শুধু তোমারই জন্য ২ পর্ব -০৩+৪

#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|৩|

মিনিট দুয়েক আগেই আনিতা রোদেলা ফাইয়াজ ওরা সকলে হাইওয়ে তে এসে বাইক থামালো। তাসকিয়া আর রোদেলা শুভর বাইকে করে এসেছে। আর আনিতা ফাইয়াজের সাথে। ঘড়ির কাটায় আটটা বেজে পনেরো মিনিট। ওরা সকলে একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। আনিতা রোদেলা আর শুভ তিনজনে মিলে একের পর এক সেলফি তুলে ফোনের গ্যালারি লোড করছে। তাসকিয়া একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এমনি সময়তে তাসকিয়াও খুব দৌড়ঝাঁপ করে কিন্তু আজকে ফাইয়াজ থাকায় চুপটি করে এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে। ফাইয়াজ তাসকিয়ার থেকে দু হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে তাসকিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ফাইয়াজ ওর বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করছে। ওরা এলেই ফাইয়াজ তাসকিয়াকে ‘ভালোবাসি’ কথাটা বলবে।

জিন্স আর কালো কূর্তি পড়েছে আনিতা। কোমড় সমান চুলগুলো খোলা। সেলফি তুলতে তুলতে আনিতা একসময় রাস্তায় নেমে আসে। আনিতার সেদিকে একদমই খেয়াল নেই। হুট করেই তীব্র আলো আনিতার মুখের উপর এসে পড়তেই আনিতা সামনে তাকিয়ে দেখে দ্রুত গতিতে একটা বাইক আনিতার দিকে আসছে। ভয়ে জমে যায় আনিতা। ওখান থেকে যে সরে যাবে সেই কথাটা আনিতার মাথায় আসছে না। আনিতা চোখ বড় বড় করে জড়সড় ভাবে দাঁড়িয়ে বাইকের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎই বাইকটা আনিতার সামনে এসে খুব জোরে ব্রেক কষে। ভয়ে আনিতা দুহাত উলটো করে মুখের সামনে ধরে। প্রচন্ড স্পিডে বাইক সামনে এসে দাঁড়াতে আনিতার খোলা চুলগুলো হাওয়ায় উড়ে মুখের উপর উপচে পড়েছে। বাইক থেকে নেমে আনিতার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আহিয়ান। মুখের সামনে হাত আর চুল উপচে পড়ায় আহিয়ান এখনো আনিতার মুখ দেখেনি। আহিয়ান কিছুটা রেগে বলে,

–“আর ইউ ম্যাড? রাস্তার মাঝে এসে দাঁড়িয়েছেন কেন? এখন যদি এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো? আমি যদি ঠিক সময়ে বাইক থামাতে না পারতাম তাহলে কি হতে পারতো ভেবেছেন একবারো?”

ততক্ষণে ফাইয়াজ ওরা সবাই আনিতার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। তন্ময় ওরাও এক সাইডে বাইক পার্ক করে আহিয়ানের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আহিয়ানকে এভাবে রেগে যেতে দেখে ফাইয়াজ বলে,

–“কি হয়েছে আহিয়ান? এভাবে রেগে আছিস কেন?”

–“আরেহ দেখ না মেয়েটা এখানে এসে দাঁড়িয়েছে একটুর জন্য এক্সিডেন্ট___”

আর কিছু বলতে পারলো না আহিয়ান। আনিতা মুখের উপর থেকে হাত নামিয়ে চুলগুলো সরিয়ে নিলো। আনিতাকে দেখেই আহিয়ানের মুখের কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই প্রথম আহিয়ান আনিতাকে ফেস টু ফেস দেখলো। এর আগেও বেশ কয়েকবার আনিতাকে দেখেছে তবে সেটা এফবিতে আনিতার আইডিতে নয়তো বা ফাইয়াজের ফোনে আনিতার ছবি দেখেছে। আর আজ ভিডিও কলে দেখেছিলো৷ আহিয়ানের কথা শুনেই ফাইয়াজ বুঝতে পেরেছে আর একটু হলে এখানে কি হতে পারতো। আনিতা ফাইয়াজের কাছে গিয়ে ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফাইয়াজ আনিতাকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে বলে,

–“সেলফি তোলায় এতই ব্যস্ত যে রাস্তায় এসে পড়েছিস সেদিকে খেয়াল নেই? কি হতে পারতো তোর কোনো ধারনা আছে আনি বুড়ি?”

–“ব্ বুঝতে পারিনি”

আনিতা ভয়ার্ত চোখে একবার আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে কথাটা বলল। ফাইয়াজ ওর বন্ধুদের সাথে আনিতা ওদের সকলের পরিচয় করিয়ে দিলো। ওখানে মিনিট দশেকের মতো থেকে ওরা আবার সকলে বাইকে চেপে বসলো মাওয়া নদীর ধারে যাওয়ার জন্য। ওখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে ডিনার সেরে তারপর বাসায় ফিরবে সকলে। জনমানবহীন একটা জায়গা দেখে আনিতা ওরা সকলে গিয়ে দাঁড়ালো৷ পাশেই প্রচুর মানুষের কোলাহল। আনিতা রোদেলা তাসকিয়া তিনজনে একসাথে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ ফাইয়াজ ওদের সাথে একটু দূরে দাঁড়িয়েছে। আনিতার চোখে ওদের দিকে পড়তেই দেখে আহিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আনিতা দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। একটু বাদেই ফাইয়াজ ওরা সবাই আনিতাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। ফাইয়াজ তাসকিয়ার সামনে হাটু গেড়ে বসে ওর দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

–“অনেকদিন ধরে বলবো বলবো করেও বলতে পারিনি তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি আমি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তোমাকে যদি ভালোবাসি কথাটা আমি বলতে না পারি তাহলে যে কোনো মূহুর্তে তুমি আমার থেকে হারিয়ে যেতে পারো। তাই আর রিস্ক নিলাম না তোমাকে হারিয়ে ফেলার। যদিওবা আমি জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো। তবুও তোমার থেকে শুনতে চাই। ধরতে দিবে তোমার হাতটা সারাজীবনের জন্য? লাইফটাইম হবে কি তুমি আমার?”

তাসকিয়া বড় বড় চোখ করে ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে। কোটর থেকে চোখ বের হয়ে আসার উপক্রম তাসকিয়ার। ও কিছুতেই ভাবতে পারছে না ফাইয়াজ ওকে প্রপোজ করছে। ও কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি ফাইয়াজ ওকে ভালোবাসে। তাসকিয়া কাঁপা-কাঁপা হাতে ফাইয়াজের হাত ধরে বলে,

–“হ্ হ্যাঁ হবো আমি আপনার।”

ফাইয়াজ হাসিমুখে উঠে দাঁড়ালো তাসকিয়ার সামনে। হুট করেই সবার সামনে জড়িয়ে ধরলো তাসকিয়াকে ফাইয়াজ। খুশিতে তাসকিয়ার চোখ থেকে এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আনিতা ওরা সকলে করতালি আর সিটি বাজাতেই তাসকিয়া ফাইয়াজকে ছেড়ে দিয়ে আনিতার পিছন গিয়ে দাঁড়ালো। বড্ড লজ্জা পেয়েছে মেয়েটা। ফাইয়াজ ওরা সবাই মিলে একটা রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসলো গরম গরম ভাত আর ইলিশ ভাজা খেতে। ওরা সবাই মিলে গল্প করছে। আনিতা এক দৃষ্টিতে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মধ্যে নদীর পানি ঢেউ খেলছে। খানিক বাদে বাদে মৃদু বাতাসে আনিতার খোলা চুলগুলো উড়ছে। হঠাৎ করেই আনিতার চোখ গেলো ওদের থেকে দু টেবিল সামনেই অনিক বসে আছে সাথে দুটো মেয়ে আর একটা ছেলে। দেখে মনে হচ্ছে ওরা কাপল। অনিকের পাশে বসা মেয়েটাকেই আনিতার কনা বলে মনে হচ্ছে। দুজনে খুব ক্লোজ ভাবে বসে আছে। এই প্রথম আনিতা অনিককে দেখলো সামনাসামনি। এসএসসি এক্সামের পর আনিতা আর অনিকের মিট করার কথা ছিলো। কিন্তু এক্সামের মাঝেই ওদের সম্পর্কটা শেষ হয়ে যায়। অনিক ভেঙে দেয় ওদের সম্পর্কটাকে। নিষ্ঠুরভাবে ঠকিয়েছে আনিতাকে। ঘুরেফিরে অনিকের চোখও আনিতার উপর এসে পড়ে। কিছু সময়ের জন্য অনিক নিজেও থমকে যায়। ও কোনোভাবেই আশা করেনি এভাবে আচমকা কোনোদিন আনিতার সাথে ওর দেখা হয়ে যেতে পারে। ছলছলে চোখে আনিতা অনিকের দিকে তাকিয়ে আছে। অনিক বেশিক্ষণ আনিতার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলো না। চোখ সরিয়ে নিলো। আনিতার চোখ দেখে অনিক স্পষ্ট বুঝতে পারছে আনিতা ওকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। অপরাধবোধ কাজ করছে অনিকের ভিতর তাই চোখ সরিয়ে নিলো। আনিতা অন্যদিকে ঘুরে চোখের কোনে জমা পানিটুকু মুছে সকলের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

আধ ঘন্টা বাদেই দুটো ছেলে এসে আনিতাদের টেবিলে খাবার দিয়ে গেলো। ফাইয়াজ সবার প্লেটে খাবার তুলে দিলো। খেতে শুরু করে সকলে। ফাইয়াজ নিজের মাছ থেকে ডিমের টুকরো ছাড়িয়ে আনিতার প্লেটে তুলে দিলো। যদিওবা আনিতা নিতে চাচ্ছিলো না। সবাই খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে। আনিতার চোখদুটো নির্লজ্জের মতো ঘুরেফিরে অনিকের দিকেই যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে অনিকও তাকাচ্ছে। অনিক এদিকে তাকালেই আনিতা চোখ সরিয়ে নেয়। তবুও সেটা অনিকের দৃষ্টি এড়ায় না। আনিতা দু লোকমা ভাত আর মাছের ডিমটুকু খেয়ে উঠে পড়লো সেখান থেকে। ফাইয়াজ প্রশ্ন করে,

–“কোথায় যাচ্ছিস? কিছুই তো খেলি না।”

–“খেতে ইচ্ছে করছে না ভাইয়া। তোমরা খাও আমি এখানেই আছি।”

এই বলে আনিতা ওখান থেকে চলে গেলো। আহিয়ান তাকালো একবার আনিতার যাওয়ার দিকে। বুঝতে পারছে না হঠাৎ করে মেয়েটার কি হলো? একটু আগে তো সব ঠিকই ছিলো। অনিকও মলিন চোখে আনিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। আর কেউ বুঝুক বা না বুঝুক অনিক ঠিকই বুঝতে পেরেছে আনিতার খাবার ছেড়ে উঠে যাওয়ার কারনটা। আনিতা যে ওর জন্যই এখান থেকে উঠে চলে গেলো।

নদীর ধারে মুখ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আনিতা। চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। পলক ফেললেই অশ্রুকণা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে। কিন্তু আনিতা কাঁদতে চাইছে না। ও আর নিজেকে দূর্বল করতে চাইছে না কারো সামনে। বাতাসে আনিতার খোলা চুল আর সাথে ওড়নাটা উড়ছে। মাঝে মাঝে একটা দুটো ঢেউ এসে আনিতার পা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। কেউ একজন আনিতার পাশে এসে দাঁড়ালো। আনিতা সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারলো। কিন্তু কে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা দেখার ইচ্ছে করছে না আনিতার।

–“কেমন আছো আনিতা?”

পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে তড়িৎ গতিতে ঘুরে তাকালো আনিতা। অনিক দাঁড়িয়ে আছে ওর পাশে। প্রথম বার আনিতা অনিককে এতটা কাছ থেকে দেখলো। পরমূহুর্তেই যখন মনে হলো এই মানুষটা আর ওর নেই অন্যকারো তখনই চোখ সরিয়ে নিলো অনিকের থেকে। এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। সাথে সাথে আবার সেটা মুছেও নিলো আনিতা। আর যাই হোক ওর চোখের পানিটা ও অনিককে কিছুতেই দেখাতে চায় না। অনিক আবারো বলে,

–“অনেক অভিযোগ আছে আমার উপর তাই না?”

অনিকের কথায় আনিতা মলিন হাসলো। অনিকের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে বলে,

–“কেন বলো তো? তোমার উপর আমার কোনো অভিযোগ কেন থাকবে?”

–“এই যে তোমাকে আমি___”

–“সাথের মেয়েটাই কনা বুঝি। যাকে তুমি ভালোবাসো।”

অনিককে পুরো কথা বলতে না দিয়েই আনিতা বলে উঠলো। অনিক বুঝতে পারলো আনিতা ওই বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক না। তাই ইচ্ছে করে কথাটা এড়িয়ে গেলো। অনিক কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। আনিতা অনিকের পানে তাকিয়ে আছে উত্তরের আশায়। অনিক একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

–“হ্যাঁ ও-ই কনা।”

–“মানিয়েছে দুজনকে খুব সুন্দর। দোয়া করি সারাজীবন যাতে দুজনে একই সঙ্গে থাকতে পারো। ভালো থেকো, আসছি।”

কথাগুলো বলে আনিতা চলে যেতে নিলেই অনিক বলে,

–“আনিতা শুনো___”

–“আমার বন্ধুরা অপেক্ষা করছে আমার জন্য।”

কোনোরকমে এইটুকু বলেই আনিতা ওখান থেকে একপ্রকার পালিয়ে এলো। আর কিছুক্ষণ ওখানে থাকলে আর নিজেকে সামলাতে পারতো না৷ আবারো দূর্বল হয়ে পড়তো। তাই ওখানে না থাকাটাই ভালো বলে মনে করলো আনিতা। রোদেলা আনিতার সামনে এসে দাঁড়ালো। অন্যমনস্ক ভাবে হাঁটছিলো আনিতা। এভাবে হুট করে কেউ সামনে এসে দাঁড়াতে আনিতা খানিকটা চমকে উঠে। সামনে রোদেলাকে দেখতে পেয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। রোদেলা আনিতার হাত ধরে একপাশে নিয়ে গিয়ে বলে,

–“একটু আগে তোর সাথে একটা ছেলেকে দেখলাম মনে হলো। নদীর দিকে মুখ করে থাকায় চেহারা দেখতে পারলাম না। কে ছিলো রে? বিরক্ত করছিলো তোকে? ফাইয়াজ ভাইয়াকে বলবো?”

–“রিল্যাক্স রোদু। একসাথে এত প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দিবো?”

–“আচ্ছা ধীরে সুস্থেই বল। কে ছিলো ছেলেটা?”

–“অনিক।”

–“কিহ? অনিক? ও এখানে__আর তুই ওর সাথে কথা বলতে গিয়েছিস কেন? কোথায় ও? আমি কথা বলবো ওর সাথে। আমি জানতে চাই ও কেন তোর সাথে এরকমটা করলো।”

–“বাদ দে রোদু। ওর সাথে কনা আছে। আমি চাই না আমার জন্য ওদের ভালোবাসায় ফাটল ধরুক।”

–“আনিতা তুই__”

–“চল এখান থেকে এসব নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না আমি।”

রোদেলার হাত ধরে আনিতা চলে এলো। রোদেলাও আর কিছু বলল না। ফাইয়াজ ওরা ততক্ষণে বিল মিটিয়ে বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে। আনিতাদের সামনে দিয়েই অনিক বাইক নিয়ে বের হয়ে গেলো। পিছনে কনা অনিককে জাপটে ধরে বসে আছে। যাওয়ার আগে অনিক একবার তাকালো আনিতার দিকে। কিন্তু আনিতা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো। যদিওবা বুঝতে পেরেছে অনিক দেখছে ওকে। হাইওয়ে তে এসে আরো কিছুক্ষণ থেকে আনিতা ওরা নিজেদের বাসার দিকে রওয়ানা দেয়। আর আহিয়ান ওরাও নিজেদের বাসায় চলে যায়। এগারোটার কিছুটা পরে আনিতারা বাসায় গিয়ে পৌঁছায়। প্রথমে আনিতা খুব ভয়ে ভয়ে ছিলো এতরাত করে বাড়ি ফেরার জন্য। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো আনিতার আম্মু কিছুই বলেনি। তাই খুশি মনে আনিতা ফ্রেস হয়ে জামা পালটে শুয়ে পড়ে।

–“আনিতা আই লাভ ইউ।”

এফবিতে গল্প পড়ছিলো আনিতা। তখনই তুষার এই ম্যাসেজটা করে। খানিকটা চমকে উঠে আনিতা তুষারের ম্যাসেজ দেখে। প্রথম থেকেই তুষারের হাবভাব আনিতার ভালো লাগছিলো না। তাই যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতো। আনিতাকে রিপ্লাই করতে না দেখে তুষার আবারো ম্যাসেজ করে। আনিতা এবারে বলে,

–“দেখুন আমি ভালোবাসি না আপনাকে। আই হোপ আপনি বুঝবেন। এরপর আর এ ধরনের ম্যাসেজ করবেন না আমাকে।”

–“অনিককে ভালোবাসো তাই তো? কিন্তু অনিক তো ভালোবাসে না তোমায়। চিট করেছে তোমার সাথে তাহলে এখন ওর জন্য কেন এভাবে কষ্ট পাবে? কারো জন্য কিন্তু জীবন থেমে থাকে না আনিতা। অনিক তোমার অতীত। আর অতীতকে ভুলে যাওয়াটাই শ্রেয়।”

–“আপনাকে কে বলেছে এসব?”

–“তাসকিয়া।”

এই মূহুর্তে আনিতার তাসকিয়ার উপর বেশ রাগ লাগছে। কে বলছিলো ওকে এই ছেলেকে সব বলতে। আনিতা নিজেকে যথাসাধ্য সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে,

–“দেখুন আমার যা বলার আমি বলে দিয়েছি। আমি নেক্সট আর রিলেশনে জড়াতে চাই না।”

–“একটাবার চেষ্টা করে দেখো। হয়তোবা নতুন রিলেশনে আসলে অন্যকাউকে ভালোবাসলে তুমি অনিককে ভুলে যেতে পারবে। আর প্রমিস আমি তোমাকে ঠকাবো না। একটুও কষ্ট পেতে দিবো না তোমায়। তুমি একটাবার চেষ্টা করে দেখো আমাকে ভালোবাসার। আমি সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবাসি।”

–“আমার যা বলার আমি তো বলে দিয়েছি আপনি তারপরও বার বার একই কথা বলে যাচ্ছেন কেন?”

–“আচ্ছা তুমি তাহলে ভেবে আমাকে জানাও। এভাবে হুট করেই তো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। তুমি ভাবনা চিন্তা করেই আমাকে জানিও। আমি নাহয় আর দুটো দিন অপেক্ষা করবো।”

আনিতা কিছু না বলে অফলাইন হয়ে গেলো। বিরক্ত লাগছে খুব। ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মেরে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়।
#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|৪|

দুদিন পরের কথা। আনিতা ছাদের রেলিং ঘেঁষে নিচে বসে আছে। নোটিফিকেশনের শব্দ হতেই আনিতা পাশ থেকে ফোনটা হাতে তুলে নিলো। এফবিতে নোটিফিকেশন এসেছে। নোটিফিকেশন চেক করতেই আনিতা দেখতে পেলো অনিক আনব্লক করে রিকুয়েষ্ট দিয়েছে। আবার সেটা এক্সেপ্টও করা হয়েছে। খানিকটা অবাক হলো আনিতা। তৎক্ষনাৎ আনিতা সিটিংয়ে গিয়ে পাসওয়ার্ড এন্ড প্রাইভেসিতে গিয়ে চেক করলো আর কোনো ফোন থেকে ওর আইডিতে লগইন করা হয়েছিলো কিনা? আনিতা দেখলো নয় মিনিট আগেই ওর আইডিতে কেউ লগইন করেছিলো। লোকেশন দেখে আনিতার বুঝতে বাকী রইলো না অনিক ঢুকেছিলো ওর আইডিতে। আনিতার আইডির পাসওয়ার্ড অনিকের কাছেও আছে। সাথে সাথেই আনিতা পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে ফেললো। নিউসফিড স্ক্রল করছিলো আনিতা। আবারো নোটিফিকেশন টোন বেজে উঠে। আনিতা চেক করে দেখলো অনিকের কমেন্টস। হাইওয়ে তে গিয়ে যে ছবি তুলেছিলো সেই ছবি আনিতা আপলোড করেছে। সেখানেই কমেন্টস করেছে অনিক। কমেন্টে লিখেছিলো,

–“ছবির থেকে বাস্তবে আরো বেশিই মায়াবতী তুমি। সামনাসামনি না দেখলে সেটা বুঝতেই পারতাম না।”

আনিতা টোটালি কমেন্টসটা ইগনোর করে গেলো। ও ভাবতে চায় না আর এসব নিয়ে। তাছাড়া আনিতা এটাই বুঝে উঠতে পারছে না যে ছেলে চার মাস আগে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়ে সবকিছু থেকে ব্লক করে দিলো সে আবার কেনো আনব্লক করলো? কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না আনিতার। আনিতার বিরক্তির মাত্রাটা আরো বাড়িয়ে দিতে তুষার ম্যাসেজ করলো,

–“আনিতা ভাবা হলো তোমার? কি সিদ্ধান্ত নিলে বললে না তো?”

আনিতা নিজেকে যথাসাধ্য সামলে রাখার চেষ্টা করছে। হুটহাট রেগে যেতে চাইছে না কোনোভাবেই। আনিতাকে রিপ্লাই করতে না দেখে তুষার আবারো বলে,

–“অন্যকাউকে ভালোবেসে দেখো আনিতা অনিককে তুমি ভুলে যেতে পারবে। আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে অতীতের সবটা ভুলিয়ে দিবো তোমাকে। একটা বার সুযোগ দাও আমাকে।”

আনিতা তুষারের কথা বারবার ভাবতে লাগলো। আনিতার তুষারের প্রতি বিন্দুমাত্র ফিলিংস নেই। তবুও ভাবলো যদি কথা বলতে বলতে ফিলিংসটা তৈরী হয়ে যায়? যদি তুষারের সাথে রিলেশনে গিয়ে অনিককে ভুলে যেতে পারে তাহলে তো ভালোই। ট্রাই করে দেখুক না একবার। তুষারকে একটা সুযোগ দিয়ে তো দেখাই যায় যদি সত্যি সত্যিই ওর ভালোবাসা দিয়ে অনিককে ভুলিয়ে দিতে পারলো। ভাবতে পারছে না আর কিছু আনিতা। নিজেই নিজের চুল খামচে ধরে বসে রইলো ক্ষানিকটা সময়। অনেক ভাবনা চিন্তার পর আনিতা তুষারকে ম্যাসেজ করে জানালো,

–“আমি রাজি আপনার প্রপোজালে তবে আমার একটা শর্ত আছে।”

–“কি শর্ত?”

–“আমি একমাস আপনার সাথে সম্পর্কে থেকে দেখতে চাই। এর মাঝে যদি আমি আপনাকে ভালোবাসি তো ঠিক আছে। আর যদি এই একমাসে আপনার প্রতি আমার কোনো ফিলিংস কাজ না করে আমি যদি আপনাকে ভালো না বাসতে পারি তাহলে আমি আপনার সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবো না। সেদিনই ভেঙে ফেলবো। এবার ভাবুন আপনি কি করবেন?”

তুষার কিছুটা সময় ভেবে বলে,

–“আচ্ছা তোমার শর্তে আমি রাজি।”

–“ভেবে বলছেন তো? পরে আমাকে ব্লেইম করতে পারবেন না কিন্তু।”

–“হুম।”

এই শর্তের মাঝেই সেদিন আনিতা আর তুষারের রিলেশন হয়। আনিতাও চায় অনিককে ভুলে যেতে। আনিতার রাজি হয়ে যাওয়াতে তুষার খুব খুশি হয়েছিলো। আনিতা শুধু তুষারের সাথে সম্পর্কে হ্যাঁ বলেছে। এখনো ভালোবাসি বলেনি। তুষারও জোর করেনি একজনকে ভালোবাসতো এখন তাকে ভুলে ওকে ভালোবাসতে একটু তো সময় লাগবেই।

ক্লাস হচ্ছে না। তাই আনিতা ওরা ফ্রেন্ডরা মিলে একটা ফাঁকা ক্লাসে হাই বেঞ্চের উপর বসে আছে। নানান বিষয়ে কথা বলছে ওরা। আনিতা আর তুষারের রিলেশনে যাওয়া ব্যাপারটা আরোহী তাসকিয়া রোদেলা শুভ এই চারজন ছাড়া আর কেউ জানে না। আর আনিতা তুষারকে নিয়ে অতটা কথাও বলে না। আনিতা ফোনে গেমস খেলছিলো। তাতে ব্যাঘাত ঘটিয়ে তুষার ফোন করে মেসেঞ্জারে। আনিতা ফোন কেটে দিয়ে ম্যাসেজ করলো,

–“ক্লাসে আছি। ফোন দিয়েন না এখন।”

সাথে সাথেই তুষার রিপ্লাই করলো, –“আমিও এদিকেই আছি। তাহলে কলেজে আসি? দেখা করি আজ?”

–“নাহ। কেউ দেখলে প্রবলেম হবে। অন্যকোনোদিন।”

–“বেশিক্ষণ থাকবো না। অল্প কিছু সময়।”

–“পারছি না এখন।”

এই বলে আনিতা ডাটা অফ করে দিলো। ফোন ব্যাগে রেখে আবার সকলে মিলে আড্ডায় মশগুল। বাসায় ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে শুয়ে আছে আনিতা। শুয়ে শুয়ে তুষারের কথা ভাবছে ও। ওর মনে হচ্ছে ও তুষারের সাথে কাজটা ঠিক করছে না। তুষারের সাথে রিলেশনে যাওয়ার সতেরো দিন আজ। কিন্তু ওর মনে তুষারের জন্য বিন্দুমাত্র ফিলিংস কাজ করছে না। তুষারকে ভালোবাসতে পারছে না ও। আর কাউকে ভালো না বেসে তার সাথে সম্পর্কে থেকে তো তাকে ঠকানো হয়। অনিক ওর সাথে যে কাজটা করেছে সেই একই কাজটা ও তুষারের সাথেও করছে। এধরণের নানান চিন্তা ভাবনা আনিতার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আনিতা কিছু একটা ভেবে তুষারকে ম্যাসেজ করলো,

–“আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।”

–“আচ্ছা শুনবো তার আগে বলো তুমি আমাকে তুমি করে কেন বলো না? আমার কি তোমার মুখ থেকে তুমি ডাক শুনতে ইচ্ছে করে না?”

–“কিছু বলতে চাইছিলাম আমি।”

–“ফোন দেই? ফোনে কথা বলি? আর তুমি যা বলবা সেটাও বলো।”

–“নাহ ম্যাসেজেই ঠিক আছে।”

–“ওকেহ বলো।”

–“আমি আপনার সাথে এই মিথ্যে সম্পর্কটাতে আর থাকতে চাচ্ছি না।”

–“মিথ্যা সম্পর্ক মানে? কিসব বলছো? আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।”

–“কিন্তু আমি বাসি না তো। এই সতেরো দিনে আমি অনেক চেষ্টা করেছি নতুন করে সবটা শুরু করার জন্য। কিন্তু আমি পারছি না। আমি কিছুতেই পারছি না অনিককে ভুলে আপনাকে ভালোবাসতে।”

–“এখনো তো একমাস হতে তেরো দিন বাকি আছে। ধীরে ধীরে ঠিক পারবে আনিতা। প্রথম ভালোবাসা এত সহজে ভুলা যায় না। আর অনিককে তুমি সম্পূর্ণ ভাবে কখনো ভুলতেও পারবে না। ও তোমার মনের কোনে কোথাও একটা থেকে যাবে। কিন্তু অন্যকাউকে ভালো তো বাসতে পারবে।”

–“পারছি না আমি বিশ্বাস করুন। এই সতেরো দিনে যেহেতু পারিনি তাহলে বাকী তেরো দিনেও পারবো না আমি। এতদিনে আমি অনেক চেষ্টা করেছি আপনাকে ভালোবাসার জন্য। কিন্তু আমি কিছুতেই পেরে উঠছি না। আর আপনাকে ভালো না বেসেও আপনার সাথে সম্পর্কে থাকলে তো আপনাকে মিথ্যা বলা হবে। ঠকানো হবে আপনায়। তাই সত্যিটা বলে দিলাম। যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে এই সম্পর্কটা রাখার কোনো মানেই হয় না।”

–“কিন্তু আমি যে তোমাকে ভালোবাসি। তার বেলায়?”

–“রাখছি আমি। আর পারলে মাফ করে দিয়েন আমায়।”

এইটুকু বলেই আনিতা অফলাইন হয়ে যায়। ও সত্যিই আর পারছিলো না। চেষ্টা তো আর কম করলো না। কিন্তু কিছুতেই তুষারকে ভালোবাসতে পারছে না। তাহলে শুধু শুধু এই সম্পর্কটা রেখে লাভ কি? সম্পর্কের বয়স যত বাড়তো তুষার ওর প্রতি তত দূর্বল হিয়ে পড়তো। তাই এখনই বলে দিলো এটাই ভালো। তুষার একের পর এক ফোন করে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে আনিতা বাধ্য হয়েই ফোনটা রিসিভ করে। তুষার বারবার আনিতাকে রিকুয়েষ্ট করছে এভাবে সম্পর্কটা ভেঙ্গে না দিতে। কিন্তু আনিতা শুনছে না ওর কথা। তুষারের কন্ঠস্বর শুনে আনিতা স্পষ্ট বুঝতে পারছে ছেলেটা কাঁদছে। কিন্তু তবুও আনিতার মন গলছে না। খারাপ লাগছে ওর তুষারের জন্য। কিন্তু ও তো তুষারকে ভালোবাসে না। তাহলে কি সম্পর্ক রাখবে? আনিতা তুষারের ফোন কেটে দিয়ে নাম্বার এবং এফবিতে ব্লক করে দিলো

পরদিন আনিতারা ক্লাস শেষ করে মাঠে বের হতেই দেখে তুষার আর ওর একটা বন্ধু দাঁড়িয়ে আছে। তুষারকে দেখে আনিতা রোদেলার হাত ধরে উলটো দিকে ঘুরে হাঁটতে শুরু করে। কিন্তু ততক্ষণে তুষার আনিতাকে দেখে ফেলে। তুষার দৌড়ে আনিতার সামনে এসে দাঁড়ায়। আনিতা চোখ তুলে ছেলেটার দিকে লজ্জায় তাকাতে পারছে না। তুষার আনিতার হাত ধরতে গেলে আনিতা হাত সরিয়ে নেয়। অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করে আনিতাকে। তুষারকে আবারো সরি বলে পাশ কাটিয়ে চলে এলো আনিতা। আনিতা ওরা চারজনে একটা ক্যাফেতে গিয়ে বসলো। শুভ খাবার অর্ডার দিয়ে আনিতাদের পাশে এসে বসলো। তাসকিয়া বলে,

–“তুষার মনে হয় তোকে সত্যিই ভালোবাসে আনিতা।”

–“জানি আমি।”

–“তাহলে একটা বার চেষ্টা করে দেখতে পারতি।”

তাসকিয়ার কথায় আনিতা মৃদু হাসলো। তারপর নরম সুরেই বলে,

–“চেষ্টা করেছিলাম তো। কিন্তু পারিনি। তাহলে অযথা কেন সম্পর্কটা রাখবো বল তো?”

–“আচ্ছা এখন এসব কথা ছাড়।”

রোদেলার কথায় আনিতা একটা ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তারপর কিছুটা সময় চুপ থেকে আবার বলে উঠে,

–“দুনিয়ার কি অদ্ভুত নিয়ম তাই না? যাকে আমি ভালোবাসি সে আমাকে চায় না। আর যে আমাকে ভালোবাসে তাকে আমি চাই না।”

শুভ এতক্ষন চুপচাপ ওদের কথা শুনছিলো আর ফোন ঘাটছিলো। আনিতার কথা শুনে শুভ এতক্ষনে মাথা তুলে আনিতার দিকে তাকিয়ে বলে,

–“এইটা একদম খাঁটি কথা বলছিস তুই।”

কিছুক্ষণ বাদে ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে গেলো। চারজনে আড্ডা দিতে দিতে খাবার শেষ করে উঠে পড়লো। ক্যাফে থেকে বের হয়ে সবাই বাসায় চলে আসে। কেটে যায় আরো দুটো দিন। সন্ধ্যার খানিকটা আগে আনিতা ঘুম থেকে উঠে। ফ্রেস হয়ে বিছানায় গিয়ে বসে চকলেট বের খেতে শুরু করে ও। ফোন হাতে নিয়ে ভিডিও দেখছিলো আনিতা। তখনই ম্যাসেজ নোটিফিকেশন আসে। ম্যাসেজ চেক করে দেখলো “আহিয়ান আদৃত” আইডি থেকে ম্যাসেজ। আইডির মানুষটাকে চিনতে আনিতার কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো। প্রোফাইল চেক করতেই দেখলো এটা ফাইয়াজের বন্ধু আহিয়ানের আইডি। হঠাৎ করে আহিয়ানের ম্যাসেজে আনিতা অবাক হলো বেশ। ফ্রেন্ডলিস্টে আছে বহুত দিন যাবত। এক বছর কি বা তার বেশি হবে। কিন্তু কখনো ম্যাসেজ হয়নি দুজনের। এতদিন পর হঠাৎ ম্যাসেজ দেওয়াতে আনিতা অবাক হলো খুব। আনিতা ম্যাসেজ দেখলো সেখানে লিখা,

–“কেমন আছো পিচ্ছি?”

পিচ্ছি ডাকটা শুনে আনিতার বেশ রাগ হলো। ওকে কোনো এঙ্গেল দিয়ে পিচ্ছি মনে হয়? সেটাই ভেবে পেলো না আনিতা। নিজেকে সামলে নিয়ে রিপ্লাই করলো,

–“ফাইয়াজ ভাইয়ার বন্ধু বলে আপনাকে ছেড়ে দিলাম। নয়তো আমাকে পিচ্ছি বলার অপরাধে হাইকোর্টে গিয়ে আমি আপনার নামে মামলা দায়ের করতাম।”

আনিতার এমন ম্যাসেজ দেখে ওদিকে আহিয়ান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। কোনোমতে আহিয়ান হাসি থামিয়ে ঠিকঠাক ভাবে বসলো। তারপর আবার রিপ্লাই করলো,

–“বাব্বাহ! থ্রেট দেওয়া হচ্ছে আমাকে? ভয় পেয়েছি কিন্তু খুউব। অল্পের জন্য হার্ট এ্যাটার্ক হয়নি। যখন হার্টের উপর এ্যাটার্ক হবে তখন ভাগ্যিস হার্ট-কে মিউট করে লক করে ফেলেছিলাম। নয়তো এতক্ষণে কি যে হতো?”

এবার আনিতার হাসার পালা। আহিয়ানের ম্যাসেজ দেখে আনিতা বিছানার উপর গড়াগড়ি দিয়ে হাসছে। ছেলেটাকে সামনাসামনি দেখলে মনে হয় না এভাবে কাউকে হাসাতে পারে। বা ছেলেটা এরকম ভাবে কথা বলতে পারে। এভাবেই একটা দুইটা ম্যাসেজ করতে করতে দুজনে স্বাভাবিক হয়ে যায়। বেশ চঞ্চল স্বভাবের ছেলেটা সহজেই সবাইকে হাসাতে পারে আহিয়ান।

এভাবেই সময় কাটছে। তুষার আনিতার সাথে কথা বলার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু আনিতা প্রতিবারই ইগনোর করেছে ওকে। এর মাঝে অনিকও দু/এক বার ম্যাসেজ করেছিলো আনিতাকে। আনিতা সহজ ভাবেই রিপ্লাই করেছে। বারতি কোনো কথা বলেনি অনিকের সাথে। আনিতা নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক করে তুলেছে এই ছয় মাসে। নিজেকে আর ভেঙে গুড়িয়ে দিতে চায় না আনিতা। তাই ইচ্ছে হলেও অনিকের সাথে কথা বলে না। আহিয়ানের সাথে আনিতার প্রায়শই কথা হয়। আহিয়ান নিজে থেকেই ম্যাসেজ করে বেশি। মাঝে মধ্যে আনিতাও নক করে। দুজনের মাঝে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ভালো খারাপ সবকিছুই আহিয়ানের সাথে শেয়ার করে আনিতা। কিন্তু অনিকের ব্যাপারটা কখনো জানায়নি। আহিয়ান এর আগে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছিলো ও কাউকে ভালোবাসে কিনা? আনিতা সরাসরি না বলে দেয়। এরপর আহিয়ানও আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি এসব নিয়ে।

রাত সাড়ে এগারোটা বাজে আনিতা দেখলো আহিয়ান অনলাইনে আছে। তাই ভাবলো ওকে একটু জ্বালানো যাক। যেই ভাবা সেই কাজ। আনিতা আহিয়ানের ইনবক্সে একটা ছবি সেন্ড করে সাথে সাথে আবার সেটা রিমুভ করে দিলো আহিয়ান দেখার আগেই। কিছুক্ষণ বাদে আহিয়ান ম্যাসেজ করলো,

–“কি রিমুভ করলা?”

–“ছবি।”

–“কিসের?”

–“আমার।”

–“তাহলে আবার রিমুভ করলা কেন? আবার সেন্ড করো।”

–“উঁহু পারবো না।”

–“মাইর দিবো কিন্তু__”

আহিয়ানের ম্যাসেজ দেখে আনিতা মুখ টিপে হাসলো। তারপর আবার রিপ্লাই করলো,

–“বাদাম বাদাম দাদা কাঁচা বাদাম।”

–“বড্ড ফাজিল হয়েছো না?”

আনিতা আবারো আহিয়ানের ম্যাসেজের পাত্তা না দিয়ে লিখলো,

–“আমার কাছে নাইকো বুবু ভাজা বাদাম।”

–“মাইর দিলে তুমি তোমার বাদাম নিয়ে পালাবা।”

–“আমার কাছে আছে শুধু কায়ায়ায়ায়ায়ায়াচা বাদাম।”

আহিয়ান এবার খানিকটা বিরক্ত হয়। রাগ নিয়ে বলে,

–“হইছে। এহন ছবি আবার সেন্ড করো আমি ওয়েট করছি।”

–“ওয়েট করতে থাকেন। এখন আমার ছবি দেওয়ার মুড নেই।”

–“নেহাৎই ডট ডট ডট তাই কিছু বলতেও পারছি না।”

–“লালা লায়ায়ায়ায়ায়া লালা”

–“ওকেহ গুড নাইট।”

–“আচ্ছা গুড মর্নিং।”

–“হুম বাই।”

আনিতা এবার তড়িঘড়ি করে ম্যাসেজ করলো,

–“এই এক মিনিট। ‘ডট ডট ডট’ এর এখানে কি বসবে আগে সেটা বলে যান।”

আহিয়ান এবার আনিতাকে জ্বালাতে গান লিখতে শুরু করলো,

–“আজ ফাল্গুনী পূর্নিমা রাতে চল পলাইয়ে যাই। এই ফাল্গুনী পূর্নিমা রাতে চল পলাইয়ে যাই।”

–“গান পরে শুনাবেন আগে বলুন কোন কথাটাকে মিসিং করে আপনি ‘ডট ডট ডট’ বললেন?”

–“দূর দেশে যাবো রে, বাসা বানাবো রে, থাকবো দুজনে একসাথে। এই ফাল্গুনী পূর্নিমা রাতে চল পলাইয়ে যাই।”

আনিতার এবার বেশ বিরক্ত লাগছে। ও বুঝতে পারছে আহিয়ান ওর জালেই ওকে ফাসাচ্ছে। ও এতক্ষণ আহিয়ানকে জ্বালিয়েছে তাই আহিয়ানও এখন সেম কাজটা করছে। আনিতা বিরক্ত হয়ে বলে,

–“আচ্ছা আপনি পালিয়েই যান। আমি ঘুমোতে গেলাম।”

আনিতার ম্যাসেজ দেখে এবার আহিয়ান খানিকটা শব্দ করেই হেসে দিলো। ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা রেখেই রিপ্লাই করলো,

–“এতক্ষণ তো আমাকে বেশ জ্বালাচ্ছিলে। তাহলে এখন তুমি বিরক্ত হচ্ছো কেন?”

–“আমি জ্বালাবো বলে আপনিও এরকম করবেন?”

–“হ্যাঁ করবো তো।”

এভাবে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে অফলাইন হয়ে যায় আনিতা। ফোন পাশে রেখে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ~
চলবে ইনশাআল্লাহ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here