#সম্পর্কের__দেয়াল
#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa
#পর্ব__১৪
হঠাৎ করে মাথা ঝিম মেরে উঠায় পাভেলের মা মাথায় হাত দিয়ে সেখানেই মাথা ঘুরে পড়ে যায়। পাভেল সেটা দেখতে পেয়ে দৌড়ে নিচে এসে দেখে তার মা বেহুঁশ হয়ে গেছে।
‘রিমি? কোথায় তুমি তাড়াতাড়ি এদিকে আসো! মা এখানে অজ্ঞান হয়ে গেছে!’
পাভেল ডাকছে শুনে রিমি ও তাড়াহুড়ো করে নিচে আসতে গিয়ে সিড়ি থেকে পা আচমকা হোচট করে নিজেই পড়ে যায়। পাভেল বুঝতে পারছে না মা কে দেখবে নাকি রিমি কে! পাভেল এবার দৌড়ে রিমির কাছে গেলো। পায়ে ভালো ভাবেই ব্যাথা পেয়েছে রিমি। ফলে ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে। মনে হচ্ছে পা টা ভেঙ্গেই গেলো।
‘রিমি ব্যাথা পেয়েছো?’
‘হুম মনে হচ্ছে পা টা ভেঙ্গেই গেছে! আল্লাহ গো….’
‘কি বলো এসব রিমি? দেখি আমাকে ধরে দাঁড়াও তো’
রিমি পাভেলের কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়াতে নেয় আবার নিচে পড়ে যায়। ব্যথায় ‘মা..’ বলে ছোট করে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে। পাভেলের অবস্থা নাজেহাল। বউ কে সামলাবে নাকি মা কে! বেচারার মুখভঙ্গি দেখার মতো হয়েছে। আর কোনো উপায় না পেয়ে পাভেল রিমি কে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে যায়। বিছানায় শুইয়ে দেয়।
‘তুমি এখানে থাকো আমি মা কে দেখছি!’
‘মার কি হয়েছে?’
‘জানিনা মা হঠাৎ করে বেহুঁশ হয়ে গেছে আমি দেখছি তুমি এখানে থাকো!’
পাভেল তার মায়ের কাছে এসে দেখে তিনি এখনো ফ্লোরে পড়ে আছেন। ছেলেদের বিয়ের পরের জীবনে কোনো এক অনাকাঙ্ক্ষিত মুহুর্তে একটা প্রশ্ন সামনে চলে আসে! তোমার কাছে মা বড় নাকি বউ? মনে হচ্ছে পাভেলের জীবনে আজ সেই মুহুর্ত টা এসেই ছিলো। আর পাভেলের উত্তর ছিলো তার কাছে বউ বড়! মা নয়! হায়রে সন্তান! যে মা ১০ মাস ১০ দিন পেটে ধারণ করে বড় করেছে আজ সেই মায়ের ছেলে হয়ে উনাকেই অবমাননা! উপরওয়ালা সইবেন না!
পাভেল এবার তার মা কে কোলে উঠানোর চেষ্টা করলো একজন এ সম্ভব হচ্ছে না তাও বহু কষ্টে সোফায় শুইয়ে দিতে সক্ষম হয়। চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই পাভেলের মা চোখ খুললো।
ওদিকে রিমি এক পৈশাচিক হাসি হাসছে। সত্যি তো এটাই সে পায়ে অতোটা ব্যথা পায় নি। যা পেয়েছে অতি সামান্য, গভীর কিছু নয়।অন্তত হাটতে সে পারতো কিন্তু পাভেল কি করে তা দেখতে এই এক্টিং টা সে করেছে। আর জয় আবার ও তার ই। রিমি বুঝতে পারলো পাভেল তাকে ভালোবাসে। শুধু ভালোবাসা নয় অন্ধের মতোই। তার কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ রিমি তার মা ও নয়। রিমি সারপ্রাইজ’ড হয়ে গেছে জেনো। তার খুশি যেনো আর ধরে না। এতো টাই খুশি লাগছে যে বিছানা থেকে নেমে সে মনের আনন্দে নাচ করা শুরু করেছে। আর গুন গুন করে গান ধরেছে, ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!’
পাভেলের মা চোখ খুলে প্রথমে সব কিছু ঝাপসা দেখছিলো। চোখ মুখ মুছে দেখলো পাভেল তার পাশেই বসা। মাথা টা এখনো কেমন করছে।
‘পাভেল?’
‘মা জ্ঞান ফিরেছে তোমার? কি হলো হঠাৎ করে অজ্ঞান কি করে হতে গেলে তুমি?’
পাভেলের মা মুখ ফসকে বলে ফেললেন,
‘অতিরিক্ত টেনশন আর দুশ্চিন্তা থেকেই হয়তো!’
পাভেল চোখ কুঁচকে মায়ের দিকে তাকায়,
‘অহহো মা কেন এতো টেনশন করছো তুমি? রিমি রিধির থেকে ও অনেক ভালো সত্যি বলছি। তুমি অযথাই টেনশন করছো!’
তিনি পাভেলের কথা শুনে চুপ থাকলেন। ভেতরের ক্ষয়ে যাওয়া হৃদয়ের ক্ষত কিভাবে বুঝবেন পাভেল কে যে রিধির মতো রিমি কখনোই হতে পারবে না। আর রিমি কে তো তিনি মানবেন ই না। রিধি ই সব রিমি কিছু না। আর যাই হোক একটা চরিত্রহীন মেয়ে কে ছেলের বউ বলে মেনে নেওয়া যায় না।
পাভেল তার মা কে চুপ থাকতে দেখে বললো,
‘মা এদিকে তাকাও! আমার কথা টা শোনো!’
ছেলের দিকে তাকালেন তিনি! পাভেল ফের বললো,
‘তোমার কাছে আমার সুখ বড় তাই না? তুমি তো চাও নিশ্চয় আমার সুখি আর হাসি খুশি থাকি। তাহলে রিমি কে মেনে নাও। রিমি কে আমি ভালোবাসি আমি রিমির সাথেই আমি হাসি খুশি আর ভালো থাকবো যা রিধির সাথে একেবারেই নয়। কারণ আমি রিধি কে ভালোবাসি না। প্লিজ মা বোঝো একটু!’
‘তুই রিধি কে কেন বিয়ে করেছিলি তাহলে পাভেল?’
এবার পাভেলের মা রেগে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কথা টা বললেন। পাভেল তার মায়ের এই প্রশ্নের জবাবে ঠিক কোন উত্তর টা দিবে ভাবতে থাকলো। অন্যদিকে তাদের সকল কথা উপর থেকে কান খাড়া করে শুনছে রিমি।
‘কি হলো চুপ করে আছিস কেন এখন?’
‘মা ওই আসলে ওই টা মিসটেক ছিলো!’
‘কিসের মিসটেক পাভেল? তুই আর রিমি তোরা দুজন মিলে রিধির জীবন নিয়ে এভাবে খেলতে পারলি? রিধি কি দোষ করেছিলো আর তোর সন্তান? ওকেও মেরে দিয়েছিস? ভাবতে পারিস তুই কতোটা পাষাণ! তোর কাছে তোর সন্তানের কোনো মূল্য ছিলো না তুই তাকে স্বার্থপরের মতো মেরে দিয়েছিস এখন তো আমার মনে হচ্ছে আমি ও তোর কাছে সেইফ না। যে কোনো সময় তুই তো আমাকে ও মেরে ফেলতে দুবার ভাববি না পাভেল?’
পাভেল মায়ের কথায় গুলো শুনে চুপসে গেলো। নিজের মা কে নিজেই মেরে ফেলার মতো দুঃসাহস তার কখনো হয় নি। ভাবনায় ও ছিলো না এমন কিছু। পাভেল আঁতকে উঠলো,
‘মা তুমি এসব কি বলছো?’
‘আমি যা বলেছি একদম ঠিক বলেছি!’
‘না মা এইসব আর কখনো বলো না প্লিজ। আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে। রিধির সাথে কাজ টা আমি ঠিক করিনি কিন্তু আমার সন্তান ওকে তো আমি মারিনি মা!’
‘তুই না মারলে কে মেরেছে তোর বউ রিমি?’
রিমি উপর থেকে সব খুব ভালো করে শুনছে আর সামনে তার সাথে কি কি করবে পাভেলের মা সেটা নিয়ে আগে থেকেই ভাবতে শুরু করে দিয়েছে অলরেডি। তবে এবার তার কথায় উঠায় পাভেল কি জবাব দেয় তা জানতে বেশ উৎসুক রিমি!
‘না মা আমি বা রিমি কেউ ই এই কাজ টা করিনি!’
‘তাহলে কে করেছে? রিধির তো সব ঠিক ছিলো তাহলে হঠাৎ করে বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে কি করে আমাকে বল তুই?’
‘মা যা হয় ভালোর জন্য হয় জানো না। আমরা কেউ ই মারিনি। প্রকৃতি ই এটা করেছে হয়ছো কারণ তিনি ও হয়তো চাচ্ছিলেন না আমি রিধির সাথে থাকি। প্রকৃতি চাইছিলেন আমি আর রিমি এক হই আর সুখে থাকি!’
‘নিজেদের দোষ প্রকৃতির উপর চাপিয়ে দিচ্ছিস? প্রকৃতি এই ঘোর মিথ্যা অপবাদ সইবেন না কিন্তু পাভেল!’
‘মা বিশ্বাস করো আমি সত্যি বলছি!’
ছেলের সাথে কথা কাটাকাটি তে না পেরে পাভেলের মা কষ্ট করে উঠে দাঁড়ান। একটু আগেই মনে হচ্ছিলো শরীরে শক্তি নেই এখন মনে হচ্ছে পুনরায় তিনি শক্তি ফিরে ফেলেন। পাভেলের সাথে আর এক বিন্দু ও কথা বলার ইচ্ছা নেই তাই হয়তো শক্তি আপনাআপনি চলে এসেছে।
‘তোর যা ইচ্ছে তাই কর আমাকে বলতে আসিস না!’
পাভেলের মা কে আসতে দেখে রিমি দৌড়ে রুমে গিয়ে শুয়ে থাকে। পাভেলের মা তার রুমে চলে যায়। পাভেল মাথায় হাত দিতে বসে নিরুপায়ের ন্যায় বসে আছে।
রিমি এতো টুকু বুঝতে পেরেছে পাভেলের মায়ের মন গলাতে হবে। মহিলা অতোটা সুবিধার নয় তাই তেল মেরে একটু দেখতে হবে। কিন্তু এখন তো তার আবার এক্টিং শুরু করার কথা ছিলো কিন্তু তা আর হলো না। রান্না করতে যেতে হবে। তাই রিমি নিজেই নিচে যায়। পাভেল রিমি কে আসতে দেখে চোখ বড় বড় একবার রিমির বাম পায়ের দিকে তাকালো। রিমি পাভেলের তাকানো দেখে হেসে বললো,
‘একটু তেল মালিশ করে দিয়েছে ব্যথা সেরে গেছে!’
পাভেল স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো,
‘থ্যাঙ্ক গড। আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!’
‘ধুর বোকা! আমি একদম ঠিক আছি!’
—————————-
ড্রয়িংরুমে রিধি আর তার বাবা মা বসা। রিধি ব্যতিত সকলের চেহারায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। রিধির মা হঠাৎ বললো,
‘রিধি তুই না কি বলতে চেয়েছিলি?’
‘হুম।’
‘তো এখন বল কি বলবি!’
‘মা আমরা এই শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবো!’
রিধির বাবা মা চমকালেন না একটু ও। কারণ তারা ও এরকম কিছু একটা ভেবে রেঝেছিলেন।
‘এখানে থাকলে পাড়া প্রতিবেশী সবাই অনেক বাজে কথা বলবে আমাদের উস্কানি দেবে। জানেন তো গোপন কথা বাতাসের আগে ছড়ায়। রিমির কথা ও ছড়াতে দেরি হবে না। তখন এই পরিবেশে এখানে আমরা ভালো ভাবে বেঁচে থাকতে পারবো না। সবাই আমাকে বলবে কিরে নিজের স্বামী কে খুইয়ে বোন কে দিয়ে এসেছিস! ইত্যাদি আরো নানান কিছু। তার চেয়ে বরং আমরা দূরে কোথাও চলে যাই। সেখানে আর যাই হোক একটু শান্তিতে নিশ্বাস তো নিতে পারবো!’
‘ঠিক বলেছিস। আমরাও ভাবছিলাম!’
অবশেষে রিধি আর রিধির বাবা মা কথা বলে ঠিক করলো তারা সকালেই অন্যত্র চলে যাবেন। আজ রাতেই সব গুছিয়ে নিতে বলা হলো। কথা মতো সব কিছু গুছিয়ে ও নেয় রিধি! এই বিষাক্ত শহর আর কিছু মুখোশধারী মানুষ কে রাজত্ব করতে দিয়ে তারা ই বিদায় নেবে। তবে রাজত্ব খুব বেশিদিন টিকতে দিবে না। তাদের শেষ অবসান ঘটাবে হয়তো রিধি নয়তো প্রকৃতি…..!
চলবে_________________
রি-চেইক করা হয় নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!