবের। বাসায় বেশি মানুষ জন আসলেই নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে বসে থাকে যাতে ওর রুমে কেউ না ঢুকতে পারে। নুরের এই বিষয় টা বড্ড বিরক্ত লাগে। নবনীর এই ব্যবহার টা মেটেও ঠিক না। বলেওছিল এ ব্যবহার চেন্জ করতে৷ বাট নবনী শোনেনি।

নুর দুই তিনবার দরজা ধাক্কা দিতেই নবনী দরজা খুলে দেয়। নুরকে দেখে টেনে ভেতরের দিকে নিয়ে যায়। নবনীর এমন টানাহেঁচড়া করায় ভ্রু কুচকে নুর তাকায় ওর দিকে। তারপর নুরের অস্থিরতা দেখে বলে শান্ত হ আগে। তারপর বল এভাবে টেনে আনলি কেন। আর বাসায় এত মেহমান কেন?

– আপা তুমি কিছুই জানো না।

– কি জানব?

– আরে আজ তোমাকে দেখতে আসবে। দেখতে আসবে না শুধু একবারে আজই বিয়েটা হয়ে যাবে। ছেলের বাবা মায়ের মেয়ে পছন্দ আছে।

-কিহ…

– হ্যা আপা ঠিক বলছি। পড়শু রাতে আমি বাবা আর মায়ের কথা কা’টাকা’টি শুনছিলাম এটা নিয়ে। বাবা মোটেও রাজি নয় এ বিয়েতে। কিন্তু মা তার সিদ্ধান্তে অটল।

– এটা কেমন কথা নবু। আমার বিয়ে দিবে আর আমাকে একবার জিজ্ঞেস করার ও প্রয়োজন বোধ করল না বড় মা। প্রতিটা মানুষেরই একটা নিজস্ব ইচ্ছে অনিচ্ছা থাকতে পারে।

– আপা ছেলেটা কে জানতে চাইবে না।

– আমি বড়মার সাথে কথা বলতে চাই। সপ এগুলো করতে পারে না। এগুলো অন্যায়।

– আপা মায়ের ধারনা তুমি তাকে মায়ের মতোই ভালোবাস। তার কথা তুমি ফেলতে পারবে না। তুমি যদি তার সাথে কথা বলতে যাও সে তোমাকে এমন ভাবে বুঝাবে তুমি আর না করতে পারবে না। তুমি পালিয়ে যাও আপা। জেনে বুঝে তোমাকে নড়কে পাঠাচ্ছে আমার মা। আপা আমি চাই না তোমার জীবনটা আর নষ্ট হোক। জানো আপা ছেলেটা হচ্ছে আমার বড় খালার ছেলে। নেহাল ভাইয়া। যার নিজের জীবনেরই এখনো কোন সঠিক নিশানা নাই।

– ওই যে ড্রা’গ এডিক্টেট তোর একটা কাজিন আছে ওটা।

– হ্যা আপা তাইত বলছি। নেহাল ভাইয়ের নিজের জীবনের কোন ঠিক নেই সেখানে তোমার জীবন জুড়ে তোমার জীবনটাও নষ্ট করবে।

– কিন্তু বড়মা এটা কেন করছে নবু। আমি তো তাকে আমার মায়ের মতোই ভাবতাম। তবে সে কেন আমার জীবনটা নষ্ট করতে চাইবে।

– তুমি এখনো বোকাই রয়ে গেলা আপা। এ জগৎ বড়ই কঠিন আপা। এখানে স্বার্থ ছাড়া কেউ কাউকে ভালোবাসে না। যে যে যার যার স্বার্থের কথা চিন্তা করে চলে। তুমি নিজের জীবনের ভালো চাও তো চলে যাও এখান থেকে।

– নবু আমি কোথায় যাব রে। আমার যে যাওয়ার মতো কোন জায়গা নেই।

– জীবনে করলা টা কি। একটা বয়ফ্রেন্ড ও নেই যার হাত ধরে পালাবা।

নুর এর চোখের কোটর এতক্ষণে পানিতে টইটুম্বুর অবস্থা। এখনি গাল বেয়ে ঝর্ণাধারা নামবে যেন। তার ছোট বোনটা আজ কেমন বড়দের মতো কথা বলতেছে। নুর এখন বুজতেছে সব সময় যে শুধু বড়রাই সঠিক সিদ্ধান্ত নেয় এমনটা নয়। মাঝে মাঝে ছোটদের থেকেও কিছু শেখা যায়। নুর কোনদিন চায় নি কোন ছেলের সাথে মায়ায় জড়াতে। তার মা বাবা তার জন্য যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই বেস্ট সিদ্ধান্ত হবে এমনটাই চিন্তা ভাবনা ছিল। কিন্তু আজ এখানে এসে মনে হচ্ছে আসলে কেউ একজন যদি এমন থাকত যে নিঃস্বার্থ ভাবে শুধু আমাকেই ভালোবাসত তবে আজ নির্ধিদায় তার হাতটা ধরতে পার। ছলছল নয়নে ছোট বোনের দিকে তাকায় নুর

– আমার যে পালিয়ে যাওয়ার জায়গা নেই রে নবু।

হঠাৎ দরজায় কেউ নক করে। দু বোনের কথোপকথন এখানেই স্টপ হয়ে যায়।

নবনী গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে ভিতরে প্রবেশ করে রায়হান সাহেব।
ভেতরে ঢুকেই আবার দরজা লাগিয়ে দেয়। নবনী আর নুর অবাক হয়ে রায়হান সাহেব এর কর্ম দেখছে। ভিতরে এসেই নুরের মাথায় হাত রাখলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন আমাকে ক্ষমা করিস মা। আমি তোর ঢাল হয়ে সারাজীবন থাকতে পারলাম না। চলে যা তুই এ বাসা থেকে। এখানে থাকলে আজকের পর থেকে তুই বেচে থেকেও ম’রে যাবি। তার থেকে বরং চলে যা। নবু তোকে যা যা বলল সবই শুনেছি আমি। চিন্তা করিস না তোর থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

এতক্ষণ নবু যত যাই বলুক নুরের তবুও বিশ্বাস ছিল ওর বড়মা এমন কিছু করতে পারে না। সে তো ওকে অনেক ভালোবাসে। নবু হয়ত প্রাঙ্ক করছে ওর সাথে। কিন্তু বড় চাচ্চুর কথা শুনে এখন আর প্রাঙ্ক মনে হচ্ছে না। হৃদয়ের কোনে জন্ম নেওয়া সেই ছোট ভরসার প্রদীপটাও টুপ করে যেন নিভে গেল।

এর মধ্যে রায়হান সাহেব তার পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে দিলেন। বললেন এই ঠিকানায় গেলে রায়হান সাহেব এর পরিচয় দিলেই হবে। রায়হান সাহেব আগেই কথা বলে রাখবেন লোকটার সাথে। তারপর পকেটে হাত দিলেন। সেখান থেকে বেশ কয়েকটি কাগজের নোট বেরিয়ে এলো। বেশিরভাগই হাজার টাকা বা পাঁচশ টাকার নোট ছিল। পকেটে যা ছিল সবই নুরের হাতে গুজে দিলেন তার চাচ্চু। এতগুলো টাকা দিয়ে একজন মানুষের বেশ কিছু দিন খুব ভালো ভাবেই কে’টে যাবে। ওর চাচ্চু যে ওকে সত্যিই ভালোবাসে তাইত চাচ্চুর প্রতি পাহাড়সম সম্মান মনপ এসে জমা হলো।

– ধন্যবাদ চাচ্চু।

– পা’গলি মেয়ে ধন্যবাদ এর কি আছে। এটা আমার কর্তব্য ছিল। তোর বাবার রেখে যাওয়া আমানত তুই।

নুরের খুব জানতে ইচ্ছে হলো ওর চাচ্চু ওর চাচিকে কেন আটকাল না। প্রশ্নটা করেই ফেলল। চাচ্চু তুমি চাচিকে কিছু বলোনি কেন সে যে এমন করছে।

– মা রে খালিদার কাছে এমন কিছু সত্যি লুকিয়ে আছে যা সামনে আনার জন্য ওর সাথে কম্প্রোমাইজ করে চলতে হচ্ছে নয়ত সেসব সত্যি যে চাপা পড়ে যাবে মিথ্যার আড়ালে। এসব তুই পরেও জানতে পারবি। আর দেরী করিস না। চলে যা তুই।

তাদের কথার মধ্যে বাধ সাধে নবনী।

– বাবা আপা এখন বের হলে মায়ের সামনে পড়ে যাবে আর মা কোনভাবেই আপাকে এখন বাহিরে যেতে দিবে না। মা সামনের দিকেই আছে কি ঢ়েন করতেছে।

-তাহলে বের কীভাবে হবে….

– বাবা আমার কাছে আইডিয়া আছে।

– কি শুনি।

– আমাদের বাসায় তো অনেক গেস্ট এসেছে। তার মধ্যে অনেক মধ্যে বয়স্ক আন্টিরা আছে। তাদের কারো বোরকা যদি আপা পড়ে তাহলে মা আর চিন্তে পারবে না।

নবনীর আজ হঠাৎ বড় হয়ে ওঠা দেখে নুর এবং নবুর বাবা দুজনেই অবাক নয়নে তাকায়। পরিস্থিতি মানুষকে মাঝে মাঝে বড় করে তুলে এটা আসলেই সত্যি।

নবনী এর মধ্যে ওই রুমে গিয়ে কার যেন বোরকা নিয়ে হাজির ও হয়েছে। নুর বোরকা পড়ছে আর নবু ওর কলেজ ব্যাগের মধ্যে যে কয়টা জামা পারল ঠেসেঠুসে ঢুকিয়ে দিল।

বের হয়ে আসার সময় নবনী কান্না করে দিল। নুর ও পরম সযত্নে বোনকে বুকের মাঝে চেপে ধরল। নবনী কিন্তু চাইলেই পারত ওর মাকে সব বলে দিতে। কিন্তু তা না করে এই মেয়েই কিনা নুরকে আরো সবার আগে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে।

বেরিয়ে আসে নুর। আর পেছনে ফিরে তাকায়নি। পেছনে ফিরে তাকালে হয়ত দেখতে পেত দুজোড়া চোখ তার দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে। অথচ তাদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে যেন পরম তৃপ্তি। কোন কিছু অর্জন করলে যেমন খুশি চিকচিক করে চোখে মুখে তেমন।

নুর ধীর পায়ে হেটে বেরিয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় পেছন থেকে কেউ বলে উঠল এই দাড়াও, কে তুমি।

এই এতটুকু কথা যেন নুরের হৃদয়ের উপর দিয়ে ছু’ড়ি চালিয়ে দিল বলে মনে হলে। কন্ঠ টা যে আর কারো না। বরং তার প্রানপ্রিয় বড়মা খালিদা বেগমের।

#চলবে
#শুকনো_বকুলের_মালা_গাঁথিব
#নীহারিকা_নুর
#এক্সট্রা_পার্ট

বেরিয়ে যাবে এমন সময় পেছনে খালিদা বেগমের কন্ঠ পেয়ে ভয় পেয়ে যায় নুর। কিন্তু এখন তো আর বের হতে পারবে না। এই বুজি ধরা পরে গেল। আল্লাহ আল্লাহ করতে মনে সাহস জুগিয়ে পেছনে ঘোরে নুর।

কিন্তু নুরকে আচমকা করে দিয়ে খালিদা বেগম জিজ্ঞেস করেন

– আপনি এখন বাহিরে কেন যাচ্ছেন। দুপুরে খাবার সময় এলো তো।

নুর ফোস করে একটা শ্বাস ছাড়ে। যাক বাচা গেল। চিনে নি তাহলে। যার বোরকা তাকেই ভেবেছে।
খালিদা বেগম হয়ত চোখের দিকে তাকালে নুরকে চট করে ধরে ফেলতে পারতেন। ওই ঘন পাপড়িযুক্ত চোখ যা সহজেই সবার নজর কাড়ার মতো। শুধু চোখ দেখে এক মুহুর্তে বলে দেওয়া যায়। কিন্তু কাজের প্রেশারে খালিদা বেগম এত কিছু খেয়াল করেন না। নুর যখন বুজল তাকে কোনভাবেই চিনতে পারে নি তখন বুদ্ধি করে কন্ঠটা একটু চিকন করে স্লো ভয়েস এ বলল – আসলে আমার মাইগ্রেনের ব্যাথাটা অনেক বেড়েছে। ইমারজেন্সি ঔষধ লাগবে।

খালিদা বেগম আর ঘাটায় না বিষয়টা। তবুও বলে আপনি বসুন আমি না হয় কাউকে দিয়ে দিচ্ছি।

– না না সবাই এখন কাজে ব্যাস্ত। তার থেকে আমিই যাই।

– আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফিরবেন।

খালিদা বেগম চলে যেতেই নুর বুকে হাত রেখে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়। খালিদা বেগমের খারাপ রুপ নুরের নজরে কখনোই পড়েনি তবুও ও যে ওী চাচ্চুকে অবিশ্বাস করতে পারে না। তাইত এই মুহুর্তে খালিদা বেগমকে সামনে দেখে হাটু কাপুনি শুরু হয়েছিল নুরের। মনে হচ্ছিল যেন জমের সামনে দাড়িয়ে আছে।

এর মধ্যে খালিদা বেগম চেচিয়ে ডাকে নবনীকে।

– নবু এই নবু। নুর কোথায় রে। এখনো কি আসে নি। কি করছে এত দেরী করছে কেন বলতো?

খালিদা বেগম নুর এর খোজ শুরু করছে। তার মানে এখানে আর এক মুহুর্ত দাড়ানো মানেই নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে আনা। তাই ব্যাগটা বুকে চেপে সামনের দিকে পা বাড়ায়। কয়েক মুহুর্তের মধ্যে বাড়ির আঙিনা ডিঙিয়ে বাহিরে পা রাখে। কিছুক্ষণের মধ্যে অদৃশ্যে মিলিয়ে গেল। এতক্ষণ ছাদের কর্নিশে দাঁড়িয়ে সবটাই অবলোকন করলেম্ন রায়হান সিকদার। চোখের আড়াল হতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রায়হান সিকদার।

এতক্ষণে খালিদা বেগম ছুটতে ছুটতে ছাদে চলে এসেছেন।

রায়হান সাহেব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তার স্ত্রীর দিকে।

– কি ব্যাপার ছুটতে ছুটতে আসলে কেন?

– তেমার ভাতিজি এখনো বাড়িতে পৌছায় নি। গেল কোথায় বলোতো।

– এখন আমার ভাতিজি বলতেছ কেন। ও না তোমার মেয়ে।

– ওকে মায়ের ভালোবাসা দেই কিন্তু ও দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেখ গিয়ে কার সাথে ফস্টি নস্টি করে বেড়াচ্ছে। এখনো বাসায় আসতে পারেনি।

রায়হান সাহেব বেশ অসন্তুষ্ট হন তার ওয়াইফ এর উপর। তার ভাতিজি যে অনেক আগেই বাসায় এসেছে আর এই অসিব্য মহিলার কান্ড দেখ সেই মেয়ের নামে কীভাবে উল্টা পাল্টা বলছে।

– তোমার কাজ শেষ হইছে?

– না।

– তুমি গিয়প কাজ করো যাও। আমি দেখি নুর কোথায় রইল।

– নুর কত ভাগ্যবান তাই না। নয়ত নেহাল এর মতো একটা ছেলের সাথে ওর বিয়ে হয়। আমার বোনের রেখে যাওয়া রত্ন।

রায়হান সাহেব আবারও মনে মনে গালি দেয় তার বউকে। তোমার বোনের ছেলে যে কত বড় হা’রামি তা একমাত্র আমিই জানি( মনে মনে)

– আচ্ছা আমি দেখি নুর কোথায় গেল।

– হ্যা হ্যা দেখ কার সাথে আড্ডাবাজি করছে।

রায়হান সাহেব ছাদের কর্নিশ দিয়ে আড় চোখে আরেক বার বাহিরের দিকে তাকায়। নুরকে আবর দেখা যাচ্ছে না তো সেই আশঙ্কায়। না কোথাও দেখা যাচ্ছে না। স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়। মনটা যে তবুও অশান্ত। মেয়েটা ঠিকঠাক পৌছাতে পারে না নাপারে কে জানে। কিন্তু এখন এসব নিয়ে চিন্তা করাও যাবে না এখন। তাহলে ধরা পড়তে পারেন৷
তাই আর কথা না বাড়িয়ে নিচে নেমে আসেন রায়হান সাহেব। রুমে নবনীকে বলে যায়

– ভিতর সামলাস মা। আমি বাহির থেকে আসছি।

নবু মাথা কাত করে। তার মানে সে সামলাবে।




ঢাকার বিরাট জ্যামের কবলে পড়ে রেলস্টেশনে পৌছাতে পৌঁছাতে অনেকটা লেট হয় নুরের। এসে জানতে পারে ট্রেন মাত্রই ছেড়ে গেল। পরেরটা বেশ খানিকটা পড়ে। তাই স্টেশনের বেঞ্চে বসে পড়ল নুর। লক্ষ্য একটাই। পরের ট্রেন এর জন্য অপেক্ষা।

নুর জানেও না সে কোথায় যাচ্ছে। যাদের কাছে যাচ্ছে তারা কেমন মানুষ। নুরকে তারা কেমন ভাবে গ্রহণ করবে। এই অজানা পথে বেরিয়ে তো পড়ল একা একা। কি অপেক্ষা করছে সামনে কে জানে।

নুরের সামনে ভেসে ওঠে অতীত এর কিছু স্মৃতি। কেমন মেয়ে ছিল নুর। কত আহ্লাদী একটা মেয়ে ছিল। বাবা মায়ের এক মাত্র মেয়ে হওয়ায় ভালোবাসার কোন কমতি ছিল না। বাবা মা কেউই কখনো নুরের গায়ে হাত তুলত না। একবার নুর জানতে চেয়েছিল আচ্ছা আম্মু সবার মা ই তো তাদের মেয়েকে বকা দেয় আবার মা’রে ও৷ তুমি কখনো মা’র না কেন।

জায়েদা বেগম সেদিন হাসি মুখে বলেছিল

– পাগ’লি মেয়ে। এসব কি কথা। আমার মাকে আমি মা’রব কেন।

– আহা যা জানতে চাই বলো না।

– নুর তুমি কি আমার মায়ের নরম তুলতুলে শরীর টা দেখেছ। ঠিক যেন একটা পুতুল। চামড়া গুলো দেখছ। সববগুলে শিরা উপশিরা যেন দেখা যাচ্ছে। এই মাকে আমি যদি টোকা দেই তাহলে যদি রক্ত বেরিয়ে যায়।

মায়ের হাসি হাসি মুখটা শুধু চোখ সম্মুখে ভেসে উঠছে। জত স্মৃতি ভেসে ওঠে চোখে। কোন জায়গা থেকে আজ নুরকে আল্লাহ কোন জায়গায় নিয়ে আসছে। অভাব অনটন কোনদিন ছুতে পারেনি যে নুরকে সে যেন আজ সবথেকে অভাগী। সে যে এতিম এর থেকে বেশি অসহায়ত্বের আর কি আছে ওর কাছে।

ট্রেন এর হুইসেল এ ভাবনার সুতো ছিড়ে নুর এর।
উঠে নিজের সিট খুজে বসে পড়ে। ভাগ্য সহায় থাকলে যা হয় আর কি। পাশেও একটা মেয়ের সিট ই পড়েছে। মেয়েটার সাথে অল্পতেই বেশ ভাব জমে যায় নুরের। কথায় কথায় জানতে পারে মেয়েটা নুরের ক্লাসমেটই। ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করে। আজ বাড়িতে যাচ্ছে। নুর মিশুক স্বভাবের হওয়ায় কারো সাথে মিলতে সময় লাগে না। মেয়েটার নাম এরিম। মেয়েটা দেখতে অতটা ফর্সা না হলেও বেশ কিউট মেয়েটা। গুলুমুলুও আছে। নুর যে এলাকায় যাবে মেয়েটা সেইম জায়গায়ই যাবে। নুর জানতে চায় তুমি লেট করে বাসায় কীভাবে যাবে রাতে।

– স্টেশনে ভাইয়া আসবে আমাকে নিতে।

– ওহ আচ্ছা। আচ্ছা তোমাকে নিতে কেউ আসবে না।

– না।

– তুমি একা কীভাবে যাবে? তারা তেমাকে নিতে আসবে না কেন?

– আসলে তাদের আমি চিনি না। একটা সমস্যায় পড়ে যেতে হচ্ছে।

এরিম বুজতে পাড়ে নুর তার সমস্যার কথা চেপে যাচ্ছে তাই আর জানতে চায় না। কথা বলতে বলতে একসময় এরিম ঘুমিয়ে পড়ে। নুর দেখে মাথাটা দুলছে। তাই মাথাটা টেনে নিজের কাধে রাখে।

ট্রেন পৌছাতে প্রায় শেষ রাত হয়ে যায়। এরিম আর নুর দুজনই নামে ট্রেন থেকে। ট্রেন চলে যায়। স্টেশনও কিছু সময়ের মাঝে ফাকা হয়ে আসে। এরিমকে নিতে এরিমের ভাই এখনো পৌছায় নি। এরিমের একা একা ভয় লাগছে তাই নুরকেও যেতে দিচ্ছে না। নুরও যাচ্ছে না। এখনো অন্ধকার কা’টে নি। কোথায় যাবে ও। ও তো এই নতুন শহরের কিছুই চিনে না।

দুজন স্টেশনে বসে অপেক্ষা করছিল। এমন সময় কিছু ছেলেদের মাতলামি করার কন্ঠ কানে আসে। এরিম ও নুর দুজনেই কিছুটা ভয়। স্টেশন এখন একদম ফাঁকা। দুজনই চুকনো ঢোক গিলে। ছেলে গুলো ওদের সামনে এগিয়ে আসে। এরিম মেয়েটা গিয়ে নুরের পেছনে দাড়ায়। এ মেয়ে যে ভীতুর ডিম তা নুর বুজতে পারছে। যা করার ওকেই করতে হবে। দৌড় দিয়ে লাভ নেই। ওরা দৌড়ে এদের সাথে পারবে না। তাই এরিমের এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে নুর।

ছেলেগুলো বাজে কথা বলতে বলতে সামনে এগোয়। একটা ছেলে আসতে আসতে নুরের সামনে এসে দাড়ায়। নুর আর এরিম এক পা এক পা করে পিছাচ্ছে। ছেলেটা নুরের ওড়নায় হাত দিয়ে বলে

– কি গো সুন্দরী পেঁচাচ্ছো কেন। এবার নুরের মেজাজ খারাপ হয়। ছেলেটার গাল বরাবর ঠাস করে একটা লাগায় দেয়। মনে মনে প্রস্তুতি নেয় যা হবার হবে। ভয় পেয়ে পালাবে না। প্রয়োজনে মা’রামা’রি করবে। এমনি নেশা করে আছে। বেশিক্ষণ টিকবে বলে মনে হয় না। মনকে শক্ত করে নুর। এর মধ্যে সামনে দাড়ানো ছেলেটা নুরের হাতটা চেপে ধরে। তারপর বলতে শুরু করে

– কি নরম হাত সুন্দরী। আমি এটা কি ধরেছি। আহ কত্ত সফট। এত তুলতুলে কেন। মনে হচ্ছে এখনি খেয়ে ফেলি। তুমি এই নরম হাতে আমাকে মা’রলে। এ হাতের টেস্ট তো চেখেই দেখতে হয় কি বলো।

ছেলেটার ফালতু কথা শুনে মাথায় ইচ্ছে মতো রা’গ চেপে বসে। মন চাচ্ছে রাস্তায় ফেলে ইচ্ছে মতো লাথি মা’রতে। নুর তার ডান পা দিয়ে ছেলেটার জায়গা মতো লাথি মে’রে দেয়। ছেলেটা আহ বলে মৃদু চিতকার দিয়ে বসে পড়ে নিচে।

নুরের কান্ড দেখে এরিমের ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়। ব্যাগটা আরো শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে। মনে মনে ভাইকে গা’লি দিয়েই যাচ্ছে। শালা ফাজিল তোর বোনটা একা একা স্টেশনে বসে আছে আর তুই কিনা নাকে তেল দিয়া ঘুমাচ্ছিস। একবার এ জায়গা থেকে বাসায় যাই তাইলে তোরে আমি করলার জুস বানাইয়া খাওয়াব দেখিাস। তেলাপোকার সুপও খাওয়াব ফাজিল কোথাকার। মনে মনে উল্টা পাল্টা যা পারছে তা বলতাছে আর এখান থেকে একবার বাচাইয়া নেও আল্লাহ বলে দোয়া দুরুদ পড়তেছে।

পেছনে থাকা ছেলেগুলো এবার এগোতে নেয়।

– ভাবছিলাম তোদের একটা উত্তম মাধ্যম দিব। কিন্তু তোরা তো সামান্য একটা মেয়ের সাথেই পারিস না।

হঠাৎ কারো এমন কথায় সবাই সেদিক তাকায়। মাস্ক পড়া একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। ছেলেটা যে বেশ সুদর্শন তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ড্রাঙ্ক ছেলেগুলো তেতে সেদিক এগুলে আগন্তুক ছেলেটা কয়েক ঘা লাগায় রাস্তার ছেলেগুলোকে। তাদের মধ্যে একজন চেচিয়ে জানতে চায়

– এই কে তুই। তোর এত বড় সাহস আমাদের গায়ে হাত তুলোস। তোরে তো
আর বলতে পারে না তার আগেই মুখ থেকে মাস্ক নামায় আগন্তুক।

– ইরহাম ভাই আপনি…

– হ্যা বিশ্বাস হচ্ছে না। প্রাকটিকাল দেখাব?

আর কিছু বলা লাগে না৷ ছেলেগুলা সেখান থেকে দৌড় লাগায়। যেটারে নুর মা’রছিল সেটায় তো দৌড়াইতে পারে না তাই রাস্তার মধ্যে দিয়ে ছেচড়া টান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সাঙ্গপাঙ্গরা।

“”কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু। নাইচ আর নেক্সট তো অনেক হলো। এবার একটু ভালো কিছু বলেন এক্সট্রা পার্ট পেয়ে খুশি কিনা সেটা অন্তত জানতে চাই।””

#চলবে
( )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here