শ্রাবনের মেঘ পর্ব -০৭

গল্পের নাম : #শ্রাবনের_মেঘ
লেখিকা : ফারিয়া
পর্ব : ৭

মেঘা বলা শুরু করলো,
” হ্যাঁ, আমি একজন সিক্রেট ডিটেকটিভকে চিনি। আমি যার কথা বললাম একটু আগে অর্থাৎ আমার যাকে ভালো লাগে উনি হলো, বিখ্যাত সিক্রেট ডিটেকটিভ শ্রাবন আহম্মেদ। আপনার নামের সাথে পুরোটাই মিল তার, তাই আপনার নাম শুনে কিছুক্ষন থমকে গিয়েছিলাম ”

শ্রাবন যেনো বিষ্ময়ের রেশ কাটাতে পারছে না, তবুও নিজেকে সামলে বলে উঠলো,
” তুমি তার ব্যাপারে জানো কিভাবে? দেখেছো কখনো তাকে? ”

মেঘা বললো,
” নাহ, আমি তাকে দেখি নি এবং সে ও আমায় দেখেনি। আমি তার ব্যাপারে শুনেছি। এই অবধি দেশে কিংবা বিদেশের সব কঠিন মিশন তিনিই সমাধান করেছে, শুনেছি এতো বড় হওয়া সত্ত্বেও তার কোনো অহংকার নেই, কোনো মেয়ের সাথে কোনো সম্পর্ক ও নেই। উনি নাকি দেখতেও খুব সুন্দর, তাকে দেখার সৌভাগ্য খুব কম মানুষের হয়েছিলো। উনাকে পছন্দ হওয়ার শত কারণ রয়েছে, যা বলে শেষ করা যাবে না। আমি খুব করে চাই তাকে দেখতে, আপনি কি পারবেন? ”

শ্রাবন মনে মনে হাসলো, ভাবলো একটু মজা নেওয়াই যায়। ও মেকি রাগ দেখিয়ে বললো,
” কিহ! আমার বউ হয়ে তুমি অন্য পুরুষের সাথে দেখা করার কথা আমার কাছেই আবদার করছো? তোমার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি”

মেঘা ভয় পেয়ে গেলো। শ্রাবন হেসে বললো,
” আচ্ছা, কাল বিকেলে তৈরি থেকো ”

মেঘা খুশী হয়ে গেলো। পরেরদিন সকালে,
রহিমা বানু চলে যাবে। তাকে গাড়ি করে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। সবাই নিজ নিজ কাজে চলে গেলো, শ্রাবন ছুটিতে আছে। তবুও, অফিসে যাবে এবং তার নাকি কিছু কাজ আছে তাই বাইরে যাবে। মেঘা নিচে ছিলো, হঠাৎ শ্রাবন ডাকতেই সে উপরে গেলো। শ্রাবন বললো,
” আমি বাইরে যাচ্ছি, ফিরতে দেরি হবে। বিকেলে তৈরি থেকো। আমি কল দিলে নিচে নামবে, আর তোমার পোশাক সব আলমারিতে রাখা আছে। আর এই নাও তোমার নতুন মোবাইল, আমার নাম্বারটা সেভ করা আছে। সাবধানে থেকো ”

মেঘা মাথা নাড়ালো। বিকেল বেলা মেঘা আলমারি খুলে দেখলো, নীল সাদা কম্বিনেশনে একটি সুন্দর শাড়ি, ম্যাচিং কানের দুল এবং মাথার ফুল। মেঘার খুব পছন্দ হলো, ভাবলো মানুষটার পছন্দ আছে বলতে হবে। মেঘা সুন্দর করে তৈরি হয়ে গেলো। নিচে নামতেই ইশা আহম্মেদ জিজ্ঞেস করলো,
” কোথায় যাবি মা? ”

মেঘা বললো,
” মাম্মা, উনার সাথে একটু যাবো ”

ইশা আহম্মেদ মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বললো,
” সাবধানে যাস মা ”

মেঘা বের হতেই দেখলো, শ্রাবন গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে শ্রাবন তাকিয়ে দেখলো এ যেন অপ্সরী, বড্ড মায়াবী লাগছে মেঘাকে। দুজনে গাড়িতে উঠলো, একটা রিসোর্টের সামনে গিয়ে থামলো শ্রাবন। শ্রাবন বললো,
” মেঘপরী, তুমি রিসিপশনে বসো, আমি আসছি। ”

মেঘা মাথা নাড়িয়ে গিয়ে রিসিপশনে বসলো। একটু পর শ্রাবন গাড়ি পার্ক করে এসে মেঘার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। মেঘা লজ্জামাখা মুখ করে হাতটি ধরলো। ভিতরে গিয়ে মেঘার চোখ বেধে দিলো। কিছুদূর হেটে ঘরের দরজা লাগিয়ে, মেঘার হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে গেলো। মেঘার কানে কানে বললো,
” তুমি কি প্রস্তুত মেঘপরী? ”

মেঘা মাথা নাড়ালো। শ্রাবন বললো,
” আমি যখন বলবো তখনই চোখ খুলবে কিন্তু ”

মেঘার চোখ খুলে দিয়ে, মেঘাকে চোখ খুলতে বললো। মেঘা সামনে তাকিয়ে পুরো অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কারন, শ্রাবন মেঘাকে নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়েছে। মেঘা এক ঝটকায় ঘুরে বলে উঠলো,
” মানে কি ”

শ্রাবন হেসে বললো,
” তুমি যাকে দেখতে চেয়েছিলে তাকেই দেখলে। জানি বিশ্বাস হবে না, তাই এই দেখো ”

শ্রাবন নিজের আইডি কার্ড দেখালো। মেঘা সেটা হাতে নিয়েই বুঝতে পারলো, তার স্বপ্নের পুরুষ এবং প্রিয় ব্যক্তিত্বটি হলো তার স্বামী। যেই মানুষটি একান্তই তার, এতোদিনের সেই মানুষটিকে দেখার সাধনা তার পূরন হলো। মেঘা শ্রাবনকে স্যালুট করে বললো,
” স্যালুট, স্যার। আপনার মতো কিছু মানুষ আছে বলেই আমরা নিজেদের নিরাপদ মনে করি। আমি ধন্য, আপনার মতো একজনের জীবনসঙ্গী হতে পেরে। আপনার প্রতি অনেক আগে থেকেই একরাশ সম্মান শ্রদ্ধা ছিলো, এখন আপনি আমার জীবনসঙ্গী। তাই আরও বেড়ে গেলো। আমি ধন্য শ্রাবন স্যার ”

শ্রাবন হেসে দিলো, আর বললো,
” এইযে ম্যাডাম, আপনিও কিন্তু আমারই বউ। তাই, আমার সাথে এতো ফর্মালিটি দেখাতে হবে না। আমায় স্যার না ডেকে, জামাই ডাকলেও তো পারো ”

বলেই মেঘার নাকে নাক ঘষলো, মেঘা বললো,
” জ্বী অবশ্যই, এবার চলুন বাড়ি ফিরবো। ”

শ্রাবন সম্মতি জানালো। মেঘা মনে মনে ভাবলো, এতোদিন মনে কিছুটা হলেও খারাপ লাগতো। কারন, কারো ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়লে সেই প্রেম থেকেই যায়। এতোদিন তাকে না দেখেই তার প্রেমে পড়েছিলো মেঘা। তাই অন্য কারো সাথে বিয়ে মেনে নিতে একটু হলেও কষ্ট হচ্ছিলো, তবে এখন তার পূর্ব প্রেম এবং জীবনসঙ্গী একজনই। অন্যরকম ভালোলাগায় ছেয়ে যাচ্ছে মেঘার মন। এই মানুষটা একান্তই তার, কারো অধিকার নেই এটা ভাবতেই যেনো আনন্দের সীমা নেই তার। তবে কতো বো/কা মেয়ে, এই কয়েকদিন এই মানুষটার সাথে থেকেও চিনতে পারলো না! এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ গাড়ি থামলো। মেঘা ভাবলো হয়তো বাড়িতে পৌছে গিয়েছে, কিন্তু তাকিয়ে দেখলো নাহ এটা অন্য জায়গা। শ্রাবনের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই শ্রাবন বলে উঠলো,
” বাড়িতে একটু পরে যাবো, আমার বউটা আমার কথামতো এতো মিষ্টি করে সেজেছে তাকে নিয়ে একটু না ঘুরলে কি হয় নাকি? চলো লেক পাড়ে একটু হেটে আসি ”

মেঘা মাথা নাড়িতে গেলো, শ্রাবন মেঘার হাত ধরলো। কিছুক্ষন হেটে বাদাম এবং মেঘার প্রানপ্রিয় ফুচকা খেলো। তারপর দুজনে বাড়ি ফিরলো, ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই ইফতি বলে উঠলো,
” বাহ! এতোক্ষনে ওদের আসার সময় হয়েছে ”

শ্রাবন ভ্রু কুচকে বললো,
” ইফু! পচানি শুরু করেছিস? ”

ইফতি বললো,
” আরে ইয়ার, তুই তো আমার দুলাভাই ও লাগোস। আর ভাই এবং দুলাভাই দুই সম্পর্কেই তোর সাথে মজা করার অধিকার আমার আছে। ”

শ্রাবন ও দাত বের করে বললো,
” হ্যাঁ গো শা/লা বাবু, ভাই এবং শা/লা দুই অধিকারেই তোরে আমি দৌ/ড়া/নি দিতে পারি। হে হে ”

দুজনের দুষ্টুমি দেখে মেঘা ফিক করে হেসে দিলো। ইফতি বললো,
” বোনটি, তুই আয় তো আমার সাথে। এই প/চা কুমড়ার সাথে বেশি মিশবি না, তুই ও দুষ্টু হয়ে যাবি। এই প/চা কুমড়ার সাথে তোকে বিয়ে দিবো না হুহ ”

শ্রাবন জোরে হেসে বললো,
” হাহ, এইযে বউজান। তোমার ভাইকে বলে দিও, তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েই গেছে। এমন প/চা শশার মতো কথা বললে তো হবে না। তার কপালে পাশের বাড়ির সখিনা বুড়ী ছাড়া কেউই নেই। তারপর তোমার ভাই গান গাইবে,
ও সখিনা গেছোস কিনা ভুইলা আমারে
আমি এহননননন রিশকা চালাইইই
আমি এহন রিশকা চালাই ডাহা শহরে
ও সখিনা গেছোস কিনা ”

মেঘা এই গান শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি করছে, শান্ত এতোক্ষন সব কথা শুনছিলো৷ তাই সেও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি করছে। শ্রাবন একটি শ/য়/তা/নি হাসি দিলো, ইফতি রুম স্লিপার ( ঘরে পড়ার জুতা) পড়ে ছিলো। তাই সেটি শ্রাবনের দিকে ছু/ড়ে দিলো। শ্রাবন পাশে থাকা বালিশ ছু/ড়ে দিলো। এতো বড় হয়েও দুজনের এমন বাচ্চামি দেখে মেঘা কিছুটা অবাক হলো, তবে ব্যাপারটা মজা করছে। শান্ত না থামিয়ে মেঘার পাশে বসে বললো,
” মেঘুপাখি, চকলেট এনেছি তোর জন্য। এটা খেতে খেতে বা/ন্দ/রের খেলা দেখ ”

মেঘা হেসে চকলেট নিলো। এক পর্যায়ে ইফতি ছুটে মেঘার পিছনে দাড়ালো, শ্রাবন বলে উঠলো,
” এই এই তুই আমার বউয়ের পিছনে গেলি কেনো? ”

ইফতি বললো,
” আমার একমাত্র বোন, আমি ওর পিছনে দাড়াবো সামনে দাড়াবো। তোর কি? ”

শ্রাবন ভাবলো ঠিকই বলেছে, দুজনের ছোটাছুটির পর ক্লান্ত হয়ে বসে ইফতি শ্রাবনের ঘাড়ে মাথা দিলো এবং শ্রাবন ইফতির মাথার সাথে নিজেও মাথা ঠেকালো। মেঘা ভ্রু কুচকে বললো,
” ওমাহ! এই না ছোটাছুটি করছিলে, আবার এখনই মিলে গেলে? ”

ইশা আহম্মেদ এবং শেফালী আহম্মেদ নাস্তা আনতে আনতে বললো,
” ওদের আর কি? ওরা ছোট থেকেই এমনই। এক মাসের ছোট বড় ওরা, প্রায় জমজের মতোই। তাই ওরা রোজ ওমন করেই থাকে, এতো বড় হওয়ার পরেও এমনই। ”

মেঘা হাসলো। সবাই মিলে আড্ডায় কাটালো, একটু পর সিফাত সাহেব এবং মাহিন সাহেব এসে যোগ দিলো। রাতে মেঘার একটি কল এলো, ধরতেই,

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here