সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব -১৫

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

বাসায় এসে চুপচাপ সোফায় শুয়ে পড়ে কায়াসা।তার কিছু ভালো লাগছেনা।সে বুঝতে পারছেনা তার এখন কি করার উচিত।হাজারো চিন্তা ভাবনা নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে কায়াসা।অন্যকোন দিন হলে এতোক্ষণে কায়াসা ঘুমের দেশে চলে যেতে কিন্তু আজ ঘুম তার আশেপাশেও নেই।

ফোনের টুংটাং আওয়াজে কায়াসা চোখ খুলে।সে শোয়া অবস্থাতেই ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে।স্ক্রিনে তাকিয়ে কায়াসা বুঝতে পারে কেউ মেসেজ দিয়েছে।মেসেজটা ওপেন করে কায়াসা।

” আমার কথা অমান্য করে তুমি মোটেও ভালো করোনি।”

এতটুকুই লেখা আছে মেসেজটাতে।কায়াসা জানে এটা কে পাঠিয়ে।তবে এবার আর কায়াসার মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলোনা।সে চুপচাপ মোবাইলটা টেবিলে রেখে আবারো চোখ বন্ধ করে থাকে।

সকালে থেকে ফোনের উপর ফোন করে যাচ্ছে ইতি আর আরোহী।কিন্তু কায়াসাতো নাছোরবান্দা,সে ফোন ধরবেনা।ফোনে না পেয়ে দুজন’ই কায়াসাকে মেসেজের উপর মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাতেও তার কোন প্রতিক্রিয়া নেই।অবশেষে কায়াসা যখন বুঝতে পারলো এরা দুজন থামার নয় তখন সে ইতির ফোন রিসিভ করলো।

” কি হয়েছে?এতবার ফোন দিচ্ছিস কেন?”

” কেন মানে?তুই কি এখনো ঘুমিয়ে আছিস নাকি?”

” সকাল ৯ঃ৩০ বাজে।এতোক্ষণ কি আমি ঘুমাই?”

” ও হ্যাঁ তাও ঠিক।আচ্ছা সেসব বাদ দে কলেজ কখন আসছিস বল?”

” কলেজ কেন?আজ না কলেজ বন্ধ?”

” কিসের কলেজ বন্ধ?আজ আমাদের ওয়েলকামিং সেরেমানি আছে না?”

” সেটা বল না।কিন্তু ক্লাস তো বন্ধ না?তো?”

” তো মানে?তুই আসবি না নাকি?”

” না আসবোনা।”

” আসবিনা মানে?আমাদের নতুনদের স্বাগতম অনুষ্টান হবে আর তুই আসবিনা।”

” না আসবোনা।তোদের যেতে ইচ্ছে হলে যা।”

” এই কায়াসার বাচ্চা আয়াসা,তুই আসবিনা তোর ঘাড় আসবে।” আরোহী বলে উঠে।

” আরু তুই?”

” হ্যাঁ আমি।আমরা তো এখন কলেজেই আছি।এবার তুইও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজে চলে যায়।”

” ইতি তুই তো জানিসই,প্লিজ তুই ওকে বোঝা।”

” আমি কিছু বোঝাতে পারবোনা।আর তুই সবসময় এরকম ঘরকুনো থাকিস কেন বলতো?একটু বাইরের লাইফটাকেও ইনজয় কর।”

” শোন কায়ু তুই ১০ঃ৩০ মধ্যে কলেজে আসবি।এটাই লাস্ট কথা।আর তুই আজ না আসলে আমি তোর সাথে আর কথা বলবোনা।”

কায়াসাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরোহী ফোনটা কেটে দেয়।একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফোনটা টেবিলে রেখে কায়াসা রান্না করতে চলে যায়।

কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কায়াসা।পড়নে তার কালো রঙের একটা সাধাসিধে থ্রি-পিস।কায়াসা আশেপাশে তাকিয়ে দেখে হাতেগোনা দু-তিন জন ছাড়া সব মেয়েই আজ শাড়ি পড়েছে।কায়াসা এতো কিছুতে মনোযোগ না দিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়।কায়াসার মোটেও এসব অনুষ্টান,লোকের ভিড় মোটেও পছন্দ না।সে সবসময় একা,খোলামেলা থাকতে চায়।ভেতরে এসে কায়াসা ইতিকে ফোন দেয়।

” ইতু কোথায় তোরা?”

” তুই এসেছিস?”

” হ্যাঁ এসেছি।গেটের কাছে যে গাছটা আছে ওখানে দাঁড়িয়ে আছি।”

” আচ্ছা তুই দাঁড়া আমরা আসছি।”

কায়াসা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আরোহী আর ইতির অপেক্ষা করছে।কায়াসা দেখতে পায় দুজন শাড়ি পড়া মেয়ে তার দিকেই আসছে।কায়াসার আর বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে এরাই আরোহী আর ইতি।কিন্তু তাদের দুজনের অবস্থা দেখে কায়াসা হা।দুজনেই শাড়ি পড়েছে,সেই সাথে মেকাপও করেছে।এদের এতো সাজগোছ দেখে বিরক্ততে কায়াসার কপাল কুচকে যায়।

” আ……কায়ু বেপি আমি তো ভাবতেই পারেনি তুই আসবি।” খুশি হয়ে বলে ইতি।

” না এসে কি আর উপায় আছে?যে হারে তোরা ফোনের উপর ফোন দিয়ে যাচ্ছিছিল।না আসলে তো আমার ফোনটাকে তোরা মেরেই ফেলতি।”

” এসব তুই কি পড়ে এসেছিস কায়ু?” আরোহী বলে।

” কেন?দেখ পাচ্ছিস না।ড্রেস পড়েছি।”

” আরে আমি সেটা বলেলি।তুই থ্রি-পিস পড়ে এসেছিস কেন?শাড়ি কেন পড়িসনি?শাড়ি পড়তে না পারলে নিয়ে আসতি আমরা পড়িয়ে দিতাম।”

” আমি শাড়ি পড়তে জানি,আমার এসব শাড়ি-টাড়ি ভালো লাগেনা তাই পড়িনি।”

” আরে আরু ছাড় তো এসব।ও এসেছে এটাই অনেক,আমি তো ভেবেছিলাম ও আসবেই না।কলেজেও কোন ফাংশনে ও এটেন্ড করেনি।আজ আমাদের কপাল ভালো যে ও এসেছে।এবার চল গিয়ে বসি।অনুষ্টান তো কবে শুরু হয়ে গিয়েছে।”

কায়াসা,ইতি আর আরোহী যেখানে অনুষ্ঠান হচ্ছে যেখানে যায়।ইতি আর আরোহী সামনে বসলেও কায়াসা পেছনে বসে।ইতি আর আরোহীও আর কায়াসাকে জোর করেনি।

একে একে সবাই স্টেজে এসে পারফরমেন্স করছে।কায়াসার এসব মোটেও ভালো লাগছেনা।সে উঠে যেতে নেবে তখন প্রিন্সিপাল স্টেজে আসে।তাই কায়াসা আবারো বসে পড়েছে।প্রিন্সিপাল নিজের মতে বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন।কয়েকজন ছাড়া বাকিরা যে তার মতেই কেউ উনার কথা শুনছেন না তা কায়াসা বুঝে গিয়েছে।

এতোক্ষণ সবাই প্রিন্সিপাল কথা না শুনলেও বর্তমানে ওনার বলা কথা সবার দৃষ্টি আর্কষণ করে।এতোক্ষণ যেখানে কমবেশি সবার ফিসফিস আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল এখন সেখানে শুধু একজনেরই আওয়াজ শোনা যাচ্ছে,সেটা হচ্ছে প্রিন্সিপাল।কায়াসাও এতোক্ষণ কথা না শুনলেও এবার সেও আগ্রহ নিয়ে প্রিন্সিপালের কথা শুনতে শুরু করে।

” তোমরা হয়তো অনেকেই জানো আবার অনেকেই জানোনা।আমাদের কলেজের একজন টিচার কিছুদিন আগে একটা রোড এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত হয়েছেন।যার কারণে বর্তমানে ওখানে কিছু মাসের জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছে।যতদিন না উনি পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছে ততদিন ওনার সব ক্লাস নতুন আরেকজন টিচার নেবেন।উনি মূলত গেস্ট টিচার হিসেবে জয়েন করেছেন।উনিও খুব ভালো একজন ডাক্তার।শহরের নামী একটা হসপিটালে উনি বর্তমানে কর্মরত অবস্থা আছেন।আমি আশা করি তোমরা সবাই ওখানে যথাযথ সম্মান করবে।তোমাদের নতুন টিচার হচ্ছে মিস্টার আদ্রিক আহসান।আদ্রিক তুমি স্টেজে এসে সবার উদ্দেশ্য কিছু বললে খুশি হতাম।”

কায়াসা ঘাড়টা একটু উঁচু করে সামনে তাকাই।একদম সামনের সারি থেকে একটা লোক উঠে দাঁড়ায়।লোকটাকে পেছন থেকেই দেখেই কায়াসা বুঝে গিয়েছে এটা কোন আদ্রিক।তাও সে সিউর হওয়ার জন্য স্টেজের দিকে তাকিয়ে রয়।লোকটা স্টেজের উঠে হাতে মাইক নেয় কথা বলার জন্য।হ্যাঁ না সেই রাক্ষস আদ্রিক।আদ্রিককে নতুন গেস্ট টিচার হিসেবে দেখে কায়াসার বিরক্তে কপাল কুচকে উঠে।

” দুনিয়াতে কি আর প্রফেসারের অভাব পড়েছিল নাকি মেডিকেল স্টুডেন্টের অভাব পড়েছিল যে এই আদ্রিকেই গেস্ট টিচার হিসেবে আসতে হলো?যাই হবে হোক আমাদের কোন ক্লাস না পেলেই বাঁচি।”

আদ্রিক মাইক হাতে অনেক কিছুই বলে যাচ্ছে তবে তার কিছুই কায়াসা মাথায় ঢুকছেনা।কায়াসা আর বসে থাকতে না পেরে উঠে চলে যায়।

হাঁটতে হাঁটতে কায়াসা দোতালার ওয়াশরুমে চলে আসে।এখানে এখন কেউ নেই।মাইকে কথা বলার কারণে আদ্রিকের আওয়াজ হালকা হালকা কায়াসা এখনো শুনতে পাচ্ছে।ওয়াশরুমে এসে কায়াসা মুখে পানি দেয়।যেহেতু সে কোন মেকাপ করেনি তাই তার মুখ ধুতেও কোন সমস্যা নেই।

মুখ ধুয়ে কায়াসা আবারো আস্তে আস্তে বারান্দায় দিয়ে হেঁটে সিঁড়ির কাছে যাচ্ছে।তবে সে সিঁড়ির কাছে পৌঁছাবে তার আগে কেউ তাকে টেনে একটা ক্লাস রুমে ঢুকিয়ে নেয়।

কায়াসার মুখ চেপে ধরেছে কেউ।পেছনে টেবিল থাকায় কায়াসা আর পিছিয়েও যেতে পারছেনা।অন্ধকারের কারণে মানুষটাকে দেখতে পাচ্ছে না কায়াসা।লোকটার হাত নিজের মুখ থেকে সরানোর জন্য ছটপট করছে কায়াসা।

” সু…….একদম নড়াচড়া করবেনা।” কায়াসা কানের কাছে এসে বলে কেউ।এতোক্ষণ অনুমান করে বলেছিল এটা একটা লোকটা কিন্তু এবার কায়াসা সিউর হয়ে গিয়েছে।একটা অপরিচিত লোক তাকে টেনে এনেছে ভাবতেই কায়াসার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়।সে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আরো বেশি নড়াচড়া করতে থাকে।

” এভাবে নড়াচড়া করছো কেন?শান্ত হও সুঁই।”

” সুঁই” নামটা শুনে কায়াসার নড়াচড়া অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়।অন্ধকারে মধ্যে কায়াসার সুতো নামের এশানকে দেখার চেষ্টা করছে কিন্তু হায় সে ব্যর্থ।হঠাৎ করেই কায়াসার প্রচন্ড ভয় হতে থাকে এইভেবে যে একটা সাইকো টাইপের খুনি সামনে সে দাঁড়িয়ে আছে।সে মানুষকে মারতে দ্বিতীয়বার ভাবেনা।কায়াসা চাইছে চিৎকার করতে কিন্তু পারছেনা কারণ এশান তার মুখ চেপে ধরেছে।কায়াসা বুঝতে পারছেনা তার এখন কি করা উচিত।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here