সাইকো লাভার পর্বঃ১১

0
1941

সাইকো লাভার পর্বঃ১১
#সাদিয়া সিদ্দিক মিম (লেখিকা)

রাত ১১ টা,,,,বিছানায় শুয়ে আছি,,,,,,আদি চলে গেছে অনেকক্ষণ আগে,,,,আর যাওয়ার আগে জনাব বলে গেছেন উনার কথার যাতে অবাধ্য না হই,,,,হুহ আমার বয়ে গেছে তোর কথা শুনতে,,,খালি উট্টু ভয় পাই তোর হুটহাট কাছে আসাতে নয়ত তরে কিলাইয়া এলিয়েন বানাইয়া ফেলতাম।শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছি কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি টেরই পাই নাই।

🍁অন্যদিকে🍁

আদি ফোনে দিয়ার একটা ছবি দেখছে,,,,ছবিটাতে আদি দিয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে দিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে আর দিয়া আদির দিকে তাকিয়ে হাসছে।আদি ছবিটাতে হাত বুলিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠল,,,,

আদিঃ আগের দিন গুলোই কত ভালো ছিল,,,কেন তুমি এত বদলে গেলে জান,,,কেন আমায় রেখে চলে গেলে সেদিন,,,তুমি ত জানতে তোমার আদি তোমাকে ছেড়ে এক মুহূর্তও থাকতে পারে না,,,সেই আদি তোমাকে ছেড়ে চারটা মাস দূরে ছিল,,,,তুমি দূরে রেখেছিলে তোমার থেকে আমাকে।আমি সেই দিনগুলোতে প্রতিদিন মরতে মরতে বেঁচেছি,,,শুধু তোমাকে ফিরে পাবার আশায়।আর সেই তুমি আজ আমার বউ,,,,এখন তুমি শুধু আমার,,,এবার আর চাইলেও তোমাকে আমি দূরে যেতে দিব না।

এভাবে অনেকক্ষণ থাকার পর আদিও ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে দিয়ার একটা উর্না জড়িয়ে।

🍁সকালে🍁

কারো ঠোঁটের ছোঁয়া অনুভব করে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠি,,,,তাকিয়ে দেখি আদি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি উর্নাটা নিয়ে আদিকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,, “আপনি এত সকালে এখানে কী করছেন”?

আদিঃ আমার বউকে দেখতে এলাম,,,,আমার বউকে দেখে আমি আমার দিন শুরু করতে চাই তাই ত চলে এলাম সকাল সকাল,,,, আমার বউ আমার মুখ দেখে সকাল শুরু করবে আর আমি আমার বউয়ের মুখ দেখে সকাল শুরু করব।

দিয়াঃ ঐ মিয়া,,,,এত আমার বউ,আমার বউ করতাছেন কেন?প্রতি কথায় আমার বউ,আমার বউ করতাছেন।

আদিঃ ওমা আমার বউ ত আমার বউ বলব না ত কার বউ বলব।(বাঁকা হেঁসে)

দিয়াঃ উফফ,,,,,কী এক জ্বালা রে,,,,,আচ্ছা আপনার দেখা হয়ে গেছে এবার আপনি আসতে পারেন।(বিরক্ত হয়ে)

আদি বাঁকা হেঁসে আমার কোলে মাথা দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল,,,,আমার ত কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গেছে,,,,সাথে রাগও হচ্ছে।

দিয়াঃ আরে কী করছেন কী আপনি ছাড়ুন আমাকে,,,,এভাবে হুটহাট জড়িয়ে ধরার মানে কী হে।(রেগে)

আদিঃ আমি আমার বউকে জড়িয়ে ধরে আছি তোমার কী?

আমি কিছু বলতে যাব তখনি চাচ্চু ডাকতে এসেছে।এখন কী হবে,,,চাচ্চু যদি আদিকে এখানে এ অবস্থায় দেখে তবে ত চাচ্চু ভীষন রেগে যাবে।

আদিঃ উফফ চাচা শ্বশুর মিয়া বউয়ের সাথে কী একটু রোমান্সও করতে দিবেন না নাকি,,,,আপনি এখন আসতে পারেন আমি সময় মত আমার বউকে নিয়ে এসে পড়ব।(কোমড়ে মুখ গুজেই বলল)

আমি ত এই ছেলের কথা শুনে হা হয়ে আছি,,,,এই ছেলে বলে কী এসব,,,চাচ্চু এমনিতেই তেনারে শয্য করতে পারেন না তার উপর এসব কথা।

চাচ্চুঃ দিয়া,,,দিয়য়য়য়য়া,,,,,দরজা খোল,,,,এই ছেলেটা তোর ঘরে কী করে,,,দরজা খোল।(রেগে চিৎকার করে)

দিয়াঃ আরে সরুন এখান থেকে,,,,আপনার কী লজ্জা সরম নাই নাকি,,,,এভাবে কেউ বলে,,,,ছাড়ুন আমাকে।

আদি এবার মুখ তুলে বলে উঠল,,,,,,”চুপ করো ত,,,এত ছাড়ো ছাড়ো বলো কেন?এই ছাড়ো ছাড়ো শুনতে শুনতে কানে পোকা ধরে গেলো”।

বলে আবারও কোমড়ে মুখ গুঁজল।আর ঐদিকে চাচ্চু রেগে ফায়ার হয়ে আছে।চাচ্চুকে শান্ত করার জন্য বললাম,,,,”চাচ্চু তুমি নিচে যাও,,,,আমি ৫ মিনিটে আসছি”।

চাচ্চুঃ তুই এখনি দরজা খোল,,,নয়ত আমি দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ডুকব।

এবার আদি আমাকে ছেড়ে দরজা খুলে দিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়ায় আর আমিও বিছানা থেকে উঠে চাচ্চুর পাশে গিয়ে দাঁড়াই।

আদিঃ চাচা শ্বশুর মিয়া ইচ্ছে করছে আপনাকে বনবাসে পাঠাইয়া দিতে,,,,ঠিক মত বউয়ের সাথে রোমেন্সও করতে দিচ্ছেন না।এটলিস্ট বনবাসে গেলে অন্তত এভাবে কাবাবের মধ্যে এলাচি হতেন না।(বাঁকা হেঁসে)

চাচ্চুঃ তোমার মত নির্লজ্জ ছেলে আমি আমার জীবনে দেখি নাই,,,,আর তোমার সাহস হল কী করে এখানে আসার।(রেগে চিৎকার করে)

চাচ্চুর চিৎকারে এবার বাড়ির সবাই এসে পড়বে মনে হচ্ছে তাই চাচ্ছুকে বললাম,,,,,”চাচ্চু তুমি শান্ত হও,,,নিচে চলো কলেজে যেতে দেরি হয়ে যাবে”।

চাচ্চু কিছু বলবে তার আগেই আমি চাচ্চুকে থামিয়ে বললাম,,,,”আমি না তোমার মা লাগি,,,,এটা তোমার মায়ের আদেশ না মানলে কিন্তু মা হারিয়ে যাবে”।

চাচ্চু আর কিছু না বলে একবার আদির দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিচে চলে গেলো।
আর আদি আমাকে টেনে রুমে এনে আবার দরজা লাগিয়ে দিল,,,,এসব আর শয্য করতে না পেরে হাত ঝাড়া দিয়ে আদির থেকে ছাড়িয়ে রেগে বললাম,,,,,”আপনি কী চাইছেন,,,,ঝামেলা না করলে কী আপনার ভালো লাগে না,,,,আপনার কী কোন কাজ নেই,,,,যখন তখন এসে এভাবে ঝামেলা পাকান”।

আদিঃ না আমার কোন কাজ নেই,,,,আমার একমাত্র কাজ তোমাকে জ্বালানো,,,আর সেটাই করছি।

বাকা হেসে কথাটা বলেই আদি আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।আমিও রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে চলে এলাম,,,,তারপর লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে কলেজ ড্রেস পড়ে রেডি হয়ে নিচে নেমে এলাম।
নিচে এসে দেখি বজ্জাতটা পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসে আছে আর তার সামনের সোফায় পাপা বসে আছে,,,আর কী নিয়ে যেন হাসাহাসি করছে।আমি পাশ কেটে যাব তখন পাপা আমাকে ডাক দেয়,,,,আমিও মাথা নিচু করে পাপার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।

পাপাঃ আজ থেকে আদি তোমাকে কলেজে নিয়ে যাবে আর নিয়ে আসবে,,,,এখানে কোন ঝামেলা করবে না।(গম্ভীর মুখে)

আমি আদির দিকে তাকিয়ে দেখি আদি বাঁকা হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তখনই সেখানে চাচ্চুর এন্ট্রি,,,,,আমি চাচ্চুর দিকে তাকিয়ে চাচ্চুকে ইশারা করছি পাপাকে বুঝাতে,,,,কিন্তু চাচ্চু কিছুই বুঝতে পারছে না।কিন্তু চাচ্চু এটা বুঝতে পেরেছে যে পাপাকে উদ্দেশ্য করে বলছি।

তাই চাচ্চু পাপাকে জিজ্ঞেস করল,,,,,”কী হয়েছে দাদাভাই”।

দিয়ার বাবাঃ কিছু হয় নি,,,,দিয়া আজ থেকে তোমার সাথে কলেজে যাবে না,,,,আজ থেকে দিয়া আদির সাথে কলেজে যাবে।

আমি চাচ্চুর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বুঝাতে চাইছি আমি আদির সাথে যাব না।আর চাচ্চুও চাইবে না আমাকে আদির সাথে যেতে দিতে।

দিয়ার চাচ্চুঃ দাদাভাই আমি তোমার কথাটা মানতে পারলাম না,,,,দিয়া এতদিন আমার সাথে কলেজে গিয়েছে,,,আর আজও যাবে,,,আমি কারো সাথে দিয়াকে যেতে দিব না।(আদির দিকে তাকিয়ে বলল)

আদিঃ এতদিন আপনার সাথে গিয়েছে আর আজ আমার সাথে যাবে,,,,আপনাকে আর আমার বউকে কলেজে নিয়ে যেতে হবে না চাচা শ্বশুর মিয়া।(বসা থেকে দাড়িয়ে আমার পাশে এসে দাড়িয়ে বলল)

দিয়ার চাচ্চুঃ দাদাভাই তুমি এই ছেলেটাকে চিনো না,,,,তাই তুমি এই ছেলেটার সাথে দিয়াকে কলেজে যেতে বলছো।

দিয়ার বাবাঃ আমি আদিকে খুব ভালো করেই চিনি,,,,তোমাকে নতুন করে আদিকে চিনাতে হবে না,,,তুমি গিয়ে ব্রেকফাস্ট করো যাও।(গম্ভীর মুখে কিছুটা রেগে)

দিয়ার চাচ্চুঃ সরি দাদাভাই আমি তোমার এ কথাটা মানতে পারলাম না,,,আমি দিয়াকে কিছুতেই এই ছেলের সাথে যেতে দিব না।

কথাটা বলেই চাচ্চু আমাকে টেনে বাড়ির বাইরে নিয়ে যাচ্ছে আর পাপা চাচ্চুকে ডেকেই যাচ্ছে।আর আদি বাঁকা হেঁসে দাড়িয়ে আছে।

দিয়ার আম্মুঃ দিয়াকে নিয়ে আশরাফ কই গেলো,,,,অরা ত ব্রেকফাস্ট ও করল না,,,,তুমি ওদের নিশ্চয়ই কিছু বলেছো,,,,তোমার এত কীসের শত্রুতা আমার মেয়েকে নিয়ে হুম।(রেগে)

দিয়ার বাবাঃ যেটা জানো না সেটা নিয়ে কথা বলবে না,,,,গিয়ে খাবার বাড়ো আদি আজ আমাদের সাথে ব্রেকফাস্ট করবে।(গম্ভীর মুখে)

দিয়ার মাও আর কথা না বারিয়ে মুখ ফুলিয়ে চলে গেলো রান্না ঘরে।

দিয়ার বাবাঃ আদি এসো ব্রেকফাস্ট করবে।

আদিঃ না শ্বশুর আব্বু আজ না,,,আমার একটু কাজ আছে আমি আসছি।

কথাটা বলেই আদি দিয়ার বাবাকে কিছু বলতে না দিয়ে বের হয়ে এল বাড়ি থেকে।আদি বাইরে এসে দেখে আশরাফ চৌধুরী আর দিয়া বাড়ির গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছে।আদি বাঁকা হেঁসে আদির গাড়িটা নিয়ে সেখানে গিয়ে গাড়িটা থামিয়ে নেমে দিয়াকে কোলে তুলে নিল।

🍁আমি আর চাচ্চু রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছি কারন চাচ্চুর গাড়ির টায়ারের হাওয়া ফুস,,,,তাই রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছি তখন কেউ আমাকে কোলে তুলে নেয়,,,তাকিয়ে দেখি আদি।চাচ্চু আদির দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে সেটা দেখে আদি
বলল,,,,,,”আমার বউকে এভাবে রোদে দাঁড় করিয়ে কষ্ট দিচ্ছেন এটা কিন্তু মোটেও ঠিক নয় চাচা শ্বশুর মিয়া”।

চাচ্চুঃ আমার ভাতিজীকে আমি রোদে দাঁড় করালাম নাকি ছায়াতে দাড় করালাম তাতে তোমার কী?দিয়াকে ছাড়ো দিয়া আমার সাথে যাবে।(রেগে আদির কলার ধরে)

আদিঃ গাড়ির হাওয়া যেভাবে বের করেছি সেভাবে আপনার হাওয়া বের করতেও আমার বেশি সময় লাগবে না,,,,,কলারটা ছাড়ুন নয়ত আপনার ভাতিজীকে কোল থেকে ফেলে দিব।(রেগে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে)

ফেলে দিবে শুনে আমি আদিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলাম,,,,চাচ্চু আদির কালরটা ছেড়ে দেয় আর আদিও আামকে কোলে করে গাড়িতে উঠিয়ে আদিও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়,,,,,,,,তার মানে আদিই চাচ্চুর গাড়ির অবস্থা এমন করেছে,,,,বজ্জাতটা কী চালাক।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here