শেষ পাতার তুমি পর্ব ১৮

#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১৮

সিনেমা দেখার মধ্যে খানে আয়ানার মনে হতে লাগলো তার কোলের ওপর সাপ!!!

আয়ানা চিৎকার করে পপকণের কৌটা ফেলে উঠে দাঁড়াল!!!!

রায়ান ও উঠে বারবার চিৎকার করার কারণ জিজ্ঞেস করতে থাকল!!!

ইতিমধ্যে আশেপাশের মানুষ সিট থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে!!

রায়ান তো হতবাক!!আয়ানা শাড়ি ঝাড়ছে একনাগাড়ে!!

রেশমি, রেদোয়ান ও বেশ জিজ্ঞেস করলো কিন্তুু কাজ হলো না!!!

রায়ান এবার আয়ানার দুহাত চেপে ধরে দাঁত কটমট করে বলল–স্টপ!!এখানে কোনো সাপ নেই!!

আয়ানা তাকিয়ে বলল–এখানেই আছে দেখুন!!!

রায়ান আয়ানার হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে গেল!!

রেদোয়ান সবার থেকে ক্ষমা চেয়ে তার স্ত্রী আর মাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল!!!

রায়ান আর আয়ানা সিনেমা হলের একটা কর্ণারে দাঁড়িয়ে আছে!!

আয়ানা কাঁচুমাচু হয়ে দেয়ালের সাথে ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে!!!

রায়ান একটু দূরে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আয়ানাকে পর্যবেক্ষণ করছে!!!

আয়ানার শ্যামবর্ণ মুখখানা ইতিমধ্যে ঘেমে একাকার!! এজন্য তাকে একটু কালো দেখাচ্ছে!!

হাতে হাত ঘষছে বারবার!!আর অস্হির চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে!!

রায়ান একটু সরে এসে বলল–কি হয়েছে তোমার??এমন করছো কেন??

আয়ানা কোনো উত্তর ছাড়া ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে!!

রায়ান এবার আয়ানার বাম হাত ধরে বলল,,

রায়ান–কোনো সমস্যা হচ্ছে? বলো আমাকে!!

আয়ানা ছলছল চোখে বলল–আমার সব এলোমেলো লাগছে!!কেমন অদ্ভুত মনে হচ্ছে সব!!

রায়ান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে!!

আয়ানা রায়ানকে জড়িয়ে ধরল!!রায়ান আস্তে মাথায় হাত রেখে বলল–সব ঠিক হয়ে যাবে!!বাড়ি যাবে এখন?

আয়ানা দ্রুত ছেড়ে বলল–না!!এখন ঠিক আছি!!

রায়ান হাতের ইশারাতে ওয়াশরুম দেখিয়ে বলল–একটু মুখে পানি দাও,, ভালো লাগবে!!!আমি এখানেই আছি!!

আয়ানা ওয়াশরুম যেতেই,রেশমি,রেদোয়ান এগিয়ে আসে!!

রেশমি–কি হলো মেয়েটার?

রেদোয়ান –মেয়েটাকে ডাক্তার দেখাতে হবে বাবু!!ওর বোধহয় কোনো সমস্যা হচ্ছে!!

রেশমি কিছু বলবে তার আগেই আয়ানা বেরিয়ে আসে!!

সবাইকে দেখেই আয়ানা মাথা নিচু করে বলে–সরি বাবা!!আমার জন্য মুভি দেখা হলো না!!

রেদোয়ান মাথায় হাত রেখে বলল–ধুর পাগলী!!ওই মুভিটা আমারও ভালো লাগছিলো না!!চল তো এখন কিছু খাবো!!!

কথাটা বলেই আয়ানাকে নিয়ে গেলেন আর চোখের ইশারাতে রায়ানকেও আসতে বললেন!!!

সারাদিন ঘোরাফেরা করে রাত ৮ টায় সকলে বাড়ি ফিরলো!!

আজ পুরোদিন রায়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আয়ানার দিকে নজর রেখেছে!!

আয়ানার হঠাৎ এমন আচরণে রায়ানের সন্দেহ হচ্ছে!!!

আয়ানা ঘরে এসেই বিছানাতে শুয়ে পড়েছে!!!

ফ্রেস হয়ে রায়ান এসে দেখল আয়ানা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে!!

ভ্রু কুচকে তোয়ালে কাঁধে ঝুলিয়ে বলল–ফ্রেস হবে না!!

আয়ানা জলভর্তি চোখে রাগী কন্ঠে বলল–না!!আপনি ঠক!!যোচ্চর!!

রায়ান–মানে???

আয়ানা চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বলল–আপনি ঠকিয়েছেন আমায়!!ঘরে স্ত্রী থাকতে আরেকজনের সাথে সম্পর্ক রেখেছেন!!

রায়ান–মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে তোমার??

আয়ানা দৌড়ে এসে রায়ানের টি-শার্ট টেনে ধরে বলল–তুই আমাকে ধোঁকা দিচ্ছিস আর আমাকেই বলছিস আমার মাথা খারাপ???!!!!

রায়ান ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে বলল–ফালতু কথা বলবে না!!যাও ফ্রেস হয়ে এসো!!

আয়ানা রাগী চোখে রায়ানের দিকে তাকিয়ে রইল!!

রায়ান ধমক দিতেই দ্রুত বাথরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো!!

দাদি দরজার বাইরে থেকে সবটা শুনে খট করে ভেতরে এসে বলল–তর বউ রে ওঝা দেহাতে হইবো!!!

রায়ান চোখ মুখ কুঁচকে বলল–কি??

দাদি–হহ!!তর বউ রে ভুতে ধরছে!!ঝেটার বাড়ি দেতে হইবো!!

রায়ান–দাদি!!প্লিজ!!এসব ফালতু কথা!!তুমি যাও রেস্ট নাও!!আর ফোবিয়ার কারণে আয়ানার এমন হচ্ছে!!

দাদি মুখ বাকিয়ে বলল–তরা এইসব মানবি না তো!!তর বউরে লইয়া ভোগা লাগবে দেহিস!!!

বলে দাদি চলে গেল!!!

রায়ান বিছানাতে বসে আয়ানার বিহেভিয়ার সম্পর্কে চিন্তা করতে লাহলো!!!

আয়ানা বেরিয়ে এসে ধুপ করে বিছানাতে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো!!!

রায়ান অবাক হয়ে খানিক তাকিয়ে থেকে বালিশ নিয়ে সোফাতর চলে গেল!!!

অপরদিকে,,

শান্ত সিনেমা হলের কাহিনি শুনে হেসে চেয়ারে গা এলিয়ে দিল!!

শান্ত–আর মাত্র ১০ দিন আয়ু!!!কথা দিচ্ছি এই ১০ দিনে তোমার জীবনে সবচেয়ে নরকীয় ঘটনাগুলো ঘটবে!!!

অপরদিকে বসে থাকা আফজাল সাহেব ও খানিক হেসে দিলেন!!!

আফজাল–তাহলে মেইন কাজ কি ১০ দিন পরই করবে??

শান্ত–ঝামেলা যা বাধিয়েছেন তা আগে মেটাই তারপর!!

আফজাল–তোমার বাবা হসপিটালে ভর্তি!!গতদিন কারেন্ট থেরাপি দেওয়ার সময় স্ট্রোক করেছে!!

শান্ত–মরে নি তো??

আফজাল–নাহ!!এখন একটু ভালো আছে!!

শান্ত–হুম!!

মাঝরাতে,,

আচমকা একেরপর এক বাসন ভাঙার আওয়াজে সবাই জেগে ওঠে!!!

রায়ান লাফিয়ে উঠে বিছানাতে আয়ুকে না দেখেই দৌড়ে বাইরে চলে যায়!!

মাঝের ঘরে এসে দেখে আয়ানা টুলের ওপর দাঁড়িয়ে সোকেচ থেকে একেরপর এক বাসন বের করছে আর আছাড় দিচ্ছে!!!

বাড়ির বাকিরাও হতবাকের মতো দাঁড়িয়ে আছে!!

চারপাশে অনেক কাঁচের টুকরো তাই সামনে এগোতে কারোই সাহস হচ্ছে না!!

রায়ান–আয়ানা কি করছো এগুলো??

রায়ানের ডাক শুনতেই আয়ানা থেমে গেল!!!কান্নাভেজা কন্ঠে বলল–আপনি এসেছেন!!আমি জানতাম আপনি ওই বদ মেয়ের কাছে থাকবেন না!!!

রায়ান হতবাকের মতো বলে–কি বলছো??আমি তো ঘরেই ছিলাম!!

আয়ানা টুল থেকে পা নামাতেই রায়ান হাত দিয়ে বলল–আরে পা কাটবে তো!!করছো কি??

আয়ানা ওসবের তোয়াক্কা না করে দৌড়ে রায়ানকে জড়িয়ে ধরলো!!!

ওদিকে কাচ পায়ে লাগার কারণে ফিনকি দিয়ে পায়ের পাতা থেকে রক্ত আসছে!!

রেশমি–বাবু,,বৌমার পা থেকে রক্ত আসছে!!ড্রেসিং করতে হবে!!

কিন্তুু আয়ানাকে হাজার চেষ্টা করেও রায়ান ছাড়াতে পারলো না!!!সে ওমন করেই রায়ানকে জড়িয়ে ধরে থাকবে!!

রেদোয়ান চেয়ারে বসে আছে!!

রেদোয়ান –তোর কি হয়েছে মা??এমন করছিস কেন??

রেশমি আর রায়ানের দাদি সব কাজ তুলে ঘর ঝাড়ু দিচ্ছেন!!

দাদি–আমি কইতাছি,,ওরে ভুতে ধরছে!!!

রেশমি–আহ!!মা এসব বাজে কথা!! ভুত টুত হয় নাকি!!

দাদি মুখ বাকিয়ে ঝাড়ু ধম করে ফেলে নিজের ঘরে হাটা ধরল!!

রেদোয়ান –বাবুর মা!!দ্রুত বৌমার পা ড্রেসিং করো!!রক্ত পরছে বেশ!!!

রায়ান জোড় করে আয়ানাকে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে গেল!!

বিছানাতে বসাতে পারলেও সে রায়ানকে ছাড়তে নারাজ!!!

রায়ান দাঁড়িয়ে আছে আর আয়ানা রায়ানের হাত জড়িয়ে ধরে আছে!!

রেশমি ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দিল!!

রেশমি–বাবু,কাল ডাক্তারে কাছে যাবি!!আর প্রীতিশ স্যারের সিরিয়াল কাল দিয়ে রাখবো,ওনাকে কয়েকদিনের আচরণ গুলো বলবি!!আশা করি একটা রাস্তা হবে!!!

রায়ান মাথা নাড়াতেই রেশমি দরজা চাপিয়ে চলে গেল!!!

রায়ান আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে পাশে বসলো!!

আয়ানা বাচ্চাদের মতো মুখ করে বলল–আর যাবেন না তো কোথাও??

রায়ান একটা ছোট শ্বাস নিয়ে বলল–নাহ!!

আয়ানা মুচকি হেসে রায়ানকে জড়িয়ে ধরলো!!

রায়ান হালকা হাতে ধরে মনে মনে বলল–কি হলো হঠাৎ তোমার??এমন করছো কেন??যাই হোক তোমাকে সুস্হ হতে হবে!!নাবিলাকে হারিয়ে ফেলেছি তোমাকে হারাতে চাই না!!নাবিলার শেষ ম্যাসেজের কথা আমাকে রাখতে হবে!!যেভাবেই হোক!!ও বলেছে আমি কখনো যেন তোমার হাত না ছাড়ি!!তুমি আমার দায়িত্ব নও আমার জীবনের অংশ!!

নাবিলার বলা কথা আমাকে মানতেই হবে!!!

ইতিমধ্যে আয়ানা রায়ানের বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে!!!রায়ান বুঝতে পেরে শুয়িয়ে দেবার ব্যবস্হা করতেই বুঝতে পারে আয়ানা তার টি-শার্ট খামচে ধরে আছে!!

রায়ান ঝুকে আয়ানার মাথা বালিশে রেখে আস্তে আয়ানার হাতের মুঠো থেকে নিজের টি-শার্ট ছাড়িয়ে নিল!!

আয়ুর পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো পা দুটো বেশ ফুলে আছে!!!

রায়ান একটু তেল গরম করে এনে আয়ানার পায়ের ওপরের পাতায় মালিশ করতে লাগলো যদি একটু ব্যাথা কমে!!!

মালিশ শেষে হাত ধুয়ে আয়ানার পাশে বসে খানিক আয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে আয়ানার কপালে চুমু দিয়ে আয়ানার পাশে শুয়ে পড়লো!!!

এখন তাদের অপেক্ষা আগামী ১০ দিনের!!!

আয়ানা সকালে উঠে বসে চোখ মুছে নিজের পা নাড়াতেই বেশ ভারী মনে হলো!!!

কাথা সড়িয়ে পায়ে মোটা ব্যান্ডেজ দেখে তার চোখ বড়বড় হয়ে গিয়েছে!!!

কাপা কাপা গলাতে একবার রেশমিকে ডাকলেও দরজা ভেদ করে সে আওয়াজ তার কান অবধি পৌঁছাতে পারে নি!!!

আয়ানা বেশ চেষ্টা করেও যখন পা মাটিতে ফেলতে পারলো না তখনই দরজাতে খট করে খুলে গেল লাল জামা পরিহিত দুজন লোক ভেতরে এলো!!!

আয়ানা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল–কারা আপনারা??এভাবে ঘরে এলেন কেনো???

লোক দুটি বিশ্রী হাসি দিলো যা আয়ানার গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো!!!

আয়ানা বিছানাতে আবারও পিছিয়ে বলল–বের হন ঘর থেকে!!!

কিন্তুু লোক দুটির হেলদোল হলো না!!!

#চলবে

১১৭৩ শব্দের পর্ব😊♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here