শুধু তোমারই জন্য ২ পর্ব -০১+২

#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|১|

বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে এফবিতে গল্প পড়ছে আনিতা। পরশু থেকে যে ওর এসএসসি এক্সাম শুরু সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই ওর। হঠাৎ করেই ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো। খুবই মনোযোগ সহকারে গল্প পড়ছিলো আনিতা। হঠাৎ করে ব্যাঘাত ঘটায় বিরক্তিতে আনিতার ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেলো। কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। পরক্ষণেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো যখন দেখলো চ্যাট–হেডে আবরার অনিকের আইডি ভাসছে। আনিতা গল্প থেকে বের হয়ে অনিকের আইডিতে গেলো। অনিক ম্যাসেজ করেছে,

–“পরশু থেকে এক্সাম শুরু। এখন তুমি পড়াশোনা বাদ দিয়ে অনলাইনে কি করছো?”

পড়াশোনার কথা শুনে আনিতা মুখ বাঁকালো। ওর মোটেও পড়াশোনা করতে ভালো লাগে না। বাসায় তেমন পড়াশোনা করেও না। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে তেমনভাবে পড়াশোনা না করলেও আনিতার রেজাল্ট মোটামুটি ভালো আসে। আনিতা মাত্রই রিপ্লাই করবে এমন সময় অনিক আবারো ম্যাসেজ করে,

–“কি হলো ম্যাসেজ সিন করেও রিপ্লাই করছো না কেন?”

আনিতা তড়িঘড়ি করে রিপ্লাই করলো, “এত পড়াশোনা করে কি হবে শুনি? সেই তো বিয়ের পর শশুড়বাড়ি গিয়ে কাজই করতে হবে।”

–“এক থাপ্পড়ে সবগুলা দাঁত ফেলে দিবো ফাজিল মেয়ে। তাই বলে পড়াশোনা করবে না? একটা কথা মাথায় রেখো ভালোভাবে পড়াশোনা না করলে রেজাল্ট ভালো না আসলে কিন্তু আমি তোমায় বিয়ে করবো না।”

–“এই শোনো আমার রেজাল্ট নিয়ে তোমার একদম চিন্তা করতে হবে না। আমি না পড়ে এক্সাম দিলেও আমার রেজাল্ট মোটামুটি ভালোই আসবে।”

–“এবার তা একদমই হচ্ছে না। ফোন রেখে চুপচাপ পড়তে বসো।”

–“আচ্ছা বসবো আগে একটু কথা বলে নেই? ফোন করি?”

–“উঁহু একদম না। এখন বিজি আছি। তুমি পড়তে বসো। রাতে আমি ফোন করবো।”

–“প্লিজ অনিক।”

–“এরকম করলে কিন্তু রাতেও কথা বলবো না।”

–“এমন করছো কেন? আচ্ছা যাও মাত্র দু মিনিট কথা বলবো। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”

আনিতার বাচ্চামোতে অনিক মুচকি হাসলো৷ তারপর অনিক নিজেই আনিতাকে ফোন করলো। একবার রিং হতেই আনিতা ফোন রিসিভ করে নেয়। সত্যি সত্যি অনিক দু মিনিটের মতো কথা বলে ফোন রেখে দেয়। বই বের করে পড়ায় মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে আনিতা। ঘন্টা দুয়েকের মতো পড়ে রুম থেকে বের হয় আনিতা। রাতের খাওয়া-দাওয়ার পর কিছুটা সময় রেস্ট নিয়ে আবারো বই নিয়ে বসে বিছানায়। আধ ঘন্টার মতো বই নিয়ে গুনগুন করার পর বই রেখে টান টান হয়ে শুয়ে পড়ে আনিতা। এখন আর পড়ায় মনোযোগ আসবে না। শুয়ে শুয়ে এপাস ওপাশ করছে৷

আনিতা শুয়ে শুয়ে ওর আর অনিকের কথাই ভাবছিলো। অনিকের সাথে আনিতার রিলেশন তিনমাসের মতো হবে। এই অল্প সময়েই ছেলেটাকে ভালোবেসে ফেলেছে ও। হঠাৎ করেই সবটা হয়ে গিয়েছিলো। এফবিতেই পরিচয় দুজনের। আর সেখান থেকেই ভালোবাসার শুরু। ঢাকার জেলার দোহার উপজেলার ছোট্ট একটা গ্রামে আনিতার বাসা। আর অনিকের বাসা মিরপুর-১০ এ। আনিতার মনে হয় ও অনিককে যতটা না ভালোবাসে অনিক ওকে তার থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসে। অনিক আনিতাকে সবসময় শাসনের মাঝে রাখে। আনিতা পড়তে না চাইলে জোর করে পড়তে বসানো। এক বেলা খেতে না চাইলে জোর করে খাওয়ানো সবকিছুই অনিক করে। কোনো ছেলের সাথে মেশা তো দূরে থাক এফবিতে কারো সাথে ম্যাসেজ অব্দি করা যাবে না। এফবিতে ছবি দেওয়া যাবে না। আনিতার কোথাও যেতে হলেও অনিককে বলে যেতে হয়। আনিতার কাছে খারাপ লাগে না কাজগুলি করতে। ভালোই তো বাসে। আর ভালোবাসার মানুষটার সবকিছু সহ্য করা যায়।

এভাবেই সময় কাটছে। আনিতার চারটে এক্সাম শেষ। মোটামুটি ভালোই হয়েছে এক্সামগুলো। কাল পরশু দুদিন গ্যাপ আছে পরদিন আবার ম্যাথ এক্সাম। অনিকের সাথেও কথা হচ্ছে মাঝে মধ্যে। আনিতার এক্সামের কারনে অনিক আনিতাকে এফবিতে হোয়াটসঅ্যাপ সবকিছুতেই ব্লক করে রেখেছে। আর আনিতাও আইডি আপাতত ডিএক্টিভেট করে রেখেছে এক্সামে ভালোভাবে ফোকাস করার জন্য। প্রতিদিন দুবার করে অনিক নিজে থেকেই ফোন দিয়ে আনিতার সাথে কথা বলে। আনিতাও এখন জোর করে না বেশি কথা বলার জন্য। এক্সামের কয়েকটা দিনই তো। তারপর থেকে আনিতা ফ্রি। তখন মন ভরে কথা বলা যাবে। এই ভেবে আনিতা এইটুকুতেই সন্তুষ্ট হয়।

কাল এমসিকিউ গুলো কমপ্লিট করেছে আনিতা। আজ বেছে বেছে দু/একটা ম্যাথ করছে। কাল রাতে অনিকের সাথে কথা হয়েছিলো আনিতার। এরপর আজকে সারাদিন গিয়ে এখন রাত আটটার মতো বাজে আর কথা হয়নি। আনিতার এখন পড়ায় মন বসছে না। অনিকের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। তাই আনিতা নিজে থেকেই ফোন করলো অনিককে। প্রথমবার ফোন বেজে কেটে গেলো। দ্বিতীয় বার অনিক ফোন রিসিভ করে। অনিকের কন্ঠ আনিতার ঠিক লাগলো না। কেমন ভাবে যেন কথা বলছে আজকে। আনিতা বার কয়েক জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু অনিক এড়িয়ে গেছে সবটা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে অনিক বলে,

–“কাল তো ম্যাথ এক্সাম।”

–“হুম।”

–“প্রিপারেশন কেমন? ম্যাথ করতে বসছিলা?”

–“হুম এখনো করছি।”

–“বিশ্বাস হচ্ছে না।”

–“সত্যি বলছি।”

–“ছবি দাও হোয়াটসঅ্যাপে। আমি আনব্লক করছি।”

আনিতা কিছু বলার আগেই অনিক ফোন রেখে হোয়াটসঅ্যাপে নক করলো। আনিতা কিছু না ভেবেই খাতার ছবি তুলে অনিককে পাঠিয়ে দেয়। কিছুটা সময় ম্যাসেজ করার পর অনিক আনিতার ছবি চায়। আনিতাও ছবি পাঠিয়ে দেয়। ছবিটাতে আনিতা বেগুনী রঙের জামদানী শাড়ি পড়া। বিকেলের উপচে পড়া বাতাসে আনিতার কোমড় সমান খোলা চুলগুলো মুখের উপর আঁচড়ে পড়ে। চোখ পিটপিট করে বা হাতে সেই চুলগুলো সরাচ্ছিলো আনিতা। তখনই আরোহী আনিতার বেস্টফ্রেন্ড আনিতাকে না বলেই ছবিটা তুলে নেয়। আনিতার ভীষণ প্রিয় একটা ছবি। সেই ছবিটাই আনিতা অনিককে দেয়। অন্যদিকে অনিক আনিতার সেই ছবিটা দেখে থমকে যায়। অনিকের চোখজোড়া বারবার আনিতার ছবির দিকেই যাচ্ছে। ছবিটাতে আনিতার সামান্য কিছুটা পেট দেখা যায়। মুখের উপর থেকে চুল সরানোর সময় পেটের ওখান থেকে শাড়ি খানিকটা সরে যায়। অনিক চোখ সরিয়ে নিলেও বারবার সেদিকেই চোখ যাচ্ছে। হঠাৎ করেই অনিক আনিতাকে ফোন করে বসে। আনিতা ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই অনিক একটা অন্যায় আবদার করে বসে আনিতার কাছে। আনিতা সরাসরি নাকোচ করে দেয়। কিন্তু অনিক বারবার আবদারটা করেই যাচ্ছে। আনিতাও মানতে নারাজ। শেষে অনিক হুট করেই বলে বসে,

–“তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?”

–“এটা কেমন প্রশ্ন অনিক? তুমি কি এতদিনে এটা বুঝতে পারোনি আমি তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি।”

–“আমার এখন তোমার ভালোবাসার উপর সন্দেহ হচ্ছে আনিতা। তুমি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো তো?”

–“অনিক আমি বুঝতে পারছি না এখানে আমার ভালোবাসার দিকে আঙুল তুলছো কেন তুমি?”

–“আনিতা তুমি যদি আমাকে ভালোবাসতে তাহলে আমার কথাটা রাখতে।”

অনিকের কথায় আনিতা চমকে উঠে। অনিকের কথা না রাখার জন্য অনিক বলছে আনিতা ওকে ভালোবাসে না? কথাটা যেন ঠিক মানতে পারছে না আনিতা। ওপাশ থেকে অনিকের আর কোনো সারা না পেয়ে আনিতা বলে,

–“সামান্য একটা ছবিতে কি যায় আসে অনিক? আজকে আমি তোমার কথা শুনে তোমাকে ছবি দিলে আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর যদি তোমার কথা না শুনে আমি তোমাকে ছবিটা না দেই তাহলে কি আমি তোমায় ভালোবাসি না?”

–“হ্যাঁ তাই।”

–“অনিক বুঝার চেষ্টা করো।”

–“আমার কথাটা তুমি রাখবে কি রাখবে না?”

–“সরি আমি পারছি না তোমার কথাটা রাখতে।”

–“আচ্ছা তাহলে আমিও পারছি না তোমার সাথে সম্পর্কটা রাখতে।”

–“অনিক প্লিজ তুমি একবার বুঝো আমার ব্যাপারটা___”

ততক্ষণে অনিক ফোন কেটে দেয়। আনিতার চোখ বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। আনিতা চোখের পানিটুকু মুছে অনিকের নাম্বারে ডায়াল করে আবারো। অনিক রিসিভ করেই বলে,

–“আর ফোন দিবা না আমাকে। আমি তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক না।”

–“এমন কেন করছো অনিক? তুমি তো জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।”

–“তুমি সত্যিই বুঝতে পারছো না আমি এরকমটা কেন করছি?”

–“অনিক, অনিক শোনো আমার কথাটা___”

–“রাখছি আমি। আর হ্যাঁ দ্বিতীয় বার যেন আর কোনো ফোন না আসে।”

আনিতা আবারো ডায়াল করে অনিকের নাম্বারে। কিন্তু অনিক ততক্ষণে নাম্বার ব্লক করে ফেলেছে। আনিতা ওর আম্মুর ফোন এনেও অনিকের নাম্বারে ডায়াল করে। কিন্তু আনিতার কন্ঠ শোনা মাত্রই অনিক ফোন কেটে সেই নাম্বারও ব্লক করে দেয়। আনিতা এবারে কিছুটা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। হঠাৎ করে যে অনিক এমন করবে আনিতা সেটা ভাবতেই পারছে না। সেই রাতে আনিতার খাওয়া পড়া ঘুম কিছুই হলো না।

এক্সাম হলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে আনিতা। আনিতার আম্মু এসে আনিতাকে খেতে ডাকলো। আনিতাও কিছু না বলে চুপচাপ খেতে গেলো। কাল রাতে কিছু খায়নি এখনো যদি না খায় তবে বিষয়টা ভালো দেখাবে না। তাই চুপচাপ অল্প কিছুটা খেয়ে নিলো। গলা দিয়ে যেন খাবার নামছে না। কান্নাগুলো সব গলায় এসে দলা পাকিয়ে আছে। আনিতা বহু কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে রুমে এসে পড়লো। অনেকটা সময় কাঁদার ফলে আর রাতে ঘুম না হওয়াতে আনিতার চোখ দুটো বেশ ফুলে আছে সাথে লাল হয়ে আছে।

অটোতে করে যাচ্ছে আনিতা আর ওর আম্মু। ওদের সামনের সিটে রাকিব আর হৃদয় বসা। ওরা তিনজনেই এক স্কুলে পড়ে। তিনজনেই কমার্সের স্টুডেন্ট। রাকিব আর হৃদয় এক্সামের বিষয়ে কথা বলছে সাথে আনিতার আম্মুও৷ অন্যদিন হলে আনিতাও ওদের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত থাকতো। কিন্তু আনিতা আজকে একদম চুপচাপ। কোনো কথা বলছে না। চুপচাপ বাইরের দিকে মুখ করে বসে আছে। চোখে পানি টলমল করছে। পলক ফেললেই যেন চোখ দিয়ে পানি গুলো গড়িয়ে পড়বে। আনিতার চোখের কোনে জমা পানিটুকু মুছে নিলো৷ আনিতার আম্মুও বারবার ঘুরে ফিরে আনিতার দিকে তাকাচ্ছে। কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছেন তিনি। হলের সামনে আসলে আনিতা ওর আম্মুকে বলে আগে আগেই ক্লাসে চলে গেলো৷

সামনে এমসিকিউর আন্সার সিট নিয়ে বসে বসে চোখের পানি ফেলছে আনিতা। কিছুতেই যেন কিছু মার্ক করতে পারছে না ও। আচ্ছা আনিতার থেকে তো অনিক নিজে বেশি ভাবতো আনিতার এক্সাম পড়াশোনা এসব নিয়ে। তাহলে আজ সে কি করে আনিতার এসএসসি ম্যাথ এক্সামের দিন এমনটা করছে? আনিতা কিছু ভাবতে পারছে না। এদিকে এমসিকিউর সময় পার হচ্ছে। আনিতার পাশের সারিতে ওর থেকে দু বেঞ্চ আগে বসা রোদেলা বারবার আনিতাকে ইশারা করে যাচ্ছে আন্সার সিট মার্ক করার জন্য। রোদেলার কথাতেই আনিতা শেষে চোখের পানিগুলো মুছে এমসিকিউ দাগাতে শুরু করে। সেদিন কোনোমতে এক্সামটা দিয়ে আনিতা হল থেকে বের হতেই রোদেলা এসে দাঁড়ায় আনিতার সামনে৷ রোদেলা আনিতাকে একটা সাইডে টেনে নিয়ে বলে,

–“একরাতেই কি অবস্থা করেছিস নিজের? আনিতা এইটা বোর্ড এক্সাম। যদি এবারে তুই অনিকের জন্য কোনোভাবে এক্সামে খারাপ করিস তাহলে কিন্তু তোর লাইফ থেকে একটা বছর চলে যাবে আনিতা৷ একটা বছর পিছিয়ে যাবি তুই। প্লিজ এক্সামে ফোকাস কর। এভাবে চলতে পারে না। আর অনিক যদি সত্যিই তোকে ভালোবাসতো তাহলে কি এরকমটা করতে পারতো? বল আমাকে?”

আনিতা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। রোদেলা আরো বেশ কিছুটা সময় আনিতাকে বোঝায়।তারপর দুজনেই নিচে নেমে আসে। আনিতাকে বাই বলে রোদেলা চলে যেতেই আনিতা গিয়ে ওর আম্মুর সামনে দাঁড়ালো। এক্সাম কেমন হয়েছে জিজ্ঞেস করাতেই আনিতা বলল,

–“ভালো হয়নি। পাশ মার্ক উঠবে কিনা জানি না।”

প্রত্যুত্তরে আনিতার আম্মু কিছু বললেন। রাকিব আর হৃদয় আসলেই চারজনে একসাথে আবারো বাড়ি ফিরে আসে। এভাবে কাটছে সময়গুলো। আনিতা পড়ায় তেমন মনোযোগ দিতে পারছে না। কোনোমতে এক্সামগুলো দিয়ে বের হয়ে আসে আনিতা।

দেখতে দেখতে সবগুলো এক্সাম শেষ হয়ে যায়। এরমাঝে আনিতা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে অনিকের সাথে যোগাযোগ করতে। কিন্তু কোনোভাবেই পেরে উঠেনি। অনিকের কোনো ফ্রেন্ডের সাথেও আনিতার পরিচয় করিয়ে দেয়নি যে তাদের মাধ্যমে ও অনিকের সাথে কথা বলবে। একদিন বিকেলে আরোহীর আইডি দিয়ে অনিকের প্রোফাইল ঘাটতেই ‘ফারহানা তাসনিম’ নামে একটা আইডি আনিতার চোখে পড়লো। রিয়্যাক্ট কমেন্টস এসব দেখে মনে হলো অনিকের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক মেয়েটার৷ আনিতার ওর আইডিতে গিয়ে মেয়েটাকে নক করলো। দুদিন বাদে মেয়েটা আনিতার ম্যাসেজের রিপ্লাই করে। মেয়েটার সাথে কথা বলে আনিতা জানতে পারলো অনিক মেয়েটাকে বড় বোনের মতো দেখে। আনিতা একে একে সবটা বললো মেয়েটাকে। আর বলল একটাবার অনিকের সাথে কথা বলিয়ে দিতে। মেয়েটা জানায় চেষ্টা করবে।

পরদিন আনিতা আবার মেয়েটাকে ম্যাসেজ করে। কিছুক্ষণ বাদেই মেয়েটা রিপ্লাই করে,

–“হ্যাঁ বলো।”

–“আপু অনিকের সাথে কথা হয়েছে?”

–“হুম হয়েছে। ও তোমার সাথে কথা বলতে চায় না।”

–“আপু আর একটু চেষ্টা করে দেখুন না। আমি সত্যি ওকে খুব ভালোবাসি। অনিক নিজেও তো আমাকে ভালোবাসে বলেছে। তাহলে এখন এরকমটা কেন করছে ও?”

–“অনিক যে তোমাকে ভালোবাসে তার কোনো প্রুভ আছে তোমার কাছে?”

–“মানে?”

–“মানে অনিক আমাকে বলছে ও যে তোমাকে ভালোবাসে এর কোনো প্রুভ আছে কিনা?”

–“ভালোবাসা কি প্রুভ দিয়ে হয় আপু? একসময় ও আমাকে ভালোবাসি বলেছে। এখন আবার ও-ই যদি বলে আমাকে ভালোবাসে না বলে তাহলে আমি কিভাবে প্রুভ করবো?”

–“হ্যাঁ সেটাই। বাদ দাও এসব। ওর পিছনে পড়ে থেকে লাভ নেই। তোমার এখনো পুরো লাইফটা পড়ে আছে। সেদিকে ফোকাস করো। এসব জিনিসের পিছনে ছুটে নিজের সময় নষ্ট করো না। আর সবথেকে বড় কথা অনিক তোমাকে ভালোবাসে না। অন্য একজনকে ভালোবাসে ও।”

–“ম্ মানে?”

–“কনা নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসে অনিক। কনার সাথে ওর সেই ক্লাস থেকে এইট থেকে রিলেশন। ওদের রিলেশনের কথা ওর ফ্রেন্ড সার্কেল ফ্যামিলির সবাই জানে।”

–“ও যদি কনাকে ভালোবাসে তাহলে আমার সাথে কেন এরকমটা করলো? আমি তো ওর কোনো ক্ষতি করিনি।”

–“জানি না আপু। আজকালের পোলাপান। এসব করেই বেড়াবে। ওর কথা আর মনে করে নিজেকে কষ্ট দিও না। পড়াশোনায় ফোকাস করো একসময় দেখবা খুব ভালো থাকবা।”

–“হুম।”

আনিতা জাস্ট এতটুকু বলেই অফলাইন হয়ে গেলো। অনিক যে ওকে এভাবে চিট করতে পারে সেটা ওর কল্পনাতেই আসেনি। অল্প কয়েকদিনেই মনের অনেকটা জায়গা দখল করে নিয়েছিলো কিনা। ভুলতে তো সময় লাগবেই।
#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|২|

এর মাঝে আরো দুটো মাস কেটে যায়। আনিতাদের রেজাল্ট পাবলিশ হয়েছে। এ গ্রেড আসছে আনিতার। এরকম ভাবে এক্সাম দেওয়ার পর যে ও পাশ করবে সেটা ও ভাবতেই পারেনি। আনিতা তো একদম সিউর ছিলো অন্যান্য সাব্জেক্টে যেমন তেমন ম্যাথে তো কোনোভাবেই পাশ করবে না। কিন্তু অদ্ভুতভাবে পাশ করে যায় ও। তবে অন্যান্য সব বিষয়ের থেকে ম্যাথের রেজাল্ট বেশিই খারাপ এসেছে৷ কোনোরকমে টেনেটুনে পাশ হয়েছে ম্যাথে। রেজাল্ট শুনে খুব কেঁদেছিলো আনিতা।

কলেজে এডমিশন নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আনিতা। আনিতা রোদেলা শুভ তাসকিয়া চারজনে একই কলেজে এডমিশন নিবে বলে ঠিক করেছে। কালকেই কলেজে গিয়ে ফর্ম ফিলাপ করে জমা দিতে হবে। তারপর ম্যাসেজ আসলেই গিয়ে এডমিশন নিতে হবে।

রাতে খাবার খেয়ে শুয়ে ছিলো আনিতা। এফবিতে গল্প পড়ছে। হঠাৎই তুষার ম্যাসেজ করে আনিতাকে। তুষারের সাথে আনিতার মাস খানেক আগে এফবিতে পরিচয় হয়। ছেলেটার বাসা আনিতাদের কলেজ থেকে মিনিট বিশেকের দূরত্ব। আনিতা তেমন কথা বলে না ছেলেটার সাথে। তবে ছেলেটাই আনিতাকে বারবার নক করে যায়। তাই মাঝে মধ্যে টুকিটাকি কথা হয়। আনিতা দেখলো তুষার লিখেছে,

–“কাল কলেজে আসবে?”

–“কেন?”

–“ফর্ম ফিলাপ করবে না?”

–“হ্যাঁ যাবো।”

–“মিট করি তাহলে কাল?”

–“সরি।”

–“প্লিজ।”

–“ঘুমোবো, রাখছি।”

এইটুকু বলেই আনিতা অফলাইন হয়ে শুয়ে পড়লো। ওর এখন ভালো লাগে না কোনোকিছুই। ছেলেদের থেকে যতটা দূরে থাকা যায় সেভাবেই থাকে। অনিককে ভুলতে পারেনি এখনো। প্রথম ভালোবাসা বলে কথা। এত সহজে কি আর ভুলা যায়? সাতপাঁচ ভেবে এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো আনিতা।

সাড়ে নয়টা নাগাদ আনিতা বাসা থেকে বের হলেই ফাইয়াজ ডেকে উঠে আনিতাকে। ফাইয়াজের ডাকে পিছন ফিরে তাকায়। ফাইয়াজ আনিতার একমাত্র ফুপ্পির একমাত্র ছেলে। দুজনের সম্পর্কটা টম & জেরির মতো৷ ঝগড়া মারামারি সবসময় চলতেই থাকে দুজনের। অথচ দুজনের মাঝে বয়সের পার্থক্যটা আকাশ পাতাল। আনিতার সবে ১৬+ কয়েক মাস বাদে সতেরো তে পা দিবে৷ আর ফাইয়াজের পঁচিশ বছর বয়স। দুজনের বয়সের মধ্যে এতটা পার্থক্য হওয়া সত্বেও একজন আরেকজনের পিছু লাগা বাদ দেয় না। ফাইয়াজ বাইক নিয়ে এসে আনিতার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

–“বাইকে উঠ। আমি কলেজে দিয়ে আসছি।”

–“আমার ফ্রেন্ডরা__”

–“ফোন করে জানিয়ে দে তুই আমার সাথে যাচ্ছিস। সরাসরি কলেযে গিয়েই মিট করবি সকলে।”

আনিতা কিছু না বলে বাইকের পিছনে উঠে বসলো। আনিতা উঠে বসতেই ফাইয়াজ বাইক স্টার্ট দেয়। আনিতা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে রোদেলাকে ম্যাসেজ করে বলে দেয় ওদের চলে যেতে ও ফাইয়াজের সাথে যাচ্ছে। মিনিট পাঁচেকের মাথায় ফাইয়াজ কলেজের পার্কিং এড়িয়ায় এসে বাইক থামালো। আনিতা নেমে যেতেই ফাইয়াজ বলে,

–“তুই যা আমি আসছি।”

আনিতা সম্মতি জানিয়ে কলেজের ভিতর চলে যায়। কিছুক্ষণ বাদেই রোদেলা তাসকিয়া আর শুভ এসে হাজির হয়। অনেকদিন বাদে দেখা হলো সবার তাই সকলেই বেশ খুশি। তাসকিয়া আনিতার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

–“দেখলাম আমার জানপাখিটা বাইরে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। আমার আবার কপাল পুড়লো নাকি রে? কোন সতিন এসে জুটলো আবার?”

তাসকিয়ার কথায় আনিতা রোদেলা শুভ তিনজনেই উচ্চস্বরে হেসে উঠে। তাসকিয়া যে ফাইয়াজের কথা বলছে এটা ওরা সকলেই জানে। ক্লাস নাইনে যখন প্রথম ফাইয়াজকে দেখেছিলো তখন থেকেই ওর প্রেমে পা পিচলে পড়ে আছে তাসকিয়া। কিন্তু এখনো বলে উঠতে পারেনি। আর না আনিতাকে বলতে দিয়েছে। ফাইয়াজের ভাবসাব দেখে তেমন কিছুই বোঝা যায় না। তাসকিয়া আবারো বলে,

–“তোরা হাসছিস? আমার কথা শুনে তোদের হাসি পাচ্ছে? আনিতা শোন তোর ভাই যদি আবার কোনো শাকচুন্নী জুটিয়েছে না তাহলে___”

–“তাহলে কি?”

গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে তাসকিয়া সহ সকলেই পিছন ফিরে তাকালো। পকেটে হাত গুলে ফাইয়াজ দাঁড়িয়ে আছে ওদের পিছনে। তাসকিয়া একটা শুকনো ঢোক গিলল। ফাইয়াজ কিছু বুঝেনি তো? তাসকিয়া আমতা আমতা করে বলে,

–“ক্ কিছুনা।”

–“কিন্তু আমি যে কিছু একটা শুনলাম।”

তাসকিয়া ভয়ে কাচুমাচু হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আনিতা রোদেলা শুভ ওরা তিনজনেই মুখ টিপে হাসছে। ফাইয়াজ এবার আনিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–“ফর্ম তুলে সেটা ফিলাপ করতে হবে তো। চল।”

এইটুকু বলেই ফাইয়াজ হাঁটতে শুরু করে। আনিতা ওরা চারজনেও ফাইয়াজের পিছু পিছু যাচ্ছে। একটা রুমে গিয়ে ফাইয়াজ আর শুভ ফর্ম তুলতে চলে গেলো। আনিতা রোদেলা আর তাসকিয়া তিনজনে হাই বেঞ্চের উপর উঠে বসে পা ঝুলাচ্ছে। আর আশে পাশে চোখ বুলাচ্ছে প্রায় সকলেই ফর্ম ফিলাপ করায় ব্যস্ত। পিছন থেকে কেউ একজন তাসকিয়াকে ডেকে উঠায় তাসকিয়া পিছন ফিরে তাকালো। তাসকিয়া ছেলেটাকে সামনে আসতে বললেই ছেলেটা তাসকিয়াদের সামনের বেঞ্চে এসে বসলো। ছেলেটা হুট করেই আনিতাকে বলে,

–“কেমন আছো আনিতা?”

ছেলেটার প্রশ্নে আনিতা মাথা তুলে তাকায়। ওর সামনে তুষার বসে আছে। আনিতা চোখ পাকিয়ে তাসকিয়ার দিকে তাকাতেই তাসকিয়া আনিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

–“আসতে চেয়েছিলো আমি কি করে না করি বল?”

প্রত্যুত্তরে আনিতা তাসকিয়াকে কিছু না বলে তুষারের দিকে তাকালো একবার। তারপর আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে,

–“আলহামদুলিল্লাহ আপনি?”

তুষার একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে আর আনিতা মাঝে মধ্যে হু/হা করছে এই। আনিতার বিরক্ত লাগছে খুব। কিন্তু কিছু বলতেও পারছে না। আনিতা লাফ দিয়ে বেঞ্চ থেকে নেমে গিয়ে বলে,

–“তোরা কথা বল আমি আসছি। দেখি ফাইয়াজ ভাইয়া এখনো আসছে না কেন।”

এইটুকু বলেই আনিতা চলে এলো ওখান থেকে আনিতার পিছু পিছু রোদেলাও দৌড়ে গেলো। তাসকিয়া আর তুষার দুজনে বসে কথা বলছে। কিছুক্ষণ বাদে ফাইয়াজ ওরা সেখানে আসতেই দেখে তাসকিয়া আর তুষার বসে বসে গল্প করছে। ফাইয়াজ কিছুটা রক্তচক্ষু নিয়েই তাকালো তাসকিয়ার দিকে। তাসকিয়ার ফাইয়াজের উপর চোখ পড়তেই খানিকটা চুপসে গেলো। ফাইয়াজের এমন চাহনীর কারন খুঁজে পাচ্ছে না ও। তাসকিয়া সঙ্গে সঙ্গেই তুষারকে বাই বলে সেখান থেকে উঠে এলো। আনিতা মুখ টিপে হাসছে ফাইয়াজের কাজে। ওর কাছে ব্যাপারটা বেশ ইন্ট্রেস্টিং লাগছে। বাসায় গিয়ে ফাইয়াজকে চেপে ধরতে হবে। ওর ভাইটাও যদি তাসকিয়াকে ভালোবেসে থাকে তাহলে তো ভালোই হবে। দুজনে একসাথে থাকতে পারবে। মনে মনে এসব ভেবে মৃদু হাসলো আনিতা।

বিকেলে আনিতা ফাইয়াজ দের বাসায় গেলো। প্রথমে ফুপ্পির সাথে দেখা করে ফাইয়াজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। দরজাটা হালকা চাপানো। আনিতা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। ফাইয়াজ ওর বন্ধুদের সাথে ল্যাপটপে ভিডিও কলে কথা বলছে। আনিতা সেদিকে পাত্তা দিলো না। আনিতা পিছন থেকে গিয়ে ফাইয়াজের গলা জড়িয়ে ধরলো। আচমকা এভাবে কেউ ধরাতে ফাইয়াজ চমকে উঠে। পিছনে তাকিয়ে আনিতাকে দেখে হাত ধরে সামনে টেনে আনে। হঠাৎ করে আনিতার এমন আহ্লাদীপানা বেশ ভাবাচ্ছে ফাইয়াজকে। নিশ্চয়ই কোনো ঘাপলা আছে এতে। এদিকে ফাইয়াজ ফোন কাটেনি। ফাইয়াজের বন্ধুরা এখনও ভিডিও কলে আছে। ভিডিওতে আনিতাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আনিতার সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ফাইয়াজও লাইন কাটতে ভুলে গিয়েছে। ফাইয়াজ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে আনিতার দিকে। ও বোঝার চেষ্টা করছে আনিতা ঠিক কি মতলবে এখানে এসেছে? ফাইয়াজকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আনিতা বলে,

–“কি দেখছো ওভাবে?”

–“তোর মতলবটা কি বল তো? কখনো তো এভাবে এসে গলা জড়িয়ে ধরিস না। সবসময় হাত চলতেই থাকে তোর। তাহলে আজকে এত পরিবর্তন যে?”

সন্দিহান দৃষ্টিতে আনিতার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল ফাইয়াজ। আনিতা আমতা আমতা করে বলে,

–“বাহ রে আমি বুঝি শুধু তোমার সাথে ঝগড়া মারামারি করি। আমার ঝগড়া আর মারামারিটাই তোমার চোখে পড়ে। আর আমার ভালোবাসাটা বুঝি চোখে পড়ে না?”

–“হইছে বোইন তুই অফ যা। কি লাগবে সেটা বল?”

–“বলবো?”

–“হ্যাঁ বল না। বলতেই তো এসেছিস। তাহলে এখন এত ভণিতা করে লাভ কি?”

–“বলছিলাম কি সন্ধ্যার পর আমায় একটু ঘুরতে নিয়ে যাবে? প্লিজ।”

–“সন্ধ্যার পর কোথায় যাবি শুনি?”

–“মাওয়া হাইওয়ে তে।”

–“মাথা খারাপ নাকি যে তোকে নিয়ে ঘুরতে যাবো? তাও আবার সন্ধ্যার পর। এজন্যই এত ভালোবাসা দেখানো হচ্ছিলো বুঝি? যাহ ভাগ পারবো না আমি।”

–“প্লিজ ভাইয়া চলো না।”

–“উঁহু আমি যাচ্ছি না।”

–“তাসকিয়াও যাবে।”

তাসকিয়ার কথা শুনে ফাইয়াজ চোখ মেলে তাকালো আনিতার দিকে। আনিতা অসহায় ফেস করে তাকিয়ে ছিলো। আনিতা মুখ গোমড়া করে বলে,

–“আচ্ছা তারপরও যেহেতু নিয়ে যাবে না। তাহলে আমি চলেই যাচ্ছি। তাসকিয়াকে বলে দিচ্ছি আমরা যাচ্ছি না।”

এইটুকু বলে আনিতা উঠে আসলো। দরজার কাছাকাছি যেতেই ফাইয়াজ বলে,

–“রেডি থাকিস সন্ধ্যার পর।”

ফাইয়াজের কথা শুনে আনিতা মুখ টিপে হাসলো। ও জানতো তাসকিয়ার কথা বললেই ফাইয়াজ রাজি হয়ে যাবে। তাই তো ইচ্ছে করেই তাসকিয়ার কথাটা তুলল। আনিতা খুশি হয়ে ছুটে এসে ফাইয়াজের পাশে ধপ করে বসে পড়লো। তারপর একহাতে জড়িয়ে নিলো ফাইয়াজকে। ফাইয়াজও মুচকি হেসে আনিতাকে জড়িয়ে নিলো। আনিতায়া ফাইয়াজকে ছেড়ে দিয়ে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,

–“এই যে আমি এতক্ষণ ধরে বললাম তাতে রাজি হলে না। কিন্তু যেই তাসকিয়ার কথা বললাম তখনই রাজি হয়ে গেলে। ব্যাপারটা কি বলো তো?”

এক ভ্রু নাচিয়ে আনিতা ফাইয়াজকে জিজ্ঞেস করলো। ফাইয়াজ শান্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আনিতার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,

–“কিছু না।”

–“ভালোবাসো তাসকিয়াকে?”

ফাইয়াজ চোখ বড় বড় করে তাকালো আনিতার দিকে। আনিতা ফাইয়াজের হাতজোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,

–“বলো না ভাইয়া। প্লিজ প্লিজ বলো।”

–“নাহ। তোর বন্ধুকে আমি ভালোবাসতে যাবো কেন?”

–“আমি আরো ভাবলাম তুমি বুঝি ওকে ভালোবাসো। ওকেহ তুমি যেহেতু ওকে ভালোবাসোই না তাহলে আমি নিজ দায়িত্বে আমার বন্ধুর জন্য গিয়ে বিএফ খুঁজি। একটা ছেলে খুউউউব ভালোবাসে ওকে। ওর সাথেই আমি এখন রিলেশনটা করিয়ে দিবো তাসকিয়ার।”

আনিতার কথায় ফাইয়াজের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

–“একদম উল্টাপাল্টা কিছু করবি না বলে দিলাম। তোর বন্ধুকে বলে দিবি কোনো ছেলের সাথে রিলেশন তো দূরে থাক কথাও যাতে না বলে।”

–“বাহ রে! তোমার কথা তাসকিয়া কেন শুনবে?”

–“শুনবে। শুনতে বাধ্য কারন তাসকিয়া আমাকে ভালোবাসে এটা আমি জানি।”

–“আর তুমি? তুমি ভালোবাসো না?”

–“হ্যাঁ বাসি। তাই তো অন্যকারো সাথে ওকে দেখলে আমার মাথাটা গরম হয়ে যায়।”

ফাইয়াজের কথা শুনে আনিতা ‘ইয়েএএএএএ’ বলে চিৎকার করে ফাইয়াজকে জড়িয়ে ধরলো। ফাইয়াজও বুঝতে পারলো এবার আর কিছু লুকানো যাবে না। আনিতার কথার মারপ্যাঁচে পড়ে ও সবটা বলে দিয়েছে আনিতাকে। আনিতা ফাইয়াজকে ছেড়ে দিয়ে ভাবুক হয়ে বলে,

–“আচ্ছা তাহলে ওকে ভালোবাসি বলছো না কেন?”

–“আজকেই বলবো।”

এভাবে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে আনিতা চলে যায় সেখান থেকে। আনিতার খুব বেশি খুশি লাগছে। তাসকিয়া ওর বেস্টফ্রেন্ডের সাথে সাথে ভাবীও হবে। আনিতা বাসায় গিয়ে শুভ আর রোদেলাকেও জানালো ব্যাপারটা। ওরা সকলে খুব খুশি। ফাইনালি তাসকিয়া তার ভালোবাসার মানুষটাকে পাবে।

অন্যদিকে আনিতা যাওয়ার পর ফাইয়াজ ল্যাপটপের দিকে তাকাতেই দেখে ওর বন্ধুরা এখনো ভিডিও কলে আছে। কেউ লাইন কাটেনি। ফাইয়াজে বলে,

–“সরি তোদের অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হলো। লাইন কেটে দিলেই তো পারতি।”

ওপাশ থেকে ফাইয়াজের বন্ধু তন্ময় বলে,

–“এসব ছাড়। ফাইনালি তাহলে ভাবীকে ভালোবাসার কথাটা জানাবি আজ।”

–“হুম ভাবছি আজকে বলেই দিবো। পরে যদি আবার অন্যের খাঁচায় বন্দী হয়ে যায় তখন আমাকে দেবদাস হয়ে ঘুরতে হবে।”

ফাইয়াজের কথা শুনে ফাইয়াজের বন্ধুরা সকলেই হেসে উঠে। হাসি থামিয়ে রাতুল বলে,

–“অল দ্যা বেস্ট ইয়ার।”

–“হুম। আচ্ছা এক কাজ কর। সন্ধ্যার পর তো মাওয়া হাইওয়ে তে যাচ্ছি। তোরাও চলে আয়। তাসকিয়ার সাথেও পরিচিত হয়ে নিবি।”

–“আচ্ছা দেখছি।”

তন্ময়ের কথায় ফাইয়াজ মাথা নাড়ালো। তারপর আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,

–“ওই শালায় কথা বলছে না কেন? কি হয়েছে ওর?”

–“কিছু না। এখন রাখছি তাহলে সন্ধ্যায় দেখা হবে।”

এই বলেই আহিয়ান লাইন কেটে দিলো। তন্ময় ফাইয়াজ রাতুল আরহান ওরা কেউ-ই কিছু বুঝতে পারলো না। ওরা চারজনে মিলে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে লাইন কেটে দেয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ~
চলবে ইনশাআল্লাহ~

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here