সাইকো_লাভার অন্তিম_পর্ব

সাইকো_লাভার অন্তিম_পর্ব
#লেখিকাঃসাদিয়া_সিদ্দিক_মিম

বাসর ঘরে বর সাজে বসে আছে আদি,,,দিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে,,,রাত ১১ টা বেজে ১৩ মিনিট কেউ এখনও দিয়াকে পাঠায় নি আদির ঘরে,,,যেখানে বউ বরের জন্য বাসর রাতে অপেক্ষা করে সেখানে বর এসে বউয়ের জন্য অপেক্ষা করছে।ব্যাপারটা অদ্ভুত হলেও এটাই হয়েছে।আদি আর দিয়ার বিয়েটা খুব ভালো করেই সম্পূর্ণ হয়েছে।আদি এবার বিরক্ত হয়ে খাট থেকে নেমে পায়চারি করতে লাগে।আর নিজের মনে বিড়বিড় করে যাচ্ছে,,,

আদিঃ এখনও দিয়া আসছে না কেন?গত দুইদিন ধরে আমার বউয়ের সাথে কেউ দেখা করতে দেয় নি,,,বলেছে একেবারে বাসর ঘরে বউ সাজে দেখতে পাব,,,যার কারনে আমি আগেই এসে পরলাম কিন্তু আমার বউটাকে এখনও অরা কেউ দিয়ে গেলো না,,,ইচ্ছে করছে বউ কিডন্যাপ করে নিয়ে আসি,,,দেৎ ভাল্লাগে না।

আদি যখন নিজের মনে এসব বিড়বিড় করছে তখনই দিয়াকে নিয়ে ভিতরে আসে মিনহা আর আদির কিছু কাজিন।আদিকে এখানে দেখে সবাই ভূত দেখার মত চমকে গেছে।

মিনহাঃ ভাইয়া,,,তুমি এখানে কী করছো?(অবাক হয়ে)

আদিঃ এতক্ষণ লাগে আমার বউকে নিয়ে আসতে তদের হে,,,কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতাছি সে খবর আছে তদের কারো।(রেগে বলল)

আমি আদির কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি,,,এই কলার কাদির কী লজ্জা সরম বলতে কিছু নাই,,,যেখানে আমি অপেক্ষা করব তেনার জন্য সেখানে উনি আমার জন্য অপেক্ষা করছে,,,খোদা দরি ফালাও এই বজ্জাতটাকে উঠাইয়া দিব,,,ইস্ সবাই কী ভাবছে?

কাজিনঃ ভাইয়া তুমি ত দেখছি আমাদের ভাবিকে চোখে হারাচ্ছো,,,দেখছো গো ভাবি আমাদের ভাই তোমাকে কত ভালবাসে।(দিয়াকে খোঁচা দিয়ে)

আদিঃ হে হারাচ্ছি তাতে তদের কী হে?যা ভাগ এখান থেকে।

মিনহাঃ আচ্ছা ঠিক আছে চলে যাচ্ছি,,,কিন্তু তার আগে দশ হাজার টাকা দেও,,,নয়ত বউ পাবে না।

আদিঃ কীসের টাকা দিব তকে আমি?

মিনহাঃ এমা এত কষ্ট করে বাসর ঘর সাজালাম সবাই মিলে তার পারিশ্রমিক হিসেবে দশ হাজার টাকা চাই।

আদিঃ টাকা কী গাছের পাতা যে ইচ্ছে হল আর টুপ করে পেরে নিলাম,,,যা এখান থেকে।(ধমকে)

কাজিনঃ তবে ভাবিকেও নিয়ে গেলাম আমাদের সাথে,,,ভাবি চলো ত আমাদের সাথে।

আদিঃ এই একদম আমার বউকে ধরবি না তরা,,,চুপচাপ এখান থেকে যা নয়ত প্রত্যেকটাকে শ্বশুর বাড়ি পাচার করব।

মিনহাঃ আমি ত এক পায়ে দাঁড়ানো শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার জন্য,,,ভাবি চলো ত এখান থেকে।

আদি মনে মনেঃ বইন পাইছি একখানা,,,এখন টাকাটা দিয়েই দেই নয়ত বউ ছাড়া বাসর সারতে হবে।

আদিঃ নে টাকা,,,,এবার তরা যা এখান থেকে।

মিনহা আর অর কাজিনরা টাকা পেয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে চলে গেলো আর আদিও গিয়ে টুপ করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে একদম আমার সামনে এসে দাঁড়ালো,,,আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি,,,আজ খুব লজ্জা লাগছে।

আদিঃ ইস্ আমার বউটা দেখি লজ্জাও পাচ্ছে,,,এমন লজ্জা পেলে আমাকে আর বাবা হতে হবে না।(হেঁসে)

তবুও আমি কিছু বললাম না মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে আছি,,,আদি এবার আমাকে কোলে তুলে নেয় হঠাৎ এমন হওয়ায় আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হেঁসে আদির গলা জড়িয়ে ধরলাম।আদি আমাকে খাটে বসিয়ে আমার সামনে বসলো।

আদিঃ আমার বউটাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে,,,জানো এই দুইদিন তোমাকে না দেখে কথা না বলে থাকতে কত কষ্ট হয়েছে,,,কতবার তোমাকে দেখার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে চেয়েছি কিন্তু কারো না কারো কাছে ধরা পড়েছি,,,ফোনটাও নিয়ে নিছে,,,ভেবেছি আমাদের বাড়িতে আসার সময় তোমাকে একটু দেখব একটু কথা বলব কিন্তু আমার ঐ শয়তান বইনের জন্য সেটাও হল না,,,ঠিকই গলায় ঝুলে কাবাবে হাড্ডি হয়ে আমাদের সাথে আসল।

দিয়াঃ তাই এখন তুমি তাড়াতাড়ি এসে এখানে বসো আছে।

আদিঃ ত কী করব,,,দুইদিন যে কীভাবে থেকেছি সেটা আমিই জানি,,,তাই তাড়াতাড়ি চলে এলাম।(হেঁসে)

দিয়াঃ তুমি না একটা নির্লজ্জ,,,লজ্জা সরম বলতে কিছু নাই,,,দুইদিন ছিলে আরেকটু অপেক্ষা করলে কী হত?ইস্ মিনহা অরা কী ভাবছে?

আদিঃ হুম আমি নির্লজ্জ,,,আর সব স্বামীই তাদের বউয়ের কাছে নির্লজ্জ,,,আর কখনও তোমাকে আমার থেকে দূরে যেতে দিব না,,,দুইদিন কেন একদিনের জন্যও আমি আর তোমাকে ছেড়ে থাকব না।

দিয়াঃ তুমি না একটা সাইকো।(হেঁসে)

আদিঃ yes I am your,,,#সাইকো_লাভার।খুব ভালবাসি তোমায়,,,আর আজ আমার ভালবাসার রং দিয়ে সাজাব তোমায়,,,দিবে কী আমাকে সে অধিকার?

আমি কিছু না বলে আদিকে জড়িয়ে ধরি,,,আদিও মুচকি হেঁসে আমাকে জড়িয়ে ধরে।তারপরে দুজনেই হারিয়ে গেলাম ভালবাসার অতল সাগরে।

🍁পাঁচ বছর পর🍁

আজ সায়ান আর সাফয়ানের বিয়ে,,,দুই ভাই একসাথেই বিয়ে করছে,,,পারিবারিক ভাবেই বিয়েটা হচ্ছে,,,আর একই বাড়িতে দুইভাই বিয়ে করছে,,,সেখানেই একটা ছোট কিউট ছেলে দৌড়ে একটা লোকের কাছে গিয়ে তার পান্জাবির কোনা ধরে টেনে তাকে ডাকছে।লোকটা আর কেউ নয় আদি,,,আর বাচ্চা ছেলেটি হল দিয়া আর আদির ছেলে আদ্র,,,আদির মতই হয়েছে,,,তিন বছর বয়স।

আদ্রঃ পাপা,,,পাপা,,,মাম্মা না ওতানে এত্তা লোকেল সাতে কতা বলতে।(বাচ্চাটি)

আদিঃ কোথায় তোমার মাম্মা?

আদ্রঃ চয়ো আমাল সাতে।(বলেই আদির হাত টেনে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে)

কিছুটা সামনে এগোতেই আদির চোখ মুখে রাগ ফুটে উঠে।আদি আদ্রকে কোলে নিয়ে দিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।আর কিছু না বলে দিয়াকে টানতে টানতে একটা ঘরে নিয়ে আসে আর দরজাটা বন্ধ করে দেয়।

আমি মাফুজ ভাইয়া সীমার হবু হাজবেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম তখনই কোথা থেকে আদি এসে টেনে এখানে নিয়ে এলো।আমার আর বুঝতে বাকি নেই কেন আমাকে এভাবে নিয়ে এলো,,,আদ্র আমাকে ইশারা করে বুঝাচ্ছে,,,আজ আমাকে আদি আলুর বর্তা বানাবে।এই ছেলেটা আমার নাকি অন্য কারো সেটাই বুঝে উঠতে পারি না আমি,,,ছেলেটাও হয়েছে আদির মত,,,আদি যেটা বলবে সেটাই শুনে,,,আমি যে এই পোলার মা আমাকেও ছাড় দেয় না,,,আদি আদ্রকে আগেই বলে রেখেছে আমি কোন ছেলের সাথে কথা বললে আদিকে যাতে জানায়,,,নিশ্চয়ই দেখেছে আমাকে মাফুজ ভাইয়ার সাথে কথা বলতে,,,আর সেটা গিয়ে পাপার কানে তুলে দিছে,,,পোলাকে ভালোই ট্রেনিং দিছে,,,পোলা আমার গোয়েন্দা হবে মাকে বাঁশ দিয়ে।

আদিঃ বলেছিলাম না কোন ছেলের সাথে কথা না বলতে,,,বলেছিলাম আমি।(রেগে চিৎকার করে)

আদ্রঃ হে পাপা বলেতিলে,,,মাম্মা পতা তোমাল কথা ছুনে না।

আমি আদ্রর কথা শুনে চোখ কটমট করে তাকাই আর আদ্র গিয়ে আদির পিছনে দাঁড়ায়।আদি সেটা দেখে বলে,,,

আদিঃ আমার ছেলেকে চোখ রাঙাবে না একদম।বলো ঐ ছেলের সাথে কীসের,,,

দিয়াঃ সবসময় সবটা না জেনে খালি চেচামেচি,,,চুপ করো ত,,,তুমি জানো ওটা কে ছিল?

আদিঃ আমার এত কিছু জানতে হবে না,,,তুমি বলো তুমি ঐ ছেলের সাথে কথা কেন বললে?মানা করেছিলাম আমি তোমাকে,,,তুমি কী পন করে নিয়েছো আমার কথা শুনবে না।(দিয়ার কাঁধে হাত দিয়ে ঝাকিয়ে)

দিয়াঃ আরে ওটা মাফুজ ভাইয়া ছিল,,,সীমা যে বিয়েতে রাজি হয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ বলছিল।

আদিঃ তোমাকে ধন্যবাদ দিলো কেন?

দিয়াঃ সীমা বিয়েতে রাজি না,,,জানোই ত রিয়াজ ভাইয়ার সত্যিটা জানার পর ভেঙ্গে পড়েছে,,,এত বছরেও ভুলতে পারে নি রিয়াজ ভাইয়াকে।আর মাফুজ ভাইয়া সীমাকে খুব ভালবাসে তার জন্য আমাকে রিকুয়েষ্ট করেছিল যাতে সীমাকে বুঝাই,,,আর সীমার সাথে কথা বলে আমি সীমাকে রাজি করাই তার জন্য উনি আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে,,,সামনের মাসেই ওদের বিয়ে।

আদিঃ ওহহ,,,কিন্তু সামনে থেকে যাতে আর কোন ছেলের সাথে কথা বলতে না দেখি।

দিয়াঃ কেন গো?(মজা করে)

আদিঃ কারন আমি তোমার #সাইকো_লাভার। তোমার ভাগ আমি কাউকে দিতে পারব না।আর তুমি ভালো করেই জানো তুমি কোন ছেলের সাথে কথা বললে আমার শয্য হয় না,,,তার জন্য আমি কোন ছেলে ফ্রেন্ডও রাখি না,,,কারন আমার ফ্রেন্ডরা বাসায় আসবে তোমার সাথে কথা বলবে আমি সেটা শয্য করতে পারব না,,,ত এবার থেকে সাবধানে থেকো।

দিয়াঃ এত ভালবাসো আমাকে

আদিঃ হুম নিজের থেকেও বেশি ভালবাসি।

আদ্রঃ আমিও ভালবাতি।

আদ্রর কথা শুনে আমি আর আদি দুজনেই হেঁসে ফেললাম।

দিয়াঃ নিজে যেমন ছেলেটাকেও বানাইতাছো তেমন।

আদিঃ আমার ছেলে ত আমার মতই হবে তাই না সোনা।

আদ্রঃ yes papa।(হেঁসে)

………..সমাপ্ত………..

(জানি না কেমন লিখেছি,,,প্রথম লিখেছি তাই সবটা গুছিয়ে লিখতে পারি নি,,,তারপরও আপনাদের থেকে অনেক ভালবাসা পেয়েছি এই গল্পটাতে,,,এতদিন পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে,,,খুব শীগ্রই নতুন গল্প নিয়ে হাজির হব,,,আশা করি তখনও এভাবে সাথে থাকবেন,,,ততদিন সবাই ভালো থাকবেন,,,আল্লা হাফেজ)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here