#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ৬
হঠ্যাৎ করে দরজাতে খট করে আওয়াজ হওয়ায় ঘুরে তাকায় আয়ানা,,,
সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে লাল ডায়েরি হাত থেকে পরে যায়,,
আয়ানার চোখ ভিজে আসে,,—
কাঁপাকাঁপা কন্ঠে সে বলল–মামনি!!!
রায়ানের মা কিছু ফল টেবিলে রেখে দরজা আটকে বলে–হুমম!!কেমন আছিস মা??
আয়ানা দৌড়ে রায়ানের মাকে জড়িয়ে ধরে!!!
রায়ানের মা আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল–খাবারটা এখনো শেষ করিস নি কেন??
আয়ানাকে রায়ানের মা সোফাতে বসিয়ে বলল–আমি খায়িয়ে দিচ্ছি!! বস এখানে!!
আয়ানা চুপ করে বসে পড়ল!!!রায়ানের মা হাত ধুয়ে আয়ানার পাশে বসে ভাত মাখাতে মাখাতে বলল–হা কর!!চেহারাটা শুকিয়ে কেমন হয়ে গিয়েছিস?
আয়ানার মুখে ভাত তুলে দিল!!
আয়ানা ভাতটা কোনোমতে গিলে নিয়ে কাঁদো কাঁদো চেহারা করে বলল–জানো মামনি, তোমার ছেলে খুব বাজে!!আমাকে বিয়ের আসর থেকে তুলে এনেছে!!খুব খারাপ!!
রায়ানের মা আরেক দলা ভাত আয়ানার মুখে পুরে দিয়ে বলল–আমার রায়ান কিন্তুু খারাপ না রে মা!!আমার ছেলে বলে বলছি না!!ওর একটা ভুলের জন্য ও যে কতো কেঁদেছে তা কেউ জানে না!!আমার ছেলেটা এখনো খুব কষ্ট পাচ্ছে!! তুই শুধু ওকে একটু সময় দে!!তোকে যে রায়ানের খুব দরকার রে মা!!!
আয়ানা–আমি কি করব আমি জানি না মামনি!!ওনার ভুলের মাশুল যে আমাকে দিতে হয়নি তা কিন্তুু না!!আমিও সাফার করেছি,,!!
রায়ানের মা–তুই শুধু আমার ছেলেটার কথা একটু শোন প্লিজ!!সব ঠিক করে দেবে ও!!
আয়ানা পানিটা মুখে নিয়ে বলল–কথা দিতে পারছি না মামনি কিন্তুু চেষ্টা করব!!
রায়ানের মা একটু ফিচেল হেসে খাবার প্লেট হাতে বেরিয়ে গেলেন!!!
দরজাটা ভালো করে বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলেন রায়ানের কথা মতো!!!
আয়ানা একটু ফ্রেস হয়ে এসে টেবিলের পাশের বইয়ের তাকের সামনে দাঁড়াল!!!
তাকের দিকে তাকিয়ে দেখল তার রাখা বই গুলো ঠিক তেমন ভাবেই আছে!!!
আয়ানা চোখের কার্নিশের পানি মুছে,বিছানাতে গা এলিয়ে ,অতীতের কিছু কথা ভাবতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল!!!
বিয়ের ১ সপ্তাহ কাটলেও রায়ান আয়ানার মধ্যে তেমন পরিবর্তন নেই!!আর তা হবেই বা কি করে রায়ানের সাথে আয়ানার দেখাই হয় না!!!
তবে রায়ানের মা আর বাবার সাথে আয়ানা বেশ মানিয়ে নিয়েছে!!
আর দাদিকে আয়ানা একটু এড়িয়ে চলে সবসময়!! কারণ সবসময় তার ভাঙা রেকর্ড চলতেই থাকে!!!
আজ সপ্তাহের ছুটির দিন,,
রেদোয়ান আর রায়ান সকালে গিয়ে বাজার করে এনেছে!!
রায়ানের মা রান্না করছে আর আয়ানা তাকে সাহায্য করছে!!!
দুপুরে সবাইকে একসাথে খেতে ডাকা হলো!!
রেদোয়ান –বউমা!!তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো??
আয়ানা বুঝে উঠতে পারল না তার সমস্যার কথা গুলো কি তার প্রকাশ করা উচিত কিনা!!
তার এতোশত ভাবনার মাঝেই আবারও রেদোয়ান জিজ্ঞেস করল!!আয়ানা এবার এদিক সেদিক না ভেবেই বলল–খুবই সমস্যা হচ্ছে আঙ্কেল!!
একে তো ভীষণ গরম লাগে,,এসি নেই তারওপর রান্নাঘরটা অনেক ছোট!!আর ঘরের মেঝেগুলো কেমন যেন স্যাঁতসেতে!!!
কথা গুলো একশ্বাসে বলেই আয়ানা মুখ ফুলিয়ে থামল!!
রেদোয়ান হালকা হেসে বলল–মা রে!!এই গরীব বাবার বাড়িতে একটু মানিয়ে নে!!তোদের ঘরে এসির ব্যবস্হা আমি করে দিবো!!
রায়ানের দাদি মুখ বাকিয়ে বলল–শোউর বাড়িতে হগ্গলের মানাই লইতে হয় মাইয়া!!আর কিরম লাগাম ছাড়া মাইয়া যে শ্বশুরে এইরম কইরা কইলা!!!
আয়ানা আর কিছু বলতে পারল না কারণ ইতিমধ্যে তার চোখে জল জমে গিয়েছে!!
রেদোয়ান –আহহ!!মা চুপ করো!!বাচ্চা মানুষ!!আর ও তো আমার মেয়েই!!সমস্যার কথাতো বাবাকেই বলবে!!
রায়ান কোনোমতে খাবার গিলে উঠে চলে গেল!!
সবার খাওয়া শেষে,,
রায়ানের মা–আয়ু,,এই দই টা রায়ানকে দিয়ে আয়!!
আয়ানা হাতে নিয়ে রায়ানের ঘরে গিয়ে দেখল রায়ান বারান্দাতে খুব হাত নাচানাচি করে ফোনে কথা বলছে!!
আয়ানা –আপনার দই!!
রায়ান, কিছু বলবে তার আগেই ভিডিও কলে থাকা নাবিলা জিজ্ঞেস করল–কে রায়ান??এটা তো আন্টির গলা না!!!
রায়ান থতমত খেয়ে গেল কারণ নাবিলাকে বিয়ের বিষয়টা সে এখনো জানায়নি!!আর জানাতে চাইছে ও না!!
রায়ান কোনোমতে ধরা গলাতে বলল–ও আমাদের বাড়ির নতুন কাজের মেয়ে!!মায়ের সাথে সাহায্য করার জন্য রাখা হয়েছে!!
নাবিলা–ও ও!!!
আয়ানা ছলছল চোখে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,,
রায়ান তাকে অপমান করলো নাকি অসম্মান করলো তা ঠিক মেলাতে পারল না সে!!!
আস্তে করে ঘরে এসে টেবিলে দইয়ের বাটি রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল!!!
গলাটা আটকে আসছে আয়ানার!!!আজ তার খুব নিজের বাবার ওপর রাগ হচ্ছে!!
কেনো তারা আয়ানাকে বিয়ে দিল!!কষ্ট করতো নিজের কাছের মানুষের সাথে তো থাকতো!!
কিন্তুু এখানে তো রোজ দাদির ঝাড়ি শুনতে হয়!!
ছাদে গিয়ে বসে পড়ল আয়ানা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে লাগল!!
কান্নার এক পর্যায়ে মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে আয়ানা চোখ তুলল!!
রেদোয়ান আঁতকে উঠে বলল–কি হয়েছে মা?রায়ান কিছু বলেছে তোকে!!??বল আমায়!!আজই বের করে দিবো বেয়াদবটাকে!!
আয়ানা চোখ মুছে বলল–না আঙ্কেল,,বাবা মা এর কথা মনে পড়ছিল!!সেই ৫ দিন আগে কথা হয়েছে!!
রেদোয়ান আয়ানার পাশে বসে বলল–সব ঠিক হবে মা!!তুই কাঁদলে আমার সংসারের ক্ষতি হবে!!কাঁদিস না!!আমিও তো তোর বাবা!!তোর যেকোনো সমস্যা তুই আমায় বলবি!!!যদি রায়ানকে নিয়েও কোনো সমস্যা হয় তাও!!
আয়ানা চোখ মুছে বলল–ঠিক আছে!!!
রেদোয়ান –বিকেল তো হয়ে এলো!!চল মোড়ের মাথা থেকে ফুচকা খেয়ে আসি!!
আয়ানা অবাক হয়ে –মোড়ের মাথার ফুচকা??জানো মা আমায় কখনো খেতে দিত না!!!
রেদোয়ান হেসে বলল–আজ আমি খাওয়াবো তোকে!!চল!!
আয়ানা আর রেদোয়ান সারা বিকেল ঘোরাঘুরি করল!!
আয়ানা বেশ খুশি থাকলেও মনের মধ্যে রায়ানের বলা তখনকার কথাটা বেশ ঘুরপাক খাচ্ছে!!
সন্ধ্যা সময় ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে সোফাতে বসল আয়ানা!!
দুপুরের কথাটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতেই মহারকমের মন খারাপ হলো!!
এরই মধ্যে রায়ান হুড়মুড় করে বারান্দা থেকে ঘরে প্রবেশ করল!!
সোফাতে বসে থাকা আয়ানাকে দেখে ধীর পায়ে সামনে এসে বলল–সরি!!আসলে ও বিয়ের ব্যাপারটা জানে না তাই ওমন করে বলেছিলাম!!
আয়ানা হালকা হেসে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল!!
রায়ান–যাহ!!বুঝলামই তো না সরি মানলো কিনা!!!
আয়ানা বের হতেই আবার সামনে রায়ানকে পেল!!আয়ানা পাশ কাটিয়ে বারান্দাতে কাপড় মেলে পেছনে ঘুরতেই দেখল,,দুহাত প্রশস্ত করে রায়ান দাঁড়িয়ে আছে!!
আয়ানা ভ্রু কুঁচকে বলল–এমন শাহরুখ খানের মতো স্টাইল দিলেও আপনাকে শাহরুখ খান লাগে না!!
রায়ান হাত নামিয়ে হা করে তাকিয়ে রইল!!
তারপর একটু স্বাভাবিক হয়ে বলল–আমি তো আপনাকে সরি বলতে চাচ্ছিলাম!!রাগ করবেন না প্লিজ!!
আয়ানা–কেন রাগ করবো না??
রায়ান মাথা চুলকেও উত্তর খুঁজে পেল না!!
আয়ানা হালকা হেসে বলল–আচ্ছা করলাম না রাগ!!
রায়ান–ধন্যবাদ আপনাকে!!
আয়ানা–ওসব শুকনো ধন্যবাদে কাজ হবে না!!কাল চিপস নিয়ে আসবেন!!
রায়ান–এ্যা??
আয়ানা–হুমম!!নয়তো বাবাকে বলে দিবো!!
রায়ান–না না!!প্লিজ!!বাবা জানতে পারলে আমার খবর আছে!!
আয়ানা–ওকে!!কাল চিপস না আনলে বলে দিবো!!
রায়ান–আনবো চিপস!!
আয়ানা রায়ানকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল!!
অপরদিকে,,
শান্ত দেশে ফিরে আয়ানাদের বাড়িতে গিয়ে দেখে বাড়িতে বিশাল তালা ঝুলছে!!
শান্ত–একি!!আয়ুর বাড়িতে তালা কেনো??
আয়ানা নম্বরে আর ওর বাবার নম্বর ও ফোন করে বন্ধ পেল!!!
শান্ত নিজের বাড়ি এসে সরাসরি নিজের বাবার রুমে গেল!!
রুমের দরজা বন্ধ দেখেই বুঝল তার বাবা আজ আবারও অন্য একজন মেয়ে নিয়ে এসেছেন!!!
শান্তর বাবার বিভিন্ন মেয়েদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে তা শান্ত আর শান্তর মা বেশ ভালোই জানেন!!
শান্তর মা নিজের সোশ্যাল ওয়ার্ক নিয়ে এতোই ব্যস্ত যে তার এসব দিকে নজর দেওয়ার সময় নেই!!!
শান্ত হতাশ হয়ে ঘরে এলো!!!
আয়ানার বিভিন্ন বন্ধুদের ফোন করেও খোঁজ নিয়েছে!!কেউ ই খোঁজ দিতে পারেনি!!
শান্ত আর আয়ানার বাবার ব্যবসায়িক সূত্রে বেশ ভালো পরিচয়!!!
শান্ত আয়ানার থেকে ৪ বছরের বড়!!ছোট থেকেই আয়ানাকে বেশ পছন্দ করে!!তাইতো আয়ানার সাথে বন্ধুর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল সে!!!
আজ আয়ানার কোনো খোঁজ না পেয়ে শান্তর পাগল প্রায় অবস্থা!!!
বর্তমানে,,,
ঘরের বাইরে রায়ানের আওয়াজ শুনে ধ্যান ভাঙে আয়ানার!!
রায়ান বেশ চিৎকার করছে কারো সাথে!!!
বারবার বলছে–সে এসব মানে না!!!
আয়ানা তাড়াতাড়ি উঠে জামা ঠিক করে দাঁড়িয়ে পড়ল!!!
রায়ান ঘরে ঢুকতেই রুহু কেঁপে উঠল আয়ানার!!কারণ এরকম লাল বর্ণের চোখ রাগমিশ্রিত রায়ানের চোখ সেই কালো অতীতের রাতেই আয়ানা দেখেছিল!!
রায়ান ঘরে এসে ফোনটা ছুড়ে দিল!!
মেঝেতে পড়ে খন্ড খন্ড হয়ে ছড়িয়ে গেল ফোন!!
রায়ান দরজা লক করে জোড় পায়ে এসে আয়ানাকে জড়িয়ে ধরল!!খুব শক্ত করে!!!
আয়ানার মনে হচ্ছে হাড় মাংস এক হয়ে যাবে!!!
রায়ান ফুপিয়ে বলল–কেন বলতো আমার কাঙ্ক্ষিত মানুষের কাছে যেতে এতো বাঁধা পাড়ি দিতে হবে??
বারবার বলছি বাচ্চাটা আমার না!!শুনছেই না!!
রায়ানের গরম নিশ্বাস আর কাঁধে টুপ করে চোখের পানিতে ইতিমধ্যে আয়ানার শরীরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে!!!
#চলবে
১২৬৫ শব্দের পর্ব♥️😊😊
বিঃদ্রঃঅতীতটা ধীরে ধীরে সামনে আসবে!!স্টোরিটা বড় করতে চাইছি আমি!!!আশা করি সবাই ধৈর্য নিয়ে পড়বেন!!আর পরীক্ষার কারণে দেরিতে দিচ্ছি পর্ব♥️😊