সবিনয়ে_নিবেদন পর্ব ৭

#সবিনয়ে নিবেদন
#পার্ট:০৭
#বিনতে মাহনূর

” রাদ ভাইয়া তুমি এখানে?”

ভাইয়া হেসে দিয়ে বললো,
“কিরে ঢুকতে দিবি না?”

“হ্যা হ্যা, আসো ভিতরে আসো।”

ভাইয়া ভিতরে ঢুকতে দরজা বন্ধ করে পিছনে ফিরে দেখি আহনাফ গম্ভীর মুখ করে দাড়িয়ে আছে।ওনাকে দেখে রাদ ভাইয়া বললো,
“কেন আছো আহনাফ?”

তিনি আমার দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
“ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?”

“ভালই। তা নূর,বিয়ে করে আমাদের ভুলে গেলি?একবার জানালি না আবার ফোনও ধরিস না।”

ভাইয়াকে কি জবাব দিব ভেবে পারছি না।তখনই আহনাফ বলে উঠলো,
“ওর ফোনটা হারিয়ে গেছে তাই ধরতে পারেনি”

আমি হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছি।কি সুন্দর করে মিথ্যা বলে দিলেন, বাহ্।আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“নাস্তা দাও”

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝিয়ে রাদ ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
“ভাইয়া আসো নাস্তা করবে।”

ভাইয়া খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে বললো,
“তোর হাতের রান্না খাই না অনেক দিন হলো।ইসস্ ক্ষুদা লেগে গেছে রে।দে দে তাড়াতাড়ি খেতে দে।”

তার কথায় হেসে দিলাম আমি।ভাইয়া সব সময় এমন করে।আমি বা তোয়ানা রান্না করলে এমনই করে।কিন্তু আমার এই হাসি আহনাফের ভালো লাগেনি তাই তো অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।আল্লাহ জানে আজ আমার কপালে কি আছে। টেবিলে কাছে যেতে যেতে বললাম আজ আমি কিছু করিনি উনি করেছে সবটা।খেয়ে বলবে কেমন হয়েছে।ভাইয়া হেসে সম্মতি জানালো।আহনাফ চোখে মুখে গম্ভিরতা নিয়ে চুপচাপ খেয়ে রুমে চলে গেলো।তার যাওয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে ছোট একটা নিশ্বাস ছাড়লাম।
“নূর এটা কি ঠিক হচ্ছে?দেখেতো মনে হয় খুব খেপে গেছে।”

“তুমি এসব ভেবো না।কাজটা শুধু ঠিক মতো করো।”

“এমনি জিজ্ঞেস করলেও তো হতো নূর, শুধু শুধু কেন ঝামেলা বাড়াচ্ছিস।এর ফল কি হতে পারে বুঝতে পারছিস?”

“তোমার কি মনে হয় আমি চেষ্টা করিনি?অনেক বার জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু কিছুই বলেনি।শুধু বলেছে সময় হলে বলবো।”

“তাহলে অপেক্ষা কর।”

“উহু,তুমি তো জানো আমার দ্বারা অপেক্ষা হবে না।”

“তোর এই সভাব যাবে না।”

“যাবে নাই তো।”

সাথে সাথে দুজন হেসে উঠলাম।খেতে খেতে কাল রাতের ভাবনায় ডুবে গেলাম।রাতে তখন হঠাৎ রাদ ভাইয়ার কথা মনে পরলো।এতো দিনে এটা বুঝে গেছিলাম আহনাফ রাদ ভাইয়ার সাথে আমাকে সহ্য করতে পারে না,জেলাস ফীল করে।তাই চট করে মাথায় একটা বুদ্ধি আসে গেলো আহনাফের কাছ থেকে সব জানার।তাই দেরি না করে আহনাফের ফোন দিয়ে রাদ ভাইয়াকে ম্যাসেজ করে সব বুঝিয়ে দিলাম,তারপর ম্যাসেজটা ডিলিট করে ফোনটা যথা স্থানে রেখে দিয়ে কাল সকলের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

দ্রুত খাওয়া শেষ করে ড্রইং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম।আসলে আহনাফের আসার অপেক্ষায় আছি।সেই যে রুমে গিয়েছে আর বের হয়নি। নিশ্চয়ই খুব রেগে গেছে।কথাটা ভেবে মনে মনে হেসে উঠলাম।আরো কিছুক্ষণ পর আহনাফকে আসতে দেখে আমি আর রাদ ভাইয়া তাকে দেখিয়ে হেসে কথা বলতে লাগলাম।
“কিছু দিন থেকে যাও ভাইয়া।আমার ভালো লাগবে,উনি সারাদিন অফিসে থাকে একা ভালো লাগে না।তুমি থাকলে দুজন ঘুরতে যাবো অনেক মজা করবো।”

ভাইয়া কিছু বলবে তার আগে আহনাফ এসে বললো,
“ও থাকবে কি করে?ওর অনেক কাজ আছে।তাই না রাদ,বলো তোমার বোনকে।”

“আরে কাজ পরেও করা যাবে,ভাইয়া তুমি কিছু দিন এখানে থাকবে।”

“না ও থাকবে না,ওর কাজ আছে।”

“আশ্চর্য!ভাইয়া কি কিছু বলছে?সব আপনিই বলছেন।”

“হ্যা আমিই বলবো।রাদ এখানে থাকবে না মনে না।”

“হ্যা রে নূর আমি থাকতে পারবো না এখনই বের হবো।”

আমি চোখের ইশারাতে না বুঝালাম,কিন্তু তাতে কাজ হলো কি না জানি না। আহনাফ বলে উঠলো,
“দেখলে বলেছিলাম,সব কিছুতে তোমার বেশি বোঝা চাই চাই।”

আমি আর কিছু না বলে মুখ মুলিয়ে বসে থাকলাম।ধুর কোনো কাজ হলো না,এতো কিছু করে লাভ কি হলো?মনটা খারাপ হয়ে গেলো।এই ভাইয়াটাও কোনো কাজের না।ভাইয়া উঠে দাড়িয়ে বললো,
“আমি এখন তাহলে উঠি নূর।”

ভাইয়ার দিকে একরাশ মন খারাপ নিয়ে তাকালাম।যখন ভাইয়াকে আসতে বলেছিলাম তখন এতো কিছু ভাবিনি কিন্তু এখন সত্যি সত্যি খুব খারাপ লাগছে।কতো দিন পর দেখা হলো আর এখনই চলে যাবে?বিদায় বেলা এতো বেদনার কেন হয়?চোখে পানি টলমল করছে যেকোন সময় বেরিয়ে আসবে তার বিপদ সংকেত দিয়ে দিয়েছে।শত চেয়েও আটকে রাখতে পারলাম না।নিঃশব্দে বেরিয়ে আসলো।ভাইয়া আমার দিকে মৃদু হেসে আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পরলো।আহনাফের দিকে একবার তাকিয়ে আমাকে বললো,
“বোকা মেয়ে কাদছিস কেন?আমি আবার আসবো। আশা করি আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।কাদিস না।যোগাযোগ রাখিস কেমন?

আমিও লক্ষ্মী মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম।আহনাফের কাছে গিয়ে ওর সামনে দাড়িয়ে বললো,
“আমার পাগলিটাকে দেখে রেখো,আসি।

আমার দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো।আর আমি ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের জল বিসর্জন দিতে লাগলাম।

আহনাফ এতক্ষণ চুপ থাকলেও আবার আর চুপ থাকলো না।আমার সামনে এসে হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে রুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।আচমকা এমন হওয়ায় কিছুই বুঝতে পারলাম না। হাতে ব্যাথা করছে তাও কিছু বলতে পারছি না।তিনি রুমে নিয়ে এক প্রকার ছুড়ে পরলো।পরতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলাম।আমি এখনো কিছু বুঝতে পারছি না,এই তো ঠিক ছিল আবার কি হলো?রুমের দরজা লাগিয়ে আমার দিকে আগাতে লাগলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here