সন্ধ্যায় সন্ধি পর্ব ১০+১১+১২+১৩

#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা

পর্বঃ১০

তেজ যত্ন করে চাঁদের পায়ে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে আর আড়চোখে চাঁদের দিকে তাকাচ্ছে। এতে চাঁদের কোনো হেলদোল নেই সে উল্টোদিকে চেয়ে আছে।তখন চাঁদের পিছে তেজ ছুটে অবশেষে ধরতে সক্ষম হয়েছে।তারপর পাঁজাকোলে করে রুমে নিয়ে এসেছে।খাটে বসিয়েছে অনেক জোড় করে। চাঁদ তো এ বাসায় থাকবেই না।অবশেষে তার খালামনির কান্নাকাটিতে বসেছে।তেজের দাদী অবশ্য একবার এসেছে কিন্তু কিছু বলে নি।

চাঁদের সামনে খাবার ধরে রেখেছে তেজ কিন্তু চাঁদ মুখে নিচ্ছে না। তেজ বুঝতে পেরেছে সে বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে চাঁদকে।কিন্তু এ মেয়ের সামনে এখন কিছু প্রকাশ করা যাবে না তাহলে আরো বেশি ফুলে যাবে তাই তেজ জোড় করে চাঁদের মুখটা চেপে ধরে খাবারটা মুখের ভিতর দিলো।চাঁত হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইল অবাক দৃষ্টিতে।তেজ মুখ টিপে হাসা শুরু করলো।চাঁদ জেনো না বুঝে তাই মাথা নিচু করে রেখেছে।ভাবছে এখনই একটা বোম ফাটবে।চাঁদ নামক বোম।কিন্তু কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন চাঁদের কোনো আওয়াজ পাওয়া গেলো না সে তখন মাথা তুলে চাঁদের মুখপানে চাইলো।চাঁদের মুখ পানে চেয়ে তেজ বিষ্ময়ে হতবাক কারণ চাঁদ কাঁদছে।তেজ বেশ পেরেশানিতে পরলো।চাঁদের গাল ধরে আদুরে সুরে বলল,

–“সরি তো চাঁদ, আমি কখনোই আর এমন করবো না।আমার হঠাৎ রাগ উঠে যায়।আর যেখানে তোর কথা আসে সেখানে আরো বেশি রাগ উঠে কিন্তু আমি ইচ্ছাকৃত তোকে পায়ে আঘাতটা করি নি বিলিভ কর।”

চাঁদ এবার টলমলে চোখে তেজের দিকে তাকালো তারপর একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলল,

-“পায়ের আঘাত টা না হয় ইচ্ছাকৃত ভাবে দেন নি কিন্তু মনের আঘাতটা,সেটা তো ইচ্ছাকৃতই দিয়েছেন তেজ ভাইয়া।”

তেজ করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার আর কিই বা বলার থাকতে পারে।ভুল তো তারই ছিলো।তবুও সে আবারও কিছু বলার জন্য উদ্যত হলেই চাঁদ উঠে চলে যায়।তেজ আর আটকায় নি।দোষ যেহেতু করেছে শাস্তি তো পেতে হবে।

তেজেদের খাবার টেবিলে সবাই বসেছে সকালের খাবার খেতে।এর মাঝেই চাঁদকে তেজের রুম থেকে বের হতে দেখেই ডাক দিলো চাঁদের খালামনি জাহানারা বেগম। চাঁদ ব্যস্ততা দেখালেও খালামনি তাকে টেনে নিয়ে গেলো খালামনির রুমে।এদিকে খাবার টেবিলে বসে থাকা মনোরমা বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো তার ছেলের বউয়ের দিকে কিন্তু কিছু বলেন নি।কারণ গতকাল যখন তার ছেলে হাতজোড় করে রুম থেকে চলে যেতে বলছিলো তখন সে বেশ অপমানিত বোধ করেছিলেন। তাই ঠিক করেছেন যা করবেন আস্তে ধীরে করবেন।

অন্য দিকে জাহানারা বেগম চাঁদকে ঘরে নিয়েই চাঁদের হাত ধরে কেঁদে দিলেন। চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

–“মা আমার ছেলে ইচ্ছে করে তোকে ব্যাথা দেয় নি তবুও আমি মা হয়ে তোর কাছে ক্ষমা চাইছি তুই ক্ষমা করে দে আমার ছেলেকে আর বাসায় গিয়ে বলিস না কিছু। তোর বাবা ভাই জানলে আরো রেগে যাবে।বিয়ের ব্যাপার টা আরও ঘেঁটে যাবে।”

চাঁদ খালামনির হাতটা শক্ত করে ধরে উত্তেজিত ভাবে বলল,

–” আরে না না খালামনি তুমি ক্ষমা চাইছো কেনো।আমি কিছু বলবো না কাউকে তুমি চিন্তা করো না।আমি এখন আসি কেমন।”

এই বলে চাঁদ রুম থেকে বের হওয়ার সময় খালামনি পিছন থেকে বলে উঠলো,

–“বিয়ের ব্যাপার টা কি ভাবলি বললি না তো।”

চাঁদ উত্তর না দিয়েই তাড়া দেখিয়ে চলে গেলো।এসব কিছুই দরজার আড়াল থেকে দেখেছে তেজ।চাঁদ বেরিয়ে গেলেই রুমে প্রবেশ করলো তেজ।তেজকে দেখে জাহানারা বেগম ফ্যালফ্যাল করে কেদেঁ দিলো।তার ছেলেটা তো চাঁদকে অনেক ভালোবাসে। সেই ছোট বেলা থেকেই চাঁদকে আগলে রাখতো সব কিছু থেকে।এখন যদি একটু উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে যায় ছেলেটাকে সামলাবে কী করে এ ভাবেই কলিজাটা কেঁপে উঠছে তার।

তেজ মায়ের মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছে তাই ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে মায়ের কোলে মাথা রেখে আদুরে সুরে বলল,

–“সুইটহার্ট কী হয়েছে হ্যাঁ, কান্না কেনো করছো? তুমি কান্না করলে এই তেজের কষ্ট লাগে তুমি জানো না? একদম কান্না করো না।আর ভয় পেয়ো না চাঁদ যে সিদ্ধান্তই নিবে আমি হাসিমুখেই গ্রহণ করবো,তুসি চিন্তা করো না।”

তেজের মা ছেলের এমন আদুরে কথা শুনে আরও কেঁদে দিলো।তেজ মাকে স্বান্তনা দিয়ে রুমে চলে যায়।

___________________________

এখন প্রায় দুপুর একটা।তেজ রুমে শুয়ে আছে।হঠাৎ বাহির থেকে প্রহেলিকার কন্ঠ ভেসে আসতে শুনে তেজ ভ্রু কুঁচকে ফেললো। অজানা আতঙ্কে বুক কেঁপে উঠলো।তরিঘরি করে উঠে বাহিরে যায়। ড্রয়িং রুমে গিয়ে সে স্তম্ভিত। সবাই চুপ হয়ে গেছে তেজকে দেখে।

তেজ সবাইকেই প্রশ্ন করছে কি হয়েছে কিন্তু কেউ উত্তর দিচ্ছে না।ফলস্বরূপ তেজ রেগে যায়। রাগান্বিত স্বরেই জিঙ্গেস করে প্রহিলাকাকে,

–“কিরে প্রহেলিকা কি এমন হয়েছে যা আমাকে বলা যাবে না,তাড়াতাড়ি বল ইডিয়েট।”

তেজের ধমকে প্রহেলিকা কিছুটা কেঁপে উঠলো আর তাড়াতাড়িই বলে উঠলো,

–“আ আসলে তেজ ভাইয়া চাঁদ তোমাদের বাসা থেকে যাওয়ার পর বাবা আর ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে জেনো কি বলেছে বিয়ের ব্যাপারে।তাই বাবা বলেছে আজ একটু পর তোমাদের সাথে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে আসবে”।

প্রহেলিকা আর থামে নি।দ্রুত রুম ত্যাগ করলো।আর ড্রয়িং রুমে বসা প্রত্যেক টা সদস্য ভাবতে ব্যস্ত, বিয়েটা হবে তো?চাঁদকি তবে বিয়েটা করবে না ?
#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা

পর্বঃ১১

চাঁদ দের ড্রয়িং রুমে বসে আছে সবাই।তেজ,তেজের বাবা,চাচা,ছোট মা,মা আর চাঁদের বাবা-মা, আহান।আর চাঁদ,প্রহেলিকা,তুহা,হৃদি ওরা সবাই একটু দূরে দাড়িয়ে আছে। চাঁদ আর বাবা ভাই বাদে সবার কলিজাই দুরুদুরু কাঁপছে। তেজ কয়েকবার চাঁদের দিকে তাকিয়েছিলো কিন্তু চাঁদের মুখ বেশ কঠিন করে রেখেছে।চাঁদ মুখ দেখেই সিদ্ধান্ত বেশ আন্দাজ করা যায়। আর সিদ্ধান্ত যে বেশ সুবিধাজনক না সেটাও কিছুটা ধারনা করা যায়।

নিরবতা ভেঙ্গে চাঁদের বাবা মহসিন সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,

–” আমরা জানি ছোট বেলা থেকেই তেজ চাঁদকে পছন্দ করে।আমাদের চোখে সেটা পড়েছে।ভেবেই রেখেছিলাম বড় হলে ছেলে মেয়ে দুজনের হাত এক করে দেবো।আর সেটা বাস্তবায়নেরও চেষ্টা করা হয়েছিলো কিন্তু কাল,,

চাঁদের বাবার মুখের কথা কেড়ে নিয়েই চাঁদের খালামনি জাহানারা বেগম বললেন,

–“কিন্তু কাল এই ঘটনার জন্য সিদ্ধান্ত বদলিয়েছেন তাই না ভাইজান?আমরা আন্তরিক ভাবে সত্যিই দুঃখিত তবুও এমনটা করবেন না।জানেনই তো আমার ছেলেটা চাঁদ বলতে পাগল।”

–“হ্যাঁ আমি জানি তেজ চাঁদ বলতে পাগল।আর সত্যিই কালকের ঘটনা আমাকে খুব নাড়িয়ে দিয়ে ছিলো।কিন্তু আজ সকালে চাঁদ মা বলার পর,

খালামনি আর না শুনে উঠে চাঁদের কাছে গেলো চাঁদের হাত ধরে বলল,

–“কোনো এমন করলি আম্মু আমরা তো তোকে খুব ভালোবাসতাম।তোর খালু তো তোকে নিজের মেয়েে চোখে দেখে।তোর ছোট মা,ছোট বাবা, হৃদি তুহা সবাই কত ভালোবাসে আর তেজ ওর কথা তো জানিসই তাহলে কেনো কষ্ট দিচ্ছিস ছেলেটাকে মা।”

তেজ এতক্ষণ মাথা নিচু করে চুপ করে ছিলো এবার বেশ উঁচু আর গম্ভীর স্বরে তার মাকে ডাক দিলো-

“আম্মু যা হচ্ছে হতে দেও কারো কাছে কৈফিয়ত চাইবে না প্লিজ আর কাউকে ফোর্সও করবে না”।

তেজ এবার ঘুরে চাঁদের বাবার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে,

–” আপনি যা সিদ্ধান্ত নিবেন তাই হবে আঙ্কেল। আপনার আর আহানের যদি মনে হয় চাঁদের জন্য আমি অযোগ্য তাহলে সেটাই “।

চাঁদের বাবা মহসিন সাহেব এবার গম্ভীর আর দৃঢ় কন্ঠে বললেন,

–” তেজ তোমাকে আমি বুদ্ধিমান ভেবেছিলাম কিন্তু তুমি যে এমন ভাবতেও পারি নি”।

উপস্থিত সবাই এবার বিস্মিত হলো।তেজ আবার কি করলো।।তেজও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-“আঙ্কেল আমি কি করেছি?”

মহসিন সাহেব এবার হো হো করে হেসে দিয়ে বললেন,

–“তুমি কখনো শুনিছো কাউকে শ্বশুরকে আঙ্কেল ডাকতে? ”

এবার সবাই বিষ্ময়ের চরম পর্যায়ে। কি হচ্ছে মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সবার।তেজ কৌতূহল মেটাতে বলল-“মানে বুঝলাম না”।

এবার আহান কথা কেড়ে নিয়ে বলল,

–“না বোঝার কী আছে ভাইয়া।আর চারদিন পর আব্বুর মেয়ে তোমার স্ত্রী হবে আর স্ত্রীর আব্বুাকে তো আব্বুই ডাকতে হয় তাই না?”

এবার উপস্থিত সবার একটু একটু বোধগম্য হলো।হাসি ফুটিলো সবার মুখে।তেজের খুশিতে চাঁদের বাবাকে বললেন,

–“তাহলে বিয়েটা হচ্ছে মহসিন?”
–“হ্যাঁ বিয়েটা হচ্ছে কারণ বিয়েটা না হওয়ার কোনো কারণ নেই।কাল আমরা হয়তো রেগে গিয়েছিলাম এ জন্য আমি আর আহান দুঃখিত কিন্তু কী করবো বলেন মেয়েটা তো কলিজা কিন্তু এ জন্য বিয়েটা ভেঙ্গে দিবো এতটাও খারাপ আমি নই,আর আমি জানি তেজ চাঁদকে খুব ভালোবাসে।যেখানে আমার মেয়ের জীবন সঙ্গী ঠিক সেখানে আর কাউকে গণনা করা উচিত না কি বলো তেজ।”

–“জ্বি আব্বু”।

তেজের এমন ডাকে এবার সবাই ফিক করে হেসে দিলো।চাঁদ তো হেসে কুটি কুটি। এবার চাঁদের খালামণি চাঁদের দিকে এগিয়ে গেল চাঁদের গাল দুটো টেনে বলল,,

–“এই মেয়ে তুই তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিছিলি পাকা বুড়ি,এখন হেসে এত কুটিকুটি হতে হবে না। বড় যখন হাসছো তোমাকেও তো এগুলো ডাকতে হবে।আর কতদিন খালা খালু বলে চালিয়ে দিবে। আজ থেকে শুরু করো তেজের মতন।”

এবার ড্রয়িং রুম জুড়ে আবারো হাসির কলরব পরলো।চাঁদের খালামনি সোফায় গিয়ে বসলেন।

আবারো বিয়ের ব্যাপারে কথা শুরু হল। চাঁদ, প্রহেলিকার, তুহা, হৃদি ওদের রুমে গিয়ে বসলো। সবার মুখে হাসি ঝলমল করছে।

তেজ সোফা থেকে উঠে চাঁদের রুমের দিকে গেল। তেজকে দেখেই চাঁদ বাদে সবাই বেরিয়ে গেল। চাঁদও উঠে আসতে নিলেই তেজ দরাজার ছিটকানি আটকিয়ে দেয়।চাঁদ আর না নড়েচড়ে নিজের জায়গায় বসে পরে।কিছু বলেও এখন লাভ নেই।তাই চুপ থাকাই শ্রেয়।তেজ চাঁদের দিকে এগিয়ে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে চাঁদের মুঠ করে রাখা হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।–“এবারের মতন আমাকে ক্ষমা করে দে চাঁদ।আর কখনোই আমি এমন কিছু করবো না। ”

–“দেখেন তেজ ভাইয়া এর পরের বার যদি এমন ঘটনা রিপিট হয়,আই মিন আপনার এই রাগের কারণে যদি উল্টা পাল্টা কিছু হয় তাহলে সত্যি বলছি পস্তাবেন”।চাঁদ গম্ভীর স্বরেই বললো।

–“আর কখনোই এমন কিছু হবে না চাঁদ বিশ্বাস রাখতে পারিস। ”

–“প্রমিজ”?

–“না চাঁদ এটা পারবো না।কারণ বুজিসই রাগ আমার নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।তবে চেষ্টা করবো।রাগের সময় প্রমিজ ও মনে থাকবে না।তাই আমি চেষ্টা করবো কিন্তু প্রমিজ দিবো না সরি”।

–“হ্যাঁ হ্যাঁ জানি তো আমার থেকে আপনার কাছে আপনার রাগই বড় হুম”.চাঁদ একটা ভেংচি দিলো।

তেজ হা হা করে হেসে ফেলল।হাসি থামিয়ে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে বসল।চাঁদের বাম গালে শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে বসল।চাঁদ তো আহম্মক হয়ে তাকিয়ে আছে।তেজ জীবনেও লাগামহীন কাজ করে না।চাঁদ বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে বলেই ফেলল,

–“এই এই আপনি কী করলেন এটা?এতটা লুচু হলেন কবে থেকে?আগে তো এমন ছিলেন না।”

তেজ চোখ ছোট ছোট করে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,

–“ওহ আগে করি নি এমন?তাহলে তুই কি চাইতি আমি এমন করি আগে? বলিস নি কেন সেটা।আয় আয় আরেকটু কাছে আয়।এবার তোর ডান গালে,কপালে,নাকটাতে,ঠোঁটে চুমু খাই।

চাঁদ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে ততক্ষনে।তেজ লজ্জা পেতে দেখে আবার বলল,

–“তুই চাইলো আরে জায়গাতেও খাবো। ভেবেছিলাম সব বিয়ের পর হবে।কিন্তু তুই যেহেতু চাচ্ছিস তাহলে চল এখনই,,

তেজকে আর কিছু বলতে না দিয়ে চাঁদ তেজের মুখ চেপে ধরলো তার ডান হাত দিয়ে।তেজ এবার আরেক কাজ করে বসলো।ঠাস করে হাতটায় পর পর তিন চারটে চুমু দিয়ে বসল।চাঁদ হাত দিয়েই রেখেছে।সে বুঝে উঠতে পারে নি।ততক্ষণে তেজ দরজার কাছ অব্দি গিয়ে দুষ্টমির সুরে বলল,

–“কিরে হাত দিযে রেখেছিস যে আরো চুমু খাবি?”

তেজের কথায় চাঁদ পারছে না মাটিতে মিশে যেতে আর তেজ হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

তেজ বের হয়ে যেতেই চাঁদের ঘরে হুড়মুড় করে সব বদের হাড্ডি ঢুকেছে। হৃদি তো ঢুকেই প্রশ্ন,

–“কিরে চাঁদুজান এমন লাল নীল বাত্তির মতন জ্বলিস কেনো? খুব তো বলতি আমার ভাই খারাপ তো এখন ভাই এত ভালো কী করে হলো যে তুমি সোনা লাল হয়ে যাচ্ছো?হুমম হুমম বলো।”

–“হ্যাঁ রে কী হয়েছে বল তো, তেজ ভাইয়া ও হাসিমুখে বের হলো তুইও লাল হয়ে আছিস কি হয়েছে?” প্রহেলিকাও দুষ্টমির সুরে বলল।

–“ছি ছি আপু তুই না আমার বোন তাও বড় বোন।লাজ লজ্জা সব খেয়েছো দেখি এক একজন।” তেজ মিন মিন সুরে বললো।

সবাই জেঁকে ধরলো আর ঠাট্টার স্বরে বললো-“বাহ্ রে তোমরা করতে পারো আমরা বললেই দোষ তাই না”

চাঁদের এবার লজ্জার থার্মোমিটার ফেটে যাবে বোধহয়।সে মুখ ঢেকে বসে পরলো খাটে আর সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিলো।চাঁদ মনে মনে বিরাট গালি দিলো তেজকে।

________________________

চারদিকে বিকেল নেমেছে আকাশের বুকে। সবাই শপিং মলে দাড়িয়ে আছে তেজের অপেক্ষায়। তুহার শ্বশুর বাড়ির লোকজন ও আছে।একটু পর হাজির হলো তেজ।
#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা

পর্বঃ১২

রাত বারোটা ত্রিশ প্রায়। শপিং মল থেকে সবে মাত্র বের হলো তেজের পরিবার,চাঁদের পরিবার,তুহার শ্বশুর বাড়ির লোকজন।তিন পরিবারের শপিং একটু তো দেড়ি হবেই আর তেজও বেশ দেড়ি করে এসেছিলো তাই আরও দেড়ি হলো।

সবাই বের হয়ে যার যার মতন গাড়িতে বসে পড়েছে।আর সব মেয়েদের নিয়ে তেজ ওর গাড়িতে উঠেছে।গাড়িতে উঠার পর থেকেই হৃদি,প্রহু,তুহা আর ড্রইভিং সিটে বসে থাকা তেজ হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। আর চাঁদ ঠোঁট ফুলিয়ে মাথা নিচু করে হাত মোচড়াচ্ছে। লজ্জা পেয়েছে বেশ।কারণ একটু আগে শপিংমলে যা হয়েছে,,

ফ্লাশব্যাক,
কেনাকাটির মাঝামাঝি সময় তখন।চাঁদের বিয়ের শাড়ি কেনার সময় চাঁদ শাড়ি পছন্দ করছে সাথে তেজও ছিলো কারণ চাঁদ নিজের পছন্দের উপর ভরসা করতে পারছিলো না তাই সবাইকেই বলেছে তাকে পছন্দ করে দিতে কিন্তু সবাই তেজকে দেখিয়ে দিয়েছে তাই তেজকে বলছিলো,

–“ভাইয়া চলুন না আমাকে শাড়ি পছন্দ করে দিবেন। সবাইকে বলেছি কিন্তু সবাই আপনাকে দেখিয়ে দিয়েছে।সবাই বলছে আপনার পছন্দ ভালো।”

–“ওহ্ আচ্ছা আমার পছন্দ ভালো সবাই বলে! তুই কী বলিস?” তেজ ভ্রু কুচকে বলল।

–“আমিও বলি আপনার পছন্দ ভালো, আমাকে দেখলেই বোঝা যায়।”

–“তোরে দেখলে বোঝা যায় মানে?আমার পছন্দ ভালো সেটা তোরে দেখলে কীভাবে বুঝা যায়! ” বেশ অবাকের সুরেই বলল তেজ।

–“কেনো আপনার পছন্দ ভালো দেখেই তো আমাকে বউ বানাচ্ছেন না হয় তো রাহা শাঁকচুন্নি বউ হতো।” ভেংচি মেরে বলল চাঁদ।

তেজ চাঁদের এমন চালাকি যুক্তি শুনে হতবাক।কি চালাক মেয়ে।তেজ কিছু একটা ভেবে আবার প্রশ্ন করলো,,

–“আচ্ছা তাহলে তো তুই নিজেও পছন্দ করতে পারিস,আফ্টার – অল তোর পছন্দও তাহলে ভালো”। বেশ ভাব নিয়ে কলার টেনে বলল তেজ।

চাঁদের হাসি মুখটা চুপসে গেলো।তেজ ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছে। চাঁদ আমসির মতন মুখ করে বলল,

–“জানেন আগে আমিও মানতাম আমার পছন্দ ভালো কিন্তু যখন থেকে আপনাকে আমার সামনে দেখছি নিজের হাসবেন্ড হিসেবে তরপর থেকেই নিজের পছন্দের উপর থেকে কেমন বিশ্বাস টা উঠে গেলো।”

চাঁদের এমন কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে উঠলো। তেজ কতক্ষণ মুখ ফুলিয়ে চাঁদের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে নিজেও হেসে দিলো।এক দফা হাসাহাসির পর অবশেষে তেজ শাড়ি পছন্দ করতে গেলো। শাড়ি দেখছে একটার পর একটা হঠাৎ করেই চাঁদের চোখ দোকানের বাহিরে দাড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে যায় আর চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় অবাকে।

তেজ কতক্ষণ যাবত চাঁদকে একটা শাড়ি দেখাচ্ছে কিন্তু চাঁদের সেদিকে কোনো হুঁশ নেই।তেজ এবার চাঁদের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায় এবং দেখে চাঁদ একটা ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে।তেজ এবার চাঁদকে হাত দিয়ে ঠেলা দিলো।চাঁদ এতক্ষনে হুঁশ ফিরলো।সাথে যে তেজ বসে ছিলো সে বেমালুম ভুলে গিয়ে ছিলো।

তেজ এবার সন্দিহান দৃষ্টিতে চাঁদের তাকিয়ে বলল,

–“কে রে ছেলেটা? তুই এমন হা করে চেয়ে আছিস?”

–“না না কেউ না আসলে আমি চিনি না।”ভয়ে ভয়ে বলল চাঁদ।

–“তুই চিনিস না তো তাকিয়ে ছিলিস কেনো?”

–“কই ভাইয়া আমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম না তো আমি তো আসলে,,”

–“তুই আসলে ঐ ছেলেকেই দেখছিলি।এবার বল কাহিনী কি?”

–“আসলে, ও ভাইয়া আমি ভুলেই গেছিলাম এ ছেলেটা আমাদের ভার্সিটির পিয়ন।”

–“না তোর ভার্সিটির পিয়নকে আমার ভালো করেই চেনা আছে। বল এটা কে?”

চাঁদ এবার থতমত খেয়ে গেলো।কিন্তু আসল পরিচয় কিছুতেই দিতে পারবে না।তাই আমতা আমতা করে বলল,

–“আরে আপনি কানে কম শুনেন নাকি ভাইয়া?আমি বলেছি এই ছেলে আমার ভার্সিটির পিয়নের বন্ধু। ”

–“মশকরা করছিস আমার সাথে? পিয়নের বন্ধু এত হ্যান্ডসাম হয় নাকি। আর তোদের পিয়ন তো চাচা টাইপ এমন লোকের বন্ধু এত সুন্দর হবে।একটা থাপ্পড় দিবো।” তেজ ধমকে বলল।

–“তাহলে বোধহয় পিয়নের ছেলে হবে
আমি চিনি না ভাইয়া।” চাঁদ ভয়ে ভয়ে বলল।

তেজ এবার ছেলেটাকে হাত দিয়ে ইশারা করল সামনে আসতে আর চাঁদের তো কলিজা যায় যায়। কারণ এই ছেলেটাই তার পিছে পিছে বাড়ি অব্দি এসেছিলো।তেজ জানলে সর্বনাশ। এদিকে সবাই মুটামুটি অবাক।চাঁদ তো জমে যাচ্ছে।

ছেলেটা ওদের সামনে এসে দাঁড়াতেই তেজ চাঁদকে বলল,,

–“চাঁদ এটাই সেই ছেলে যে তোর পিছে পিছে আমাদের বাড়ি অব্দি এসেছিলো তাই না? ”

এবার তো চাঁদের জ্ঞান হারানোর উপক্রম।যা ভয় পেয়েছে সেটাই হলো।তার মানে তেজ ভাইয়া আগে থেকেই সব জানতো আর যেহেতু এতদিন কথা লুকিয়েছে আর আজ এত মিথ্যা বলেছে তার জন্য হয়তো তেজ ভাইয়া তোর গর্দান নেবে কিন্তু চাঁদে অবাক করে দিয়ে তেজ গিয়ে ছেলেটার গলা জড়িয়ে ধরলো।চাঁদ বিস্মিত, হতবাক। কি হচ্ছে? যেখানে মারপিঠ করার কথা সেখানে কোলাকুলি হচ্ছে।

পিছন থেকে তুহা বলল,,

–“কেমন আছেন আদিব ভাই?”দেশে আসলেন কবে?

–“এই তো ভালো আছি তুহা।একমাস হলো আসলাম।তুই কেমন আছিস?” আদিব হাসি মুখে উত্তর দিলো।

–“আমিও ভালো আছি।”

এভাবেই সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় হলো।সবশেষে আদিব চাঁদের দিকে এগিয়ে তেজকে প্রশ্ন করলো,

–“কিরে ভাবি তো এই নারীটা তাই না?”

তেজ হাহা করে হেসে বলল,–“হ্যাঁ এই মহিলাই,এমন ভাব করছিস জেনো চিনিসই না।”

–“চিনবো না কেনো,ওনাদের ভার্সিটি থেকে পিছে পিছে তোদের বাসা অব্দি এসেছিলাম কারণ টা অবশ্য তুই জানিস। তো না চেনার কী আছে।”

তেজ ও মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।আর চাঁদের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব।আদিব চাঁদকে জিজ্ঞেস করল,,

–“ভাবি কেমন আছেন?চিনতে পারেন নি আমায় তাই না? না চেনারই কথা। আমি আর তেজ ফ্রেন্ড আর খুব ঘনিষ্ঠ ফ্রেন্ড। একসাথেই পড়াশোনা করেছি স্কুলে তারপর কলেজ উঠার পর বিদেশ চলে যাই।তাই চেনেন নি।”

চাঁদ এবার আসল কাহিনী বুঝলো।আর সেদিন পিছে পিছে যে তার জন্য আসে নি সেটাও বুঝলো।এর মাঝেই তেজ বলে উঠল,,

–“আরে তুই ভাবির সাথে এত মিষ্টি কথা বলছিস আর তোর ভাবি তোকে পিয়ন,পিয়নের বন্ধু, পিয়নের ছেলে আরো কি কি না বানিয়ে দিচ্ছিলো।”তারপর পুরো ঘটনাটা বলল চাঁদ কি কি বলেছে.।

সবাই আবার আরেক দফা হাসলো।শুধু হৃদি বাদে।সে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিবের দিকে।

সেই থেকে এক একজন পঁচানো শুরু করলো এই গাড়িতে উঠেও হেসেই যাচ্ছে।চাঁদের এবার নিজের উপরই রাগ উঠছে।কেনো যে পাঁকামি করতে গেছিলো।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। সবাই আলোচনা করছে বিভিন্ন বিষয়ে অবশ্যই সবই বিয়ের বিষয়ে। আবার মাঝে মাঝে চাঁদকে লজ্জা দিয়ে হাহা করে হেসে উঠছে।

___________

কেটে গেছে দুটো দিন না না ব্যস্ততায়। বাসা মেহমানে গিজ গিজ।সবাই দুই বিয়ে খাওয়ার জন্য এক্সাইটেড। তুহার বিয়ের দিনেই বিয়ে হবে।আর চাঁদকে ও বাসায় ই নিয়ে যাওয়া হবে সেদিন আলোচনার ফলাফল বের হয়েছিলো এটা। এজন্য বিয়ে আমেজ টা জমে উঠেছে।একই দিনে দুইটা বিয়ে।বিয়ে অবশ্য সেন্টারে হবে।গায়ে হলুদ এক সাথে ছাদে হবে।কালই গায়ে হলুদ।সবাই খেটে মরছে।।
#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা

পর্বঃ১৩

সবাই মিলে প্ল্যান করেছে গায়ের গলুদের আগের দিন মানে আজ একটু নাচ গান করবে।সে অনুযায়ী চাঁদদের ড্রয়িং রুমে আয়োজন করা হয়েছে।এখানে সব ভাই বোন থাকবে।

চাঁদের হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে তেজ।চাঁদের হাতে সবার আগে মেহেদী দেওয়ার অধিকার নাকি তাঁর। সবাই এর জন্য বেশ হাসি তামাশা করছে।চাঁদ লজ্জায় মাথা নুইয়ে রেখেছে।আর তেজ সযত্নে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে।তেজের বন্ধুরা অনেক ইয়ার্কি দিচ্ছে তেজও কম না লজ্জা পাবে দূরের কথা নিজেও তার ডাবল ইয়ার্কি দিচ্ছে আর সবার হাসি তামাশার মাঝে চাঁদ খালি মোচড়ামুচড়ি করছে।যার কারণে মেহেদী দিতে অসুবিধা হচ্ছে,তাই এক ধমক দিয়ে বলল,

–“কী হয়েছে তোর এমন নড়ছিস কেনো?দেখছিস না মেহেদী নষ্ট হচ্ছে?একটা থাপ্পড় লাগাবো।

চাঁদ মুখ ভেংচি দিয়ে বলল,,
–“আপনাদের লাজ শরম নাই তো আমি কি করবো আমার তো লাজ শরম আছে।আর তাই তো এমন মোচড়ামুচড়ি করছি।একটু চুপ করুন। ভাতের সাথে কি শরম লজ্জাও গিলে এসেছেন?

চাঁদের এমন কথায় হাসির ঢেউ উঠে যায় সবার মাঝে।তেজও হাসতে হাসতে বলে,

–“হ্যাঁ রে খেয়ে এসেছি লাজ শরম।এবার চুপ কর মেহেদী দেই।

চাঁদ মুখ ভেংচি দিয়ে চুপ করে গেলো।সবাই হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠল।তবে চাঁদ ততটাও মজা করছে না তার আজ মনটা বড্ড কু গাইছে। চাঁদকে মনমরা থাকতে দেখে হৃদি পাশে এসে ধাক্কা দিয়ে বলল,

–“কিরে কি এত ভাবসিস?বিয়ে তো আজ নয় এত চিন্তা করছিস কিসের জন্য? ”

–“যা সর মজা ভালো লাগে না সবসময়।”

–“আরে মহারানী দেখি সিরিয়াস মুডে আছে। তা কি নিয়ে এত সিরিয়াস শুনি?”

–“জানিনা রে আজ বড্ড মনটা কু ডাকছে খারাপ কিছু হবে না তো?” চাঁদ প্রশ্নবিদ্ধ নয়নে চাইলো হৃদির দিকে।

হৃদিও বুজেছে চাঁদ বেশিই চিন্তিত। তাই সে হালকা ভাবে এক হাতে চাঁদকে জড়িয়ে বলল,

–“আরে চিল ভাবিজান চিন্তা নেহি।কিছু হবে না “।

চাঁদ ও ভরসা পেয়ে হৃদির হাতের উপর নিজের হাতটা দিয়ে হ্যাঁ বোধক ইশারা করে।

এর মাঝেই তেজের বাবা হন্তদন্ত হয়ে আসে।সবাই তেজের বাবাকে দেখে বেশ অবাক হলো কারণ এ পার্টিতে তার আসার কথা না কিন্তু জিজ্ঞেস করার পর তেজের বাবা যা বলল তা শুনে সবার মাথা ঘুরে গিয়েছে কারণ রাহা নাকি আত্মহত্যা করেছে।

সবার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছে। আজ রাহা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে না জানালে কেউ আর তেমন জোড় করে নি।কারল সবাই জানে রাহার তেজের প্রতি কিছু ফিলিংস সত্যিই আছে।এখানে থাকলে কষ্ট পাবে তার চেয়ে বরং ঘরে থাকুক কিন্তু রাহা যে এমন করবে ভাবতেও পারে নি কেউ।

______________
একটু আগে রাহার বডিটা পোস্টমর্টেম করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আর চাঁদকে নেওয়া হয়েছে জেলে কারণ রাহার হাতে একটা চিঠি পাওয়া হয়েছে সেখানে লেখা ছিলো রাহার মৃত্যুর জন্য চাঁদ দ্বায়ী। আর চাঁদই নাকি রাহাকে মৃত্যুর পরোচনা দিয়েছে।আর সেই সুবাধেই পুলিশ চাঁদকে জেলো নিয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। এই ঘটনা জানার পরই চাঁদ চুপ হয়ে যায়। যখন পুলিশ তাদের সাথে যেতে বলছিলো তখনও কোনো প্রতিবাদ করে নি।তেজ অবশ্য চিৎকার চেঁচামেচি করেছে অতঃপর চাঁদের পিছু পিছু আহান আর আদিবকে নিয়ে গিয়েছে।

পুলিশ স্টেশনে চাঁদকে খুব জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। কিন্তু চাঁদ নিশ্চুপ হয়ে আছে।জেনো এ দুনিয়ায় সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।তার কানে শুধু চিঠির দু’লাইন বাজছে।আমার মৃত্যুর জন্য তুই দায়ী চাঁদ,তেজ ভাইয়া আমার হলে হয়তো আমি বেঁচে যেতাম কিন্তু আজ তোর কারণে আমার মরতে হলো।চাঁদ নিস্তব্ধ হয়ে গেছে সে ঘটনার পর।সেদিন রাতই জেল থেকে চাঁদকে ছাড়িয়ে আনা হয়।চাঁদ কাউকে কিছু না বলে তার রুম আটকে দেয়।প্রহেলিকাও সেদিন তার সাথে ঘুমাতে পারেনি।সবাই বুঝতে পেরেছিলো চাঁদ ভেঙ্গে পড়েছে।তাই আরো ভয় পেয়ে গেছিলো,,চাঁদ খারাপ কিছু করে না বসে।তেজ সারা রাত সেদিন চাঁদের ড্রয়িং রুমে বসে কাটায়।আর একটু পর পর চাঁদের দরজা টোকা দেয়।একসময় চাঁদ নির্লিপ্ত গলায় উত্তর দেয়,

–“আমি মরবো না আমাকে একা থাকতে দেও।”

এই কথাটাই যথেষ্ট ছিলো তেজকে আরো কাবু করতে।তেজের অবস্থা এখন পাগলপ্রায়। কীভাবে সামাল দেবে চাঁদকে?

সারাটা রাত তেজ এক ধ্যানে বসে ছিলো আর কিছু হিসেব মেলাতে ব্যস্ত। তেজের জানা মতে রাহা তাকে পছন্দ করে কিন্তু এতটাও না যে আত্মহত্যা করবে।কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয় সে তো কখনোই রাহার অনুভুতি টাকে তেমন মূল্য দেয় নি তাই ওর ভালোবাসা টা বুঝতে পারে নি।

______________

সকাল দশটা।খাবার টেবিলে সকালের খাবার যেমনের টা তেমন ভাবেই পরে আছে।ঘরে অসুস্থ হয়ে পরে আছে সবার আদরের মেয়ে চাঁদ।

অনেক ডাকাডাকির পরও যখন দরজা খুলছিলো না তখন দরজা ভেঙ্গে দেখে চাঁদের অসার দেহ পরে আছে মাটিতে।প্রথমে সবাই অন্য কিছু ভাবলেও পরে দেখে না সে জ্ঞান হারিয়েছে। তেজের তো এবার দম যায় যায়।

অতিরিক্ত টেনশনের থেকে প্রেশার ফল করেছে। ডাক্তার দেখে গেছে একটু আগে।আর বলেও গেছে রোগী বেশ ট্রমার মধ্যে আছে তাই যেভাবেই হোক তাকে ট্রমা থেকে বের করতে হবে।

সকালের খাবার আর কেউ খায় নি।সবাই বসে আছে চাঁদের জ্ঞান ফেরার আশায়। আর এতকিছুর মাঝে একজনের মুখেই কেবল রহস্যময় হাসি।

একটু আগেই চাঁদের জ্ঞান ফিরেছে।সে আগের ন্যায় নিশ্চুপ।সবাই অনেক কথা বললেও চাঁদ একটা টু শব্দও করে নি।তেজ সবাইকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলেছে কারল সে একা কথা বলবে এর মাঝেই কোথা থেকে তেজের দাদী ছুটে এসে সবাই কিছু বুঝে উঠার আগে ঠাস করে চড় লাগাল চাঁদের গালে।সবাই নির্বাক কী হলো এটা।এর মাঝেই তেজের দাদী বলে উঠলেন,

–“মুখপুরী,অলক্ষী,অপয়া মেয়ে।ঘরে না ঢুকতেই আমার নাতনিটাকে খেলি।তুই মরছিস না কেন এখনো?”

দাদী আরো কিছু বলতে চাইলেও হৃদি আর তুহা জোড় করে নিয়ে যান।এই কান্ডে সবাই বেশ বিরক্ত আর আহত হোন শুধু হেলদোল নেই একজনের সেটা হলো চাঁদ।আহানও এবার বেশ রেগে যায়।রেগে গিয়েই তেজকে বলে,

–“দেখেন আপনার পরিবারে না যেতেই আমার বোনটার কী হয়ে গেলো।হাসি ছাড়া যে মেয়েটা কথা বলতো না আজ সে একটা টু শব্দও উচ্চারণ করছে না।আর তাও আপনার দাদী ওরেই দোষারোপ করছে।”

–“দাদীর হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আসলে দাদী রাহাকে বেশি ভালোবাসতো তাই আর চাঁদকেও অপছন্দ করে সব মিলিয়ে চড় টা দিয়ে ফেলেছে।আমরা আর কি করবো।দাদী বড় মানুষ।তবুও এরকম কাজ আর রিপিট হবে না আমি কথা দিলাম তোমাকে আহান।” তেজ দৃঢ় কন্ঠে বলল।

সবাই চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।সবারই মনে হচ্ছে এবার তেজকে চাঁদের সাথে আলাদা কথা বলতে দেওয়া উচিত।

চলবে,,
চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here