#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ৮
রায়ানের বাবা–আমার বাড়ির বৌকে সম্মান না দিতে পারলে বেরিয়ে যাও বাড়ি থেকে!!!আগে একদিন তাকে কাজের লোক বলে পরিচয় দিয়েছো তোমাকে কিছু বলা হয়নি!!আজ বিনা কারণে উল্টাপাল্টা কথা কেন বলেছো???
রায়ান কিছু না বলে গমগমে পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল!!!
রেদোয়ান রাগে গজগজ করে সোফাতে বসে পড়লেন!!
রায়ানের দাদি চিৎকার শুনে এসে রায়ানকে বেরিয়ে যেতে দেখে নিজের মতো ঘটনা সাজিয়ে নিলেন!!
রায়ানের দাদি–এই মাইয়ার জন্য এতো অশান্তি!!সোয়ামী তে কথা হুনাইছে তা আবার নালিশ করতে হইবো কেন!!!
রায়ানের মা রেদোয়ানের কাছে এসে বসে বললেন–ছেলে বড় হয়েছে!!না মারলে হতো!!মানছি ও ভুল করছে!!তাই বলে বৌমার সামনে গায়ে হাত দেওয়া!!!
রেদোয়ান লাল চোখ করে তাকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আয়ানার সামনে এসে বলল–মাফ করে দিস মা!!তোর বাবাকে দেওয়া কথা আমি রাখতে পারিনি!!তোর মা – বাবা ফিরে এলে তুই তাদের সাথে চলে যাস!!কারণ এখানে তুই ভালো থাকবি না!!
কথাটা বলে রেদোয়ান চলে গেল নিজের ঘরে!!!
রায়ানের দাদি যেতে যেতে বলল–কি মাইয়া রে বাপু!!যাও তো বাড়ি থেইকা!!বউমা আমার দাদু রে ফোন দাও কই গেলো পোলাডা!!!
রায়ানের মা –তুই ফ্রেস হয়ে কিছু খেয়ে নে!!আমার আবার আজ ডিউটি আছে!!রায়ানটা যে কোথায় গেলো দেখি!!!
সবাই যেতেই আয়ানা ঘরের মধ্যেখানে বসে পড়ল!!চোখ থেকে পানি ঝড়ছে!!আজ তার জন্য বাড়িতে এতো বড় অশান্তি হলো!!!
খানিকপর রায়ানের মায়ের চিল্লাচিল্লিতে সবাই বাড়ির উঠানে চলে এল!!এসে দেখে রক্তাক্ত রায়ান পড়ে আছে!!
বোঝাই যাচ্ছে ছাদ থেকে লাফ দিয়েছে!!
ঐসময় রায়ান ঘর থেকে বেরিয়ে ছাদে এসেছিলো,,
রায়ানের মা পালস চেক করে নিল!!রায়ানের দাদি তো আহাজারি শুরু করে দিয়েছে,, রেদোয়ান অটো ডেকে এনেছে!!আয়ানা একপাশে দাঁড়িয়ে ভয়ার্ত চোখে নিচের হাত কচলাচ্ছে!!
অটোতে রেদোয়ান আর রায়ানের মা খুব কষ্টে রায়ানকে ধরে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হলো!!
দাদি কাঁদতে কাঁদতে আয়ানার সামনে এসে বলল–তোর জন্য হইছে সব!!আমার নাতির কিছু যদি হয় দেখিস তোর চুল ছিড়া দিমু!!
বলেই দাদি রাস্তায় হাঁটা ধরলেন,,আয়ানা দ্রুত ঘরের দরজা বন্ধ করে দাদির পেছনে দৌড় দিলো!!তবে ওইযে বিধি বাম!!! শাড়িতে পা বেধে হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল রাস্তায়!!
আয়ানার আওয়াজ শুনে দাদি পেছন ঘুরে দেখে আয়ানা পরে আছে,,তাড়াতাড়ি কাছে এসে বসে বললেন–পড়লি কেমনে তুই??ওঠ আস্তে কইরা!!
আয়ানার হাত ধরে উঠিয়েই চিল্লিয়ে বলেন–ওনে দেহো!!ঠোঁট,মুখ কাইটা নেছে মাইয়া!!আর কোথায় চোট পাইছোস??
আয়ানা কাঁদতে ইশারা করে যে সে পায়ে বেশ চোট পেয়েছে!!
দাদি–খাড়াইতে তো পারবি না!!রিসকা ডাকি!! তোর চেয়ে এখনো শক্তি আছে আমার মাইয়া!! ওই রিসকা খাড়া!!
রিকশাওয়ালা–কই যাইবেন??
দাদি–সিটিকেয়ার হাসপাতালে!!
রিক্সাওয়ালা–আসেন!!
দাদি আয়ানার হাত ধরে রিক্সাতে উঠিয়ে নিল!!
মাঝ রাস্তায় আসার পর আয়ানা বলল–দাদি,আমরা তো টাকা আনি নি!!তাহলে ভাড়া!!
দাদি–ছুড়ি রে!!আমার আঁচলে পান খাইবার টেহা সবসময় বান্দা থাহে!!চিন্তা নাই তোর!!
হাসপাতালের সামনে এসে দাদির সাহায্য নিয়ে আয়ানা নিচে নামলো!!দাদি ভাড়া মিটিয়ে আয়ানার হাত ধরে বললেন–চল!!দেহি তোর সোয়ামী কোথায়?
আয়ানার হাত ধরে দাদি হাসপাতালের ইমার্জেন্সির সামনে এসে এক নার্সকে বলল–আমার নাতি বউরে একটু দেহো দি!!ব্যাথা পাইছে!!
নার্স–বসুন আপনি!!
নার্স আয়ানাকে মেডিসিন লাগিয়ে ইনজেকশন দিয়ে দিল!!আয়ানা উঠে বলল–চলো দাদি!!
দাদি–ওই নার্স,ডাক্তার রেশমী তার পোলারে ভর্তি করছে!!কোথায় আছে??কইতে পারো??
নার্স–হুমম!!ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে আছে!!১৭ নং স্টাফ রুম!!
দাদি আয়ানাকে নিয়ে স্টাফ রুমে আসেন!!
রায়ানের সেন্স ফিরেছে,,,
নিচতলা বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দিয়েছে বলে প্রাণটা যায়নি তবে হাত ভেঙেছে বেশ ভালোই আর মাথা ফেটেছে!!
ডাক্তার রায়ানের কপালের কাটা অংশে সেলাই দিচ্ছে আর রায়ানের মা ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছেন!!রেদোয়ান বারবার বলছে–আস্তে করুন!!একটু!!
দাদি আয়ানাকে টুলে বসিয়ে রেদোয়ানের কাছে দাঁড়ালো!!
রেদোয়ান –মা!!বৌমা চোট পেলো কিভাবে??
দাদি–আর কইস না!! তোর পোলা বউ রাস্তায় হুড়মুড় কইরা পড়ছে!!নিচে থেইকা নার্সরে দিয়া ওউষধ লাগাইয়া লইয়া আইছি!!
রেদোয়ান –হুমম!!
দাদি–দাদুর কি অবস্থা??
রেদোয়ান–সেলাই দিলে হয়ে যায়!!হাত ভেঙেছে!!আর পায়ে বেশ আঘাত ও পেয়েছে!!!
ডাক্তার বেশ ওষুধপত্র লিখে কাগজটা রায়ানের মায়ের কাছে দিয়ে চলে যায়!!
রেদোয়ান ওষুধ আনতে যেতেই,,দাদি রায়ানের পা ঘেষে বেডে বসে বলে–কাপুরুষ হইছোস নাকি তুই??মাইয়্যা মানষের মতো লাফ দিছোস!!!ফাজিল পোলা!!তর কিছু হইলে আমরা কেমনে বাঁচতাম??ওই মাইয়ার কথা ভাবলি না!!
রায়ান কোনো কথা ছাড়া চোখ বন্ধ করে নিল!!
রায়ানের মা স্যালাইন ঠিক করতে করতে বললেন–ওর কারো কথা ভাবার সময় নেই মা!!ও নিজেকে নিয়েই ভাবে!!আপনার নাতিকে চিন্তা করতে বারণ করুন!!ওর ডিভোর্স করিয়ে দিবো!!তারপর ওর যেখানে ইচ্ছে ও যেতে পারে!!
বলেই রায়ানের মা বেরিয়ে গেল!!
আয়ানা দূরে বসে কাঁদছে!!
দাদি ফোপানোর আওয়াজ শুনে বলল–ওরে ছেমড়ি!!সোয়ামির ধারে আইয়া বয়!!এইসব ও তোগে শিখাইয়া দিমু!!
আয়ানা আস্তে করে টুল হাতে রায়ানের বেডের কাছে এসে বসল!!
দাদি–শুন!!আমি পান খাইয়া আইতেছি!!তোগে জ্বালায় পান খাইতে পারি নাই!!
দাদি বেরিয়ে যেতেই,,
আয়ানা রায়ানের একটা আঙ্গুল ধরে বলল–সরি!!আমার জন্য আপনি!!!
কিন্তুু বিশ্বাস করুন!!আমি বাবাকে ওইদিনের ঘটনা বলিনি!!
রায়ান ধীরে চোখ খুলে বলল–আমি নাবিলাকে ভালোবাসি!! ৩ বছর যাবত!!একটা ইগো রিলেটেট ঝামেলাতে জড়িয়ে বাবাকে বলতে না পারার দরুন আপনার সাথে আমার বিয়ে!!
আয়ানা–হায় রে!!আপনি আমায় আগে নাবিলাপু কে দেখালে এতো ঝামেলাই হতো না!!আর আপনিও বা কি!!লাফ দিলেন!!আমি জানতাম ছেলেরা রাগ হলে ২০/২৫ টা সিগারেট খায়!!
রায়ান–আসলে নাবিলা যা তা বলল তারপর বাবা মাথা ঠিক ছিল না!!বারবার মনে হচ্ছিল আপনার জীবনটা নষ্ট করে দিলাম আমি!!আর আমি সিগারেট খাই না!!
আয়ানা হালকা হেসে বলল–আরে চিল!!সুস্হ হয়ে নিন দ্রুত!!নাবিলাপুকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার!!!
রায়ান–ধন্যবাদ!!ব্যাপারটা নরমালি নেওয়ার জন্য!!
আপনার এতো চোট লাগলো কেমনে??
আয়ানা–রাস্তায় পড়ে গিয়েছি!!
রায়ান–ও ও!!মায়ের সাথে চেকাপ করিয়ে আসবেন!!
আয়ানা–ওকে!!আপনি রেস্ট নিন!!
রাত ১১টা,,
রেদোয়ান –আমি থাকি বাবুর সাথে!!তোমরা যাও!!
রায়ানের মা–নাহ!!তোমার বিপির সমস্যা!! তুমি যাও মা আর বৌমাকে নিয়ে!!আমি আছি!!
রায়ান বেডে শুয়ে আছে আর আয়ানা গোল গোল চোখে আপেল মুখে পুড়ছে আর শশুর শাশুড়ীর কাহিনি দেখছে!!
দাদি এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলল–থাম!!বিয়া হইছে পোলার!!ওর বউ থাকুম!!আমরা হগ্গলে এহন বাড়ি যামু!!চল সব!!
রেদোয়ান আপত্তি জানানোর আগেই রায়ানের মা বলল–হুমম তাই ভালো!!আমি বাড়ি গিয়ে সকালে সব খাবার রান্না করে আনবো!!রাতের খাবার তো হাসপাতালের ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নিলাম সবাই!!চলো সবাই!!
বলেই তিনি রেদোয়ানকে ধরে নিয়ে গেলেন!!!
আয়ানা রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল–এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন আমার আপেলের দিকে??তাকালেও দিবো না!!
রায়ান–আজব!!অসুস্থ মানুষকে এক পিস আপেল দিলে কি হয়??
আয়ানা–সাধ করে অসুস্থ হওয়া মানুষকে আমি আপেল দি না!!
রায়ান মিনতির সুরে বলল–একটু দিন প্লিজ!!
আয়ানা–নাহ!!
রায়ান–বন্ধু ভেবেও দিতে পারেন অল্প একটু!!
আয়ানা–হুরর!!আপনি আমার কত্তো সিনিয়র!! বন্ধু হয় নাকি তাই!!
রায়ান–আপনার এজ কতো??
আয়ানা ভ্রু কুঁচকে বলল–২০!!কেন??
রায়ান–এজন্য!!বন্ধুত্বের কোনো বয়স হয় না!!সবাই বন্ধু হতে পারে!!বন্ধুত্বের কোনো সীমাও হয় না!!অপরিসীম বিশ্বাসই এর ভীত!!
আয়ানা ভাবুক হয়ে বলল—
#চলবে
১০৭৭ শব্দের পর্ব😊♥️
বিঃদ্রঃ খুব তাড়াহুড়া করে লিখেছি!!রিচেইক করা হয়নি!!পরীক্ষার চাপ খুব!!