#সম্পর্কের__দেয়াল
#তৃতীয়__পর্ব
|#Writer_Anahita_Ayat|
এ যেনো মাথার উপর আকাশ টাই ভেঙ্গে পড়লো কারণ রিধি মা হতে চলেছে। ঠিক এই খবর টা শোনার পর তার খুশির জোয়ার ভেঙ্গে যাওয়ার কথা ছিলো। রিধি কল্পনা করেছিলো কথাটা সরাসরি পাভেল কে সে বলবে না। বলবে,
‘অফিস থেকে আসার সময় এক জোড়া জুতো নিয়ে আসবা। যাতে পু পু শব্দ করবে!’ ব্যাস আর কিছু বলা লাগবে না পাভেল বড় বড় চোখ করে তার দিকে তাকাবে। আর খুশিতে রিধি কে কোলে নিয়ে বলবে,
‘রিধি এ কি বললে তুমি আমায়?’
আরো কতো কি কিন্তু হলো তার উল্টো টা। সত্যি ই মানুষ কল্পনায় বেশি সুখী, বাস্তবে নয়। মানুষ ভাবে এক হয় আরেক। প্রকৃতি নিজের মতো করেই সব কিছু করতে ভালোবাসেন। হয়তো বা প্রকৃতি কারো প্রতি অতিরিক্ত বিশ্বাস ভালোবাসা আর সুখ এই জিনিস গুলো কখনো ‘বেশি’ পছন্দ করেন না! যথাযথ তেই ঠিক আছে অতিরিক্ত কোনো কিছুই মোটেও ভালো নয়। কয়েক দিন আগে প্রেগন্যান্সির টেস্ট করতে গিয়েছিলো রিধি। যা আজকে এতো সব কাহিনী দেখার পর বেমালুম ভুলে ছিলো। রিধির পরিচিতি একজন ডাক্তার মায়ার কাছেই সে গিয়েছিলো। মায়া ই রিধি কে খবর টা দিয়েছে। ফোন কাটার আগে তিনি হেসে হেসে বললেন,
‘রিধি পাভেল কে বলো মিষ্টি পাঠিয়ে দিতে! আমার আবার ডায়বেটিস নেই জব্বর খাওয়া যাবে বুঝলা হাহাহা!’
মায়ার কথায় রিধি স্মিত হাসলো শুধু। মুখ টা শুকিয়ে মলিন হয়ে গেছে। নিজের ডান হাত টা অজান্তেই পেটে চলে গেলো। আজ থেকে সে আর একা নয় তার ভেতরে বেড়ে উঠছে আরো একটা ছোট্ট প্রাণ। রিধি শখের বসে নাম ও ঠিক করে রেখেছিলো। রিধির ‘রি’ আর পাভেল এর ‘পা’ =রিপা। সব কিছু কেমন যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে। রিধি নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকে,
‘আচ্ছা আমি কি পাভেল কে কম ভালোবেসেছিলাম? ওকে ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি ছিলো আমার? নাকি তুমি আমাকে কখনোই ভালোবাসো নি! শুধু ব্যবহার করছো? পুরুষ মানুষ শুধুই মেয়েদের কে চাহিদা পূরণের জন্য ব্যবহার করে? না না পুরুষ তো আমার বাবা ও। পার্থক্য হলো আমার বাবা বীরপুরুষ আর পাভেল একটা কাপুরুষ। এ কেমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেললে তুমি আমাকে পাভেল! না পারছি তোমার ঐ নোংরা কাজ কে মানতে না পারবো এই ছোট্ট প্রাণ কে হেসে গ্রহণ করতে! কি করবো আমি বলতে পারো?’ মনে মন
—————–
হঠাৎ করে এই রাতের মধ্যেই কেন মা আসছে এই বিষয় টা খটকা লাগছে রিমির। তার উপর সমস্যা ও হয়ে যাবে। যতদিন মা থাকবে পাভেলের কাছে ও ঘেঁষা যাবে না। কোনো ভাবে যদি এসব দেখে বা জানতে পারে তাহলে নির্ঘাত তাকে কেটে ফেলবে এটা নিশ্চিত রিমি।
‘ঐ বুড়ি টা কেন যে আসছে বুঝি না! কখনো আমার ভালো চায় নি। হাহ চাইনেই বা কেন আমি তো ঐ বুড়ির কেউ নই! উচ্চবিত্ত পরিবার আর ছেলে সুদর্শন দেখে পাভেলের কাছে বিয়ে দিয়েছে রিধি কে অথচ এটা রিধি ডিজার্ব ই করে না। আমি রিধির থেকে দেখতে হাজার গুন সুন্দর এটা আমার প্রাপ্য ছিলো কিন্তু উনি অন্যায় বিচার করেছেন। আমি ও যা আপোসে পাবো না তা কেড়ে নিবো। হোক না জোড় করে! তাতে কি!’ মনে মনে
পাভেল কে পছন্দ করেছিলো রিমি। রিধির সাথে বিয়ে টা আটকাতে বহু চেষ্টা করেও সে সফল হয়নি। সৌভাগ্য কি দুর্ভাগ্য জানিনা বিয়ে টা হয়েই যাই। রিমির তখন মায়ের উপর প্রচন্ড ক্ষোভ। পুরোনো সব কিছু খুঁজতে গিয়ে জানতে পারে রিমি তাদের মেয়ে ই না। রিমি পরিচয়হীন। তখন রিমির অন্য মানুষ হয়ে যায়। ভুলে যায় সাধারণ জ্ঞান ও। অথচ রিধির বাবা মায়ের ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিলো না রিমির জন্য।
রিমি মনে মনে এসব বিড়বিড় করছিলো এমন সময় পাভেল ওর রুমে ঢুকে পড়ে।
‘কি ব্যাপার সুন্দরী কি ভাবছো?’
‘ঐ বুড়ি টা আসছে!’
‘কে?’
‘আ্ ম্ মানে আম্মু আসছে!’
‘কিহ…. কখন?’
‘এখন ই। ছাড়ো প্লিজ কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে!’
‘আচ্ছা ছেড়ে দিলাম’
‘তুমি রিধি কে কবে ডিভোর্স দিবা বলতো?’
‘সঠিক সময় আর সুযোগের অপেক্ষায় ই তো আছি মেরি জানেমান!’
রিমি পৈশাচিক হাসি হাসলো। রাত ৯ টায় কলিংবেল বেজে উঠল। পাভেলের মা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দুই বেয়ান ভালো মন্দ কথা বার্তা বলে। রিধি মা কে দেখে জোড় পূর্বক স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে।
‘এতোক্ষণ দেরি করলে কেন মা?’
‘রওনা দিয়ে একটু দেরি হয়ে গেছিলো। তোদের দেখতে মন ছুটেছে তাই চলে এলাম।’
পাভেলের মা হেসে বললো,
‘ভালো একটা কাজ করেছেন বেয়ান! কটা দিন থেকে যাবেন!’
‘আসলে তা তো হবে না। রিমির বিয়ের জন্য প্রস্তাব এসেছে তাই কাল ওকে নিয়ে যাবো।’
‘তার মানে বেয়ান আপনি এই জন্য ই এসেছেন?’
‘হাহাহা! একদিকে ভাবলাম আপনাদের দেখে ও যেতে পারবো রিমি কে ও নিয়ে যেতে পারবো দুই কাজ একসাথেই হয়ে যাবে তাই আসা আর কি!’
————–
রিধির মা রুমে বসে আছেন। রিধি হু হু করে কাঁদতে শুরু করে।
‘একদম কাঁদবি না। তোর বাবা কে আমি সব বলেছি। তোর বাবা বলেছে রিমি কে বিয়ে দিয়ে দিবে তাহলে সব সমস্যার সমাধান হবে। বিয়ে কোনো খেলার জিনিস না যে বললি আর হয়ে গেলো। আমরা মেয়েরা স্বামী ঘরে যাই লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে আর বের হই সাদা কাপড়ে মুড়ে। বিয়ের পর মেয়েদের এটাই চাওয়া। এই তো মেয়েদের জীবন। পাভেল কে তোর কাছে ক্ষমা চাইতে বলবো আর ভবিষ্যতে ও যাতে এসব কাজ না করে! তুই তো ওকে ভালোবাসিস ভালোবাসলে ক্ষমা করা ই যায়!’
‘মা আমি সেজন্য কাঁদছি না!’
‘তাহলে?’
‘রিধি তার পেটের দিকে ইশারা করলো। রিধির মা যখন সব টা বুঝতে পারলেন উনার এতোসব চিন্তার মাঝে ও ঠোঁটের কোণে এক ফালি হাসি ফুটে উঠলো। উনার খুশি যেনো ধরে না। একে একে সবাই জানলো রিধি মা হতে চলেছে। পাভেলের মা খুব খুশি।
‘শোন রিধি এবার থেকে একদম কোনো কাজ করবি না। নিজের যত্ন নিবি আর ভালো মতো খাবি। এছাড়া আর তোর কোনো কাজ নেই বুঝেছিস?
রিধির মা হাসে। শুধু খুশি হতে পারলো না রিমি। ব্যাপার টা তার খুব একটা হজম হলো না।
পাভেল ও ভাবছে এই মুহুর্তে এটা কি হলো! সে চাচ্ছে না রিধি মা হোক! মোটকথা রিধিকেই তার চাই না! পাভেল ও রিধির সাথে কথা বলতে চাচ্ছে একান্তে….
রাতের খাবার শেষ করে রিধির মা রিমি কে ডাকতে যান!
‘রিমি তোর সাথে আমার কথা আছে একটু এদিকে আয়!’
‘হ্যাঁ মা বলো’
এরপর তিনি যা বললেন তা শুনে রিমি একটা বড়সড় ধাক্কা খায়….উনি বলেছিলেন,,,,,,!
চলবে______________
বিঃদ্র::: কি লিখেছি নিজেও জানিনা। হয়তো গুছিয়ে লিখতে পারি নি। হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তাই পর্ব ছোট হয়েছে বলে দুঃখিত।