শ্রাবণের ধারা পর্ব -০২

#শ্রাবণের_ধারা ~(২য় পর্ব)~

#লেখানীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম~

~ক্লাস শেষে একে একে সবার বের হওয়ার পর আমিও বের হলাম। দুই পা আগে বাড়াতেই কেউ হাত ধরে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে ঠা*সা দিয়ে ধরলো।

— কি সমস্যা কি তোমার???

— আমার সমস্যা? আমার না সমস্যাটা তোমার বুঝলে?

— একদম উল্টা পাল্টা বলবে না ধারা। ক্লাসে যথেষ্ট ভালো ব্যবহার করেছি। এখানে কিন্তু কেউ নেই।

— তোমার ল*জ্জা করছে না তূর্য? এখনো তুমি এতো জোর দিয়ে আমার সাথে কথা বলছো কীভাবে?

— কেন জোর দিয়ে কথা বলার অধিকার আমার নেই না কি? আর তুমি আমার, আমি নিজের জিনিসের সাথে যেমন খুশি ব্যবহার করবো।

— আমাকে তোমার কি কেনা বস্তু মনে হয়? ছি*হ নিজের চরিত্রের প্রমাণ দিয়ে এখন ব্যবহারের প্রমাণ দিতে এসেছো?

তূর্য নিজের দুই হাত দেয়ালের সাথে দিয়ে আমাকে ঘিরে নিল। ওর চোখের দুটো আ*গুনে দ*গ্ধ হওয়ার মতো লাগছে। এইবার কেন জানি আমার ভ*য় লাগতে শুরু করলো। হাত পা সব ঠান্ডা হয়ে এসেছে। মনে হচ্ছে র*ক্ত প্রবাহের গতি কমে আসছে। চোখ দুটো বন্ধ করে বললাম,

— তূর্য আমাকে যেতে দাও প্লিজ।

— এখন ভয় পাচ্ছো কেন আমার ভালোবাসা? আমি তো তোমাকে ভালোবাসছি এখানে ভয় পাওয়ার কি আছে?

— তূর্য আমাকে যেত…….

— “ছেড়ে দাও ওকে” আবারো সেই একই গম্ভীর কণ্ঠস্বর। চোখ মেলে তাকাতেই দেখলাম সেই মানুষটা। এক হাত জিন্সের পকেটে দিয়ে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। ওনাকে দেখে তূর্য দেয়ালের থেকে হাত নামিয়ে ওনার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।

— তোর সম*স্যাটা কি হ্যা? সব জায়গায় নাক গোলানো জরুরি তোর? আমি আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছি তোর কি কাজ এখানে?

— আমি যতোদূর জানি সে এখন তোমার এক্স, গার্লফ্রেন্ড নয়। গার্লফ্রেন্ড হোক আর যেই হোক নারীকে সম্মান দিতে শিখো।

— তোর কাছ থেকে শিখবো না কি? তোর এতো সা*হস হয় কি করে আমাকে শিখাতে আসার?

এই বলে তূর্য আরো এগিয়ে গেল ওনার দিকে। ওনার দিকে হাত বাড়াতেই উনি খ*প করে তূর্যর মুষ্টিবদ্ধ হাত ধরে নিলেন। তূর্যকে এক ধা*ক্কায় দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দিলেন। এদিকে চোখ বড় বড় করে এগুলা দেখে যাচ্ছি আমি। তূর্য উঠতে যাবে তার আগেই উনি তূর্যর জামার কলার ধরে বলতে শুরু করলেন,

— প্রথম থেকেই যথেষ্ট ভদ্র ব্যবহার করেছি তোর সাথে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তুই এই ভদ্রতার যোগ্যই না। মানুষের সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় এইটা মনে হয় এখনো শিখিস নাই তাই না? ক্লাস লাগলে বলিস শিখিয়ে দিব। এখন এখান থেকে চুপচাপ সোজা হেঁটে চলে যা, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখবি না পর্যন্ত বুঝলি?

তূর্য অতি ভদ্রতার সাথে উঠে চলে গেল। কথা মতো ঘাড়টা পর্যন্ত ঘুরিয়ে দেখলো না। এসব দেখে শ*ক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এমন দৃশ্য কে আশা করেছিল? কিন্তু উনি না আসলে কি হতো? অতঃপর ওনার দিকে তাকালাম আর বললাম,

— ধন্যবাদ আপনাকে। আজকে আপনি না আসলে এখানে যে কি হতো জানি না।

— কে কেমন এইটা বুঝো না? আমাকে ধন্যবাদ পরে দিও আগে নিজের কথা ভাবো।

— আমি জানি ও একটু এমন তবে আজকে যা করলো এইটা আশা করিনি।

— সব যে তোমার আশা করার মতো হবে এই চিন্তা বাদ দাও আর ওই তূর্য নামক ছেলেটার সাথে দূরত্ব বাড়াও, ছেলেটা ভালো না।

এই বলে ঘুরে সোজা হাঁটা ধরলেন উনি। কয়েক পা আগাতেই আবার থেমে গেলেন। ঘাড় না ঘুরিয়েই বললেন,

— একটা হেল্প লাগবে আমার।

— জ্বি বলুন।

— এর আগের এক্সামের পরে যতগুলো ক্লাস হয়েছে সেই সব ক্লাসের নোটগুলো লাগবে।

— ওহ্ আচ্ছা। আমার কাছে আছে কখন লাগবে আপনার?

— এরপরের ক্লাসগুলো শেষে লাইব্রেরীতে এসো। তখন নিয়ে নিব।

— আচ্ছা চলে আসবো।

— আর আমাকে “আপনি আপনি” করে এতো সম্মান দিতে হবে না। এমনিতে অনেক কিছু মনে করলেও “তুমি” করে বললে কিছু মনে করবো না।

আবার সোজা হাঁটা ধরলেন উনি। ইশশশ! সরি সরি সে তো আবার আপনি বলতে মানা করলো। এসব ভাবতে ভাবতে ঠোঁটের কোণে হালকা হাঁসি ভেসে উঠলো। একদিনেই অনেক ঋ*ণী হয়ে গেলাম তার কাছে। এই যাহ! নামটাই তো জিজ্ঞেস করা হলো না। একবার আপনি একবার তুমি সবই ঠিক আছে কিন্তু নামটাই তো জানা হলো না।

— ধারা… এই ধারা… তুই এইখানে? আমি তোকে খুঁজে খুঁজে মরছি।

— জিনিয়া তুই কোথা থেকে আসলি? আর তুই ক্লাস শেষে কোথায় উ*ধাও হয়ে গিয়েছিলি হ্যা?

— আরেহ আর বলিস না ঋতুর কাছ থেকে কতো গুলো জরুরি কাগজ আনতে গেছিলাম। কিন্তু তুই এখানে কি করছিস?

— অনেক কিছু ঘটে গেছে রে। তূর্য আবার এসেছিল।

— কিহ!? আবার এসেছিল কেন? কি করেছে আবার?

— আরে দাঁড়া দাঁড়া। সব বলছি আগে ক্লাসে চল।

“““““““““
জিনিয়াকে সবটা বলার পর জিনিয়া আবার হাবলা টাইপ লুক নিয়ে তাকিয়ে রইলো আবার দিকে। ওর মাথায় হালকা করে একটা বা*রি দিয়ে বললাম,

— হা করে থাকলে মশা, মাছি সব সংসার নিয়ে তোর মুখে ঢুকবে।

— আরে ধু*র এইদিকে এতো দারুন দৃশ্য মিস করে গেলাম এই কষ্টে টিকতে পারছি না।

— দৃশ্য মিস করায় শো*কাহ*ত হয়ে পড়েছিস তুই? আমার কি অবস্থা হয়েছিল জানিস তুই?

— না না আমি বুঝতে পেরেছি বিষয়টা তবে যাই বলিস কালুটা তোকে সময় মতো বাঁচিয়ে নিয়েছে।

— কথাটা খুব একটা ভুল বলিস নাই। উনি আসলেই আমাকে ঋ*ণী করে তুলছেন।

— ঋ*ণ শো*ধ করে দে তাহলেই হয়।

— এইটা কি টা*কার হিসাব না কি? বললেই তো দিয়ে দেয়া যায় না। কিছু মানুষের কাছে আমরা সারাজীবনই ঋ*ণী থেকে যাই। চাইলেও তাদের ঋ*ণ শো*ধ করার সাধ্য আমাদের থাকে না রে।

— আহা সম্মানিত মহাজ্ঞানী আপু। কি আর বলবো আপনার কথায় যে আমি কত অণুপ্রাণিত হই তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়।

— এসব বাদ দে। আসল কথা শুন আগে, উনি আমাকে ক্লাস শেষে লাইব্রেরীতে যেতে বলছেন।

— ওমা ওমা! লাইব্রেরীতে কি হ্যা? আল্লাহ মাফ করুক।

— আব্বে আগের নোটগুলোর জন্য যেতে বলেছেন। ভাবছি সুযোগ মতো ওনার নামটাও জিজ্ঞেস করে নিব।

— আরেহ ভালো বলেছিস তো এখনো ওর নামটাই তো জানা হলো না। শোন লাইব্রেরীতে যাই কথা হোক ভালো বাচ্চার মতো আমাকে এসে সব বলবি বুঝলি?

— আচ্ছা আচ্ছা সব বলবো তোকে।

ক্লাস শেষে বেশি দেরি করলাম না সোজা লাইব্রেরীতে চলে গেলাম। লাইব্রেরীর দিকে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ালাম। দৃষ্টি চারদিকে ঘুরিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি তবে তাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। সে কি এখনো আসেনি? আমাকে যে ক্লাস শেষে আসতে বললো? আবার চারদিক ভালো মতো দেখা শুরু করলো। এবার কিছুতে চোখ আটকে গেল। সেই কালো হুডি, কানে হেডফোন আর চোখ দুটো মোবাইলে আটকে আছে। এবার হুডির ক্যাপটা মাথায় উঠিয়ে রেখেছে আর একদম জিনিয়ার ব্যাখ্যা মতো “কালু” মনে হচ্ছে। এগুলো ভেবেই মনে মনে হেসে উঠলাম।

তার দিকে এগিয়ে গেলাম। অতঃপর তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। এতে ওনার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন ঘটলো না। এখনো মোবাইলের মধ্যেই মুখ গুজে আছে এবার মে*জা*জ খা*রা*প হতে শুরু করলো। মানুষটা আসলেই অদ্ভুত! অনেক বেশি অদ্ভুত! শান্ত গলায় বললাম,

— আপনার নোটগুলো নিয়ে এসেছি। এখানে রেখে যাবো?

কথাটা শুনে উনি মাথা তুলে তাকালেন। কানের থেকে হেডফোন নামিয়ে বলতে লাগলেন,

— তুমি কখন এলে? আর নোটগুলো এখানে রেখে যাবে কেন? হাতে দিয়ে যাও।

— ওয়েট! আমি যে এখানে এসেছি আপনি কেবল বুঝলেন? তাও আবার আমি ডাক দেয়ার পরে?

— তো কি? ডাক না দিলে কিভাবে বুঝবো?

— এভাবে মোবাইলে এডি*ক্টেড হয়ে বসে থাকলে এমনিতেও বুঝবেন না।

উনি ভ্র কুঁচকে আমার তাকালেন আবার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বললেন,

— নোটগুলো দাও।

— এই নেন। এখানে সবগুলোই আছে।

— এতো নোট কি সাথে নিয়েই ঘুরো না কি?

— আমার কাছেই থাকে, কখন কোনটা লাগে বলা তো যায় না তাই আর কি।

— বুঝলাম এইজন্যই তুমি ক্লাসের টপার।

— আপনাকে এগুলো কে বললো?

— জানি আমি সবই, এতো দিন পর এলাম কিছু কিছু জিনিস জেনে আসতে হয়।

কথাগুলো কেমন রহস্যের মতো আ*ঘা*ত হা*ন*লো আমার মনে। মানুষটাকে যতোই দেখছি ততই রহস্যময় লাগছে। প্রথমত এতো দিন পর ভার্সিটিতে আসলো, দ্বিতীয়ত এতো দিন পর না কি প্রয়োজনে এসেছে? এখন আবার বলছে যে কিছু কিছু জিনিস জেনে আসতে হয়?

আমার নিরবতা দেখে উনি বলে উঠলেন,

— কি ভাবছো? এতো ভাবার কি আছে? আর যাই ভাবো আমার কথাগুলো নিয়ে ভাবতে যেয়ো না।

— না মানে। ওহ্ ভালো কথা মনে পড়েছে।

— কি কথা?

— আপনার নামটা তো জানা হলো না। নামটা বললে তাও আপনাকে ডাকতে সুবিধা হতো।

— আমাকে ডেকে কি করবে? আর বলেছিলাম তো আপনি আপনি না করতে, এতো সম্মান লাগবে না।

— আপনি নিজের নামটা বলুন আগে নয় তো আপনি আপনি করেই যেতে হবে আমার।

— আমার নাম ……

হঠাৎ থেমে গেলেন উনি মনে হচ্ছে নিজের নামটাই ভুলে গেছে। এই মানুষটার কাজকর্ম কিছুই বুঝি না। ওনার দিকে আগ্ৰহ নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আর উনি চুপ হয়ে আছেন। ভ্রু কুঁচকে আবার জিজ্ঞেস করলাম,

— নামটা বললেন না যে? নামটা বললেই তো মিটে গেল এতো ভাবছেন কি?

— আমার নাম আবির।

— ওহ্ আচ্ছা আবির। তো এটা বলতে এতো ভাবার কি আছে?

— এতো কিছু তুমি বুঝবে না। আমার কাজ আছে আর নোটগুলোর জন্য থ্যাংকস।

আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না আবির। একদম সোজা হেঁটে চলে গেল। একদিকে আমি এখনো ভাবছি যে,

— সব ঠিক আছে কিন্তু একটা জিনিস তো বুঝলাম না……….

চলবে……………….^-^

[প্রথম পর্বে এতোটা সাড়া দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাদেরকে 💙। আশা করি লেখিকা এবং গল্পের সাথেই থাকবেন। আবারো ধন্যবাদ সকলকে। হ্যাপি রিডিং ^_^]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here