শুধু তোমারই জন্য পর্ব ৭

##শুধু_তোমারই_জন্য পর্ব ৭
#সাবানা_খাতুন

নয়নার বাড়িতে অর্নব বসে আছে, কি ব্যাপার এতো সকাল সকাল আমাকে ডাকলে যে? অফিস না গিয়ে তোমার কাছে এলাম বলল অর্নব ।নয়না একটা পেপার এগিয়ে দেয় অর্নবের দিকে।অবাক হয়ে অর্নব জিজ্ঞাসা করল এটা কি? এইবার নয়না বলল পড়তে জানো তো পড়ে নাও।অর্নব পড়া শুরু করলে তার মুখ কঠিন হয়ে উঠে।অবাক হয়ে বলে এটা তো ডিভোর্স পেপার ।আমার আর কাঁকনের নাম লেখা এসবের মানে কি? নয়না বলল আজকাল খুব কাঁকনের কাছাকাছি চলে এসেছো শুনলাম।একই রুমে থাকলে একটা মায়া তে অবশ্যই পড়ে যায় তাই বলে কিস করছো তুমি তাকে।, অর্নব রেগে গিয়ে বলে কি আজেবাজে কথা বলছো আমি কাঁকনের হাত আজ পর্যন্ত ধরিনি সেখানে তুমি বলছ আমি কিস করেছি।হোয়াট রাবিশ।আর ন্যাকা সেজোনা আমাকে রিয়া সব বলেছে কাল সকালে কি হয়েছে।প্রথমে গায়ের উপর শুয়ে পড়লে তারপর কিস করলে আর এরপর কি হবে আমাকে নিশ্চয় আর বলতে হবে না।

অর্নব বলল দেখো আমি জানিনা তুমি কি বলতে চাইছো কিন্ত এই সব আরোপ মিথ্যা আমার তো মনে হচ্ছে রিয়া তোমাকে জ্বালানোর জন্য বাড়িয়ে বলেছে। নয়না ফোঁস করে উঠে আমাকে সবাই কেন জ্বালাবে আমি কার কি করেছি? তুমি কি আমাকে ভালবাসোনা নয়না জিজ্ঞাসা করল।অর্নব বলল হ্যাঁ বাসি কিন্ত এইসবের কোনো প্রয়োজন নেই ইউ ক্যান ট্রাস্ট মি।আই ট্রাস্ট ইউ বাট নট কাঁকন।বলল নয়না, হোয়াটেএভার আই ডোন্ট কেয়ার ইউ গিভ দিস পেপার টু কাঁকন ।এন্ড ইট ইজ মাই লাস্ট ডিসিশন।নয়না বলল লিশন অর্নব কাঁকন যেভাবে তোমাদের বাড়ি ইভিন তোমার রুমে জেঁকে বসেছে ।আমি সত্যি বলতে একটু ভয় পাচ্ছি।এটার জন্য নয় যে তুমি ওকে দেখে ভুলে যাবে।এটার জন্য যে ও যে করে হোক তোমাকে যাদু করে কাবু করে নেবে।এটাই আমি সহ্য করতে পারছি.না।

অর্নব শুকনো মুখ আর পেপার নিয়ে নয়নার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে,সেও মনে মনে কাঁকনকে পছন্দ করা শুরু করে ।এখন যদি কাঁকন এই পেপার দেখে তো সব শেষ হয়ে যাবে।অর্নব বুঝতে পারছে না তার কি করা উচিত।তার ভাবনা গুলি এখন সম্পূর্ণ শূন্য হয়ে পড়েছে।

আজ কাঁকন ভিষণ খুশি আজ সে অর্নব কে প্রপোজ করবে। পুরানো সব ভুলে গিয়ে আবার নতুন করে সে অর্নবের সাথে জীবন শুরু করবে।কাঁকন কনকবালার কাছে বসে আছে,ঠাকুরমা তুমি ঠিক বলেছো,অর্নবকে একবার সুযোগ দিতে চাই আমি ।সত্যি বলতে এইকদিনে ওর সাথে থেকে আমি ওর প্রেমে আবার পড়ে গেলাম ,কাঁকন লজ্জায় মুখ নিচু করে বলল।কনকবালা কাঁকনের থুতনি ধরে বলল ওরে আমার লজ্জাবতী তাহলে আজ সেই শুভ কাজটা করে ফেল।

কাঁকন তাই দুপুরের সমস্ত রান্না নিজেই করল, কনকবালা দেখে বললেন দিদি ভাই কি ব্যাপার এতো কাজ করছিস কেনো? কাঁকন লজ্জা পেয়ে কনকবালা কে জড়িয়ে ধরে মুচকি হাসি দিয়ে বলল আজ তোমার নাতির সাথে বাসর ঘর করব তাই ভালো করে খাইয়ে মন ভোলাবো বুঝলে,সকালে তোমাকে বললাম না তুমিতো বললে আজ কাজটা করতে ।ঐযে বলেনা ছেলেদের পেট দিয়ে মনে ঢুকতে হয়।কনকবালা শুনে বললেন ওরে ছুঁড়ি ভেতরে ভেতরে এত কিছু হুম… এবার হেসে বললেন তো রান্না করে কালো হয়ে যাবি যে আমি আবার কালো নাতবৌ পছন্দ করব না,আর ঠিক করছিস সময় থাকতে কাজ করতে হয়।যাক তুই বুঝতে পারলি আর ওর মাথায় একটু ভালোবাসা ঢুকিয়ে দিস।

কনকবালা রিয়াকে ডেকে বলল রিয়া আজ কাঁকন কে খুব সাজাবি বুঝলি।রিয়া অবাক হয়ে বলল কেনো? আজ কিছু আছে নাকি? কনকবালা বিরক্ত হয়ে বলল তোকে কি সব বুঝিয়ে দিতে হবে ,বিবাহিতা নারীরা কার জন্য সাজে? স্বামীর জন্য রিয়া ফট করে জবাব দিয়ে বলল ও তাহলে এই ব্যাপার চোখ মটকালো।এবার রিয়া বলল আজ এমন সাজাবো না তোমাকে, দাদা নয়নাদি কে ভুলে যাবে দেখো।

দুপুরে সবাই খেতে বসল, অর্নব লাঞ্চ করার জন্য বাড়ি এলো। খাওয়ার মুখে দিয়ে বলল আজ কাঁকন তুমি রেঁধেছো,পাশ দিয়ে রিয়া বলল তুই রি করে জানলি দাদা? অর্নব বলল আমি জানি কারন এর আগেও আমি ওর হাতের রান্না খেয়েছি, কনকবালা হেসে বলল তুই ঠিক ধরেছিস আজ সব রান্না কাঁকন করেছে। রুমা দেবী নির্লিপ্ত মুখ নিয়ে বলল কি দরকার ছিল অতিথি হয়ে আছো অতিথি হয়ে থাকো, বাড়ির সদস্য হওয়ার চেষ্টা করোনা।কাঁকন কথা শুনে কষ্ট পেল, অভিরাজ চৌধুরি বললেন আরে ছাড়ো না আর কটা মাস তারপর ও চলে যাবে যা ইচ্ছে হয় করুক,তবে মা তুমি রান্নাটা ভালই করেছো, কাঁকন মুখে হালকা হাসি ফুটিয়ে বলল ধন্যবাদ।😊

অর্নব অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়, রিয়া বলল দাদা আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরিস। অর্নব বলল কেন রে কিছু স্পেশাল আছে নাকি? তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে বলল রিয়া, এখন তুই যা কিন্ত তাড়াতাড়ি আসবি, অর্নব হেসে বলল তুই আর তোর সারপ্রাইজ, আচ্ছা এই নে এই ফাইল টা আমার রুমে রেখে দিস তো বলে রিয়ার হাতে ফাইল দিয়ে অর্নব চলে যায়।রিয়া অর্নবের রুমে গিয়ে দেখে কাঁকন মন খারাপ করে বসে আছে।রিয়া বলল মন খারাপ হচ্ছে মা বাবার কথা শুনে,ছাড়ো তো ওরা তো জানে না তুমি এখানে পাকাপাকি ভাবে থাকবে। চল উঠো সাজবে, কাঁকন মন ভাল করে আলমারি থেকে একটা লাল শাড়ি বের করল,রিয়া পাশের টেবিলে ফাইল রেখে বলল, ওয়াও শাড়িটা তো দারুন।তোমার দাদা যখন আমাকে প্রপোজ করে সেদিন আমি এই শাড়িটা পরেছিলাম বলল কাঁকন, রিয়া বলল আজও তুমি এই শাড়ি পরবে, বলে কাঁকন কে সাজাতে শুরু করে দেয় রিয়া।

কাঁকন পরেছে লাল শাড়ি, ম্যাচিং লাল কাঁচের চুড়ি,কানে দুল, হালকা লিপস্টিক ও আইলানার,আর টানাটানা চোখে কাজল দিলো কাঁকন সাথে মাশকারা। চুল খোলা রাখল আর একটু সিঁদুর সিঁথিতে দিল, আর পুরো রুমটা সাজালো মোমবাতির আলোতে।মায়াবি লাগছিল পুরো রুম আর কাঁকন কেও ।রিয়া একদৃষ্টি তাকিয়ে আছে কাঁকনের দিকে,ওহ মাই গড চিৎকার করে উঠে রিয়া।কাঁকন অবাক হয়ে বলল কি হল তোমার? রিয়া বলল তুমি সুন্দর জানতাম কিন্ত সাজলে এত সুন্দর লাগবে জানতাম না,পুরো বলিউডের হিরোইন লাগছে তোমাকে। আমি যদি ছেলে হতাম না এক্ষুনি তোমাকে জড়িয়ে ধরে দুচারটে কিস👄💋💋করে নিতাম।কাঁকন অনেক লজ্জা পেয়ে বলল ছিঃ কি বলছ তুমি। সত্যি বৌদি তুমি অনবদ্য সুন্দরী আর আমার দাদা অনেক লাকি তোমার মতো স্ত্রী পেয়ে।আমি দাদাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি আসার জন্য বলেছি, তুমি রেডি থাকবে আর এই নাও গোলাপ ফুল 🌹 এটা দাদাকে দেবে, কাঁকন হাসল মাএ।

কাঁকনের যেনো অপেক্ষার প্রহর কাটছে না।ঘরে একবার এদিকে একবার ওদিকে পায়চারি করছে।আবার অর্নবের মুখোমুখি হবে তবে এবার ব্যাপার টা.অন্য।খুব টেনশন হচ্ছে কিভাবে যে অর্নবকে বলবে কাঁকন তার মনের কথা। নিজের বুকের ধুকপুকুনি সে নিজেই শুনতে পাচ্ছে।রিয়া কয়েক বার ঘুরে গিয়েছে আর বার বার কাঁকনকে বলেছে একটু টেনশন কমাতে।না হলে তার সারপ্রাইজ ফেল হয়ে যাবে সাথে কাঁকনের মেকাপ নষ্ট হয়ে যাবে ।কিন্তু কাঁকন পারছে না টেনশন কমাতে।

কাঁকন যায় কনকবালার আর্শিবাদ নিতে, কনকবালা অনেক আর্শিবাদ আর শুভেচ্ছা জানায়, আর চোখ মটকে😛😛😛 বলে কাল বলবি রাতে দুজনে কি কি করলি। ধ্যাত তুমি খুব বাজে বলে কাঁকন ছুটে রুমে আসতে যাবে রুমে ঢোকার মুখে টেবিলে রাখা ফাইল টা পড়ে যায় ছড়িয়ে পড়ে সব কাগজ ।

কাঁকন একটা একটা করে সব কাগজ তুলছে ।হঠাৎ একটা কাগজে চোখ যায়, ভালো করে দাঁড়িয়ে আলোতে দেখল।কাঁকনের মনে হল ঘরে একটা ছোট ভূমিকম্প হয়ে গেল।ডিভোর্স পেপার অর্নব চৌধুরির সাথে কাঁকন রায় চৌধুরির ।ডেট দুদিন আগের মানে অর্নব আগে ডিভোর্স পেপার বানিয়ে রেখেছিলো।তাহলে এতো যত্ন এতো খোঁজ নেওয়ার মানে টা কি ? সেতো ভেবেছিলো অর্নবও তাকে ভালোবাসে আর সে কিনা অর্নব নিয়ে কত কিছু ভাবছে।আজ পাগলের মতো তার জন্য রান্না করল,রুমকে ,নিজেকে সাজালো।, কত আশা করেছিল আজ তার মনের কথা অর্নবকে বলে দিবে যে সে কতটা তাকে ভালবাসে।উফ.. আর ভাবতে পারছে না কাঁকন ,চোখের নোনা জলে ভিজে যাচ্ছে গাল চিবুক,মাশকারা আইলানার সব জলে মুছে যাচ্ছে ।কাঁকন ভাবল সে একাই অর্নব কে ভালবেসে গিয়েছে।আর অর্নব আগের মতোই তার সাথে প্রেমের নাটক করছে। না আর পারছে না সে ভাবতে,চোখের জলে হাতে ধরা ডিভোর্স পেপারের লেখাগুলি ঝাপসা হয়ে গেলো।এক্ষুনি হয়তো মাথা ঘুরে পড়ে যাবে যেনো। নিজেকে সামলালো সামনে খাটের হাতল ধরে। হাতের ফুল পড়ে গেল নিচে।রুমে সাজানো মোমবাতিগুলি যেন এক্ষুনি সব জিনিসে আগুন লাগিয়ে দেবে।কাঁকন ভাবছে এটা কি স্বপ্ন না বাস্তব।অর্নব কি কখনো তাকে বুঝবে না বুঝবে তার মনকে? ধপ করে বসে পড়ল মেঝেতে।চোখের জল আর বাঁধ মানলো না, দুই হাতে মুখে চেপে কাঁদতে শুরু করল কাঁকন। খুব কাঁদতে ইচ্ছা করছে তার,আবার একবার কাঁকন ঠকে গেল অর্নব কে বিশ্বাস করে।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here