সম্পর্কের__দেয়াল পর্ব ১৩

#সম্পর্কের__দেয়াল
#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa
#পর্ব__১৩
রিধি আর রিধির বাবা মা সবার দৃষ্টির বাহিরে চলে যায়। পাভেলের মায়ের হুস ফিরে আসে। তিনি দ্রুত পায়ে হোটেলের বাইরে এসে দেখেন রিধি বা রিধি বাবা মা কাউকে দেখা যাচ্ছে না। উনি এদিক সেদিক ভালো ভাবে খুঁজে দেখেন কারো ছায়া বিন্দু ও নাই। হঠাৎ করে দুমিনিটের মধ্যে কেউ কিভাবে গায়েব হয়ে যেতে পারে তা পাভেলের মায়ের মাথায় আসলো না। মনে পড়ছে রিধির বলা একটা কথা যা সবার কলকাকলিতে তেমন শুনতে পাওয়া যায় নি কিন্তু পাভেলের মা রিধির কাছাকাছি থাকায় তিনি শুনতে পান। রিধি বলেছিলো,

‘তাহলে আমার কপালে সুখ লেখা নেই। শেষ টা এভাবেই হলো! আজ থেকে আমি ভুলে যাবো রিমি আমার বোন। মৃত সে আমাদের কাছে! আর পাভেল? যে স্বামী স্ত্রীর বন্ধন ছিন্ন করে দিয়েছে ঠিক আছে আজ থেকে পাভেল বা রিমি কেউ না আমার বা আমাদের। সব টা আমার জীবনে একটা কালো অতীত মাত্র!’

সম্পূর্ণ কাহিনী টা সিনেমাটিক লাগছে। কিভাবে কি হলো পাভেলের মা ঠিক বুঝতে পারছেন না। কিন্তু পাভেল রিমি কে বিয়ে করেছে মানে কি? পাভেলের মা ভাবলেন যা করার বাসায় গিয়েই করবেন এখানে নয়। পাভেল কে শিক্ষা দিবেন আসল হীরা তো রিধি ছিলো রিমি নয়। আর রিমি কে ঘর থেকে বের করে দিবেন। এমন মেয়ে কে ছেলের বউ হিসেবে মানতে তিনি পারবেন না কখনো না!পাভেল আর রিধির এই ডিভোর্স পেপার তিনি মানেন না সব ভুয়া। তাই তিনি নিজেকে শক্ত ও কঠোর থেকে ভেঙ্গে তুলোর মতো নরম হয়ে গিয়ে পাভেল আর রিমির কাছে যেতে পা বাড়ান!

এদিকে পাভেলের মা ও চলে যাওয়ায় পাভেল আর রিমি জীতে গেছে ভেবে খুশি তে ফেটে পড়ে একজন আরেক জন কে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ইয়েসসসস আমরা জীতে গেছি!’

‘হু পাভেল লাভ ইউ! লাভ ইউ এ্যা লট!’

‘সেইম টু ইউ সুইটহার্ট!’

‘উফ বুঝলে এতোদিন পর আমার নিজেকে হালকা হালকা লাগছে। এতো দিন কি মনে হয়েছে জানো?’

‘কি?’

‘মাথার উপর ইয়া ভারী ওজনের একটা ঝামেলা নিয়ে ছিলাম এখন সেটা আর নাই!’

‘ঠিক বলেছো আমাদের জীবনে রিধি নামক সবচেয়ে বড় ঝামেলা টাই তো আর নেই এখন সব কিছু ঠিক ঠাক। জীবন থেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছি ওকে। এখন শুধু আমি আর তুমি ছাড়া তৃতীয় কেউ ই নেই আমাদের মাঝে! তাই তো এতো ইজি ফিল হচ্ছে!’

পাভেল আর রিমির কথার মাঝখানে পাভেলের মা উপস্থিত হলে দুজন দু দিকে ছিটকে পড়ে। রিমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে পাভেল বললো,

‘মা আমি জানি তুমি কি বলবে…

পাভেলের মা জোড় পূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললেন,

‘না আমি কিছু বলবো না। আমার এখানে ভালো লাগছে না বাসায় চল পাভেল!’

‘মা বাসায় তো যাবো কিন্তু তুমি তো বললে না রিমি কে আমার বউ হিসেবে মানো কিনা?’

পাভেলের মা রিমির দিকে তাকালো রাগ তার মাথায় উঠে যায়।

‘যা হয়ে গেছে তা নিয়ে আর কি বলবো? তুই যখন রিমি কেই চাস আর রিধি কে ডিভোর্স ও দিয়ে দিয়েছিস আমার আর কিছু বলার নাই বাবা! এখন বাসায় যাওয়ার ব্যবস্থা কর আগে!’

পাভেল তো আরো বেশি খুশি হয়ে যায়।

‘থ্যাঙ্ক ইউ মা!’

রিমি ও মাথা ওড়না দিয়ে পাভেলের মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করে। রিমি এতো সব কিছু কিভাবে ভুলে গিয়ে দিব্যি হাসছে তা পাভেলের মা বুঝতে পারছেন না। তবে এটা ঠিকই বুঝতে পেরেছেন এই রিমি আর যাই হোক না কেন কোনো মানুষ তো নয়। এ স্রেফ জানোয়ার ই। নাহলে যারা তাকে খাইয়ে পড়িয়ে কোলে পিঠে করে মানুষ করলো তাদের কেই আজ পর করে দিলো জাস্ট পাভেলের জন্য! জানোয়ার ছাড়া এমন পাষাণ হৃদয়ের মানুষ কেউ হতে পারে না।

————————–
রিধি আর রিধির বাবা মা বাড়ি ফিরে আসে। কারো পেটে এক ফোঁটা দানা পানি ও যায় নি। রিধি সেই বিকেল বেলা থেকে কেঁদেই যাচ্ছে। ঘটে যাওয়া সব ঘটনা চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে।এও ভেসে উঠছে পাভেল কিভাবে রিমির সাইড নিয়ে কথা বললো। আর কিভাবে পাভেল তার সাথে চিটিং করে ডিভোর্স করিয়ে নিলো। একজন রিধি কে ঠকিয়েছে আর একজন বেঈমানি করেছে কষ্ট পাচ্ছে রিধি আর হাসছে বেঈমান আর ঠকবাজ রা! আজব না? রিধির মা আসেন রিধি উনাকে জাপটে ধরে পাগলের মতো কাঁদতে থাকে আর বলতে থাকে,

‘মা এসব কি হয়ে গেলো মা? এসব কেন হলো মা! আল্লাহ কেন আমার থেকে সব কেড়ে নিয়ে আমাকে এভাবে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিলেন কেন মা? আমার কোন পাপের শাস্তি আমি পাচ্ছি বলতে পারবেন?’

মেয়ের কান্নায় মা ও ভেঙ্গে পড়ে কাঁদতে থাকেন। এতো কষ্ট হচ্ছে যে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। এতো সুন্দর হাসি খুশি মেয়ে টা কে একটা লম্পটের হাতে তুলে দিয়ে সুখ কেড়ে নিয়ে কতো বড় ভুল তারা করেছেন আজ বুঝতে পারছেন। মেয়ে কে ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে গিয়ে হাসি খুশি টাই কেড়ে নিলেন! নিজেদের মস্ত বড় ভুল টা আজ তাদের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে হাসছে। রিধির মা রিধির মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা সরূপ বললো,

‘নিজেকে সামলা রিধি এভাবে ভেঙ্গে পড়লে হবে না। তুই এতো দুর্বল না তা কেন ভুলে যাচ্ছিস তুই?’

‘কিভাবে নিজেকে সামলাবো মা ওরা আমার থেকে সব কিছু ছিনিয়ে নিয়েছে! আমার সন্তান আমার সুখ সব! সব কিছু!’

‘আজ তুই কাঁদছিস ওরা হাসছে কাল ওরা কাঁদবে তুই হাসবি!’

রিধি তাও ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে!

‘রিধি আমরা যেটা বুঝতে পেরেছি সেটা তুই এখনো বুঝতে পারিস নি। পাভেল তোর যোগ্য ই না। আমরা তোর অযোগ্য একজন ছেলের কাছে তোকে বিয়ে দিয়ে বড় ভুল করেছে মাফ করে দিস তুই আমাদের!’

‘মা…

‘আমি ঠিক ই বলছি। পাভেলের মতো কুকুর তোকে পাওয়ার যোগ্য না। যোগ্যতা থেকে বেশি কিছু পেলে মানুষ সত্যিই পশুর মতো হয়ে যায় প্রমানিত! তোর জীবনে এই দুঃখ থাকবে না এমন কেউ আসবে যে তোকে খুব সুখে রাখবে দেখিস! শুধু এই খারাপ সময় টা তে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখ!’

‘কিন্তু ওদের কৃতকর্মের ফল তো ওদের ভোগ করতেই হবে!’ ক্ষুব্ধ দৃষ্টি নিয়ে বললো রিধি!

‘তোর কি মনে হয় ওরা তোর সাথে এমন অন্যায় অবিচার করে পার পেয়ে যাবে? কখনো না! সময় টা হোক ওদের শাস্তি টা তুই নিজের চোখেই দেখবি আর হাসবি!’

‘আমি ফ্রেশ হবো মা!’

রিধি ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। আয়নায় একবার নিজের চেহারা টা দেখে নেয়। কেমন শুকিয়ে আছে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে রিধি তার নিচে বসে পড়লো। আর কাঁদলো না সে তবে একটা ডিশিসন সে নিয়ে নেয়। এখানে এই শহরে তারা আর থাকবে না! না হলে কিছু চিরচেনা স্মৃতি আর ক্ষত বার বার আঘাত করবে নিজেদের! রিধি তার বাবা মা কে এই কথাটা জানাবে বলে মনস্থির করলো!

———————-

পাভেল রিমি আর পাভেলের মা ও সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আসেন।জ্যামে পড়ার কারণে ৫ ঘন্টা লেগেছে তাদের আসতে। পাভেলের মা যেনো হাঁপিয়ে উঠেছেন বারবার রিধির অসহায় মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে একবার রিধি কে দেখতে উনার মন কেমন করছে। পারছেন না উড়ে চলে যেতেন। মন কে আর বেঁধে রাখতে পারলেন না তিনি! রিধিদের বাসায় যাওয়ার জন্য এই সন্ধ্যায় ই রওনা দিবেন ভাবলেন যেই সিড়ি বেয়ে নিচে আসলো ওমনি উনার মাথা টা কেমন ঝিম মেরে আসে আর তিনি সঙ্গে সঙ্গেই মাথা ঘুরে পড়ে যান……!

চলবে________________

পাভেল আর রিমির শাস্থি টা রিধি স্বচক্ষে দেখবে এর জন্য রিডার্সগনদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here