সেই তুমি ৩ পর্ব শেষ

#সেই_তুমি🍁
#সিজন_০৩
#পর্ব_২১ (সমাপ্তি পর্ব)
#Tabassum_Kotha

এক ঝটকায় শুয়া থেকে উঠে বসে হীর। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে সে। চোখ খুলে নিজেকে রুমে পেয়ে ভ্রম ভাঙে হীর এর। এতোক্ষণ সে যা যা দেখছিল সবটাই তার অবচেতন মনের জল্পনা ছিল। বাইরে কোনো মেঘ বা বৃষ্টি কিছুই নেই। সত্যি সবটা হীর এর স্বপ্ন ছিল। খানিকটা নিশ্বাস নিয়ে হীর তুর্যর দিকে ফিরে তাকায়। তুর্য কে পাশে না পেয়ে বুক কেঁপে উঠে তার। একটু আগে দেখা ভয়ানক স্বপ্ন টা কি সত্যি বাস্তবে রুপ নিতে যাচ্ছে! হীর দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে পরে তুর্য কে খুজতে। হীর ব্যালকনিতে ছুটে গিয়ে সেখানে তুর্য কে পায় না। পুনরায় রুমে ফিরে দরজার দিকে এগিয়ে গেলে তুর্য পিছন থেকে হীর কে ডাকে।
“হীর। কোথায় যাচ্ছো তুমি এতো রাতে?”
তুর্য কে দেখে যেনো হীর পুনরায় নিশ্বাস ফিরে পায়। দৌড়ে এসে তুর্যকে জড়িয়ে ধরে হীর।
“আপনি কোথায় ছিলেন তুর্য? জানেন আপনি কতো ভয় পেয়েছিলাম আমি?”
“হেই রিল্যাক্স। কি হলো? আমি তো তোমার কাছেই আছি।”
“ওয়াদা করুন তুর্য কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেন না!”
“কোথাও যাবো না।”
“এভাবে নয়। ওয়াদা করুন। মৃত্যু এলেও আমাকে একা ফেলে যাবেন না।”
“ওয়াদা করছি। কখনও তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। কোন দুঃস্বপ্ন কখনও আমাদের আলাদা করতে পারবে না।”

হীর কে বুকে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পরে তুর্য। হীর এর চুলে আলতো হাতে বিলি কেটে তাকে শান্ত করছে। কিছুক্ষণ পর হীর ঘুমিয়ে পরলে হীর এর কপালে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দেয় সে। হীর কে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য যদিও সে বলে দিয়েছে মৃত্যুও তাদের আলাদা করতে পারবে না,, কিন্তু আদৌ কি সেটা সম্ভব? একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুচোখের পাতা এক করে নেয় তুর্য,, এক নতুন ভোরের আশায়। এক নতুন সকাল, এক নতুন জীবন তাদের অপেক্ষা করছে সামনে!

.
.
অতি প্রাচীন একটা প্রবাদ আছে, সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকেই সময় তার আপন গতিতে বয়ে চলেছে। সময়ের পরিক্রমায় হাজার হাজার সাম্রাজ্য গঠন হয়ে, সেসব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তবুও সময় পিছনে না ফিরে তার বহমানতা বজায় রেখেছে।
সময়ের বহমান গতিতে তুর্য আর হীর এর সংসার জীবনের দুই বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এই দুই বছরে বারো বার মৌসুম বদলানোর সাথে তাদের জীবনেও অনেক কিছু বদলেছে। একবছর আগে হঠাত্ হৃদক্রিয়া বন্ধ হওয়ায় আফজাল সাহেব পরলোক গমন করেছেন। আফজাল সাহেবের চলে যাওয়ার পর তমা বেগমও আর আগের মতো নেই। পূর্বের রাগী তমা বেগম যেনো কোথাও হারিয়ে গিয়েছে। বিজনেসের সম্পূর্ণ দায়ভার তুর্য তার একলার কাঁধে তুলে নিয়েছে। আফজাল সাহেবের বিজনেস আর কোম্পানি কে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে এই দুই বছর হাড় ভাঙা খাটুনি খেটেছে সে। অনেক পরিবর্তন এসেছে তুর্যর ব্যক্তিত্বে। কিছু টা সে নিজে এনেছে কিছু টা সময় এনে দিয়েছে।

.
একটা বই দিয়ে মুখ ঢেকে বিছানায় চিত্ হয়ে শুয়ে আছে হীর। যদিও বইটা পড়ার জন্য দেওয়া হয়েছে তাকে, কিন্তু ইদানিং পড়ালেখা তার ভালো লাগে না। তুর্যর পায়ের শব্দে হীর হুরমুরিয়ে উঠে বই পড়ার ভান ধরে। তুর্য রুমে ঢুকে হীর এর দিকে না তাকিয়েই হাতের ব্লেজার টা কাউচে রেখে ব্যালকনিতে চলে যায়। কাঁচের এপার থেকে তুর্য কে ফোনে কথা বলতে দেখে বড় সড় একটা ঢোক গিলে হীর। হাতের বইটা বিছানায় ফেলে ঝটপট উঠে ব্যালকনিতে চলে যায়। তুর্য ফোন কল টা কেটে দিয়েছে। একহাতে চোখের পাওয়ার গ্লাস টা নিয়ে অন্যহাতে কপালে স্লাইড করছে। যখনই কোনো কিছু নিয়ে টেনশন হয় তার সে এমনটা করে।

হীর একটু এগিয়ে গিয়ে তুর্যর কাঁধে মাথা রাখে। পড়ন্ত বিকেলের শেষ এক ফালি রোদ হীর এর চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। তুর্য সেদিকে এক নজর দৃষ্টি দিয়ে হীর কে নিজের কাছে থেকে সরিয়ে দেয়।
“ডোন্ট টাচ মি। তুমি সেই অধিকার অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছো।”
“তুর্য! আপনি এভাবে বলতে পারেন না।”
“কেনো পারবো না? অস্বীকার করতে পারো তুমি আমাকে ধোঁকা দাও নি? আমাকে প্রতিনিয়ত মিথ্যে বলো নি?”
“দেখুন তুর্য। আপনি শান্ত হোন। আই ক্যান এক্সপ্লেইন।”
“হুয়াট এক্সপ্লেইন হীর? তুমি নিজে তো আমাকে মিথ্যে বলেছোই আবার মিসেস মিতা কে দিয়েও মিথ্যে বলিয়েছো তার হাসবেন্ড এর দিব্যি দিয়ে। এটা তোমার কাছে ঠিক মনে হচ্ছে?”
“ঠিক মনে হয়েছে বলেই তো করেছি তাই না!”
“আই ডোন্ট ট্রাস্ট ইউ এনিমোর।”
“তুর্য প্লিজ আপনি শান্ত হোন। আমার কথা টা শুনুন।”
“কি শুনবো আমি হীর? তুমি কেনো আমাকে মিথ্যে বলেছিলে যে তুমি হেলদি আছো? কেনো বলেছিলে আমাদের প্রেগনেন্সিতে কোনো কমপ্লিকেশন নেই?”
“ফার্স্ট অফ অল, আমাদের নয়, আমার প্রেগনেন্সি। আপনি নন আমি মা হতে চলেছি। কি বারবার আমাদের প্রেগনেন্সি, আমাদের প্রেগনেন্সি করেন? ইচ্ছে করে বাচ্চা টা আপনার পেটে ঢুকিয়ে দেই। সব ঝামেলাই শেষ।”
“আমি পারলে তোমাকে কষ্ট করতে হতো না। আমার বাচ্চা আমিই পেটে ধরতাম। কিন্তু তুমি কেনো মিথ্যে বলেছো?”
“এখানে মিথ্যের কি আছে? কোনো কমপ্লিকেশন নেই। আমি আর বাচ্চা দুজনেই হেলদি আছি।”
“না কমপ্লিকেশন আছে। এজন্যই ডেলিভারি সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে হবে।”
“এটা খুবই কমন একটা ব্যাপার। সিজারিয়ান কোনো সিরিয়াস কিছু নয়। একশো জনের প্রায় অর্ধেকেরই বর্তমানে সিজারিয়ানের মাধ্যমে ডেলিভারি হয়।”
“কিন্তু এটা! আচ্ছা এটা ছাড়ো। কিন্তু তোমার বয়স অনেক কম। এতো কম বয়সে এই পদ্ধতিতে… আমি কোনো দুঃস্বপ্নেও চাই না তোমার কোনো সমস্যা হোক।”
“আমার বিশ বছর হয়ে গিয়েছে তুর্য। ছোট বাচ্চা নই আমি। আপনি শুধু শুধুই এতো চিন্তা করছেন।”
“নো হীর। আমার আরেকটু কেয়ারফুল থাকা উচিত ছিল। আমার জন্যই তোমার এতো সমস্যা হচ্ছে। আমার জন্যই তোমার এতো কম বয়সে কনসিভ করতে হয়েছে। আ’ম স্যরি হীর। আমি নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারবো না।”
“উফফ আপনি নিজেও পাগল হয়ে যাবেন আর সাথে আমাকেও করবেন।আমার এতো কম বয়স না তুর্য। এর থেকেও কম বয়সে অনেক মেয়েরা বাচ্চা জন্ম দেয়। আর মা হওয়া টা সমস্যা নয়। এটা তো প্রতিটা মেয়ের অহংকার।”
“তোমার কষ্ট যে আমার সহ্য হয় না। কিন্তু ডা মিতা কেনো একবারও বললেন না আমাকে যে তোমার নর্মাল ডেলিভারি পসিবল না?”
“ওসব বাদ দিন। এই দেখুন।”

হীর তুর্যর এক হাত তার পেটে চেপে ধরে। নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা হীর।
“দেখুন আমাদের সন্তান নিশ্বাস নিচ্ছে। ওর হৃত্স্পন্দন শুনতে পাচ্ছেন! আপনার আর আমার ভালোবাসার চিহ্ন!”

তুর্য হাঁটু ভেঙে বসে হীর এর পেটে আলতো করে একটা চুমু খায়।
“আমার রাজকন্যা এখানে তিলে তিলে বেড়ে উঠছে।”
“কে বললো রাজকন্যা? আমার তো একটা ছেলে হবে। ঠিক আপনার মতো হ্যান্ডসাম। আর আমার ছেলের পিছনে সব মেয়েরা লাইন মারবে।”
“সিরিয়াসলি? তোমার এই কারণে ছেলে চাই?”
“কিছু টা এই কারণে, তবে বাকিটা হলো আপনার একটা প্রতিচ্ছবি চাই আমার।”
“ওয়েট আ মিনিট। তুমি টপিক চেঞ্জ করেছো। আমরা এখানে তোমার হেলথ্ নিয়ে কথা বলছিলাম।”
“যখন আমাদের সন্তান কে আপনি প্রথম কোলে নেবেন তখন আর এসব মনে হবে না।”

পুনরায় তুর্যর কাঁধে মাথা রাখে হীর। তার প্রতিটা দিন যেনো একেকটা স্বপ্নের মতো কাটছে। এই দু বছরে একবারের জন্যও কষ্ট জিনিস টা হীর কে বুঝতে দেয় নি তুর্য। হীর এর কপালে একটা চুমু এঁকে দেয় তুর্য। হীর তুর্যর হাত আরও শক্ত করে চেপে ধরে। মৃদু বাতাস শুরু হয়েছে। বাতাসে হীর এর চুলগুলো উড়ে তার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। তুর্য আলতো হাতে হীর এর চুল সরিয়ে দেয়। গর্ভবতী সময় হয়তো মেয়েদের সৌন্দর্য লাখগুন বেড়ে যায়। তাই তো গোলগাল শরীর আর ফোলা মুখেও অমায়িক লাগছে হীর কে। স্বাস্থ্য বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ পোশাক পরে নড়তে চড়তে ভীষণ কষ্ট হয় তার। হঠাত্ তুর্যর হাত ছেড়ে দিয়ে একটু সরে দাঁড়ায় হীর। মুহূর্তেই তার চেহারার রং পাল্টে যায়। তুর্যর কিছু বুঝে উঠার আগেই হীর চিত্কার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তুর্য প্রাণপণ চেষ্টা করে হীর কে সামলানোর। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ না হলে তুর্য হীর কে নিয়ে হসপিটালে রওনা হয়ে যায়। তুর্য আর হীর এর সাথে তমা বেগমও হসপিটালে যায়।

.
হসপিটালের করিডোরে পায়চারি করছে তুর্য আর বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। প্রায় আধা ঘণ্টা পার হয়েছে হীর কে ওটি তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তুর্যর পায়চারিতে তমা বেগম বিরক্ত হয়ে বলেন,
“শুরুটা করেছিস কি তুর্য? এভাবে পায়চারি করলে তো আর সমস্যা সমাধান হবে না তাই না! বস তো বাপু একটু চুপ করে।”
“আম্মু তুমি আমাকে চুপ করে বসতে বলছো! দেখছোই তো এক মাস আগে হীর এর লেইবর পেইন উঠেছে। কি প্রব্লেম হলো বলতে পারো আম্মু?”
“ভালো বলতে পারলে বল নয়তো চুপ থাক। যত্তসব অলুক্ষণে কথা।”

কার কথা কে শুনে! তুর্য আবারও তার পায়চারি শুরু করে দিয়েছে। আরও কিছু সময় পর ডাক্তার ওটি থেকে বেরিয়ে আসে।
তুর্য হন্তদন্ত হয়ে ডাক্তারের দিকে ছুটে যায়।
“হাউ ইজ হীর? হীর ঠিক আছে তো? কোনো কমপ্লিকেশন ছিল না তো? বেবি? বেবি ঠিক আছে তো? ডাক্তার আপনি কিছু বলছেন না কেনো?”
“তুই বলার সুযোগ দিলে তো বলবে! একটু শান্ত হো।” – তমা বেগম।
তুর্যর অবস্থা দেখে ডাক্তার একগাল হেসে উত্তর দেয়,
“এভরিথিং ইজ অলরাইট মি. চৌধুরী। মিসেস চৌধুরী আর বাচ্চা দুজনেই সুস্থ আর হেলদি আছেন। মিসেস চৌধুরী একটা হেলদি ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন।”

তুর্য ডাক্তার কে ধন্যবাদ জানিয়ে হীর এর কাছে চলে যায়। এনেস্থেশিয়ার কারণে এখনও অবচেতন অবস্থায় রয়েছে হীর। হীর এর পাশেই সাদা তোয়ালেতে মুরিয়ে ছোট্ট একটা বাচ্চা ঘুমিয়ে আছে। বাচ্চাটার কাছে গিয়ে হাটু ভেঙে বসে পরে তুর্য। ফুটফুটে বাচ্চা টা মায়ের আজলে পরম শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। ঘুমন্ত বাচ্চা টা কে তুর্য তার কোলে তুলে নেয়। এক মুহূর্তের জন্য তার পৃথিবী সেখানেই থমকে যায়। বাবা হওয়ার আসল অনুভূতি কি সেটা সে আজ বুঝতে পারছে। তুর্যর অজান্তেই একফোঁটা পানি তার চোখ থেকে গড়িয়ে বাচ্চা টার চোখের উপর পরে। ঘুম ভেঙে যাওয়ায় তুর্যর ছেলে রাগে চিত্কার শুরু করে দেয়। জ্ঞান না ফেরায় হীর এসবের কিছুই টের পায় নি। হীর এর যেনো সমস্যা না হয় তাই তুর্য নিজেই বাবুকে কোলে নিয়ে বাইরে চলে যায়। বহু কষ্টে তুর্য বাবুর কান্না থামিয়ে পুনরায় বাবু কে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।

.

২ মাস পর,

তুর্য আর আমার ছেলে এই দুই মাসে কিছুটা বড় হয়েছে। তুর্য তার ছেলের নাম আদ্রিয়ান রেখেছেন। নামটা আমারও ভীষণ পছন্দ হয়েছে। এই দুই মাসের বেশিরভাগ সময় আমার বিছানা তেই কেটেছে। কোন কাজ তো দূরেই থাক একটুখানি বেশি নড়াচড়া করলেই পেটে ব্যথা শুরু হতো। এখন অবশ্য অনেক ভালো আছি। আগের মতো নড়তে কষ্ট হয় না। এই দুই মাস তুর্য আর বড় আম্মুর উপর অনেক চাপ গিয়েছে। আদ্রিয়ান কে সারাক্ষণ তারা দুইজনেই সামলিয়েছে। বড় আম্মু আদ্রিয়ান কে অনেক আদর করে। তার তো এক মুহূর্তও কাটে না তার নাতি কে না দেখে। কিন্তু একটা আফসোস আমার সারা জীবন থেকে যাবে। বড় আব্বু তার দাদাভাই কে দেখে যেতে পারেন নি। বড় আব্বু কে আমরা সবাই খুব মনে করি। বিশেষ করে তুর্য। প্রায় সময় বড় আব্বু কে মনে করে চোখের পানি ফেলেন। অবশ্য সেই পানি আমাকে কখনো দেখান না। তাফসি কে দেখি না অনেক দিন হয়। এক বছর হতে চললো তাফসি আর রায়ান নিউইয়র্ক শিফট হয়ে গিয়েছে। মাঝে মধ্যে ফোনে যোগাযোগ হয় শুধু।

তাফসির কথা মনে করতে করতে হঠাত ফোন বেজে উঠে। মোবাইল স্ক্রিনে ইংরেজি অক্ষরে তাফসির নাম টা ভেসে ওঠে।
“কেমন আছিস হীর? আর আমাদের আদ্রিয়ান কেমন আছে? আমার কথা মনে করে নাকি?”
“তোমাকে তো আমার ছেলে চেনেই না। তোমরা বাপু ভিনদেশী।”
“একটা সুযোগ ও ছাড়িস না তুই।”
“তোমরা দেশে আসবে না আবার এতো বড় বড় কথা বলো?”
“চাইলেই কি আর ফিরে আসা যায় বল!”
“আচ্ছা ওসব বাদ। ভালো আছি আমরা সবাই। তোমাদের কি খবর তাই বলো। রায়ান ভাইয়া কেমন আছে?”
“এইতো চলছে। রায়ানও ভালোই আছে।”
“মন খারাপ কোরো না। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখবে।”
“হুম। আচ্ছা হীর, রায়ান এসেছে। পরে ফোন দিচ্ছি।”

কথা টা বলে তাফসি কল কেটে দেয়। আসলে রায়ান বাসায় আসে নি। নিউইয়র্কে এখন বিকেল মাত্র। এই সময় রায়ান কখনই আসে না। এটা অবশ্য হীর ও জানে। তাই তাফসির মিথ্যা কে শায় দিয়ে কোনো পাল্টা প্রশ্ন সে করে নি।

মোবাইল টা হাত থেকে বিছানায় ছুড়ে ফেলে কান্নায় ভেঙে পড়ে তাফসি। এই নিয়ে চতুর্থ বার সে ব্যর্থ হয়েছে। টানা চার বার চেষ্টা করেও সে কনসিভ করতে পারে নি। যদিও রায়ান তাফসিকে এই নিয়ে কখনও কিছুই বলে নি তবুও তাফসির কাছে এই ব্যর্থতা সবচেয়ে বেশি কষ্টদায়ক। বিছানায় থাকা প্রেগনেন্সির রিপোর্ট টা হাতে নিয়ে দেখতেই তাফসির কান্না আরও বেড়ে যায়। এবার পিরিয়ড মিস হওয়ায় সে অনেক বেশি খুশি হয়েছিল। কিন্তু তার থেকে কয়েকগুণ বেশি কষ্ট পেয়েছে রিপোর্ট টা হাতে পাওয়ার পর।

কলিং বেল এর শব্দে ঘরের মেইন ডোর খুলে দেয় তাফসি। রায়ান এসেছে। রায়ান কে দেখে চোখ মুছে নেয় তাফসি।
“তুমি এই অসময়ে?”
“হসপিটাল থেকে ফোন এসেছিল।”
তাফসি রায়ানকে পিছনে ফেলে চলে যেতে নিলে রায়ান তাফসির হাত চেপে ধরে নিজের বুকে টেনে নেয়।
“সব ঠিক হয়ে যাবে। আই এম উইথ ইউ। অলওয়েজ।”

.
রাত প্রায় এগারোটা বাজে। আদ্রিয়ান কে ঘুম পাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয় হীর। তুর্য কে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার কাছে চলে যায়। ব্যালকনিতে গিয়ে হীর এর চোখ কপালে উঠে যায়। ব্যালকনিতে মাদুর পেতে বিছানা করেছে তুর্য। সারা বিছানায় গোলাপের পাপড়ি ছিটানো। পাশেই সেন্টেড ক্যান্ডেল লাইট আর ফুল দিয়ে ইংরেজি ভাষায় “আই লাভ ইউ হীর” লেখা।

“তুর্য এসব!”
“তুমি আমাকে যেই উপহার দিয়েছো তার বিনিময়ে এসব কিছুই না।”
“তার মানে আপনি আমাকে ভালোবাসেন শুধুমাত্র আদ্রিয়ানের জন্য? আমাকে ভালোবাসেন না?”
“তোমাকে ভালোবাসি বলেই তো আদ্রিয়ান কে পেয়েছি। তোমাকে এখনও ভালোবাসি। পরেও ভালোবাসবো।”

হীর দৌড়ে গিয়ে রুম থেকে তুর্যর গিটার টা এনে তুর্যর হাতে দেয়।
“একটা গান শোনাবেন?”
“তুমি কিছু চাইবে আর আমি সেটা দেবো না এটা হয় না!”

তুর্য গিটারে সুর তোলে আর হীর তার সামনে বসে।
…..
আমার সকল অভিযোগে তুমি
তোমার মিষ্টি হাসিটা কি আমি?
আমার না বলা কথার ভাঁজে
তোমার গানের কত সুর ভাসে

তোমায় নিয়ে আমার লেখা গানে
অযথা কত স্বপ্ন বোনা আছে
আমার হাতের আঙুলের ভাঁজে
তোমাকে নিয়ে কত কাব্য রটে

ভুলিনি তো আমি তোমার মুখে হাসি
আমার গাওয়া গানে তোমাকে ভালোবাসি
আসো আবারও কাছে, হাতটা ধরে পাশে
তোমায় নিয়ে যাব আমার পৃথিবীতে
…..

হীর এর হাত ধরে তুর্য তাকে নিজের কাছে টেনে নেয়। হীর কে নিজের কোলে বসিয়ে হীর এর খোঁপা করা চুলগুলো খুলে দেয় সে। লজ্জা মেশানো দৃষ্টিতে হীর তুর্যর দিকে তাকিয়ে আছে। হীর এর মুখ তুর্য নিজের মুখ বরাবর এনে তার ঠোঁট হীর এর ঠোঁটের ভাঁজে চেপে ধরে। অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতে তুর্য আর হীর এর ভালোবাসা একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছে। রাতের আকাশ যেনো এদের দেখে লজ্জায় মেঘের আড়ালে মুখ লুকাচ্ছে বারবার।

রাত প্রায় তিন টা বেজে গিয়েছে। পাশেই তুর্য ঘুমে বিভোর হয়ে আছেন। আমার দুচোখে কোনো ঘুম নেই। এমন নয় যে আমি কষ্টে আছি, যার কারণে ঘুম উড়ে গিয়েছে। আসলে অতিরিক্ত সুখেও মানুষের রাতের ঘুম উড়ে যায়। আমার সাথেও সেটাই হচ্ছে। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার তুর্য। এই মানুষটার ভালোবাসায় আমি প্রতিনিয়ত মরেছি। আজ সেই মানুষটার ভালোবাসাতেই আমি বেঁচে আছি। তুর্য কে পেয়ে আমি সব পেয়েছি। আমার অপূর্ণতাকে পূর্ণতা প্রদান করেছেন তুর্য।

আদ্রিয়ানের কান্নার শব্দে হীর শাড়ি ঠিক করে আদ্রিয়ান কে এনে তার পাশে নিয়ে শুয়ে পরে। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান আবার ঘুমিয়ে পরলে হীর তুর্যর গালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে তার বুকে মাথা রাখে।

আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি তুর্য। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এভাবেই আপনার সাথে থাকতে চাই।

রাতের আকাশের তারা রাও হয়তো আজ তুর্য আর হীর এর সুখ দেখে হিংসায় জ্বলছে!!

সমাপ্ত।

[,অতঃপর শেষ। এন্ডিং টা ভালো মতো লিখতে পারি নি দুঃখিত। এক বছর অব্দি ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।❤]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here