#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_১৫
মায়ের কথা শেষ হতেই, মিঃ চৌধুরীর কথায় সবাই অবাকের ওপর ওবাক হয়। ভাবনার মাঝেই আবার বলে ওঠলো,
–আমি করবো ওকে বিয়ে! আপনারা বিয়ের ব্যবস্থা করুন। ( গম্ভির গলায়)
— তুমি? তুমি কেন করবে এই নস্টা চরিত্রের মেয়েকে বিয়ে,
রাইসার কথায় মিঃ চৌধুরী হাত মুঠ করে হিংস্র চোখে তাকালে রাইসা ভয় পেয়ে এদিক সেদিক তাকায়।
এর মধ্যেই এক মহিলা বলে উঠলো!
— ছি ছি এই মেয়েকে কিনা আমার বোন তার ছেলের জন্য ঠিক করেছিলো,ভাগ্যিস ওর চরিত্র সম্পর্কে জানতে পেরে গিয়েছি, নয়ত এই মেয়েটাকেই আমরা শেষে কিনা বউ করে নিতাম!
এবার বুঝলাম ওই মহিলা আমার বিষয় কেন এত ইনফরমেশন নিচ্ছিলো।এবার ওই মহিলা বলে উঠলো-
— আমি তোমাকে ভালো মেয়ে ভেবেছিলাম আর তুমি কিনা বাড়িতেই এসব করে বেরাও?
এবার আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না,চিৎকার করে বলে উঠলাম –
— থামুন সবাই, সেই কখন থেকে আ আমকে যা নয় তা বলছেন, আমি বার বার বলছি তো এই লোকটা আমাকে জোর ক!
এর ভিতর রাইসা বলে উঠলো-
— জোর করে? কখন কিভাবে? আর তুই কি বাচ্চা নাকি হ্যা, নাকি আমাদের তোর বাচ্চা মনে হয়?
দাদি আমার দিকে তেরে এসে বলে উঠে,
— আমাদের বংশের না তো! হইবি তো এমনি। কি জানি কোন পাপির
নস্টামির ফল আমরা পালতাসি।
আমি দাদির কথায় অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলাম,
— দা দাদি কি বললে তু তুমি আমি!
হুট করেই চাচ্চু এসে দাদি কে বলতে শুরু করলো,
—মা সাবধান হয়ে যাও। আর কি বলছো এসব? তোমাকে আমি সাবধান করছি কিন্তু,
আমার হটাৎ চোখ ঝাপসা হলে পরে যেতে নিলে সামিয়া আপু চিৎকার করে উঠলে,
মায়া আর তুবা জড়িয়ে ধরে, এর মাঝেই শুনলাম মিঃ চৌধুরীর আম্মু মানে আনটি ওনার কাছে গিয়ে হাত ধরে বলছে —
— আমি জানি আমার ছেলে কোন ভুল সিধান্ত নেয় না, সে যাই করবে ভেবে বুঝে চিন্তা করে করবে। আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই আজ”
আনটির কথায় মিঃ চৌধুরীর হিংস্র চোখ শান্ত হয়ে এলো- আনটির দিকে তাকাতেই আনটি বলে উঠলো!
— ঈশা যেদিন প্রথম আমাদের বাড়িতে আসে, আমি আর তোমার বাবা অজান্তেই মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলি। সত্যি বলতে আমরা সেদিন ডিসাইড করি তোমাকে এ ব্যপারে জিজ্ঞাস করবো, এখন তুমি যদি বলো একদিনে কিভাবে কাউকে চেনা সম্ভব? তাহলে আমার উত্তর হবে, সম্ভব, তুমি মনের চোখ দিয়ে দেখলে অবশ্যই সম্ভব। আমি এই মেয়েটার মধ্যে সরলতা দেখেছি,মায়া দেখেছি, আর সবচেয়ে বেসি মুগ্ধ করেছে তার ভরসা। তুমি কি তোমার বোনের ক্ষেত্রে তা দেখতে পাও না?
এর মধ্যেই আংকেল এসে মিঃ চৌধুরীর কাধে হাত দিয়ে বলে উঠলো –
—আমরা ঈশা কে আমাদের পুত্র বধু রুপে দেখতে চাই না! আমাদের মেয়ে চাই, দেবে না সেই সুযোগ তুমি?
মিঃ চৌধুরী হটাৎ সাহিল ভাইয়া কে ডেকে উঠে বললো-
— সাহেল সব রেডি করো। আশা করি আপনাদের কারও কোন আপত্তি নেই? আর কারও আপত্তি থাকলে আই ডোন্ট কেয়ার, এই আরাভ এর সামনে চোখ তুলে কথা বলার শাস্তি সবাই পাবে। ঈশা ইস মাই উডবি ওয়াইফ,। বিয়ে এক্ষুনি হবে।
আমি কোন মতে মাথা তুলে মিঃ চৌধুরীর সামনে এসে বললাম,
— আমাকে কেউ ভালোবাসে না, মিঃ চৌধুরী। আমাকে বিশ্বাস করে না কেউ। ওই বাজে লোকটা আমাকে স্পর্শ করতে চেয়েছে। আমার পবিত্রতা নস্ট করতে চেয়েছে। আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। কিছুতেই করবো না। আমি বোঝা, খারাপ তো বেশ আ আমি চলে যাবো- ( কান্না করে)
মিঃ চৌধুরী আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বাকা হেসে আমাকে হুট করেই কোলে নিয়ে নেয়, আমি ভয় পেয়ে ওনার গলা আকরে ধরে , চিৎকার করে নিজেকে ছাড়াতে চেস্টা করে বলতে শুরু করি।
—- ছাড়ুন, ছাড়ুন বলছি, আমি বিয়ে করবো না, প্লিজ মিঃ চৌধুরী বোঝার চেস্টা করুন, আমাকে বিয়ে করে আপনার লাইফ নস্ট করবেন না প্লিজ, ছাড়ুন আমায়।
উনি আমাকে জোড় করে সোফায় বসিয়ে কাজি সাহেব কে বলে,
— বিয়ে স্টার্ট করুন, সাহেল গার্ডদের গান বের করতে বলো, আর আপনি রেজিস্ট্রার করুন —
—এর মধ্যে সবাই নিচে চলে এলো, আমি চেচিয়ে বলে উঠলাম ছাড়ুন আপনি, আমি বিয়ে করবো না। আপনি কি ভেবেছেন আমাকে দয়া দেখাবেন, লাগবে না কারো দয়া, আমি থাকবো না এখানে ছাড়ুন না প্লিজ! ( কেঁদে অসহায় চোখে)
মাঝেই রাইসা দৌরে এসে আমাকে টানতে টানতে মিঃ চৌধুরী কে বললো —
— আপনি ওকে জোড় করতে পারেন না৷ ওর মত নেই বিয়েতে। ঈশা তুই উঠে আয় বলছি। এই তোর লাজ – লজ্জা নেই? যেই দেখলি আইকন, বড়লোক ওমনি তুই ঝুলে গেলি ওর গলায়, আয় বলছি, তোর জায়গা এখানে না, তুই রাস্তার
ব্যস মিঃ চৌধুরীর রাগের বাধ ভেংগে গেল! উনি উঠে রাইসাকে তুলে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে, কাঁচের টেবিল লাত্থি দিয়ে ফেলে চিৎকার করে বলে ওঠলেন!
— কে কোন জায়গার মেয়ে একটু পর সবাই দেখতে পাবে। গার্ড একটা মানুষ যেন না বের হতে পারে। প্রত্যকটা মানুষ আজ জানবে তারা কাকে কি বলেছে। যে বাড়াবাড়ি করবে তাকেই সুট করবে। গট ইট?
— ই ইয়েস স্যার।
মিঃ চৌধুরীর থাপ্পড় খেয়ে রাইসা এখনো মাটিতে আছে, মা আর দাদি দৌরে গিয়ে ধরে। চাচ্চু আমার দিকে এসে বলতে শুরু করে।
— ঈশা মা, আমি তোর বাবা না ঠিক! কিন্তু তোকে একজন বাবার থেকে কম ভালোবাসি না৷ আমি যানি আমার আম্মুটা কেমন, আর আমরা চেয়েছি তোকে একটা ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে, আজ তোর এই অবস্থায় যে ছেলে তোকে বিশ্বাস করছে আম্মু তাকে পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার। আমি স্যার এর অফিসে কাজ করি ১৭ বছর এর মধ্যে আরাভ বাবাকে আমি চিনি রে মা! প্লিজ মা আমার কথাটা রাখ।
আমি অসহায় চোখে চাচ্চুর দিকে তাকিয়ে একে একে চাচিমা আপু, তুবা সবার দিকে তাকালেই ইশারায় হ্য বোঝায়, মায়ের দিকে তাকাতেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। আমি মাথা নিচু করে কেঁদে বলে উঠি-
— আমি বি বিয়েটা করবো।কিন্তু থাকবো না কারো কাছে, চ চলে যাবো, কারো দ দয়া চাই না আমার,
—সেটা সময় বলবে মিসেস চৌধুরী। বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।
তারপর কবুল আর রেজিস্ট্রার হয়ে গেলো।হয়ে গেলাম আমি অন্যকারো নামের, পদবির বউ।
কবুল বলার সাথে ঝাপসা চোখে দুই ফোটা অশ্রুঁকনা বিসরজন দিলাম।
বিয়ের কার্যক্রম শেষ হতে মিঃ চৌধুরী দাড়িয়ে গার্ড কে ইশারা দিলেন, ওনার ইশারা পেয়ে রাহুল কে নিয়ে এলো।সবাই তাকে দেখে আতকে উঠলো,কারন আগের রাহুল আর এই রাহুল এর মধ্যে বিশাল তফাৎ, গায়ে মারের চিহ্ন স্পষ্ট। এবার উনি রাগে কাপতে কাপতে বললেন,
— তো, তুই কি বলবি সব নাকি আরও ট্রিটমেন্ট দিবো।
— ব বলছি। আমি কিছু জানি না, আমি এসব করতে চাই নি, আমাকে এই মেয়েটা
বলেছে এসব করতে।
রাহুল এর আংগুল বরাবর তাকাতেই দেখলাম রাইসার দিকে তাক করা, সবাই অবাক দৃষ্টি তে রাইসার দিকে তাকালে রাইসা তোতলাতে তোতলাতে বলে।
— আ আমি কি করেছি৷ ও আমাকে ফাসাচ্ছে। আমি কি কিছু বলি নি। মা, দাদি বিশ্বাস করো, আমি বলি নি ঈশার ক্ষতি করতে,।
— ও রিয়েলি? তুমি কিচ্ছু বলো নি? আমার কাছে প্রুভ আছে। প্রুভ দেখলেও কি একি কথা বলবে মিস রাইসা?
মিঃ চৌধুরীর কথায় রাইসা ঘামতে লাগলো,
এবার উনি সাহেল ভাইয়া কে কিছু ইশারা করতেই উনি পর্দার স্ক্রিন চালু করলেন যেখানে রাইসা আর রাহুল এর কথা গুলো স্পষ্ট –ওদের কথা গুলো ছিলো!
— আমি জানি ঈশাকে তোমার ভালো লেগেছে( রাইসা)
— হ্যাঁ ভালো লেগেছে। আসলে ওর রুপ উফফ, পাগল করা, ( রাহুল)
— তুমি ঈশাকে চাইলেও নিজের করতে পারবে না, ও সেই সুযোগই দিবে না। তাই বলছি শোনো একটা প্লেন করি হাত মেলাই তাতে তোমারও লাভ আর আমারও। ( সয়তানি হেসে)
— তোমার কি লাভ? ও তো তোমার বোন তাহলে?
— উফফ এই মেয়েটা আমার বোন না। আর আমার জায়গা নিয়ে বসে আছে, বিদায় করবো এই বাড়ি থেকে ওকে৷ আমি সহ্য করতে পারি না। আর এখন তো আরাভ কে আমার চাই, কিন্তু এই মেয়েটা বার বার এসে সেখানে সিমপাথি পায়৷ তোমার আর কিছু জানতে হবে না, তোমার তো ওকে চাই? আর তোমার যে বাজে নজর তার জন্য ঈসা এমনিতে বিয়েতে রাজি হবে না। তাই প্লেন করেছি, প্লেন অনুজায়ি কাজ করলে তোমাকে ঈশা বিয়ে করতে বাধ্য।
— এ তো দেখছি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। প্লেন বলো রাইসা!
— সামিয়ার বিয়ের দিন, ভরা বিয়ে বাড়িতে মানুষ ভর্তি থাকবে। তাই ওইদিন প্লেন কাজে লাগাতে হবে, আমি ওকে ওর রুমে পাঠাবো আর তুমি ওর সাথে জোর করবে, এমন সময় আমি সবাইকে নিয়ে তোমার রুম এ হাজির হলে সবাই ওকেই দুসবে তাই তখন ঝোপ বুঝে কোপ দিতে হবে। বুঝতে পেরেছো। ( সয়তানি হেসে)
—বুঝেছি মানে এক্সট্রা বুঝেছি।
দুইজনে সয়তানি হেসে বলে দিচ্ছে আমার পিঠ পিছে তারা কত বড় সরযন্ত্র করেছে। মিঃ চৌধুরী রাগি চোখে রাইসার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই ঘৃনার চোখে রাইসার দিকে দৃষ্টি তাক করলে, রাইসা সবার দিকে কোনা চোখে চেয়ে বললো।
— আম আম্মু এসব মিথ্যা, আ আমি কিছু জানি না৷ এগুলো ইডিট করা৷ এখন তো এমন ইডিট করা যায়। আমি রাইসার দিকে এগিয়ে ঠাস করে একটা চড় মেরে বললাম
— তুই আমার বোন রাইসা? আমি তোর কি ক্ষতি করেছি? কেন এই সর্বনাস করলি রাইসা৷ তুই তো যা চেয়েছিস সব পেয়ে যেতি৷ আমাকে তো মাও আদর করে না, কেন রাইসা এমন করলি?
এর মধ্যেই আরেকটা ভিডিও অন হলে সবাই উৎসক চোখে এদিক সেদিক তাকায়, কারন ভিডিও তে স্পষ্ট রাইসা হোটেল রুমে একটা ছেলের সাথে নগ্ন গায়ে রংগো লিলায় মত্ত। এই ভিডিও দেখে সবাই দ্বিগুন ঘৃনার চোখে তাকালে আম্মু এসে রাইসাকে আরেকটা থাপ্পড় মেরে বলে,
— তুই এসব করে বেরাস? ছি ছি , আমি ভাবতে পারছি না তুই এত খারাপ কিভাবে হলি?
আমি হাযার ঈশা কে না দেখতে পারলেও এমন চোখে দেখি না, আর তুই কিনা? ছি রাইসা এবার বল নোংরা চরিএের কে তুই নাকি ঈশা( চিৎকার করে)
রাইসার কিছু বলার নেই তাই চুপ করে মাথা নিচু করে কান্না করছে।এই প্রথম মায়ের মুখে আমার জন্য এই কথা শুনে কাদঁতে কাঁদতে বসে পরি৷ চাচ্চি, চাচিমা, আপু সহ সবাই কাদঁছে। আমি নিচে বসে পরলে মায়া আর তুবাও আমাকে ধরে বসে, কিন্তু এর মধ্যেই আমার মনে হচ্ছে আমার পৃথিবি ঘুরছে, চোখ ভেংগে ঝাপসা হয়ে আসছে, আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না তার আগেই মায়ার কোলে মাথা রেখে ঘুরে পরলাম।
মায়া চিৎকার করে করে বলে উঠলো–
— ভাইয়ায়া , ঈশার সেন্স হারিয়ে ফেলেছে।
মায়ার চিৎকার শুনে সবাই দৌরে এলে মিঃ চৌধুরী এসে আমার মাথা তার বুকে নিয়ে নিলেন, আমার হাত ধরে আবির আর তুহিন ভাইয়াকে উত্তেজিত কন্ঠে বলে –
— আবির ওর সেন্স নেই। ওর তো হাত পাও ঠান্ডা হয়ে আসছে।কাপছে কেন ও এমন?
আবির ভাইয়া বলে ওঠে,
— আরাভ পেনিক হোস না, সারাদিন না খাওয়ার জন্য এত স্ট্রেস না নিতে পেরে এমন হয়েছে।
তুহিন ভাইয়া বলে ওঠে –
— আরাভ ওর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, ওকে হসপিটাল নিয়ে চল।
আর কিছু না ভেবে মিঃ চৌধুরী আমাকে কোলে নিয়ে সবার দিকে হিংস্র চোখে তাকিয়ে নিয়ে গেলেন। আংকেল আনটি চাচ্চু আর চাচিমাকে শান্তনা দিয়ে চলে এলেন আমাদের সাথে, তুবা আর মায়া আমার অবস্থা দেখে কান্না করে দিয়েছে আবির ভাই আর তুহিন ভাইয়া শান্তনা দিলেও থামে নি তাই দু-জন কেই ধমক দিলে থেমে যায়।।।
#সে_আমার_মায়াবতি
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_১৬
পিট পিট করে চোখ খুলে নিজেকে কারোও সুবিসাল কক্ষে আবিষ্কার করলাম,
চারিদিকে তাকাতেই দেখলাম,
এটা কারোও রুম। কিন্তু এতো বড়, রুম দেখে অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিলাম। আস্তে আস্তে মাথা উঠিয়ে এদিক সেদিক তাকাতেই দেখলাম, এ কোনো সাম্রাজ্যের চেয়ে কম না। কি সুন্দর সাজানো,নামি দামি ফার্নিচারের সমাহার। আমি ভাবছি এই ঘরটা কার। এত সাজানো গোছানো ঘর তো আমারও না। যদিও এর কিছুই নেই আমার ঘরে।আমি মুগ্ধ নয়নে দেখছি, কি সুন্দর কারুকাজ করা প্রতিটা আসবাব, সবচেয়ে বেশি সবচেয়ে নজর কারা বেলকনি। থাই গ্লাসেস করা, একপাশে গার্ডেনিং করা, হুট করেই আজকের ঘটনা গুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম, কান্নার মাঝেই পিপাসা অনুভূত হচ্ছে। এদিক সেদিক তাকাতেই দেখলাম গ্লাস হাতের নাগালের বাহিরে,তাই উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করতেই মাথা ঘুরে উঠলো,ব্যলেন্স হারিয়ে পরে যাওয়ার আগেই সেই চেনা মানুষটার বুকে নিজের অস্তিত্ব টের পেলাম।
তখন মনে পরলো, আচ্ছা মানুষটা তো আমার স্বামী। আমাকে কি মেনে নিবে উনি? নাকি পরিবার আর জেদের চাপে পরে আমাকে বিয়ে করেছেন? ভাবনার সুতো ছিড়লো কারো ধমকানিতে,
আমি মাথা তুলে তাকাতেই দেখলাম মিঃ চৌধুরি আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে আবার ধমকে উঠে বললো-
— এই মেয়ে তুমি জানো না তুমি অসুস্থ! তাহলে একা একা কেন উঠতে গেলে।নিজের ক্ষতি করতে তোমার এত ভালো লাগে? কি হলো চুপ করে আছো কেন?
একে তো আজকের ঘটনা, তার ওপর এই লোকটার
ধমকানিতে জানি না কি হলো,
অভিমানে চোখ থেকে অশ্রুকনা টপটপ করে ঝরে গেলো। মিঃ চৌধুরির হটাৎ কি হলো বুঝলাম না, অস্থির হয়ে আমার গালে হাত দিয়ে বলতে শুরু করলেন —
— কি হয়েছে জান, খারাপ লাগছে কি? আমার টেনশন হচ্ছে, চুপ করে আছো কেন?
আচ্ছা পাখি বলো আমাকে কি হয়েছে।
আমি হুট করে জোরে জোরে কান্না করতে করতে বললাম –
— কেন কেন মিঃ চৌধুরী কেন আমাকে বিয়ে করে নিজের জিবনটা নষ্ট করলেন। ওহহ বাকি সবার মতো বুঝি আমাকে দয়া দেখিয়েছেন। থাকবো না আমি এখানে,, চ চলে যাবো, ছাড়ুন আমায়,
এবার মিঃ চৌধুরী আমার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললেন,
— এই মেয়ে সেই কখন থেকে কি চলে যাবো, চলে যাবো বলে যাচ্ছো হ্যা। আরেকবার এই কথাটা বলে দেখো, পা
ভেংগে বসিয়ে রাখবো।
খুব দূর্বল লাগছিলো, তাই হুট করেই মিঃ চৌধুরীর বুকে মাথা এলিয়ে দিয়ে ভর ছেড়ে দিলাম, উনি আমাকে আকড়ে ধরে কোলে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিলেন। আমাকে এক পাশে থেকে জড়িয়ে ধরে পানি খাওয়ালেন। আমি ক্লান্ত চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বিরবির কররে করতে ঘুমিয়ে গেলাম। এবার উনি আমার দিকে ঝুকে আমার কপালে চুমু দিয়ে বলতে শুরু করলেন-
— তোমাকে কষ্ট দেয়া প্রত্যেকটা মানুষের জন্য শাস্তি বরাদ্ধ আছে। কেউ ছাড় পাবে না জান। এতদিনের কষ্ট আর পেতে দিবো না জান। আমার ঈশু পাখির জন্য পৃথিবির সকল ভালোবাসা উজার করে দিবো আমি।ভালোবাসি জান। মাই কুইন, ইউ আর মাই কুইন, ইন মাই লাইফ।
কথাগুলো বলতে বলতে মিঃ চৌধুরী কাউকে ফোন করে বলতে শুরু করে!
— ওর হাত পা ভেংগে দাও। কারন সেই হাত দিয়ে আমার জান কে বাজে ভাবে ছোয়ার চেষ্টা করেছে। ওর চোখ তুলে নিবে কারন সেই চোখে আমার মায়াবতীর জন্য লোভ জেগেছিল। ওর কলিজা ছিড়ে নিয়ে আসো, ওর কত বড় কলিজা আমিও দেখবো।সাহিল আমি আজ আসতে পারবো না, কজ আমার জান ওইক, তাই তুমি কি ওর ব্যবস্থা নিতে পারবে না?
— পারবো স্যার, পারবো। তবে তার আগে আমি আমার মতো টর্চার করতে চাই। ম্যম এর গায়ে হাত দিয়েছে, আপনার নুন খেয়েছি, কিছু তো আমার কর্তব্য আছে।
— ইয়া ইয়া সিয়র ( বাকা হেসে)
এদিকে আনটি আংকেল এসেছে, মায়া, সায়ন ভাইয়া, আবির ভাইয়া এসেছে। আপুও এসেছে, একটা নতুন শাড়ি, গহনা পরে এসেছে।আপু মাথায় হাত বুলিয়ে এটা সেটা বোঝাচ্ছে। সাথে সবাইও বোঝাচ্ছে। এর মধ্যেই খবর দিলো, আপুর বাসর ঘর সাজানো শেষ। তাদের সব কাজের জন্যই আলাদা মেইড আর গার্ড আছে। তাই আপু এই রুমে আসার পর সব কাজ সবাই ভাগ করে মিলে মিশে করছে। এর মধ্যে মিঃ চৌধুরী ঘরে প্রবেশ করলো। খেয়াল করলাম লোকটার ড্রেস চেঞ্জ করা। আচ্ছা এটা তাহলে কার রুম? লোকটা ফোন স্ক্রল করে আনটি কে উদেশ্য করে বললো-
— মম সামিয়া আর সায়ন কে ঘরে দিয়ে আসো। সারাদিনে ওরা ক্লান্ত। আর তোমরাও ডিনার করে ঘুমিয়ে পরো। বাকি রিচোয়েলস কালকে করো।আর মায়া মেইড কে বলে দিবি চিকেন সুপ পাঠিয়ে দিতে ঈশার জন্য।
— ওকে বড় ভাইয়া।
আমি এবার ভাবনায় পরে গেলাম, সবাই চলে গেলে আমি ঘুমবো কোথায়?উনার সাথে নাকি?
ভাবনার সুঁতো ছিরে আনটির ডাকে,
— মামনি, ড. তোমাকে আজকে হালকা হেলদি ফুড খেতে বলেছে,। সুপটা শেষ করে ঘুমবে ঠিক আছে।
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম। একে একে বিদায় নিয়ে সবাই চলে গেলো। আমি এবার হাত পা গুটিয়ে নেই কারন ঘরে মিঃ চৌধুরী ছাড়া কেউ নেই। ভয় আর অসস্তি যেনো আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। হটাৎ আমার নিজের ভাবনার মাঝেই তাকিয়ে দেখি সেই শাড়ি পড়া এখনো।শাড়ি যা তা অবস্থা হয়েছে, আচ্ছা
আমি তো শাড়ি পরে শুতে পারি না, ওই বাড়ি থেকে তো কোন ড্রেস ও আনি নি, এখন কি করবো। হটাৎ মনে হলো কারো নিশ্বাস আমার চোখে মুখে আছরে পরছে। আমি চোখ তুলে তাকাতেই চমকে উঠি। একি উনি কখন এলেন? উনি হুট করে হেসে বলে উঠলেন!
—জান তুমি এত অন্যমোনস্ক কেন থাকো কেন। সেই কখন থেকে ডাকছি ,জামাইটা এদিকে তো,। ( অসহায় ফেস করে)
আমি ওনার কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলাম। উনি এত স্বাভাবিক আচরন কেন করছেন?উনি কি সব ভুলে গেলেন? কিন্তু আপাদত এই শাড়ি চেঞ্জ না করলে আমি আরও অসুস্থ হয়ে যাবো। তাই ওনার দিকে ফিরে ধির কন্ঠে বললাম,
— শুনছেন?
ওনি বুকে বা হাত দিয়ে শ্বাস নিয়ে বললেন,
— ওফফ জান মেরে ফেলবে নাকি, কেন এত পাগল করো তুমি?
আমি হাবলার মতো তাকিয়ে থেকে, আবার বলে উঠলাম –
— আপুকে একটু ডেকে দিবেন প্লিজ।
উনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন!
— কেন? সামিয়াকে দিয়ে তোমার কি কাজ,?
— আব আ আসলে, আমি তো কিছু আনি নি, তাই কি পরবো চেঞ্জ করে?
বলেই মাথা নিচু করলাম উনি
আমার গালে স্পর্শ করে মাথা তুলে বললেন,
—তাকাও জান। তুমি কি ভুলে যাচ্ছো তুমি কার স্ত্রি, কার অস্তিত্য? তুমি কেন মাথা নিচু করে আছো, আর ড্রেস কি তোমার কম আছে, সামিয়া কে ডেকে দিতে হবে?
— না আসলে আমি কি পরবো তাই,
আর কিছু বলার আগে উনি উঠে গিয়ে চার পার্টের কাবার্ড খুলে দিলেন, আমি তাকাতেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। একি এত ড্রেস শাড়ি, চুরিদার,টপস,মেচিং জুয়েলারি,কসমেটিক্স, পুরো।
আমি মুখ ফসকে জিজ্ঞাস করে বললাম,
— এ এত মেয়েদের ড্রেস, এগুলো কি আপনার বউ এর জন্য কিনেছিলেন। আমি বোঝা হয়ে এসে আপ!
— তুমি আবার সেইম কথা বলছো? হ্যা আমার বউ এর জন্য কিনেছি, কিন্তু সেটা তুমি। তোমার জন্যই কেনা বুঝেছো? যাও চেঞ্জ করে আসো, খেয়ে মেডিসিন খেতে হবে।
আমি উঠতে নিলেই উনি এসে আমাকে কোলে নিয়ে নেয়। আমি ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরে বলি,
— কি কি করছেন আপনি? আমি যেতে পারবো। নামান আমাকে,
— না আপনি আবার ঘুরে পরে আমাকে রক্তাক্ত করার জন্য।
উনি কথাটা বলেই আমাকে ওয়াশ রুমে নামিয়ে একটা ওয়াইট গ্লিটার এর শাড়ি হাতে দিলেন,। সাথে প্রয়োজনিয় সব হাতে তুলে দিলেন। আমি লজ্জা পেলেও জিনিসটা স্বাভাবিক ভাবে নিলাম। কারন যে সামনেই খুন করতে পারে তার জন্য এসব কিছুই না। ভাবতে ভাবতে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করলাম। এবার মনে পরলো, আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না এখন কি করবো? তারপর ভাবলাম আপুকে ডেকে নিবো, আপাদত পেচিয়ে বের হই। কোন মতে ফ্রেস হয়ে শাড়ি পেচিয়ে বের হতেই উনি অবাক চোখে তাকিয়ে হা হা করে হাসা শুরু করলেন। আমি লজ্জা পেয়ে নিজেকে আরও গুটিয়ে নিয়ে বললাম,
— একটু আপুকে ডেকে দিবেন? আমি না শাড়ি পরতে পারি না।
— পারো না তো কি হয়েছে? আমি পারি, আমি পরিয়ে দিচ্ছি।এদিকে এসো। আর ভেবো না আমি অন্য কোন নারী কে শাড়ি পরিয়েছি। আমি শুধু আমার জানের জন্য শিখেছি। কি হলে এসো?
আমি শাড়ি খামচে ধরে পিছিয়ে গিয়ে বললাম,
— না না একদন না, আ আপনি আপুকে ডেকে দিন। প্লিয দেখুন আ!
— আহ ঈশু পাখি তুমি এতটা পিচ্চি কেন? তুমি কি জানো না আজ সায়ন আর সামিয়ার বিয়ে হয়েছে, আজ ওদের একটা স্পেশাল রাত জান। স্পেশাল মোমেন্ট এ এখন আমি তোমার বোনকে ডেকে আনবো?
ওনার কথায় লজ্জায়, মাথা নিচু করে নিজেকে নিজেই বকতে লাগলাম, ছি আমি কি থেকে কি বলে নিজেই লজ্জায় পরলাম। আমি আর কিছু ভাবার আগে উনি টেনে নিয়ে গিয়ে শাড়ির আচল কোমরে গুজে কুচি করে আমার হাতে দিয়ে ইশারা করলেন, আমিও গুজে নিলাম। আচল টেনে আবার গায়ে দিয়ে দিলেন।আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।
উনি ঘার কাত করে ঠোট কামরে বললেন
— এভাবে পাগল করো না প্লিজ। আম কন্ট্রোললেস।
উনি আর কিছু বলবে তার আগেই মেইড নক করলো।উনি খাবার নিয়ে আমার হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে সুপ নিয়ে মুখে তুলে দিলেন।
আমাকে ইশারা দিলে খেতে লাগলাম। যদিও আমি আর খেতে পারছি না। তাই না পারতে বললাম –
— প্লিজ আর না। আমার খারাপ লাগছে।
— বেশি খারাপ লাগছে জান?
— হুম। আর খাবো না।
— আচ্ছা আর খেতে হবে না।
তারপর উনি নিজের খাবার খেতে শুরু করলেন। এক পর্যায় আমার ঘুম পেতে
লাগলো, আমিও বেডের এক সাইডে ঘুমিয়ে গেলাম। এর মাঝেই উনি খাওয়া শেষ করে আমাকে কোলে নিয়ে, শুয়িয়ে দিয়ে, কাথা দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন,
— আমার পাখি, ছোট্ট পাখিকে এত ভালোবাসি যে, তাকে বুকে লুকিয়ে রাখতে চাই। আমার ঈশু পাখি,শাড়ি পরতে পারে না, এত বাচ্চা যে শাড়ি সামলাতেই পারে না।পাগলি একটা। আমার সাথে নতুন দিনের সূচনা হবে, বলে গভির আলিংগনে জড়িয়ে নিলেন।
(