#শেষ_বিকেলের_মায়া (২৩) [সমাপ্তি পর্ব]
ওয়াজিহার জন্য নাস্তা বানাচ্ছে ফারিহা। মেয়েটা গত রাতে খুব অসুস্থ ছিল। তাই হোস্টেল থেকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছিল। এখন কিছুটা সুস্থ।
“ওয়াজিহা,নিচে নেমে আসো। খাবার তৈরি।”
ওয়াজিহা নামল না। ফারিহা একটু চিন্তায় পড়ল। হাতের কাজ গুলো না সেড়েই চলে এল উপরের ঘরে। সেখানে গিয়ে দেখল ওয়াজিহা ছবির এলবাম নিয়ে বসেছে। তাকে দেখে একটু ভরকেই গেল।
“সরি মিস। আমি না বলে নিয়েছি।”
“ঠিক আছে সমস্যা নেই।”
ছবির এলবামে অনেক গুলো মানুষের দেখা মিলেছে। এর মধ্য থেকে দুটি পুরুষকে বেছে নিয়েছে ওয়াজিহা। যাদের মধ্য একজন রিহান আর অন্যজন আদীব। তবে কে কোনটা তা বুঝতে পারছে না। খাবারের টেবিলে বসে খাবার খেলেও কৌতূহল কমল না। ফারিহা কাজ গুলো শেষ করে কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। সে মালেশিয়ার স্বনামধন্য এক কলেজের শিক্ষক হিসেবে আছে। আর সেই কলেজের ই ছাত্রী ওয়াজিহা।
“খাবারটা শেষ কর।”
“জি।”
দ্রুত খাবার শেষ করল ওয়াজিহা। ফারিহা মেয়েটার ব্যাগ পত্র গুছিয়ে দিয়ে বলল,”লেট কোরো না। দ্রুত আসো।”
ঘরে ফিরে নিজেকে পরিপাটি করে নিল ওয়াজিহা। তারপর নেমে এল। দুজনেই কলেজের উদ্দেশ্য পথ চলছে। গাড়িতে বসে স্বভাব বসতই গল্পের বই পড়ল ফারিহা। হাজারটা কৌতূহল জাগলেও কোনো এক অস্বস্তির জন্য প্রশ্ন করতে পারল না অষ্টাদশী কন্যা ওয়াজিহা।
কলেজ ছুটি হলো দুটোর দিকে। ফারিহা বের হয়ে চমকে উঠল। সাত বছর বয়সী একটি বাচ্চা ওর দিকে ছুটে আসছে।
“মম, মম, তোমাকে মিস করছিলাম। খুব মিস করছিলাম।”
বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিল ফারিহা। কত দিন পর দেখা পেল।
“আমিও তোমায় মিস করেছি সোনা।”
“আমি আরো আগেই আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পাপার কাজের জন্য আসতে পারি নি।”
হাজারটা অভিযোগ ঠেলে দিল বাচ্চাটি। সব গুলো অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শুনল ফারিহা। এক পর্যায় হেসে ফেলল।
“তোমাকে তো বলেছিলাম আমার কাছে থাকতে। কিন্তু তুমি তো শুনলে না বেটা।”
“এখানে থাকতে ভালো লাগে না। তোমার মেয়ে গুলো আমায় টিচ করে।”
ফারিহার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। তবু সে হাসিটা দমিয়ে রাখল। খুব সিরিয়াস ভাব করে বলল,
“তাই?”
“হুম।”
“তুমি জানো কেন ওরা তোমায় টিচ করে?”
“জানি? আমি যে খুব হ্যান্ডসাম।”
এ কথা বলেই হেসে উঠল। ফারিহা বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে রইল।
“এটা কে বলেছে তোমায়?”
“পাপা।”
ফারিহা সামনের দিকে তাকাল। দেখতে পেল আদীব আসছে। মানুষটা আগের মতই সুন্দর রয়ে গেছে। শুধু চোখে উঠেছে চশমা। এতে অবশ্য সৌন্দর্যের খামতি হয় নি। বরং অন্য রকম ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটেছে।
“দূর থেকে মা ছেলের হাসি দেখছিলাম। এত ভালো লাগছিল।”
ফারিহা হাসল। সেই বিকেলটা ওরা এক সাথেই কাটাল। খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে ঘুরাঘুরি সমস্তটাই করল এক সাথে। ওয়াজিহা সবটা দেখল এবং বুঝল এই মানুষটাই আদীব!
এর পর অনেক গুলো দিন পেরিয়ে গেল। কাল ফারিহার জন্মদিন। তাই ওয়াজিহা পড়ার বাহানায় ফারিহার নিকট এসেছে। তখন প্রায় রাত সাড়ে এগারোটা। ওয়াজিহা তার বন্ধুদের সমস্ত ব্যবস্থা করতে বলেছে।
“পড়া গুলো বুঝেছ?”
“কিছু সমস্যা হচ্ছে।”
“আচ্ছা,আবার বুঝিয়ে দিচ্ছি।”
ফারিহা পুনরায় বুঝিয়ে দিল। ওয়াজিহা পড়ার অভিনয় করছে। ওর ভেতরটা আনচান করছে। বারোটা বাজার তখন মাত্র কিছু সময় বাকি। ফারিহা উপরের ঘরে চলে গেছে। ওয়াজিহা দেখল আর মাত্র এক মিনিট বাকি। সে আগেই সাথে করে ফুল নিয়ে এসেছিল। সেটা বের করে নিল। তারপর উপরের ঘরে উঠে এল। যদিও নক ছাড়া কারো ঘরে প্রবেশ করা উচিত নয়। তবু সারপ্রাইজ দিতে ফারিহার ঘরে প্রবেশ করল। কিন্তু সেখানে প্রবেশ করে ওয়াজিহার সমস্ত শরীরে কম্পন ধরে গেল। সে এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করল না। বেরিয়ে এল। নিচে এসে ওর হাত পা অবশ হওয়ার মতো। ফারিহা মিস একটি পুরুষের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে আছে। তবে পুরুষটি আদীব নয়! এমনটা কি করে হয়? হাজার খানেক প্রশ্ন মনে। খানিক বাদে ফারিহা নিচে নেমে এল। ওয়াজিহা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,”শুভ জন্মদিন মিস।”
ফারিহা হাসল। সে বুঝতে পারছিল এমনটাই হবে। মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,”দল বল সাথে আছে নিশ্চয়ই?”
“হুম।”
“তাদের নিয়ে আসো। কতক্ষণ বাইরে থাকবে।”
অপ্রস্তুত হাসল ওয়াজিহা। সবাই কে ডেকে নিয়ে কেক কাটল। প্রচুর উপহার এনেছে সবাই। ফারিহার দু চোখে আনন্দ। এদের সবাই কে সন্তানের চোখে দেখে সে। সবাই তখন চলে গেছে। ওয়াজিহাও চলে যাচ্ছিল। ফারিহা ওকে আটকে দিয়ে বলল,”কিছু বলতে চাও?”
শুরুতে না বোধক উত্তর করলেও ওয়াজিহা নিজেকে দমাতে পারল না। সে বলেই ফেলল।
“মিস উপরের ঘরে…”
“রিহান।”
“রিহান স্যার! কিন্তু আপনার সাথে তো আদীব স্যারের বিয়ে হয়েছে। সেদিন ছেলেকে নিয়ে ঘুরলেন আপনারা। মিস, আমার কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।”
ফারিহা হাসল। ওয়াজিহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,”বলেছিলাম না। মানুষের জীবন যখন তখন বদলাতে পারে।”
“তার মানে আপনার সাথে রিহান স্যারের বিয়ে হয়েছে?”
“হুম। ফাহান আমার আর রিহানের সন্তান।”
ওয়াজিহার মাথা ঘুরিয়ে যাবার মতো অবস্থা। তবে সে বেশি সময় নষ্ট করল না। যাওয়ার পূর্বে শক্ত করে ফারিহাকে জড়িয়ে ধরল।
ফারিহার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিহান। মেয়েটা কাজে ব্যস্ত। ওর চোখে ভাসছে বারো বছর পূর্বের সেই ফারিহাকে। যে জেদ করেছিল সাথে থাকার। এক মাসের চুক্তি বাকি ছিল তখনও। রিহানের হাত তখন শূন্য। ফারিহার চোখে অবশ্য ভালোবাসা ছিল না। তবে কিসের জন্য মেয়েটি ওকে বিয়ে করল কে জানে। রিহান আজও সে উত্তর পায় না। শুরুতে কথা হয়েছিল এক মাস পর ওরা আলাদা হয়ে যাবে। অর্থাৎ এক বছরের যেই চুক্তিটা হয়েছিল সেটার সময় শেষ হতে এক মাস বাকি ছিল। তবে এক মাস পর ওদের আলাদা হতে হয় নি। আজ এক যুগ পার হলো ওরা এক সাথে রয়েছে। কেমন করে সময় পেরিয়ে যায়। ফারিহা বিছানা গুছিয়ে বলল,”ঘুমিয়ে পড়ুন।”
মেয়েটি চলে যেতে নিলেই আটকে দিল রিহান। কিছুটা কাছে এনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এই চোখে আজও ভালোবাসা খুঁজে পায় না সে। তবে যা পায় তা হলো এক সুমদ্র মায়া। প্রচন্ড মায়া।
“কি?”
“দেখছি তোমায়।”
“দেখার কি আছে?”
“অনেক কিছু।”
“এখন ঘুমান। এমনিতেই না বলে এসেছেন। পাগল পুরো।”
“তোমার জন্মদিনের এই সুন্দর সময়টা মিস করতে চাচ্ছিলাম না।”
ফারিহা মাথা নত করে রইল। তারপর বুকে হাত রেখে বলল,”বারো বছর পেরিয়ে গেল রিহান।”
“সেটাই ভাবছি। বারোটা বছর আমরা এক সাথে।”
সেদিনটা দারুণ ভাবে পার হলো ওদের। সকাল হতেই আদীবের সাথে উপস্থিত হলো ফাহান। সত্যিকার অর্থে ওদের জীবন আর পাঁচ টা সাধারণ মানুষের মতো নয়। বেশ কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।
“হ্যাপি বার্থডে মম।”
নিচু হলো ফারিহা। ফাহান মায়ের গালে চুমু খেল।
“থ্যাংকস বেটা। আমি ভেবেছিলাম রাতেই চলে আসবে।”
“পাপা অসুস্থ ছিল।”
ফারিহা উঠে এল। আদীবকে পুরো সুস্থ দেখাচ্ছে।
“আপনি অসুস্থ?”
আদীব খিটমিটে হাসল। ফারিহা বুঝে গেল।
সে আর রিহান যেন আলাদা সময় কাটাতে পারে সেই জন্যেই রাতে আসে নি। ফাহানের পছন্দ মতো কেক আনা হয়েছে। সেটা কেটে নিল ওরা। রিহান শাওয়ার শেষ করে এসে বলল,”ফাহান বেটা, ড্যাড কে রেখেই কেক কেটে ফেললে?”
ফাহান কপালে হাত রাখল। তারপর কিছুটা নত হয়ে বলল,”সরি ড্যাড। আমি জানতাম না তুমি এসেছ।”
রিহান হাসল। তারপর ফাহান কে কোলে তুলে নিল। রিহানের ভেজা চুল গুলো নাড়িয়ে দিচ্ছে ফাহান।
“তুমি কেন বাংলাদেশে থাকো ড্যাড? এখানে কেন থাকো না।”
“সেখানে তোমার দাদা আর দাদিজান আছে বেটা। তাদের কে রেখে আসতে ইচ্ছে করে না।”
“সত্যি? তারা আমার সাথে ফোনে কেন কথা বলে না?”
“তারা রাগ করে আছেন।”
“কেন? কেন রাগ করেছে?”
“কারণ তোমাকে তারা দেখতে চায়।”
“তাহলে আমায় বাংলাদেশে নিয়ে চলো প্লিজ। রাগ ভাঙিয়ে দিব আমি।”
“ওকে বেটা। আমরা খুব দ্রুত বাংলাদেশে যাব।”
“ইয়েহ।”
রিহানের কোল থেকে নেমে গিয়ে ফাহান বাইরে চলে গেল। কিছু সময় পর আদীব এর স্ত্রী শারমিন ও এল। ফারিহাকে শুভেচ্ছা জানাল।
“এত লেট কেন করলে আপু?”
“আর বোলো না। বের হচ্ছিলাম, ঠিক তখনি কাচের সাথে লেগে জামাটা ছিড়ে গেল। এদিকে ফাহান আসার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে। সেই জন্যেই ওরা আগে এল।”
তারপর অনেকটা সময় গল্প চলল। সন্ধ্যায় এক সাথে বের হবে তাই ফারিহা রেডি হচ্ছিল। রিহান ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,”তোমার মনে হয় না ফাহান আমাদের থেকে আদীব আর শারমিনকে বেশি ভালোবাসে?”
ফারিহা সহজ ভাবে উত্তর করল।
“সেটা তো স্বাভাবিক। আমাদের থেকে ওদের কাছে বেশি টাইম স্পেন্ড করছে।”
রিহান দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ফারিহার সাথে বিয়ে পর প্রায় ছয় মাস স্বামী স্ত্রীর মত সম্পর্ক ছিল না ওদের মাঝে। থাকার কথাও না। রিহান যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল এতে করে যা তা হতে পারত। ফারিহা সে সময় আগলে না নিলে, পাশে না থাকলে সত্যিই রিহান বেঁচে থাকত না। সময়ের স্রোতে দুজন দুজনের প্রতি আগ্রহ বোধ করে। আর পাঁচটা বিবাহিত মানুষের মতোই চলা ফেরা করতে থাকে। সব থেকে দারুণ বিষয় হচ্ছে আদীব নিজে উপস্থিত থেকে ওদের বিয়ে দিয়েছিল। ছেলেটা সেদিন ফারিহার অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছে। সময় যেতে থাক। আদীব তার মায়ের পছন্দ মতো বিয়ে করল। ফারিহার পড়াশোনা শেষ হওয়ার পূর্বেই কোল জুড়ে এল ফাহান। এদিকে শারমিনের বাচ্চা হচ্ছিল না। অনেক চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছিল না। ফাহানের তখন দুই বছর। ফারিহার পড়াশোনা শেষ। তবে মালেশিয়াতে আরো উচ্চশিক্ষার সুযোগ হলো। ফাহানের কথা ভেবে সে যেতে চাচ্ছিল না। তবে রিহান তাকে এই বিষয়ে ফোর্স করল। ও চেয়েছিল ফারিহা আরো অনেক দূর যাক। নিজেকে অনন্য রূপে গড়ে তুলুক। তবে ফাহান? এই দুই বছরের বাচ্চাকে কোথায় রাখবে? তাছাড়া রিহান দেশ ছাড়তে চায় না। সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত হয় ফারিহা যাবে না। এদিকে শারমিন ফাহান কে প্রচন্ড ভালোবাসে। বাচ্চাটিকে নিজ সন্তানের মতো আগলে রাখে। এর পর ই সিদ্ধান্ত হয় ফাহানকে শারমিনের কাছে দিবে। ফারিহা আর রিহানের ত্যাগের জন্যই শারমিন সেদিন মাতৃত্ব পেয়েছিল। আর আদীব পেয়েছিল বাবা হওয়ার আনন্দ। তারপর ছয়টা মাস পার হলো। আদীব আর শারমিন ও মালেশিয়া চলে এল। কারণ ওরা চেয়েছিল ফাহান একই সঙ্গে ফারিহার ভালোবাসা ও পাক। ফাহান কে নিয়ে ওদের জীবন ভালোই যাচ্ছিল। ততদিনে ফারিহা মালেশিয়ার একটি কলেজের হোস্টেল ক্যাম্পাসে মেয়েদের দায়িত্ব পেয়ে যায়। সে অবশ্য চাকরিটা করত না। তবে ফাহান মালেশিয়ায় অবস্থান করায় চাকরিটা নিয়েছিল। কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হলেও ফাহান তো কাছাকাছিই থাকবে। তবে এসবের মাঝে সব থেকে একাকিত্বের মধ্যে সময় যাচ্ছিল রিহানের। তবে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। মাঝে মাঝে মানুষটা মালেশিয়াতেও আসত। একটা সময় পর রিহানের একাকিত্ব জিনিসটা সয়ে যায়। সে এই জীবনে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। ফারিহা বহু বার তাকে মালেশিয়ায় থাকতে বলেছে। তবে রিহান থাকে নি। এমনকি সে চলে আসতে চাইলেও নিষেধ করেছে। দেশে মা বাবার ক ব র রয়েছে। ব্যবসা রয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে মালেশিয়াতে থেকে যাওয়া রিহানের পক্ষে সম্ভব ছিল না। সব কিছু স্মরণ করে ফারিহা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল। তার কেন যেন এ জীবনটা পছন্দ নয়। সব থাকার পর ও কেমন যেন নেই নেই অনুভব হয়। এই নেই অনুভবটা যে রিহানের জন্য তা খুব ভালো করে বুঝতে পারে সে। বারো বছরে সংসার তাদের। মায়া তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক না।
ওভাবে আরো কিছু মাস পেরিয়ে গেল। এরই মধ্যে ফাহানকে বাংলাদেশ থেকে ঘুরিয়ে এনেছে রিহান। তার দাদা দাদির সাথে কথা বলানো হয়েছে। বাচ্চাটি দাদা দাদির
ক ব রের সামনে গিয়ে কি সুন্দর করে কথা বলেছে। যেন মানুষ গুলো চোখের সামনে অবস্থান করছে।
আজ ফারিহার বিদায়ের পালা। ওয়াজিহা কাঁদছে। মেয়েটির প্রতি কেমন মায়া কাজ করে ফারিহার। সে দু হাতে জড়িয়ে ধরল।
“কাঁদে না ওয়াজিহা।”
“মিস,আপনাকে খুব মিস করব।”
“আমিও করব।”
ফারিহা তখন গাড়িতে উঠে গেছে। গাড়ি চলতেও শুরু করেছে। হুট করেই ওয়াজিহা গাড়ির পেছন পেছন ছুটতে লাগল। সেটা দেখতে পেয়ে গাড়ি থামাতে বলল ফারিহা। ওয়াজিহা গাড়ির কাছে এসে হাপাতে লাগল। তারপর বলল,”মিস,আমার একটা প্রশ্ন রয়েছে।”
ফারিহা হাসল। ওয়াজিহার দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিল। পানিটা শেষ করে ওয়াজিহা বলল,”মিস,আপনি কি রিহান স্যারকে ভালোবাসেন?”
ফারিহা চুপ করে রইল। ওয়াজিহা পুনরায় বলল,”প্লিজ মিস। বলুন প্লিজ।”
ফারিহা তখন অন্যরকম এক উত্তর দিল। বলল,”হয়ত হ্যাঁ,হয়ত না।”
ফ্লাইটের পুরোটা সময় ওয়াজিহার প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে ওর। তবে কোনো উত্তর মিলে নি। তখন প্রায় সন্ধ্যা হতে চলেছে। রিহান তার প্রিয় বারান্দায় বসে আছে। ফারিহা আসবে তা সে জানে না। মেয়েটি ধীর পায়ে ঘরে প্রবেশ করল। কেমন একটা ঘ্রাণ ছেয়ে গেল চারপাশে। বুক ভরে শ্বাস নিল রিহান।
“ফারিহা?”
মেয়েটি ভারী অবাক হলো। মানুষটা কেমন করে বুঝল তার উপস্থিতি? রিহান উঠে এসেছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ফারিহাও তাই। তারপর হুট করেই শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরল। ছেলেটার এই আলিঙ্গনে ফারিহার সমস্ত শরীর চনমনে হয়ে গেল। চোখ থেকে নেমে এল এক ফোঁটা নোনা জল। ওয়াজিহার প্রশ্নের উত্তরটা সত্যিই পেয়ে গেল সে। উত্তরটা হলো সম্পর্কে দায়িত্ব আর সম্মান থাকলে ভালোবাসা এমনিতেই হয়ে যায়। সর্বদা সম্পর্ক তৈরির জন্য ভালোবাসা থাকা আবশ্যক নয়। আবশ্যক দায়িত্ব আর সম্মান থাকা। যা অনেকটা শেষ বিকেলের মতো। দিন শেষে যার মায়া ছাড়া বড়ো কঠিন। আর এই মায়ার সাথেই তো জুড়ে থাকে আকাশসম ভালোবাসা।
~সমাস্ত~
| যারা এই রকমের থীমের গল্প পড়েছেন তারা জানেন আমি গল্পটা কতটা ইউনিক ভাবে সাজিয়েছি। আমি সর্বদা চেষ্টা করি, নতুন কিছু করার। আশা করি,ইউনিক জিনিসটা আমার পাঠকদের পছন্দ হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আগামীকাল নতুন গল্প আসবে। সবাই দোয়া করবেন। আর হ্যাঁ আমার ভীষণ পছন্দের গল্প “ফুলটুশি” বই টই অ্যাপে প্রকাশিত হয়েছে। লিংক কমেন্টে। |