#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী
|৫|
আনিতা আর আহিয়ানের বন্ধুত্বটা আরো গভীর হচ্ছে। অদ্ভুত ভালো লাগে ছেলেটাকে আনিতার। কেমন যেন মন খারাপের মাঝেও হাসাতে জানে। মাঝে মাঝে এরকম একেকটা বিহেভিয়ার করে যাতে আনিতা অস্বস্তিতে পড়ে যায়। বলতে গেলে আহিয়ান আনিতার উপর অধিকার খাটাতে শুরু করেছে। এতে আনিতার মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগলেও ভালো লাগার পরিমানটাই বেশি। আনিতার যেকোনো বিষয়ে ছেলেটা অনায়াসে অধিকার খাটিয়ে ফেলে। মাঝে মধ্যে আনিতা কিছু বলতেও পারে না। আনিতারও ভালো লাগে কেউ তো একজন আছে যে আনিতার ভালো মন্দের সব দিকটা নজরে রাখছে।
নভেম্বরের এগারো তারিখ আজকে। সকাল আটটা কি সাড়ে আটটা বাজে। আনিতা বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে৷ আজকে ওর কলেজ যেতে ইচ্ছে করছে না। কেমন যেন লাগছে আজকের দিনটা। হুদাই কোনো কিছু ভালো লাগছে না। বালিশের পাশ থেকে ফোন হাতে নিলো রোদেলাকে ফোন করার জন্য। তখনই দেখলো আহিয়ানের ম্যাসেজ। আনিতা রোদেলাকে ফোন না দিয়ে আহিয়ানের ম্যাসেজ চেক করলো। আহিয়ান জিজ্ঞেস করেছে,
–“আজকে কলেজে যাবে তো?”
–“উমমমম, যেতে ইচ্ছে করছে না আজকে।”
–“কেন?”
–“এমনি। ভালো লাগছে না।”
–“শরীর খারাপ? নাকি মন খারাপ?”
–“একটাও না।”
–“আচ্ছা, নিশ্চয়ই বিছানায় গড়াগড়ি করছো এখন? বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে কলেজ যাও।”
–“এই এক মিনিট আপনি বুঝলেন কি করে আমি শুয়ে আছি?”
–“এই কয়েক মাসে অন্তত এইটুকু তো চিনেছি আপনাকে।”
আহিয়ানের ম্যাসেজের প্রত্যুত্তরে আনিতা আর কিছুই বলল না। আনিতাকে রিপ্লাই করতে না দেখে আহিয়ান আবারো বলে,
–“সারপ্রাইজ আছে একটা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজে যাও।”
সারপ্রাইজের কথা শুনে আনিতা অবাক হলো বেশ। মনে কৌতূহল জাগলো কি সারপ্রাইজ সেটা জানার জন্য। আনিতা কৌতূহল দমাতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো,
–“এই কি সারপ্রাইজ বলুন না।”
–“বলে দিলে সেটা আর সারপ্রাইজ থাকবে না।”
–“প্লিজ বলুন না। প্লিজ প্লিজ।”
–“অফলাইন হবো আমি। তুমি রেডি হয়ে কলেজে যাও ফাস্ট।”
আনিতা কিছুই বললো না আর। যতক্ষণ না জানতে পারছে সারপ্রাইজটা কি ততক্ষণ আনিতার শান্তি হবে না। আর সারপ্রাইজটা আসলে কি সেটা জানার জন্য তো ওকে কলেজে যেতে হবে। তাই আলসেমি ছেড়ে উঠে কলেজ ইউনিফর্ম নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।
আনিতা ওরা কলেজে এসেছে প্রায় ঘন্টা খানেক হবে৷ ক্লাস না করে সবাই মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে। সকালে আহিয়ানের সারপ্রাইজের চক্করে আনিতা না খেয়েই এসে পড়েছে। এখন পেটের মধ্যে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। আনিতা ওরা সবাই মিলে ফুচকার দোকানে গিয়ে বসলো। এখনো ফুচকা অর্ডার দেয়নি প্রচুর ভীর সেজন্য। আনিতার কলেজ গেটের দিকে চোখ যেতেই দেখলো ফাইয়াজ আহিয়ান তন্ময় আরহান রাতুল বাইক নিয়ে কলেজে ঢুকলো। ফাইয়াজ তো গত সপ্তাহেই ঢাকায় ফিরে গেলো অফিসের কথা বলে। তাহলে আজকে এখানে আবার কি করছে? নিশ্চয়ই তাসকিয়ার সাথে দেখা করতে এসেছে। কি প্রেম রে বাবা! সত্যি তাসকিয়া আর ফাইয়াজ দুজন দুজনকে অসম্ভব রকমের ভালোবাসে। মনে মনে এসব ভেবে আপন মনেই হাসলো আনিতা। আহিয়ান ওরা বাইক পার্ক করে আনিতাদের কাছে গিয়ে বসলো। আহিয়ান আনিতাকে জিজ্ঞেস করে,
–“আজকে না কলেজে আসবা না বললা। তাহলে এখন কলেজে কি করছো?”
–“কলেজে এসে মানুষ কি করে?”
আনিতার কথায় আহিয়ান একবার আশেপাশে চোখ বুলালো। তারপর আবার আনিতার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আমি যতদূর জানি কলেজে মানুষ পড়াশোনা করতে আসে। কিন্তু তুমি ক্লাস না করে এখানে কি করছো? সেটাই আমার প্রশ্ন।”
–“ফুচকার দোকানে বসে আছি। এটা নিশ্চয়ই দেখতে পারছেন?”
–“হ্যাঁ তা তো দেখতেই পারছি। কিন্তু এখানে বসে তুমি করছোটা কি?”
আহিয়ানের কথায় আনিতা এবার বেশ বিরক্ত হলো। ছেলেটা ইচ্ছে করে আনিতাকে জ্বালানোর ফন্দি আঁটছে। সেটা আনিতা বেশ বুঝতে পেরেছে। কাল রাতেই আহিয়ানের সাথে যখন আনিতা কথা বলছিলো তখন আহিয়ান বলেছে আনিতাকে রাগানো নাকি বড্ড সহজ। আনিতা আহিয়ানের কথায় তীব্র প্রতিবাদ জানায়৷ আনিতা বলেছে ও যদি না চায় তাহলে ওকে কেউ রাগাতে পারবে না। এই নিয়েই দুজনের মাঝে ছোট খাটো একটা চ্যালেঞ্জ হয়। চ্যালেঞ্জে যে জিতবে তার কথামতো অপরজনকে এক সপ্তাহ চলতে হবে। সুতরাং কিছুতেই হারা যাবে না। আনিতা চাচ্ছে যেভাবেই হোক জিততেই হবে। তাহলে যদি আহিয়ানকে এক সপ্তাহ ওর কথামতো চালাতে পারে। আনিতা চায় না আহিয়ানের চেষ্টা সফল হোক। তাই ও যথেষ্ট শান্ত ভাবে উত্তর দিচ্ছে। কিন্তু আহিয়ানের এসকল প্রশ্নে আনিতা কতক্ষণ নিজেকে শান্ত রাখতে পারবে ও সেটা জানে না। আহিয়ানের প্রশ্নের ভঙ্গি আর চোখমুখের এক্সপ্রেশন দেখে আনিতা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
–“বিএফ এর জন্য ওয়েট করছি এই তো কিছুক্ষণের মাঝেই সে এসে পড়বে৷ সে আসলেই ডেটিংয়ে যাবো দুজনে।”
আনিতার কথায় এবার আহিয়ান সশব্দে হেসে দিলো। আর আনিতা মুখ গোমড়া করে বসে আছে। সেই আহিয়ান জিতে গেলো। আনিতার এবার নিজের উপরে বেশ রাগ লাগছে। কেন যে শান্ত থাকতে পারলো না। এবার সাতদিন এই ছেলের কথায় চলতে হবে। ধুর! আহিয়ান হাসি থামিয়ে বলে,
–“আজ থেকে সাতদিন তাহলে আমার কথামতো চলবে। মনে আছে তো কথাটা?”
–“অবশ্যই মনে আছে। আমি সহজে কোনোকিছু ভুলি না।”
–“গুড গার্ল। তাহলে চলো।”
–“কোথায়?”
চোখ বড় বড় করে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল আনিতা৷ পাশেই সবাই বসে মুখ টিপে হাসছে। সাথে ফাইয়াজও। আনিতার রাগ হচ্ছে প্রচুর ফাইয়াজের উপর। এমনি সময় তো কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দিতো না। তাহলে আজ কিছু বলছে না কেন? আহিয়ান ফাইয়াজের বন্ধু বলে? এসব ভেবে আনিতা ফাইয়াজের দিকে একবার রাগী চোখে তাকালো। আনিতার চাহনীর মানে ফাইয়াজ বুঝতে পেরে উচ্চস্বরে হেসে দিলো। আহিয়ান আনিতার দিকে কিছুটা ঝুকে বলে,
–“আমার মনে হয় না তোমার বিএফ আজকে আসবে। তোমরা তো ডেটিংয়ে যাবে বলছিলে। তোমার বিএফ যেহেতু আসছে না তাহলে আমার সাথেই ডেটিংয়ে যাবে। চলো।”
এই বলে আহিয়ান আনিতার হাত ধরে হাঁটা শুরু করলো। সাথে বাকী সবাইও আসছে। কিছুদূর যেতেই আনিতা ঝামটা মেরে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
–“পাগল হইছেন আপনি? সাতদিন আপনার কথামতো চলবো বলে কি আপনি যা ইচ্ছে তাই করতে বলবেন নাকি আমাকে?”
–“হ্যাঁ অবশ্যই।”
–“আপনি ভাবছেন কি করে আমার বিএফ আসবে না বলে আমি আপনার সাথে ডেটিংয়ে যাবো? প্রয়োজনে আমার বিএফকে বাসা থেকে তুলে এনে ওর সাথে ডেটিংয়ে যাবো। তারপরও তো আপনার সাথে যাবো না।”
–“আচ্ছা। আগে আমার সাথে চলো। পরেরবার না হয় তোমার বিএফকে বাসা থেকে তুলে এনে তার সাথে যেও কেমন?”
এইটুকু বলে আহিয়ান আনিতার হাত ধরে আবারো হাঁটা শুরু করলো। আনিতা ছাড়া পাওয়ার জন্য আপ্রান চেষ্টা করছে। কিন্তু আহিয়ানের সাথে পেরে উঠছে না ও। আনিতা দের কলেজের পাশেই একটা ফুড কটেজের সামনে এসে থামলো আহিয়ান। পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে আনিতার চোখ বেঁধে দিয়ে আবার আনিতার হাত ধরে ফুড কটেজের ভিতরে যেতে লাগলো। আনিতা এবার বাঁদরের মতো লাফালাফি শুরু করে দিলো। লাফাতে লাফাতে বলছে,
–“এই এই আমি যাবো না আপনার সাথে। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।”
–“এই মেয়ে একদম চুপ। যেখানে নিয়ে যাচ্ছি চুপচাপ আমার সাথে যাবা। বাঁদরের মতো এভাবে লাফাচ্ছো কেন? আর একবার যদি এরকম করেছো তাহলে ধাক্কা দিয়ে গাড়ির নিচে ফেলে দিবো।”
আহিয়ানের ধমকে আনিতা শান্ত হয়ে গেলো। ধীর পায়ে আহিয়ানের সাথে এগোতে লাগলো ও। আহিয়ানের শার্টের হাতা একহাতে খামচে ধরে রেখেছে আনিতা। কটেজের ভিতরে গিয়ে আহিয়ান একপাশে আনিতাকে দাঁড় করালো। আনিতা ভয়ে আহিয়ানের হাত ছাড়তে চাইছিলো না। আনিতা আহিয়ানের হাত খামচে ধরে বলে,
–“প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আ্ আপনি যাবেন না আমাকে ছেড়ে।”
আহিয়ান মুচকি হেসে আনিতার দিকে কিছুটা ঝুকে ফিসফিস কিরে বলে,
–“একটু আগেই তো আমার সাথে আসবে না বলে লাফালাফি করছিলে। এখন আবার আমাকে ছাড়তে চাইছো না যে। কারন কি হুম?”
কথাটা শুনে আনিতা সঙ্গে সঙ্গেই আহিয়ানের হাত ছেড়ে দিলো। আহিয়ান মুচকি হেসে সরে এলো আহিয়ানের ওখান থেকে৷ আনিতা হাত দিয়ে চোখের বাঁধন খুলতে গেলে আহিয়ান ধমকের সুরে বলে,
–“চোখের বাঁধন যদি খুলেছে তাহলে খুব খারাপ হবে কিন্তু।”
আনিতা আর কিছু বলল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। রোদেলা আনিতার কাছে এসে ওকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–“ভয় পাচ্ছিস কেন? আমরা সবাই আছি তো এখানে।”
–“উনি আমার চোখ বেঁধে রেখেছে কেন?”
–“আহিয়ান ভাইয়া তো বলল তোকে কি যেন একটা সারপ্রাইজ দিবে। কেন তুই জানিস না কিছু?”
–“সকালে বলেছিল আমার জন্য নাকি একটা সারপ্রাইজ আছে। এত করে জিজ্ঞেস করলাম কি সারপ্রাইজ কিন্তু কিছুতেই সেটা বলল না। অসভ্য লোক একটা।”
–“সারপ্রাইজের কথা বলে দিলে কি আর সারপ্রাইজ থাকে গাধী?”
আনিতার কিছু বলল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। কলেজে আসার পর আহিয়ানের বলা সারপ্রাইজের কথা একদম ভুলে গিয়েছিলো আনিতা। মিনিট দুয়েক বাদে আহিয়ান বলে,
–“রোদেলা আনিতার চোখের বাঁধনটা খুলে দাও।”
আহিয়ানের কথায় রোদেলা আনিতার চোখ থেকে রুমাল খুলে ফেলে। আনিতা চোখ খুলে তাকাতেই দেখে আহিয়ান হাতে একটা রিং নিয়ে আনিতার সামনে হাটু গেড়ে বসে আছে। বেশ অবাক হলো আনিতা আহিয়ানকে এভাবে বসে থাকতে। এতদিনে আহিয়ানের কথাবার্তায় এরকম কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছিলো আনিতা। তবে কি আনিতার ভাবনাটাই সত্যি হতে চলছে? সত্যিই আহিয়ান আনিতাকে___। আর কিছু ভাবতে পারলো না আনিতা। অবাক চোখে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আহিয়ান আনিতার দিকে রিংটা ধরে বলে,
–“এতদিনে খুউব ভেবে চিন্তে দেখেছি আমি, তোমাকে ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে কোনোকালেই সম্ভব না। এতদিন তোমাকে বলতে চেয়েও বলতে পারিনি। কিন্তু এবার আর না বলে থাকতে পারছি না। প্রথম যেদিন ফাইয়াজের ফোনে বাচ্চা একটা মেয়ের ছবি দেখেছিলাম সেদিনই মনের মাঝে কিছু একটা হয়েছিলো। অদ্ভুত রকমের একটা টান হচ্ছিলো সেই বাচ্চা মেয়েটার উপর। সেই বাচ্চা মেয়েটা তুমিই ছিলে কিন্তু। সেদিন ফাইয়াজের ফোনে তোমার ছবি দেখার পর রাতে আর ঘুমোতে পারিনি। সারাটা রাত তোমার কথা ভেবে ছটফট করেছি। তোমার জন্য মনের ভিতর অদ্ভুত এক ঝড় সৃষ্টি হয়েছিলো। একটা পনেরো বছরের বাচ্চা মেয়ের জন্য নিজের এই অবস্থার কথা ভেবে তখন খুব হাসি পেয়েছিলো আমার। এইটুকুন একটা মেয়ে যার জন্য কিনা আমি রাতে ঘুমোতে পারছি না? যার কথা ভাবলে কিনা আমার হার্টবিট ক্রমশ বেড়ে চলে? যার কথা মনে হলে কিনা ভালোলাগার মূহুর্তে হারিয়ে যাই আমি? তখন এসব বুঝতে না পারলেও ধীরে ধীরে আমি বেশ বুঝতে পেরেছি ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়। অবশেষে একটা পনেরো বছরের বাচ্চা মেয়েকে কিনা আমি ভালোবেসে ফেললাম ভাবা যায় এসব? শুরুতেই ফাইয়াজকে বলে দিয়েছিলাম তোর এই পিচ্চি বোনটাকে আমি ভালোবাসি। আর তোর এই পিচ্চি বোনটাকেই আমার লাগবে। ফাইয়াজ সেদিন কিছু বলেনি তবে মুচকি হেসে জাপ্টে ধরেছিলো আমায়। ফাইয়াজ জানতো আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি তাই কোনো ছেলেকে তোমার আশেপাশে আসতে দিতো না। কোনো ছেলের সাথে তোমাকে মিশতে দিতো না।”
এইটুকু বলে আহিয়ান থামলো। আনিতা অবাক হয়ে শুনছে সবটা। ফাইয়াজও জানে আহিয়ান ওকে ভালোবাসে এটা শুনে আনিতা একবার ফাইয়াজের দিকে তাকালো। মুখ টিপে হাসছে ফাইয়াজ। শুধু ফাইয়াজ না সকলেই মৃদু হাসছে। তার মানে সবাই জানতো এখানে কি হচ্ছে আজ। শুধুমাত্র আনিতা ছাড়া। রোদেলা আর তাসকিয়ার উপর আনিতার বেশ রাগ হলো এবারে। আনিতা আবার আহিয়ানের দিকে তাকালো। আহিয়ান আবারো বলতে শুরু করে,
–“ফাইয়াজের সাথে ভিডিও কলে কথা বলার সময় সেদিন তুমি হুট করেই পিছন থেকে এসে ফাইয়াজকে জড়িয়ে ধরলে। সেদিন তোমাকে দেখে আরো একবার থমকে গিয়েছিলাম আমি। থমকে গিয়েছিলো আমার হৃদস্পন্দন। তোমার কথা বলা, তোমার হাসি, তোমার চাহনী সবকিছু আমাকে আরো একবার ঘায়েল করেছিলো। তারপর সেদিন সন্ধ্যায় বহু অপেক্ষার পর প্রথম তোমাকে দেখলাম সামনাসামনি। প্রথমে মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিলো এভাবে হুট করেই বাইকের সামনে এসে পড়ার জন্য। কিন্তু পরে যখন তোমার ভয়ার্ত চোখের দিকে তাকালাম তখন আরো একবার তোমার ওই চোখের মায়ায় ডুবেছি আমি। অনেকদিন তো হলো একতরফাভাবে ভালোবেসে যাচ্ছি। কিন্তু আর কতদিন বলো? তাই এবার না পেরে এতদিনের না বলা কথাগুলো আজ বলেই দিলাম। ভালোবাসি পিচ্ছি-পাখি। খুউউব বেশিই ভালোবাসি তোমাকে।”
এতটুকু বলে আহিয়ান আবারো থামলো। আমি শুধু অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে সবটা দেখছি। আশেপাশে আরো একবার চোখ বুলিয়ে দেখলাম। এখানে আমাদের বন্ধুবান্ধব ছাড়া আরো অনেকেই আছেন যারা দেখছেন সবটা। সবার মুখের কোনেই মুচকি হাসি৷ আহিয়ান আমার হাত ধরে নিজের হাতের মুঠোয় নিতেই আমি চমকে তাকালাম আহিয়ানের দিকে। আহিয়ান আবারো বলল,
–“উইল ইউ বি দ্যা ফার্স্ট এন্ড লাস্ট ভ্যালেন্টাইন্স অফ মাই লাইফ?”
আশেপাশের সকলে বলছে ‘প্লিজ সে ইয়েস’ আমি এক নজর তাকালাম সবার দিকে। সবার আমার দিকেই উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে। রোদেলাও আমায় বলছে রাজি হয়ে যেতে। আমি সবার দিকে চোখ বুলিয়ে আহিয়ানের দিকে তাকালাম। আহিয়ান এখনো আমার হাত ধরে হাটু গেড়ে বসে আছে। চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে আমার দিকে উত্তরের আশায়। আহিয়ানের চোখদুটোতে আমার উত্তর শোনার জন্য ব্যাকুলতা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমি।#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী
|৬|
আনিতা এখনো আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে। কিছুই বলছে না। তা দেখে আহিয়ান বলে,
–“কিছু তো বলো। আর কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবো?”
–“আমাকে ভালোবাসতে হলে শুধু এইটুকু কেন? আরো অনেক কিছুই সহ্য করতে হবে। পারবেন সবকিছু মানতে?”
–“হ্যাঁ পারবো। এখন তো কিছু বলো তুমি।”
–“ওয়েট ভাবছি। স্টিল ভাবছি। আমাকে আগে ভালো করে ভাবতে দিন। তারপর আমি আপনাকে বলছি। ততক্ষণ না হয় এভাবে একটু বসেই থাকুন। প্রবলেম কি? ভালোই তো বাসেন। আর ভালোবাসার মানুষের জন্য সবকিছু সহ্য করা যায় তাই না?”
কথাটা বলেই আনিতা বাঁকা হাসলো। আহিয়ান বুঝতে পারলো আনিতা ইচ্ছে করে এসব করছে। আহিয়ান শান্ত গলায় বলল,
–“এখন এভাবে বসে আছি বলে কিন্তু সবসময় যে বসে থাকবো এমন না। নেহাৎই প্রপোজ করেছি তাই উত্তর জানা না অব্দি উঠতে পারছি না। কিন্তু যখন উঠে দাঁড়াবো তখন দেখবো এত কথা কোথায় যায়।”
কিছু একটা ভেবে আনিতা আহিয়ানের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। তারপর ইশারায় আহিয়ানকে দাঁড়াতে বলল। আহিয়ান উঠে দাঁড়াতেই আনিতা আহিয়ানের কিছুটা সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আনিতা আহিয়ানের দিকে আঙুল উঁচু করে বলে,
–“আপনি আমাকে বাচ্চা বলেছেন। তাহলে বাচ্চা মেয়েকে কেন ভালোবাসতে এসেছেন? রিজেক্ট করলাম আমি আপনাকে।”
আনিতার কথা শুনে আহিয়ান সোজা হয়ে দাঁড়ালো। আহিয়ান সোজা হয়ে দাঁড়াতেই আনিতা আহিয়ানের কাঁধের নিচে পড়ে গেলো। মানে আনিতা যদি আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে তাহলে আনিতার মাথাটা ঠিক আহিয়ানের বুকে গিয়ে লাগবে। আহিয়ান মুচকি হেসে আনিতার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“তোমার হাইট আর আমার হাইট দেখেছো? কতটা তফাৎ? তাহলে বাচ্চা বলবো না তো কি বলবো তোমাকে?”
আনিতা পা উঁচু করে আহিয়ানের সমান হতে গেলো। কিন্তু আফসোসের বিষয় পারলো না। আনিতার কান্ডে আহিয়ান সহ সেখানে উপস্থিত সকলে মুখ টিপে হাসছে। আনিতা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
–“মেয়ে হিসেবে আমার হাইট একদম ঠিক আছে। বরং আপনিই বেশি লম্বা হয়ে গিয়েছেন। তালগাছের মতো এত লম্বা ছেলে আমার মোটেও পছন্দ না।”
–“যেই পা উঁচু করেও আমার সমান হতে পারলে না অমনি আমি তালগাছ হয়ে গেলাম তাই না?”
আনিতা কিছু বলবে তার আগেই ফাইয়াজ ধমকে উঠলো দুজনকেই। ফাইয়াজ ধমকের সুরে বলে,
–“কি শুরু করলি দুজনে? প্রপোজ করতে এসে ঝগড়াঝাটি শুরু করে দিয়েছিস। এই আহিয়ান তুই তো আগে এরকম ছিলিস না।”
–“তোর বোনই তো ঝগড়া করছে আমার সাথে। আমি তো প্রপোজ করেই দিয়েছি এখন তোর বোনকে বল তার উত্তরটা দিতে।”
আহিয়ান কথা শেষ করতেই আনিতা আহিয়ানকে ওর দিকে ঝুকতে ইশারা করলো। আনিতা আহিয়ানের দিকে কিছুটা ঝুকে দাঁড়াতেই আনিতা বলে,
–“আপনার আর আমার বয়সের পার্থক্যটা দেখেছেন? দশ দিন পর আমি সতেরো তো পা দিবো আর আপনি পঁচিশ বছরের বুড়ো। ঠিক বয়সে যদি আপনি বিয়ে করতেন না তাহলে আমার বয়সী একটা মেয়ে থাকতো আপনার। আপনি আমার উত্তর জানতে চেয়েছিলেন না? তাহলে বলছি শুনুন, আপনার মতো বুড়ো ছেলেকে আমি ভালোবাসতে পারবো না।”
এইটুকু বলে আনিতা মুচকি হেসে উলটো ঘুরে চলে যাচ্ছিলো। আহিয়ান আনিতার হাত ধরে আটকে দেয়। আনিতা পেছন ফিরে তাকায়। আহিয়ান আনিতার কাছাকাছি গিয়ে বলে,
–“ভেবে দেখলাম তুমি ঠিকই বলেছো। ঠিক বয়সে বিয়ে করলে আমার তোমার বয়সী না হলেও আরো ছোট একটা মেয়ে তো অবশ্যই থাকতো। কিন্তু আফসোসের বিষয় সেটা তো আর হলো না। তাই ভাবলাম তোমার বয়সী একটা মেয়ে নাহয় না হলো একটা বউ তো হবে, এতেই চলবে।”
এই বলে আহিয়ান চোখ মারলো আনিতাকে। আনিতা হেসে ফেললো আহিয়ানের কথা শুনে। একটা কর্নারের টেবিলে গিয়ে বসে পড়লো আনিতা। আহিয়ান আনিতার সামনে গিয়ে টেবিলে হাত রেখে বলল,
–“আমার উত্তর কিন্তু এখনো পাইনি।”
–“আপনার সারপ্রাইজের চক্করে পড়ে সকাল থেকে কিন্তু আমি কিচ্ছু খাই নি। আগে খাবার অর্ডার করুন পেটের মধ্যে আমার রীতিমতো ইঁদুর দৌড়াচ্ছে।”
–“কি খাবে?”
–“জানি না, কিছু একটা হলেই হবে।”
আহিয়ান একটা ওয়েটারকে ডেকে খাবার অর্ডার দিলো। আনিতা তাসকিয়া আর রোদেলাকে ডেকে বলল ওর পাশে বসতে। ওরা দুজনে গিয়ে বসলো। ফাইয়াজ গিয়ে তাসকিয়ার হাত ধরে নিয়ে অন্য টেবিলে গিয়ে বসলো। সাথে রোদেলাকেও ইশারা করলো ওখান থেকে উঠে আসতে। আনিতা অবাক হয়ে জাস্ট তাকিয়ে রইলো ওদের যাওয়ার পানে। কিছুক্ষণ বাদে আহিয়ান একেবারে খাবার সমেত আনিতার পাশে গিয়ে বসলো। আহিয়ান খাবারটা টেবিলে রেখে আনিতাকে জিজ্ঞেস করলো,
–“কি ভাবছো?”
–“আচ্ছা আমাকে এখানে একা বসিয়ে রেখে ওরা সবাই একসাথে অন্য টেবিলে কেন বসলো?”
আনিতার প্রশ্ন শুনে আহিয়ানের কপাল চাপড়ানোর মতো অবস্থা। এই মেয়ের কি এইটুকু সেন্স ও নেই? আহিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
–“আমরা যাতে আলাদা ভাবে কথা বলতে পারি। আলাদা টাইম স্পেন্ড করতে পারি সেজন্য।”
–“কিন্তু আপনার সাথে তো আমার আলাদা কোনো কথা নেই। আর আমরা আলাদা টাইম ই বা স্পেন্ড করবো কেন? হুয়াই?”
–“এই আনিতা একদম রাগাবা না কিন্তু আমাকে। আমার রাগ সম্পর্কে তোমার কোনো ধারনা নেই। তুমি সত্যিই বুঝতে পারছো না কিছু?”
–“হ্যাঁ বুঝতে পারছি তো।”
–“কি বুঝেছো তুমি?”
–“উমমম, বলা যাবে না।”
–“আচ্ছা বলতে হবে না। এখন খাবার শেষ করো তুমি।”
আনিতা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খেতে শুরু করলো। খাওয়ার মাঝে আহিয়ানকেও ইশারা করলো খাওয়ার জন্য। কিন্তু আহিয়ান খেলো না। উলটো দিকে মুখ করে বসে রইলো। আনিতা খাবার নিয়ে আহিয়ানের মুখের সামনে তুলে ধরতেই আহিয়ান মুচকি হেসে খেয়ে নিলো। খাওয়ার শেষে আনিতা বলল,
–“আচ্ছা এবার তাহলে মেইন টপিকে আসা যাক?”
–“হ্যাঁ অবশ্যই। এতক্ষণ ধরে এই কথাগুলো শোনার জন্যই আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। দয়া করে কথাগুলো বলে আপনি আমাকে ধন্য করুন।”
আহিয়ানের কথা বলার ভঙ্গি দেখে আনিতা শব্দ করে হেসে দিলো। আহিয়ান আনিতার হাসিমাখা মুখের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে রইলো খানিকক্ষণ। আনিতা আহিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
–“আপনি আমাকে কতটা চিনেন যে ছবিতে দেখেই না জেনেশুনে ভালোবেসে ফেললেন?”
–“যতটুকু চিনি তাতেই হবে। এর বাইরে জানার কিছু নেই। কেন এমন কোনো কথা আছে যা লুকিয়েছো আমার থেকে? বলতে চাও কিছু?”
–“নাহ সেটা বলিনি। কিন্তু___”
–“আবার কিন্তু আসছে কেন? আর কোনো কিন্তু টিন্তু নেই। এবার তো ভালোবাসি বলো।”
–“চলুন।”
–“কোথায়?”
–“বাহ রে! সবার সামনে প্রপোজ করলেন সবার সামনেই আন্সারটা দিবো না?”
এই বলে আনিতা আহিয়ানের হাত ধরে আবার সবার মাঝে নিয়ে গেলো। ফাইয়াজ ওরা সকলে আনিতা আর আহিয়ানের দিকে তাকালো। আনিতা আহিয়ানের হাতটা ছেড়ে দিয়ে ওর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
–“নিন আবার প্রপোজ করুন।”
–“আবার অতগুলো কথা বলতে হবে?”
কিছুটা মলিন মুখে বলল আহিয়ান। আনিতা হেসে ফেলল আহিয়ানের ফেস এক্সপ্রেশনে। হাসি থামিয়ে বলল,
–“শুরু থেকে না। শুধু লাস্টের কথাগুলো বললেই হবে।”
আনিতার কথা শুনে হাসলো আহিয়ান। তারপর আনিতার সামনে হাটু গেড়ে বসে আনিতার দিকে রিং তুলে ধরে বলল,
–“উইল ইউ বি দ্যা ফার্স্ট এন্ড লাস্ট ভ্যালেন্টাইন্স অফ মাই লাইফ?”
–“উমমমম, ইয়েস আই উইল।”
কথাটা বলার সাথে সাথেই আহিয়ান আনিতার বা হাতের অনামিকা আঙুলে রিং পড়িয়ে দিলো। তারপর আনিতার হাত ধরেই উঠে দাঁড়ালো। ফুড কটেজে ফাইয়াজ ওরা ছাড়াও বাইরের এবং কলেজের অনেকে ছিলো। সকলে একসাথে করতালি দিয়ে উঠলো। কেউ কেউ আবার সিটি বাজালো। আনিতা এবার লজ্জা পেয়ে গেলো।
–
এর মাঝে আর সপ্তাহ খানেক কেটে যায়। সেদিন ফুড কটেজ থেকে বের হয়ে আহিয়ানের সাথে আর দেখা না করেই বাসায় চলে এসেছিলো আনিতা। আহিয়ানও ঘাটায়নি আর। বুঝতে পেরেছিলো বেশ লজ্জা পেয়েছে আনিতা। আনিতা আর আরোহী দুজনে আনিতাদের ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ করেই আরোহী বলে উঠলো,
–“অনিককে ভুলে গিয়েছিস?”
কথাটা শুনে আনিতা চমকে তাকায় আরোহীর দিকে। আরোহী উত্তরের আশায় ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। আনিতা একটা শ্বাস নিয়ে বলল,
–“আহিয়ানের সাথে কথা বললে অনিকের কথা মনে পড়ে না।”
–“ভালোবাসিস তো আহিয়ানকে? নাকি___”
আরোহী পুরো কথা শেষ করার আগেই আনিতা বলে,
–“ভালোবাসি কিনা জানিনা। তবে উনার জন্য আমার মনে কিছু একটা তো ফিল হয়। উনার সাথে কথা বললে নিমিষেই মন খারাপ ভাবটা উবে যায়। ভালো লাগা কাজ করে।”
–“এই ভালো লাগাটা যদি সাময়িক হয়ে থাকে? সময়ের সাথে সাথে যদি তোর মোহ কেটে যায়। তখন তো ওই মানুষটা কষ্ট পাবে। মানুষটা তো তোকে অনেকদিন যাবত ভালোবাসে।”
আরোহীর কথায় এবারে হাসলো আনিতা। মুচকি হেসেই বলল,
–“মায়া বড় অদ্ভুত জিনিস জানিস তো? সবকিছু ছাড়া যায় কিন্তু একবার কারো উপর মায়া পড়ে গেলে সেটা আমৃত্যু ছাড়া যায় না। আর বললি উনার কষ্ট পাওয়ার কথা? আমি উনাকে ছেড়ে দিতে চাইলেও উনি আমাকে ছাড়বেন। এটা আমি খুব ভালো করেই জানি। আহিয়ানের কোনো কিছু চাই মানে সেটাই চাই-ই সে যে ভাবেই হোক। এই কদিনে এটা আমি বেশ বুঝতে পেরেছি।”
আনিতার কথা শুনে আরোহী মৃদু হেসে বলল,
–“শেষ অব্দি তাহলে পাকাপোক্ত ভাবেই কারো কাছে বন্দী হলি?”
আনিতা আর কিছু বলল না। শুধু হাসলো। দুজনে আরো বেশ কিছুটা সময় ছাদে একসাথে কাটালো। সন্ধ্যার আগে আরোহী নিজের বাসায় ফিরে যায়। আর আনিতাও নিচে নেমে আসে। রাতে খাবার খেয়ে আনিতা আর অনিমা দরজা আটকে বিছানায় উপুড় হয়ে বসে লুডু খেলছে। তখনই আনিতার ফোন বেজে উঠে। আহিয়ান ফোন করেছে। আনিতা ফোন রিসিভ করে ইয়ারফোন কানে গুজে নিলো।
–“হ্যাঁ বলুন।”
–“কি করছো?”
–“লুডু খেলছি। আপনি কি করছেন?”
–“বাসায় ফিরলাম মাত্রই। পড়াশোনা বাদ দিয়ে কিসের লুডু খেলা হুম? নিজে তো বাঁদরামি করে বেড়াও এখন আমার ছোট গিন্নীকেও তোমার মতো করে তুলছো।”
–“এই শুনুন আপনার ছোট গিন্নীর থেকে আমি অনেএএএএক ভালো৷ ও তো আমার থেকে আরো বেশি বাঁদরামি করে।”
–“উঁহু, মানছি না। মানবো না। বড়দের থেকেই তো ছোটরা শিখে। তোমাকে দেখে এখন অনিমাও শিখছে সিম্পল।”
–“আচ্ছা বুঝলাম। এখন আপনি ফ্রেস হয়ে আগে খেয়ে নিন। ততক্ষণে আমরা খেলাটা শেষ করছি।”
–“ঘুমিয়ে পড়ো তাহলে। সকালে কথা হবে।”
–“উঁহু। আপনি খেয়ে তারপর নক করুন আমায়। আমি অনলাইনে আছি।”
–“যথা আজ্ঞা মেরি শাহজাদি।”
এরপর ‘ভালোবাসি’ বলে আহিয়ান লাইন কেটে দিলো। আহিয়ানের বলা ভালোবাসির প্রত্যুত্তরে আনিতা শুধু হুম বলেছে। অনিমা থাকায় আর কিছু বলেনি। খেলা শেষ করে আনিতা শুয়ে শুয়ে ফোন ঘাটছে। পাশেই অনিমা ঘুমোচ্ছে। বারোটা নাগাদ আনিতার ফোন বেজে উঠে। আহিয়ান ফোন করেছে। আনিতা রিসিভ করে কথা বলতে শুরু করে। কাল শুক্রবার। না আনিতার ক্লাস আছে আর না আহিয়ানের অফিস আছে। তাই প্রায় সারারাত জেগে কথা বলল দুজনে। ভোর সাড়ে চারটে কি পৌনে পাঁচটা নাগাদ ফোন রেখে দুজনে ঘুমোতে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ~