#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৩৮ ও শেষ
রাফির সাথে একটা মেয়েকে দেখে ইনায়ার দুনিয়া ঘুরে যাবার উপক্রম, তারউপর মেয়েটা প্রেগনেন্ট। ইনায়া স্তব্ধ নয়নে নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে রাফির দিকে, কিছু না বলেও যেনো চোখ দিয়ে অনেক কিছু বলে দিচ্ছে।
শুধু কি ইনায়া! এখানে উপস্থিত সকলে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। তাদের কারোরিই বিস্বাস হচ্ছে না রাফি আরেকটা বিয়ে করতে পারে!
ইনায়া অন্যায় করেছে কিন্তু সেটা তূরের সাথে, রাফির সাথে না! তাহলে কেনো এত বড় শাস্তি দিলো মেয়েটাকে?
তূর ও রাফি বাদে এখানে সকলে জানে ইনায়া এই ছয় মাস কিভাবে ছিলো আর কি সহ্য করেছে। তূর ও রাফি জানে ইনায়া মানসিক কষ্টে ছিলো কিন্তু তারা এখনো জানে না বাচ্চা মিসক্যারেজ হওয়ার ব্যাপারটা।
সকলের এরকম চাহনীতে রাফি বোকা বনে যায় কিন্তু যখন ইনায়ার দিকে নজর যায় তখন রাফির বুকটা ধক করে উঠে। সে তো এরকম শাস্তি চায় নি! চেয়েছিলো ইনায়া তার করা ভুল গুলো বুঝুক যা ক্রমশ অন্যায়ে রূপান্তরিত হয়েছিলো। মন থেকে অনুতপ্ত হোক আর কখনো যাতে ঐরকম না করে। সে (রাফি) দূরে চলে গিয়ে বোঝাতে চেয়েছিল প্রিয় মানুষ হারানোর কষ্ট!
রাফি গলা খাঁকারি দিয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই তূর বলে,
তূর: তোকে আমি বারবার বলে দিয়েছিলাম কোন অবিবেচকের মতো কাজ করবি না, তুই কেমনে পারলি ইনায়াকে রেখে এই (বিদেশি) মেয়েটাকে বিয়ে করতে?
ফাইজা: মানলাম ইনায়া অন্যায় করছে কিন্তু তুই তো বিয়ে করে ওর (ইনায়া) অন্যায় করার পেছোনে যে ভয়টা একটু হলেও কাজ করতো তা সত্য করে দিলি!
রাফি আবার কিছু বলতে নিবে তখনি অর্ক বলে,
অর্ক: ইনায়ার উপর রাগটা আমারো আছে ও তূরকে বাধ্য করেছিল সেখান থেকে চলে আসতে কিন্তু তাই বলে তুই বিয়ে করবি আরেকটা!
রিজভী: তুই জানিস এই ছয় মাস ইনায়ার সাথে কি কি হয়েছিল? কি কি সহ্য করতে হয়েছে মেয়েটাকে? কি কি হারিয়েছে?
লিরা: মানলাম তুই ওকে শাস্তি দিয়ে বুঝাতে চেয়েছিলি, কিন্তু উত্তর দেওয়া শাস্তিটা কোন লেভেলে গেছে তুই তা ভাবতেও পারছিসনা।
বাকিরা সবাই চুপচাপ দেখছে, তাদেরও অনেক কিছু বলতে ইচ্ছা করছে। নাদিয়া ও প্রিতিশা ওই বিদেশি মেয়েটাকে খুঁটে খুঁটে দেখছে।
নাদিয়া চুপিসারে মেয়েটার কাছে গিয়ে বলে,
নাদিয়া: তোমার কয় মাসের প্রেগনেন্সি?
মেয়েটা নাদিয়ার এমন প্রশ্নে হকচকিয়ে গেলেও জবাব দেয়,
মেয়েটা: সাত মাসের।
নাদিয়া ও প্রিতিশা একে অপরের দিকে চোখাচোখি করে এরপর নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে,
প্রিতিশা: নাদিয়া আপু, রাফি ভাইয়া সেখান থেকে চলে গিয়েছে ছয় মাস হবে তাইনা? তাহলে এই মেয়ে সাত মাসের প্রেগন্যান্ট কেমনে হয়!!
নাদিয়া:—-
নাদিয়া কিছু বলতে নিবে তার আগেই তাইজুল সেখানে আসে,
তাইজুল: সেটাই তো! রাফি সেখানে গিয়ে তো সাথে সাথে বিয়ে টিয়ে করে ফেলেনি তাই না! পরিচিত হবারও একটা ব্যাপার আছে।
ওদের তিনজনের সাথে রণক, আসফি ও তাওহিদ এসেও যুক্ত হয়। জারিন ইনায়াকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে রাফিদের কাছে।
রণক: পরিচিত হবার বিষয়টা বাদ দিলেও ছয় মাসের প্রেগনেন্ট হবার কথা।
আসফি এতে বাগড়া দিয়ে বলে,
আসফি: চুপ। ছয় মাসের প্রেগনেন্ট কি! পাঁচ মাসের হতে পারে। তোদের কি রাফিকে এমন মনে হয় যে ড্রাংক অবস্থায় কোন মেয়ের সাথে এরকম করবে?
তাওহিদ: আরে ভাই চুপ কর! আগে রাফিকে বলতে দে, তোরা তো কেউ বলতেই দিচ্ছিস না!
কথাটা বলেই তাওহিদ সেখান থেকে আবার রাফিদের কাছে যায়।
তাওহিদ: এই সবাই চুপ করো। আর রাফি তুই সব কিছু বল।
রাফি এতক্ষণে মনে হয় নিজের জানটা ফিরে পেলো।
রাফি: তোরা আমাকে কিছু বলতে তো দিবি! আমি ওই মেয়েটাকে বিয়ে করিনি। আর না ওর পেটে আমার বাচ্চা।
সবাই: তাহলে? মেয়েটা কে?
সবাই একত্রে এভাবে জিজ্ঞাসা করাতে রাফি হকচকিয়ে যায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
রাফি: মেয়েটা একটা বিধবা মেয়ে।
ফাইজা: বিধবা মেয়ে তোর সাথে কেনো?
রাফি: বলছি——–
☆
আমি যখন “লস ভেগাস” এ যাই তখন তো জব ছিলো না, বাবা-মার কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা ও নিজের জমানো টাকা সাথে নিয়েছিলাম।
“ইউনিভার্সিটি অফ নেভাদা” তে ভর্তি হয়েছি। “ইউনিভার্সিটি অফ নেভাদাতে” ক্রেডিট ট্রান্সফার করার সময় “সানফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটির” এক বায়োকেমেস্ট্রির শিক্ষক রাফিকে “ইউনিভার্সিটি অফ নেভাদা” এর একজন মুসলিম ভারতীয় শিক্ষকের এড্রেস দেয় আর বলে, ” ওই শিক্ষকের কাছ থেকে কোনো দরকার পরলে সাহায্য নিতে।”
“মোঃ আব্দুল কুরায়েশ” ইনি ইউনিভার্সিটি অফ নেভাদার জেনেটিকস ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক। তার একমাত্র ছেলে “মোঃ সায়েম কুরায়েশ” একজন আর্মি অফিসার ছিলেন। যিনি সাত মাস আগে একটা মিশনে শহীদ হয়েছেন। মোঃ আব্দুল কুরায়েশের স্ত্রী ছেলেকে জন্ম দিতে যেয়ে মারা গিয়েছিলেন আর তিনিও জীবনে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। পুত্রবধূর “রুবিনা” তুরস্কের একজন অনাথ মেয়ে।
রুবিনা তার স্বামী মারা যাবার এক মাস পরে, জুন মাসের শেষ সপ্তাহে জানতে পারে প্রেগনেন্ট।
স্যারের বাসায় পেইড গেস্ট হিসেবে যাই। স্যার নিজেও অসুস্থ আর রুবিনাও তারউপর প্রেগনেন্সি!
স্যার রুবিনাকে বলেছিল, এবোরশন করতে আর নিজের জীবন শুরু করতে তবে রুবিনা করেনি। সে তার স্বামীর শেষ চিহ্নকে রাখতে চায়।
আমি যখন ওদের বাসায় যাই তখন রুবিনা পাঁচ সপ্তাহের প্রেগন্যান্ট। মেয়েটার সারা দিন মনমরা হয়ে বসে থাকতো আর সেটা আমি প্রতিদিন বিকেলে দেখতাম। যেহেতু আমি জানি উনি বিধবা আর প্রেগন্যান্ট তাই ওনাকে হাসিখুশি রাখার জন্য উনার সাথে টুকটাক কথা বলতাম, রুবিনাও স্বাভাবিক হচ্ছিলো।
স্যার এই বিষয়টা লক্ষ্য করেন আর আমাকে প্রস্তাব দেয় রুবিনাকে বিয়ে করার জন্য, কিন্তু আমি যেহেতু আগে থেকেই বিবাহিত তাই আমি স্যারকে এই কথাটা বলি এরপর স্যার আর কিছু বলে নি। এছাড়া রুবিনাকে যখন স্যার কথাটা বলে, তখন সেও আমাকে বিয়ে করতে রাজি না সে আমাকে বন্ধুর মতো ভাবে। এতে আমি স্বস্তি পাই।
স্যারকে ও রুবিনাকে আমি আমাদের সব কথা জানাই তারপরে রুবিনা বলে,
“ডাক্তার বলেছে তার প্রেগনেন্সি রিস্কি! হয়তো বাচ্চাটাকে বাঁচানোর সময় সে বাঁচবে না তাই সে চায় আমি যেন বাচ্চাটার দায়িত্ব নেই তবে তাকে বিয়ে করে নয়! বাচ্চাটা জন্মের পর লিগালি এডপ্ট করে।”
স্যার নিজেও সায় দেয় কারন সে বৃদ্ধ মানুষ কতদিন আর বাঁচবে!
আমি প্রথমে মানা করলেও রুবিনা নিজের সন্তানের জন্য আমাকে অনেক রিকুয়েস্ট করে তাই আমি রাজি হই। আর যেহেতু তার বাচ্চাটাকে জন্মের পরপরই আমি এডপ্ট করব তাই এখানে আসার সময়ও রুবিনাকে সাথে করে নিয়ে এসেছি।
☆
রাফি কথাগুলো ভিনদেশী ভাষায় বলেছে তাই সবাই বুঝতে পেরেছে।
সকলে রাফির কথা শুনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আর ইনায়ার বুক থেকে যেনো পাথর নেমে যায়।
রাফি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলে,
রাফি: রুবিনার বাচ্চার বাবা-মা আমি ও ইনায়া হবো যদি ইনায়া রাজী থাকে!
কথাটা শুনে ইনায়ার নিজের অনাগত সন্তানের কথা মনে পরে যায় আর সে ঢুকরে কেঁদে উঠে ফ্লোরে হাঁটু ভেঙ্গে বসে পরে।
হঠাৎ করে ইনায়ার এভাবে ভেঙ্গে পড়া দেখে রাফি ঘাবরে যায়। সে ইনায়ার সামনে যেয়ে হাটু ভেঙে বসে বলে,
রাফি: আমি জানি তোমাকে আমার জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে কিন্তু এটা জরুরি ছিল। তোমাকে বোঝানো দরকার ছিল কারো অবহেলা কেমন লাগে। আর দেখো তুমি তোমার অন্যায়টা বুঝতে পেরেছ আর মন থেকে অনুতপ্ত। তুমি কি চাওনা রুবিনার বাচ্চাটা বাবা-মা পাক?
ইনায়া রাফিকে জড়িয়ে ধরে বলে,
ইনায়া: চাই তো। রুবিনার বাচ্চাটাকেই আমি আমার মৃত সন্তানের জায়গায় বসাবো! ও যদি এখন থাকতো তাহলে রুবিনার বাচ্চাটার মতোই বেড়ে উঠতো।
ইনায়ার মুখ থেকে “মৃত সন্তান” কথাটা শুনে রাফি অবাক হয়ে যায়। ইনায়াকে নিজের বুক থেকে উঠিয়ে ভালো করে জিজ্ঞাসা করে,
রাফি: মৃত সন্তান মানে?
শুধু রাফি না! তূরও অবাক! তূর অবাক হয়ে মিহালের দিকে তাকায়, মিহালের মৌন সম্মতি দেখে তূর বুঝে যায় ইনায়া প্রেগনেন্ট ছিলো। তূর ভাবে, ওর জন্যই হয়তো বাচ্চাটা নষ্ট হয়েছে!
ইনায়া নিজেকে সামলাতে না পেরে রাফিকে সব বলে। রাফি সব শুনে নিজেকে দোষ দিতে থাকে, “কেন সে সেখান থেকে গিয়ে ইনায়ার খোঁজ নিলোনা! খোঁজ নিলে হয়তো বাচ্চাটা আজ থাকতো। ইনায়াকে নিজে যত্ন করতে পারতো তার সাথে কথা না বলে শাস্তি বহাল রেখে।”
তূর সব শুনে ইনায়ার কাছে মাফ চাইতে যায়। তখন ইনায়া বলে,
ইনায়া: না তূর, তোর কোন দোষ নেই। আমি নিজের অন্যায়ের শাস্তি পেয়েছি। রাফি তো আর জানতো না আমি প্রেগনেন্ট। এসব আমার কর্মফল, যা আমি পেয়ে গেছি। আর দেখ রুবিনার বাচ্চাটার সাথে আমি মা হতে পারবো।
সবার মান-অভিমানের পালা শেষ।
_______
কেটে যায় আরো কয়েকদিন। হঠাৎ একদিন তূরের লেবার পেইন উঠে। ওরা সবাই সানফ্রান্সিসকোতে ওইদিনের পরেরদিন ফিরে এসেছে। তূর ও রুবিনার জন্য বিরতি দিয়ে দিয়ে কার ড্রাইভ করা হয়েছে।
তূরকে মিহালরা সবাই মিলে হসপিটালে নিয়ে যায়। হসপিটালের নেওয়ার পুরো সময় মিহাল তূরের হাত ধরেছিল, মিহালের নিজেকে একদম অসহায় মনে হচ্ছিলো।
তূরের যেহেতু টুইন বেবী হবে তাই ডাক্তার বলেছে “সি সেকশন” করতে তাই তূরকে মেরুদন্ডে অ্যানেসথেসিয়া দেয়।
অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার আগে তূর মিহালকে বলে,
তূর: মিহাল, আমার না খুব ভয় করছে। যদি মরে যাই তাহলে তুমি বাচ্চাদেরকে দেখে রাখবে।
মিহাল: এসব কথা বলো না এ সময়। দেখো তোমার কিচ্ছু হবে না, তুমি ও বাচ্চারা তিনজনেই সুস্থ থাকবে।
তূর: শোনো! আমি মরে গেলেও কিন্তু শর্ত প্রযোজ্য থাকবে। তুমি আর কাউকে বিয়ে করতে পারবে না।
এর মধ্যেও মিহাল হেসে দেয় এরপর তূরের কপালে নিজের অধর স্পর্শ করে। ডাক্তারকে রিকুয়েস্ট করে যাতে তাকে (মিহাল) অটিতে ঢুকতে দেয় আর যেহেতু এটা আমেরিকার মতো উন্নত দেশ তাই ডাক্তাররা বিনা কথায় ঢুকতে দেয় মিহালকে।
প্রায় তিন ঘন্টা পর মিহাল একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে বাইরে বের হয় আরেকটা বাচ্চাকে নার্স ক্লিন করতে নিয়ে গেছিলো তাই মিহাল একজনকে নিয়ে আগে বের হয় তারপর আরেকজনকে আনতে যাবে।
সবাই দুটো বাচ্চাকে নিয়ে কারাকারি লাগিয়ে দিছে।
মিহাল-তূরের যমজ ছেলে সন্তান হয়েছে।
তূর তো সেন্সে নেই তাই যখন সেন্স ফিরবে তখন বাচ্চাদের ওর কাছে দেয়া হবে। এক ঘন্টা পরে সেন্স ফিরে তখন বাচ্চাদের তূরের কাছে মিহাল নিয়ে যায়।
মিহাল: তোমাকে ধন্যবাদ, এই দুজনকে এতো কষ্ট করে জন্ম দেওয়ার জন্য। আমাকে পিতৃত্বের স্বাদ অনুভব করতে দেওয়ার জন্য।
কথাটা বলে তূরের কপালে ও ঠোঁটের কোণে নিজের অধর স্পর্শ করায় মিহাল।
বাচ্চাদের ডাক নাম রাখা হয়- মেঘ ও নীড়।
সবাই দুইদিন পর তূর ও বাচ্চাদের বাংলোতে নিয়ে আসে।
মিহাল তো বাচ্চাদেরকে চোখে হারায় আর বাচ্চারা হয়েছেও বাপের ভক্ত। তিন বাপ-ছেলে মিলে তূরকে রাতে ঘুমাতে দেয় না। বাচ্চারা তো ক্ষুদা লাগলেই উঠে যায় আর মিহাল একটু পরপর তূরকে জ্বালানোর জন্য বাচ্চাদের জাগিয়ে দেয় আর তূরকে জ্বালায়।
বাচ্চার কারনে তূর লাস্ট সেমিস্টারটা ড্রপ দিয়েছে আর ইনায়া রাফি চলে যাবার পর ওই সেমিস্টারটা ড্রপ দিয়েছিল।
মেঘ ও নীড় এর বয়স যখন দুই মাস তখন রুবিনা বাচ্চা জন্ম দিয়ে মারা যায়। রুবিনার একটা মেয়ে হয়েছে।
রাফি ও ইনায়া বাচ্চা মেয়েটার এডপশনের সব ঝামেলা মিটিয়ে ফেলেছে।
রুবিনার শ্বশুর আঠাশ বছর আগে ছয় মাসের সায়েমকে নিয়ে আমেরিকায় এসেছিলো স্ত্রীকে হারিয়ে। এখন সে পুত্র ও পুত্রবধু হারিয়ে নিঃস্ব! নাতনিকে এডপ্ট করে দিল।
🍁🍁
মেঘ ও নীড় এর বয়স যখন দেড় বছরের একটু বেশী তখন তূর ও মিহাল বাংলাদেশে ফিরে সাথে রাফি ও ইনায়া ও পিচ্চি দেড় বছরের “সাদিয়া”।
শাফকাত ও নাদিয়াও ফিরবে আর নাদিয়ার দুই মাসের মেয়ে হয়েছে নাম তার “সাবিলা”। মেঘ তো সাবিলারে কোলে নিয়ে নিজের কাছে রাখার জন্য পাগল তাই নাদিয়া ও শাফকাত পনেরো দিনের জন্য ফিরবে বাংলাদেশে। তারপর আবার আমেরিকায় যাবে এক বছরের জন্য।
নীড় আবার একটু গম্ভীর তবে সাবিলাকে কোলে নেওয়ার জন্য যখন সাদিয়া আর মেঘ ঝগরা করে তখন সে নিজের বাচ্চা হাত দিয়ে ওই দুই বাচ্চাকে থামায়।
ওরা নিজেরাই পিচ্চি তারা কিনা কোলে নিবে আরেক পিচ্চিকে! এটা নিয়ে ওদের সবার মধ্যে হাসাহাসির শেষ নেই।
লিরা ও এরিক এক বছর ধরে লিরার পরিবারকে রাজী করায় এরপর এরিক ইসলাম গ্রহন করে আমেরিকায় বিয়ে করে ওই একই দিন ফাইজা ও ওজিল বিয়ে করে। ওদের দুই জুটির বিয়েতে বাংলাদেশ থেকে লিরা, ফাইজার পরিবার আসে।
তূর-মিহালের পরিবার তারাও পনেরো দিনের জন্য এসেছিলো বাবুদের দেখতে।
বাকি সবাই ফিরে গেছে ছয় মাস হলো। অর্ক প্রিতিশার জন্য এক বছর বেশি ছিল কিন্তু তিন দিন আগে প্রিতিশার বাবা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় প্রিতিশাকে নিয়ে ওদেরকে ছাড়া যেতে হয়।
ছয় মাস আগেই ওরা বাংলো ছেড়ে দেয়। প্রিতিশা লাস্ট সেমিস্টার ইউনিভর্সিটি অফ ক্যালিফর্নিয়া থেকে করেছে তাই তারা আট জন- তূর, মিহাল, রাফি, ইনায়া, শাফকাত, নাদিয়া, অর্ক ও প্রিতিশা পাশাপাশি দুইটা ফ্লাট নিয়ে থেকেছে ছয় মাস।
বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার পনেরো দিনের মধ্যে তূর ও মিহাল, নীরা ও ইফতির একসাথে আবার বিয়ে আর রণক ও জারিনের বিয়ে।
_______
আজকে তূর-মিহাল ও ইফতি-নীরার গায়ে হলুদ। অনেক আনন্দ ও হাসিখুশির মাধ্যমে ওদের হলুদ সম্পন্ন হয়।
মেঘ ও নীড় তো বাবা-মা কে চোখ বড় করে দেখছে তো আবার খালা-খালুকে দেখছে।
সাবিলাকে কান্না করতে দেখে মেঘ বাবার কোল থেকে নেমে ছোট ছোট পায়ে দৌড় দিয়েছে আর নীড় ভাইকে দেখে পিছে পিছে যাচ্ছে কারন সে জানে এখন আবার সাদিয়ার সাথে ঝগরা হবে আর মেঘ যেমনেই হোক সাবিলাকে নিজের কাছে নিবে তারপর সাদিয়াকে নীড়ের সামলানো লাগবে।
বিয়ের দিন তানজিনা আরিফের সাথে আসে। তানজিনার সাথে আরিফের সামনের মাসে বিয়ে। দুই বছরের বেশি তানজিনা অপেক্ষা করেছে কারন আরিফ সেদিন আমেরিকা থেকেই জার্মানিতে চলে গিয়েছিলো। তানজিনা নিজেকে অনেক পরিবর্তন করেছে এখন আর কারো সাথে অহংকার দেখায় না।
বিয়ের সব কার্যক্রম শেষ করে মিহাল নিজের রুমে ঢোকে আর দেখে তূর বিছানার মাঝে বসে আছে। দুজন একে অপরকে সালাম বিনিময় করে।
মিহাল: বাচ্চারা কি আসতে চায় নি?
তূর: মেঘ সাবিলার সাথে ঘুমাবে আর নীড় ও সাদিয়াও। এদের জন্য শাফকাত ভাই-নাদু ও ইনু-রাফিকে ড্রয়িং রুমে ফ্লোরে বিছনা করে থাকতে হচ্ছে। বাই দ্যা ওয়ে তুমি কই ছিলা?
মিহাল: আমাকে রিজভী, তাইজুল, তাওহিদ, আসফি, রণকরা মিলে আটকিয়ে রেখেছিলো। পরশুদিনের রণকের গায়ে হলুদ না দাঁড়াও! মজা বুঝাবো ওর বিয়েতে। অর্ক তো আমাদের না জানিয়ে প্রিতিশাকে বিয়ে করে ফেলল।
তূর: তুমি কি রণকের বাসর ঘরের বাঁধা দিবা নাকি? অর্ক বলেছে এক বছর পর অনুষ্ঠান করবে আগে নিজের অবস্থানটা শক্ত করবে তারপর।
মিহাল: ভালোই হয়েছে বাচ্চারা আজকে ওদের কাছে আছে! নাহলে আমাদের বাসরটা নষ্ট হয়ে যেতো তাই না বেবি।😁
তূর: চুপ বদ ছেলে। দুই ছেলের বাপ হয়ে গেছে এখনো তার ডং কমে না!
মিহাল: কি যে বলো! আমার আরো দুইটা মেয়ে বাবু লাগবে। তার জন্য প্রসেসিং লাগবে না?
তূর: কি বললা তুমি!!😳
মিহাল: 😁😁😁
ওরা আবার রাঙিয়ে দেয় ওদের ভালোবাসার রং একে অপরের ঠোঁটের স্পর্শে। এরইমধ্যে তূর বলে,
তূর: আমার #শেষ_অধ্যায়ে_তুমি ময় থাকবে আজীবন।
মিহাল তূরের গলায় মুখ গুঁজে বলে,
মিহাল: আমারো #শেষ_অধ্যায়ে_তুমি। ভালোবাসি মেঘকন্যা।❤
~~~~~~~~~~~~সমাপ্ত~~~~~~~~~~~