#সম্পর্কের__দেয়াল
#ষষ্ঠ__পর্ব
|#Writer_Anahita_Ayat|
সাড়ে ছয় টার সময় রিধি রিমি কে ডাকতে আসে। ইমনের পরিবার জানিয়েছেন তারা আসছে তাই রিমি কে তৈরি করানো উচিত। কিন্তু রিমি তো সেই আগের মতোই দরজা বন্ধ করে বসে আছে। রিধি রিমি কে ডাকতে আসে,
‘রিমি এই রিমি দরজা খোল!’
রিমি বিছানার উপর বসে দুহাতে মাথা চেপে ধরে রেখেছিলো। মাথা ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে অতিরিক্ত টেনশনের কারণেই এমন হয়েছে। হঠাৎ করে রিধির ডাক পড়ায় মেজাজ আরো খারাপ হচ্ছে। এদিকে কম না হলেও ২০০ বারের উপরে পাভেকের নাম্বারে কল দিয়েছে কিন্তু কোনো লাভ হয় নি ঐ টা নিতে ও মন মেজাজ ভালো নেই তার উপর রিধি! বিরক্ত হয়ে রিমিি বাধ্য হলো দরজা খুলে দিতে। রিধি রুমের অবস্থা দেখে চমকালো!
‘এ কি অবস্থা! রিমি এসব কি করেছিস?’
‘বেশ করেছি!’
‘মানে কি?’
‘কিছুই না। সব কিছু আবার গুছিয়ে রাখতে হবে তাই তো ওকে রাখছি!’
‘যত যাই করো লাভ নেই! তোকে তো বিয়ে করতেই হবে!'(রিধি মনে মনে বললো) কেন করছিস এসব! আগে ও তো দেখতে এসেছিলো কই তখন তো এমন করিস নি! (না জানার ভান করে)
‘তোমরা আমাকে জানাও নি কেন? আমার বিয়ে আমার জানা উচিত সবার আগে!’
‘আহা দেখ আমাদের ভুল হয়েছে। তা নিয়ে আর রেগে কি হবে বল!
‘থাক থাক আমি বুঝেছি। আর বোঝাতে হবে না!’
রিধি চুপ করে থাকলো! রিমি সব আবার আগের মতো গুছিয়ে রাখলো। রিধি অন্য রুমে গিয়ে যাবতীয় সব জিনিস শাড়ি গহনা নিয়ে আসে। রিমি কে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিতে তাগাদা দিলো। রিধির আম্মু রিধির ফোন টা নিয়ে আসেন ওই রুমে।
‘নে রিধি বেয়ান কল দিয়েছেন!’
‘কই এদিকে দেন! রিমি তুই ফ্রেশ হয়ে এখানে থাক আমি আসছি!’
‘চিরতরে দূর হয়ে যাও!’
‘কিছু বললি?’
‘ককই ন্ নাহ ন্ নাতো!’
রিধির মা ফোন টা দিয়েই চলে গেছেন ওদিকে অনেক কাজ পড়ে আছে। সব কিছুর তড়জোড় লেগে গেছে। রিধি চলে আসে তার রুমে।
‘আসসালামু ওয়ালাইকুম হ্যাঁ মা বলুন!’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। বলছি যে পাভেল কি পৌঁছেছে?’
‘না মা এখনো তো আসে নি!’
‘দেখেছিস কি কান্ড ওর দুপুরে যাওয়ার কথা ছিলো এখনো যায় নি! বেয়াই বেয়ান কি ভাবলো বল তো!’
‘অফিসে জরুরি কাজ ছিলো মনে হয়।’
‘তাই বলে আজ ও জরুরি কাজ করতে হবে?’
‘থাক মা আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি অলরেডি সমস্যা নাই।’
‘আর পাভেল অফিস শেষে এখানে না গিয়ে বাড়ি চলে আসছে!’
‘কিইইই. বলেন!’
‘হ্যাঁ পাভেল বলছে ও নাকি রিমির বিয়ের কথা জানেই না!’
‘কেন জানবে না আমি তো রাতেই বলেছি!’
‘আমি ঠিকই বলেছিলাম। পাভেল ভুলোমনা তাই ভুলে গেছে!’
অনেক্ষণ কথা হলো। পাভেলের মা অমায়িক মহিলা। তার সাথে কথা বললে অন্যরকম এক মোহনীয় অনুভূতি হয়য এই অনুভূতি সুপ্ত পবিত্র ও শুভ্র।
‘তুই নেই কেমন একা একা লাগছে রে!’
‘মা এই জন্যই তো বলেছি আপনি ও আসুন!’
‘তা হয় নাকি। ঠিক আছে তুই এখন ফোন রেখে রেস্ট নে আর ভারী কোনো কাজ করবি না। নিজের যত্ন নিবি আগে বুঝেছিস?’
‘আচ্ছা মা আপনি!’
ফোন রেখে দিয়ে রিধি ভাবছে পাভেল আর রিমির ব্যাপার টা যদি পাভেলের মা জানেন তাহলে তিনি কেমন রিয়েক্ট করবে? রিধি মনে মনে আল্লাহ কে বললো সব কিছু যেনো ঠিক ভাবে হয়ে যায়। আচমকা পাভেল তাড়াহুড়ো করে বাড়ি তে ঢুকলো। ঢুকতেই সামনে পড়লো রিধির মা। পাভেল একেবারেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। রিধি তখন উপরে দাঁড়িয়ে ছিলো।
‘পাভেল কিছু কি হয়েছে তোমাকে এমন দেখাচ্ছে যে?’
‘না ম্ মানে তেমন কিছু না। আসলে অফিসে জরুরি কাজ থাকায় দুপুরে আসতে পারিনি তো! হয়েছে কি মা রিধি যে আমাকে বলেছিলো সেটা আমি ভুলে গেছিলাম!’
রিধির মা ভ্রুঁ রাঙিয়ে রিধির দিকে তাকায় রিধি না সূচক মাথা নাড়ল। বুঝাতে চাইলো সে বলে নি পাভেল কে। তিনি বুঝতে পারেন!
‘ও আচ্ছা সমস্যা নেই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নাও আমি ঠান্ডা কিছু পাঠিয়ে দিচ্ছি!’
‘জ্বি আচ্ছা!’
রিধির আব্বুর সাথে ও কুশল বিনিময় করে নেয়। শেষে পাভেল রিধির সাথে টুকটাক দু একটা কথা বলে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। বাড়িতে পা রাখার পর থেকে এখনো মাথায় একটাই চিন্তা রিমির সাথে দেখা করা। টেনশনে মাথার পোকা গুলো কিলবিল শুরু করে দিয়েছে যেনো। পাভেল কে প্রচন্ড নার্ভাস লাগছে। বিমর্ষ অবস্থা। রিধি অবশ্য সব ই বুঝলো যে ঠিক কি কারণে তার এই হাল! অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে রিমির বিয়ের কথা শুনে ছোট খাটো একটা হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনা তো পাভেল কে নেড়ে দিয়েছে অবশ্যই। রিধি তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হাসে। পরকীয়ার এ কি অবস্থা। রিধির গা সেদিনের মতো আবারো ঘৃণায় রিরি করছে। পাভেলের মধ্যে রিমির জন্য কতো উদ্বিগ্নতা। রিধি ভেঙ্গে গেছে একদম। পবিত্র বন্ধন ভেঙ্গে অপবিত্র ও অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পাভেল রিমি আর তার মধ্যে বিস্তর বড় এক #সম্পর্কের_দেয়াল তুলে দিচ্ছে আস্তে আস্তে। রিধির এই মুহূর্তে মনে হলো জীবন টা তার তাই চাএয়া পাওয়া ও তার। সে পাভেলের সাথে থাকবে না। পাভেল যদি পারে সব ভুলে সম্পর্কের দেয়াল তুলতে তাহলে সে কেন পারবে না। রিধির মনে পড়লো তার মায়ের কথা। কি করবে নিজেও বুঝতে পারছে। বাবা মায়ের উপর কি করে কথা বলবে? কিভাবে বলবে যে ওই নরক থেকে আমার মুক্তি চাই। ধুকে ধুকে মরার থেকে এসব ছেড়ে ছুড়ে দূরে কোথাও চলে যাওয়া অনেক ভালো মনে হচ্ছে!
পাভেল ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো রিধি খুব মনোযোগের সহিত কিছু ভাবছে। সামনে দৃষ্টি অনড়। কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে বললো,
‘রিধি কি ভাবছো এতো?’
রিধি রিতিমত হকচকিয়ে উঠে।
‘কই কিছু না তো!’
পাভেল অতো কেয়ার করলো না। নিজ প্রসঙ্গ তুলে বললো,
‘আচ্ছা রিধি তুমি কি আমাকে রিমির বিয়ের ব্যাপারে জানিয়েছিলে?’
পাভেল ভুলে গেছে ভেবে রিধি কে আর ছেলে কি করে থাকে কই এসব জিঙ্গেস করলো না। কারণ তার মন অশান্ত হয়ে আছে। মুখ দিয়ে অজস্র কথার বুলি ফুটতে শুরু করলে ঠেকানো দায় হয়ে পড়বে। আর তখন যদি এসব জিঙ্গেস করতে থাকে তাহলে রিধি সন্দেহ যে করবে না তার গ্যারান্টি নেই তাই পাভেল নিজেকে এক প্রকার জোড় করে চেপে রেখেছে। রিধি বললো,
‘হ্যাঁ গতকাল রাতেই তো জানিয়েছি। রিমি কে যে দেখতে আসবে ওই ছেলের নিজস্ব কোম্পানি আছে বিরাট বড় ব্যবসা। ইমন জুবায়ের ও দেখতে সুদর্শন রিমির সাথে খুব ভালো মানাবে। কেন তোমার মনে নেই?’
‘না. আসলে ভুলে গেছি হতে পারে!’
অথচ রিধি পাভেল কে বলেই নি কিছু। রিধি পাভেলের ভুলে যাওয়ার কথাটা জানতো তাই তার কাজে সুবিধা হলো। রিধি তাড়া দিয়ে বললো!
‘আচ্ছা উনারা চলে আসবেন সময় হয়েছে আমি রিনি কে রেডি করাতে যাই!’
‘কই রিমি কে তো একবার দেখি নি কোথায় ও!’
‘দেখতে আসবে তাই ওকে ও তো ঠিক করতে হবে নিজেকে প্রস্তুত হতে হবে তাই নিজের রুমেই আছে! আমি যাই তুমি রেস্ট নাও আর হ্যাঁ শরবত নিয়ে এসেছি!’
রিধি চলে যায়। পাভেল নিরাশ হয়ে বসে থাকলো। কারণ সে তো আর বলতে পারবে না ‘রিধি তোমার সাথে আমি আসি!’ প্রেসটিসের ব্যাপার তার উপর বাচ্চামো হয়ে যায় ছিহ। অগত্যা পাভেল কে শুয়ে থাকতেই হলো।
ঘনিয়ে আসলো সেই মুহূর্ত। ইমন জুবায়ের ও তার পরিবার এসেছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেশ রুচিশীল মানুষ তারা। আদর আপ্যায়ন এর ব্যবস্থা করা হলো। রিধির আব্বু আম্মু আর পাভেল সবার সাথে পরিচয় করিয়ে ও নিজেরা ও পরিচিতি হয়ে নেয়। ইমনের মা বললো,
‘কই রিমি মা কে নিয়ে আসুন!’
‘এক্ষুনি নিয়ে আসছি!’
রিধি হাসি মুখে সম্মতি দেয়। অতঃপর রিধি রিমি কে নিয়ে আসতে রুমে গিয়ে শক্ড….! কারণ….
চলবে_____________
[