#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা
পর্বঃ১৪
তেজ চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে কয়েকবার স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে কিন্তু চাঁদের কোনো হেলদোল নেই।সে এক ধ্যানে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।তেজ বুঝতে পেরেছে চাঁদ রাহার মৃত্যুর জন্য নিজেকেই দ্বায়ী করছে।এবার তেজ বেশ রেগে ই বলল,
–“চাঁদ প্লিজ নিজেকে ব্লেম দেওয়া বন্ধ কর।তুই কিছুই করিস নি আমরা জানি।এমনেতেই পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এখন আবার তুই যদি এমন বোবা সেজে থাকিস তাহলে আমাদের প্রত্যেক টা মানুষের কেমন লাগবে বল?”
–“তেজ ভাইয়া আমি মেরেছি রাহা আপুকে আমি? আপনি বিশ্বাস করেন আমি যদি জানতাম রাহা আপুকে আমি এত কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাহলে আমি কখনোই এমন করতাম না। চাঁদ কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।
তেজ ভ্রু কুঁচকে বলল,
–“এই ওয়েট ওয়েট কি বললি তুই? তুই জানলে রাহাকে কষ্ট দিতিস না, কি জানলে রে? রাহা আমাকে ভালোবাসে এতটা সেটা জানলে রাহাকে কষ্ট দিতিস না? তখন কি করতিস?রাহাকে আমার সাথে বিয়ে দিতিস নাকি? আনসার দে।
–“না না তেজ ভাইয়া আমি এমন বলতে চাই নি।”
–“থাম চাঁদ, তুই কেমন বলতে চেয়েছিস আমি ভালো করেই বুজেছি।আসলে ভুল আমারই তুই যে কখনো আমাকে ভালোবাসতে পারিস নি আজ বুঝলাম।না হয় এমন চিন্তা কখনোই মাথায় আনতে পারতিস না।”
এই বলে তেজ উঠে যেতে নিলে চাঁদ খপ করে তেজের হাতটা ধরে ফেলল আর ফুফিয়ে কেদেঁ উঠলো।কান্নার জন্য কথাও বলতে পারছে না।তেজও কান্না থামাচ্ছে না।মেয়েটা কাল থেকে এই অব্দি চুপ হয়ে থেকেছিলো।এখন কান্না করলে একটু হালকা হবে।অন্য দিকে চাঁদ কেঁদে অস্পষ্ট স্বরে বলছে,
–“আপনি যাবেন না তেজ ভাইয়া, আপনি যাবেন না। আমার ভয় লাগে তেজ ভাইয়া খুব ভয় লাগে।আমি রাহা আপুকে মিস করছি তেজ ভাইয়া। খুব বাজে ভাবে মিস করছি।আপনি বলেন আমি কখনো এমন পরোচনা দিতে পারি? আত্মহত্যার মতন বুদ্ধি আমি কখনো দিবো বলেন?তাহলে রাহা আপু মিথ্যে কেনো বলল?
–“চাঁদ শান্ত হ।আমি দেখছি আসল ঘটনা কি।রাহা এটা কেনো লিখে গেলো সেটাই বুজছি না।ওসব আমার উপর ছেড়ে দে।তুই কান্না থামিয়ে একটু খাবার খা।আমার একটু বাহিরে যেতে হবে।”
–“কোথায় যাবে তুমি?আর তুহা আপুর বিয়েটা কি হবে তেজ ভাইয়া? ”
–“বিয়েটা সপ্তাহখানেক পেছানো হয়েছে।”
চাঁদ আর কিছু জিজ্ঞেস করে নি।তেজও চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বাহিরে গেলো।ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছে চিন্তিত হয়ে। তেজ তাদের আশ্বাস দিলো।আর চাঁদের মাকে বলল চাঁদকে খাবার খাওয়াতে। তখন প্রহেলিকা বলে উঠলে,
–“আমি যাচ্ছি খাবার নিয়ে,আমি খাইয়ে আসি”।
তেজ বেশ শক্ত কন্ঠেই বলল,
–“না তোরা কেউ এখন যাবি না ওর রুমে।ওর রেষ্ট দরকার।খালামনি খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবে।”
প্রহেলিকা থতমত খেয়ে যায়। আর একটা কথা বলে না সে। চাঁদের মা মেয়ের জন্য খাবার নিয়ে যায়। আর তেজও আদিবকে নিয়ে বের হয়ে যায় রহস্যের খোঁজে।
________________
“মিস্টার তেজস্ব আবরার আপনি কি জানেন আপনার ফুফাতো বোনের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বের হয়েছে?”–পুলিশ অফিসার কথাটা বলেই প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে চাইল তেজের মুখ পানে।
তেজ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানাল।এখন তেজ আর আদিব পুলিশ স্টেশনে বসে আছে। পুলিশ অফিসার আবারও বললেন,
–” জানেন কি আপনার বোন সুইসাইড করে নি খুন হয়েছে। আর খুব নিঁখুত ভাবে তাকে খুন করা হয়েছে”।
এবার আদিবের মাথায় জেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো কিন্তু তেজ স্বাভাবিক। কারণ তেজ আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলো এমন কিছু।তেজ পুলিশ অফিসারকে প্রশ্ন করলো,
–“আচ্ছা কীভাবে খুন করা হয়েছিলো?”
–“শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। তারপর দড়িতে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ফ্যানের সাথে।”
–“আচ্ছা আমরা তাহলে এখন আসি”।
পুলিশ স্টেশন থেকে বের হয়ে গেল তেজ।আদিবও পিছে পিছে আসছে।আদিবের ধারনা মতে তেজ সবটুকু আন্দাজ করতে পেরেছে।তাই সে এত নিশ্চুপ। আদিব তেজ কে ডাক দেয়।এতক্ষণে তেজ ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়।তখন আদিব জিজ্ঞেস করে,
–“কিরে কি ভাবছিস?কী হবে এবার?বাসায় জানাবি না? আর কে খুন করেছে বলে তোর মনে হয়?”
–“আমি বুঝতে পারছি না কে খুন করবে।বাহিরের মানুষ তো তেমন ছিলো না। যা ছিলো সব রিলেটিভ।আর মনে হয় না রিলেটিভ কেউ এমন করবে।করলে বাসার মানুষই করেছে কিন্তু বাসার কেউ এমন কেনো করবে? রাহা বদরাগী কিন্তু খারাপ না।” বেশ চিন্তিত স্বরেই বলল তেজ।
তারপর দুজনের মাঝে পিনপতন নীরবতা। হঠাৎ তেজের কিছু একটা মনে হতেই গাড়ি ব্রেক কষে।হঠাৎ ব্রেক করার কারণে আদিবও সামনের দিকে বেশ খানিকটা ঝুঁকে যায়।তেজের হঠাৎ এহেন কান্ডে আদিব তেজের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে এর কারণ জানতে চাইলে তেজ একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
–“আমরা খুব সহজেই বোধহয় খুনি খোঁজে পাবো?”
–“কীভাবে?” অবাক দৃষ্টিতে বলল আদিব।
–“দেখ যেহেতু রাহাকে কেউ খুন করেছে সেহেতু ওর সুইসাইড নোটা টা নকল ছিলো।আর যে খুন করেছে সে লিখেছে।তাই আমাদের আগে সুইসাইড নোটটা দেখতে হবে তারপর সব।”
আদিবের এবার মাথায় ধরলো বুদ্ধিটা।সত্যিই তো সুইসাইড নোট দেখলেই বোঝা যাবে কে করেছে এমন।তেজ দ্রুত ড্রাইভ করে বাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছে।সুইসাইড নোটটা তেজের বাবার কাছে।আগে গিয়ে সেটাই আনতে হবে।
_______________
তেজের হাতে সুইসাইড নোট আর আদিবের হাতে একটা খাতা।সুইসাইড নোট আর খাতাটার লেখা হেন্ডরাইটিং একই রকম।তেজ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার এত কাছের একজন মানুষ এমন করেছে শুধু মাত্র চাঁদকে ফাসাঁনোর জন্য। সে কীভাবে জানাবে সবাইকে।
আদিবও বেশ অবাক হয়েছে।আদিবের ধরনার বাহিরে ছিলো এমন কিছু যে হতে পারে।এত কাছের মানুষের বিশ্বাসঘাতকতায় নিস্তব্ধ হয়ে যায় তেজ।তবে সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে।রাহার লাশ দাফন করার আগে খুনিকে জেলে ঢুকাবে।একটু পর রাহার লাশ স্টেশন থেকে পাঠানো হবে।বিকালেই দাফন হবে।
তেজ সবাইকে ড্রয়িং রুমে ডেকে বসালো।সবাই বেশ আহত হয়েছে এটা শুনে যে রাহাকে খুন করা হয়েছে।তেজ সবার মাঝেই বলে উঠলো,
–“খুন করেছে আমাদের বাসার খুব কাছের মানুষ।”
সবাই এবার বেশ চমকালো।এটা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না সবাই। চাঁদ তো কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। তেজ চাঁদকে শক্ত করে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
–“এবার যার নাম বলবো তার জন্য সবাই প্রস্তুত হও।কারণ এটা সামলে নিতে সময় লাগবে তোমাদের”
সবার কলিজাটা এবার বের হয়ে আসবে লাগছে।কে এমন আপন মানুষ যে পিঠ পিছে এমন ছুড়ি মারল। উপস্থিত সবার মাঝে একজন সবার আড়ালে নিজের ঘাম মুছছে।সে তো খুন করতে চায় নি।কিন্তু রাগে করে ফেলেছে।তেজ এর মাঝেই বলল,,
–“খুন করেছে আমাদের,,,,,,,
#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা
পর্বঃ১৫
–“বলেন না তেজ ভাইয়া কে খুন করেছে?এত ঘুরাচ্ছেন কেনো?আপনি কি বুঝতে পারছেন না সবাই ভেঙ্গে পড়েছে?প্লিজ বলেন।” কাঁপা কাঁপা গলায় বলল চাঁদ।
তেজ চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়া তাকে দাড় করিয়ে খুনির সামনে গিয়ে তার হাত ধরে টেনে সবার সামনে এনে বলে,
–“এই যে ও খুন করেছে।শুধু ও না ওর সাথে আরও একজন মিলে খুন করেছে।”
সবাই জেনো আকাশ থেকে পরেছে।এই মানুষটা খুন করেছে কেউ মানতে পারছে না। চাঁদের বাবা মহসিন সাহেব তো বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। তেজের মা জাহানারা বেগম দৌড়ে এসে তেজের হাতের হাতের মুঠে থাকা খুনির হাতটা ছাড়িয়ে তেজকে একটা সশব্দে চড় লাগিয়ে দিলো আর চিৎকার দিয়ে বলল,,
–“তুই কি বলছিস বুঝে বলছিস?প্রহেলিকা? আমাদের প্রহেলিকা খুন করেছে? অসম্ভব। কি প্রমাণ আছে তোর কাছে দেখা।কি প্রমাণ আছে?”
তেজ একটা বেদনাদায়ক হাসি দিয়ে অশ্রুশিক্ত নয়নে মাকে জড়িয়ে ধরে শান্ত হতে বলছে।তারপর তার মাকে বসিয়ে বলা শুরু করলো,,
–“তোমাদের মতন আমিও মানতে পরিনি প্রহু এমন করেছে, ইনফ্যাক্ট এখনো মানতে পারছি না।কিন্তু মানতে হবেই কারল সব প্রমাণ প্রহুর বিরুদ্ধে। রাহাকে যে বালিশ চাপা দিয়ে মারা হয়েছে সে বালিশে প্রহুর হাতের ছাপ আছে।আর যে দড়িটাই রাহা ঝুলে ছিলো সেটাতেও প্রহুর হাতের ছাপ পাওয়া গেছে।সুইসাইড নোট টাও প্রহুর লেখা।”
মহসিন সাহেব মানে প্রহেলিকার বাবা বুকে হাত দিয়ে দাড়িয়ে পরেন।নীলিমা বেগম মানে প্রহেলিকার মাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে হৃদির মা।চাঁদ অনবরত কাঁপছে তার পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে মনে হয়। সে লুটিয়ে পরবে মাটিতে।কিন্তু আহান ধরে রাখায় এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে।
তেজ প্রহেলিকার দিকে এগিয়ে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে কান্নামাখা কন্ঠে বলল,
–“কেনো এমন করলি প্রহু?তোকে তো ভালোবাসতো সবাই তুই এই কাজটা করতে পারলি?কেনো করলি এমনটা বল?”
প্রহেলিকা এবার অশ্রু মুছে বেশ হিংস্র স্বরেই বলে উঠলো,
–“হ্যাঁ হ্যাঁ আমিই করেছি এমন।আমি করেছি।আর বেশ করেছি।কেনো করেছি তোমরা জানো তোমাকে পাওয়ার জন্য তেজ ভাইয়া তোমাকে পাওয়ার জন্য। আমি ভালোবাসি তোমাকে পাগলের মতন ভালোবাসি কিন্তু তোমরা কেউ বুঝলে না কেউ।”
কান্নায় ভেঙে পড়লো প্রহেলিকা।চাঁদের পায়ের নিচের মাটি এবার সত্যিই সরে গেছে।অনেক কষ্টে সে প্রহেলিকার দিকে এগিয়ে প্রহেলিকার বাহু ধরে অবিশ্বাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধু বলল-“আপু?”
প্রহেলিকা ঝাড়া মেরে চাঁদকে ফেলে দিলো।চাঁদ পরে গিয়ে মাথা লাগলো সেন্টার টেবিলে।মাথা ফেটে রক্ত বের হয়ে গিয়েছে।আহান এবার পাগল প্রায়। তার দুবোন কলিজা ছিলো। এখন সে বোন একজন আরেকজনের শত্রু হয়ে উঠবে ভাবতেও পারে নি।আহান দৌড়ে গিয়ে প্রহেলিকার দু গালে ঠাস ঠাস করে দুটো চড় লাগিয়ে দিলো।আর তেজ চাঁদের কাছে গেলো চাঁদকে ধরার জন্য কিন্তু চাঁদ হাত দেখিয়ে তাকে থামিয়ে দিলো।এর মাঝেই প্রহেলিকা কান্না করতে করতে বসে পরলো ফ্লোরে আর বলল,,
–“তুই চাঁদ তুই সব শেষ করে দিলি আমার।তুই যদি আমার আর তেজ ভাইয়ার মাঝে না আসতি তাহলে তেজ ভাইয়া আমার হতো কিন্তু তুই সব শেষ করে দিলি।আমি পাগলের মতন ভালোবাসতাম তেজ ভাইয়াকে।সেটা বাবা মাও জানতো। তাদের আমি নিজে বলেছিলাম কিন্তু তারা একটা রাস্তার মেয়ের জন্য আমার ভালোবাসার দাম দিলো না।তোকে রান্তার মেয়ে কেনো বলেছি জানিস? কারণ তুই আমাদের কেউ না কিচ্ছু না।এই যে তোর জন্য আমার ভাই আমাকে মারলো ওর ও তুই কিছুই লাগিস না।কারণ তোর সাথে আমাদের রক্তের সম্পর্ক নেই।আমার একটা ছোট বোন হয়ে যখন মারা যায় তখন মা ভেঙে পড়েছিলো।বাবাই তখন অনাথ আশ্রম থেকে সাতদিনের চাঁদকে তুলে এনেছিলো কিন্তু দেখ এই তুই রাস্তার মেয়ের জন্য বাবা মা আমাকে কম ভালোবাসতো।আমার ভাই তোর হয়ে কথা বলতো।যখন সবাই তোকে এত ভালোবাসত তখন আমার খারাপ লাগতো তবুও নিজের বোন হিসেবেই তোকে মেনে নিয়ে ছিলাম কিন্তু তুই আমার ভালোবাসা তেজ ভাইয়ার দিকেও শেষমেষ নজর দিলি।এত লোভ তোর?”
চাঁদের মাথায় এবার আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।এ কোন সত্যি জানলো সে।এ দিনও বুঝি দেখার ছিলো।আপন মানুষ এভাবে বদলে যাবে,এতদিন যাদের নিজের বাবা মা ভেবেছিল তারা কেউ না সেটাও মানতে হবে তার।অপরদিকে মহসিন আর নীলিমা এই ভয়টাই পাচ্ছিলো। এটাই হলো।চাঁদকে সামলাবে কীভাবে সেই চিন্তায় দুজনের মাথা ঘুরে গেলো। তেজও ভয় পাচ্ছে চাঁদকে নিয়ে। এতদিন সবাই জানতো কেবল তুহা,হৃদি আর চাঁদ বাদে।আজ সবাই জেনে গেছে।
চাঁদের দম বন্ধ হয়ে আসছে।তবুও অনেক কষ্টে বলল,
–“আপু আমি রাস্তার মেয়ে,তোমার সব কিছুতেই ভাগ বসিয়েছি আমি তাহলে মৃত্যু টা আমার না হয়ে রাহার কেনো হলো?আমার জায়গায় খুনটা রাহাকে কেনো করলে?আজ কথার আঘাতে না মেরে রাহার মতন জানে মেরে দিতে।রাহা আপুকে কেনো খুন করলে আপু?”
প্রহেলিকা এবার জ্বলে উঠে বলল,
–“খুন তো আমি তোকেই করতাম কিন্তু রাহা সব জেনে গিয়েছিল আর তোকে সব জানিয়ে দিবে বলেছিল তাই ভেবেছিলাম ওকে মেরে তোকে ফাঁসিয়ে দিবো তাহলে এক কাজে দুকাজ হবে কিন্তু আমার ভাগ্য খারাপ তোকে পারলাম না তেজের জীবন থেকে সরাতে।”
তেজ এবার বাহিরে দাঁড়ানো পুলিশকে ডাক দিলো পুলিশ ভিতরে আসার পর তেজ বলল,
–“অফিসার সব তো শুনলেন এবার ওকে নিয়ে যান আর শুধু প্রহেলিকা না সাথে দাদী কেও নিয়ে যান কারণ প্রহেলিকার সাথে মিলে সেও প্রহেলিকাকে বুদ্ধি দিয়েছে।”
উপস্থিত সবাই আরও ভেঙ্গে পরেছে।কেউ প্রস্তুত ছিলো না এটার জন্য। মনোরমা বেগম মানে তেজের দাদী এতক্ষণ সোফায় চুপ করে বসেছিলো কিন্তু যখন তার নাম বলা হলো সে চমকে গেলো।তখন প্রহেলিকা অবাক স্বরে বলল,
–“তুমি কীভাবে জানলে দাদী আমার সাথে ছিলো?”
–“কারণ তুই একা এত প্ল্যান করতে পারবি না।আর ক’দিন যাবত দেখছিলাম দাদীর সাথে তুই কেমন চিপকে থাকতি। আর রাহার পা দাদী চেপে ধরেছিলো মারার সময় তখন ওনার আংটির ছাপ পড়েছে পায়ে। “তেজ তাচ্ছিল্য হেসে বলে উঠল।
রাহার মাও ভেঙে পড়েছে।শেষমেশ ওনার মেয়ের মৃত্যুর জন্য ওনার মা দ্বায়ী সেটা মানতে পারছে না।প্রহেলিকাও এবার কেঁদে বলল,
–” আমি কাউকেই মারতে চাওয়ার মতন জঘন্য চিন্তা আনিনি।কিন্তু দাদী আমার মাথায় ঢুকিয়েছিল এসব। সে বলেছিল চাঁদ মরলে আমি তেজ ভাইয়ার বউ হবো।যখন রাহা শুনে ফেলে তখন দাদীই বলেছিলেন রাহাকে না মারলে আমরা ফেঁসে যাবো তাই দাদীর কথায় ভয় পেয়ে আমি মেরে দিয়েছিলাম রাহাকে”।
উপস্থিত সবাই নির্বাক।প্রতিটা মানুষ মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে।এসব কিছু সব থেকে খারাপ প্রভাব ফেলে চাঁদের উপরে।তাই দাদি আর প্রহেলিকাকে নিয়ে যাওয়ার সময় সে খুব কষ্ট করে উঠে প্রহেলিকাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠে।তার চিৎকারে রুমের প্রত্যেক টা সদস্য কেঁদে উঠে।চাঁদ কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
–“আপু তুমি আমাকে মারতে সক্ষম হয়েছো।সব মৃত্যু ছুড়ির আঘাতে হয় না।মনের আঘাতেও হয়।আমি মরে গেছি তখনই যখন শুনেছি আমার আঠারো বসন্তের সই আমার প্রাণপ্রিয় বোন আমাকে খুন করতে চেয়েছে। আমি তখনই মরে গিয়েছি যখন শুনেছি আমার এত এত কাছের মানুষ গুলো আমার না।আমি অন্য কারো জায়গায় ভাগ বসিয়েছি।আমি মরে গেছি আপু তখনই যখন আমার আপু আমাকে দোষারোপ করেছে সব কিছুর জন্য। আমি জানতাম না তুমি তেজ ভাইয়াকে এত ভালোবাসো জানলেও কি করতাম আমি জানিনা।যতই হোক ভালোবাসার ভাগ কি আর কাউকে দেওয়া যায়? দেওয়া যায় না তো তবুও হয়তো আমার আপুকে খুশি করার জন্য হয়তো সেই ভাগটাও ছেড়ে দিতাম।একটা বার বলতে আপু আমি তোমার সুখের কাটা আমি নিজেই সড়ে যেতাম।এভাবে ছিন্নভিন্ন করে না মারলেও তো পারতে আপু।এ মৃত্যু যে বড় যন্ত্রণা দায়ক।আমি যে সইতে পরছি না।আপু ও আপু রে আমার যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে আপু।বেঁচে থাকাটা বুঝি এত অসহ্য হয় আপু?”
প্রহেলিকা কাঁদছে।চাঁদের আর্তনাদ তার ভিতরটাকেও আজ লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।রুমের প্রতিটা সদস্য কাঁদছে।তেজও কাঁদছে।আর চাঁদ দৌড়ে রুমে ঢুকে গেছে।আর দরজা আটকিয়ে চিৎকার করে বলছে,,
–“হে আল্লাহ বেঁচে থাকার স্বাধ যে আমাকে মেরে ফেলেছে আমি যে আর বাঁচতে চাই না।”
#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা
অন্তিম পর্বঃ
তীব্র ফিনাইলের গন্ধে ভিতরটা বার বার কেঁপে উঠছে আর বার বার বোধহয় জানান দিচ্ছে খারাপ কিছু হবে।তেজের মাথা ধরে আসছে।হৃদপিণ্ডটা বোধহয় স্বাভাবিকের চেয়েও জোড়ে লাফাচ্ছে।আজ হসপিটাল টাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জায়গা মনে হচ্ছে তার।কারণ তার ভালোবাসার মানুষটা শুয়ে আছে নির্লিপ্ত ভাবে এখানে।তাকে বাঁচিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে কিনা সন্দেহ হচ্ছে।হ্যাঁ চাঁদ শুয়ে আছে হসপিটালের বেডে।কোনো জ্ঞান নেই।ডাক্তার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে ওর শরীর থেকে বিষ বের করার।বাঁচবে কিনা জানা নেই কারণ নিজেকে শেষ করার সবটুকু উপায় সে ব্যবহার করেছে।চাঁদ সুইসাইড করেছে।
___________
” ফ্লাশব্যাক ”
চাঁদ দরজা লাগিয়েছে বেশ খানিকটা সময় পার হয়েছে।এতক্ষণ কান্নার আওয়াজ আসলেও এখন সব নিষ্চুপ।চাঁদের কান্নার আওয়াজ এতক্ষণ সবাইকে ছিন্নভিন্ন করে দিলেও তার নিরবতা আরো বেশি কাঁপিয়ে দিচ্ছে হৃদয়টা।হঠাৎ কিছু পরার শব্দ হলো।সবাই চাঁদের ঘরের দিকে কৌতূহল দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। তেজ কিছু একটা ভেবে ছুটে যায় চাঁদের ঘরের দিকে। তেজকে ছুটে আসতে দেখে সবাই তার পিছে পিছে আসে।তেজ দরজার সামনে এসেই পাগলের মতন অনবরত দরজা ধাক্কাচ্ছে আর হাজার আকুতি মিনতি করছে চাঁদকে দরজা খোলার জন্য। অপরপাশ থেকে আশানুরূপ ফল আসছে না বরং গোঙানির আওয়াজ আসছে।আওয়াজটা উপস্থিত সবার মনে ভয় ঢুকে গেছে।আহান আর তেজ দরজা ভাঙার ব্যবস্থা করছে।চাঁদের বাবা-মা হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।চাঁদের বাবা নিজের বুক চাপড়াতে চাপড়াতে চাঁদকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
–“মারে ও মা দরজা খোল,যা শাস্তি দিবি মাথা পেতে নিবো কিন্তু বড় কোনো শাস্তি তুই নিজেকে দিস না মা।আমার তো আম্মা নাই তুই আমার আম্মা তুই তোর ছেলেকে কষ্ট দিস না। খোল মা দরজাটা।”
ততক্ষণে তেজ আর আহান দরজা ভাঙতে সক্ষম। দরজা খোলার সাথে সাথে মনে হয় তাদের উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়লো চাঁদের নিথর শরীর টা ফ্যানের সাথে ঝুলে থাকতে দেখে। চাঁদের মা সাথে সাথে মাথা ঘুরে পড়ে গেছে।তেজ কতক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো।যখন তুহা হৃদির চিৎকারের শব্দ কানে ভেসে আসলো তখনই ছুট লাগায় নিথর দেহটারে দিকে।তাড়াতাড়ি দু’জন মিলে চাঁদকে খাটে শুয়িয়ে দেয়। হৃদির বাবা অ্যাম্বুলেন্স কল দেয়।চাঁদের মায়ের চোখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরায়।আর চাঁদের বাবা চাঁদকে জড়িয়ে ধরে আর্তনাদ করছে উপরওয়ালার দরবারে জেনো তার কলিজার টুকরাকে কেড়ে না নেয়।
হৃদির চাঁদের হাতে মুঠ করে রাখা চিঠিটা নেয়।চিঠিটা খুলে জোড়ে জোড়ে পড়া শুরু করল,
প্রিয় সবাই,,
তোমরা সবাই কি জানো তোমরা আমার কতটা প্রিয়? আমার সাথে তোমাদের রক্তের সম্পর্ক না থেকেও এতটা আপন হয়ে ছিলাম শুধু আত্মার সম্পর্কের জন্য তাই না?তোমরা আমার কেউ না, বিশ্বাস করো এটা আমি মানতে পারবো না কখনো।এই রঙিন দুনিয়ায় আমার আর কেইবা আছে বলো তোমরা ছাড়া? আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে জানো,আমি ভাবতেও পারি নি আমি আমার আপুর কষ্টের কারণ হবো।যেহেতু হয়ে গেছি এই অপরাধ আমি মাথায় নিয়ে বাঁচতে পারবো না।আব্বু আম্মু তোমাদের আমি অনেক ভালোবাসি।পরের জন্মে জেনো আমাদের রক্তের সম্পর্ক হয়।বারবার রাস্তার মেয়ে আমি সেটা শুনতে চাই না।ভাইয়া ও ভাইয়া একটা রাস্তার মেয়েকে বুঝি এত ভালোবাসা যায়? তুই কেনো এত ভালোবাসলি?এখন যে তোকে ছেড়ে যেতে আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে।তেজ ভাইয়া,, আমাকে মাফ করে দিয়েন।এজন্মে আমার আর আপনার সাথে ঘড় করা হলো না।আমাদের একটা সাজানো সংসার হলো না।আমি বেইমানী করেছি।ক্ষমা করবেন তো আমায়?আজ একটা কথা না বলে পারছি না।তেজ ভাইয়া ভালোবাসি আপনাকে অনেক।খালামনি তুহা,হৃদি,ছোট মা,খালু,ছোট বাবা সবাইকে আমি বড্ড মিস করবো গো।আমার বুকের বা’পাশে বড্ড জ্বালা করছে।তোমাদের ছেড়ে যাওয়ার যন্ত্রণাটা মৃত্যু যন্ত্রণা থেকেও কঠিন।
ইতি
অভাগীনি।
পুরো ঘর নিস্তব্ধ। কান্নার আওয়াজ আসছে না।সবাই চিঠিতে ডুবে গিয়েছিল। বাহিরে আ্যম্বুলেন্সের শব্দে সবার হুঁশ ফিরে।তাড়াতাড়ি চাঁদকে হসপিটালে আনা হয়।বর্তমানে সবাই আইসিইউ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
চাঁদের বাবা মা অনবরত কেঁদে যাচ্ছে। শুধু কাঁদছে না তেজ।সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।আইসিইউর লাইট বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে সবার কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে।দমবন্ধকর পরিস্থিতি। ডক্টর বের হয়ে এসেই বলল,
–“সরি।ওনাকে বাঁচানো সম্ভব হয় নি।সে নিজেকে বাঁচানোর কোনো রাস্তা রাখে নি।প্রথমেই হাতের রগ কেটেছে,তারপর বিষ খেয়েছে আমার ফ্যানের সাথে ঝুলেছে।কোনো ওয়ে ছিলো না তাও সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেছি আমরা।তবে ওনার একবার জ্ঞান ফিরেছিল আর বলে গেছে “পরজন্মে আমি বাবা মায়ের রক্তের সম্পর্কের সন্তান হবো,আত্মার সম্পর্কের মূল্য কেউ দেয় না।আর তেজ ভাইয়ার সাথে সংসার করার স্বাধ পরজন্মে পূরণ করবো”।
চাঁদের বাবা আম্মুরে বলে একটা বিরাট চিৎকার দিলো।সবাই কান্নায় ভেঙে পড়লো শুধু একজন বাদে সে হলো চাঁদের হতভাগা প্রেমিক, যে তার প্রেমিকাকে পাবে পাবে বলেও শেষ মেশ পেলো না।তেজের বাবা আর চাচা দৌড়ে তেজের কাছে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।কীভাবে সামলাবে এ ছেলেটাকে? তেজের বাবা তেজের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
-“আব্বা একটু কান্না করো, তোমার চাঁদ চলে গেছে বাবা”।
তেজ নির্লিপ্ত ভাবে তার আব্বুর দিকে চেয়ে বলল,
-” আব্বু কার জন্য কান্না করবো? ও বড় বেইমান আব্বু।বড্ড স্বার্থপর আব্বু।ওরে ছাড়া যে আমি থাকতে পারবো না ও জানে তবুও এমন করলো।বড্ড বেইমান চাঁদ আব্বু বড্ড বেইমান।চাঁদরা বুঝি এমনই হয় সবার ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থাকে তাই না? বড্ড ভালোবেসে ছিলাম তাই বেইমানী করলো।আব্বু গো এই বেইমানকে ছাড়া বাঁচবো কেমনে আমি? ভালোবাসি যে এই স্বার্থপর মেয়েটাকে।ও আব্বু আমি বড্ড ভালোবাসি।ও তো বাসলো না একটুও ভালো। ”
তেজ লুটিয়ে পড়লো ফ্লোরে।ডাক্তার দৌড়ে আসলো। তেজকে চ্যাক করলো। এবারও বাঁচাতে পারলো না তারা তেজকে।তেজ স্ট্রোক করেছে আর মাটিতে পড়ার কারণে সাথে সাথে শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে।
পুরো হসপিটালময় আর্তচিৎকার।মানুষ দেখতে আসছে সেই প্রেমিক প্রেমিকা যুগলকে যারা ভালোবেসেছে এক অপরকে আকাশসম।
__________________
সন্ধ্যার আজান দিয়েছে চারদিকে।চাঁদ আর তেজের জানাজা হলো একটু আগে।এমন ভর সন্ধ্যা বেলা চাঁদের সাথে তেজের সন্ধি হয়েছিলো আবার এই ভরসন্ধ্যা বেলায় দুজনের সন্ধি পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিলো।তবে স্মৃতি? সেটা থেকে যাবে আজীবন। সন্ধ্যায় সন্ধি হওয়া মানব মানবীকে সবাই স্মরণ করবে।পরেরজন্মে নাহয় আবার সন্ধি হবে তাদের।ভালোবাসা বেঁচে থাকুক দৃষ্টান্ত হয়ে।মানুষ গুলো নাহয় না-ই রইল.
#সমাপ্ত
[গল্পটার অন্তুিম পর্বটা লেখার সময় আমার কি যে খারাপ লেগেছিল সেটা আমিই জানি।তবে গল্পের প্লট আগে থেকেই ভাবা ছিলো লিখতে তো হবেই।আপনারা চাইলে তেজ আর চাঁদকে আমি আবারও আনবো নতুন ভাবে।তবে আপতত তাদের সন্ধ্যায় সন্ধি জার্নি এতটুকু।আজ তো একটু গঠনমূলক মন্তব্য করতেই পারেন😊]
চলবে,,
[